অনুভবে তুমি পর্ব-১৭

0
2831

#অনুভবে_তুমি
#পর্ব_১৭
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

বাড়িভরা মেহমানের মধ্যে অতশীর আম্মু ইভানের পরিচয় জানতে চাইলো,ইভান কি পরিচয় দেবে খুঁজে পাচ্ছিলো না।হঠাৎ অতশীর আম্মু ইভানের বাকি ফ্রেন্ডদেরও খেয়াল করলো।তা দেখে অতশীর আম্মুর মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো।কারণ অতশীর আম্মুর মনে পড়ে গেলো এরা তো সেই ছেলেগুলো যারা অতশীর ডিপার্টমেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো।আর অতশীকে মাঝে মাঝে ইভানের সাথে কথা বলতেও দেখতো।তাহলে কি ইভানের সাথে অতশীর কোনো কানেকশন আছে!
অতশীর আম্মু অতশীর কাছে চলে গেলো।আর বললো,এসব ছেলেদের সাথে কবে থেকে ভাব জমায়ছিস?অয়ন না থাকায় বেশ পাখনা গঁজিয়েছি দেখি।ছেলে বন্ধুদের বিয়েতে ইনভাইট করেছিস?

অতশী সেই আগের মতোই চুপচাপ হয়ে আছে।তার এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে একদম ইচ্ছে করছে না।
তখন লিশা এগিয়ে এসে বললো,আন্টি আপনি শুধু শুধু ভুল বুঝছেন।আসলে এদের আমরাই ইনভাইট করেছি।
লিশা তখন দিশান আর নিলয় কে দেখিয়ে বললো এরা দুইজন আমার ভাই হয় আন্টি।শুভ্র নেহাকে দেখিয়ে বললো আমরা দুইজন ফ্রেন্ড হই।

অতশীর আম্মু তখন ইভান কে বললো, তুমি কার কে হও?তুমি কিছু বলছো না যে?
ইভান সেই আগের মতোই চুপ হয়ে থাকলো।সুইটি তখন বললো আসলে আন্টি ইভান আমার সাথে এসেছে।ও আমার কাজিন হয়।

অতশীর আম্মু তখন বললো,কোনটা সত্য কথা আর কোনটা মিথ্যা কথা সেটা আমি মুখ দেখেই বুঝতে পারি।তোমরা সবাই মিথ্যা কথা বলছো?

অতশী এবার আর চুপ করে থাকলো না।সে এগিয়ে এসে বললো, আম্মু তুমি এমন করতেছো কেনো?তুমি আমার ফ্রেন্ডদের কিন্তু অপমান করছো।আমাকে যা নয় তাই বলো কিন্তু এরা আমার ফ্রেন্ড হয়।এদের তুমি এভাবে বলতে পারো না।প্লিজ চুপ করো।

অতশীর আম্মুর কথা শুনে ইভান আর তার ফ্রেন্ডরা বেশ লজ্জিত হলো।তারা আর এক মুহুর্তও দেরী করলো না।তাড়াতাড়ি করে চলে যেতে ধরলো।
অতশী তখন ইভানের সামনে গিয়ে বললো,আম্মুর হয়ে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।আসলে আম্মু একটু ওরকমই।সবকিছুতেই সন্দেহ করে।আসলে আমার কোনো ছেলেফ্রেন্ড ছিলো না তাই আপনাদের দেখে একটু অবাক হয়েছে।

ইভান তখন বললো, তুমি জানোই তো তোমার ফ্যামিলির লোকজন এমন।তাহলে আমাদের ইনভাইট করলে কেনো?

অতশী ইভানের কথা শুনে চুপ করে থাকলো।

তখন ইভান বললো, অতশী আমি কখনো ভাবতেই পারি নি তোমার বিয়ে তে এসে এইরকম কিছু হবে।আগে জানলে আসতামই না।এই বলে ইভান চলে গেলো।

হঠাৎ অতশীর দাদী ইভান কে বললো,দাঁড়াও তুমি।কই যাচ্ছো?যাবে না কোথাও।
ইভান কিছুই বুঝতে পারলো না।সে দাদীর কথা শুনে দাঁড়িয়ে গেলো।
দাদী তখন বললো তুমিই তাহলে ইভান!এতোদিন নাম শুনেছি।আজ সরাসরি দেখলাম।

ইভান সেই কথা শুনে অতশীর দিকে তাকালো।
অতশীর আম্মু তখন বললো, আম্মা আপনি কেমনে চিনলেন? অতশী নিশ্চয় বলেছে ওর কথা।

–আমি বলি নি কিছু। দাদী অযথায় ভুলভাল বলছে।

দাদী তখন বললো,মিথ্যা বলছিস কেনো অতশী?তুই তো বলেছিলি ইভান নামের কেউ তোকে চিরকুট পাঠায়।আর সে রোজ তোর ভার্সিটিতে তোর ডিপার্টমেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে।

