#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির
১৩.
‘লাইক সিরিয়াসলি মিহির? আমাকে তোমার এমন মনে হয়?’
‘হয় তো! এখন নিশ্চয় আপনি আমাকে নিয়ে পাচার করে দিবেন। জানি জানি আপনি মানুষটা ভালো না দেখেই বুঝা যায়। চোখে মুখে চোরের ভাব আছে।’ বলে চোখ ছোট ছোট করে হাসতে লাগলো মিহির। শুভ এক পলক মিহিরের দিকে তাকিয়ে মজার ছলে দুষ্টু হেসে বলে,’তোমাকে পা:চার করবো না। বিক্রি করে জিলাপি খাবো। অবশ্য তুমি নিজেই জিলাপির মতো মিষ্টি তাই ভাবছি শুধু শুধু কষ্ট করে বিক্রি করবো কেনো তোমাকেই ডিরেক্ট খেয়ে ফেলবো।’
চোখ বড় বড় করে তাকায় মিহির। বিড়বিড় করে বলে, ‘অসভ্য লোক!’ আস্তে বললেও শুভ শুনতে পায়।
‘কোনো প্রকার অসভ্যতামি না করে যখন অসভ্যের ট্যাগ পেয়েছি এখন না হয় অসভ্যতামি করেই অসভ্যের ট্যাগ নেই কি বলো মিহির?!’ দুষ্টু হেসে বলে শুভ। মিহির কড়া চোখে শুভর দিকে তাকিয়ে বলে,’চুপচাপ ড্রাইভ করুন!’
_______________
সন্ধ্যায় বসে ল্যাপটপে মনোযোগ দিয়ে কাজ করছিলো মাহিন। ইদানীং কাজের চাপ প্রচুর। ফোনের আওয়াজে ধ্যান ভাঙে তার। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে আননোন নাম্বার থেকে সিম-২ তে কল এসেছে। এই নাম্বার টা সাধারনত অফিসিয়ালি কাজের জন্য ব্যবহার করে মাহিন। আর এটা ডিপার্টমেন্টের সদস্য আর মিহির ছাড়া কারোর কাছে নেই। ডিপার্টমেন্টের কেউ ভেবে কল রিসিভ করে বলে, ‘হ্যালো ইট’স এমআর হাসান স্পিকিং!’
কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে ”এমআর হাসান” নাম টা বললো সুহা। তারপর বলে উঠে, ‘হ্যালো মিঃ হালুক। আমি সুহা থানা থেকে বলছি।’
মৃদু হাসে মাহিন। সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে স্বাভাবিক গলায় বলে, ‘আচ্ছা! তা আমাকে কি দরকার?’
‘আপনার নামে মামলা করা হয়েছে।’
‘আমার অপরাপ?’ সিলিং এর দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক ভাবে বলে মাহিন। সুহা উল্লাসিত গলায় বলে, ‘মিস সুহানা রায়হানের মন চুরি করার অপরাধে।’
‘ওহ আচ্ছা!’ বলে মৃদু আওয়াজে হাসে মাহিন। তারপর আগ্রহ নিয়ে বলে, ‘তা আমাকে কি শাস্তি দেওয়া হবে ম্যাডাম?’
‘সারাজীবনের জন্য সুহার জেলখানায় বন্ধি হতে হবে আপনাকে!’ মিনমিনে গলায় লাজুক কন্ঠে বলে সুহা।
‘ভেবে বলছেন তো?’ বাঁকা হেসে বলে মাহিন। সুহা নিচের ঠোঁট কামড়ে বলে, ‘হ্যা!’
