অনুভবী হিয়া’ পর্ব-১৪

0
1763

#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির

১৪.

আমার ভিনদেশি তারা
তোমার আকাশ ছুঁয়া বাড়ি,
আমি পাই না ছুঁতে তোমায়
আমার একলা লাগে ভারী.!!

এই মুহূর্তে এই গান পুরাই পারফেক্ট। আকাশে মিটমিট করছে তারা। মৃদু মাতাল হাওয়ায় মনোমুগ্ধকর লাগছে পরিবেশটা। পাশাপাশি হাটছে দুজন। নিরবতা বিরাজ করছে তাদের মাঝে। হঠাৎ দাঁড়িয়ে পরে শুভ। শুভকে দাঁড়াতে দেখে মিহির প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকায়। শুভ মিহিরের কাছে এসে মৃদু স্বরে বলে, ‘মিহি আমাকে আর একটা সুযোগ দেয়া যায় না?’

মিহির শান্ত আর নির্বিকার ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে। হৃদপিন্ড দ্রুত গতিতে চলছে। শুভ মিহিরের হাত ধরে আবেগভরা চোখে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলে, ‘বিশ্বাস করো মিহি আমি ভালো ছিলাম না। তোমাকে ছাড়া আমি একটুও ভালো ছিলাম না। ওই দিন আমি রেগে তোমার সাথে বাজে ব্যবহার করে ছিলাম। আমি তোমাকে সরি বলতাম কিন্তু তুমি চলে গিয়েছিলে। অনেক খুঁজেছি তোমাকে। দিন রাত এক করে ছয় মাস যেখানে পেরেছি পাগলের মতো খুঁজেছি। মিতুর কাছেও হাত জুর করে বলেছিলাম একবার তোমার খোঁজ দিতে সে দেয়নি। আদিল সামির কিংবা রাহুলকে জিজ্ঞেস করতে পারো। আমার অবস্থা পাগলপ্রায় হয়েছিলো। আমি কানাডা যেতে চাইনি কিন্তু সবাই আমাকে জোড় করে পাঠিয়েছিলো। ওখানে থেকেও রোজ তোমার খবরের জন্য লোক লাগিয়েছিলাম।’

মিহির অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার সামনে থাকা প্রেমিক পুরুষটির দিকে। চোখের কোণায় জল চিকচিক করছে, বুকের বা পাশে চিনচিন ব্যাথ্যা করছে। শুভ এক হাত মিহিরের ডান গালে রেখে আবেগী হয়ে বলে,

‘আমি ভিতরে ভিতরে পুড়ে যাচ্ছি মিহির। এই দহন আমার সয্যের ক্ষমতার বাহিরে। আমি আর পারছি না মিহি। এতো গুলো দিন পরে তোমাকে কাছে পেয়েও কাছে পাচ্ছি না, আগলে নিতে পারছি না। এর চেয়ে বড় শাস্তি আর কি হবে তুমি বলো? আমার তোমাকে দরকার মিহি। ভীষণ ভাবে দরকার। তোমার উষ্ণতায় আমাকে জায়গা দেবে মিহি? অনেক বেশি ভালোবাসি আমার ঘুমকুমারীকে। ভালোবাসি আমার কৃষ্ণপরীকে।’ ধরা গলায় বলে শুভ। চোখ মুখ লাল হয়ে আছে তার। কথা যেনো তার গলায় আটকে আছে। শুভ যে কাঁদছে মিহির বুঝতে পারছে। একে-ওপরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তারা। খানিকক্ষণ পর মিহির শুভকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে দূরে সরে দাঁড়ায় সে। কান্নাগুলো দলা পাকিয়ে যাচ্ছে সব। কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না সে। শুভ আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিহিরের দিকে। মিহির যে এখনো তাকে ক্ষমা করতে পারেনি সেটা শুভ বুঝতে পারছে। মিহির নিজেকে সামলে বলে, ‘আমার দেড়ি হয়ে যাচ্ছে শুভ। মা চিন্তা করবে!’

বলেই সামনের দিকে চলা শুরু করে মিহির। পিছন থেকে শুভ আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিহিরের যাওয়ার দিকে। কষ্ট হচ্ছে তার। মানুষ বলে ছেলেদের নাকি কাঁদতে নেই। এটা সম্পূর্ণ ভুল মনে হচ্ছে শুভর। তার এখন গলা ফাটিয়ে হাত পা ছুড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। বলতে ইচ্ছে করছে, ‘মিহিকে লাগবে আমার!’

