অতিরিক্ত চাওয়া নাবিলা ইষ্ক পর্ব : ১৩

অতিরিক্ত চাওয়া

নাবিলা ইষ্ক

পর্ব : ১৩

এতো রাত্রে কোথায় যাবো? বাড়ি থেকে পালিয়ে তো আরেক মুসিবত! ওহ আল্লাহ! কই আসছি আমি? কিছুই তো চিনি না! ফোনটাও তো আনলাম না! ৮ বাজছে রাত্রির! এখনই মানুষ যেভাবে তাকাচ্ছে, রাত আরেকটু গভির হলে তো আমায় কেউ খুঁজেই পাবে না! মাথা নিঁচু করে হাঁটছি ! আমি আমার স্যারকে প্রচন্ড ভালোবাসি! সে আমায় ভালো না বাসলেও আমি বাসি, অতিরিক্ত ভালোবাসি! আর তাঁকে ছাড়া অন্যকাউকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না ! একদমই না!

ভাবছি আর আনমনে হাটছি! কোথায় যাচ্ছি?তাও জানি না! রাস্তার মোড়ে কিছুকিছু ছেলেরা দাড়িয়ে! ভয় করছে তো! কি করবো এখন আল্লাহ! মাথা নিচু করে হাটছি, আল্লাহ সাহায্য করিয়ো..
” এই যে?
ছেলেদের আওয়াজে আমার আত্তাসহ কেপে উঠলো! দৌড় দেবো তখনি, এক ছেলের আওয়াজে থেমে গেলাম..
” এই যে পিচ্চি আপু? এতো রাত্রে এভাবে গলিতে, গলিতে হাটছো কেনো! একা, একা রিস্ক হতে পারে!
” হ্যা পিচ্চি ? এভাবে এমন ছোট, ছোট গলিতে তোমার হাটা উচিৎ না!

আমি সেদিকে ফিরে তাকালাম! দেখতে কেমন খারাপ দেখাচ্ছে! ময়লা কাপড় তাও মনের দিক দিয়ে ফ্রেস! পাশের ছেলেগুলোর ব্যবহারও সুন্দর! আমার থেকে বেশ বড় হবে! আমি হাসিমুখে তাদের সামনে গেলাম!
” তা আপনার এতো রাত্রে বাহিরে কেনো? আপনাদের বাড়ি কি এখানে ভাইয়া?
ছেলেগুলো হো হো হো করে হেসে দিলো!
” আরেহ পিচ্চি আপু আমাদের আবার বাড়ি! এই কাজ_কাম করি আর ঘুরি! তা পিচ্চি তুমি এমন রাত্রে একা_একা ঘুরতেছো কেন?
” আস..আসোলে..
” থাক বলতে হবে না! তুমি মেইন রোডে চলো! ওখানেই কথা বলি কেমন! এইসব চিপাচাপা গলি গুলো রিস্কি!
আমি মিষ্টি হেসে মাথা নাড়ালাম! হাটতে হাটতে তাদের নাম জানলাম.. রফিক, কাউসার, জয়নুল, রিসার! প্রচন্ড ভালো মনের! মেইন রোড আসতেই মন হালকা হলো! ওই পিচ্চি লাইনে যে কিভাবে চলে গেলাম, নিজেও জানি না!

পাশের চায়ের দোকানে বসতে বলল! আমিও বসে তাদের সাথে চা খাচ্ছি আর আলাপ করছি! সাধারণত কোনো মেয়ে মানুষ দেখছি না নিজেকে ছাড়া! প্রচন্ড ওড লাগছে তাও! এক বৃদ্ধা বয়সী নানা বসে আছে দোকানে! তার সাথেই হাসাহাসি করছি মনমতো! ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমি পালিয়ে এসেছি আর যাওয়ার মতো যায়গায় নেই!

