#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–৪৮
💖
আরিবা ভয়ে আরশকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। আরশ রাগি দৃষ্টিতে ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেগুলো হেটে এদের কাছে আসতে লাগলো। আরিবা ভয় পেয়ে আরশকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আরশ একবার আরিবার দিকে তাকিয়ে ছেলে গুলোর দিকে তাকালো। আরশ ভ্রু কুচকে ওদের দিকে তাকালো। একটি ছেলে জানালার কাছে এসে বিশ্রি হেসে বললো।
“কি মামা একাই খাবে? আমাদেরকেও একটু ভাগ দাও!”
ওর কথা শুনে আরশের মাথা গরম হয়ে গেলো। চোখমুখ গরম করে ছেলেটির দিকে তাকালো। ওর তাকানো দেখে অন্য একটি ছেলে হেসে বললো।
“মামা! এই মালটাকে আমাদেরকেও দেও! আমরাও একটু টেস্ট করি।”
আরশ নিজেকে যথেষ্ট শান্ত রাখতে চাইছে বাট ওদের জন্য পারছ না। আরশ চাইছে না আরিবার সামনে ওর আসল রূপ বের করতে। ও কতটা হিংস্র সেটা যেনো আরিবা জানতে না পারে। কিন্তু ওর সামনে ওর মায়াপরীকে এসব বলছে সেটা ও সহ্য করতে পারছে না। এদিকে আরিবা কেঁদেই চলছে। আরশ নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললো। যে আরিবাকে মাল বলেছিলো তাকে আরশ গাড়ির টিকি থেকে গান বের করে শুট করে দিলো। ছেলেগুলো অবাক হয়ে গেলো। আরিবা অবাক হয়ে আরশের দিকে তাকিয়ে রইলো। আরিবার কান্না আপনা আপনি বন্ধ হয়ে গেলো। ছেলেগুলো ভয়ে পালিয়ে গেলো। আরিবা আকাশসম বিস্ময় নিয়ে ভাবলো আরশের কাছে গান কি করে এলো। এই গান দিয়ে আরশ কি করে? আরিবা কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলছে। আরশের বুকে চুপচাপ লেপটে আছে। আরশ কিছুই বললো না। চুপচাপ গানটা রেখে একহাতে আরিবাকে জরিয়ে ধরে অন্য হাতে গাড়ি চালাতে লাগলো। কিছুদূর যেতেই আরিবা আরশের বুকেই ঘুমিয়ে পরলো।
আরশ গাড়ি থামিয়ে আরিবার ঘুমন্তু মুখের দিকে তাকালো। চোখের পানি শুকিয়ে আছে। পাঁপড়ি গুলো এখনও ভিজে ভিজে। চুলগুলো চেহারার উপর পরে আছে। আরশ আলতো হাতে আরিবার চুলগুলো সরিয়ে দিলো। আরিবা হালকা নড়ে উঠে আরশকে আরও শক্ত করে ধরে ঘুমিয়ে পরলো। আরশ মুচকি হেসে আরিবার দিকে তাকিয়ে বললো। ” সরি মায়াপরী! আমি চাইনি আমার এই রূপটা তোমায় দেখাতে কিন্তু কি করবো বলো? তোমার দিকে কেউ তাকালেই আমি সহ্য করতে পারিনা আর ওসব বলছিলো তাই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে। তুমি আমায় ভুল বুঝে দূরে চলে যেও না প্লিজ? তুমি দূরে গেলে আমি কি নিয়ে থাকবো? খুব ভালোবাসে যে তোমায়!” কথাগুলো আরিবাকে বলে ওর কপালে ছোট্ট করে একটা কিস দিলো। মুচকি হেসে একপলক আরিবার দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাতে শুরু করলো আরশ।
———————————-
চৌধুরী বাড়ি সবাই না ঘুমিয়ে বসে আছে। আরশ আরিবা এখনও আসছেনা কেনো সেটাই বুঝতে পারছেনা। মিসেস আঞ্জুমান তখন থেকেই চিন্তায় অস্থির হয়ে আছেন। একবার সোফায় বসছেন তো একবার গেটের কাছে যাচ্ছেন। মিসেস তারিন অতটা চিন্তা করছেন না নিজের ছেলেকে তিনি একটু হলেও চিনেন। মি. জাকির চুপচাপ সোফায় বসে আছেন। তিনি বারবার আরশের ফোনে কল দিচ্ছেন কিন্তু আরশের ফোন সুইচ অফ বলছে। আরিবার ফোনে কল দিচ্ছেন কিন্তু ও ধরছে না। টেনশনে সবাই অস্থির হয়ে আছে। মিসেস আঞ্জুমান হতাশ গলায় স্বামিকে উদ্দেশ্যে করে বললেন।
“এই তুমি একটু পুলিশে ফোন করে দেখো না! পুলিশরা যদি কোনো খবর দিতে পারে? কোথায় গেলো ওরা কে জানে? কোথায় আছে, কেমন আছে, সেটাও জানতে পারছিনা।”
মি. জাকির নিজের স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন।
“আমি আমার লোক লাগিয়েছি তুমি এত চিন্তা করো না। জানো তো ২৪ ঘন্টার আগে পুলিশে রিপোর্ট করা যাবে না।”
মিসেস তারিন চিন্তিত হয়ে বললেন।
“এবার আমারও খুব ভয় লাগছে। রাত তো কম হয়নি! প্রায় একটা বাজে। এত সময় তো ওদের লাগার কথা না। জিসানের মা বলছে ১২টার দিকে ওরা বের হইছে। তাহলে এখনও কোথায়? রাস্তায় কোনো বিপদ হলো নাতো?
