অনুভবী হিয়া’ পর্ব-২১

0
1608

#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির

২২.

শুভ মিতুর বাসার এড্রেস নিয়ে মিতুর বাসায় যায়।মিতুকে অনেক অনুরোধ করে মিহির কোথায় থাকে জানতে কিন্তু মিতু বলে নি। কারন মাহিন কড়া নিষেধাজ্ঞা করেছে। শুভ বেশ কয়েকদিন মিতুর বাসায় গিয়েছে কিন্তু বরাবর ফলাফল শূন্য। মিহিরের খুঁজে পাগলপ্রায় হয়ে গেছে শুভ। রুম থেকে বের হয় না। রুমে বসে বসে ইচ্ছে মতো ভাংচুর করে, মিহি বলে জোরে জোরে ডেকে বাচ্চাদের মতো কাঁদে। চোখমুখ ফেকাসে হয়ে গেছে। যার কাছে যেমন শুনেছে খুঁজেছে। পুরো ঢাকা পাগল পাগল করে খুঁজেছে শুভ। অবশ্য আদিল রাহুল সামির সাহায্য করেছে। মিহির এক বার বলেছিলো চট্টগ্রাম তার ভালো লাগে, ব্যাস শুভ চট্টগ্রামেও খুঁজেছে মিহিরকে।

মিহির চলে যাবার ছয় মাস পরেও শুভ স্বাভাবিক হয় নি। মিহিরকে যেভাবে পারছে সেভাবেই খুঁজেছে সে। শুভর বাবা মা বন্ধুরা শুভর এমন অস্বাভাবিক আচরন সয্য করতে পারছে না। তারা সবাই শুভকে নিয়ে প্রচুর চিন্তায় পরে যায়। অবশেষে শুভকে কানাডা তাদের ব্যবসা সামলানোর জন্য পাঠাবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু শুভ কিছুতেই যেতে রাজি না। আদিল সামির রাহুল শুভকে বুঝায় তারা লোক লাগিয়ে মিহিরকে খুঁজবে। একসময় বাধ্য হয়ে কানাডা যেতে রাজি হয় শুভ।

মিহির চলে যাবার ছয় মাস পর কানাডা যায় শুভ। শুভ যেতে চাইনি বহুত কাঠখড় পুড়িয়ে রাজি করানো হয়েছে। কানাডা শুভকে একা ছাড়া ঠিক হবে না ভেবে আদিলও তার সাথে কানাডা যায়। কানাডা গিয়েও শুভ মিহিরের খুঁজার চেষ্টা করে। আদিল সেখানে প্রায় সাত মাস থেকে দেশে ব্যাক করেছে কিন্তু শুভ তখন বাবার ব্যবসায় মন বসিয়েছে তাই সে আসে নি।

সারাদিন কাজে ব্যস্ত থাকলেও রাতের অন্ধকারে মিহিরের ছবি দেখে কাটায় শুভ। চোখ ভিজে আসে তার। কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলে,

‘কাটিয়ে দিয়েছি নির্ঘুম রাত,
পুরেছে দেহ, ক্ষতবিক্ষত হয়েছে হৃদয়,
তবু মিলেনি ভালোবাসার প্রণয়,
আশা ছাড়ে নি এই তৃষ্ণার্ত মন!’
~মাইশাতুল মিহির!

