অজানা পর্ব-৬৪

0
1925

#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–৬৪

💝

আরিবা বোতলের মুখটা খুলতে ছিলো হঠাৎ করেই হালকা আওয়াজ শুনতে পেলো। আওয়াজটা কোথা থেকে আসছে তা জানতে এদিক ওদিক তাকালো। কিন্তু কিছুই দেখতে পেলো না। হঠাৎ সামনে তাকিয়ে ও অবাক হয়ে গেলো। অক্সিজেন পাইপের ভিতরে আরশের মুখ নড়ছে। তার মানে আরশ কিছু বলছে ওকে? আরিবার মনে হচ্ছে ও স্বপ্ন দেখছে। নিজের হাতে চিমটি কেটে দেখলো সত্যি কিনা? দেখলো সত্যি ও স্বপ্ন দেখছেনা। খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল ও। কাউকে ডাকবে সেটাও করছেনা। আরশের মএুখের কাছে কান নিতেই আরিবার অস্পষ্ট হালকা ভাবে শুনতে পেলো আরশ মায়াপরী… মায়াপরী বলছে। খুশিতে আরিবার চোখে পানি চলে এসেছে। চোখের পানিটা মুছেই আরশের দিকে তাকিয়ে বললো।

“এইতো তোমার মায়াপরী! তোমার সাথেই আছি। তেমার মায়াপরী তোমায় ছেড়ে কখনও কোথায় যাবে না। সব সময় তোমার সাথে থাকবো। এই তোমায় ছুয়ে কথা দিলাম।”

আরশের হাতটা ধরে কথাটা বললো। আরশ হয়তো আরিবার কথা শুনতে পাচ্ছে। আরশ হালকা হাত পা নাড়াচ্ছে। আরিবা তাড়াতাড়ি করে ডক্টর ডাকলো। আরিবার চিৎকার শুনে সবাই ভয় পেলো। সবাই ভেবেছে আরশের কিছু হয়েছে। তাড়াহুড়া করে সবাই রুমের ভিতরে প্রবেশ করলো। নিদ্র আরিবার কাছে গিয়েই জিজ্ঞাসা করলো।

“কি হয়েছে বিউটি ডল? এভাবে ডক্টর ডাকলে কেনো? আরশ ঠিক আছে তো?”

মিসেস তারিন ভিতরে গিয়েই কান্নাকাটি শুরু করে দিলো। আরিবার খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেছে। এ জন্য ওর মুখ দিয়ে কথাই বের হচ্ছেনা। আরিবা ইশারা করে আরশের দিকে দেখাতেি সবাই খেয়াল করলো আরশের হাত নড়ছে। সবাই খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। তূর্য শাওনকে জড়িয়ে ধরলো। জিসান শাহীনকে জড়িয়ে ধরলো। মিসেস তারিন এবার চোখের পানিটা মুছে হালকা হাসলেন। আরিবাও হাসছে। নিদ্র ঠোঁটে হাসি নিয়ে আরিবার দিকে তাকিয়ে আছে। নিদ্র এতেই খুশি। আরিবার হাসিখুশি মানেই ওর হাসিখুশি। ডক্টর রুমে ঢুকেই রাগি গলায় বললো।

“আপনারা সবাই এখানে কি করছেন? এভাবে হইচই করছেন কেনো? এটাকে কি আড্ডাখানা মনে করেছেন? এখানে ক্রিটিক্যাল পেশেন্ট আছে জানেন না?”

নিদ্র ডক্টরের দিকে তাকিয়ে বললো।

“আপনাদের কখন ডাকা হয়েছে? আপনারা এত লেট করে আসছেন কেনো? আপনারা আসতে আসতে তো একজন পেশেন্ট জমের বাড়ি চলে যাবে। সময়ের মূল্য বুঝতে শিখুন। ঠিকমতো নিজের দায়িত্ব পালন করুন।”

ডক্টর আরশের কাছে গিয়ে ওকে চেক করলো। একটু দেখে বললো।

“গুড লাক যে পেশেন্টের জ্ঞান ফিরেছে নাহয়..”

