অতিরিক্ত চাওয়া { ২ } ৩৮|

অতিরিক্ত চাওয়া { ২ }
৩৮|

ভেজা কাপড় পরিহিত, কাপড়ে কিছুটা রক্তের দাগ, মাথায় ব্যান্ডেজ, শরীরে হালকা জ্বর নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে কাগজে সাক্ষর করছে বেলী৷ তৃষ্ণা উদোম শরীরে বেলীর পাশে বসে। রক্তের শার্টটা মুচড়ে সে আরও আগে ফেলে দিয়েছে। যেভাবে ফেলেছে মন হলো সে বেলীকেও এভাবে মুচড়ে ফেলতে চাইছে। এখন যেভাবে তাকাচ্ছে মনে হচ্ছে বেলীকে জ্যান্ত খেয়ে ফেলবে। তৃষ্ণার ভয়াবহ গর্জন আর চাহনিতে সে বিয়েটা থামাতে পারলো না। বরং সে কেন? সয়ং আবির, আয়েশাও তৃষ্ণাকে বুঝাতে অক্ষম। এদিকে মালা-টালা নিয়ে আবিদ হাজির। তাকে দেখে মনে হলো আজ ঈদ। সে বেশ উদোম শরীরের তৃষ্ণা আর রক্তেমাখা বেলীর বেশ কয়েকটি ছবি আর ক্লিপ সংগ্রহ করে ফেলল। অবশ্য কাজীর বারবার বলা,
— মেয়ের আঠারো হয়নি।
এই কথার কোনো মুল্যে রইলো না। আসলে পৃথিবীতে রুলসের থেকেও টাকা বড়। বেলীর খুব জানতে ইচ্ছে করলো হিস্ট্রি-তে এমন বিবাহ কখনও হয়েছে নাকি। যেখানে বর উদোম শরীরে বিয়ে করেছে। আর বউ রক্তেমাখা অবস্থায়। এখন আর কাঁদছে না বেলী। বারবার হেঁচকি তুলছে। কাঁদার কারণে মনে হচ্ছে জ্বর-টা গভীর হচ্ছে। এখন তার ভাবনা বাড়িতে সে কি বলবে? আদৌও তাকে ঢুকতে দেবে নাকি সন্দেহ। আয়েশা বেলীর পাশে বসলো, আবিরের হাত থেকে বক্স নিয়ে একটা স্বর্নের আংটি পড়িয়ে দিল। নিজের গলার চেইন বেলীর গলায় পড়িয়ে বলল,
— ভাগ্যিস আংটি-টা কেনা ছিলো। নাহলে কি দিতাম? এমন হুটহাট বিয়েটা। আমি জানি তোমার খারাপ লাগছে। আমিও তো চেস্টা করলাম গাঁধাটাকে বোঝানোর। আসলে আজকে যখন আনন্দ চাচা কল করে বলল তুমি সেই বিকেল থেকে নিখোঁজ, তৃষ্ প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়। জানোই তো ওদের কতো শত্রু৷ এমন টেনশনের মাঝে কেউ কল করে বলল তোমাকে এপাড়ে দেখেছে। তৃষ পাগলের মতো ছুটে। ও তোমাকে হারাতে চায়না। আর ও একটু পাগল, সবকিছু সিরিয়াস নিয়ে নেয়। আমার থেকে ভালো তুমি জানো ও কতটা পাগল আর কীসের জন্য।
বেলীর হাত দুটো নিজের হাতে নিয়ে,
— আমার তৃষের খেয়াল রাখতে হবে কিন্তু। হু?
বেলী আবারও কাঁদতে শুরু করেছে। এবার আয়েশা বেলীর চোখের পানি মুছিতে বলল,
— মিরস তৃষ্ণা, এই এটুকুই তেই কান্না করলে তো চলছে না। আপনার হাসবেন্ড তো আপনার কান্না পছন্দ করে না।
এর মধ্যেই সব মিটমাট করে তৃষ্ণা হাজির।
— মামী চল যেতে হবে।
— হ্যাঁ ।
আয়েশা বেলীকে ধরে গাড়ির দিক নিয়ে যাচ্ছে।

