অনুভবী হিয়া’ পর্ব-১১

0
1948

#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির

১১.

‘North And Coffee Roasters, 11 am. I will wait for you Mr. Rafid Rayhan Shuvo.’

সকালে ঘুম থেকে উঠে মোবাইলে আননোন নাম্বার থেকে আসা ম্যাসেজ দেখে খানিকটা অবাক হয় শুভ। কে এই লোক? তার সাথে কেনো দেখা করতে চায় সে? কিছুক্ষন গভীর চিন্তা করে দেখা করতে যাবে বলে মনস্থির করলো শুভ। রেডি হয়ে নাস্তা করে অফিস চলে যায় সে। অপেক্ষা করছে এগারো টা বাজার। অচেনা ব্যক্তি টি তার সাথে ঠিক কি কারনে দেখা করতে চাইছে সেটা না জানা পর্যন্ত শান্তি নেই শুভর। অফিসে বসেও হাঁসফাঁস করছে সে। তার মাথায় শুধু একটা কথায় কে হবে এই ব্যক্তি?

কেবিনে নক করে মিহির। শুভ ভিতরে আসতে বলে তাকে। মিহির এসে শুভকে কিছু ফাইল দিয়ে বলে, ‘সব গুলা ফাইল আমি আর মিঃ রায়হান মিলে চেক করেছি। আপনি চাইলে আবার চেক করে সাইন করতে পারেন।’ শুভ ফাইল না ধরে মিহির দিকে কিছুক্ষণ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। তারপর মিষ্টি হেসে বলে, ‘তোমাকে আজকে দারুন লাগছে মিহি!’

মিহির অপ্রস্তুত হয়ে যায়। কোনো রকমে, ‘থ্যাংকইউ!’ বলে সে। শুভ মিহিরের হাত থেকে ফাইল গুলো নিয়ে ঘাটতে থাকে। ফাইল দেখার মাঝে মিহিরকে প্রখর করছে। মিহি চেয়ারে কাচুমুচু হয়ে বসে আছে। শুভর চাহনিতে সে ইতস্ততবোধ করছে। খানিকক্ষণ বাদে শুভ শান্ত গলায় বলে উঠে, ‘মিহি আজকে অফিসের পর আমার সাথে যেতে পারবে? একটা জায়গায় নিয়ে যাবো তোমাকে। প্লিজ না করো না। আমাকে কিছু বলার সুযোগ দাও। অনেক কিছু বলার আছে তোমাকে।’ শেষের কথা গুলো অনুনয় স্বরে বলে শুভ। মিহির শান্ত আর নির্বিকার ভঙিতে তাকিয়ে আছে। মিহির কিছু না বলে নিরবতা পালন করে যার অর্থ সে যেতে রাজি নয়। মিহিরের এমন উপেক্ষা আর সয্য হচ্ছে না শুভর। ঠাস আওয়াজ করে ফাইল বন্ধ করে উঠে দাঁড়ায় শুভ। শুভর এমন আচরনে মিহির কিছুটা ভরকে যায়। হুটহাট রেগে যায় এই লোক। আগে তো কতো ফাজলামি করতো এখন এমন গম্ভীর মুখু হলো কিভাবে আল্লাহ!

শুভ ড্রয়ার, বুকশেলফ থেকে একগাদা ফাইল এনে মিহিরের সামনে রাখে। ফাইল গুলোর দিকে তাকিয়ে শুভর দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকায় মিহির। শুভ কড়া গলায় বলে, ‘আজকের মধ্যে সব গুলা ফাইল রিকভার করবে। কোথাও যেনো কোনো ভুল না পাই। পুরনো সব ফাইলের ডিটেইলস সংক্ষেপে নোট চাই আমার। নাও গেট লস্ট!’ শেষের কথাটা উচ্চস্বরে ধমক দিয়ে বলে শুভ। মিহির কেঁপে উঠে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকায় শুভর দিকে। শুভ এখনো তার দিকে চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে আছে। মিহির ভয়ে নিচু স্বরে বলে, ‘এতো গুলো ফাইল এক সাথে দেখা সম্ভব না। কিছু না হয় বাকি এমপ্লয়..’

মিহির মুখের কথা কেঁড়ে ধমক দিয়ে বলে শুভ, ‘আমি তোমাকে বলেছি মানে তুমি করবে। খবরদার কারোর সাহায্য নিবে না। নাও লিভ!’ মিহি চেয়ার থেকে উঠে ফাইল গুলো হাতে নিয়ে বেড়িয়ে যায় কেবিন থেকে। মাহিন ঠিক বলেছিলো চাকরী টা ছেড়ে দেওয়ায় বোধহয় ভালো ছিলো। অসভ্য লোক, তোর কপালে বউ জুটবে না দেখিস। বিয়ে করলেও আমি গিয়া প্যাচ লাগাই দিমু। শা:লা ইতুর, সাদা বিলাই, খাম্বা! মনে মনে হাজার খানেক গালি দিয়ে মুখ ফুলিয়ে ফাইলে দেখা শুরু করে মিহির।
________________

