#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির
১২.
‘North And Coffe Roasters’ এর দু তলায় বসে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে শুভ। এগারো টা বাজতে আর দুই তিন মিনিট বাকি। অপেক্ষা করছে আগন্তক ব্যক্তিটির জন্য। কে এই ব্যক্তি? পাক্কা বিশ মিনিট অপেক্ষা করার পর দেখা মিলে আগন্তক ব্যক্তির। পরনে কালো টি-শার্টের ওপর কালো ব্লেজার, কালো প্ল্যান্ট, হাতে কালো ঘড়ি।চেহারা দেখার সৌভাগ্য হয়নি শুভর কারণ চোখে সানগ্লাস আর মুখে কালো মাক্স।
‘সরি ব্রাদার একটু লেট হয়েছে।’ চেয়ারে বসতে বসতে বলে আগন্তক ব্যক্তি। এতোক্ষন তাকেই প্রখর করতে গভীর দৃষ্টিতে দেখছিলো শুভ। কথা শুনে ধ্যান ভাঙে তার। শান্ত স্বরে বলে, ‘ইট’স ওকে!’
‘তো কেমন আছেন মিঃ রাফিদ?’ চেয়ারে আয়েশি ভঙ্গিতে বসে বলে ব্যক্তিটি। ভাব এমন যেনো শুভকে সে আগে থেকে চেনে। শুভ বলে, ‘আছি ভালো। আপনার পরিচয় কি জানতে পারি?’
‘আরে ক্লাম ডাউন ব্রো। এতো তাড়া কিসের? আগে কিছু অর্ডার করে নেই তারপর নাহয় কথা বলা যাবে। বলুন কোন কফি খাবেন?’ চোখ থেকে সানগ্লাস নামিয়ে বাকা হেসে বলে যুবক। শুভ ব্যক্তিটির এমন ব্যবহার মোটেও নিতে পারছে না। নিজের মাঝে রাগ দমিয়ে দুই কাপ ব্ল্যাক কফি অর্ডার দিলো শুভ। ওয়েটার কফি দিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষন পর শুভ শান্ত স্বরে বলে, ‘খেয়ালী না করে নিজের পরিচয় আর কি জন্য ডেকেছেন সেটা বলেন।’
‘আমাকে এমআর বলে ডাকতে পারেন। আপাতত এটুকু জেনে রাখুন পরে নাহয় আস্তে আস্তে জানতে পারবেন।’ মাক্সের ভিতর বাকা হেসে বলে মাহিন যা শুভর নজর এড়ায় নি। শুভ গভীর চোখে প্রখর করছে সামনে থাকা ব্যক্তিটিকে। মাহিন এবার চোখে মুখে গম্ভীরতা বজায় রেখে বলে ‘সবুজকে মারতে চেয়েছেন কেনো?’
আগন্তুক ব্যক্তির মুখে সবুজের কথা শুনে কিঞ্চিৎ পরিমানের অবাক হয় শুভ। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলে, ‘আপনি কোন সবুজের কথা বলছেন?’
হেসে ফেলে মাহিন। তারপর বলে, ‘আপনি যার কথা ভাবছেন।’ শুভ ভাবছে এই ব্যক্তি কিভাবে সবুজের কথা জানে? তাহলে সে কি সবুজের লোক? ভাবনার মাঝে শান্ত স্বরে বলে শুভ, ‘তাহলে আপনি ওদের মে:রেছেন?’
‘বাঁচিয়ে রেখেছি যে এটাই অনেক। আমি কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর পাই নি মিঃ রাফিদ।’ গম্ভীর কন্ঠে বলে মাহিন। শুভ ভ্রুঁ উঁচিয়ে কপালে ভাজ ফেলে বলে,’সেটা জেনে আপনি কি করবেন?’