চৌধুরী বাড়িতে সদ্য বিবাহিত জোড়া অভি-বিমানও হাজির। মোট কথা পুরো গুষ্টি আমিদের বাড়ির ড্রয়িং রুমে বসে। তৃষ্ণা বেলীকে বিয়ে করে ফেলেছে তাদের কানে চলে এসেছে। জয়া মিনমিন করছে,
— রেকর্ড তৈরি করছে বাড়িতে। মেয়ে তুলে বিয়ে করতেই হবে। কি একটা লজ্জাজনক ব্যাপার।
সবাই যখন এই ব্যাপারে কথায় ব্যাস্ত, তখনই প্রবেশ আয়েশা বেলীকে নিয়ে। এখনও কাপড় কিছুটা ভিজে। আলোতে রক্তের দাগ গুলো স্পষ্ট। চোখের নিচে পানির দাগগুলি দৃশ্যমান। পেছনেই আবিদ আবির আসছে। বেলীকে দেখে জয়ার মনটা একটু হয়ে গেলো। এই অবস্থায় মেয়েটাকে চাঁপ দিতে হলো? এটা কোনো কথা? জয়া দ্রুত বেলীকে জড়িয়ে নিলো। এবং দ্রুত রুমের দিক নিয়ে যাচ্ছে। মনেমনে সে ভেবে নিল তৃষ্ণাকে আজ একটা থাপ্পড় তো দেবেই। ফাজিল ছেলে। বাপের মতো অবাস্তবিক। অবাস্তবিকের জাত একটা। মায়া মহব্বত একদমই নেই। এটা বিয়ে করার সময়?
বিমান বেলীকে দেখা মাত্রই বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। নিজেকে সামলিয়ে পেছনে ছুটলো জয়ার। অঞ্জলি রান্নাঘরের কাজ কাজের মেয়েকে দেখতে বলে নিজেও চলল তাদের পিঁছু।

তৃষ্ণার চেহারার দিক তাকানো যাচ্ছেনা। আজকে আমিদও ভেবেছিলেন ছেলেকে কিছু কথা শোনাবেন। কিন্তু তৃষ্ণার শক্ত চেহরা দেখে যা শোনানোর গলা দিয়ে গিলে নিলেন। আবিদ ফ্রিজ থেকে মিষ্টি বের করে সবাইকে খাওয়াতে ব্যস্ত। তৃষ্ণাকে খাওয়াতে গেলে তৃষ্ণা একটু ইতস্তত করে। কিন্তু পরক্ষণেই খেয়ে নেয়। আসলে তৃষ্ণার মিষ্টি পছন্দ না। সখের বসে হয়তো বছরে একবার একটি কামড় নেয়। আবির তৃষ্ণার কাঁধ চাপড়ে দেয়,
— হয়েছে টেনশন রাখ। সাওয়ার নে। যা…
তৃষ্ণা তার মামাকে ইঙ্গিত করে বলল,
— প্রত্যেকবার বেঁচে যায় এলাকায় হামলা করে। দিস টাইম, বেঁচে যেতে দেওয়া যাবে না। জেলের ভাত খাওয়াতেই হবে। { আবিদকে ইশারা করে } লোক লাগা। হাতেহাতে প্রুফ খুঁজবে।
তৃষ্ণা উপরে চলে যাচ্ছে। আমিদ নিজেও মাথা দুলান,
— এবার শক্ত প্রমাণ খুঁজে এদের শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন। লোক লাগিয়ে ব্যাপারটা তদন্ত করে, পুলিশ লাগালেই হবে।
আবির বলল,
— পুলিশের ব্যবস্থা করে দেব?
— না আগে পোলাপান খোঁজ নেক।

