#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–৫৪
💖
আরশ ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো আরিবার ফোন নাম্বার থেকে কল এসেছে। আরশ কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আরিবা উচ্চ স্বরে হেসে বললো।
“কি মি. খবিশ? আমাকে নাকি আটকে রাখবে? পেরেছো? আমি তো বের হয়ে গেছি।”
আরশ পুরো তব্দা লেগে গেছে। কি করে বের হলো ও। দরজা বাইরে থেকে লক করা বেলকনিতে মই নেই। না আছে শাড়ি বাধা। তো কিভাবে গেলো? আরশ এসব ভাবনা ছেড়ে তাড়াহুড়া করে আরিবাকে জিজ্ঞাসা করলো।
“দরজা বাইরে থেকে লক করা ছিলো। ভিতরেও তো লক ছিলো। কি করে বের হলি তুই? এখন কোথায় আছোছ?”
আরিবা ভাব নিয়ে পায়ের উপর পা দুলিয়ে বললো।
“দিস ইস মাই ক্যালমা। বুঝতে পেরেছো? জীবনে বড় হতে চাও? তাহলে আমার থেকে কিছু শিখো বুঝলে?”
আরশ ভ্রু কুচকালো। মিসেস আঞ্জুমান আরশের কাছে এসে অস্থির হয়ে তাড়াহুড়ো করে বললো।
“কে কথা বলছে? রিবার কোনো খোঁজ পেলি?”
আরশ ওর কাকিমনির দিকে তাকিয়ে বললো।
“রিবার সাথেই কথা বলছি।”
সবাই অবাক হয়ে একসাথে বলে উঠলো “কি!”
“হ্যাঁ রিবার সাথেই কথা বলছি।”
মি. জাকির অবাক হয়ে বললো।
“ও বের হলো কি করে? দরজা তো লক করা ছিলো।”
মিসেস আঞ্জুমান আরশের দিকে তাকিয়ে বললো।
“এখন রিবা কোথায় আছে? কেমন আছে? ও ঠিক আছে তো?”
আরশ বিরক্ত হয়ে সবার দিকে তাকিয়ে বললো।
“আমি সেটাই জিজ্ঞাসা করতে লাগছিলাম কিন্তু তোমাদের প্রশ্নের জ্বালায় জানতে পারছি না।”
“আচ্ছা কর কর!”
মিসেস আঞ্জুমান কথাটা বলেই চুপ হয়ে গেল। আরশ ধমক দিয়ে আরিবাকে জিজ্ঞাসা করলো।
“তুই কোথায় আছিস? এখান থেকে বের হলি কিভাবে?”
“আরে আস্তে! কিভাবে বের হয়েছি এটা জানতে এত উদগ্রীব কেনো তুমি? বলছি তো আমার ক্যালমা। এটুক জেনেই শান্ত থাকো আমি আমার রুমে আছি। আমার খাবার তারপর পানি চকলেট সব নিয়ে আসছি।”
আরশ অবাকের উপর অবাক হচ্ছে। কলটা কেটে থম মেরে দাড়িয়ে রইলো। অগত্যা সবার দিকে তাকিয়ে বললো।
“তোমাদের আদরের মেয়ে ওর নিজের রুমেই আছে।”
“ও বের হলো কি করে?”
“তোমার মেয়েকে জিজ্ঞাসা করো কাকা।”
কড়া গলায় মি. জাকিরের প্রশ্নের উওর দিয়ে আরিবার রুমের দিকে চললো। আরশ ওর রুমে গিয়ে দরজায় নক করতেই আরিবা ভিতর থেকে বলে উঠলো।
“হ্যালো এভরিবডি! কেমন আছো সবাই? আমায় নিয়ে খুব চিন্তা করেছিলে বুঝি? নো চিন্তা অনলি ডু ফূর্তি।”
“তুই বের হ তোর হ্যালো এভরিবডি বলা আর ফূর্তি করা ছুটাচ্ছি। তাড়াতাড়ি বের হ!”
আরশের কথায় আরিবার কিছুই হলো না ও হাসতে লাগলো। ওর হাসি শুনে আরশ আরও রেগে গেলো। মিসেস আঞ্জুমান আরিবাকে ধমক দিয়ে বললো।
“কি ঢং শুরু করছোছ? আবার জীন পরীতে ধরে নায় তো? দেখি তাড়াতাড়ি বাইরে বের হ!”
“জীবনেও না। মি. খবিশ ওখানেই আছে। তোমরা সবাই আমায় মার খাওয়ার প্লান করতেছো তাইনা? এটা হবেনা। এখন যাও সকালে দেখা হবে। শুভ রাত্রি গাইস্!”
