#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–৫৯
💖
চেয়ারের সাথে শক্ত করে বাধা অবস্থায় ঝিমাচ্ছে মি. জাকির। সামনে বন্দুক হাতে নিয়ে বসে আছে আরিবা। খুব রেগে আছে আরিবা। যখন তখন গুলি করে দিতে পারে। মি. জাকির পিনপিন করে চোখ খুলে আরিবার দিকে তাকালো। ঘাড় কাত করা অবস্থায় আরিবার দিকে তাকিয়ে অনেক কষ্টে বললো।
“মামনি কি হয়েছে আমায় এমন বেঁধে মারছো কেনো?”
আরিবা কপাল কুচকে তাকালো। মি. জাকিরের কথায় একটুও পাত্তা দিলোনা। মি. জাকিরের দিকে এগিয়ে বললো।
“একদম মামনি বলবেন না আমায়। আমি আপনার মামনি নই। আপনার মুখে মামনি ডাকটাও অসহ্য লাগছে।”
“মামনি আমি..”
“চুপ! একদম চুপ! মুখ থেকে একটা সাউন্ড বের হলেও গুলি করে দেবো। আজ আমার হাত কাপপে না। এই হাত দু দুইটা খুন করেছে। হ্যাঁ আমি খুনি। এটা বলতে আমার কেনো আফসোস নেই। এই খুন আমি কার কথায় করেছি? আপনার কথায়! আর আপনি নিজেই একটা খুনি যে কিনা আমার আম্মুকে খুন করেছে!”
আরিবার কথার মানে বুঝতে পারলোনা মি. জাকির। অনেক স্বল্প স্বরে বললো।
“তুমি এসব কি বলছো মামনি?”
“চুপ!”
আরিবার ধমকে সারা রুম কেঁপে উঠলো। আরিবা আবারও দাঁতে দাঁত চেঁপে বললো।
“আপনার মুখে আমি মামনি ডাক শুনতে চাইনা। আপনি খুনি। আমার বাবার খুনি। আমার ভালোবাসার মানুষের খুনি। আপনার জন্য আমি ওই নির্দোষ লোকটাকে মেরেছে যে প্রতি পদে পদে আমায় আপনার মতো খুনির থেকে বাঁচিয়েছে। ছিঃ ভাবতেও ঘৃনা হয় এতকাল আমি আপনায় বাবার মতো যেনে এসেছি।”
“মামনি আমি তোমায় সত্যি মেয়ের মতো ভালোবাসছি।”
“নো মি. জাকির চৌধুরী! আপনি আমায় সম্পত্তির জন্য বড় করেছেন। শুধু সম্পত্তির জন্য। আপনার ভালোবাসা আপনার দয়া মায়া সবেই ছিলো লোক দেখানো। কিন্তু আমার আম্মুর ভালোবাসা ছিলো নিঃশ্বার্থ। আপনি তাকেও খুন করলেন। আপনার প্রতি লজ্জা!”
আরিবা ঘৃনায় চোখ ফিরিয়ে নিলো। মি. জাকির আরিবার দিকে তাকিয়ে বললো।
” তোমায় এসব কে বলেছে মামনি?”
“মিসেস নাজমুল হক মনে পড়ে? মিসেস আয়শা? নামটা মনে পড়ে পড়ে? নাবিলা হক! মনে পড়ে?”
মি. জাকির থতমত খেয়ে গেলো। অনেক দিন পর কেউ এই নাম নিলো। আরিবা কোথা থেকে শুনলো তা বুঝতে পারছেনা। মি. জাকির অবাক হয়ে বললেন।
“তোমায় এ নাম কে বলেছে? তুমি আয়শাকে কোথায় পেলে? ও বেঁচে আছে?”