‘যথা আজ্ঞা মহারানী! আপনার দেওয়া শাস্তি আয়াত হাসান মাহিন সাধরে গ্রহণ করেছে!’ মৃদু হেসে গভীর কন্ঠে বলে মাহিন। সুহার মুখে লাল আভা ছড়িয়ে পরে। লাজুকলতা এসে ভর করে তার মনে। ঠোঁট চেপে মুচকি হেসে চুপচাপ বসে আছে সে। বুকের ভিতর টিপটিপ শব্দে হার্ট কাপছে। নিরবতায় যেনো দুজন দুজনের নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছে।
‘তা মিস সুহানা রায়হান যদি মন দিয়ে দেয় তাহলে তো চুরি করবোই। সামলে রাখার দরকার ছিলো তার!’ নিরবতা ভেঙে হেসে বলে মাহিন।
‘আমি হয়তো সামলে রাখতে পারিনি এখন না হয় আপনি সামলে রাখুন!’ কন্ঠ নিচু করে বলে সুহা। একটু উচ্চস্বরে হাসে মাহিন। সুহার মধ্যে এক অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে। মাহিন আবেগভরা নমনীয় নন্ঠে বলে, ‘আমার জিনিস আমি খুব ভালো করেই সামলাতে পারি। মাহিনের শহরে প্রবেশ করে বড্ড বেশি ভুল করেছো সুহারানী। আমার এই নিষিদ্ধ শহরে প্রবেশ করে আটকে গেছো তুমি চাইলেও এই জীবনে বের হতে পারবে না। মাহিনের এই ভালোবাসার শহর থেকে সুহারানীর বের হওয়া নিষিদ্ধ।’
মাহিনের প্রতিটি কথা শিরা উপশিরায় শীতল স্রোত ভয়ে যাচ্ছে। বুকের বা পাশে থাকা হৃদযন্ত্রটা কেমন দ্রুত গতিতে চলছে। লজ্জায় গালে লাল আভা খেলা করছে সুহার।
‘কি ব্যাপার কথা বলছো না যে? ওয়েট! তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো? সিরিয়াসলি সুহা এতো দিন তো বকবক করে আমার মাথা খেয়ে ফেলতে এখন লজ্জায় কথা বলছো নাহ? ব্যাপার কি?’
‘কিছু না!’ ছোট করে উত্তর দেয় সুহা।
‘বাই এনি চান্স, তুমি কি আমার কথায় লজ্জা পাচ্ছো নাকি? তবে শুনে রাখো আমাকে দেখতে যতো টা ভালো মনে হয় আমি কিন্তু ততোটা ভালো নয়। লজ্জা পেয়ে লাভ নেই। আমাকে সারা জীবন সয্য করতে হবে তোমাকে। পারবে তো?’ দুষ্টু হেসে বলে মাহিন।
‘আব্ আমি রাখি আম্মু ডাকছে!’ আমতা আমতা করে বলে সুহা। মাহিন উচ্চস্বরে হাসতে হাসতে বলে, ‘ঠিক আছে যাও! আর হ্যা স্বপ্ন কিন্তু আমাকে নিয়ে দেখো।’ শেষের কথাটা শীতল কন্ঠে বলে মাহিন। সুহা কোনো রকমে ‘গুড নাইট!’ বলে রেখে দেয়। এভাবেই মাহিন সুহার প্রণয়ের বিনিময় ঘটে। ❤️
_____________
মাগরিবের আজান পরেছে কিছুক্ষন আগে। অন্ধকারের ছেয়ে গেছে চারদিকে। গাড়িটা ঢাকা থেকে দূরে গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। শুভ গ্রামে যাচ্ছে কেনো বুঝতে পারছে না মিহির। ইতিমধ্যে কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছিলো কোথায় যাচ্ছে। প্রতিউত্তরে শুভ বলে, ‘তোমাকে বিক্রি করতে যাচ্ছি!’ মেজাজ তুঙ্গে উঠে আছে মিহির। কিন্তু আপাতত রাগ দেখিয়ে এমন সন্ধ্যার মোহনীয় দৃশ্য মিস করতে চাচ্ছে না সে। তাই চুপচাপ গাড়ির কাচ নামিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে সে। অনেকক্ষন পর একটা বিলের পাড়ে গাড়ি থামায় শুভ। মিহিরকে ইশারায় গাড়ি থেকে নামতে বলে নিজেও নেমে সামনে এগিয়ে যায়। মিহিরও চুপচাপ পিছু নিচ্ছে শুভর। কিছু সময় হাটার পর শুভ একটা ছোট চা’য়ের দোকানে এসে দাঁড়ায়। দোকানদার কে উদ্দেশ্য করে বলে , ‘দাদু কেমন আছো?’
