#অনুভবী_হিয়া’
#মাইশাতুল_মিহির
২০.
একদিন পুরো কলেজের সামনে শুভ মিহিরকে প্রপোজ করে বসে। মিহির কিছুক্ষন স্থব্ধ হয়ে থেকে রাজি হয়ে যায়। শুরু হয় এক প্রনয়ের প্রেমকাহিনী।
তারপর থেকে দেখা করা, রাত জেগে কথা বলা, বাইক দিয়ে ঘুরতে যাওয়া সব মিলিয়ে ভালোই চলছিলো তাদের দিনকাল।
রিলেশনের ৩ মাসে মাহিন কে সব জানায় মিহির। আসলে মাহিন মিহিরকে জিজ্ঞেস করলে মিহির সব বলে দেয় মাহিনের প্রথম রাগ হলেও পরে বোনের খুশীর কথা ভেবে চুপ হয়ে যায়। শুধু এতোটুকুই বলেছিলো মাহিন, ‘ওই ছেলে যদি তোকে ধোকা দেয় মিহু, আই সোয়ার মে:রে ফেলবো একদম।’
মিহির এইসএসসি পরিক্ষা দিয়ে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়। শুভরা অনার্স ফাইনাল দিয়ে বেরিয়ে যায় ভার্সিটি থেকে। অনার্স ফাইনালের পর শুভর মধ্যে পরিবর্তন আসে। অবসর সময় কাটাতে ফ্রেন্ড, বিভিন্ন গ্রুপের সাথে ট্রিপে যায় সে, যার ফলে মিহিরকে সময় কম দেওয়া হতো তার। মিহির প্রথমে নিজেকে বুঝাতো কিন্তু সময়ের সাথে এই অবহেলা টা বাড়তে থাকে। মিহির কল দিলে ব্যস্ত বলে, ঘুরতে যাওয়ার কথা বললে শুভ বলে ফ্রেন্ডদের সাথে বাহিরে যাবে তাই পারবে না। সারাদিন এখানে সেখানে ঘুরে রাতে ক্লান্ত শরির নিয়ে ঘুমিয়ে পরতো শুভ। যার জন্য রাতেও কথা কম হতো। এক সময় শুভর মাঝে বিরক্ত এসে পরে। মিহির শুভকে কল দিলে বিরক্ত হয়ে বলতো শুভ, ‘আমি ফ্রি হলে কল দিবো তো, বার বার কল করে ডিস্টার্ব করো কেনো?’ মিহিরের তখন কান্না পেতো। কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে ফেলতো সে। মিহিরের বাবা ব্যবসার কাজে বেশিরভাগ সময় বাড়ির বাহিরে থাকতো, মাঝে মাঝে মাঝরাতে আসতো।
শুভর এমন আচরনে তার বন্ধুরা বেশ বিরক্ত হয়ে যায় শুভর উপর।
‘মেয়েটা তোকে ভালোবাসে শুভ! তুই ওর সাথে এমন ব্যবহার করিস কেনো? একটু সময় তো চেয়েছে বেশী কিছু চায় নি।’ বলে আদিল। আদিলের কথায় শুভ বিরক্তি নিয়ে বলে, ‘আরে ভাই, আমি তো ওরই আছি অন্য কোনো মেয়ের সাথে তো যায়নি। ওকেই বিয়ে করবো আমি। ভালোবাসি মিহিকে। আর এখন লাইফ এঞ্জয় করার সময় ইয়ার। কিছু দিন পর বাবার ব্যবসায় বসলে সময় পাবি না আর। জাস্ট এঞ্জয় কর এখন।’
‘যখন থাকবে না তখন বুঝবা মামা। আছে তো এখন তাই কদর বুঝো না।’ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে সামির।
মিহির প্রায় কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে যেতো। শুভর অবহেলা তাকে বড্ড পুড়ায়। মিহির অবস্থা দেখে মিহির মা রাশেদা বেগম জিজ্ঞেস করলে বলতো, ‘আম্মু পড়ার প্রচুর চাপ তাই এমন লাগছে।’
যখন তাদের সম্পর্কের প্রায় দুবছর হতে চলেছে তখন মিহির শুভকে কল দিয়ে বলে, ‘শুভ কালকে দেখা করতে পারবে? তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।’ উল্লাসিত মুখে বলে মিহির।
‘মিহি কালকে আমি একটু ব্যস্ত। কাল বের হতে পারবো না। তোমাকে অন্য দিন ঘুরতে নিয়ে যাবো।’