কথাটা শুনে সবাই ঠোঁট উল্টে নিজ নিজ রুমে ঘুমাতে চলে গেলো। কিন্তু আরশ বাইরে চলে গেলো। বাইরে গিয়ে মইটা নিয়ে আরিবার রুমের বেলকনির কাছে গেলো। আস্তে আস্তে আরিবার রুমের বেলকনিতে উঠলো। আরশ বেলকনি থেকে কাচ দিয়ে দেখলো আরিবা পায়ের উপর পা তুলে ফোন চালাচ্ছে। আরশ আস্তে করে পা টিপে টিপে ভিতরে গেলো। আরিবা ফোন টিপায় এতই ব্যস্ত যে, আরশ ওর মাথার কাছে দাড়িয়ে আছে সেটা বুঝতে পারেনি। আরশ টান দিয়ে আরিবার হাত থেকে ফোনট নিতেই আরিবা চমকে গেলো। পাশে তাকিয়ে আরশকে দেখে অবাক হয়ে গেলো। আরশ মোবাইলটা হাতে নিয়ে দু ভ্রু উচালো। মানে বুঝালে এবার কোথায় যাবি? আরিবা আশে পাশে তাকিয়ে দেখলো বেলকনির দরজা খোলা। এখন আরিবা নিজেই নিজেকে মনে মনে বকছে। কেনো ওটা আটকাতে ভুলে গেছে। আরিবা আরশের দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো।
“ভাইয়া তুমি এখানে? কখন এলে? আরে বসো বসো!”
আরশ কপাল কুচকে তাকালো। আগের ভঙ্গিতে দাড়িয়ে থেকেই বললো।
“আমি কি তোর বাড়িতে কোনো গেস্ট এসেছি যে বসতে বলছিস? কি ভাবিস নিজেকে? খুব চালাক তাইনা?”
আরশের কথা শুনে আরিবা ওর সামনে আসা চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দিলো। অতঃপর আরশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো।
“না ভাইয়া! কে বলছে এই কথা? সে আমার নামে তোমায় মিথ্যা কথা বলছে। এই অপবাদ কে দিলো আমার নামে তার নামটা বলো ভাইয়া? আমি জীবনেও নিজেকে চালাক ভাবিনা। আমি তো নিজেকে তোমার থেকেও বোকা ভাবি।”
“তাই নাকি রে?”
আরিবা দাঁতে দাঁত চেঁপে মনে মনে বললো। “এহ আসছে। আমি জীবনেও নিজেকে তোর থেকে বোকা ভাবিনা। আমি অনেক চালাক আমি জানি। কথায় আছেনা, ভাও বুঝে বাদাম দাও! আমিও তাই করছি মি. খবিশ।”
“কিরে চুপ মেরে গেলি কেনো?”
কথাটা বলেই আরশ আরিবার বিছানায় বসে পড়লো। আরিবা লাফ মেরে দূরে সরে গেলো। আরশ আচমকাই আরিবার ওড়না টান দিয়ে এনেই ওর মুখটা বেঁধে দিলো। ওর দুই হাতে চেপে ধরলো। আরিবা চিল্লাতেও পারলো না। খুব ভয় পেয়ে গেছে ও। ছোটার জন্য মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলো। আরশ আরো শক্ত করে ধরল। আরিবা চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। আরশ কি করতে চাইছে সেটাই বোঝার চেষ্টা করছে। আরিবার ভীত চেহারা দেখে আরশ মুচকি হাসলো। আরিবার দিকে তাকিয়ে ভ্রু উচিয়ে বলল।
“কিরে? এতক্ষণ তো অনেক ভাব নিচ্ছিলি এবার ভয় পাচ্ছিস কেন?”
মুখ বাঁধার কারণে আরিরা কথা বলতে পারছে না। মুখ দিয়ে শুধু উমউম শব্দ করছে। আরশ ওর দিকে তাকিয়ে বলল।
“কি? আর ভাব নিবে আমার সাথে? কথায় আছে বেশি বাড় বেড়োনা ঝরে ভেঙে পড়ে যাবে। তোরও সেই অবস্থা।”
আরিবা এবার ভয়ে কেঁদেই দিলো। আরশ ওর চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।
“আরে কাঁদিস না তুই তো অনেক চালাক এত ভয় পেলে চলে নাকি? আমার সাথে কি কি জানি বলছিল আবার বল শুনি তো? এবার কাছ থেকে শুনি!”