দোকানের ভিতরে থাকা ষাট কি পঁয়ষট্টি বছর বয়সের এক বৃদ্ধলোক শুভ দেখে উত্তেজিত হয়ে পরে।
‘বাবাজান! এতো দিনে দাদুর কতা মনে পরছে নি তোমার? আমি ভালা আছি। তুমার শরিল ডা ভালা নি?
‘জ্বী দাদু ভালো। আসলে আমি এতো দিন কানাডায় ছিলাম। এসেছি প্রায় মাস দুয়েক হবে।’ দোকানের সামনে থাকা সিটে বসতে বসতে বলে শুভ। মিহির তখনো দাঁড়িয়ে। সে বুঝতে পারছে না কিছুই।
‘এইডা কেডা? নাতবউ নি? তা নাতবউ তুমি কেরাম আছ? খারাইয়া আছ ক্যান বও এনে বও।’ শুভর পাশে বেঞ্চ দেখিয়ে বলে বৃদ্ধালোক। লোকটির মুখে নাতবউ শুনে বিষম খেলো মিহির। বলে কি ব্যাটা? বিস্ফোরিত চোখে শুভর দিকে তাকিয়ে দেখে শুভ মুখ টিপে হাসছে। মিহির নিজেকে সামলে মিষ্টি হাসি দিয়ে বসে বলে, ‘জ্বী ভালো আছি দাদু। আপনি কেমন আছেন?’
‘হ আমিও ভালা আছি।’
‘দাদু! অনেক দূর থেকে আসছি তোমার চা খেতে তাড়াতাড়ি দাও তো!’ আহ্লাদী স্বরে বলে শুভ। মিহি আড় চোখে শুভর দিকে তাকায়। মনে মনে ভাবে কি ঢং দেখাইয়া কথা বলে দেখো, আস্তো ড্রামাবাজ।
‘মিহির! আমার মোবাইল টা গাড়িতে ফেলে এসেছি। ওয়েট আমি নিয়ে আসছি!’ বলে গাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরে শুভ। মিহির চুপচাপ বসে আছে। হঠাৎ দোকানদার বলে উঠে, ‘নাতবউ তোমার ঘোষা ভাংছে তাইলে। আমার নাতিডারে কষ্ট দিও না। তুমি নাকি গেছিলা গা আমার নাতিরে ছাইড়া? তুমারে কত দিন রাইত এক কইরা বিছারছে নাতি। রাইতের বেলা আমার কাছে আইয়া মেলা কানতো তুমার লাইগা। আমার নাতি ডা তুমারে মেলা ভালবাসে নাতবউ। আগলাইয়া রাইখো জামাইরে। হা হা..!’
দোকানদারের কথায় মিহির রাস্তার দিকে এক পলক তাকায়। শুভ কি সত্যি আমাকে এখনো ভালোবাসে? আমাকে খুঁজেছিলো সে? আচ্ছা যদি এখনো ভালোবাসে তাহলে কি আমার ওর কাছে ফিরে যাওয়া উচিত? না কি ভাবছি আমি। কখনোই সম্ভব নাহ। আনমনে কথা গুলো ভাবছে মিহির। দোকানদার দুই কাপ দুধচা বানিয়ে দেয়। মিহির হাত বাড়িয়ে কাপ দুটো নিয়ে একটা শুভর জন্য বেঞ্চে রেখে আরেকটা নিজে খায়। আহঃ সেই চা টা! শুভ আসে প্রায় মিনিট সাতেক পর। এসে চা কাপ টা হাতে নিয়ে খাওয়া শুরু করে। খাওয়া শেষে বৃদ্ধা কে বিদায় জানিয়ে কিছু দূরে গিয়ে রাস্তা থেকে নিচে নেমে বিলের পাশ ধরে হাটতে থাকে তারা।
চলবে..!!