“নাহয় টা পরে বলুন ডক্টর! আগে চিকিৎসা করুন। যেটা হয়নি সেটা বলে কি লাভ?” যেটা গেছে ওটাকে টেনে আনার দরকার নাই।”

জিসানের কথাশুনে চুপ হয়ে গেলো ডক্টর। ডক্টর নিজের কাজ করতে লাগলো। আরশের অক্সিজেন খুলে একটা ইনজেকশন দিয়ে দিলো। তারপর সবার দিকে তাকিয়ে বললো।

“চিন্তার কিছুই নাই। পেশেন্টের জ্ঞান ফিরেছে একটু বিশ্রাম দরকার তাই আমি ইনজেকশন দিয়ে দিলাম। দু ঘন্টা পর জেগে উঠবে তখন কথা বলতে পারবেন।”

আরিবা ডক্টরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো।

“ডক্টর! পেশেন্টকে কবে বাড়ি নিয়ে যেতে পারবো?”

“তিনদিন পর! আসি!”

কথাটা বলেই ডক্টর চলে গেলো সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বসে পড়লো। সবার বুকের উপর থেকে যেনো পাথর নেমে গেলো।

——————————-

আরিবা আরশের পাশে বসে আছে। দু ঘন্টা দরে অপেক্ষা করছে কখন আরশের সাথে কথা বলবে ও। আরিবা দুই দিন ধরে ঘুমায় না। আরশ সুস্হ হয়েছে জেনে একটু চিন্তা মুক্ত হলো। তাই ও অপেক্ষা করতে করতে কখন ঘুমিয়ে গেছে তা বুঝতে পারেনি। মিসেস তারিন আর মিসেস আয়শাকে আরিবা বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। মিসেস তারি যেতে চায়নি তবুও আরিবা জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছে। এখনতো টেনশন নেই। তারা ছাড়া সবাই আরশের রুমেই বসে অপেক্ষা করছে। সজল, জিসান তৃনা,শাহীন শান্তা, নিদ্র সারলিন, তূর্য আর শাওন সবাই বসে বসে ঝিমাচ্ছে। হঠাৎ আরশের ঘুম ভেঙে গেলো। নাড়াচাড়া করে পাশে তাকাতেই আরিবাকে দেখতে পেলো। আরিবাকে দেখে আরশ ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো। এক ধ্যানে আরিবাকে দেখতে লাগলো। মনেহয় কত বছর যেনো দেখে না ওকে। আরিবাকে দেখে আরশ খুব অবাক হলো। আগের মতো নাই। কেমন শুকিয়ে গেছে। গালে ময়লা লেগে আছে। আরশ আস্তে করে আরিবার গালে হাত রাখলো। আরশ গালে হাত রাখতেই পাশ থেকে কেউ কেশে উঠলো। কাশির আওয়াজ অনুসরণ করে তাকাতেই জিসানকে দেখতে পেলো। জিসান দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো।

“আস্তে মামা! এত তাড়া কিসের। ধীরে সুস্থে রোমাঞ্চ করো। এত তাড়াহুড়োর কিছু নাই চীল মামা! এখানে আমরা সবাই আছি আমাদের চোখতো আর বাঁধা মানবে না তাই না বল?”

“ঠিক বলেছিস! আমরা গেলেই নাহয় রোমাঞ্চ করিছ। আমরা তো আর নিয়ে যাচ্ছি না। আপাদত আমাদের সাথে একটু গল্প কর!”

জিসান আর শাওনের কথা আরশ ওদের দিকে তাকালো। দু আঙ্গুল কপালে ঘেষে রেগে বললো।

“শালা তোরা আসলেই হারামী! তোরা আমার বন্ধু নামের শত্রু। তোরা সবসময় আমার রোমাঞ্চের বারোটা বাজাছ। তোদের সাথে অনেক গল্প করছি আর গল্প বাকি নাই।”

“তা বাকি থাকবে কেনো? আমরা তো গেছি। এখন তো তোমার জুলিয়েটের সাথে গল্প করবা!”

জিসানের কথা শুনে শাওন মাঝ থেকে বলে উঠলো।

“আহারে কি প্রেম রে! এ যেনো লাইলি মজনুর প্রেম। একজনের জন্য আরেকজন দিওয়ানা হয়ে যায়। আমি এই প্রেম জীবনেও দেখিনি ভাই!”

