অনুভবী হিয়া’ পর্ব-৯

0
2119

#অনুভবী_হিয়া ❤️
#মাইশাতুল_মিহির

৯.

সাপ্তায় এক কি দুই দিন কলেজে যায় মিহির। মিতু আর আয়নার কাছ থেকে নোট গুলো কালেক্ট করে। তাছাড়া তার ইন্টেলিজেন্ড ভাই মাহিন তো আছেই। মিহির ভেবে পাই না ছেলেটা তো ভালো করে পড়তেও বসে না তাও কিভাবে পড়াশোনায় এতো ফাস্ট। মিহির আর মাহিন যমজ। মাহিন মিহিরের থেকে পাঁচ মিনিটের বড়। তবে দেখলে কেউ বলবে না তারা যমজ। গম্ভীর পকৃতির মাহিনের বডি, হাইট, কথা বলার ধরন চলাচল সব মিলিয়ে মিহিরের চেয়ে কয়েক বছরের বড় মনে হয় মাহিন কে। হবে না কেনো মিহিরের ওয়েট মাত্র ৪৫! ব্যাপার টা মিহিরের বেশ মজা লাগে। মাহিনকে মিহির সব সময় বড় ভাইয়ের মতো ট্রিট করে এসেছে, মাহিনও শাসনে রেখেছে বোনকে। মাহিন যথেষ্ট এডাল্ট আর বুদ্ধিমত্তা ছেলে। মাহিন কুমিল্লা অর্থাৎ দাদু বাড়ি থেকে পড়াশোনা করতো। মিহিরের বাবা মা চাচাতো ভাই বোন ছিলো। মাহিন ঢাকা আসতো না বললেই চলে। মিহিদের মামা রা পলিটিক্স করে। সে সুবাধে মামাদের কিছু গুন মাহিনের মধ্যেও আছে। সেও হয়তো এসবের সাথে জড়িত। সেবার একটা এক্সিডেন্টে মাহিন এসএসসি দিতে পারেনি। মিহির সে কি কান্নাকাটি সেও তার ভাইকে রেখে পরিক্ষা দিবে না। মাহিন তাকে বুঝানোর পর রাজি হয় সে। মাহিন ঢাকা আসতে চাইনি। বাবা মারা যাবার পর মিহির আর মায়ের জন্য আসে সে। তাও মাঝে মাঝে কুমিল্লাতে পাড়ি জমায়। কুমিল্লাতে কি আছে মিহির বুঝতে পারে না। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ভাবছিলো মিহির। ভাবনার ইতি হয় মাহিনের ডাকে, ‘কিরে ভাবুক কুমারী কি ভাবছিস?’

ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে মাহিন দুই কাপ কফি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মিহির মুচকি হেসে কফি হাতে নিয়ে চুমুক দিয়ে বলে, ‘ভাইয়া তুমি কিন্তু খুব ভালো কফি বানাও।’

‘কি ভাবছিলি বললি না তো?’ এক হাত ব্যালকনিতে ভর দিয়ে বলে মাহিন। মিহি ফট করে উত্তর দেয়, ‘তোমাকে নিয়ে গবেষণা করছিলাম। তুমি পড়াশোনা না করেও ফাস্ট ক্লাস হোও কিভাবে? ভাইয়া আমাকেও টিপস দাও।’

মিহিরের কথায় ফিক করে হেসে ফেলে মাহিন, ‘মাথা, মাথা কাজে লাগাতে হয়। তোর মাথায় তো গোবর তোর দ্বারা হবে না। বাদ দে।’ মিহির মুখ কালো করে কফি খেতে থাকে। হঠাৎ মাহিন বলে উঠে, ‘মিহু? আমি কিছু দিনের জন্য বাহিরে যাচ্ছি। মাকে ম্যানেজ করিস।’

‘কোথায় যাবে?’ চিন্তিত হয়ে বলে মিহির। কফি মগে শেষ চুমুক দিয়ে বলে মাহিন, ‘প্রথমে যাবো কুমিল্লা, সেখান থেকে যাচ্ছি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। কিছু কাজ আছে আমার। ব্রাহ্মাণবাড়িয়া যে যাচ্ছি সেটা মাকে বলিস না। ট্রিপে গেছি বলে চালিয়ে দিস। আমাকে তখন ফোনে পাবি না।’

‘ভাইয়া, প্লিজ সাবধানে থেকো। এসব সিক্রেট ফিক্রেট বাদ দাও না। এগুলো অনেক রিক্স। ভয় হয় আমার।’ অনুরোধ করে বলে মিহির। মাহিন মৃদু হেসে শান্ত স্বরে বলে, ‘আমার ওপর বিশ্বাস নেই?’

