#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–৫৩
💝
রাত ১০ টা। পড়ার টেবিলে পড়তে বসে ঢুলছে আরিবা। ওর খুব ঘুম আসছে কিন্তু ঘুমানোর কোনো পথ খোলা নেই। ঘুম হচ্ছে পড়ার বড় শত্রু। পড়তে বসলেই কোথা থেকে ঘুম চলে আসে ও বুঝেনা। ঘুমের ঘোরেই ঢুলে ঢুলে পড়ছে আরিবা।আরশ অনেক পড়া দিয়ে গেছে। বায়োলজি বই পুরো পড়তে দিয়ে গেছে। আর যাবার সময় বলে গেছে। “এসে যেনো দেখি সব পড়ে শেষ করেছিস্ যদি আমি পড়া ধরলে না পাড়োছ তবে স্কেল তোর পিঠে ভাঙবো।” আরিবা কিছুই বলতে পারেনি। অসহায় ভঙ্গিতে বসে আরশের দিকে তাকিয়ে ছিলো। রাত ১০ টা বেজে গেছে এখনও আরশ আসছেনা কেনো বুঝতে পারছে না আরিবা। প্রতিদিন তো ৫টা বাজেই ড্যাং ড্যাং করে চলে আসে। আরিবা ভাবলো আরশের আসতে আরও অনেক দেরি হবে। তাই চুপচাপ টেবিলে মাথা রেখে হালকা ঘুম দিলো। সবে মাত্র ঘুমের দুনিয়ায় প্রবেশ করতে ছিলো তার আগেই ধীরিম করে শব্দ হলো। আরিবা ভয় পেয়ে লাফিয়ে উঠে ঘুমের চোখেই চিল্লিয়ে বললো।
“আব্বু! তোমার বাড়ি ভেঙে পড়ে গেছে গো। আমাকে বাঁচাও! আমিও পড়ে গেলাম।”
এটা বলে থামতেই দেখলো কোনো আওয়াজ হচ্ছে না। মনে মনে বললো। ” আরে আমার চিল্লানি শুনেই কি বাড়ি ভাঙছে না? বাহ আমার কি গুন!” কথাটা বলে পাশে তাকাতেই দেখলো আরশ স্কেল হাতে রাগি লুক নিয়ে দাড়িয়ে আছে। পড়নে সাদা গেঞ্জি আর টাওজার। তারমানে অনেক আগেই বাইরে থেকে এসেছে। এবার ওর কি হবে? আরিবা মনে মনে বললো। “রিবা তুই এবার শেষ!” কথাটা বলে আরশের দিকে তাকিয়ে জোর পূর্বক হাসার চেষ্টা করলো। যদিও এখন ওর হাসি একদমেই আসছে না। শুধু কান্না আসছে। তবুও জোর করে ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে বললো।
“ভাইয়া কখন আসছো? আমার পড়া তো একদম শেষ। আমি তোমার জন্যই সেই সন্ধ্যা থেকে অপেক্ষা করছিলাম।”
কথাটা বলে আরিবা মুচকি হেসে দাড়িয়ে রইলো। এমন ভাব করছে যেনো সব পড়া ও পাড়ে। আরশ ভ্রু কুচকে আরিবার দিকে তাকালো। পরক্ষনেই কিছু একটা ভেবে ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বললো।
“তাই নাকি রে? শুনে খুব খুশি হলাম!”
“তাই?” মুচকি হেসে কথাটা বললো আরিবা।
“এবার বইটা দে। দেখি কতদূর পড়েছিস্”
আরশের কথা শুনে সাথে সাথে আরিবার হাসি মিলিয়ে গেলো। জোর করেও মুখটা হাসি হাসি রাখতে পারলো না। আরিবার কাঁপা কাঁপা হাতে আরশের দিকে বইটা এগিয়ে দিলো। আরশ স্কেল টা টেবিলের উপর রেখে আয়েশ করে বসলো। বইটা হাতে নিয়ে একটু উল্টে পাল্টে আরিবাকে একটা প্রশ্ন করলো। আরিবা আমতা আমতা করতে লাগলো। মনে মনে বললো– “কি যেনো পড়েছিলাম? বেটা জনমের খবিশ। শেষের থেকে জিজ্ঞাসা করছে। হয়তো বুঝতে পেড়েছে আমি পরে শেষ করতে পড়িনি। তাই এমন করেছে। তোকে কাঁচা চিবিয়ে খেতে ইচ্ছা করছে। সেই কবে পড়েছিলাম মনেও পড়ছেনা। বই আপু বইন তুই ভালো মনে এসে যা!” আরিবাকে চুপ থাকতে দেখে আরশ ধমক দিয়ে বললো।
“কিরে? কতক্ষন লাগে এইটুকু বলতে? বলবি নাকি থাপরে সব দাঁত ফেলে দিবো?”