সকাল ৯:০০ টা! লাইব্রেরীতে বসে বই ঘাঁটছিলো মাহিন। উদ্দেশ্য অ্যান্টিমনি, রাইসিন সম্পর্কে তথ্য জানা। পৃথিবীতে থাকা নীরব ঘাতকের মধ্যে দুটি হলো অ্যান্টিমনি আর রাইসিন। অ্যান্টিমনি মূলত ধাতব মৌল। এটি টক ভাবযুক্ত ধাতব স্বাদ অনুভব হয়। এই নিরবঘাতক শরীলে প্রবেশ করলে ৩০ মিনিটের মধ্যে এর বিষক্রিয়ায় ঘাম, বমি আর হৃদযন্ত্রের গতি বন্ধ করে দেওয়ার জন্য যতেষ্ট। চা’য়ের কাপে বিষদাতা হিসেবে অ্যান্টিমনি ব্যবহারের জন্য বিখ্যাত। রাইসিন মাস্টার্স গ্যাসের ন্যায় রাইসিন সাইটোটক্সিক তথা কোষীয় বিষাক্ততা সৃষ্টি করে। ভুক্তভোগীর ৭-১০ দিন লাগে মাত্র। এমন নীরব ঘাতক এতো সহজে বাংলাদেশে পাওয়া যাবে না। যেখানে বাংলাদেশের কোনো ল্যাবে সরকার অনুমিত দিবে না সেখানে কিভাবে এই দুটি বিষ সাধারন দু জন মানু্ষের শরিলে পাওয়া গেলো? খুনি যে সাধারন কেউ নয় সেটা ভালোই বুঝতে পারছে মাহিন। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বইয়ের দিকে তাকিয়ে এক হাত থুতনিতে রেখে কনুই চেয়ারে ভর দিয়ে কিছু হিসাব মিলাচ্ছিলো সে। তখনি সামনে এসে বসে সুহা। মুচকি হেসে বলে উঠে, ‘কি করছেন মিঃ হালুক?’

বই থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সুহার দিকে তাকায় মাহিন। কাজের মাঝে কেউ মনোযোগ নষ্ট করলে মেজাজ তুঙ্গে উঠে যায় মাহিনের। মাহিন আগের ন্যায় বসে শান্ত স্বরে বলে, ‘ভাবছিলাম!’

‘কি ভাবছিলেন? দেখে তো মনে হচ্ছে কোনো ব্যাপারে অনেক চিন্তিত। আমাকে বলতে পারেন সমাধান করে দিবো।’ দাঁত কেলিয়ে বলে সুহা। মাহিন এখনো শান্ত দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। এতো কিছুর পরেও মেয়ে টা তার পিছে পরে আছে কেনো? আত্মসম্মানবোধ বলতে কিছু নেই নাকি? বয়স কম তাই আবেগের বসে এমন করছে। মাহিন কিছু না বলে মোবাইল বের করে গুগলে যায়। সুহা গালে হাত দিয়ে বসে মাহিনকে দেখছে। উফ একটা মানুষ এতো সুন্দর কি করে হতে পারে। কিছু একটা ভেবে সুহা হঠাৎ মাহিনের হাত থেকে মোবাইল ছুঁ মেরে নিয়ে কিছু একটা টাইপ করে। আকর্ষিক ঘটনা বুঝতে মাহিনের কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে। যখন বুঝতে পারে তখন ধমক দিয়ে বলে, ‘স্টুপিড গার্ল! এটা কোন ধরনের অসভ্যতামি? কারোর মোবাইল ধরার আগে পারমিশন নেওয়া ম্যানারসে পরে জানো নাহ?’

সুহা মোবাইল টা হাত বাঁড়িয়ে দিয়ে ঠোঁট ওল্টে বলে, ‘সরি আর হবে না।’ সুহার ঠোঁট ওল্টানো মুখ দেখে মনে মনে হাসে মাহিন। মেয়েটা বড্ড ছেলেমানুষি আর কিউটও বটে। কলেজ ড্রেসের সাথে চুল গুলো দুই পাশে জুটি করা। মাহিন শান্ত স্বরে হাসি দিয়ে বলে, ‘তুমি মিষ্টি একটা মেয়ে সুহা। আবেগের বশে এমন করছো। আপাতত পড়াশোনায় মন দাও। আরো ভালো কিছু ডিজার্ভ করবে তুমি।’

‘আমার ভালো কিছু লাগবে না আপনি হলেই চলবে।’ সুহা ফট করে উল্লাসিত কন্ঠে বলে উঠে। কয়েক মুহূর্ত সুহার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে মাহিন কিছু না বলে চুপচাপ বেরিয়ে আসে লাইব্রেরী থেকে। সুহা গালে হাত দিয়ে বলে, ‘জানু, তুমি যেভাবে আমার ঘুম হারাম করেছো সেভাবে আজ রাত থেকে তোমার ঘুমও আমি হারাম করবো হুহ।’

চলবে..!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here