“আরশ! আরশ ভাইয়া আমায় বলেছে। যে তোমার আর কাকার সব কুকর্ম সম্পর্কে জানতো আর তোমাদের দলে থাকার ভান করে আমায় বাঁচাতো। মিসেস আয়শা কেও আরশ ভাইয়াই সরাইছে।”
মি. জাকির এবার ভালোভাবে তাকিয়ে বললো।
“আমি জানতাম আরশেই আমাদের মাঝে বেইমান যে তোকে বাঁচাতো। তাইতো তোকে দিয়ে ওকে আর ওর বাবাকে রাস্তা থেকে সরালাম যাতে সম্পত্তি আমি একা ভোগ করতে পারি।”
আরিবা ঘৃনার দৃষ্টিতে তাকালো। আহত গলায় বললো।
“তাহলে আম্মুকে কেনো মারলেন?”
“ও আমার আর আরশের বাবার কথা শুনে ফেলেছিলো। তাই বুদ্ধি করে ওকে মেরে আরশকে ফাঁসিয়েছি।”
কথাটা বলেতেই আরিবা নাক বরাবর ঘুষি দিলো।
“ছিঃ তুই এত নোংরা যে সম্পত্তির জন্য নিজের বউকেও মেরে ফেললি? এবার পরপারে গিয়ে সম্পত্তি ভোগ কর! কথায় আছে লোভে পাপ পাপে মৃত্যু।”
কথাটা বলেই আরিবা মি. জাকিরের হার্ড বরাবর ৪টা গুলি করলো। দুটো গুলি আগে ও মি. আফজালের বুকে মেরেছে। আহত চোখে তাকিয়ে ভাবলো শুধুমাত্র সম্পত্তির জন্য আজ কতকিচু হয়ে গেলো। সম্পত্তির জন্য কত খুনাখুনি। মানুষ সম্পত্তির জন্য কত নিচে নামতে পারে তা মি. জাকিরকে না দেখলে আরিবা বিশ্বাসেই করতে পারতো না। যে মানুষটাকে ও বাবা জানতো আসলে সেই মানুষটাই ওর বাবার খুনি? ভাবতেই ঘৃনা এলো আরিবার। মি. জাকিরের গায়ে একটু থু থু মেরে হসপিটালে গেলো। সেখানে গিয়ে দেখলো মিসেস আয়শা কান্না ভেজা চোখে বসে আছেন। সজল টেনশন নিয়ে দাড়িয়ে আছে। পাশে মিসেস তারিন বসে কাঁদছেন। নিজের স্বামীর মৃত্যুতে শোকাহত তিনি। জানেন তার স্বামী খুনি কিন্তু তবুও কষ্ট হচ্ছে। আরশের জন্য বেশি কাঁদছেন তিনি। আরিবা তাড়াতাড়ি তার কাছে গিয়েই বললো।
“কাকিমনি আরশ ভাইয়া কেমন আছে? ”
মিসেস তারিন কান্না ভেজা গলায় বললো।
“আরশ একেবারেই ভালো নেই”
আরিবা তারাহুরো করে ডক্টরকে জিজ্ঞাসা করলো।
“ডক্টর আরশ ভাইয়া কেমন আছেন?”
ডক্টর আহত গলায় বললো।
“দেখুন এখন কিছুই বলতে পারছিনা। মাথার আঘাতটা খুবেই গুরুতর। অবস্থা বেশি ভালোনা।”
কথাটা শুনেই সবাই বসে পড়লো। আরিবা চোখমুখ খিচে বসে রইলো। কষ্টে ওর বুকটা ফেটে আসছে। কিন্তু কি করবে ও ওর তো কিছু করার নাই। মিসেস আয়শা ওর পাশে বসে ওকে একটু শান্তনা দিলো। আরিবা নিজের মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো। ওর মায়ের বুকেই চোখ রেখে আগের কথা ভাবতে লাগলো।
—————————
আরশ মায়াপরী বলে পরে যেতেই আরিবা অবাক হলো। তাহলে মায়াপরী ও নিজে? আরশ যাকে জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসে সে ও? আরিবা দৌড়ে আরশের কাছে গেলো। হাটু গেড়ে ওর পাশে বসে পড়লো। কান্না ভেজা চোখে আরশের দিকে তাকালো। আরশ আস্তে করে হাতটা আরিবার গালে উঠালো। আস্তে আস্তে আরিবার গালে স্লাইড করে থেমে থেমে বললো।
“মায়াপরী এটা তুমি কি করলে? আমায় কেনো মারলে?”