তীক্ষ্ণ চোখে তাকায় মাহিন। তারপর ফিচেল গলায় বলে, ‘দেখুন মিঃ রাফিদ, আপনি বেশ সুনামধন্য লোক। ব্যবসা সামলাচ্ছেন তো সামলান। মাঝখান থেকে ঝামেলায় জড়াতে যাবেন না। সবুজের সাথে আপনার কিসের শ:ত্রু:তামী, ওকে কেনো মা:রতে চেয়েছেন? ব্যাপার টা এখানেই স্টপ করতে চাচ্ছি আমি। তাই আমি আমার মূল্যবান সময় ব্যয় করে এসেছি আপনার সাথে দেখা করতে।’
‘ভয় দেখাচ্ছেন আমাকে?’ শুভর কথা শুনে মৃদু স্বরে হাসে মাহিন। তারপর আয়েশি ভঙ্গিতে চেয়ারে হেলান দিয়ে বলে,’পলিটিশিয়ানের সাথে লাগতে গেছেন ভাই অবস্থা কিন্তু গুরুতর হতে পারে।’
‘সবুজ কে, কি করে সেটা জেনে আমার লাভ নেই। আমার প্রিয় জিনিসের দিকে কেউ নজর দিলে তাকে আমি ছাড়বো না।’ শান্ত হয়ে বলে শুভ। কিঞ্চিৎ পরিমানের অবাক হয়ে কপালে ভাজ পরে মাহিনের। শুভর প্রিয় জিনিসের দিকে সবুজ কেনো নজর দিবে? যেখানে সবুজ শুভকে চেনা তো দূর দেখেনি অব্দি। কিছুক্ষন ভাবনায় মশগুল থেকে মাহিন বলে, ‘আপনার প্রিয় জিনিস বলতে ঠিক কি বুঝাতে চাইছেন?’
‘এতো কিছু বলতে পারবো না। ওয়ার্ন হিম এন্ড জাস্ট স্টে এওয়ে ফ্রম মাই গার্ল!’ দাঁতে দাঁত চেপে কড়া গলায় বলে শুভ। গটগট আওয়াজ করে বেরিয়ে যায় রেস্টুরেন্ট থেকে। শুভর চলে যাওয়ার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মাহিন। শুভর প্রিয় জিনিস? এওয়ে ফ্রম মাই গার্ল? তার মানে মিহিরকে শুভ এখনো… মাহিন বিরক্ত হয়ে আপন মনে বিড়বিড় করে বলে, ‘জেলাস!’
***
শুভর সম্পর্কে মিহির তাকে সব বলেছিলো। কুমিল্লা থাকা শর্তেও মাহিন বোনের সম্পর্কে সব খোঁজ খবর রাখতো। শুভ আর মিহিরের ব্রেকআপ হওয়ার পর মিহির অনেক ভেঙে যায়, মাহিন ব্যাপার টা নরমাল ভেবে বোন কে তখন শান্তনা দিয়ে আগলে রাখে। যখন মিতুর কাছে ব্রেকআপের কারণ জানতে পারে তখন শুভর উপর মাহিন প্রচুর রেগে যায়। তখনি তাদের বাবা মা:রা যায় কার এক্সি:ডেন্টে। সেই সুবাধে মা আর বোনকে কুমিল্লা রেখে দেয় মাহিন। তারপর একদিন রাতে শুভ আর তার বন্ধুরা মিলে কার ড্রাইভ করে বাড়ি ফিরছিলো। ইচ্ছে করে শুভর গাড়ির সাথে মাহিন নিজের গাড়ি ধাক্কা লাগায়। মাহিনের সাথে সবুজ ছিলো। গাড়ি থেকে নেমে কথা কাটাকাটি এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি লেগে যায়। তখনি মাহিন নিজের রাগ মিটায় শুভর ওপর। শুভ মাহিনকে চিনে না কারন মিহির কাছে শুধু শুনেছে তার একটা ভাই আছে আর সে কুমিল্লা তে থাকে ঢাকা আসে না। মুখে মাক্স থাকার কারনে মাহিন আর সবুজকে দেখতে পারে নি শুভ। টানা ১৪ দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলো শুভরা। হাসপাতাল থেকে রিলিজ পাওয়ার পর মিহিরের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে শুভ কিন্তু পারেনি। মিহিরের বাসায় এসে জানতে পারে তারা বাসা ছেড়ে দিয়েছে। মাহিন জানতো শুভ মিহিরের খোঁজ নিচ্ছে তাই কুমিল্লা থেকে মিহির দের ঢাকা যেতে দেয়নি। প্রায় ছয় মাস পর যখন শুভ কানাডা চলে গিয়েছিলো তখন মাহিন ঢাকা আসে মা-বোন নিয়ে। এতো সব কথা কেউ জানে না মাহিন ছাড়া। যদিও ওই দিন শুভকে মারার জন্য সবুজ ছিলো সাথে কিন্তু সবুজ শুধু এতো টুকু জানতো গাড়ি ধাক্কা লাগায় কথা কাটাকাটি তে মা:রা:মা;রি হয়। একা রেস্টুরেন্টে বসে বাহিরে তাকিয়ে ভাবছে মাহিন। তার বোনকে যে বা যারা কষ্ট দিবে তাদের কাউকে ছাড়বে না সে। কাউকে নাহ!!
