অতঃপর_প্রেমের_গল্প❤️ পর্ব- ২৩+২৪

#অতঃপর_প্রেমের_গল্প❤️
পর্ব- ২৩+২৪
#কায়ানাত_আফরিন
গাড়ি নিজ গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে নেলসন টি এস্টেটের উদ্দেশ্যে। বাহিরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। সেই সাথে বহমান জোরালো বাতাস। সেই বাতাস নাকে টেনে নিলেই শরীরে এক অন্যরকম উন্মাদনায় ছেয়ে যায়। গাড়ির প্যাসেন্জার সিটে জানালা ঘেষে আফরা বসে বসেই বাতাস নাকে টেনে নিতে মগ্ন। কানে ইয়ারফোন গুঁজে রাখলেও সেখানে বাজতে থাকা গানগুলোতে ওর ধ্যান নেই। ফারহান গাড়ির ব্যাক মিরর দিয়ে আড়চোখে পরখ করে নিলো আফরাকে। ফাহিম ড্রইভ করছে বিধায় ফারহানের আড়নজর সে আর খেয়াল করলো না।
হাওয়ার তালে উড়ে চলছে আফরার কালচে বাদামী চুল। সে দৃশ্য নিতান্ত সাধারন মনে হলোই ফারহানের কাছে তা হৃদয় ঘায়েল করার মতো এক দৃশ্য মনে হলো। আর সারাদিনটা পুলিশ কাস্টাডিতে পার হয়ে গেলেও সন্ধ্যায় এমন মনোরম দৃশ্য দেখে ওর ভালোলাগছে। এরকম অনুভূতি ওর জীবনের যেন প্রথম অনুভূতি। াফরা প্রথম প্রথম ওর সাথে সখ্যতা গড়ে তোলার চেষ্টা করলেও ফারহান ওর দিকে নজর দেয়নি কোনোভাবেও। কিন্ত এখন ওর মনে হচ্ছে কাজটি ভুল করেছে সে।এমন মায়াবী মেয়েটার প্রতি আদৌ কি দুর্বল না হয়ে পারা যায়?

আফরা তখন নীরবতা কাটিয়ে ফাহিমকে জিজ্ঞেস করলো,

-‘ফাহিম আগামীকাল আপনি ফ্রি আছেন?’

ফাহিম গাড়ি ড্রাইভ করতে করতেই ভাবলো কিছুক্ষণ। তারপর বললো,

-‘উমমম, সিউর হয়ে বলতে পারছি না। কেন ?’

-‘আসলে গুগলে ওয়েদার চেক করে দেখলাম কাল বৃষ্টি হবে না। তাই আমি ভাবছিলাম এখানে কোথাও ফিশিং স্পটে যাওয়ার কথা।’

ফারহান হঠাৎ হেসে দিলো আফরার কথায়। যেন মেয়েটা কোনো মজার কথা বলেছে। ফারহানের হঠাৎ হেসে ওঠাতে আফরা খানিকটা হকচকিয়ে যায়। একই সাথে বিস্মিত সে। কেননা গম্ভীর চরিত্রের এই সুপুরুষ যুবককে আফরা খুবই কম হাসতে দেখেছে। আর যদি দেখে থাকে সেটাও অত্যন্ত সুক্ষ্ণ হাসি। আফরা অপ্রস্তুত গলায় ফারহানকে জিজ্ঞেস করলো,

-‘হাসছেন কেনো? আমি কি আদৌ হাসার মতো কোনো কথা বলেছি?’

-কান্না করার মতোও তো কোনো কথা বলেননি।

ফারহান বিদ্রুপ করে বলে ওঠলো। ফাহিম গাড়ির স্টেয়ারিং ঘুরাতে ঘুরাতে কোনোমতে আফরার কথায় নিজের হাসি চাপিয়ে রেখেছে। এসব দৃশ্য দেখে আফরা মুখ বাকালো ফারহানের উদ্দেশ্যে। ছেলেটার হাসি দেখে রীতিমতো ওর গা জ্বলে যাচ্ছে। ফারহান হাসি থামিয়ে তপ্ত শ্বাস ছাড়লো এখন । তারপর একটু পেছনে ঘুরে বললো,

