#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির
১৫.
সকালে রাশেদার সাথে টেবিলে নাস্তা সাজাচ্ছিলো মিহির। বার বার ভাইয়ের রুমের দরজার দিকে তাকাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর মাহিন বেরিয়ে আসে রুম থেকে।
‘মা আমি বের হচ্ছি। আর আজকে আমার একটা জরুরি কাজ আছে আসতে লেইট হবে টেনশন করো না।’ মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে মাহিন। রাশেদা বেগম ব্যস্ত হয়ে বলে, ‘ওমা নাস্তা না করে বেরিয়ে যাচ্ছিস মানে? খেয়ে যা দেখ মিহু তোর প্রিয় হালুয়া রান্না করছে। আয় খেয়ে যা।’
‘আমি বাহিরে খেয়ে নেবো। এমনিতেই আমার দেড়ি হয়ে গেছে। আমি আসছি।’ বলেই মোবাইল পকেটে রাখতে রাখতে বেড়িয়ে যায় মাহিন। মিহিরের কান্না পাচ্ছে খুব। অন্য সময় হলে মাহিন বসে চেটেপুটে তার রান্না করা খাবার খেতো। আজকে তার দিকে একবারো তাকালো না। চোখে পানি মানছে না। দ্রুত রুমে চলে যায় মিহির। দুই ভাই বোনের মাঝে যে মনোমালিন্য চলছে রাশেদা বেগম ভালোই বুঝতে পেরেছে। যদিও কেউ কারোর সাথে বেশিক্ষন রেগে থাকতে পারে না। ভাই বোনের ব্যাপার তারাই ঠিক করে ফেলবে।
মিহিরও না খেয়ে বেরিয়ে গেছে। তার জন্য তার ভাই না খেয়ে বের হলো আর সে কিভাবে খাবে? অফিসে গিয়ে চুপচাপ মন মরা করে বসে আছে মিহির। ভালো লাগছে না কিছু। মাহিনের নাম্বারে কল দিয়েছে কিন্তু রিসিভ করছে না। রাগ হচ্ছে শুভর উপর। ইচ্ছে করছে শুভর মাথা ফা:টিয়ে দিতে। শুভর যদি এমন না করতো তাহলে তার ভাই তার সাথে রেগে থাকতো না। উগান্ডার হাতি একটা!!
শুভ অফিসে আসে দেড়িতে। শুভকে আসতে দেখে মিহির শুভর কেবিনে যায় প্রজেক্টের ফাইল নিয়ে।
কেবিনে নক না করে ঢুকে পরে মিহির। শুভ চেয়ারে বসেছিলো তখন। মিহির কে ঢুকতে দেখে শুভ মুচকি হেসে বলে, ‘কেমন আছো মিহি?’
‘ভালো অনেক ভালো। এতোটাই ভালো যে নাচতে নাচতে ট্রেনের নিচে ঝা:প দিতে ইচ্ছে করছে।’ ঝাঁঝালো গলায় বলে মিহির। মিহিরের এমন আচরনে বোকা বনে যায় শুভ। বোকা বোকা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, ‘মানে?’
‘মানে? মানে জিজ্ঞেস করছেন? সব আপনার দুষ। আপনি ইচ্ছে করে আমাকে ওইখানে নিয়ে গেছেন। আপনার মতো নাম্বার ওয়ান শয়তান লোক দুনিয়াতে আর একটাও নাই। ইচ্ছে করছে পচা পানিতে চু:বিয়ে মা:রতে আপনাকে।’ রাগে ফোশ করতে করতে বলে মিহির। শুভ কিছুই বুঝতে পারছে না বেচারা। মিহিরের হাতে থাকা ফাইল টা শুভর সামনে জোরে শব্দ করে রেখে দাঁত চেপে বলে, ‘এই নিন আপনার অসভ্য ফাইল।’
‘কি হয়েছে তোমার বলবে? রেগে আছো কেনো?’
‘রেগে থাকবো কেনো? আপনার জন্য আজ..’
মিহির কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার মোবাইলে ম্যাসেজ আসে।
‘আমি নিচে ওয়েট করছি তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আয়!’
ম্যাসেজ টা মাহিন পাঠিয়েছে। মিহির থাইগ্লাসের দিকে এগিয়ে গিয়ে বাহিরে তাকিয়ে দেখে মাহিন বাইকে বসে আছে। মিহির শুভকে কিছু না দ্রুতগতিতে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে। হঠাৎ মিহিরের কি হয়েছে বুঝতে পারছে না শুভ। সেও থাইগ্লাসের দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখে কালো ড্রেসআপে মাথায় হেমলেট দিয়ে বসে আছে একছেলে। তখনি মিহির অফিস থেকে বেরিয়ে বাইকের কাছে যায়।
মিহিরকে আসতে দেখে মাহিন কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ চোখে দেখে তাকে। মিহির হাটুতে দুই হাত ভর দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। মাহিন বিরক্তি নিয়ে বলে, ‘তোকে দৌড়ে আসতে কে বলেছে? সব জায়গায় পাকনামি করিস কেনো?’
‘তুমি ডেকেছো আমি তাড়াতাড়ি আসবো না তা কখনো হয়?’ হাসি ভরা মুখে বলে মিহির। মাহিন হেমলেটের ভিতরে মুচকি হাসে। তারপর নিজ হাতে মিহির কে সযত্নে হেমলেট পরিয়ে দেয়।
‘কোথায় যাচ্ছি আমরা?’