–হ্যাঁ বলেছিলাম।কারন আমি ভেবেছি ইভান ই হয় তো আমাকে চিরকুট পাঠাতো।কিন্তু আজ দিয়ে বুঝলাম এটা আমার সম্পূর্ণ ভুল ধারনা ছিলো।

মেহমানরা তা শুনে কানাঘুষা করতে লাগলো।নিশ্চয় এই ছেলের সাথেই অতশীর সম্পর্ক আছে।

ইভান বুঝতে পারলো এখানকার পরিবেশ ভালো না।যেকোন মুহুর্তে খারাপ কিছু হতে পারে। সেজন্য সে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে ধরলো।
হঠাৎ একজন আন্টি বললো,তুমি এভাবে পালিয়ে যাচ্ছো কেনো?সত্য করে বলো অতশীর সাথে তোমার কিসের সম্পর্ক?

ইভান তখন অতশীর সামনে গিয়ে বললো, তুমি কি এই জন্যই আমাদের ডেকেছিলে?কি শুরু করেছে সবাই?তুমি কিছু বলছো না কেনো?

অতশী সেই কথা শুনে সবার উদ্দেশ্যে বললো, আপনারা ওনাকে নিয়ে আর খারাপ কিছু বলেন না।
ওনার সাথে আমার সত্যি কোনো সম্পর্ক নাই।

সেই কথা শুনে অতশীর চাচা বললো,দুইজনে প্রেম করো সেটা স্বীকার করলেই তো হয়?এভাবে লুকোচুরি করার কি দরকার?

তখন অতশীর চাচী অতশীর আম্মুর কাছে এগিয়ে এসে বললো,দুইজন রে বিয়ে পড়ে দাও অতশীর মাও।এটাই সুযোগ।এতোকিছুর পরে মনে হয় না আর কেউ অতশীকে বিয়ে করবে!

ইভান সেই কথা শুনে চমকে উঠলো।কি বলছে এসব!
ইভান সেজন্য সবাইকে রেখে চলে যেতে ধরলো।
কিন্তু অতশীর গ্রামের লোকেরা যেতে দিলো না ইভান কে।তারা অতশীকে বিয়ে করার জন্য জোর করতে লাগলো।

ইভান তখন চিৎকার করে বললো,শাট আপ।আর এক পা যদি কেউ এগুচ্ছো তাহলে খবর আছে সবার।আপনাদের সাহস দেখে সত্যি আমি অবাক হচ্ছি।এতো বড় স্পর্ধা আপনাদের?আপনাদের সবাই কে আমি জেলে পুরে দিবো।

ইভানের এমন রাগ থেকে পাড়াপ্রতিবেশি এক চাচা এগিয়ে এসে বললো,আমাদের কে পুলিশের ভয় দেখাচ্ছো!দাঁড়াও আজ তোমাকেই পুলিশে দিবো।পুলিশ কে বলবো তুমিই সেই চিরকুট ওয়ালা ছেলে।আর তুমিই তানিম কে খুন করেছো।

ইভানের বন্ধুরা তখন বললো,আংকেল আপনি গুরুজন বলে কিছু বললাম না।তা না হলে আপনাকে আজ এমন শাস্তি দিতাম জীবনেও ভুলতে পারতেন না।বিনা কারনে আপনি ইভান কে দোষারোপ করতে পারেন না?

আংকেল তখন রাগান্বিত হয়ে তার ভাইদের ডাকতে লাগলো।এই ছেলে বলে কি?আমাকে থ্রেড দেয়।ধরো সবাই এদের।আজ এদের আমিই এমন শাস্তি দিবো যে জীবনেও ভুলবে না।এই বলে সবাই ইভান আর তার বন্ধুদের মারতে লাগলো।

ইভান আর তার বন্ধুরা কোনো উপাই না দেখে তাদের পিস্তল বের করে উপর দিকে ফাঁকা গুলি ছুঁড়তে লাগলো।পিস্তলের আওয়াজ শুনে সবাই দৌঁড়ে পালিয়ে গেলো।

ইভান এবার চিৎকার করে বললো,এগিয়ে আসো।কে আমাকে মারতে চাইলে?তাড়াতাড়ি এগিয়ে আসো।
কেউ আর ভয়ে সামনে আসলো না।সবাই থরথর করে কাঁপতে লাগলো।

ইভান এবার পিস্তল টা ঢুকিয়ে রেখে অতশীর কাছে চলে গেলো।অতশী ভয়ে চুপ করে আছে।
ইভান তখন বললো,হ্যাঁ আমিই সেই।যে তোমাকে সন্ত্রাসীর হাত থেকে বাঁচিয়েছিলাম।এটা আমার দায়িত্ব ছিলো।সেজন্য আমি তোমাকে রক্ষা করেছি।কিন্তু তাই বলে এটা ভেবো না যে আমি তোমাকে ভালোবাসি।আর হ্যাঁ,পরিষ্কার করে সবাই কে বলে দিচ্ছি আমি অতশীকে কোনো প্রেমপত্র দেই নি।এতো অভার কনফিডেন্স কেনো তোমার?আমি তোমাকে বলেছি কখনো?তাহলে তোমার দাদীকে বলেছো কেনো আমার কথা!আর যেনো কখনো এ নিয়ে কথা বলতে না শুনি।

