#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ ২৫
#লেখিকাঃ আদ্রিতা খান অদ্রি
আদ্রিতার বিধ্বস্ত দেহটি নিচে পরে আছে। হাতে কাঁচের চুরি গুলো ভেঙে হাত থেকে রক্ত পড়ছে। শাড়ি কিছুটা এলোমেলো। কিন্তু শাড়ির উপরে শরীরের কোনো অংশ বোঝা যাচ্ছে না। হিজাবটি খুলে গিয়েছে। লিপস্টিক এলোমেলো।
কয়েকঘন্টা আগে ~
একটু পরেই সাজ্জাদ আদ্রিতার ঠোঁট জোড়া মুক্ত করে দিলো। আদ্রিতা লজ্জায় কুঁকড়ে উঠলো।
ছাড়ুননন কি করছেন। (আদ্রিতা)
সাজ্জাদ আর ও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। সারাদিন ত দৌড়াদৌড়ি করতে থাকো। একটু আমার কাছে থাকলে কি হয়? (সাজ্জাদ)
জানি না। কিন্তু এখন কাজ আছে ছাড়ুনন আমাকে
আর কেউ এসে পড়লে অনেক খারাপ ভাববে। ছেড়ে দিন। (আদ্রিতা)
বাইরে বডিগার্ড আছে। আর স্বাধীন ও এখন আসবে না তাই তুমি নিশ্চিন্তে বসে থাকতো পারো। (সাজ্জাদ)
উফফফ ছাড়ুন আলো নিশ্চয়ই আমাকে খুঁজে চলেছে। আপনার সাথে যদি আমাকে দেখে তাহলে ওকে কি জবাব দিবো? (আদ্রিতা)
বলো দিও নিজের হাসবেন্ডের কেলো বসে থাকা দোষের না। (সাজ্জাদ)
উফ অ*সভ্য লোক একটা যখনই সুযোগ পাচ্ছে আমাকে কাছে টেনে নিচ্ছে। (মনে মনে)
ছেড়ে দিন (আদ্রিতা)
আরে এতোবার বলছো ছেড়ে দিতে যেনো মনে হচ্ছে অন্য কেউ তোমার শরীরে ধরেছে। এ শরীরে শুধুই আমার অধিকার। (সাজ্জাদ)
কথাটি বলে সাজ্জাদ আরেক বার আদ্রিতার ঠোঁট স্পর্শ করতে নিলে। আদ্রিতা মুখে হাত দিয়ে ফেলে। সাজ্জাদ হেঁসে উঠলো।
আচ্ছা নামো। (সাজ্জাদ)
আদ্রিতা যেনো এই কথার অপেক্ষাই করছিলো। দ্রুত নেমে নিজেকে একটু ঠিক করে নিলো।
হঠাৎ পে*টের উপর কারোর হাতের ঠান্ডা স্পর্শ পেয়ে আদ্রিতা বরফের ন্যায় শক্ত হয়ে গেলো। সাজ্জাদ পিছন থেকে আদ্রিতাকে জড়িয়ে ধরেছে। সেই সাথে শাড়ির আঁচলের নিচ দিয়ে উন্মুক্ত পে*টে হাত দিয়েছে। সাজ্জাদের স্পর্শে আদ্রিতার বরফের ন্যায় হয়ে গেছে। সাজ্জাদ আদ্রিতাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে আদ্রিতার কোমর জড়িয়ে একটু উঁচু করে আবার ঠোঁট ঠোঁট মিশিয়ে দিলো। কতক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে বললো,
যাও মুক্ত করে দিলাম কিছুক্ষণের জন্য। কিন্তু কিছুদিন পর আবার আমার খাঁচায় বন্দি করে নিবো। (সাজ্জাদ)
আদ্রিতা আর কিছু বললো না দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। সাজ্জাদ হেঁসে উঠলো।
*******
স্বাধীন সামিরাকে দেখে থমকে গেলো।
আবির তুমি চলে যাও আমি যেতে পারবো। তোমার নিশ্চয়ই কাজ আছে। (স্বাধীন)
জ্বি ভাইয়া (আবির)
ওকে তাহলে যাও তুমি (স্বাধীন)
আবির চলে গেলো। আবির যাওয়ার পর স্বাধীন সামিরার কাছে আসলো,
আরে মিস সামিরা আপনি এইখানে? (স্বাধীন)
হঠাৎ স্বাধীনের কথা শুনে সামিরা একটু চমকে উঠেছিলো। নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললো,