“তুমি আমার আব্বু আম্মুকে কেনো মারতে চাইছো?”
আরশ খুব অবাক হলো। মাথাটা আরিবার কোলে রেখে বললো।
“মায়াপরী! এটা তুমি কি বলছো? তোমার বাবা এসব বলছে?” আরিবা মাথা জাঁকালো। আরশ হালকা হেসে বললো।
“সে বললো আর তুমি বিশ্বাস করলে? আমার প্রতি তোমার এই বিশ্বাস? একটুও ভালোবাসো না আমায়? আমিতো জানতাম আমার মায়াপরী আমায় অনেক বিশ্বাস করে কিন্তু কথাটা মিথ্যে?”
আরিবা কিছুই বললো না। নিঃশব্দে কেদে দিলো। আসলেই রাগে ওর মাথা ঠিক ছিলোনা। রাগে মানুষ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আরশ আরিবার হাতটা ধরে বললো।
আমায় একটু মনের কথাটা বলারও সুযোগ দিলে না? জানো সেই ছোট থেকে অপেক্ষা করেছি কবে তুমি বড় হবে আর আমি তোমায় মনের কথা বলবো৷ সেই দিন আর এলোনা। তোমায় আপন করে পাবার দিন আর এলোনা। কেনো আমার সাথেই এমন হলো বলোতো মায়াপরী?”
আরশের কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে তবুও থেমে থেমে কথা বলছে। আরিবার ওর কথা শুনে কেঁদে দিলো। ও নিজেও খুন করতে চায়নি। কিন্তু নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। ওই ভিডিও ওর মাথা নষ্ট করে দিয়েছিলো। আরশ কষ্টের মাঝেও হালকা হেসে আবারও বললো।
“জানো তোমায় ইচ্ছে করে বারবার রাগাতাম? রাগলে তোমায় অনেক সুন্দর লাগে। তোমায় সারাদিন দেখতে ইচ্ছে করতো আমার। মনেহতো যুগ যুগ তোমায় দেখলেও দেখার আশা মিটতো না। তোমার মধ্যে হারিয়ে যেতাম। তাইতো সারাদিন তোমার পিছনে লেগে থাকতাম। তুমি যেটা চাইতে সেটাই তোমায় দিতাম তবে তোমায় একটু রাগানোর পরে। মাঝে মাঝে মারতাম পরে নিজেকেই নিজে কষ্ট দিতাম। কত পাগলামি করতাম তোমায় নিয়ে। কেউ তোমার দিকে তাকালেও আমি তাকে আচ্ছা করে মাইর দিতাম। ”
কথাটা বলেই হেসে ফেললো আরশ। আরিবা কেঁদেই চলেছে। ওর চোখের পানি গাল গড়িয়ে পরতে লাগলো। আরশ চোখের পানিটা মুছে বললো।
“তোমার চোখের জল আমায় খুব কষ্ট দেয় প্লীজ আর কেঁদো না! এই চোখের জল আমাকে এই ছুড়ি দিয়ে আঘাত করায় যতটা কষ্ট না পেয়েছি তার থেকে বেশি কষ্ট পাচ্ছি। কত স্বপ্ন ছিলো তোমায় নিয়ে। যতটা জ্বালিয়েছি তার থেকেও বেশি ভালোবাসা দিবো ভেবেছিলাম। কিন্তু তা আর হলোনা। আমি তোমায় কতটা ভালোবাসি তা বলার আগেই আমায় এই পৃথিবী ছেড়ে যেতে হবে। কেনো এমন হলো মায়াপরী? কত ভেবেছিলাম তোমায় যেদিন আপন করে পাবো ওইদিন আমার পুরো পৃথিবী পাওয়া হবে। সেটা আর হলো না। তোমার ভালোবাসা নিয়ে মরতে না পারলে আমি যে মরেও শান্তি পাবোনা। প্লিজ একবার ভালোবাসি কথাটা বলো। তোমার মুখ থেকে শুনতে পারলেই আমি স্বর্গসুখ পাবো। প্লীজ দেরি করো না। আমার হাতে সময় নেই!”