অতশী নিচ মুখ হয়ে তাকিয়ে রইলো।তার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।সে কান ধরে তওবা করলো কখনোই সে ইভানের সামনে যাবে না।বা ইভানের দিকে ভুল করেও তাকাবে না।ইভান নামে সে কাউকে চেনে না।

এদিকে নেহা ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে।সে এই শুভ্র কে চায় নি।সে তো ভেবেছিলো শুভ্র একজন সহজ সরল ভালো ছেলে।কিন্তু এ তো দেখি একজন সন্ত্রাস!পিস্তল হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।

হঠাৎ কয়েকজন পুলিশ আসলো সেখানে।ইভান আর তার বন্ধুদের হাতে পিস্তল দেখে কেউ একজন ইনফর্ম করেছিলো।
পুলিশ কে দেখে বিন্দুমাত্র ভয় পেলো না ইভান।সে পুলিশের সামনে দিয়েই চলে গেলো।
এদিকে পুলিশ সবাই কে জিজ্ঞাসাবাদ করতে লাগলো।কি হয়েছিলো এখানে?
তখন কেউ একজন ইভানদের দেখিয়ে দিলো।যে ওরাই সেই সন্ত্রাস যারা আমাদের এট্যাক করেছে।

পুলিশ তা শুনে ভীষণ রাগ হলো।বললো,এভাবে ভালোভাবে না জেনে কাউকে সন্ত্রাস বলবেন না।ওনাদের আমরা ভালো করেই চিনি।আর বিনা কারনে অযথাই পুলিশদের ডেকে হয়রানি করা ঠিক না।এই বলে পুলিশও চলে গেলো।

অতশীর গ্রামের লোকজন হা করে তাকিয়ে রইলো। কেউ কিছুই বুঝতে পারলো না।

চারদিন পরের ব্রেকিং নিউজ,
তানিমের এক খুনীকে ধরা হয়েছে।খুনী অন্য কেউ নয়। তানিমের ফ্রেন্ড হয় সে।বাকি তিনজন খুনী পলাতক।তানিমের ফ্রেন্ড কে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।রিমান্ড শেষে জানা যাবে এর আসল কাহিনী।কি জন্য তানিমের ফ্রেন্ড এই কাজটি করলো।

তানিমের খুনীর কথা শুনে অতশীর ফ্যামিলির সবাই বেশ অবাক হলো।বিশেষ করে অতশী।কারন এরা সবাই তো বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো।খুব মিল ছিলো সবার মধ্যে।একসাথে একই অফিসে সবাই চাকরি করতো। অয়ন সবসময় বলতো তাদের ফ্রেন্ডের মধ্যে অনেক ভালো সম্পর্কের কথা।তাহলে তারা এ কাজ কেনো করলো?
অতশী রোজ জানালা দিয়ে দেখতো এদের।অফিস টাইমে সবাই এসে তার ভাইয়াকে নিয়ে যায়।কিন্তু হঠাৎ করে এদের কি হলো?তমাল খুন হলো,অন্যদিকে অয়ন জেলখানায়,তানিম আবার তার বন্ধুতের হাতেই খুন হলো।ব্যাপারটি খুব রহস্যজনক মনে হলো সবার কাছে।

তানিমের খুনী ধরা পড়ায় অতশী নিশ্চিন্তে বাসা থেকে বের হলো।এ কয় দিন সে বাসা থেকে বের হই নি।কারন অনেকেই অতশীর দিকে আংগুল তুলে কথা বলতো।যেটা তার ভালো লাগতো না।কিন্তু এভাবে ঘরে বসে থাকলে চলবে না।অতশী সেজন্য আজ মৌরির বাসায় চলে গেলো।কারন মৌরির বাবার সাথে তার ভাইয়াকে নিয়ে কথা বলতে হবে।এদিকে চারদিন থেকে সে বাচ্চা দুইটিকে ও প্রাইভেট পড়াতে যায় না।

অতশী মৌরির বাড়িতে চলে গেলো।বাসার কলিং বেল বাজিয়ে সে দাঁড়িয়ে থাকলো।কিন্তু কেউ খুললো না দরজা।অতশী সেজন্য আবার কলিং বেল বাজালো।এবার কে যেনো দরজা খুললো।দরজা খুলতেই অতশীর চোখ কপালে উঠে গেলো।সে তার দিকে না তাকিয়ে নিচ মুখ হয়ে থাকলো।

চলবে,,,,
কেমন লাগলো আজকের পর্ব?আজ কে কি বুঝলে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here