অনুভবে তুই পর্ব-১৪

0
1983

#অনুভবে_তুই
#লেখনীতে-ইসরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-১৪

নিশুতি রাত। অন্ধকার গ্রাস করেছে পৃথিবীলোক। সুমিষ্ট ফুলেল সৌরভ বাতাসে ভাসছে। চারদিকটা অদ্ভুত মায়াবী রুপ ধারণ করেছে। সেই মায়াঘেরা মায়াপুরীর রাজকন্যের যদি মন খারাপ থাকে তাহলে পাণিপ্রার্থী প্রজারা কী করবে? রাজকন্যা যদি নিজ থেকে তার সমস্যার কথাগুলো না জানায় তাহলে চুপ করে বসে থাকা ছাড়া আর উপায় কি তাঁদের? উৎসেরও হয়েছে সেই দশা। করুণ চোখমুখ করে সে বসে আছে বিছানার সাথে লাগোয়া ডিভানের ওপর। আর বিধস্ত রোজা বসে আছে বিছানার কোণে। চোখেমুখে অপমানের ছাপ স্পষ্ট হয়ে ফুটে ওঠলেও উৎসের জহুরি চোখ আজ হাজার চেষ্টা করেও কিছু ধরতে পারলো না। নিজের আপন দু-বোনের পর সবথেকে প্রিয় এবং আদরের বোনটি হলো রোজা। রোজাকে সে এতটাই স্নেহ করে যতটা একজন ভাই, তাঁর ছোট বোনটিকে করে থাকে। আধঘন্টা যাবৎ জিজ্ঞাসাবাদ করার পরেও রোজার মুখ থেকে কোনো কারণ উদঘাটন করতে পারে নি। যেন বলবে না বলে পণ করেছে সে এবং এই সিদ্ধান্তেই রোজা অটল। উৎস এবার ধৈর্যহীন কন্ঠে বলল, ‘রোজানু, প্লিজ তুই বল কী হয়েছে। প্রমিজ আমি কাউকে কিছু জানাবো না, সেইসাথে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করব। শুধু মুখফুটে একটিবার কারণটি বল।’

রোজা এবার মুখ খুললো, ‘কিছুই হয় নি আমার, আর না কেউ কিছু বলেছে। জোর করো না, আমাকে বাড়ি দিয়ে আসো।’

উৎস ভাবুক গলায় আঙুল নাড়িয়ে বলল, ‘উহু, কিছু একটা তো হয়েছে।’

‘হলে হোক, তুমি কী আমায় নিয়ে যাবে? নয়তো আমি একাই যাচ্ছি।’

রোজা কর্কশ কন্ঠে কথাগুলো বলতে বলতে বিছানা থেকে ওঠে দাঁড়ালো। চুলগুলো মুঠো করে প্যাঁচিয়ে রিবন দিয়ে বেঁধে নিলো। ড্রয়ার থেকে হিজাব বের করতে করতে রাগে গজগজ করতে থাকে রোজা। উৎস হতভম্ব হয়ে ওঠে দাঁড়িয়ে হন্তদন্ত পায়ে রোজাকে গিয়ে আটকায়। তীক্ষ্ণ স্বরে চেঁচিয়ে বলে, ‘এমন করছিস কেন? আচ্ছা আমাকে বলবি না ঠিক আছে, নেহাকে অন্তত বল তোর সমস্যাটা। ডাকবো ওকে?’

রোজা জ্বলন্ত চোখে তাকায় ভাইয়ের দিকে। যার অর্থ সে কাউকেই কিছু বলবে না৷ বোনের এমন রুপ আগে দেখে নি উৎস৷ বিস্মিত হয়ে মুখের কথা হারিয়ে ফেলে। আমতাআমতা করে বলে, ‘এমনে তাকাচ্ছিস কেন? আচ্ছা যাহ, কাউকেই বলিস না। কিন্তু এভাবে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাস না। লোকে কী বলবে?’

রোজা অট্টহাস্যের সুরে বলে, ‘লোকের কথা, সমাজের মানুষগুলোর বলাবলি, কানাঘুষাটাই কী আসল? কাছের মানুষটার কোনো কথারই দাম নেই?’

উৎস খানিকটা ক্ষ্যাপাটে গলায় বলে, ‘ধুর। সমাজ, লোকের তোয়াক্কা কে করে? আমি নিচতলার মেহমানদের মিন করেছি। এতগুলো লোকের সামনে দিয়ে এনগেজমেন্টের অনুষ্ঠান ছেড়ে এত রাতে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাবি? নেহা কষ্ট পাবে না?’

