অতিরিক্ত চাওয়া নাবিলা ইষ্ক পর্ব : ৫

অতিরিক্ত চাওয়া

নাবিলা ইষ্ক

পর্ব : ৫

সকাল গড়িয়ে দুপুর হতে চলল! স্যার নাকি বাবাকে
ডিরেক্ট বলে দিয়েছে আমায় পড়তে যেতে! যাওয়ার ইচ্ছা না থাকতেও যেতে হবে!
আজ মা স্যারের এই মাসের বেতনও সাথে দিয়েছে। মাস শেষের দিক । বেতন দ্রুত দিয়ে দাওয়া মা-বাবার সভাব! আমি একটা ড্যারিমিল্ক কিনে খেতে খেতে স্যারের বাসায় পৌঁছালাম।
আজও আমি তাড়াতাড়ি এসেছি । দরজার কাছে কারো জুতো নেই…! এখন সবার আগে পৌঁছালে স্যার বকা দেবেন, তাই দরজার কাছে অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম! কেউ এখনও আসছে না কেন?
আমি ভিতরে ঢুকে ট্যাবিলে বসে পড়লাম। কিছুক্ষণ পড়াগুলি দেখলাম। স্যার না আসায় আমি রূমের দিক উঁকি দিলাম। না স্যার নেই?
আমি কৌতুহল নিয়ে বই যেখানে থাকে সেখানে চলে এলাম। সেই রূমটা অন্ধকার। লাইটের সুইচ খুজছিলাম… কিন্তু পাচ্ছি না। স্যারের ডায়রিটা আর সেই যায়গায় নেই…
নিচু হবো তখনি কারো স্পর্শ পেলাম! কেউ পিছন থেকে আমার দু হাতের কবজি ধরলো! আমি জড়েই চিৎকার দিয়ে উঠলাম…….
” স.. স্যার…..?
অজানা ব্যাক্তি আমার মুখ চেপে ধরলো। হঠাৎ কানে আওয়াজ আসলো…..?
” শিশশশ! ডোন্ট সাউন্ড!
আমি ভয়ে চুপ হয়ে রইলাম। ধীরে ধীরে আমায় তার দিক ঘুড়িয়ে নিলো। আমি তাকিয়ে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেলাম না! তাও অচেনা ব্যাক্তিকে দেখার চেষ্টা করা ছাড়লাম না!! ভয়ে আত্তাসহ লাফাচ্ছে আমার!
” হু….হু আর ইউ? আমি কিন্তু স্যারকে বলে দেবো?
অজানা ব্যাক্তি কিছুই বলল না। আমার হাত দুটি ধরে উঁচু করতে লাগলো… সাডেনলি হাতে নরম ঠোঁটের স্পর্শ পেলাম। দু ‘হাতের তালুতে চুমু খেয়েই যাচ্ছে অসংখ্য। আমি হাত ছুটানোর চেষ্টা করছি! কিন্তু, সে আরো টাইট করে ধরে চুমু খাচ্ছে…
আমি কাদো কাদো গলায় বললাম…..
” ভ…ভুত..?
সে আমার হাত দুটিতে টাইট করে দুটো চুমু খেয়ে ছেড়ে দিলো। হঠাৎ দু গালে হাতের স্পর্শ পেলাম ” সে আমার দু গালে হাত রাখলো! হাতে হয়তো কিছু বেধে দেওয়া আছে! মে বি ব্যান্ডেজ! .. ব্যাক্তির ভয়েস শুনতে পেলাম…
” আম সরি পিচ্চি পাখি…!
আম রিয়েলি সরি….!
আই নো আম গেটিং ক্রেজি। ওল বিকজ ফর ইউ।

