অনুভবে তুমি পর্ব-২৫

0
2541

#অনুভবে_তুমি
#পর্ব_২৫
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

স্যার!অয়ন এদিকেই আসছে।ওকে কি শেষ করে ফেলবো?
–না,না।খবরদার ওর গায়ে কেউ হাত দিও না।ওকে ধরে অন্যখানে নিয়ে আসো।ওর থেকে অনেক কিছু জানার আছে।এই বলে ইভান অয়নের বাসা থেকে বের হতে ধরলো। হঠাৎ পিছন দিক থেকে অতশী ডাক দিলো।আপনি এসেই যাচ্ছেন কেনো?কিছু মুখে দিন।কষ্ট করে আপনার জন্য নাস্তা বানিয়ে আনলাম।
–সময় নেই আমার।
অতশী তখন নাস্তার ট্রে টি টেবিলের উপর রেখে বললো,
অন্তত মৌরির সাথে দেখা করে যান।ইভান কোনো উত্তর দিলো না।সে বের হয়ে গেলো বাসা থেকে।কারন এখন এক মিনিট সময় নষ্ট করলে অনেক কিছু শেষ হয়ে যাবে।

ইভান শুভ্র কে ফোন করে বললো, কাজ কি হয়ে গেছে?
শুভ্র উত্তর দিলো না স্যার।অয়ন পালটা আমাদের কেই আক্রমন করছে।
ইভান তখন বললো, যে করেই হোক ওকে ধরে ফেলো।কিন্তু কোনো ক্ষতি যেনো না হয় ওর।
শুভ্র সেই কথা শুনে দিশান আর নিলয় কেও জানিয়ে দিলো।তারা সবাই অয়ন কে বাঁচানোর চেষ্টা করলেও অয়ন কিছুতেই বুঝতে চাইলো না।সে ভেবেছে সবাই তার শত্রু।হঠাৎ শুভ্র অয়নের পিস্তলে একটা গুলি করলো আর সাথে সাথে অয়নের হাত থেকে পিস্তল টা ছিটকে পড়ে গেলো।অয়ন তবুও থামলো না।সে আবার গুলিটা তোলার চেষ্টা করলো।কিন্তু তার আগেই দিশান,নিলয়,আর শুভ্র মিলে অয়ন কে জোর করেই গাড়িতে উঠিয়ে নিলো।
অয়ন গাড়িতে উঠেও নিজেকে ছাড়ানোর জন্য খুব চেষ্টা করলো
নীলয় তখন বললো,বেশি বাড়াবাড়ি করিস না অয়ন।চুপচাপ বসে থাক।কারন আমাদের সাথে থাকলে অন্তত কিছুদিন বাঁচার সময় পাবি।কিন্তু তুই যদি আর এক পাঁ এগোস আর বাঁচতে পারবি না।কারন পুরো জায়গা পুলিশ ঘিরে রেখেছে।তোকে দেখামাত্র ডাইরেক্ট শুট করে দিবে।
অয়ন তখন বললো, আমি তোদের কথা বিশ্বাস করি না।তোরা হলি আমার সবচেয়ে বড় শত্রু।তোরা কখনোই আমাকে বাঁচাতে আসিস নি।

দিশান তখন বললো, হ্যাঁ শত্রুই তো।তুই কি ভেবেছিস ছাড় পাবি?জীবনেও পাবি না।তোকে মারছি না তার একটা কারন আছে।কাজটি হয়ে গেলে তোকে আমরা নিজের হাতে শেষ করে দিবো।কারন উপর থেকে ঘোষণা এসে গেছে তোকে জীবিত বা মৃত যে অবস্থাতেই ধরি না কেনো তবুও আমাদের পুরুষ্কৃত করা হবে।যে বা যারা এই কাজটি করবে তাদের কে অনেক টাকা দেবে সরকার।ভাবতেই অবাক লাগছে যে আমরা ধরতে পেরেছি তোকে।আমরা এখন অনেক টাকা পুরুষ্কার পাবো।

শুভ্র তখন বললো, চুপ করো সবাই।আমি চিন্তা করছি অন্য একটা বিষয় নিয়ে।কারণ ইভান স্যারের মতলব কিছু বুঝতে পারলাম না।এতোদিন বলতো অয়ন কে দেখামাত্র শুট করে দিবো।কিন্তু আজ বললো,ওর যেনো কোনো ক্ষতি না হয়।তাহলে কি ইভান স্যার অয়ন কে বাঁচাতে চাইছে?