মি. আফজাল স্ত্রীকে ধমক দিয়ে বললো।
” তারিন! বাজে কথা বলো না। আরশ যখন আছে ও সবটা সামলে নিবে। ওর উপর আমার পুরো ভরসা আছে।”
সবাই মিলে বিভিন্ন কথা বলছে। হঠাৎ গেট দিয়ে গাড়ি ঢোকার আওয়াজ পেলো সবাই। মিসেস আঞ্জুমান তাড়াহুড়ো করে বাইরে বের হলেন। সাথে সাথে সবাই বের হলো। মিসেস আঞ্জুমান বাইরে বের হয়েই অবাক হয়ে গেলেন। আরশ আরিবাকে কোলে নিয়ে আসছে। এটা দেখে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। মিসেস আঞ্জুমান দৌড়ে আরশের কাছে গিয়ে আরিবাকে ধরে কেঁদে ফেললেন। সবাই আরশের কাছে গেলো। মিসেস আঞ্জুমান আরশের দিকে তাকিয়ে কেঁদে কেঁদে বললেন।
“কিরে আরশ? কি হয়েছে রিবার? এভাবে চুপ করে আছে কেনো ও?”
সবাই একেই প্রশ্ন করছে। সবার কথা শুনে আরশ ধমক দিয়ে বললো।
“কান্না কাটি বন্ধ করো সবাই। কিচ্ছু হয়নি তোমাদের মেয়ের। মহারানী ঘুমিয়ে পড়েছে আর আমাকে আটার বস্তার মতো ওকে টানতে হচ্ছে। যত্তসব বিরক্তি!”
কথাটা শুনে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। মি. জাকির আরশকে প্রশ্ন করলো।
“এত দেরি হলো কেনো?”
“এমনিতেই!”
বিরক্তি নিয়ে কথাটা বলেই আরশ সিড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে গেলো। আরিবাকে ওর রুমে আস্তে করো শোয়ায়ে দিলো। আরিবার ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো। ওর হাসিতে ছোট্ট ছোট্ট সাদা বিড়ালের মতো চোখগুলো আরও ছোট হয়ে গেলো। ড্রিম লাইটের আলোতো ওর বিড়ালের মতো চোখগুলো জ্বলজ্বল করছে। আরশ আরিবার চেহারার উপর পরে থাকা চুলগুলো কানের পিছে গুঁজে দিলো। আরিবার চেহারার দিকে তাকিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো।
“তুমি হৃদয়ে লুকানো প্রেম,
তোমাতে ডুবে আছে আমার মন।
তুমি মিশে থাকো আমার কল্পনায়,
আমি তোমায় দেখি গভীর মুগ্ধতায়।”
কথাগুলো বলেই আরশ চলে গেলো। আরশ যেতেই আরিবা চোখ খুলে তাকালো। শোয়া থেকে বসে অবাক হয়ে রইলো। রিয়াকশন দিতেই ভুলে গেছে ও। এগুলো কি বলে গেলো আরশ? তারমানে আরশ ওকে ভালোবাসে? আরশ যদি ওকে ভালোবাসে তাহলে ওর সাথে বাজে ব্যবহার করে কেনো? তাহলে ওর মায়াপরীটাকে? আরিবা বিভিন্ন রকমের ভাবনায় বিভোর হয়ে গেলো।
——————————
সকাল বেলা। পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভেঙে গেছে আরিবার। শীতের সকালে কখনই তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠতে ইচ্ছা করেনা। আরিবা জেগেই কম্বল গায় দিয়ে শুয়ে আছে। জানালায় শিশিরকণা জমে আছে। শিশিরকণা গুলো গড়িয়ে পড়ছে। আরিবা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে আর ভাবছে। যদি সারাবছর শীত বা সারাবছর গরম থাকতো তবে কেমন হতো? সারাবছর বর্ষা থাকলেই কেমন হতো? আরিবা কিছুক্ষণ শুয়ে রইলো। কাল রাতের কথা মনে পড়তেই আরিবা ভয় পেয়ে গেলো। আরশ গান দিয়ে কি করে সেটাই বুঝে পারছে না আরিবা। ও তাড়াতাড়ি করে শোয়া থেকে উঠলো। বিছানায় বসেই