জ্বি, ওই আদুরির কলেজের অনুষ্ঠানের জন্য এসেছি। কিন্তু আপনি এইখানে? (সামিরা)
(সামিরা জানে স্বাধীন কেনো এইখানে এসেছে তবুও জিজ্ঞেস করলো)
আমি আমন্ত্রিত। (স্বাধীন)
ও আচ্ছা। (সামিরা)
জ্বি। তারপর বলেন কি খবর? কেমন আছেন?(স্বাধীন)
আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি? ( সামিরা)
জ্বি আমি ও ভালো আছি। (স্বাধীন)
সামিরা আর কি বলবে খুঁজে পাচ্ছে না এর আগেই স্বাধীন বলে উঠলো, আপনার বিয়ের তারিখ ত এগিয়ে এসেছে। কথাটি সামিরার মোটেও পছন্দ হয় নি। তাও বললো, জ্বি
আমার বিয়ের তারিখ ও এগিয়ে এসেছে। (স্বাধীন)
সামিরা হাসলো।
দাওয়াত দিবেন না বুঝি? ( সামিরা)
হুম অবশ্যই দাওয়াত দিবো। সাজ্জাদ নিজে আপনাদের নিয়ে আসবে। ( স্বাধীন)
হুম। (সামিরা)
আচ্ছা একটু আগেই এসেছি ত ক্লান্ত লাগছে আমি রুমে যাচ্ছি কথাটি বলে স্বাধীন চলে গেলো। স্বাধীন হঠাৎ সামিরার সামনে নার্ভাস ফিল করছিলো তাই একটি অজুহাত দিয়ে চলে আসলো।
সামিরা একা দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিতার কাছে যাবে এমন সময় ইরা কল করেছে [ সামিরার বেস্ট ফ্রেন্ড ] ইউনিভার্সিটিতে নাকি আর্জেন্ট যেতে হবে। সামিরা আদ্রিতাকে মেসেজে জানিয়ে দিয়েছে একটি দরকারি কাজের জন্য সামিরা চলে যাচ্ছে। সামিরা কলেজ থেকে ইউনিভার্সিটির উদ্দেশ্য চলে যায়।
*******
স্বাধীন রুমের সামনে এসে দেখলো আদ্রিতা দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেছে।
যাক বাবা এর আবার কি হলো?🤷(স্বাধীন)
স্বাধীন রুমে ঢুকে দেখলো সাজ্জাদ মুচকি হাসছে।
কিরে তুই আদ্রিতার সাথে কি করেছিছ? মাএ দেখলাম দৌড়ে রুম থেকে বের হলো। (স্বাধীন)
কিছু করি নি। বাচ্চা ত তাই সারাদিন দৌড়াদৌড়ি করতে থাকে। (সাজ্জাদ)
স্বাধীন আর কিছু বললো না। তারা তাদের কাজের ব্যাপারে কথা শুরু করে দিলো।
*****
কিরে তুই এতোক্ষণ কোথায় ছিলি? আর প্রধান অতিথিদের যে নাস্তা দিতে বলেছিলো দিয়েছিলি নাকি ভুলে গেছিছ? (আলো)
দূর ভুলে গেছিলাম। আমি স্টেজের দিকে যাচ্ছি তুই একটু উনাদের নাস্তা দিয়ে আয়। (আদ্রিতা)
আমার কাজ আছে আমি পারবো না তানহাকে বল দিয়ে আসতে। (আলো)
কথাটি বলে আলো চলে গেলো। আদ্রিতা তানহাকে বললো নাস্তা দিয়ে আসতে। তানহা নাস্তা দিয়ে আসলো।
কিছুক্ষণ পর ~
অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। তানহা আর আবির গিয়ে সাজ্জাদ আর স্বাধীনকে স্টেজের সামনে নিয়ে আসলো। তখন রুম থেকে বের হওয়ার পর আদ্রিতা আর সাজ্জাদের সামনে আসে নি। সাজ্জাদ আর স্বাধীন
তাদের সিটে বসলো। প্রধান শিক্ষক তার বক্তৃতা পেশ করলো । অতঃপর প্রধান অতিথিরা তাদের বক্তৃতা পেশ করেন । এখন শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার পালা।
এখন আমাদের মধ্যে একটি গান পেশ করবে একাদশ শ্রেণির আদ্রিতা। ( উপস্থাপক)
নার্ভাস ফিল করিছ না। যা নিজের বেস্ট দিয়ে একটি গান পেশ কর। (আলো)