ড্রয়িংরুমের সবাই বসে। তাদের উদ্দেশ্যে বিয়ে বিষয়টা নিয়ে কথা তৃষ্ণার সাথে। অথচ তারও গতি নেই। কারণ তৃষ্ণা সাওয়ার নিয়েই ঘুম। রুমে কয়েকবার গিয়েও জয়া ছেলের ঘুম ভাঙাতে ইতস্তত করতে লাগলো। উল্টো এ সি র পাওয়ার বাড়িয়ে, দরজা লাগিয়ে দিলো। আবিদ বলেছে তৃষ্ণা দুদিন ধরে একদম ঘুমোই নি। ছেলেটা তার বেশিরভাগ নির্ঘুম রাত কাটায়৷
বেলী গোসল নিয়ে তৃষার রুমে বসে। তৃষা বেলীর পাশে ঘেঁষে গেমস খেলছে। একটু পরপর বেলীকে ভাবী বলে ডাকবে আর কিটকিটিয়ে হাসবে। আর বলবে,
— সত্যিকারের ভাবী।
বেলীকে ঘিরে সবাই দাঁড়িয়ে। আবিদ সব খুলে বলছে। এদিকে আয়েশা বেলীকে একটু জোর করেই খাওয়াচ্ছে। তারপর ঔষধ ও খেতে দিল। বেলী তার পরিবারের কথা ভাবছে। নিশ্চয়ই খুবই চিন্তায়? বেলী বিমানের দিক অসহায় চোখে তাকাল। বিমান হালকা হেসে আস্থা দিচ্ছে। আয়েশা যেতে যেতে বলল,
— কাল আসবে তোমার পরিবার। তাদের জানানো হয়েছে তুমি এখানে। তাই চিন্তা করো না। তাদের সুন্দর ভাবে বোঝানো হবে।
হু?
আয়েশার কথায়ও বেলীর চিন্তা থেমে নেই। কি থেকে কি হয়ে গেলো। তারপর আবার মন আকুপাকু করছে তৃষ্ণার জন্য। লোকটা এতবড় একটা কাহিনী ঘটিয়েও রেগে। যেখানে বেলীর রাগা উচিৎ। তাকে ধমকিয়ে, ভয় দেখিয়ে বিয়ে করেছে। অথচ সেখানে তৃষ্ণা রেগে। তাকে দেখতেও আসছে না। বেলীর কেমন অসহায় লাগতে লাগলো। আবার লজ্জাও লাগছে। এই বাড়িতে প্রবেশ করার পর থেকে বেলী মুখ উঁচু করতে অক্ষম। লজ্জায় কারও দিক তাকাতেই পারছে না।

রাত এগারোটা। রুমটা আপাতত খালি। শুধু তৃষা বেলীর কোলে ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘুমানোর জন্য রুমটা ফাঁকা করে দিয়েছে জয়া। তার কথামতে বেলীকে এখন একটু ঘুমাতে দেওয়া প্রয়োজন। অথচ বেলীর ঘুম ধরছে না। তৃষ্ণা তার সাথে কথা বলছে না ভাবতেই কষ্ট লাগছে। চোখ ভিজে উঠছে। অনেক চিন্তাভাবনা নিয়ে বেলী বিছানায় পরে থাকা ফোন হাতে নিলো। এটা তৃষার ফোন। বাড়িতে ব্যাবহার করার জন্য। গেমস, ছবি এমন হাবিজাবি কাজের জন্য। স্ক্রিনে ফ্যামিলি পিকচার। তৃষ্ণা আর সোলাইমান পেছনে দাঁড়িয়ে। দুজনের মাঝে অঞ্জলি। অঞ্জলির সামনে তৃষা। তৃষার দু’পাশে চেয়ারে বসে আমিদ, জয়া । সবাই হালকা হেসে। শুধু তৃষ্ণাই ওপ হয়ে। অবশ্য তৃষ্ণার চেহারা স্টোন হয়ে থাকে ছবি তোলার সময়। কিন্তু ভাব আছে বান্দার। বেলী ফোন ঘাটতেই বেশ কিছু ভিডিও পেল৷ তৃষার মজার কিছু ক্লিপ। যেখানে তৃষার চুল ফালানো হচ্ছে আর সবাই ওকে রাগাচ্ছে। দ্যান, গার্ডেনে বোল নিয়ে তৃষ্ণা, সোলাইমান, আবিদ, আয়ুশ, অভি আর তৃষা খেলছে। কিছু কিছু ভিডিও ক্লিপ আছে তৃষা রান্না করছে আবার নিজে-নিজে মেকআপ করছে সেই ক্লিপগুলোও আছে। বেলী দেখতে দেখতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে খেয়াল নেই। ধড়াম শব্দে দরজা খুলতেই বেলী হুড়মুড়িয়ে উঠে বসে। তৃষ্ণা এসেছে। হাফপ্যান্ট আর টি-শার্ট পড়ে আছে। ঘুম থেকে উঠে এসেছে। এখনও চোখমুখে ঘুমের আভাস। বেলী খেয়াল করলো তৃষা নেই৷ রুমে শুধু সে একা। বেলীর ভয় লেগে উঠলো। তৃষ্ণা তাকে থাপ্পড় টাপ্পড় দিবে না তো? একবার থাপ্পড় খেয়েই বেলীর শিক্ষা হয়েছে। আর খেতে চায় না ওই শক্ত হাতের থাপ্পড়।