ব্যাক্তির ভয়েস অনেকটা স্যারের মতো শুনতে। কিন্তু আমার বিশ্বাস ই হচ্ছে না। সে আমার কপালে চুমু খেয়ে উধাও হয়ে গেলো হয়তো? আর কোনো আওয়াজ বা স্পর্শ পাচ্ছিলাম না।
হঠাৎ লাইট জলতেই সামনে তাকাতেই দেখলাম স্যার….
” এখানে এই অন্ধকারে কি করছো…?
আমি ঘেমে একাকার। ছিঃ কি ভেবেছিলাম? স্যার কেনো হতে যাবেন। আল্লাহ মাফ করো? তাহলে কে ছিলো…?
” ব…বই পড়তে এসেছিলাম।
” যাও ট্যাবিলে গিয়ে বসো।
আমি মাথা নিচু করে স্যারকে সালাম দিয়ে নিজের যায়গায় বসলাম। পড়া মাথায় ঢুকছিলোই না। শুধু সেই কাহিনী মনে উকি দিচ্ছে। হঠাৎ পাশের নাইন এর আপু বলে উঠলো..
” স্যার আপনার হাতে কি হয়েছে? এতো বড় ব্যান্ডেজ কেনো?
আমিও সাথে সাথে খেয়াল করলাম! স্যার জবাবে মুচকি হেসে নিজের পড়ানোতে মনোযোগ দিলেন! কিন্তু আমার মনোযোগ সেই অদ্ভুত কাহিনীতে!
বাসায় এসেও মাথায় সেই টেনশান…! কে ছিলো? কি ছিলো? সত্যি ছিলো? না, মিথ্যা?

ডিনার করে মাত্র বেডে বসলাম! অনলাইনে ঢুকতেই কারো মেসেজ পেলাম। নাম ছিলো…
” ক্রেজি হান্টার…!
আমি লোকটার আইডিতে ঢুকে শুধু একটা স্ট্যাটাস ই পেলাম….
” পিচ্চি পাখি..
আম সরি ফর হোয়াট আই ডিড!

সাথে সাথেই মনে পরলো অন্ধকারের লোকটার কথাটা…
” আম সরি পিচ্চি পাখি…!
আমি সাথে সাথে ইনবক্সে গেলাম! ইনবক্সে গিয়ে দেখলাম.. ” এই বয়সে ফেসবুক একাউন্ট ও খুলেছো?
আমি মেসেজ দেখেই ভয় পেয়ে গিয়েছি। কাপা কাপা হাতে রিপ্লায় দিলাম….
” আপনি কে?
” ভুত?
” স্যারের বাসার ভুত?
” নোপ নিউ ভুত?
” নতুন ভুত?
” হুম শুধু তোমার জন্য এই ভুতের জন্ম।
” আপনি কি আমায় চিনেন?
” কেনোহ?
” আপনি স্ট্যাটাস টা কার জন্য লিখেছেন?
” যদি বলি তোমার জন্য?
” নাহ আসোলে আপনি কথাটা ২ ঘন্টা আগে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। কেউ একজন আমায় এই কথাটা বলেছিলো হয়তো?
” বলেছে তো বলেছে। আর কয়টা বাজে?
” ১১ টা..?
” এখনও অনলাইনে কি? আমি ছাড়া আর কারো সাথে মেসেজ করবে না। যাও ঘুমাও!

কি আজব.. চিনি না জানি না? হুকুম দিচ্ছে আমায়। আমারও ঘুম পাচ্ছে তাই ঘুমানোর প্রচেষ্টা করতে লাগলাম!

এভাবেই চলতে লাগলো আমার দিনকাল। ধীরেধীরে ভুলে গেলাম সেদিন অন্ধকারে কারো ঠোঁটের স্পর্শ। মাঝে মাঝে টাইপিং হতো অচেনা “ক্রেজি হান্টার ” এর সাথে। মা _বাবা, পড়ালেখা… আর বিকেলের খেলাদুলা.. এগুলো দিয়েই পার হয়ে গেলো J, S, C! যত্ন করেই পরিক্ষার হলে নিয়ে যেতেন, নিয়ে আসতেন আব্বু। আর স্যার তো বুঝিয়ে দিতেন প্লাস দু বেলা পড়াতেন।