শাওনের কথা শুনে সবাই ঠোঁট চেঁপে হাসলো। তূর্য ওর সাথে তাল মিলিয়ে আরশকে উদ্দেশ্য করে বললো।

“আরে ভাইয়া কি ভালোবাসা সেটা যদি দেখতেন আপনি নিজেই পাগল হয়ে যেতেন। আপনার জন্য খাওয়া দাওয়া গোসল ঘুম সব বাদ দিয়ে পাগলের মতো বসে ছিলো। আমার কি যে খারাপ লাগছে ভাইয়া বোঝাতে পারবোনা।”

আরিবার কথা শুনে আরশের খুব কষ্ট হচ্ছে। আবার ভালোও লাগছে ওকে এত ভালোবাসে বলে। আরিবা ওকে এত ভালোবাসবে সেটা ও কল্পনাও করেনি। শান্তা আরশের দিকে তাকিয়ে আফসোস করে বললো।

“বিরিয়ানী ওর কত পছন্দের সেই বিরিয়ানী টাও খায়নি। আমার অনেক খারাপ লাগছিলো। দুই দিন ধরে পানি ছাড়া কিছুই খায়নি। সবাই তো ভয়ে ছিলাম যে আপনার সাথে সাথে আমরা আরিবাকেও হারাবো।”

আরশ হতাশ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। আসলে ভালোবাসাটা এমনেই যাকে ভালোবাসে তাকে ছাড়া সব কিছুই মূল্যহীন। আরশ চোখ ফিরিয়ে আরিবার দিকে তাকালো। ওর মনে মনে খুব খারাপ লাগছে। আরিবাকে কেমন এতিম এতিম লাগছে। শুকিয়ে গেছে একেবারে। আরশ ভেবেছিলো আরিবার সাথে অভিমান করে থাকবে কিছুদিন কথা বলবেনা। কিন্তু আরিবা যে কষ্ট পেয়েছে তারপর ওকে আর কষ্ট দেওয়া ঠিক হবেনা।

নিদ্র এতক্ষণ চুপ ছিলো। আরশের দিকে তাকিয়ে বললো।

“আরশ আমার বউ! সারলিন। তোকে ছাড়াই বিয়ে করে নিয়েছি।”

আরশ মুচকি হেসে বললো।

“ভালো করেছিস। আমার মতো বুইড়া হওয়ার দরকার নাই ভাই৷ বয়স গেলো গিয়ে এখন বিয়ে করলে নাতি নাতনির বিয়ে খাবো কখন?”

শান্তা ঠোঁট চেঁপে হেসে বললো।

“ভাইয়া আপনিও আরিবার মতো নাতি নাতনির বিয়ে নিয়ে পরে আছেন? ওর থেকেই মানুষ আজব জিনিস শিখে।”

আরশ মুচকি হাসলো। শাহীন নিজের ছেলেকে এগিয়ে এনে বললো।

“আমার ছেলে শান্ত। সাদমান শান্ত। নামটা সুন্দর না বল!”

আরশ সবার দিকে তাকিয়ে বললো।

“শালা সবাই আমায় রেখে বিয়ে করে নিলো। আবার বাবাও হয়ে গেলো? আমি কি করেছি তাহলে? এই কেউ বিষ আন খেয়ে মরে যাই। এ জীবন রেখে কি করবো?”

জিসান ওর ছেলেকে নিয়ে আরশের কাছে এগিয়ে এসে বললো।

“ভাই থাম! তুই মরলে আমার কি হবে? আমার ছেলেটা বুড়ো হয়ে যাচ্ছে। ভেবেছিলাম শাহীনের মেয়ে হলে ওর সাথেই আত্মীয় করবো৷ তা আর হলোনা শালা একটা ছেলে জন্ম দিয়েছে। ও শালা শালাই থেকে যাবে। বেয়াই আর হতে পারবেনা। এখন তুই তাড়াতাড়ি বিয়ে করে একটা মেয়ে জন্ম দে ভাই! আমি ছেলের বউ করে নিয়ে যাই!”

ওর কথা শুনে সবাই হেসে ফেললো। আরশ ওর দিকে তাকিয়ে বললো।

“তোরা দুটোই এক রকমের। আমার মেয়ের বিয়ে তোর ছেলের সাথে দিবোনা।”

“তোর দিতে হবেনা। আমার ছেলেই ভাগিয়ে নিতে পারবে কি বাবা! পারবে না?”