হঠাৎ আমার সামনে বসা ভাইয়া গুলা দাড়িয়ে গেলো! আমিও পিছনে তাকালাম, কিন্তু তার আগেই গালে এমন জড়ে থাপ্পড় মারলো যে আমি ঠাস করে নিচে পরে গেছি! আহ ব্যাথা ও পেয়েছি! আমি কাদো_কাদো ফেস নিয়ে দ্রুত উঠে দাড়ালাম, কে মারলো তার দিক তাকাতেই, চোখে পানি টলটল! স্যার…
” স্যারররররররররররর……[ দৌড়িয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম ]
হু হু হু করে কেদে উঠলাম..! সে আমায় ছাড়িয়ে মাথায় আরেকটা থাপ্পড় দিলো! এইবার আমি আরো জড়ে কেদে উঠলাম! সে মনে হচ্ছে রাগে কাপছে! হাত মুঠ করে দাঁড়িয়ে আছে! আমি ভয়ে দু’পা পিছিয়ে গেলাম..
” ইউ ইডিয়ট? এতো বড় একটা কাজ কিভাবে করতে যাচ্ছিলে? হাহ? যদি কিছু হয়ে যেতো? এতো রাত্রে তুমি ঘড় থেকে বেরোনোর কথা ভাবলে কি করে! [ আবার হাত তুলতে নিচ্ছিলো, আমি দ্রুত পিছনে চলে এলাম ] মন তো চাচ্ছে এখানে পুতে দি তোমায়! গাধি? মাথার মাঝে বুদ্ধি বলতে কিচ্ছু নেই! রাস্তা_ঘাটের অবস্থা ভালো? এতো সাহস আসলো কিভাবে? উত্তর দিচ্ছো না কেন? [ ধমক দিয়ে ]

আমি হু হু হু করে কাদছি! দুটো থাপ্পড়, সাথে ধমক আরো কতো বকা!…
” য..যার জন্য পালালাম, সেই বলে চোর! এ্যা এ্যা এ্যা…
স্যার মনে হচ্ছে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো!
” মানে কি..?
” আ..আপ..আপনি তো আমার ফোন ধরছিলেন না! আবার বাসায় নাকি আজ আমার এংগেজমেন্ট! আপনায় ছাড়া, আমি অন্যকাউকে বিয়ে করবো না! তাই তো…
সে কিছুক্ষণ আমার দিক তাকিয়ে থেকে, সেই ভাইয়াদের দিক তাকিয়ে বলল…
” থ্যাংকিউ গাইস! এতো দ্রুত এই পাগলকে খুজে দেওয়ার জন্য! অনেক অনেক ধন্যবাদ! [ কথাগুলো বলতে বলতে সবাইকে জড়িয়ে ধরলো! তাদের কিছু টাকা হাতে দিলো ] আসি!

ভাইয়া গুলো আমার দিক তাকিয়ে বলতে লাগলো..
” পিচ্চি আর একা একা বেরোনোর কথা মাথায় এনো না! সবসময় আমাদের মতো ভালো ভাইদের পাবা না!

আমি কেদে দেওয়ার মাঝেও হেসে উঠলাম! তাদের সাথে হাত মিলাতে যাবো তখনি সে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন! আমি মুখ গোমড়া করে গাড়িতে বসে আছি! তার সাথে কথা নেই! বজ্জাত পাজি? আমার মুখ ফুলে গেছে কান্না করতে করতে! এতো কান্না আমি আমার লাইফেও করি নি! আর আজ দুদিন যাবত কাদতে কাদতে চোখ ব্যাথা করছে!

স্যার আড়চোখে আমার দিক রাগী চোখে তাকাচ্ছেন! আমি তার দিক তাকাবো না! সে হঠাৎ গাড়িটা স্টপ করব দিলো! ফোন বের করলো! মনে হচ্ছে কাউকে কল দেবে..!
” হ্যালো, আংকেল?
“………?
” হ্যা পেয়েছি! মিরপুরের দিক চলে এসেছিলো!
আ..আংকেল? বিয়েটা কি আজ করা যাবে? আস..আসলে আমি এই পাগলকে নিয়ে রিস্ক নিতে চাচ্ছি না!
“…….!।
” চিন্তা করবেন না! আমি ওর বয়সের আর গতি বিধের সম্পুর্ণ দায়_ভার মনে রাখবো!
“………!
” আ..আচ্ছা তাহলে বাসায় সবকিছুর এরেঞ্জমেন্ট করুন! জ্বি মা_বাবা যাচ্ছে ওখানে!
“………..?
” এইতো আধাঘন্টা লাগবে আসতে!
“…………?
” জ্বি আচ্ছা!