রোজা হতাশ কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, ‘কেন?’

‘তুই নিজেও জানিস নেহা তোকে কতটা ভালোবাসে। ওর জীবনের স্পেশাল একটা দিন আজকে। তুই যদি চলে যাস ও খুব কষ্ট পাবে। তাছাড়া এখন সাড়ে নয়টা বাজে। তোদের গ্রামে পৌঁছাতে কমপক্ষে চারঘন্টা লেগে যাবে। এত রাতে যাওয়াটা কি ঠিক? তুই-ই বল।’

রোজার বিরক্ত লাগছে। আর এক মুহূর্ত এই বাসায় কাটাতে চায় না ও। কিন্তু উৎসের কথা যুক্তিযুক্ত। এত রাতে যাওয়াটা উচিৎ হবে না। সুহানা শেখের তিক্ত কথাগুলো ওর কর্ণকুহরে এখনো বাজছে, হৃদযন্ত্র প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে। রোজা সুবিধাবাদী মেয়ে? সোনা হয়ে হীরের দিকে হাত বাড়ায়? এসব অপমানজনক কথাবার্তা শুনেও যদি এ বাড়িতে পরে থাকে তাহলে ওর বেঁচে থাকাটাই অর্থহীন। গুরুজন বলে সুহানা শেখের মুখের ওপর কিছু বলে নি, তাই বলে কটু কথা সে কিছুতেই মেনে নেবে না। আর রইলো বাকি আদ্রিশ৷ এই লোকটার মুখটাও মাড়াতে চায় না রোজা। নিজের কাজে সফল হয় নি বলে লোক দিয়ে ওকে অপমান করাচ্ছে। সত্যিই যদি ভালোবেসে থাকতো, এমনটি করতে পারতো না। রোজা ধপ করে বিছানায় বসে গম্ভীর কন্ঠে বলল, ‘ঠিক আছে। আজ রাতটা থাকছি, শুধু তোমার অনুরোধে। কিন্তু কাল ভোর ভোর আমি নিয়ে যাবে। আর যদি থাকতে জোর করো, তাহলে এখনই বেরিয়ে যাব। আর আমি যে চলে যাব এটা বাড়ির কাউকেই জানাবে না, তাহলে ওরা যেতে দেবে না। স্পেশালি খালামণি আর ফিহা আপু। বলো আমার শর্তে রাজি কি-না!’

উৎস কিয়ৎকাল মৌনতা অবলম্বন করে বাধ্য হয়ে রাজি হলো, ‘ওকে। কাউকে কিছুই বলবো না। কিন্তু তোর এ কাজটাতে খুব কষ্ট পেলাম।’

রোজা থমথমে গলায় বলল, ‘আমি দুঃখিত। এছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।’

‘আচ্ছা আমি এখন যাই। তুই ভুলেও একা একা চলে যাস না আবার। সকালে আমিই নিয়ে যাব।’

‘ঠিক আছে।’

উৎস ব্যথাযুক্ত পা-টা নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে চলে গেল রোজার ঘর থেকে। গোছগাছ করা ব্যাগপত্র যাতে কারোর চোখে না পড়ে সেজন্য বিছানায় নিচে লুকিয়ে ফেলল রোজা৷ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও মনে শান্তি নেই। ব্যলকনিতে গিয়ে বসে রইলো। রাতের অবারিত সৌন্দর্যের পানে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল। বিষে বিষে বিষক্ষয়। নিজের মনের গহীনে লুকানো হাজারো কথামালায় মোড়ানো মনটিকে ঊর্ধ্বপথে ছুঁড়ে মারলো। ওরাও যেন ডানা মেলে ওড়ে গেল গভীর অন্তরিক্ষে। আচ্ছা, আকাশ আর নক্ষত্ররাজিদের সাথে কি কথা বলা যায়? ওরা বুঝতে পারে মানুষের মনের ভাষা? জানা নেই রোজার।