-‘এটা বাংলাদেশ আফরা। আপনাদের অ্যামেরিকা না । এখানে খাল-বিল-নদী-হাওর সবকিছুই আস্তো একটা ফিশিং স্পট। তাই আপনি যদি মনে করে থাকেন অ্যামেরিকার মতো এখানে আলাদা আলাদা ফিশিং স্পট আছে, স্পট ছাড়া অন্য কোথায় ফিশিং করলে জরিমানা করবে সেটা নিতান্তই ভুল ধারনা। তবে প্রাইভেট প্রোপার্টিগুলোতে অবশ্যই আপনি পার্মিশন ছাড়া ফিশিং করতে পারবেন না।’

আফরা ছোট করে ‘ওহ্!’ প্রতিউত্তর দিলো। বাহিরে ইতিমধ্যে ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তবে টিলার মাঝপথ দিয়ে পথগুলো আতিক্রম করা হচ্ছে বিধায় তেমন একটা বৃষ্টিকণার শব্দ পাওয়া গেলো না।এমতাবস্থায় হঠাৎ গাড়ির ডেকে ক্রিং ক্রিং করে বেজে উঠলো ফারহানের ফোন। স্ক্রিনে নিজাম সাহেবের নামটি দেখে বুঝতে বাকি রইলো না কেনো উনি ফোন দিয়েছেন। ফারহান সেটা রিসিভ করার চেষ্টা করতেই বাধা দিলো ফাহিম। বললো,

-‘আগামী এক সপ্তাহ এসব পলিটিকস থেকে একটু দূরে থাকো ফারহান।নাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে। আমি কখনোই চাইবো না এসবের জন্য তোমার কোনোরূপ কোনো ক্ষতি হোক।’

ফারহান মৌনতা বজায় রাখলো এবার। এই প্রথমবার ফাহিমের কথায় ওর সায় দিতে ইচ্ছে করছে। তাই সে আর ফোনটি ধরলো না। ফাহিম আবার বললো,

-‘নিজাম সাহেবকে টেক্সট করো কিছুদিন তুমি পার্টি অফিসে যাবে না। তারপর ফোন সুইচড অফ করে ফেলবে।’

ফারহান তপ্তশ্বাস ফেলে ফাহিমের কথামতো তাই করলো।তারপর মোবাইলটা পকেটে গুজে বাহিরের নিশি দৃশ্যে মনোনিবেশ করলো। একা বড় হতে হতে সে ভুলেই গিয়েছে নিজেকে সময় দেওয়ার কথা। এখন তাই নিজেকে কিন্ত সময় দিতে হবে ফারহানের। ‘কমরেড ফারহান’ নামটিকে ভুলে একজন সাধারন মানুষের মতো পৃথিবী বিচরণ করবে।

___________________________________________

বাহিরে ঝিরঝিরে বৃষ্টি হলেও প্রতিবারই সার্কিট হাউজ থেকে বিদ্যুত কেটে দেয় রৌশিনদের বাসায়। এখন হয়েছেটা ঠিক তাই। সন্ধ্যার দমকা বাতাসের পর যেই না ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুরু হলো অমনেই বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো বাড়ির। ওর মা রীতিমতো বাবার উদ্দেশ্যে রান্নাঘর থেকে উচ্চস্বরে কথা বলা শুরু করেছে যাতে বাবা দ্রুত পল্লীবিদ্যুত অফিসে যোগাযোগ করতে পারে। কিন্ত ওর বাবার সবসময়েই এসকল কাজের প্রতি উদাসীনতা। সাদ্দাফও নেই যে কাজটুকু সামলে নিতে পারবে। রৌশিন বুঝে নিলো বৃষ্টি না কমলে আজ বিদ্যুত আসবে না আর।
তাই অগত্যাই বই রেখে কুপিবাতি জ্বালালো মেয়েটি।

রৌশিনের মাথা টনটন করছে ব্যাথায়। যখন মেয়েটি অতিরিক্ত চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়ে তখনই মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করে। আজ আজকের চিন্তার মূল বিষয় হলো আফরা নামের সেই মেয়েটি। রৌশিনের সদ্য প্রাপ্তবয়স্ক মনে যেন ফাহিমের সাথে আফরাকে কোনেমতেই মেনে নিতে পারছে না। কেন যেন মনে হচ্ছে সেই বিদেশিনী রমনী ফাহিম ভাইকে ওর হৃদগহীন থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাবে। কিন্ত এটা কি আসলেই সম্ভব? যদি সেই মেয়ের জায়গায় অন্যকেউও হতো তবেও রৌশিন তাকে সহ্য করতে পারতোনা।

হঠাৎ রান্নাঘর থেকে রৌশিনের মা ডাক দিলো,

-‘অমন আঁধারে বসে বসে তুই করছিস না কি রৌশিন? ভাত খেতে আয়?’