ফোনটা রাখতেই, আমি তার দিক ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছি! চোখে পানি চকচক করছে!
” আ..আপনি বিয়ে করবেন? অন্যকাউকে!
সে এইবার রেগে_তেড়ে আসলো আমার দিক! আমার মুখের দিক ঝুকে গিয়ে বলতে লাগলো…
” গাধি! এতোটুকু বুঝার সামর্থ তোমার হয় নেই?
আমি ঢাকা এসে পরেছি, পরেরদিন তোমরাও এসেছো! আমি তোমার ফোন ধরছি না! আবার হঠাৎ তোমার এংগেজমেন্ট, আংকেলের কথাগুলো! এতোকিছুর পরও বুঝতে পারছো না?

আমি মুখটা ছোট করে বললাম…
” কিহ?
” থাক তোমার কিছু বোঝার প্রয়োজন নেই!

আমি মুখ ফুলিয়ে জানালার দিক তাকিয়ে! সে আমার সাথে কথা বলে নি! আর আমিও রেগে আছি! কথা বলবো না হু! চুপচাপ বাহিরে তাকিয়ে আছি! কিন্তু খুশি লাগছে, আমার স্যার আমার পাশে! আড়চোখে তাকে দেখছি! ঢাকায় এসে তাকে আরো মারাত্মক দেখাচ্ছে! বেশি ইয়াং, ইয়াং লাগছে! উফফ সে এতো সুন্দর কেন?
তার চোখে চোখ পরতেই অন্যদিকে তাকালাম!

সোফায় বসে আছি এক অপরাধীর মতো! আমাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে চেনা_অচেনা অনেক মানুষ! মা তো কেদে কেদে হয়রান! বাবা সে তো নিজেকেই দোশারপ দিচ্ছে! কেনো আমায় চোখে চোখে রাখে নি! স্যার আমার সজা বসে আছেন! একধ্যানে আমার দিক তাকুয়ে!

হঠাৎ চোখ গেলো স্যারের মায়ের দিক! সে আলতো করে আমার হাত ছুয়ে পাশে বসলেন….
” বেলি.. বয়স অনুযায়ী তুমি অনেক ছোট! কিন্তু তার মানে এই না যে তুমি বেশি ছোট! অনেক কিছুই বুঝতে শিখেছো!
ছেলের মুখে যখন শুনেছি যে সে তাঁর থেকে ১৩ বয়সের ছোট এক মেয়েকে ৪ বছর যাবত ভালোবাসে! বিস্বাশ করো নিজের ই কষ্ট হচ্ছিলো! আমিও তো ভালোবেসে বিয়ে করেছি তৃষ্ণার বাবাকে! ভালোবাসা না পাওয়া প্রচন্ড যন্ত্রণাদায়ক! যখন শুনলাম তুমিও ওকে ভালোবাসো তখন তোমার ফ্যামিলিকে বিয়ের প্রস্তাব দি! তারা রাজি হন নি, কিন্তু তোমার কান্না _কাটি দেখে তোমার মা যেচে রাজি হয়েছেন!
বয়সের ভেদাভেদ অনেক কিন্তু তার থেকে বড় কথা ভালোবাসা!
এখন এইটা বলো তুমি কি তৃষ্ণা কে বিয়ে করতে চাও?

আমি হু হু হু করে কেঁদে উঠলাম! আমি তো তাঁকে নিজের করে পাওয়ার জন্যই তো এ-তো পার্থনা ! আল্লাহ আমার ভালোবাসা আমায় দিচ্ছে, তার থেকে খুশির আর কি আছে! প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে, কিন্তু তা খুশির কান্না! সবাই অবাক চোখে আমার দিক তাকিয়ে! আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম….
” জ্বি!
সবাই হো, হো করে হেসে ফেলল!