—————————————————————-

আদ্রিশদের বাড়িতে কেমন আমেজ আমেজ একটা ভাব। নিচতলার মেহমান ও বাড়ির লোকজনদের হৈচৈ, কোলাহল শোনা যাচ্ছে। হাসি-ঠাট্টায় মেতে ওঠেছে দুই পরিবারের লোকজন। মাঝারি আকারের ডাইনিংরুমে সকলে একসাথে খেতে বসেছে। মুরুব্বিরা খাওয়াদাওয়া সেরে আগেই ওঠে গেছে। রোজা আর উৎস বাদে বাদবাকি সবাই টেবিলে বসে পড়েছে। ওদের দু-জনের কথা কারোর খেয়ালেই নেই। ডাইনিং টেবিলে নেহার দু-পাশ ঘিরে খেতে বসেছে রিজভী আর ওর ছোটবোন ইমতি। শক্ত-সামর্থ্য, সুদর্শন চেহারার ছেলেটির নামের পাশে নিজের নামটা বসতে চলেছে ভেবেই মুখবিবরে একছিটে লালচে আভা ছড়িয়ে পড়লো নেহার। আকাশরঙা জামদানী শাড়ির পাড়টা মাথায় ঘোমটার মতো করে জড়ানো, সেটা আরেকটু টেনে লম্বা করে লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া চেহারাটা লুকাতে চাইলো নেহা। আড়চোখে একবার চোখ পড়লো হবু বরটির ওপর। আশ্চর্য! রিজভীও ওর দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হেসে চলেছে। নেহার চোখে চোখ পড়তেই ওর হাসিটা আরও প্রসারিত হলো। দ্রুত চোখ নামিয়ে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো নেহা। ইশ, লোকটা কী ওকে দেখে ফেলল?

আদ্রিশ একপাশে বসে চামচ নাড়াচাড়া করে মন দিয়ে খাচ্ছে। নেহার দিকে ওর খেয়াল নেই। কিন্তু নেহা-রিজভী ওদের দু-জনের কান্ডে বেশ মজা পাচ্ছে ইশা-ফিহা, ইমতিও লক্ষ্য করছে। কানেকানে একজন আরেকজনকে কি যেন বলছে। এমন সময় মিতালি মাংসের বাটি নিয়ে এলেন রান্নাঘর থেকে। পেছনে সুহানা শেখ সবজির তরকারি নিয়ে এলো। মিতালি এসে ওদের পাতে তরকারি দিতে দিতে জিজ্ঞেস টেবিলে একপলক চোখ বুলিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘কী-রে তোরা সবাই এখানে? রোজা কোথায়? উৎস খেতে বসেনি?’

এবার যেন সবারই ওদের কথা মনে হলো। ফিহা লোকমা তুলতে তুলতে বলল, ‘রোজাকে তো অনেকক্ষণ ধরে দেখছি না, আর উৎস ভাইয়াও তো কখন ওপরে ওঠে গেল।’

নেহা মুখ তুলে চাইলো। ভ্রু কুঁচকে বলল, ‘ব্যাপার কী? রোজাকে ঘণ্টা খানিক ধরেই দেখতে পাচ্ছি না।’

ফিহা নম্র স্বরে বলল, ‘আমি তো তোমাকে নিয়ে নিচে আসার পর আর ওপরেই যাই নি।’

ইশা বলল, ‘ও তো মনে হয় নিচেই নামে নি। চারপাশের ব্যস্ততায় খোঁজ নিতেই ভুলে গেছি।’

নিশিতা দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো। সবকিছু শুনে এবার ব্যস্ত হয়ে ওঠলেন। নিজের মেয়ের এনগেজমেন্টের চক্করে রোজার কোনো দেখাশোনাই করতে পারছেন না আজকাল তিনি। মেয়েটা একটু চুপচাপ, একা থাকতে পছন্দ করে। তাই রোজাকে তেমন ঘাটান না তিনি। ব্যস্ত কন্ঠে এবার ফিহাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘গিয়ে দেখ না একবার, এতকিছু হয়ে গেল মেয়েটা নিচেই নামলো না এখনো। খাওয়াদাওয়াও করে নি, দুপুরেও তো পেটে কিছু পড়েনি। শরীরটা তো এবার খারাপ হয়ে যাবে। সন্ধ্যায় আজ চা-টা দিতেও ভুলে গেছি।’

সবার কথাবার্তা কর্ণগোচর হলো রিজভীর বোন ইমতির। এবার ক্লাস নাইনে ওঠেছে সে। ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হওয়ায় যারপরনাই খুশি ও। এমনিতে ইমতি খুব চটপটে এবং এক্সট্রোভার্ট। ইতোমধ্যেই বাড়ির সবার সাথে ও সখ্যতা গড়ে তুলেছে। সবার এত ব্যতিব্যস্ততা দেখে কৌতূহলবশত বলেই ফেলল, ‘আপনারা কার কথা বলছেন?’

পাশ থেকে ইশা বলে ওঠল, ‘আমাদের রোজানু। নেহা আপুর খালাতো বোন, মানে তোমার ভাইয়ের আরেকজন শালি!’