‘আমার বিশ্বাস আছে তোমার উপর। আমি জানি আমার ভাই খারাপ কিছুতে জড়িত হবে না।’ শেষের কথাটা মুচকি হেসে বলে মিহির। বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে গোছালো চুল এলোমেলো করে দেয় মাহিন। মিহি রেগে হাত ঝামটা মেরে ফেলে দেয় মাহিন উচ্চস্বরে হাসতে হাসতে কফি মগ নিয়ে চলে যায়।
_______________

কেটে যায় কিছু দিন। মাহিন ঢাকা ফিরে এসেছে আজ দু-দিন। কিন্তু এই দুই দিন মাহিন কে খুব একটা দেখা যায় নি। ঢাকা থেকে এসেই রুমে ল্যাপটপ নিয়ে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা কিছু করে। আবার হঠাৎ কাউকে কিছু না বলে বাহিরে চলে যায়। মাহিনকে দেখতে অনেক চিন্তিত লাগে। ভাইয়ের মতিগতি কিছুই বুঝে না মিহির। তাই বেশি ঘাটে না যতক্ষণ না মাহিন নিজে থেকে এসে কিছু বলে।

মিহির রেডি হয়ে নাস্তার পর্ব শেষ করে অফিসে যায়। নতুন প্রজেক্টের জন্য কাজের চাপ প্রচুর। অফিসে গিয়ে বসে ফাইল ঘাটছে আর রায়হানের সাথে প্রজেক্ট নিয়ে কথা বলছে। আজ ক্লাইন্ড আসবে মিটিং করতে তাই প্রেজেন্টেশনের কাগজপত্র চেক করছে। তখন কেবিনে রায়হান আর মিহিরকে ডাকে শুভ। দুজন কেবিনে যাওয়ার পর শুভ বলে, ‘ক্লাইন্ডদের সাথে অফিসে নয় ফাইভ স্টার রেস্টুরেন্টে দেখা করবো। সেখানে লাঞ্চ করা হবে। তোমরা দুজন সব রেডি করে রেখো। আর দশ মিনট পর বের হবো।’

মিহির অসহায় হয়ে শুধু চেয়েই রইলো। যাওয়ার ইচ্ছে একদম নেই তার। কিন্তু কি করার সাধের চাকরী না গেলে তো আর হবে না। দুজনই সম্মতি দিয়ে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে।

গাড়িতে বসে আছে শুভ। তার পাশে মিহির বসে গাড়ির কাঁচ নামিয়ে মুগ্ধকর দৃষ্টিতে বাহিরে তাকিয়ে আছে। সামনে ড্রাইভারের সাথে রায়হান। ফাইভ স্টার রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামতেই তিন জন গাড়ি থেকে মেনে ভিতরে যায়। মিহির আরো একবার মাহিনের সাথে এসেছিলো এখানে। এই নিয়ে দ্বিতীয় বার আসা। শুভর পিছু নিয়ে হাটছে দুজন। শুভ একটা টেবিলের সামনে দাঁড়াতেই দুই জন লোক দাঁড়িয়ে তার সাথে হ্যান্ডশেক করে। তারপর রায়হানের সাথে। এদের একজন রফিক আরেক জন শান। রায়হানের সাথে পরিচয় হবার পর শান মিহিরের দিকে হাত বারিয়ে বলে, ‘হেই আই’ম শান।’

মিহির কিছুক্ষন স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। হাত মিলাবে কিনা ভাবছে। অফিসের ক্লাইন্ড হাত না মিলালে যদি অপমানবোধ করে তো। আর সাতপাঁচ না ভেবে মিহিরও হাত মিলিয়ে বলে, ‘আমি মিহির।’
শান কিছুক্ষন ‘মিহির’ নাম টা আওড়ায়। তারপর বলে উঠে, ‘আমি তোমাকে মিহু বলে ডাকবো সমস্যা নেই তো? আর তুমি আমার থেকে ছোট তাই তুমি করে বলছি মাইন্ড করো না প্লিজ।’

মিহির মনে মনে ঝাড়ছে শানকে। আরে ব্যাটা চিনোস না জানোস না ডাইরেক্ট তুমি। ছ্যাঁচড়া ব্যাটা। কিন্তু মুখে সৌজন্যমূলক হাসি টেনে বলে, ‘সমস্যা নেই তুমি বলতে পারেন আর আমাকে সবাই মিহু বলেই ডাকে।’

শান চেয়ার টেনে বসতে বললে মিহিরও মিষ্টি হাসি দিয়ে চেয়ারে বসে। এতোক্ষন চোয়াল শক্ত করে দেখছিলো শুভ। যেই শান মিহিরের পাশের চেয়ারে বসতে যাবে তখনি হুট করে শুভ মিহিরের পাশে বসে পরে। ঘটনাক্রমে সবাই অবাক চোখে তাকায় কিন্তু শুভর মধ্যে কোনো পতিক্রিয়া নেই যেনো কিছুই হয় নি। শান হেসে সামনের চেয়ারে বসে। তারপর তারা অফিসিয়ালি কথাবার্তায় মশগুল হয়। লাঞ্চ শেষে রেস্টুরেন্ট থেকে বাহিরে এসে একে ওপরকে বিদায় জানিয়ে গাড়িতে উঠে। যাওয়ার আগে শান মিহিরকে মুচকি হেসে বলে, ‘বাই, সি ইউ এগেইন এন্ড টেক কেয়ার ডিয়ার মিহু!’ মিহিরও সৌজন্যতা বজায় রেখে বলে, ‘ইউ টু মিঃ শান।’

ওপর দিকে শুভ রাগে এটম বোম হয়ে আছে। যেকোনো মুহূর্তে ফেটে যাবে বুঝি। কেনো যে মিহি কে আনতে গেলো। আর এই স্টুপিড মেয়েকে দেখো কিভাবে হেসে হেসে কথা বলছে। যত্তসব ন্যাকামি!
_______________

চলবে..!!

[আমার গল্পের মূল প্রেক্ষাপট মিহির, মাহিন। মাহিনের ক্যারেকটারে অনেক রহস্য আছে। রহস্য জানতে বাকি পর্বের জন্য অপেক্ষা করুন। হ্যাপি রিডিং ❤️]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here