মিনিট দশকের মাঝের কাজি আসলো, তার আগে আমাদের আংটি বদলিয়ে দিয়েছে মা! আমি চুপচাপ তাই করছি যা আমায় করতে বলা হচ্ছে! দেখতে দেখতে স্যারের নামের ৩ কবুল বলে ফেললাম! এই তিন কবুলের মাঝে আমি আমার ভালোবাসা পেয়ে গেলাম..!
সবাই আজ নানুর বাসায় রয়ে গেলাম! কাল নাকি স্যারের সাথে চলে যেতে হবে! কিন্তু আমার যেতে ইচ্ছে করছে না! মা_বাবা কে রেখে যেতে মন চাইছে না!

বিয়ের দিনের রাত্রে নাকি বাসর রাত হয়! অথচ আমার পড়ার রাত! বিছানায় বসে আইসিটির বই পড়ছি! আর আমার সামনে স্যার বই নিয়ে গ্লোবাল ভিলেজ নিয়ে বিশ্লেষণ দিচ্ছেন! হায়ে..
কাজিন গুলো দরজায় উঁকি দিচ্ছে আর হাসছে! আমি চুপচাপ তামাশা দেখছি! আর স্যার পড়িয়েই যাচ্ছে! কি সয়তান! দেখলো যে আমি রেগে আছি! কোথায় মানাবে তা না? উল্টো পড়াচ্ছে! আহাম্মক একটা!
” আ.. আমি রেগে আছি! আপনি দুদিন যাবত আমাকে ফোন দেন নি! আমার খবর রাখেন নি! এই আমায় ভালোবাসেন?
সে আমার দিক ঝুকে গেলো..
” কজ, আমি তোমায় সারপ্রাইজ দিতে চাচ্ছিলাম! কিন্তু তুমি তো আমায় হাজার ভোল্টের ঝটকা খাইয়ে দিলে! জানো? কতো কাঠ_খোর পুড়িয়ে সবাইকে রাজি করিয়েছি! কতো কাহিনী করতে হয়েছে আমায় জানো? কিভাবে জানবে? সব তো আমি করেছি! তুমি তো শুধু হু হু হু করে কেঁদেছো! ডাম্বো!

আমি মুখটা ছোট করে বসে আছি! সে আবার আমায় পড়াতে শুরু করেছে! কিন্তু ঘুমে আমি ঢুলুঢুলু! বারবার ঘুমিয়ে পরছি, আর জেগে উঠছি! স্যারের চোখে, চোখ পরতেই সে দ্রুত আমার কপালে চুমু খেলেন! আর বলে উঠলেন…
” আমার বউ!
মুহুর্তের মাঝে আমি কেঁপে উঠলাম! বউ আমি তাঁর! আর সে আমার স্বামী! মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছি তাঁর চোখে, সে আমার চোখে তাকিয়ে ! ধীরে-ধীরে আমার পাশে বসে জড়িয়ে ধরলেন!
” আই লাভ ইউ বেলি!
” আ.. আই লাভ ইউ টু..!
সে আমার আরো টাইট করে জড়িয়ে ধরলেন…
” অতিরিক্ত চাই ! নিজের থেকে বেশি চাই!
” [ তাকে আরো টাইট করে জড়িয়ে নিয়ে ] আমিও!

মুখটা আলতো করে ধরে তার ঠোঁটে আমার ঠোঁট ছোঁয়ালো! আমিও তাঁকে ইঙ্গিত দিতে লাগলাম! এখন তাঁর ভালোবাসায় সারাজীবন রাঙিয়ে যাবো! কারন সে এখন শুধু আমার! আ…আমার ভালোবাসা সে! অতিরিক্ত চাই যে তাকে! শুধু তাকেই চাই! সারাজীবন…

সমাপ্ত……

[ অনেকে চাচ্ছিলেন তাই আইডি তে আপলোড দিয়ে দিলাম! আগের রাইটিং! তাই প্রচুর বানানে ভুল! একটু মানিয়ে নিবে! ] 🌹

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here