ঠিক সেই সময়ে এক দল সন্ত্রাস গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো। আর শুভ্রদের গাড়ি আটকিয়ে দিলো।যাদের প্রত্যেকের হাতে গুলি ছিলো।অয়ন তখন হাসতে হাসতে বললো, এরা আমাকে বাঁচানোর জন্য এসেছে।যাও নিয়ে যাও আমাকে।এরা কিছুতেই নিয়ে যেতে দেবে না।

অয়নের কথা শুনে সবাই বন্দুক হাতে নিয়ে গাড়ি থেকে নামলো।আর সন্ত্রাসগুলোর উপর আক্রমণ করলো।সন্ত্রাসগুলোও পাল্টা আক্রমণ চালালো।এদিকে অয়ন সুযোগ বুঝে গাড়ি থেকে নেমে পালিয়ে গেলো।
অয়ন দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে হঠাৎ সামনে আসা আরেকটা গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলো।
অয়নের এক্সিডেন্ট হওয়ার সাথে সাথে মুহুর্তের মধ্যে সবাই তাকে ঘিরে ধরলো।
এদিকে আবার ইভানও আসছিলো অয়নের খোঁজে।রাস্তায় এতো জটলা দেখে ইভান গাড়ি নিয়ে সামনে এগুতে পারছিলো না।সেজন্য সে গাড়ি থেকে নেমে গেলো।ইভান সবাইকে সাইড দিতে বলার জন্য এগিয়ে যেতেই দেখে অয়ন রাস্তায় পড়ে আছে।
ইভান সাথে সাথে অয়ন কে তার গাড়িতে বসালো।আর শুভ্র কে ফোন দিলো।কিন্তু শুভ্র ফোন ওঠালো না।
সেজন্য ইভান অয়ন কে একটা গোপন আস্তানায় নিয়ে গেলো।কারন হাসপাতালে নিয়ে গেলে পুলিশ দেখে ফেলবে অয়ন কে।এই মুহুর্তে অয়ন একজন নামকরা সন্ত্রাস।যা সবাই জেনে গেছে।যতগুলো সন্ত্রাস কে ধরা হয়েছে তারা সবাই বলেছে তাদের লিডার অয়ন।সেজন্য অয়ন কে ধরার জন্য সবাই উঠে পড়ে লেগেছে।

কিছুক্ষন পর শুভ্র ফোন দিলো।ইভান ফোন রিসিভ করেই বললো,তোমরা কই?অয়ন রাস্তায় পড়ে ছিলো কেনো?
শুভ্র তখন বললো, স্যার আমাদের কে কিছু সন্ত্রাস এট্যাক করেছিলো।আর এই সুযোগে হয় তো অয়ন পালিয়েছে।
–আচ্ছা এ নিয়ে পরে আলোচনা করবো।তার আগে একজন ভালো ডক্তর নিয়ে আসো।অয়নের অবস্থা বেশি ভালো না।ও এক্সিডেন্ট করেছে।
–ঠিক আছে স্যার।

ইভান ভীষণ টেনশনে পড়ে গেলো।এখন কি হবে?অয়নের কিছু হলে আসল অপরাধী কে তারা কিছুতেই খুঁজে পাবে না।যে আড়ালে বসে এইসব নিরীহ ছেলেদের ব্লাকমেল করে তাদের দ্বারা এসব অন্যায় কাজ করে নিচ্ছে।

হঠাৎ অয়ন চোখ মেলে তাকালো।আর কি যেনো বলতে লাগলো। ইভান তা শুনে বললো,অয়ন কিছু কি বলতে চাস?কি বলছিস?

অয়ন অস্পষ্ট ভাবে বললো,অতশী আর আমার মা দাদীর একটু খেয়াল রাখিস ইভান।মৌরি কে বলিস এই অধম রে যেনো মাফ করে দেয়। এই বলে অয়ন ইভানের হাত ধরলো।ইভান তখন বললো কাউকে নিয়ে ভাবতে হবে না তোর।তুই আগে সুস্থ হয়ে ওঠ।
অয়ন আর কিছু বলতে পারলো না।সে একদম নেতিয়ে পড়লো।ইভান তখন বললো, অয়ন প্লিজ এখন অন্তত সত্য কথা টা বল।এটা সত্য যে আমি তোর অনেক বড় শত্রু ছিলাম,তোকে দেখতে পারতাম না।কিন্তু এখন ওসব ভুলে তুই আমাকে বন্ধু ভাবতে পারিস।তোকে আমি সাহায্য করতে চাই।আমি জানি এর পিছনে অনেক বড় রহস্য আছে।এর আগে তোকে বহুবার জিজ্ঞেস করেছি।
তোদের আসল লিডার কে?কার জন্য তুই এই দলে নাম লিখেছিস?
অয়ন কিছু বলতে পারছে না। তবুও অস্পষ্ট ভাবে তার বুকে হাত দিয়ে বললো,আমি লিডার। আমি।

ইভান তখন চিৎকার করে বললো,অয়ন তুই মারা যেতে ধরেছিস।তারপর ও বলছিস না। কেনো এমন করছিস?
অয়ন তখন বললো,আমি কথা বলতে পারছি না।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।তবে তোর কিছুটা হেল্প হতে পারে।যদি তুই আমার ডায়রিটা পড়িস।আমার রুমের আলমারির ভিতর একটা গোপন ড্রয়ার আছে।সেখানে একটা ডায়রি আছে।ওই ডায়রিতে আমি সব লিখে রেখেছি।ওটা যেনো আর কারো হাতে না যায়।