ভয় করছে আমি স্টেজে উঠার পর তুই স্টেজের পাশেই দাঁড়িয়ে থাকিস। (আদ্রিতা)
আচ্ছা ঠিকআছে আমি থাকবো। (আলো)
আদ্রিতা দেড়ি করছো কেনো স্টেজে যাও। (আরিয়ান)
জ্বি স্যার যাচ্ছি। (আদ্রিতা)
আদ্রিতা স্টেজে উঠলো। সাজ্জাদ আর স্বাধীন সামনের সিটেই বসা। আদ্রিতা একনজর সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে কিছু কথা পেশ করলো। অতঃপর নিজের গানটি শুরু করলো ~
আমাকে আমার মত থাকতে দাও
গায়কঃ অনুপম রায়
আমাকে আমার মত থাকতে দাও
আমি নিজেকে নিজের মত গুছিয়ে নিয়েছি ।।
যেটা ছিলনা ছিলনা সেটা না পাওয়ায় থাক
সব পেলে নষ্ট জীবন।
তোমার ঐ দুনিয়ার ঝাপসা আলোয়
কিছু সন্ধ্যের গুড়ো হাওয়া কাঁচের মত
যদি উড়ে যেতে চাও তবে গা ভাসিয়ে দাও
দুরবিন চোখ রাখবো না.. না না না না না
এই জাহাজ মাস্তুল ছারখার,
তবু গল্প লিখছি বাঁচ বার।
আমি রাখতে চাই না আর তার,
কোন রাত–দুপুরের আবদার।
তাই চেষ্টা করছি বার বার সাঁতরে পাড় খোঁজার
কখনো আকাশ বেয়ে চুপ করে
যদি নেমে আসে ভালবাসা খুব ভোরে
ঘুম ভাঙ্গা চোখে তুমি খুঁজো না আমায়
আসে পাশে আমি আর নেই।
আমার জন্য আলো জ্বেলো নাকো কেউ
আমি মানুষের সমুদ্রে গুনেছি ঢেউ
এই স্টেশন চত্ত্বরে হারিয়ে গিয়েছি
শেষ ট্রেনে ঘরে ফিরবো না – না না না না
এই জাহাজ মাস্তুল ছারখার,
তবু গল্প লিখছি বাঁচ বার।
আমি রাখতে চাই না আর তার,
কোন রাত–দুপুরের আবদার।
তাই চেষ্টা করছি বার বার সাঁতরে পাড় খোঁজার
না – না না না না
তোমার রক্তে আছে স্বপ্ন যত,
তারা ছুটছে রাত্রি–দিন নিজের মত,
কখনও সময় পেলে একটু ভেবো–
আঙ্গুলের ফাঁকে আমি কই?
হিসাবের ভিড়ে আমি চাই না ছুঁতে
যত শুকনো পেঁয়াজকলি ফ্রিজের শীতে,
আমি ওবেলার ডাল–ভাতে ফুরিয়ে গেছি
গেলাসের জলে ভাসবোনা – না না না না
এই জাহাজ মাস্তুল ছারখার,
তবু গল্প লিখছি বাঁচ বার।
আমি রাখতে চাই না আর তার,
কোন রাত–দুপুরের আবদার।
তাই চেষ্টা করছি বার বার সাঁতরে পাড় খোঁজার
না – না না না না
আদ্রিতা চোখ খুললো চারদিকে হাততালির শব্দ শোনা যাচ্ছে। আলো স্টেজের পাশেই দাঁড়ানো। সাজ্জাদ সম্পূর্ণ গানটি অনুভব করেছে। সাজ্জাদ আশে পাশে একটু তাকিয়ে দেখলো আরিয়ান এক দৃষ্টিতে স্টেজের দিকে তাকিয়ে আছে। বিষয়টি সাজ্জাদের ভালো লাগছে না।
চারদিকে আদ্রিতার প্রশংসা শুনে নওশিন আর ও রেগে উঠলো । নওশিন রিজভীকে দেখে বললো কাজ শুরু করে দে। রিজভী নওশিন ওদের ফ্রেন্ড। আর নওশিনের কাজের সাথে জড়িত আছে।
আদ্রিতা স্টেজ থেকে নিচে নেমে আসলো। আলো তানহা আবির সবাই আদ্রিতার প্রশংসা করছে। প্রধান শিক্ষক ও খুশি হয়েছেন।
সাজ্জাদের চোখজোড়া আদ্রিতাকে দেখে যাচ্ছে। সাজ্জাদ আনমনে বলে উঠলো,
মানুষ কন্ঠের ও প্রেমে পড়ে! ❤️
[ একটু বেশি রোমান্টিক করে ফেলেছি মনে হয় 🫣
নওশিন কি করছে তা পরবর্তী পর্বে জেনে যাবেন। আদ্রিতাকে বিপদ থেকে কে রক্ষা করলে খুশি হবেন? আরিয়ান নাকি সাজ্জাদ? ]