আরশের কথা শুনে আরিবা শব্দ করে কেঁদে উঠলো। আরিবা কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গেছে। আরিবা আরশের দিকে তাকিয়ে হেঁচকি দিতে দিতে বললো।
“একথা বলো না ভাইয়া। আমি..আমি তোমায় অনেক বিশ্বাস করি! আমি…”
“স্যার!”
সজলের কথা শুনে দুজনেই ওর দিকে তাকালো। সজল অবাক হয়ে আরশের কাছে আসলো। হাটু গেড়ে বসে হাফিয়ে হাফিয়ে বলতে লাগলো।
“স্যার! কে আপনার এই অবস্থা করেছে? ম্যাম স্যারের এমন হলো কিভাবে?”
সজল আরশের পিছু নিয়েছিলো। এখানে এসে এটা দেখবে কখনই ভাবেনি। আরিবা কিছুি বলেনি। আরশ মুচকি হেসে বললো।
“মায়াপরীর হাতে মরতে পারাটা আমার কাছে সৌভাগ্যের!”
সজল আরিবার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললো।
“ম্যাম! এটা আপনি কি করেছেন?”
একটু জোরেই রেগে কথাটা বললো সজল আরশের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে গেছে। কথা বলতে কষ্ট তাও সজলের দিকে তাকিয়ে বললো।
“মায়াপরীকে কিছুই বলবি না। ওকে আগলে রাগবি এটা আমার অর্ডার! ও যা বলে সব শুনবি।”
সজল কিছুই বললো না আর। আরশকে টেনে তুললো। একা তুলতে পারছেনা। তাও অনেক কষ্ট করে তুলে নিয়ে যেতে লাগলো। হসপিটালে যেতে যেতে আরশের জ্ঞান চলে গেলো। তাড়াতাড়ি হসপিটালে এনে আই সি ইউ তে ঢুকালো।
———————————–
“ম্যাম ডক্টর আসছে!”
সজলের ডাকে আরিবার ধ্যান ভাঙলো। আরিবা তাড়াতাড়ি করে উঠে ডক্টরের কাছে গেলো। সবাই ওর পিছে পিছে গেলো। আরিবা ডক্টরের কাছে গিয়েই জিজ্ঞাসা করলো।
“আরশ ভাইয়া কেমন আছে?”
ডক্টর চুপ করে রইলো। ডক্টরকে চুপ থাকতে দেখেই মিসেস তারিন কেঁদে ফেললো। মিসেস আয়শা তাকে ধরে শান্ত হতে বললেন। আরিবা শক্ত হয়ে দাড়িয়ে রইলো। সজল আবার জিজ্ঞাসা করলো।
“প্লীজ ডক্টর চুপ থাকবেন না। সবাই ভয় পাচ্ছি। স্যারের কি খবর বলেন প্লীজ!”
ডক্টর মন খারাপ করে বললো।
“দেখুন আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি কিন্তু সরি…”
কথাটা বলেই ডক্টর চলে গেলো। সবাই কন্নায় ভেঙে পড়লো। আরিবা কিছুই বললো না চুপচাপ ভাবলেশহীন ভাবে পাশের চেয়ারে বসে পড়লো।
💝
ইনশাআল্লাহ চলবে…..
(রি-চেইক করা হয়নি। হয়তো অনেক কিছু বুঝতে পারছেন না। সামনের পর্বে ক্লিয়ার করবো ইনশাআল্লাহ। আসল কালপিট কে বুঝতে পারছেন?)