‘তুমি সবসময় ব্যস্ত থাকো শুভ। আমার জন্য কি তোমার একটু সময় হয় না? সবার সাথে তো দিব্যি ঘুরে বেড়াও আমাকে একটা কল দিয়ে কিছুক্ষন কথা বলতে পারো না?’ নরম গলায় বলে মিহির। মিহিরের কথায় রেগে যায় শুভ। চোয়াল শক্ত করে বলে, ‘কি বললে আমি সব সময় ব্যস্থ থাকি? তোমাকে সময় দেই না? রাতে বাড়িতে ফিরেই তো তোমাকে কল দেই। কি দেয় না? ঘুম থেকে উঠেই কল দেই তোমাকে। একটু কথা কম বলি বলে সময় দেয় না তোমাকে? ওকে ফাইন, আমি সবসময় ব্যস্ত থাকি তাহলে আমাকে কল দিয়ে ডিস্টার্ব করো কেনো? দিও না আর কল, দিবো না তোমাকে সময়।’ বলেই কল কেটে মোবাইল বিছানায় ছুঁড়ে মারে শুভ। এমনিতেই বাবার সাথে রাগারাগি হয়েছে তার উপর মিহিরের এসব কথা রাগ দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
শুভ কল কেটে দিতেই কান্নায় ভেঙে পরে মিহির। আগে তো শুভ এমন ছিলো না তাহলে এখন এমন করে কেনো? তাহলে কি শুভ আমাকে ভালোবাসে না? আমি কেবল তার মোহ ছিলাম?
পরের দিন মিতু মিহিরকে জোর করে বাহিরে নিয়ে যায় মন ভালো করার জন্য। তখন প্রায় বিকাল চারটা বাজে। ঘুরা শেষে কফিশপে যায় মিহির আর মিতু। কফিশপের ভিতরে গিয়ে শুভকে তার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে দেখে মিহির। কেনো যেনো তার প্রচুর রাগ উঠে যায়, অন্য সময় হলে কেঁদে চলে যেতো কিন্তু আজকে রেগে শুভর সামনে দাঁড়িয়ে কড়া গলায় বলে উঠে, ‘তুমি না আজকে ব্যস্ত থাকবে বলেছিলে? এই তোমার ব্যস্ততা?’
হঠাৎ মিহিরকে দেখে কিছুটা বিস্মিত হয় শুভ। পরোক্ষণে শান্ত স্বরে বলে, ‘মিহি এটা রেস্টুরেন্ট আস্তে কথা বলো।’
মিহির দ্বিগুণ চেঁচিয়ে বলে, ‘আগে বলো এখানে কি করছো তুমি?’
ইতিমধ্যে সবার নজর তাদের দিকে চলে এসেছে। মিহিরের চেঁচানোর আওয়াজে শুভ চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে শক্ত কন্ঠে বলে, ‘আমি যেখানে খুশি সেখানে যাবো তাতে তোমার কি? তোমাকে বলতে যাবো কেনো?’
‘অবশ্যই আমাকে বলতে হবে। মিথ্যে বলেছিলে কেনো তুমি?’
‘আমি তোমাকে বলতে বাধ্য নয়!’ খাপছাড়া ভাব নিয়ে বলে শুভ।
‘তুমি বাধ্য, বাধ্য তুমি বুঝেছো? আমাকে টাইম না দিয়ে তুমি ওদের সাথে আড্ডা দিচ্ছো কেনো?’
‘মিহি তুমি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছো!’
‘বাড়াবাড়ি আমি করছি? বাড়াবাড়ি তো তুমি করছো শুভ। মিথ্যে বললে কেনো তুমি আমাকে?’
‘হ্যা বলেছি আমি মিথ্যে। কারণ তোমার সাথে দেখা করার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে আমার নেই। বিরক্ত করো না আমাকে যাও এখান থেকে!’ রেগে বলে শুভ।
‘দেখা করার ইচ্ছে থাকবে কেনো এখন তো আমাকে আর ভাল্লাগে না তোমার, আমাকে বিরক্ত লাগে তোমার। করবো না আর বিরক্ত তোমাকে।’
‘মিহি চুপচাপ চলে যাও এখান থেকে। পরে কথা বলবো তোমার সাথে।’
‘পরে কেনো? যা বলার এখানেই হবে। তোমার এমন খাপছাড়া ভাব আমি নিতে পারছি না। সব সময় আমাকে ব্যস্ততা দেখিয়ে বন্ধুদের সাথে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছো। সত্যি করে বলো তো তুমি কি আদৌ রিলেশনটাকে সিরিয়াসলি নিয়েছো?’
