#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–৫৫
💝
পরীক্ষা দিয়ে হল থেকে বের হয়েছে আরিবা। আজকে ওদের শেষ পরীক্ষা ছিল। ওর সাথে তূর্য, শাওন আর শান্তাও সমান তালে সামনে আগাচ্ছে আর এটা ওটা বলছে। সবাই হাটছে আর বাদাম চিবাচ্ছে। আরিবা সামনে আগাতে আাগাতে মন খারাপ করে সবার দিকে তাকিয়ে বললো।
“আমি মনে হয় এবার A+ পাবো না রে। আমি মনে হয় মেডিকেলেও চান্স পাবো না। আরশ ভাইয়া খুব বকবে।”
তূর্য ধারীম করে ওর পিঠে কিল মেরে বললো।
” তুই গোল্ডেন এ প্লাস পাবি তবু একথা বলছিস? তাহলে আমরা কি বলবো?”
আরিবা ঠোঁট উল্টালো তূর্যের দিকে তাকালো। মানে ও পাবেনা A+, কিছুতেই না। শাওন আরিবার দিকে তাকিয়ে তূর্যর কথার পরিপেক্ষিতে বাদাম চিবাতে চিবাতে বললো।
“সত্যি বলছি আমি মনে হয় পাশেই করবো না। আর ও ১০০% গোল্ডেন এ প্লাস পাবে জেনেও বলছে A+ পাবে না। হে খোদা তাহলে আমি কি বলবো?”
“নারে দোস্ত! সত্যি বলছি, আমার পরীক্ষা ভালো হয় নাই।
বেশি ভালো দিতে পারিনি।”
জোরে শ্বাস ছেড়ে মন খারাপ করে কথাটা বললো আরিবা। শান্তা মাথা নাড়িয়ে সামনে আগাতে আগাতে বললো।
“আমি জানিনা রে দোস্ত! আমার ভাগ্য তো ভালো না। ভাগ্য যদি একটু ভালো হয়। আল্লাহ যদি আমার মুখের দিকে তাকায় তবে প্লাস পেতে পারি।
আরিবা ধারীম করে ওর পিঠে কিল দিয়ে বললো।
“তুই শুয়ে বসে ঘুমিয়ে যেই পড়া পড়েছিস, এ প্লাস না পেলে আমি তোকে আচ্ছা মতো পিটাবো।”
শান্তা চোখমুখ খিচে পিঠ ডলতে লাগলো। শাওন আরিবার দিকে তাকিয়ে বাদাম চিবোতে চিবোতে বললো।
“আরে দোস্ত এমন কি, ও ওয়াশরুমে গিয়েও বই পড়েছে। পড়তে পড়তে বইয়ের জীবন বের করে ফেলেছে। এমন জায়গায় গিয়ে কেউ পড়ে? ওকে তো বইতেও অভিশাপ দেবে। আমি ১০০% শিউর দোস্ত।”
তূর্য ওর সাথে তাল মিলিয়ে বললো।
“তুই একদম সত্যি কথা বলছিস দোস্ত!” আমি ওর বাড়ি গিয়েছিলাম নোট আনতে। আন্টি বললো ওর রুমে আছে। আমি গেলাম ওর রুমে। গিয়ে দেখি ওম..মাহ! ওয়াশরুম থেকে পড়ার শব্দ আসছে আমিতো ফিট খেতে লাগছিলাম।”
আরিবা ভ্রু কুচকে ওদের দিকে তাকিয়ে বললো।
“তোরা সত্যি বলছিস নাকি?” অগত্যা শান্তার দিকে তাকিয়ে বললো। “কিরে শান্তা! ওরা সত্যি বলছে?”
শান্তা আমতা আমতা করে সবার দিকে তাকালো। আরিবার দিকে তাকিয়ে মিনমিনিয়ে বললো।
“ওই আর কি, একদিন ওয়াশরুমে গোসল করছিলাম আর একটু রিভিশন দিয়েছিলাম আর কিছুই না বইন!”
“ওই একেই তো! ওরা তো ঠিক কথাই বলেছে।
কথাটা বলেই আরিবা ওদের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো। আরিবার দেখাদেখি তূর্য ও শাওন উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। শান্তা গাল ফুলিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে রইলো। আরিবা শান্তার দিকে তাকিয়ে বললো।
“রাগ করিছ না। চল ফুচকা খেতে যাই। আজ আরশ ভাইয়ার জরুরি কাজ আছি নিতে আসতে পারবেনা। গাড়ি পাঠিয়ে দিবে। সমস্যা নাই আমি তাকে এক ঘন্টা বসিয়েও রাখতে পারবো। চল চল!”