মিহির বাবা চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা যাওয়ার পথে বাসের সাথে ট্রাকের সংঘর্ষে সেখানেই স্পট ডেট হয় তার। রাহিম হাসান মা:রা যাওয়ায় রাশেদা বেগম আর মিহির অনেক ভেঙে যায়। তাদের দুজনকে একা হাতে সামলায় মাহিন। মা বোনকে স্বাভাবিক রাখার জন্য মাহিন তাদের কুমিল্লা রেখে দেয়। পরিবারের মামা মামি কাজিনদের সাথে থেকে মিহির শুভকে প্রায় ভুলেই গেছে। শুভ নামক ব্যক্তি তার জীবন থেকে মুছে দিয়েছে সে। যদিও মাঝে মাঝে মনে পরে কষ্ট হয় তবুও নিজেকে সামলে নেয় মিহির।

অপরদিকে শুভ কানাডা চলে যাওয়ার খবর পেয়ে মাহিন কিছুটা শান্ত হয়। কারন মাহিন শুভকে আর মিহিরের জীবনে আসতে দিতে চাই না তাই শুভর খোঁজ সে এখান থেকেও রেখেছে। মিহিরের সাথে যোগাযোগ রাখার, তার খোঁজ নেওয়ার সম্পূর্ণ পথ মাহিন বিচ্ছিন্ন করেছিলো। তাই শুভ খোঁজ পাইনি মিহিরের।

মিতুর কাছ থেকে যখন জানতে পেরেছে শুভ মিহিরকে ভরা রেস্টুরেন্টে অপমান করেছে তখন তার ক্ষোভ, তীব্র রাগ জন্মায় শুভর উপর। রাগের বশেই সে দিন শুভকে মে:রেছিলো সে। আর মিহিরের আশে পাশে শুভকে কখনোই এলাউ করবে না মাহিন। কখনোই না!

শুভ কানাডা চলে যাবার দুই মাস পর মা বোনকে নিয়ে তাদের নতুন বাড়িতে উঠে মাহিন। তাদের বাড়িটি পাঁচ তলা, তারা উঠেছে চার তলায়। মাহিন এখন থেকে ঢাকা মা আর মিহিরের সাথে থাকবে বলেই ঠিক করছে।

একদিন রাস্তায় শুভর বাবা আয়াজ রায়হানের গাড়ি খারাপ হয়ে যায়। আয়াজ গাড়ি থেকে নেমে বাহিরে দাঁড়ায়। কড়া রোদ উঠেছিলো ওই দিন। প্রচন্ড গরমে আর রোদে আয়াজ রায়হানের মাথা ঘুরে পরে যেতে নেয়। তখন মিহির ভার্সিটি থেকে বাড়ি ফিরছিলো। রাস্তায় আয়াজ রায়হান কে পরে যেতে দেখে দৌড়ে ওনাকে ধরে মাথায় পানি ঢেলে হাসপাতালে নিয়ে যায়। মিহির তখনো আয়াজ রায়হান যে শুভর বাবা সে ব্যাপারে অবগত ছিলো না।

আয়াজ রায়হান মিহিরকে শুভর মোবাইলে দেখেছিলো বিধায় চিনতে পারে। তাই হাসপাতালে আসার সময় আয়াজ রায়হান ইচ্ছে করে মিহিরকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায় অসুস্থতার বাহানা দিয়ে। আয়াজ রায়হান কে বাড়িতে পৌছে মিথিলা চৌধুরী আর সুহার সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে মিহির। আয়াজ রায়হান তখন মিহিরকে এই চাকরীর কথা বলে। মিহির পড়াশোনা আছে বলে মানা করে দিলে আয়াজ রায়হান বলেছিলো,

‘তোমার পড়াশোনা তুমি করো। অফিসে শুধু তুমি আমাকে সাহায্য করবে। যখন ইচ্ছে অফিসে যাবে আসবে। এই নিয়ম টা শুধু তোমার জন্য বরাধ্য করবো। না করো না মা। সোমবার থেকে তুমি অফিস জয়েন করবে আমি তোমার অপেক্ষা করবো।’

একটা কার্ড দেয় মিহিরকে। মিহির সবার থেকে বিধায় নিয়ে চলে যায়। অনেক ভেবে চিন্তে রাজি হয় চাকরী করার। ব্যাস এভাবেই কাহিনী শুরু।