আরিবা কেঁদেই চলছে। ওর কান্না দেখে আরশ থেমে গেলো। আর কিছুই বললো না। আরিবার কান্নাই ওর দুর্বলতা। আরশ ওর হাত দুটো ছেড়ে দিল। অতঃপর মুখের বাধন খুলে দিল। তারপর আরিবার গাল দুটো টেনে বললো।
“জীবনে মেনে থাকলে আমার সাথে আর লাগতে আসবি না। ছোট ছোটোর মতই থাকবি বুঝলি? বেশি বড় হতে গেলে এই অবস্থা হবে মনে থাকবে?”
আরিবা ঘাড় কাত করলো মানে বুঝালো মনে থাকবে। আরশ বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ালো। আরিবা দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো।
“এই তো গুড গার্ল! বাই গুড নাইট!”
কথাটা বলেই আরিবাকে চোখ রাঙিয়ে চলে গেলো। আরশ যেতেই আরিবা চোখের পানিটা মুছে মনে মনে বললো। “এর সোধ আমি নিয়েই ছাড়বো দেখে নিও!” কথাটা বলে আরিবা শুয়ে পড়লো।
———————————-
সকালবেলা। আরশ নিজের দরজা খুলতে গিয়ে দেখল দরজা খুলছে না। তারমানে কেউ বাহির থেকে লক করে রেখেছে। এসব কার কাজ আরশের তা বুঝতে একটুও সময় লাগলো না। মনে মনে খুব রাগ হল আরশের। দরজার উপর ঘুষি মেরে বললো।
“একবার বের হই তোকে বোঝাবো মজা!”
আরিবা খুব মনের আনন্দে ডাইনিং টেবিলে বসে খাচ্ছে।মিস্টার জাকির ও মিস্টার আফজাল অনেক আগেই অফিসের কাজে চলে গেছেন। মিসেস আঞ্জুমান ও মিসেস তারিন রান্নাঘরে কাজ করছে। আরশ দরজাটা নক করছে আর ডাকছে তা কেউই শুনতে পারছে না। আরিবা ওসব শুনে মুচকি মুচকি হাসছে আর ভাবছে কাল কিভাবে ওর মায়ের রুম থেকে বের হইছে।
(*আরিবা নাচা শেষ করেই ওর মায়ের আলমারি থেকে তিনটা শাড়ি বের করলো। শাড়ি তিনটা জোড়া দিয়ে বেলকনির রেলিংয়ের সাথে বাজিয়ে দু কোনা দু হাতে ধরে নেমেছে। পরে টেনে শাড়ি নামিয়ে নিজের সাথে নিয়ে এসেছে। তাই ওখানে কেউ শাড়ি দেখতে পায়নি।*)
মিসেস আঞ্জুমান রান্নাঘর থেকে আসতেই আরশের দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ পেলো। মিসেস আঞ্জুমান আরিবার দিকে তাকিয়ে বললো।
“কি হইছে রে?”
মিসেস আঞ্জুমানের কথায় ওর ধ্যান ভাঙলো। ও খাবার চিবাতে চিবাতে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো।
“আমি কি জানি? আমায় কি টিভি মনে হয় তোমার? যে সব খবর আমার কাছে থাকবে? যাও গিয়ে দেখে আসো!”
মিসেস আঞ্জুমান আরশের রুমের কাছে যেতেই দেখলো দরজা বাইরে থেকে লক করা। মিসেস আঞ্জুমান দরজা খুলে আরশকে বললো।
“আর জ্বালাজ্বালি করিছনা বাবা! তুই করছোছ তাই ও করছে। ও তো ছোটো বুঝে না।”
আরশ মুচকি হেসে ওর কাকিমনির দিকে তাকিয়ে বললো।
“আমার ওকে জ্বালাতে ভালো লাগে তাই জ্বালাই তুমি টেনশন নিও না। বেশি কিছু বলবো না।”
আরশকে সিড়ি দিয়ে নামতে দেখেই আরিবা ওকে জিহ্বা দেখিয়ে ব্যাগটা নিয়ে দিলো দৌড়। আরশ পিছন থেকে জোরে চিল্লিয়ে বললো।
“আজ তোকে পেলে ভর্তা বানাতাম।”
আরিবা যেতে যতে চিল্লিয়ে বললো।
“আমাকে তো পাওনি এবার নিজের ভর্তা বানিয়ে নিজেই খাও।”
ওর কথা শুনে আরশ হেসে ফেললো। ওর দেখা দেখি মিসেস আঞ্জুমান ও মিসেস তারিন ও মন খুলে হাসলেন।
💝
ইনশাআল্লাহ চলবে…..