আরিবার কথা মতো ফুচকা খেতে চললো। ওরা গিয়েই আট প্লেট ফুচকার অডার দিলো। সবাই দু প্লেট করে খাবে। আরিবা আজ সবাইকে খাওয়াবে। শান্তা ফুচকা খেতে খেতে বললো।
“সামনেই আমার বিয়ে হয়ে যেতে পারে।”
আরিবা অবাক হয়ে বললো।
“কি বলোছ? তাহলে শাহীন ভাইয়ার কি হবে? এত্ত বড় একটা স্যাকা কি করে সহ্য করবে বেচারা?”
“তোর বেচারাকেই বিয়ে করবো আমি বুঝলি?”
“ওহ” ওহ বলেই সবাই খেতে থাকলো। শান্তা সবার দিকে তাকিয়ে বললো।
“কিরে তোরা কোনো রিয়েক্ট করলি না কেনো?”
সবাই ওর দিকে গরম চোখে তাকালো। ওদের সবার মাঝে তূর্য বিরক্ত হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললো।
“এই কথাটা গত তিন মাস ধরে বলে আসছিছ্। এখন ফুচকা খাওয়ার মাঝে বলবি তো খবর আছে। সামনে সামনে বলতে বলতে তিন মাস ফুরিয়ে গেলো। আর কত সামনে বইন? দয়া কইরা আমারে একটু বলবি?”
শান্তা অবস্হা খারাপ বুঝে চুপ করে খেতে থাকলো। সবাই খাওয়া শেষ করে বিদায় নিলো। অনেক দিন ওদের দেখা হবেনা। ওরা সবাই একেই কোচিং সেন্টারে ভর্তি হবে এই কথাই হয়েছে ওদের। সবাই নিজেদের বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখতে ওরা মেডিকেলে পড়বে। যদি চান্স পায় তবে। কথা শেষ করে আরিবা গিয়ে গাড়িতে বসলো। গাড়ি আপন গতিতে চলতে শুরু করলো। আরিবা বাইরের পরিবেশ দেখতে লাগলো।
——————————
জিসানদের বাড়িতে আজ খুশির জোয়ার। ঈদের মতো আনন্দ চলছে সবার মাঝে। ওর মা বাবা অনেক খুশি। একমাত্র ছেলে বাবা হতে চলছে আর তারা দাদা দাদি হবে এটা সবার কাছেই আনন্দের। জিসান খবর শুনেই খুশিতে আত্মহারা। তৃনাকে কোলে নিয়ে ঘুরতে লাগলো। তৃনা হাসতে হাসতে বললো।
“আরে পড়ে যাবো তো। নিচে নামাও। পড়ে যাবো।
জিসান ঘুরাতে ঘুরাতে জোরে চিল্লিয়ে বললো।
“আরে পড়বে না। আজ আমি সবাইকে জানাবো। পুরো পৃথিবীকে জানাবো আমি বাবা হতে যাচ্ছি। ”
“আরে আস্তে বলো সবাই শুনবে। লোকে তোমায় পাগল বলবে। নামাও তো! ঢং ছাড়ো।”
“তুমি বুঝবে না আমি কতো খুশি।”
কথাটা বলেই তৃনাকে নামিয়ে বললো।
“দাড়াও শাহীন আর আরশকে বলে নেই। খবরটা শুনলে ওরা অনেক খুশি হবে।”
কথাটা বলেই ওদের গ্রুপে ভিডিও কল করলো।
শাহীন কলটা ধরেই বললো।
“কি মামা এই অসময়ে কল? তাও ভিডিও কল? বিয়ে করার পরতো ভুলেই গেলি। আমাদেরও দিন আসবে। আমাদেরও বউ হবে। কি বলিস আরশ?
“দূর শালা! আমার বৌ এখনও ছোট! বড় হতে টাইম লাগবে। আরও ৪-৫ বছর ওয়েট করতে হবে।”
আরশের কথা শুনে শাহীন মুখ ভেংচিয়ে বললো।
“এই ছোট কে রে? রিবা ছোট?” আরশ ওর দিকে চোখ গরম করে তাকাতেই শাহীন আমতা আমতা করে বললো।
“রিবা ভাবি! আরে বলতে দিবিতো চোখ গরম দেছ কেনো? ১৮ বছর হলেই সবাই বড়। শান্তার ১৮ বছর হয়ে গেছে আমি কদিন পড়েই ওকে বিয়ে করছি। আর ওয়েট করা আমার পক্ষে সম্ভব না।”
“তুই কর। আমার দেরি আছে।”
জিসান ওদের দুজনের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে বললো৷
“দূর শালা! তোদের একটা কথা বলতে কল দিছি আর তোরা বউ নিয়ে লড়াই শুরু করছোছ।”
আরশ চুপ হয়ে বললো।
“আচ্ছা বল! তোর কথা বল আমরা শুনছি।”
জিসান মুচকি হেসে জোরে বললো।
“আরে দোস্ত তোরা চাচ্চু হতে চলছিস আর আমি বাবা হচ্ছি।”
কথাটা শুনে আরশ মুখ বাকিয়ে বললো।
“আমি বিয়েই করতে পারছিনা আর তুই বাবা হচ্ছিছ? আরে তুই তো বেইমান রে। এত কষ্ট কোথায় রাখবো?”