-‘আজ খাবো না মা।খেতে ইচ্ছে করছে না।

পরে ওর মা এসে অনেক জোরাজোরি করলো খাওয়ার জন্য। কিন্ত রৌশিন নির্বিকার। কথায় আছে না, মন খারাপ হলে কিছুই ভালোলাগে না, মেয়েটার ঠিক অমন অবস্থাই হয়েছে। মা চলে যাওয়ার পর রৌশিন বিছানায় শুয়ে পড়লো জানালার কপাট খুলে। বাতাসের দাপটে বৃষ্টির বিন্দু বিন্দু পানি ওর শরীর শীতল করে তুলছে। চোখে ইতিমধ্যে ঘুম ভর করেছিলো ওর। কিন্ত সেই ঘুম নিমিষেই উবে গেলো বালিশের নিচে থাকা মোবাইলের কাপুনিতে।রৌশিন স্ক্রিনে দুর্বল ভাবে তাকিয়ে দেখলো ওর প্রাণপ্রিয় সহপাঠী ইলার নাম। চোখমুখ রীতিমতো চকচক করে উঠেছে ওর। আগ্রহী হয়ে রিসিভ করে জিজ্ঞেস করলো,

-‘কেমন আছিস রে ইলা!’

-‘কেমন আর থাকবো, তুই তো ভুলেই গিয়েছিস আমায়। আরে সামনে পরীক্ষা ওটা তো আমিও জানি। তাই বলে কি আমার বা মারুফের সাথে একটুও যোগাযোগ রাখবিনা তুই ছেমড়ি? ‘

রৌশিন হেসে দিলো ইলার কথায়। তারপর বিদ্রুপ করে বললো,

-‘তুইও তো আমায় কল দিতে পারতি। ওহহো! আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম, মেয়ে তো আবার সাব্বির ভাইয়ের সাথে প্রেম শুরু করেছে। আশপাশের খরব রাখার সময় কই?’

-‘ওই! আস্তে কথা বল্। আন্টি শুনলে কি ভাববে?’

-‘ধ্যুর! আম্মু আশেপাশে থাকলে কি এভাবে আমি কথা বলতাম?’

-‘তাও ঠিক।’

-‘আচ্ছা নাবিলা আন্টি, ইফাজ আঙ্কেল কেমন আছে?’

-‘এইতো ভালো?’

-‘আর ফাহিম ভাই?’

আমতা আমতা করে শেষে প্রশ্ন করেই ফেললো রৌশিন। যদিও ইলা রৌশিনের খুব কাছের একজন মানুষ তবুও এ কৈশোরকালের অনুভূতি টা কখনোই ইলাকে বলে নি সে। ইলা স্বাভাবিক ভাবেই বললো,

-‘ভাইয়ার তো হসপিটালে ডিউটি থাকে বেশিরভাগ সময়ে তবে আফরা আপু আসার পর তাকে একটু সময় দিতে হয়। নাহলে ফারহান ভাই যেই, আপু তো ভয়ে পরে দৌড়ে পালাবে।’

মৌনতা কাটালো রৌশনি। কেননা আফরার কথা শোনার পর ওর মুখ নিমিষেই অন্ধকার হয়ে গিয়েছে।ইলা এবার বললো,

-‘আচ্ছা এবার রাখি রে দোস্ত! তোর সাব্বির দুলাভাই কল দিচ্ছে। মহাশয়ের কল না ধরলে রাত বিরাতেই আবার বাসার সামলে হামলে পড়বে।কাল কলেজে কথা বলবোনে।

-‘আচ্ছা ঠিকাছে। ‘

কল কেটে উপরে সিলিং ঝুলন্ত অচল ফ্যানটির দিকে তাকিয়ে রইলো রৌশিন। স্থির করলো আগামীকাল দেখা করবে সে ফাহিমের সাথে।❤️
.
.
.
.
.
~চলবে,,,,,ইনশাআল্লাহ

আপনাদের মতামতের অপেক্ষায় থাকবো।

একটি বিষয়ে হেল্পের প্রয়োজন। আপনার কাইন্ডলি নিচের লিংকটিতে ক্লিক করে মতামত দিয়ে আসুন। কেননা এত মতামতের জন্য আমার উপন্যাসটি এগিয়ে নিতে একটু সমস্যা হচ্ছে। লিংক,
https://www.facebook.com/groups/727233321503560/posts/868055417421349/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here