ইমতি হেসে রিজভীর দিকে তাকালো। রিজভীও খানিকটা অবাক হয়ে গেল। বোনের অযথা প্রশ্নে বাড়ির লোক নারাজ হয়েছে ভেবে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে ডান-হাতটা টেবিলের ওপর রেখে সে বলল, ‘ওহ আই সী! আসলে আমার এক কাজিনের নাম ‘রোজা।’ আপনাদের মুখে হঠাৎ নামটা শুনে কৌতূহল জাগ্রত হলো। কিছু মনে করবেন না ইমতির আচরণে।’

উপস্থিত সবাই ভদ্রতাসূচক হাসি দিয়ে জানান দিলো ওরা কেউকিছু মনে করে নি। কিন্তু সুহানা শেখের মুখে আঁধারের বুকে ওড়ে বেড়ানো কালচে ভারী মেঘভেলা দাপটের সহিত খেলে বেড়াচ্ছিলো। রোজা মেয়েটাকে তাঁর একটুও পছন্দ নয়। ইশার মুখে রোজার প্রশংসা শুনতে ভালোই লাগতো তার। কিন্তু প্রশংসা করতে করতে হুট করে ইশা যখন মায়ের কাছে রোজার প্রতি আদ্রিশের ব্যবহার, কেয়ার, অন্যরকম অনুভূতি গুলো বর্ণনা করতে লাগলো তখনি অন্তর জ্বলে ওঠলো তার। আদ্রিশকে তিনি নিজের পুত্রের চেয়ে কমকিছু ভাবেন না, বরং এরচেয়ে বেশিই ভাবেন। সুদর্শন, সু-স্বভাব এবং আদ্রিশের ব্যবহার বরাবরই তার পছন্দ। বড় ভাইয়ের একমাত্র ছেলে বলে, একমাত্র ফুফু হিসেবে আদ্রিশের ওপর অধিকারটাও যেন তারই বেশি। মনে মনে নিজের মেয়ে ইশার বিয়ের জন্য আদ্রিশকে চান তিনি। একদিন ইশার কানে কথাটা ঘুরিয়ে-প্যাচিয়ে ওঠালেও তাতে লাভ হয় না খুব একটা। ইশা সরাসরি জানিয়ে দিয়েছে ভাই-বোনের সম্পর্ক যেমন আছে তেমন থাকাটাই ভালো, কাজিনদের মধ্যে বিয়ে করার রীতিটাকেই ওর সহ্য হয় না৷ কতশত সমস্যা হয় এসব মা বুঝবে না। তার চেয়ে বড় কথা আদ্রিশকে সে কখনো ভাই ছাড়া অন্য নজরে দেখে নি। সুতরাং, এই প্রস্তাব দ্বিতীয়বার ওঠালে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে দ্বিধাবোধ করবে না সে। মেয়ের ঔদ্ধত্যপূর্ণ ব্যবহার মোটেও পছন্দ হয় নি সুহানা শেখের। মায়ের মতামতের ওপর মেয়ের কথা কী? ওর ভবিষ্যৎটা সিকিওরড করার জন্যই তো প্রস্তাবটা দিয়েছিলেন তিনি। ইশা রাজি না থাকায় আজও মেয়ের প্রতি চাপা ক্ষোভ আছে সুহানার। রোজা নামের মেয়েটার জন্য নেহার আগের বিয়েতে ঝামেলা হয়েছিল। এখন যখন আদ্রিশ রোজার প্রতি ডেস্পারেট, তিনি তা সহ্য করতে পারছেন না। কথার ছলে নেহার বর রিজভী আর ওর বোনটাও কেমন মেয়েটার কথা জিজ্ঞেস করেছে, সবাই পায় টা কী মেয়েটার মধ্যে? বলতে নেই, মেয়েটার সৌন্দর্য, রুপ-গুণ দেখে মনে মনে নারাজ তিনি। নিজের মেয়ে ইশা এতোটাও সুন্দরী নয় বলেই কি আদ্রিশের নজর ওর ওপর পড়ে নি?

————————————————————-

Group – Israt’s Typescripts
[নোট: আজকের পর্বটা ভীষণ ছোট। একদিন পরপর দেওয়ার কথা থাকলেও ব্যর্থ হয়েছি আমি। পরীক্ষা+হঠাৎ অসুস্থতার জন্য গল্প দিতে পারি নি এ-ই ক’দিন। দোয়া করবেন একটু৷ দ্রুত শেষ করতে চাই এই লেখাটি। শুধু আপনারা পাশে থাকবেন। ভুলত্রুটি শুধরে দিয়ে, গঠনমূলক মন্তব্য আশা করি। একটু…’]

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here