তৃষ্ণা দরজা বন্ধ করে একদম বেলীর সামনে এসে বসলো। ওড়না গলার দিক থেকে সরিয়ে দেখল আর কোথাও ব্যথা পেয়েছে নাকি। শরীরে আর কোনো দাগ না পেয়ে এবার গভীর ভাবে বেলীকে দেখতে লাগলো। গোসলের পর বেশিই সুন্দর দেখাচ্ছে বেলীকে। একদম নিস্পাপ। বেলীর গাল ছুঁয়ে দিতেই বেলী চোখ বুঝে ফেলল। তৃষ্ণার হাত বেলীর গালে ধীরে স্পর্শ করছে। বেলী যখন তৃষ্ণার
চোখে তাকালো আর চোখ সরাতে পারলো না। দ্বিধা ছাড়াই সেই চোখ জোড়ায় তাকিয়ে। কি সুন্দর চোখ। তৃষ্ণার চোখ বেলীর খুব পছন্দ। কখনও সাহসই পায়নি এই চোখ জোড়ায় তাকিয়ে থাকতে। কেমন প্রচন্ড লজ্জাবোধ করতো। একপলক তাকাতেই বেলীর গাল লাল হয়ে উঠতো। তৃষ্ণার শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরায় হুঁশ আসলো বেলীর। সে তৃষ্ণার নরম গলার আওয়াজ পেল,
— আম স্যরি বেলী।
বেলী কেঁদে ফেলল। এবং পরপর তৃষ্ণার বুকে মিশে গেলো। তৃষ্ণার গলা শক্ত করে ধরতে গিয়ে বেলীকে হাঁটুতে ভর দিতে হয়েছে। হঠাৎ তৃষ্ণার শব্দ করে হাসির আওয়াজ পেয়ে বেলীর অবস্থান খেয়াল আসলো। লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে উঠছে। বেলী সরতে নিলে তৃষ্ণা আরও শক্ত করে ধরে। পরক্ষণেই বেলীর কোমর ধরে সেভাবেই দাঁড়িয়ে যায়। বেলী চেঁচিয়ে তৃষ্ণার গলা আবারও জড়িয়ে ধরে,
— পড়ে যাব।
— জিম করে বোডি কি এভাবেই বানিয়েছি? তোর মতো দশটা পুচকে তুলতে পারব।
— তুলুন।
তৃষ্ণা বেলীর লাল গাল টেনে ধরলো,
— এভাবে ধরতে হলে তো প্রেম করতে হবে। নাহলে তো ধরতে দেবেনা।
— ছিঃ! লুচ্চা।
— লুচ্চা?
বলতে বলতে সে বেলীর ঘাড়ে চুমু খেতে লাগলো। বেলী তৃষ্ণাকে সরাতে চেষ্টা করলো,
— সরুন। ছি…
বেলী ফ্লোরে পা ফেলতেই তৃষ্ণা থেকে দূরে দাঁড়ালো। অথচ তৃষ্ণা আগেই তার ওড়না হাতে পেঁচিয়ে রেখেছে।
— ছাড়ুন।
— আমার বউ তুই এখন। যেটা ইচ্ছে করবো। ধরতেও পারি { বেলীর গলার কামড়ে } খেতেও পারি৷
বেলীর দূরে যাওয়াতে ওড়না তৃষ্ণার হাতেই রয়ে যায়। বেলী বিছানার ওপাশে গিয়ে ঘুরে দাঁড়ায়। তৃষ্ণা মধুময় কন্ঠে বলল,
— ইশশ। তখন তোকে ভেজা কাপড়ে যা মারাত্মক লেগেছেনা। আফসোস…
বলতে বলতে সে বেলীকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে। এবং বেলীর চুল শুঁকতে শুঁকতে আবারও বলল,
— আই লাভ ইউ বেলী। আমি জাস্ট তোকে ছাড়া আর থাকতে পারছিনা।

চলবে,
নাবিলা ইষ্ক

{ আমি একটু ব্যস্ত ছিলাম। কথা দিয়ে ফেলেছি তাই দিতেই হলো। ছোট হয়েছে হয়তো। রিভিশন দেওয়ার সময় নেই। একটু বুঝে নিবেন কাইন্ডলী। }

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here