পুরো রেস্টুরেন্টের মানুষ আগ্রহ নিয়ে দেখছে তাদের। কিন্তু সে দিকে বিন্দু মাত্র ধ্যান কারোর।
শুভ বিরক্ত হয়ে বলে, ‘হ্যা আমি ব্যস্ত থাকি কারন এইসব ফালতু ডেটিং ফেটিং করার মতো আজাইরা সময় আমার নাই।’
‘ভাই চুপ কর, বেশি বলছিস তুই!’ রেগে বলে আদিল। আদিলকে থামিয়ে মিহির বলে, ‘এতোই যখন ব্যস্ত তাহলে রিলেশন টা রেখেছো কেনো?’
বিস্মিত কন্ঠে বলে শুভ, ‘মিহি বাড়াবাড়ি করছো। রিলেশন রাখা না রাখা নিয়ে কথা উঠাচ্ছো কেনো?’
মিহির তার জেদ বজায় রেখে বলে, ‘তোমার এই ভাবলেশহীনের কারণে। রিলেশন টা নিয়ে আমার ভয় হচ্ছে। তোমার গাছাড়া ভাব রিলেশন ভেঙে দিচ্ছে। এতোই যখন ব্যস্ত তুমি তো রিলেশন রেখো না।’
শুভ এবার রেগে চেঁচিয়ে বলে উঠে, ‘হ্যা যা যা! তোর মতো মেয়ের সাথে আমার রিলেশন করা সব থেকে বড় ভুল হয়েছে। ভুলেই গেছিলাম তুই আমার লেভেলের না। তুই যেমন তোর ম্যান্টলিটিও তেমন। লাইক থার্টক্লাস কালচার।’
‘শুভ তুমি আমাকে তুই করে বলছো?’ অবাক হয়ে নরম স্বরে বলে মিহির। শুভ ফের রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘হ্যা তুই করে বলেছি। তুই এটারই যোগ্য। একটু পাত্তা দিয়েছি বলে মাথায় উঠে যাস নি। তোর মতো মেয়েকে আসলে আমি ডিজার্ভই করি না। তুই আমার নখেরও যোগ্য না।’
‘শুভ তুমি আমাকে ইনসাল্ট করছো!’
‘করেছি বেশ করেছি। তোর মতো মেয়েকে এইভাবেই বলতে হয়। কখন থেকে বলছি পরে কথা বলবো না তুই তোর মতো প্যাঁচাল বাড়াচ্ছিস।’
‘শুভ! বাড়াবাড়ি হচ্ছে এবার। সরি বল!’ রেগে বলে রাহুল। শুভ রাহুলের দিকে তাকিয়ে মিহিরকে দেখিয়ে বলে, ‘সরি মাই ফুট। এই ফালতু থার্টক্লাস মেয়েকে কিনা আমি সরি বলবো? ও তো আমার যোগ্যই নয়!’
‘দুই বছর রিলেশনে এসে তোমার এখন মনে হচ্ছে আমি তোমার যোগ্য নয়? আমাকে তোমার থার্টক্লাস লেভেলের মেয়ে লাগছে?’ কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলে মিহির।
‘হ্যা লাগছে। আমার জাস্ট তোমাকে বিরক্ত লাগছে, অসয্য লাগছে। সামনে থেকে যাও মাথা আর গরম করো না। পরে কথা বলবো যাও এখন!’
‘আমি যখন তোমার যোগ্য নয়, আমাকে যখন বিরক্ত লাগে তাহলে রিলেশন রেখে কি লাভ?’ কাঁপা কাঁপা গলায় বলে মিহির।
মিহিরের বার বার রিলেশন ভাঙ্গার কথা বলায় শুভ প্রচুর রেগে যায়। তাই রেগে শক্ত গলায় বলে ফেলে, ‘ওহ কাম টু দ্যা পয়েন্ট। যেখানে তোমার মতো থার্ট ক্লাস লেভেলের মেয়ে কে আমি ডিজার্ভ করি না সেখানে রিলেশন রেখে কি লাভ? ব্রেক’আপ! আজকের পর থেকে লজ্জা থাকলে আমাকে আর কল দিবি না।’ শেষের কথাটা দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলে শুভ।
‘মনে রেখো! সবার সামনে তুমি আমাকে অপমান করেছো। কখনো ক্ষমা করবো না তোমাকে। আসবো না তোমার সামনে।’ কান্নায় ভেঙে বলে মিহির।
‘আসিস না, তোর মতো মেয়েকে দেখার ইচ্ছাও আমার নেই। এখন এখান থেকে যা! গেট আউট!!’ চেঁচিয়ে বলে শুভ।
চলবে..!!