আরিবা ভয়ে আমতা আমতা করতে লাগলো। আরশ টেবিলের উপর জোরে বারি মেরে বললো।
“এতক্ষন তো কত কথা বলছিলি? সব পাড়ি এই সেই! এখন চুপ করে আছোছ কেনো? বলবি নাকি স্কেলের বারি খাবি? বল কোনটায় রাজি? পারলে হ্যাঁ বল নাহয় না বল?”
কতাটা বলেই যেই আরশ স্কেলটা ধরে হালকা উঠিয়েছে। আরিবা উঠেই দিলো জোরে দৌড়। আরশ অবাক হয়ে গেলো। ও বুঝতে পারেনি আরিবা এভাবে দৌড় দিবে। আরশ এখনও থমকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। অস্পষ্ট ভাবে নিজে নিজেই বললো। ” এটা কি হলো?” পরক্ষনে খেয়াল হতেই জোরে চিল্লিয়ে বললো।
“দৌড়ে কতদূর যাবি! সেই এখানে আসতে হবে। হাতের কাছে পাই এই শোধ তুলবো।”
কথাগুলো বলে আরিবার পিছনে পিছনে গেলো। দেখলো আরিবা ওর মায়ের রুমে গেলো। আরশ দৌড়ে যেতেই দেখলো আরিবা ভিতর থেকেই দরজা লক করে দিয়েছে। আরশ বাইরে থেকে রেগে বললো।
“এই রিবা! ভলোয় ভালোয় বলছি বের হ! নাহয় কিন্তু ভালো হবেনা!”
“ভালো টা কখন হয়েছে বলো তো? তুমি আমার সাথে থাকলে কখনও ভালো কিছু হয়েছে? তুমি বলো? তুমি আমার জীবনে খারাপের একটা ডিব্বা বুঝলে?”
আরিবা ভিতর থেকে চিল্লিয়ে কথাটা বললো। কথাগুলো শুনে আরশ রেগে গেলো। বাইরে থেকে চিল্লিয়ে বললো।
“তুই বাইরে বের হ! তোর বড় বড় কথা বলা আমি ছুটাবো। যে মুখ দিয়ে কথা বলছিস্ ওটা একেবারে সেলাই করে দিবো। বেয়াদ্দব মেয়ে! বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তাও জানেনা। কি শিখছোছ জীবনে?”
“ইশ আসছে একজন বুইড়া রে! তোমার থেকে বেশি কিছু শিখছি। অন্তত ছোটদের সাথে আপনার মতো খবিশগীরী করি না। আমার এত শখ জাগেনি যে সেধে সেধে গিয়ে মুখ সেলাই করিয়ে আসবো বুঝছো? তোমার এত সেলাই করতে ইচ্ছা করলে তুমি আসো।”
“তাহলে দরজা খোল!”
“আমি খুলতে যাবো কেনো? তোমার আসতে ইচ্ছা করলে তুমি নিজেই দরজা খুলে আসো। বার বার ঘুঘু খেয়ে যাও ধান, হাতে তো কখনও পরোনি। এবার পরেছে।”
আরিবা উচ্চ স্বরে হেসে কথাগুলো বললো। আরিবার এমন কথা শুনে আরশ রেগে গেলো। বাহির থেকে দরজা লক করে বললো।
“আচ্ছা থাক! তুই ভিতরেই থাক দেখি কতক্ষণ থাকতে পারোছ। কোনো খাবার পাবি না তুই! দেখি তোকে কে বাইরে বের করে। বুঝবি মজা কি যেনো বলেছিলি? ঘুঘু হাতে পরেছে তাইনা? ঘুঘু দেখেছো ঘুঘুর ফাঁদ দেখনি।”
কথাটা বলেই আরশ চলে গেলো। আরিবা এবার চুপ মেরে গেলো। ভিতরে এদিক ওদিক পাইচারি করছে আর দাঁত দিয়ে নখ কামরাচ্ছে। নখ কামড়াতে কামড়াতে বিড়বিড় করে বললো।
“এবার কি হবে! এবার কি হবে? ভাব রিবা ভাব!”
