অতঃপর_প্রেমের_গল্প❤পর্ব_৩১ [প্রথমাংশ]

#অতঃপর_প্রেমের_গল্প❤পর্ব_৩১ [প্রথমাংশ]

#কায়ানাত_আফরিন
-‘Around the world in 80 days’ মুভিটার নাম শুনেছেন আফরা?

আফরা নিষ্প্রভ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ফারহানের দিকে। ওরা দুজনেই এখন বসে আছে লাউয়াছড়া বনের এক প্রান্তে সুদৃশ্যমান পরিত্যাক্ত রেললাইনটির মধ্যে। জায়গাটি এখন মূলত ছবি তোলার জন্যই বিখ্যাত। তবে আজ মানুষের সমাগম কম বলে এই রেললাইনটি একেবারেই নির্জন লাগছে। দু’ধারে আচ্ছাদিত ঘন সবুজ বন আর মাঝপথ দিয়ে সরু একটি রেললাইন, দেখলেই কেমন যেন এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি জেগে ওঠে মনে। আফরা রেললাইনের এই সরু পথে কেমন যেন আবিষ্ট হয়ে ছিলো কিছুক্ষণ। হঠাৎ ফারহানের এই প্রশ্নটি শুনে আফরা মিহি কন্ঠে জবাব দিলো,

-‘নামটা তো চেনা চেনা লাগছে,,,তবে চিনতে পারছি না।’

ফারহান ম্লান হেসে দিলো ওর কথায়। বলে ওঠলো,

-‘কি বলছেন? অস্কারপ্রাপ্ত হলিউড মুভি এটা। আর আপনি এর নাম মনে করতে পারছেন না? আমি তো ভেবেছিলাম আমার প্রশ্ন করার সঙ্গে সঙ্গেই আপনি বোধহয় উত্তর দিয়ে দিবেন। ‘

আফরা ভ্রুজোড়া হালকা কুঁচকে ফেললো ফারহানের এমন কথায়। মনে মনে বিরক্তও হলো বটে। এই ছেলেটা একটু সুযোগ পেলেই চেষ্টা করে ওর সঙ্গে ঠাট্টা করার যা এতবছরে কেউ কখনোই ওর সঙ্গে করেনি। আফরা আগবাড়িয়ে এবার বলে ওঠলো,

-‘আরে ,আমি তো এমনেই বলেছিলাম৷ আপনার কথা শুনে মুভিটার কথা সব মনে পড়ে গিয়েছে৷ আমি,, আমি দেখেছি এই মুভি। তাই আমায় বিভ্রান্তিতে ফেলবেন না।’

আফরা মুখ ফুলিয়ে বলে ফেললো কথাটি।ফারহান যেন আরও সুযোগ পেয়ে গিয়েছে এতে। তাই বিদ্রুপ হেসে জিজ্ঞেস করলো,

-‘তাই নাকি, তো কত সালের মুভি এটা? আমি তো দেখিনি তাই আমায় কাহিনীটা বলবেন কিন্ত।

আফরা এবার উত্তর দিতে গিয়ে দমে গেলো। কেননা আসলেই ও মুভিটার কথা মনে করতে পারছে না। ফারহান এবার গা ছাড়া হাসি দিয়ে শুয়ে পড়লো নরম ঘাসের সবুজ প্রান্তরে। কেননা ও আগেই আন্দাজ করতে পেরেছিলো আফরা এ ব্যাপারে জানে না। নিজের বোকাসুলভ আচরণের জন্য আফরাও বেশ লজ্জা পাচ্ছে। পূর্বে কখনোই নিজের ব্যাক্তিত্বকে তুলে ধরার জন্য আফরা কোনো ছেলের উদ্দেশ্যে এরকম আচরণ করেনি। এই প্রথম , এই প্রথম আফরা নিজের গন্ডি পেরিয়ে এক ভিনদেশী ছেলের প্রতি আকৃষ্ট হলো। আর হলোটা কি? যেখানে ও নিজের ব্যাক্তিত্ব তুলে ধরার প্রচেষ্টায় আছে ততবারই ও নিজের বোকামিসুভ কর্মকান্ডের সাথে ফারহানের পরিচয় ঘটাচ্ছে। আফরা এবার সরু গলায় জিজ্ঞেস করলো,

-‘এভাবে গা ছাড়িয়ে হাসছেন কেনো? এখানে কি কোনো কমেডি শো চলছে?’