জিসান নিজের ছেলেকে জয়কে প্রশ্ন করতেই ওর ছেলে স্টং দাড়িয়ে বলে উঠলো।

“পারবো তো!”

ওর কথাটা শুনে সবাই হেসে উঠলো। আরশ হাসতে হাসতে বললো।

“বাহ বাহ কি এ্যাটিটিউট!”

“তোর মেয়েকে বিয়ে করবে তাই তোর মতোই বানাচ্ছি!”

দাত কেলিয়ে কথাটা বললো জিসান। আরশ জিসানের ছেলের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো।

“তোমার নাম কি বাবু?”

“তূর্জয় হোসেন! সবাই জয় বলেই ডাকে।”

কতাটা শুনে আরশ মুচকি হাসলো। আরশ সবার দিকে তাকিয়ে বললো।

“তোরা একটু বাইরে যা এবার প্লিজ! আরিবার সমস্যা হচ্ছে। সজল! দু প্যাকেট বিরিয়ানী দিয়ে যাহ।”

“ওকে স্যার!”

কথাটা বলে সজল চলে গেলো। ওর পিছনে পিছনে সবাই গেলো। ওরা যেতেই আরশ আরিবার গালে হাত রাখলো। হালকা করে স্লাইড করতে করতে ঠোঁটের কাছে এনে থামলো। আরিবার ঠোঁট একেবারে শুকিয়ে আছে। আরশ বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে আরিবার ঠোঁটে স্লাইড করতে লাগলো। আরিবা সুরসুরি অনুভব করে জেগে উঠলো। আরিবা উঠেই আরশকে দেখে অবাক হলো। অগত্যাই আরশকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো। আরশও আরিবাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। আরিবা জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বললো।

“আমি নাহয় একটু ভুল করেছি। সেজন্য এত শাস্তি দিবে? এতটা বছর কাঁদাবে আমায়? আমি অনেক রাগ করেছি তোমার সাথে। আমি কত কষ্ট পেয়েছি জানো? আমি সারারাত কেঁদেছি কিন্তু নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো কিছু খুঁজে পাইনি। আমি তো ভেবেছিলাম তোমায় হারিয়ে ফেলেছি। তুমি আর কখনও আমায় রেখে যাবে না বলে দিলাম।”

কথাটা বলেই আরিবা আরশকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আরশ কিছুই বলছেনা চুপচাপ আরিবার কথা শুনছে। আরিবার পাগলামি দেখে হেসে ফেললো আরশ। এর মধ্যেই দু প্যাকেট বিরিয়ানী নিয়ে এলো সজল। বিরিয়ানী দিয়েই ও চলে গেলো। আরশ ওটা খুলে আরিবাকে দিতে দিতে বললো।

“খাওয়া শুরু কর!”

আরিবা অবাক হয়ে বললো। “আমি সব খাবো?”

“জি! আপনি সব খাবেন। আমার কাছে খবর আছে দুদিন ধরে আপনি খাননি দেবদাস হয়ে গিয়েছিলেন সেজন্য এই শাস্তি যাতে কখনও খাওয়া বন্ধ না করেন!”

আরিবা ঠোঁট উল্টালো। ভাবলো এতে যদি আরশের দয়া হয় কিন্তু না আরশ উল্টো ধমক দিয়ে বললো।

“কোনো অজুহাত দিবি তো শাস্তি আরও বাড়বে। তাড়াতাড়ি খা! সব শেষ করে তবেই উঠবি!”

আরিবা আরশের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতে করতে খাবার মুখে তুললো। ও ভেবেছিলো আরশ ভালো হয়ে গেছে৷ কিন্তু না। এই ছেলে জীবনেও ভালো হবার না। আস্ত খবিশ!

💖

ইনশাআল্লাহ চলবে……

(রি-চেইক করিনি ভুল হবে জানি বুঝে নিউ প্লিজ। এই নেও তোমাদের আরশ আর আরিবাকে মিলিয়ে দিলাম। গল্পটা আরও ৫-৬ পর্ব বাড়াতে পারতাম বাট বাড়াবো না। সামনের পর্বে ওদের বিয়ে তোমাদের দাওয়াত। শুভ রাত্রি গাইস)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here