ভালবাসা বাকি আছে পর্ব-১২

0
1226

#ভালবাসা_বাকি_আছে – ১২

প্রচন্ড জ্বর আর শারীরিক দুর্বলতার কারনে আচমকা জ্ঞান হারিয়েছিল বুশরা। রায়হানের ফোন পেয়ে ছুটে এসেছে তানিয়া। তবে তার আগেই জ্ঞান ফিরেছে ওর, আর নিজেকে আরিশের বাহুডোরে আবিষ্কার করে যারপরনাই বিব্রত হয়েছে। নিজেকে সামলে নেওয়ার পরপরই তানিয়ার আবির্ভাবে অবাক হতেও ভুলে গেছে।

“আর ইউ ওকে বুশরা?”

“হ্যাঁ, আপু। আপনি?”

“তোমার হাজব্যান্ড ফোন করেছিল।“

“ও কিভাবে…?”, অবাক হওয়া যেন আরো বাকি বুশরার।

তবে এই প্রশ্নের উত্তরটা আরিশই দিলো, “আপনাকে অজ্ঞান হতে দেখে ঘাবড়ে গেছিলাম। আর তখনই আপনার হাজব্যান্ড ফোন করেছিলেন, তখন উনাকে আপনার কন্ডিশন জানাই।“

বাকিটা বুঝে নিয়েছে বুশরা। অসুস্থতা ছাপিয়ে এখন ওর মাথায় যে চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে তা হলো, রায়হান কি ভাবছে। থমথমে মুখে বুশরা আরিশকে “থ্যাংক্স” জানিয়ে বিদায় নিল তানিয়ার সাথে।

কয়েক কদম আগানোর পর তানিয়া বললো, “ইউ আর গোয়িং উইথ মি।“

“আমি এখন ঠিক আছি আপু। এবসোল্যুটলি ফাইন।“

“তোমার হাজব্যান্ড বলেছে।“

“কিন্তু আপু…”

দুহাত নিজের কোমরে রেখে তানিয়া বললো, “কোন কিন্তু নাই।“, তারপর ফোনের দিকে তাকিয়ে স্বগতোক্তি করলো, “এইযে দেখো, আবার ফোন করেছে, কথা বলো। একদম অস্থির হইয়ে গেছিলেন উনি।“

তানিয়ার দিকে তাকি হালকা হেসে তানিয়ার ফোনটা হাতে নিল বুশরা। প্রশ্নের তুবড়ি ছুটলো ফোনের ওপ্রান্তে।

“এই মেয়ে, খাওয়াদাওয়া করো না? যেখানে সেখানে জ্ঞান হারাও কিভাবে?”

“সরি।“, মুখ ছোট করে বললো বুশরা।

“তুমি জানো এতক্ষন কি পরিমান টেনশন হচ্ছিলো”, অসহিষ্ণু গলায় বললো রায়হান, “নিজের খেয়াল রাখতে পারো ভেবে একা ছাড়ার সাহস পেয়েছিলাম, এখন তো দেখছি…”

“বললাম তো সরি। শরীরটা হঠাৎ করেই…”

“শরীরতো হঠাৎ করে খারাপ হয়নি। তুমি গুরুত্ব দাওনি।“

ওদিকের আবহাওয়া ভালো না দেখে বুশরা চুপ করে রইলো।

এবার রায়হান নরম সুরে বললো, “এখন চুপচাপ তানিয়া আপুর বাসায় যাবা। শরীর সুস্থ হওয়ার আগে ইউনিভার্সিটিমুখো হবে না। ইজ ইট ক্লিয়ার?“

“কিন্তু…”

রায়হানের কন্ঠে রাগের ছটা ফেরত আসছে, “আমি কখনো তোমার উপর স্বামীগিরি ফলিয়েছি?”