‘না খেয়ে বেরিয়েছিস কেনো? তোকে বারন করেছিলাম না আমি? বাইকে উঠ।’ বাইকে বসতে বসতে বলে মাহিন। মিহির ভাইয়ের কাধে হাত দিয়ে বাইকে উঠে বসে। মাহিন বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে যায় রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে।
কেবিনে দাঁড়িয়ে এতোক্ষন সব দেখছিলো শুভ। রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে আসে তার। দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে সে। টেবিলের উপর থাকা ফ্লাওয়ার বেস ভেঙে ফেলে।
_______________
রেস্টুরেন্ট থেকে মিহিরকে লাইব্রেরী তে নামিয়ে মাহিন চলে যায় ল্যাবে।
এই সুযোগ টা সাধারনত মিহির কে একা দিয়েছে আয়াজ রায়হান! যখন খুশি অফিসে যাবে যখন খুশি বেরিয়ে আসতে পারবে মিহির। অফিসে জয়েনের আগে মিহির তার ভার্সিটির কথা বলেছিলো আয়াজ কে।তাই আয়াজ তাকে এই সুযোগ দেয়। আর দিবে না কেনো আয়াজ রায়হানের ছেলের হবুবউ বলে। এনিয়ে অফিসে অনেক কানাঘুষা হয়েছিলো এখন অবশ্য কেউ কিছু বলে না।
আপাতত লাইব্রেরী তে বসে বই ঘাটছে মিহির। মিতুর আসার অপেক্ষা করছে সে। মিহিরের সামনের টেবিলে মনমরা করে বসে আছে সুহা। তার হালুকের জন্য বসে আছে সে। কল দিতে গিয়ে কি ভেবে আর দেয়নি। হঠাৎ নজরে পরে সামনের বেঞ্চে বসে থাকা মিহিরের উপর। বড়বড় চোখ করে তাকায় সুহা। দ্রুত উঠে মিহিরের পাশে এসে বসে সে। তারপর উল্লাসিত কন্ঠে বলে, ‘হাই আপু আমি সুহা!’ বলে হাত বারিয়ে দেয়। মিহির মুচকি হাসি দিয়ে হাত মিলিয়ে বলে, ‘আমি মিহির!’
সুহা আনন্দে উত্তেজিত হয়ে ফট করে বলে ফেলে, ‘জানি! তোমাকে এখানে দেখতে পারবো ভাবতেই পারি নি। তুমি কি এখানে প্রতিদিন আসো?’
সুহার কথা কেমন অবাক হয় মিহির। তারপর বলে, ‘জানো মানে? আমাকে আগে কোথাও দেখেছিলে তুমি?’
সুহা বুঝতে পারে উত্তেজিত হয়ে কি বলে ফেলেছিলো। তারপরেও নিজেকে সামলে বলে, ‘আরে আপু ওই দিন তোমাকে রিকশায় উঠতে দেখেছিলাম আরকি তাই বললাম।’
‘ওহ আচ্ছা। আমি মাঝে মাঝে আসি এখানে। ভালো না লাগলে এখানেই টাইম স্পেন্ড করি।’ স্বাভাবিক ভাবে বলে মিহির। সুহা বলে, ‘আমিও মাঝে মাঝে আসতাম। তুমি যেদিন আসবে ওই দিন আমাকে জানিয়ে দিবে আমি এসে তোমার সাথে গল্প করবো ওকে?’
সুহা অনেক মিশুক আর কিউট একটা মেয়ে। কিন্তু সুহা কে কেমন চেনা চেনা লাগছে মিহিরের। কোথায় দেখেছে তাকে? উফ!
সুহা আর মিহিরের গল্পের মাঝে মিতু আসে। সুহা মিতুকে দেখে খানিকটা বিরক্তিবোধ করে সুহা। মিতুর কাছে শুভ কত বার গিয়েছে মিহিরের খোঁজ নিতে কিন্তু মিতু দেয়নি। তাই সুহা বিরক্ত মিতুর উপর। তাছাড়া তার আর তার ভাবির মাঝে কাবাব কা হাড্ডি। মিতু এসে সুহার সাথে পরিচিত হয়। তার পর তিজ জন মিলে বেশ জমিয়ে আড্ডা দেয়।
________________
রাতের আকাশ, হাজার টা তারার মেলা। আকাশের তারাগুলোর মতো সমান ভাবে মনে অভিমান পুষে রেখেছে সুহা। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আনমনে আকাশের কাছে অভিযোগ করছে সে। আজ সারাদিনে একবারও কল দেয় নি মাহিন। সুহা কল দিয়েছিলো কিন্তু নাম্বার বন্ধ। লাইব্রেরী তে অনেকক্ষন বসেছিলো মাহিনের জন্য কিন্তু মাহিন আসে নি। কালকে তো কতকিছু বললো কিন্তু আজকে। মাহিন তো আমাকে একবারো ভালোবাসি বলে নি। মাহিন তাহলে ভালোবাসে না। কাল সব মিথ্যে বলেছে। কান্না পাচ্ছে তার। চুপচাপ রুমে গিয়ে মুখ ধুয়ে ঘুমিয়ে পরে সে।
চলবে..!!