গাড়ি চলছে আপন গতিতে নিদিষ্ট গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। গাড়িতে কেউ টু শব্দও করে নি। শুভ আড়চোখে মিহিরকে দেখেছে। মিহির কাচ নামিয়ে এক দৃষ্টিতে বাহিরে তাকিয়ে আছে। শুভ কথা বলতে চেয়েছিলো কয়েকবার কিন্তু মিহির হু হা ছাড়া কিছু বলেনি। এড্রেস জানতে চাইলে মিহির ছোট করে বলে।

রাত নয় টায় মিহিরদের বাসার গেইটের সামনে এসে থামে গাড়ি। মিহির ইতস্ততবোধ করছে নামবে কিনা ভেবে। শুভ মিহিরের দিকে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যার জন্য আরো অস্বস্থিতে পরে মিহির। আমতা আমতা করে ছোট করে বলে, ‘আব্ আমি আসছি!’ বলে যেই সিটবেল খুলে গাড়ির দরজায় হাত দিবে তখনি শুভ আচমকা মিহির কে টান দিয়ে ডান গালে একহাত রেখে আরেক হাত কোমড় চেপে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। ঘটনাক্রমে মিহির স্থব্ধ হয়ে যায়। নিউরনের স্নায়ু কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে বোধহয়। আবেশে মিহিরও শুভর সাথে তাল মিলাচ্ছে। শুভ পরম আবেশে ভালোবাসায় ভরিয়ে দেয় মিহিরকে। এক অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে। বেশ কিছুক্ষণ পর ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে জোড়ে জোরে শ্বাস নিচ্ছে দুজন। শুভ হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে মিহিরের ঠোঁট মুছে দেয়। আবেগী হয়ে শান্ত স্বরে বলে শুভ, ‘তুমি চাও আর না চাও তোমাকে আমার সাথেই থাকতে হবে মিহির। তুমি থাকতে বাধ্য!’ বলেই মিহির কে ছেড়ে সীটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে শুভ। মিহির কিছুক্ষণ স্থির হয়ে বসে থেকে চুপচাপ গাড়ি থেকে নেমে যায়। শুভকে কিছু না বলে বাসায় চলে যায় সে। শুভ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মিহিরের যাওয়ার দিকে। বাকা হেসে গাড়ি স্টার্ট দেয় শুভ।
_______________

রুমে গিয়ে ব্যাগ রেখে ফ্রেশ হয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়ায় মিহির। নিজেকে দেখে লজ্জায় মুখে হাত রাখে সে। ইশ কি হলো এটা? শুভ এমন করলো কেনো? অসভ্য লোক একটা! লজ্জায় ব্লাশিং করছিলো মিহিরের গাল।

রাত সাড়ে দশ টার দিকে মাহিন আসে মিহিরের রুমে।

দরজায় হেলান দিয়ে পকেটে হাত গুঁজে গম্ভীর মুখে বলে মাহিন, ‘কোথায় ছিলি এতোক্ষন?’

টেবিলে বসে এসাইনমেন্ট লিখছিলো মিহির। হঠাৎ ভাইয়ের প্রশ্নে ভরকে যায় সে। এইসময় ভাই বাসায় কেনো? ভাইকে কি বলবে এখন? মিথ্যে বলতে হবে তাহলে? মাহিন কে পাল্টা প্রশ্ন করে মিহির, ‘তুমি এইসময় বাসায়? কাজে যাও নি?’

‘আমি তোকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি মিহু। কথা ঘুরানোর চেষ্টা করবি না।’ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে শান্ত স্বরে বলে মাহিন। ভাইয়ের শান্ত স্বর বলে দিচ্ছে সে এখন তার উত্তর না পেলে প্রচুর ক্ষেপে যাবে। তাই মিন মিন গলায় বলে মিহির, ‘মিতুদের বাসায় ছিলাম। এসাইনমেন্ট আর কিছু নোট আনার ছিলো।’

‘সত্যি?’

‘হ্যা!’ ছোট করে বলে মিহির। মাহিন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিহিরের দিকে। মিহির এতোক্ষন কোথায় ছিলো সব জানে মাহিন। তাও সত্তিটা শুনতে মিহিরের কাছে এসেছিলো এইভেবে যে মিহির সত্যি বলবে। কিন্তু না তার ধারনা ভুল মিহির তাকে মিথ্যে বলেছে।

“তুই ভালো মিথ্যে বলা শিখে গেছিস মিহু। তোর কাছ থেকে সত্তিটা জানতে জিজ্ঞেস করেছিলাম কিন্তু তুই আমাকে মিথ্যে বলেছিস এটা তোর থেকে আশা করিনি।’ বলে কিছুক্ষণ মিহিরের দিকে তাকিয়ে থাকে মাহিন। তারপর চলে যাওয়ার জন্য দরজা কাছে গিয়ে আবার মিহিরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে, ‘ভুলে যাস না সারাদিন তুই কি করিস কোথায় থাকিস সব আপডেট আমার কাছে আসে। তাই কিছু করার আগে সাবধানে থাকিস।’ বলেই দরজা চাপিয়ে চলে যায় মাহিন। মিহির অপরাধী ন্যায় তাকিয়ে আছে ভাইয়ের যাওয়ার দিকে। ভাইয়া নিশ্চয় কষ্ট পেয়েছে। কেনো যে মিথ্যে বললাম। ভাইয়া তো সব জানে তাহলে বলে দিলেই পারতাম। কান্না পাচ্ছে মিহিরের। এমন না করলেও পারতো সে। এখন নিশ্চয় ভাই কিছু দিন মিহিরের সাথে কথা বলবে না।

চলবে..!!

[ শুভ আর মিহিরের অতীত সম্পর্কে লিখবো! গল্প থিম অনুযায়ী আগাচ্ছে। একটু ধৈর্য্য ধরুন। আস্তে আস্তে সব জানতে পারবেন। হ্যাপি রিডিং!❤️]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here