-‘আপনি কমেডি শো থেকেও একটা সিরিয়াস জিনিস আফরা। আমার এইবারের ট্যুর টা আপনার উইয়ার্ড আচরণের জন্য আরও জমপেশ হয়ে ওঠবে।’

-ভনিতা না করে বলে ফেলুন মুভিটা কত সালের আর হঠাৎ কথাটি এখানে উঠাচ্ছেন কেনো?

থমথমে গলায় প্রশ্ন ছুঁড়লো আফরা। এমন একটা ভঙ্গি নিয়েছে যে ফারহান যদি না জানে তাহলে এখনই ওকে কেটেকুটে পিসপিস করে ফেলবে। আর যাই হোক নিজের পছন্দের মানুষের হাসির পাত্র কখনোই আফরা হতে চাইবে না।
ফাহান নিজের হাসি থামিয়ে মেঘলা আকাশএর থেকে চোখ সরিয়ে তাকালো পাশে বসা আফরার দিকে। আফরার কালচে বাদামী চুলগুলো আকাশের মেঘপুন্জের ন্যায় উড়ে চলছে হাওয়ার তালে। ফারহান এবার বলে ওঠলো,

-‘Around the world in 80 days’ …….অস্কারপ্রাপ্ত এই হলিউড মুভিটার একটা বিশেষ সিন এখানে শ্যুট কর হয়েছিলো ১৯৫৫ সালে। তারপর ১৯৫৬ সালে এটা রিলিজ হয়। এই মুভিটার নাম শুনেই বুঝতে পারছেন মেইনলি জার্নি নিয়ে পুরো কাহিনীটা সাজানো হয়েছে। এর বেশি আমি স্পয়লার দিতে পারবো না। আপনি দেখে নিয়েন মুভিটি।’

আফরা রুদ্ধশ্বাস ছাড়লো। ফারহানের চোখে মুখে একধরনের চাপা হাসি। এবার সে বলে ওঠলো,

-‘তো , আপনি না বলেছেন এই মুভিটি আপনি দেখেছেন? তাহলে বুঝতে পারলেন না যে মুভিটার একটা সিন এর সাথে এই জায়গার কোনো মিল আছে কি-না?’

আফরা আহত চোখে তাকালো অন্যদিকে। কেননা ফারহান ওর মিথ্যাটি ধরতে পেরেছে। আসলে ও অ্যামেরিকান নাগরিক হওয়া সত্বেও এত পূর্বের এই হলিউডমুভিটা কেন দেখেনি , ফারহানের এই কথাটা ওর ইগোতে লেগেছিলো। তাইতো এই কথাটি বলে ফেলে নিজের ইগো বজায় রাখার জন্য। আফরাকে কিছু বলতে না দেখে ফারহান অগোচরে বিদ্রুপ হাসি দিলেও তা ধরে ফেললো আফরা। এখানে আসার পর থেকেই ফারহান রীতিমতো ওকে হ্যারাস করার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে। নিজেকে আফরা আর দমাতে পারলো না। অগত্যাই ছোট ব্যাগটা ফারহানের দিকে সজোরে ছুড়ে মেরে উঠে দাঁড়ালো। ক্রুদ্ধ গলায় বলে ওঠলো,

-‘আপনি একটা স্টুপিড , ডাফার , রাসকেল। এক্ষুণি আমায় বাসায় দিয়ে আসুন। আপনার সাথে একমুহুর্তও আমি এখানে থাকবো না।’

ফারহান উদ্ভ্রান্ত। হঠাৎ আফরাকে এতটা উত্তেজিত হতে দেখে ওর যেন কথা বলা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবুও নির্বিকার ভাবে বলে ওঠলো,

-‘এত হাইপার হওয়ার মতো কি বললাম?’

এই বলে ফারহান ঝুঁকলো আফরার দিকে। বললো,

-‘নিজের বোকামির রাগ আমার ওপর ঝাড়ার চেষ্টায় আছেন বুঝি?’

আফরাকে আর পায় কে। ফারহানের কথা শুনে একপ্রকার তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে ওর হাত থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নিলো।এই লোকটা আসলেই অসভ্য , অসভ্যের ওপর অসভ্য। একটা মেয়ের সাথে কিভাবে আচরণ করতে হয় তার আংশিক ধারনা এই লোকটার মগজে নেই। পারে শুধু মারামারি আর রাত বিরাতে ভূতের মতো রেইনকোর্ট পড়ে টি এস্টেটে ঘুরঘুর করতে। আফরা এবার হাল ছেড়ে দিলো। বলে ওঠলো,

-‘থাকুন আপনি। আমি গেলাম।’