__________________
মুখ ভার করে বসে আছে মিহির। বিকাল পাঁচটা বাজে প্রায়। ইতিমধ্যে অফিসের সবাই চলে গেছে। আর মাত্র দুইটা ফাইল বাকি চেক করার। মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে। লাঞ্চ টাইমে মাত্র একটু ফ্রি হয়েছিলো। মা’কে কল দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে তার ফিরতে দেড়ি হবে টেনশন যেনো না করে। শুভকে ইচ্ছে মতো গালাচ্ছে মিহির। তাকে একগাদা কাজ দিয়ে নিজে লাপাত্তা হয়ে গেছে। অসভ্য লোক বাথরুমে গিয়ে আছাড় পরবি তুই। ইতুর কোথাকার। বেশ কয়েকবার হাই তুলে চোখ বন্ধ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে মিহির। এমন সময় ম্যাসেজের টংটাং শব্দ হয়। মোবাইল চেক করে দেখে আননোন নাম্বার থেকে পাঠিয়েছে,
‘আর কাজ করতে হবে না। অফিস থেকে বেরিয়ে আসো!’
ম্যাসেজ টা যে শুভর সেটা বুঝতে দেড়ি হয়নি মিহিরের। ভাই কাজ শেষে বলোস আর কাজ করতে হবে না। আরো আগে ম্যাসেজ টা পাঠাতে পারিস নি? উগান্ডার কচ্ছপ কোথাকার। রাগে, ক্ষোভে, দুঃখে ব্যাগ নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে আসে মিহির। অফিসের বাহিরে শুভ কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হয় সে। মিহির কে দেখে এগিয়ে আসে শুভ।
‘মিহি এসো আমার সাথে তোমাকে বাসায় পৌছে দিচ্ছি।’
‘নো থ্যাংকস!’ বলে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নেয় মিহির। শুভ মিহিরের কথায় রেগে হাত ধরে ফেলে। মিহির হাত ছাঁড়ানোর চেষ্টা করে বলে, ‘এটা কি ধরনের অসভ্যতামি? আমার হাত ধরেছেন কেনো?’
‘কি বলেছি শুনতে পাও নি? আমার সাথে এসো।’ কড়া গলায় বলে শুভ। মিহির ক্ষোভ নিয়ে বলে, ‘যাবো না মানে না!’ শুভ মিহিরের হাত ধরে জোর করে টেনে গাড়িতে বসিয়ে নিজেও ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে। শুভর এমন কাজে বিস্মিত হয় মিহির। গাড়ির দরজা খুলে বের হতে চাইলে দেখে ডোর লক করা। শুভ এগিয়ে এসে মিহিরের সীটবেল লাগিয়ে দিয়ে কড়া চোখে তাকিয়ে বলে, ‘বড্ড জেদী তুমি। ভালো কথায় শুনো নি তাই জোর করতে হলো।’ বলেই গাড়ি স্টার্ট দেয় শুভ। মিহির রেগে চেঁচিয়ে বলে উঠে,’সমস্যা কি আপনার? যাবো না আমি আপনার সাথে। শুনতে পান নি আপনি?’
শুভ চুপচাপ সামনে তাকিয়ে এক মনে ড্রাইভ করছে যেনো আশেপাশে কিছুই হয়নি। তেলে বেগুনে জ্বলে মিহির বাহিরে তাকায়। অনেকক্ষন পর খেয়াল করে মিহিরের বাসার ওল্টো পথে গাড়ি যাচ্ছে। মিহির তখন অস্থির হয়ে চেঁচিয়ে বলে,’আরে আরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? এইদিকে আমার বাসা না। আমি যাবো না আপনার সাথে। নামিয়ে দিন আমায়।’
‘চুপচাপ বসে থাকতে পারো না? এমন ভাবে চিল্লাচ্ছো যেনো তোমাকে আমি কি:ড:ন্যাপ করে নিয়ে যাচ্ছি।’ সামনে দিকে চোখ রেখে বলে শুভ। মিহির দিগুণ চেঁচিয়ে বলে উঠে, ‘আপনি তো আমাকে একপ্রকার জোর করেই নিয়ে যাচ্ছেন এটা কি:ড:ন্যাপ না? এই ওয়েট ওয়েট, আপনি কি আমাকে পা:চার করে দেওয়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছেন? হায় আল্লাহ বাঁচাও আমাকে। ভাই আমাকে বাচাও প্লিজ।’ শেষের কথা গুলো অস্থির হয়ে বলে মিহির। মিহিরের কথা অবাক হয়ে যায় শুভ।
চলবে..!!
[মাহিনের চরিত্রে রহস্য আছে। আর খুব শীঘ্রই রহস্য বেদ করবো। আপনাদের খুশি রাখতে আজকের পর্বটা বড় করে দিয়েছি। ঘটনমূলক মন্তব্যের আশায় থাকবো। হ্যাপি রিডিং❤️]