ভাবলো আরশকে ওর অনেক প্রশ্ন করার আছে। আরিবা তাড়াতাড়ি করে উঠে সুয়েটার টা গায়ে দিয়ে আরশের রুমে চললো। আস্তে করে আরশের রুমের দরজা খুলতেই দেখলো আরশ কম্বল গায়ে উপুর হয়ে শুয়ে আছে। আরিবা ভাবছে আরশ শুয়ে রয়েছে। তাই আস্তে করে ওর রুমে প্রবেশ করলো। আরশের রুমে প্রবেশ করতেই দেখলো আরশ ঘুমাচ্ছে। এত সকাল পর্যন্ত আরশ কোনো সময় ঘুমায় নি আজ কেনো ঘুমাচ্ছে? আরশ তো সব সময় ফজরের নামজ পরে জগিংয়ে যায় সেখান থেকে এসে জীম করে পড়তে বসে তবে আজ কেনো ঘুমাচ্ছে? শরীর টরীল খারাপ হলো নাকি? এসব ভেবেই আরিবা দৌড়ে গেলো আরশের কাছে গেলো। আরশকে সোজা করে কপালে হাত দিলো। দেখলে নাহ শরীর তো ঠিকই আছে। তো ঘুমাচ্ছে কেনো? আরিবা আরশের ঘুমন্ত চেহারার মায়ায় পড়ে গেলো। কে বলবে এই ছেলেটা এত রাগি? আরিবা আরশের এলোমেলো চুলগুলো আস্তে আস্তে ঠিক করে দিলো। আরশের চুল আরিবার খুব পছন্দের। আরিবা আরশের চেহারার দিকে তাকালো। দেখলো শীতের কারনে ত্বল রূক্ষ হয়ে আছে। হয়তো রাতে লোশন দেয়নি। আরিবা আস্তে করে ওর চেহারায় হাত বুলালো। আরশের ঠোঁটের দিকে তাকাতেই দেখলো ঠোঁট ফোটে আছে। আরিবা ঠোঁটে একবার হাত বুলিয়ে লিপ জেল দিয়ে দিলো। আরশ ঘুমের মাঝেই নড়ে উঠলো। হালকা নড়ে ঘুম ঘুম চোখে বললো।
” বিরক্ত করিস না যা তো এখান থেকে! একটু ঘুমাতে দে!”
আরিবা আরশকে নাড়াতে নাড়াতে বললো।
“নাহ তুমি ওঠো! তোমার সাথে জরুরি কথা আছে।”
আরশ চোখ বন্ধ করেই কপাল কুচকে বিরক্তি নিয়ে বললো।
“দিষ্টার্ব করিস না! সবে মাত্র ঘুমাইছি। উঠলে তোর খবর আছে মনে রাখিস।
আরশের রাগ শুনে আরিবা ভয় পেলো। তাই ওকে ছেড়ে নিচে নেমে এলো। নিচে নামতেই দেখলো মিসেস আঞ্জুমান ও মিসেস তারিন সোফায় বসে কফি খাচ্ছে আর খবর দেখছে। আরিবাকে দেখেই মিসেস তারিন অবাক হয়ে বললেন।
” আজ এত তাড়াতাড়ি উঠলি যে? কোনো বিশেষ কারন আছে? ”
আরিবা কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিসেস আঞ্জুমান বলে উঠলেন।
“আজ শুক্রবার, প্রাইভেট, কোচিং, ক্লাস নাই তাই উঠছে। প্রতিদিন তো ডেকেও উঠানো যায়না।”
আরিবা কপাল কুচকে বিরক্তি নিয়ে বললো।
“এত কথা বলো না তো! কফি এনে দেও।”
মিসেস আঞ্জুমান চোখ গরম করে কফি বানাতে চলে গেলো। আরিবা সোফায় বসে ওর কাকিমনিকে জিজ্ঞাসা করলো।
“কাকিমনি! আব্বু আর কাকা কোথায়?”
“তাদের জরুরী মিটিং আছে তাই চলে গেছে।”
আরিবা কিছুই বললোনা। টিভি দেখতে লাগলো। ওর মা কফি এনে ওর হাতে দিয়ে তিনিও সোফায় বসে পড়লেন। আরিবা কফি খাচ্ছে আর খবর দেখছে। হঠাৎ একটা খবর দেখে ওর হাত কেঁপে উঠলো। হাত থেকে কফির মগটা পড়ে ভেঙে গেলো। মিসেস আঞ্জুমান ও মিসেস তারিন আবাক হয়ে ওর দিকে এসে জিজ্ঞাসা করলো।
“কিরে কি হয়েছে?”
আরিবা কিছুই বলতে পারলো না। শুধু কাঁপা কাঁপা হাতে টিভির দিকে ইশারা করলো।
💝
ইনশাআল্লাহ চলবে….
(রি চেইক করিনি। ভুলত্রুটি হতে পারে। বেশি বেশি লাইক কমেন্ট আর শেয়ার করবেন। শুভ সকাল গাইস্)