১ মাসের মতো স্যারের বাসায় আর পড়তে যাওয়া হয় নি। ছাদে খেলতাম যখন তখন প্রায়ি স্যারকে দেখতাম বারান্দার রেলিং ধরে এখানেই তাকিয়ে থাকতেন। রেজাল্টের দিন আসলো….
আমি তো প্রচন্ড ভয়ে ছিলাম। হাত পা কাপতেছিলো। জানতে পারলাম….
” 4 :89 পেয়েছি।
খারাপ লেগেছিলো প্রচন্ড বাট তাও?
9 এ ভর্তি হলাম৷ ক্লাস এটেন্ড করা শুরু করলাম। ধীরে ধীরে কেমন এক ম্যাচুরিটি ফিল আসতেছে গায়ে৷ আলাদা ফিলিং টানতো মনে। বান্ধুবিদের প্রেমিয় আলাপ শুনলে। কিছু মেয়ে ফ্রেন্ড ও হয়ে গেলো নাইনে। হাসান ও রিলেশন এ জড়ালো নিম্মির সাথে। মাঝে মাঝে আমারও ইচ্ছে হতো একটা প্রেম করার বাট বাবার কথা চিন্তা করে আর এগুলোর মধ্যে নিজেকে জড়াইনা।

প্রাইভেট এ যাওয়া শুরু করলাম। হাসানদের সাথেই মিলে পড়ি। আগে জানি না বাট কিছুদিন যাবত আমার স্যারের চাহনীয় কেমন জেনো লাগে। নেশীয় কোনো পদার্থ সামনে থাকলে চোখ যেমন দেখায় ঠিক তেমন। স্যার কখনো আমার চোখের সাথে চোখ মিলাতেন না। সদা আমায় এড়িয়ে চলতেন। যেটা আমার কাছে আজকাল প্রচন্ড যন্ত্রনাদায়ক। বুকে তিব্র কষ্ট হয় স্যারের ব্যবহারে। আমার ব্যচের সব মেয়েদের সাথে স্যার হাসিখুশি কথা বলেন শুধু আমায় বাদে। সব কপাল..?

কখনো ক্লাসে হঠাৎ স্যার দাড় করিয়ে মারতেন। কেনো মাড়তেন? কিছুই করতাম না আমি।
ধীরে ধীরে দিন যেতে লাগলো আমিও বড় হতে লাগলাম। ১০ম শ্রেনীতে উঠে এলাম। এখন দিনকাল অন্যরকম যায়..!ফ্রেন্ডসদের সাথে মজা_মাস্তি হাসিঠাট্টা। প্রপোজ তো পেলাম অনেক কিন্তু মনের মতো ছিলো না।

আজ ক্লাসে নিম্মি আমি আর হাসান এক বেঞ্চে একসাথে বসেছি। মধ্যে আমি আর দুই সাইডে প্রেমিক_প্রেমিকাকে বসিয়েছি। নাহলে ওদের প্রেমিয় আলাপে আমার কান ফালাফালা হয়ে যাবে।

তৃষ্ণা স্যারের ক্লাস তাই আমি আর কোনো কথা বলবো না। কারন স্যার আমায় এভাবেই পছন্দ করেন না? দেখতে পারেন না। হাসান আর নিম্মি দুজন তো ফিসফিসানো আওয়াজে কথা বলেই যাচ্ছে। স্যার অনেকবার চোখ রাংগিয়ে তাকিয়েছে।

আমি লিখছিলাম হঠাৎ হাসান নিম্মিকে কিছু বলার জন্য আমার গায়ের সাথে অনেকটা ঝুকে ছিলো আর আমি নিম্মির দিক সাইডে চাপতে নিচ্ছিলাম তখনি জড়ে এক আওয়াজ….
” ঠাস….!
থাপ্পড়টা আমার গালে পড়েছে তাও স্যার মেড়েছেন। পুরো ক্লাসের ছেলে_মেয়ের সামনে। আমি গালে হাত দিয়েই দাড়িয়ে পরলাম। আমার এখন প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে। সবাই আমার দিকে ড্যাবড্যাবিয়ে তাকিয়ে। স্যার আমার দিকে তার হাতে থাকা চকটা ছুড়ে মাড়লেন। ডাষ্টার হাতে নিয়ে চলে গেলেন ক্লাস থেকে। তখনো ক্লাসের ২৫ মিনিট বাকি ছিলো। স্যার যেতেই সবাই হাসাহাসি শুরু করে দিলো। আমি তো বুঝতেই পারলাম না থাপ্পড়টা কেন মারলো….?

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here