শাহীন অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে গালে হাত দিয়ে বললো।
“এতদিন তাও নিজেকে বুঝ দিয়েছি তুই বিয়ে করলেও বাবা হছনি। আর এখন তো সেটাও হয়ে গেলি। এবার নিজেকে বোঝবো কি করে? বল তুই?”
ওদের কতা শুনে জিসান হতাশ হলো। মন খারাপ করে ওদের দিকে তাকালো। ওর মন খারাপ দেখে আরশ আর শাহীন হেসে একসাথে বলে উঠলো।
“কনগ্রাজুলেশন!”
আরশ হেসে বললো।
“আরে বেটা এটা তো খুশির খবর। মন খারাপ করোছ কেনো। আজ সন্ধ্যায় তৃনাকে নিয়ে আমাদের ফেভারিট রেস্টুরেন্টে আসিছ। চাচ্চু হচ্ছি সেই খুশিতে ট্রিট দিবো।”
“আমিও ট্রিট দিবো। এত্ত বড় একটা খুশির খবর দিলি এটা তোর পাওনা।”
ওদের কথা শুনে জিসান হেসে বললো।
“থ্যাংকস্ দোস্ত।”
আরশ তাড়া দিয়ে বললো।
“আমার জরুরী কাজ আছে দোস্ত। ফোন রাখছি পড়ে কথা হবে। বাই!”
কথাটা বলেই আরশ কল কেটে দিলো। শাহীন কিছুক্ষন ওর সাথে কথা বললো। কিছু কথা বলেই জিসান কল কেটে দিলো।
—————————-
আরিবা গাড়িতে বসে বাড়িতে যাচ্ছে। আরিবা মাঝ পথে আছে। এখনও বাড়ি যেতে অনেকটা দেরি। আরিবা বাইরের দিকে তাকিয়ে ভাবছে আজ আরশ কেনো এলোনা? আরশ এলে ভালো হতো। প্রতিদিন ওর সাথে ঝগড়া করতে করতে যেতো তাতেই অভ্যাস হয়ে গেছে আরিবার। তাই মন খারাপ করে বাইরে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করে গাড়ি থেমে গেলো। আরিবা সামনে না তাকিয়েই বিরক্তি নিয়ে বললো।
“হঠাৎ করে চলন্ত গাড়ি থামাইছেন কেনো? এতে জীবনের ঝুঁকি আছে জানেন না?”
কথাটা বলেই আরিবা সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো। দুটো গাড়ি ওদের গাড়ি আটকে থেমে আছে। আরিবা ভয় পেয়ে গেলো। গাড়িগুলো থেকে মুখোশ পড়া কতগুলো লোক বের হলো। এটা দেখে আরিবা আরও ভয় পেয়ে গেলো। আরিবা গাড়ি খুলে বের হতে যাবে তার আগেই দুজন লোক ওকে ধরে ফেললো। কিছুলোক ড্রাইভারকে স্প্রে করে দিলো। ড্রাইভার অজ্ঞান হয়ে গেলো। আরিবা লোকগুলোর দিকে তাকিয়ে বললো।
“কারা আপনারা? আমার পিছনে পরে আছেন কেনো? ছাড়ুন আমাকে। ছেড়ে দিন!”
লোকগুলো আরিবাকে টেনে ওদের গা্রির দিকে নিয়ে যেতে লাগলো। আরিবা নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে চিল্লিয়ে বলতে লাগলো।
“হেল্প! সাম বডি হেল্প মি! কেউ আছেন হেল্প!”
লোকগুলো আরিবাকেও স্প্রে করে দিলো। আরিবা সাথে সাথেই অজ্ঞান হয়ে গেলো। লোকগুলো ওকে গাড়িতে উঠিয়ে নিজেদের গন্তব্যে চললো।
💖
ইনশাআল্লাহ চলবে….
(রি চেইক করিনি ভুলত্রুটি মাফ করবেন।)