নখ কামড়ে ভাবতে ভাবতে একটা আইডিয়া খুজে পেলো। লাফিয়ে উঠে বললো।
“আইডিয়া! আহ কি মজা! ধিনাক ধিনাক কি মজা। এবার মি. খবিশ আমায় করতে কিছু পারবো না। কি মজা! এসব বলেই গান গেয়ে নাচা ধরলো।
“তোমরা দেখো গো আসিয়া…
আরিবায় নিত্য করে লাফিয়া লাফিয়া।
আরিবায় নিত্য করে লাফিয়া লাফিয়া।”
উদ্ভট গান আর ওর নাচ শেষ করে আরিবা মুচকি হেসে নিজের কাজে লেগে পড়লো।
——————————-
সামনে এক্সাম তাই মনোযোগ দিয়ে পড়ছে শান্তা। হঠাৎ করেই ওর ফোনে একটা কল এলো। শান্তা পড়ায় এতই ব্যস্ত যে ফোন দেখার সময় নেই। আবার কল এলো। শান্তা বিরক্তি নিয়ে টেবিল ছেড়ে উঠলো। ফোনটা ধরে দেখলো শাহীন কল দিয়েছে। আবার রিং হতেই ফোনটা রিসিভ করে রেগে বললো।
“সমস্যা কি আপনার? এতবার কল দিচ্ছেন কেনো? দেখছেন কল ধরছিনা তারমানে বিজি আছি। তাও বুঝেন না? এত জালাচ্ছেন কেনো?”
শাহীন এতক্ষণ চুপ করে শুনছিলো। শান্তার কথা শেষ হতেই জোরে একটা শ্বাস নিয়ে বললো।
“কথা শেষ? থেমে থেমে বলো শ্বাস আটকে যাবে। আমি তো কোথাও যাচ্ছিনা। তুমি থেমে থেমে সারারাত বললেও আমি শুনতে পারবো।”
শান্তা রাগ নিয়ে বললো।
“আপনার সারারাত শোনার সময় থাকলেও আমার বলার সময় নেই। আমার সামনে পরীক্ষা জানেন না?”
“তাই বুঝি? পরীক্ষা হলে এত পড়া লাগে? কই আমি তো এত পড়িনি। তোমার মেধা একটু কম তাইনা?”
শাহীন মুচকি হেসে দুষ্টামি করে কথাটা বললো। কিন্তু শান্তা সিরিয়াস নিয়েছে। কথাটা শুনেই শান্তা রেগে গেলো। রাগে ফোস ফোস করে বললো।
“মোটেও আমার মেধা কম নয়। আমি আপনার মতো ফাঁকিবাজ নই৷ আপনি তো নকল করে পাস করছেন।”
“তাই? নকল করে পাস করলে মেডিকেলে চান্স কি করে পেয়েছি শ্যামাঙ্গী? বলো বলো!”
শান্তা চুপ মেরে গেলো। মনে মনে ভাবলো সত্যি তো! ঢাকা মেডিকেলে চান্স পাওয়া তো এত সোজা না। এবার কি বললো? কিচু একটা ভাব শান্তা। কোনো মতেই হারা যাবে না। শান্তা বেশি কিছু না ভেবেই বলে দিলো।
“আপনি মেডিকেলেও নকল করে চান্স পেয়েছেন।”
” তাই?”
” হ্যাঁ! আমি বলছি হ্যাঁ তো হ্যাঁ হবে!”
শাহীন মুচকি হেসে বললো।
“হুম আমার শ্যামাঙ্গী যেটা বলবে সেটাই হবে। এবার হয়েছে ম্যাডাম? আমি আপনার সব কথা মেনে নিলাম।”
শাহীনের কথা শুনে শান্তা লজ্জা পেলো। তা প্রকাশ না করে রাগ দেখিয়ে বললো।
“ইশ ঢং! এখন এমনি থাকবে কদিন পর ভালোবাসা হাওয়ার সাথে উড়ে যাবে। এসব ছেলেদের আমার চেনা আছে।”
“আমাকেও তোমার ওমন মনে হয়?”