বলেই আফরা বড় বড় পা ফেলো বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেই ফারহান হাত চেপে নিজের কাছে নিয়ে আসলো। ওর চোখে মুখে এখন বিস্ময় আর কৌতুহলতার চাপ। আফরার হঠাৎ প্রেশার কুকারের মতো হাইপার হয়ে ওঠা ওর মস্তিষ্ক তরঙ্গে অন্য উন্মাদনা ছাড়িয়ে দিচ্ছে।
ফারহান ঠোঁটজোড়া নাড়িয়ে মৃদু কন্ঠে বলে ওঠলো ,

-‘আই হ্যাভ নেভার সিন উইয়ার্ড গার্ল এজ লাইক এজ ইউ আফরা! বাট আই লাইক ইট।’

আফরার তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠা ভঙ্গিমা নিমেষেই শীতল হয়ে গেলো ফারহানের কথায়। ফাহানের ওর উদ্দেশ্যে বলা শেষ কথাটি ওর কর্ণকুহরে হারমোনিয়ামের মতো সুর তুলছে। আফরার কাছে ইংরেজী ভাষাই হলো প্রথম ভাষা , সহজ এবং সাবলীল ভাষা। হয়তো ফারহান এটা ভালোমতই জানতো , তাই নিজের ক্ষুদ্র এই কথাটি অচিরেই আফরাকে শান্ত করার জন্য আফরাকে বলেছে। ফারহান এবার আলতো হেসে বলে ওঠলো,

-‘আপনিই প্রথম এবং একমাত্র মানুষ যার সাথে আমি এতটা হাসি ফুটিয়ে কথা বলেছি। কথা বলেছি আনন্দের সাথে। আপনাই প্রথম এবংএকমাত্র মানুষ যার কথায় আমি কৌতুহল বোধ করেছি। কেন জানেন? কারন এর উত্তর আমি নিজেও জানিনা। আমি শুধু জানি আপনি অন্যরকম আর এই অন্যরকমটাই আমার ভালোলাগে।’

আফরার শিরদাঁড়া দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেলো এবার। ওর সারা শরীরেই তুমুল উত্তেজনা। শরীরটা কেমন যেন অনুভূতির আবেশে অবশ হয়ে আসতে চাইলেও পারলোনা ফারহানের হাতের উষ্ণ স্পর্শের জন্য।ফারহান এবার আড়ষ্ট কন্ঠে বললো,

-‘আমার প্রতি রাগ কমেছে?’

-‘হ-হ্যাঁ।’
আফরার সম্মোহনী কন্ঠের মৃদু উত্তর। ফারহান এবার নিষ্প্রভ হয়ে বলে ওঠলো,

-‘তাহলে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? চলুন আমার সাথে? আজ আপনাকে এই মেঘাচ্ছন্ন আকাশের এক চরম দৃশ্যের কাছে নিয়ে যতে চাই। ভাগ্যক্রমে যদি বৃষ্টি হয় সেটা আমাদের সৌভাগ্য। আপনার এই সিলেট পরিভ্রমণের একটা উল্লেখযোগ্য স্মৃতি হবে মেঘালয়ের সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত ওই জায়গাটি। তাহলে প্রস্তুত তো?নাকি আবারও রাগ করে ফিরে যাবেন?’

আফরা না করতে পারলো না। যতই হোক, শীতল প্রতিক্রিয়াহীন মানুষটার সঙ্গ অত্যন্ত বিব্রতকর হলেও ওর প্রচন্ড ভালোলাগে। একথায় প্রচন্ড প্রচন্ড ভালোলাগে।
.
.
.
.
~চলবে……..ইনশাআল্লাহ
কায়ানাত আফরিন

[বুলেট গতি কাহাকে বলে জানেন? এইযে এই পর্বটা যেভাবে লিখলাম না , এটাই আমার বুলেট গতি। কোচিং থেকে এসে ফটাফট করে লিখে ফেললাম। তাও আমার মাথায় যা ঘুরপাক খাচ্ছিলো তা পুরোটা লিখতে পারিনি। সেজন্য এটা পোস্ট করলাম প্রথম অংশ হিসেবে। স্কুল কলেজ খুলে গিয়েছে। ক্লাস সপ্তাহে দুদিন হলেও ডিবেট ক্লাব সংক্রান্ত কাজের জন্য নিয়মিত যতে হয়। কোচিং তো আছেই। এদিকে আবার দুটো গল্পের চাপ। প্রচুর বানানক্রুটি আছে রিচেকের অভাবে। তাই অবশ্যই টাইপিংমিসটেকগুলো নিজ দায়িত্বে বুঝে নেওয়ার জন্য অনুরোধ থাকবে।
আপনাদের মতামতের অপেক্ষায়।
~কায়া]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here