“না।“

“তার মানে এই না যে কখনো ফলাবো না। সুস্থ হও। তখন আবার স্বাধীনতা ফেরত পাবা। বাই।“

ফোন কেটে যাওয়ার বিরক্তিকর “টুট টুট টুট” শব্দে দীর্ঘশ্বাস ফেললো বুশরা।

“হি লাভস ইউ সো মাচ বুশরা। ইউ আর সো লাকি।“, তানিয়ার কথায় সংবিত ফিরে পেল বুশরা। বিড়বিড় করে কি বললো বুঝলো না তানিয়া।
দুদিন তানিয়ার সাথে থাকে বুশরা। বড় বোনের মত আগলে রাখে ওকে মেয়েটা। ওদিকে এই দুই দিনে অন্তত বিশবার ফোন করেছে রায়হান। কল ডিউরেশন কখনো দুই মিনিট বা কখনো ত্রিশ সেকেন্ড। খাওয়া, ওষুধ, ঘুম সবকিছু রায়হানের কথামত চলছে। কিন্তু এর মাঝে একবারও সেদিন কি হয়েছিল, কেন আরিশের সাথে ছিল এ বিষয়ে প্রশ্ন করেনি সে। আর তাই হয়ত বুশরার মনের মধ্যে প্রতিনিয়ত খচখচ করছে বিষয়টা। আরিশ যেভাবে জাপটে ধরে ছিল সেটাও মাথা থেকে সরাতে পারছে না কিছুতেই। এই ছেলে রায়হানকে কি বলেছে কে জানে, এটুকু তো বুশরা বুঝে গেছে ছেলেটা সুবিধার না। আবার নিজে থেকে প্রশ্ন করতেও বাঁধছে।
সন্ধ্যার একটু আগে নিজের এপার্টমেন্টে ফিরেছে বুশরা। রান্নাবান্নার ঝামেলা নেই। টিফিনক্সে করে খাবার দিয়ে দিয়েছে তানিয়া। সেগুলো গুছিয়ে রেখে ফোনটা হাতে নিল বুশরা। একয়দিন সোশাল মিডিয়ায় যাওয়া হয়নি একদম। ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকার উপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল রায়হান। আর বাধ্য স্ত্রীর মত তা মেনে চলেছে বুশরা। আজ ফেসবুকে ঢুকেই প্রথম যে ভিডিও ক্লিপট সামনে আসলো সেটা রায়হানের। রিসেন্ট কোন একটা জনসমাবেশের বক্তব্য। কি ভীষণ হ্যান্ডসাম দেখাচ্ছে মানুষটাকে। কি দারুন করে কথা বলে জনসমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে। অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইনেও মানুষের কাছে রায়হানের গ্রহনযোগ্যতার প্রমাণ হিসেবে রায়হানের বেশ কয়েকটা বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ অগনিত ভিউ আর শেয়ার হচ্ছে। নিজের হাজব্যান্ডের খ্যাতিতে বোধহয় প্রতিটা স্ত্রীই অজানা গর্ব বোধ করে। বুশরাও ব্যাতিক্রম না।

“আহা দেশে থাকলে সামনাসামনি দেখতে পেতাম”, ভাবে বুশরা। এমন সময় ফোন আসে মানুষটার।

ফোন ধরতেই প্রশ্ন করে, “কখন ফিরেছো?”

“হুম, একটু আগে।“

“পৌঁছে ফোন করতে বলেছিলাম?”

“কাল যে বললে এসময় মিটিং থাকবে?”

“তো? টেক্সট তো করা যায়।“

“সরি।“

“এত কথায় কথায় সরি বলো কেন?”

“ভুল করি যে তাই।“

“এটা এমন কোন ভুল না যে সরি বলতে হবে। বরং নিজেকে ডিফেন্ড করতে পারো। সেটাই তোমাকে মানায়। আই মিস দ্যাট বুশরা। অসুস্থ হওয়ার পর খুব মিইয়ে গেছো।“

“একটা প্রশ্ন করবো?”

“অবশ্যই।“

“আমার উপর রাগ?”

“রাগই তো দেখাচ্ছি দুদিন থেকে।“

বুশরা আলতো হেসে বললো, “রাগের মোড়কে ভালবাসাটাই দেখা যাচ্ছে বেশি।“

“ও তাই?”

দুজনেই কিছুক্ষন চুপ থাকলো। নিরবতা ভেঙ্গে রায়হান বললো, “আমি রাগ করেছি, নাকি বিরক্ত হয়েছি সেটা বিষয় না। একজন বুদ্ধিমতি মেয়ে হিসেবে তোমার উচিত নিজের আসেপাশের মানুষ নিয়ে আরেকটু সচেতন হওয়া। “

একটু থেমে আবার বললো, “তুমি ওই ছেলের সাথে আসলেই ঘন্টাখানেক ছিলে কি না সেটা দেশে বসে কিন্তু আমার জানার কথা না। কিন্তু সে ইচ্ছে করে আমাকে জানিয়েছে ব্যাপারটা। আই হোপ ইউ গট দ্য পয়েন্ট।“

“দুইদিন পেরিয়ে গেছে অলরেডি। প্রশ্ন করলেনা কেন আমাকে? আসলে কতক্ষন ছিলাম? কোথায় ছিলাম। কি করছিলাম? আর কেউ ছিল কি না?”

“এটুকু বিশ্বাস ছাড়া স্বামীস্ত্রীর সম্পর্কের কোন মূল্য আছে? দেশে তোমার সেফটির দায়িত্ব আমি পুরোটাই নিতে পারি, কিন্তু ওখানে তো তুমি একা। এটুকু মনে রেখো।“

রায়হানের কথা শুনে মনটা ভরে গেল বুশরার। এতটা বিশ্বাসও আজকাল কেউ করে স্ত্রীকে? আদ্র চোখে বললো,

“এখন থেকে মনে থাকবে।“

“দ্যাটস লাইক এ গুড গার্ল।“

রায়হানের মনে সন্দেহ, রাগ, বা অভিমান জন্মায়নি। বরং অসহায় অনুভুতিটার নাম উদ্বিগ্নতা। পুরুষ মানুষ কতটা খারাপ হতে পারে তা নিয়ে কোন ধারনা নেই বোকা মেয়েটার। কাছে না থাকলেও পাশে থাকার আর আগলে রাখার দায়িত্ব তো রায়হানেরই। এ কয়দিন ও অপেক্ষা করেছে বুশরার সুস্থতার। আর তাই আজ বুঝিয়ে বলতে পিছপা হলো না।

চলবে।

#ডাক্তার_মিস – সিকুয়েল
#ভালবাসা_বাকি

আপনার মূল্যবান কমেন্টের অপেক্ষায় Hasin Rehana – হাসিন রেহেনা । বিশেষ ঘোষনা, আজকের পর্বে অর্ধসহস্র লাইক আসলে কালই বোনাস পর্ব আসবে। সো দেরি না করে সামাজিক কাজে লেগে পড়ুন পাঠক ভাইবোনেরা।

© Hasin Rehana

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here