হঠাৎ ইটের সাথে খোঁচট খেয়ে ভাবনা থেকে বের হয় মিহির। মোবাইলে তাকিয়ে দেখে সকাল ৭:৩৫ বাজে। হায় এতোক্ষন বাহিরে ছিলো সে। তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে। ভাগ্যিস টাকা এনেছিলো সাথে নাহলে ফের হেটে বাড়ি ফিরতে হতো। হাত বারিয়ে রিকশা থামিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে উঠে পরে মিহির।
__________________

ফাঁকা রাস্তায় পাশাপাশি হাটছে মাহিন সুহা। মাহিনের ডান হাতের বাহু ধরে নিচে ঝুকে মাহিনের পায়ের সাথে তাল মিলিয়ে নিজের পা ফেলছে আর খিলখিল করে হাসছে। জুটি করা চুল সুহার তালে তাল মিলিয়ে নাচছে। মাঝে মাঝে ঘাড় ঘুরিয়ে তার প্রেমিক পুরুষকে দেখে। এতো সুদর্ষন পুরুষটিকে সে ভালোবাসে ভেবেই মুচকি হাসে সে। মাহিনের দৃষ্টি তার প্রেয়সী সুহারানীর দিকে। সুহা যে তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে সেটা মাহিন বুঝতে পেরে মনে মনে হাসে শুধু। হঠাৎ সুহা দাঁড়িয়ে নিরবতা ভেঙে বলে, ‘আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন?’

মাহিন ভ্রুঁ কুঁচকে সুহার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘হঠাৎ এই প্রশ্ন?’ সুহা ঠোঁট ওল্টে বলে, ‘একবারও ভালোবাসি বললেন না! তার মানে ভালোবাসেন না আমাকে।’

সুহার কথায় হেসে ফেলে মাহিন। মুখে মৃদু হাসি রেখে বলে, ‘ ভালোবাসলেই কি তা মুখে বলতে হবে? অন্য প্রেমিকের মতো হাজার বার ভালোবাসি বলতে পারবো না আমি। ভালোবাসা মানে অনুভূতি সুহারানী! এই অনুভূতি দেখা যায় না খুঁজে নিতে হয়। আমার ভালোবাসাও তুমি খুঁজে নাও। অনুভব করে নাও মাহিনের শহরে তার সুহারানী জন্য ঠিক কি পরিমাণ ভালোবাসার জাল বেধে আছে।’

সুহা অপলক তাকিয়ে থাকে মাহিনের দিকে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর উল্লাসিত কন্ঠে বলে, ‘এতো কিছু বুঝি না। আপনি শুধু আমার থাকলেই চলবে।’ সুহার বাচ্চামিতে ফিক করে হেসে ফেলে মাহিন। তারপর সুহার গাল টেনে বলে, ‘এই মাহিন শুধু তার সুহারানীর জন্যই বরাধ্য!’

মাহিনের সাথে সুহাও মিষ্টি হাসে। সুহা বলে, ‘হ্যা আপনি শুধু আমার। কোনো মেয়ে আপনার দিকে তাকালে তার চোখ তুলে ফেলবো। আর আপনি তাকালে আপনার চোখ তুলে আমার কাছে রেখে দেবো হুহ!’ ভাব নিয়ে বলে সুহা। উচ্চস্বরে হেসে ফেলে মাহিন। হাসলে তার বাম গালের ঠোঁটের পাশে একটা ছোট্ট ভাজ পরে। হাসি থামিয়ে শীতল চোখে শান্ত কন্ঠে বলে মাহিন, ‘

‘প্রেয়সী,
নীরবে নিভৃতে তোমায় ভালোবাসি,
অনুভূতি গুলো অবক্ত্য রয়ে যাবে প্রেয়সী,
তোমার খুব নিকটেই অদৃশ্য হয়ে রবো,
তোমায়, হ্যা শুধু তোমায় ভালোবেসে যাবো!
~ অর্নীল!

চলবে..!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here