অসহায় ভাবে কথাটা বললো শাহীন। শান্তা অবাক হয়ে জোরে বললো।
“ওমন মনে হবে কি? সব ছেলেরা ওমনেই। প্রেম করে ছেড়ে দেয়। দেখিতো চারপাশে এসবেই হচ্ছে।”
“আমি সবার মতো না তার জন্য কি প্রমান চাই তোমার?”
“আমার এইচএসসি পরীক্ষার পর আমাদের বাড়ি বিয়ের প্রস্তাব দিবেন ঠিক আছে?”
“যথা আজ্ঞা মহারানী। আপনার আদেশ সর্বদা শিরোধায্য।”
“হইছে আর ঢং দেখাতে হবেনা। আমার সময় নেই পড়তে হবে। এখনও অনেক পড়া বাকি!”
“পড়ো তবে দেখো পড়ার চাপে আবার আমায় ভুলে যেওনা যেন! bye ”
“Ok bye!”
মুচকি হেসে ফোনটা রেখে দিলো শান্তা। অগত্যা আবার পড়ার টেবিলে বসলো। শাহীন কল কেটে মুচকি হেসে ফোন হাতে নিয়ে বসলো। অতঃপর গ্যালারিতে গিয়ে শান্তার ছবি গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগলো।
—————————–
রাত ১২টা আরশ দরজা খুলে আরিবাকে ডাক দিলো। আরিবার কোনো সারা শব্দ নেই। আরশ আরও জোরে ডাকলো। কিন্তু আরিবার সারা নেই। মিসেস আঞ্জুমান ও মিসেস তারিন ও ডাকছে। পরে মি. জাকির এসে ডাকলো কিন্তু আরিবার দরজা খোলার নাম নেই। আরশ রেগে বাইরে গেলো। মই দিয়ে বেলকনিতে উঠলো। রুমের ভিতরে গিয়েই ওর মাথায় আকাশ ভেঙে গেলো। আরিবা কোথাও নেই। আরশ দরজা খুলতেই সবাই ভিতরে গিয়ে তন্নতন্ন করে খুঁজলো কিন্তু আরিবাকে কোথাও পেলোনা। আরশের মাথা ঠিক রাখতে পারলোনা। কোথায় গেলো ওর মায়াপরী? বিছানা বালিশ উল্টে পাল্টে দেখলো। পরক্ষনেই নিজের চুল মুঠ করে ধরে বললো।
“আমার ভুল হইছে। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম আরিবার উপর এখন এট্যাক হয়। ওকে একা রাখা ঠিক হয়নি।”
আরশ হতাশ হয়ে ফ্লেরে বসে পড়লো। মিসেস আঞ্জুমান মেয়ের চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠলেন। মিসেস তারিন তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। মি. জাকির আরশের দিকে তাকিয়ে বললো।
“আমার মেয়ের কিছু হলে তুমি দাই থাকবে। আমার মেয়ের গায়ে যদি একটা আচরও লাগে তবে আমি তোমাকে ছাড়বো না কথাটা মনে রেখো।”
আরশ রাগি লুক নিয়ে মি. জাকিরের দিকে তাকালো। মি. আফজাল এসে দুজনকে বললেন।
“এখন রাগারাগি করার সময় নয়। অসময়ে রাগারাগি না করে মামনিকে খোঁজো!”
আরশের খুব দূর্বল লাগছে মনে মনে বললো। “তুমি কোথায় মায়াপরী? আমি তোমাকে খুঁজে বের করবোই ইনশাআল্লাহ!” এসব বলেই আস্তে করে উঠে দাড়ালো আরশ। সজলকে ফোন করে লোক লাগালো আরিবার খোঁজে। হঠাৎ আরশের ফোনে একটা কল এলো। আরশ নাম্বার দেখেই অবাক হলো। কল রিসিভ করে কানের কাছে ধরতেই যা শুনলো তা শুনে আরশ পুরো তব্দা লেগে গেলো।
💖
ইনশাআল্লাহ চলবে….
(কেমন আছো সবাই? গল্পটা কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবে। কেমন হলে তোমাদের ভালো লাগতো সেটাও জানাবে। হ্যাপি রিডিং। শুভ রাত্রি গাইস্)