ইভান বুঝতে পারছে অয়নের অবস্থা বেশ শোচনীয়। এদিকে শুভ্র এখনো আসছে না।সেজন্য ইভান নিজেই চলে যেতে ধরলো।
হঠাৎ শুভ্র আর দিশান এলো ডক্তর নিয়ে।ডক্তর আসা মাত্র ইভান তাড়াতাড়ি করে অয়ন কে দেখতে বললো।ডক্তর জানালো এখানে থেকে চিকিৎসা করানো যাবে না।হাসপাতালে নিতে হবে।রোগীর অবস্থা খুবই শোচনীয়।
ইভান চাইছিলো না এটা।কিন্তু অয়নের অবস্থা বেশি খারাপ হওয়াই তাকে হাসপাতালেই নিয়ে গেলো ইভান।

ইভান অয়ন কে হাসপাতালে ভর্তি করেই সোজা অতশীদের বাড়ি চলে গেলো।কারন এই পরিস্থিতিতে এদের কে একা একা বাড়ি রাখা ঠিক হবে না।যেকোন মুহুর্তে খারাপ কিছু হতে পারে। ইভান অতশীর বাসায় যেতেই দেখে তার আগেই পুলিশ ঘিরে রেখেছে তাদের বাড়ি।কারন অয়ন কে খুঁজছে সবাই।
ইভান তখন শুভ্র কে ফোন দিয়ে বললো, শুভ্র হাসপাতালের দিকে ভালো করে খেয়াল রাখো।কিছুতেই যেনো পুলিশ টের না পায়।পুলিশকে আসতে দিও না ওখানে।
–স্যার যদি আসে পুলিশ?
ইভান তখন বললো যেকোন একটা কথা বলে ম্যানেজ করে নিও।

ইভান পড়ে গেলো মহা বিপদে।সে চাইছিলো অতশীদের তাদের বাসায় নিয়ে যাবে।কিন্তু এখন কিভাবে নিয়ে যাবে?সবাই যদি জানে ইভান অয়ন কে বাঁচানোর চেষ্টা করছে তখন তার চাকরি চলে তো যাবেই তার সাথে তাকে শাস্তিও দেওয়া হবে।
ইভান তবুও সাহস নিয়ে চলে গেলো।ইভান কে দেখামাত্র পুলিশ অফিসার কাছে আসলো।আর বললো,স্যার অয়ন কে পাওয়া যায় নি।সে আগেই পালিয়েছে।কিন্তু অয়নের পরিবার বাড়ির মধ্যেই আছে।

ইভান তখন বললো,আপনি সবাইকে নির্দেশ দিন অন্যখানে গিয়ে খুঁজতে।অয়ন কি আজ আসবে এখানে?এখানে খুঁজে লাভ নাই।

পুলিশ অফিসার তখন বললো, স্যার অয়ন তার পরিবারের খোঁজ নিতে নিশ্চয় আসবে।শুনলাম নতুন বিয়ে করেছে।যদি আবার বউ কে নিতে আসে।

ইভান তখন বললো আচ্ছা ঠিক আছে।আমি চেক করে আসছি।এই বলে ইভান বাসার ভিতর ঢুকলো।বাসার ভিতর ঢুকেই ইভান অয়নের রুমে প্রবেশ করলো।আর ঘরের দরজা লাগিয়ে দিলো।এদিকে বাসার লোকজন দরজা ধাক্কাতে লাগলো।আর চিৎকার করে বললো,ইভান দরজা লাগিয়ে দিয়েছো কেনো?দরজা খোলা?
ইভান কারো কথায় কান না দিয়ে আলমারির ভিতর ড্র‍য়ার টা খুঁজতে লাগলো।কিন্তু পেলো না।ইভান সমস্ত কাপড় ফেলে দিলো আলমারির, তবুও ড্র‍য়ার টা খুঁজে পেলো না।অবশেষে সে খেয়াল করলো ছোট্র একটি কুটুরি।যা আলাদা করে আলমারির মধ্যে লাগানো হয়েছে।ইভান সেই কুটুরির মধ্যে হাত দিলো।আর সেখানে একটা ড্র‍য়ার দেখলো।ইভান ড্র‍য়ার টা খুলতেই ডায়রি টা পেয়ে গেলো।ডায়রি টা পাওয়ার সাথে সাথে সে সেটা লুকিয়ে রাখলো।
ইভান দরজা খুলতেই দেখে মৌরি দাঁড়িয়ে আছে।সে ইভান কে দেখামাত্র হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।আর বললো,ভাইয়া অয়ন কোথায়?তুমি কি করেছো অয়নের সাথে?প্লিজ ভাইয়া অয়নের কোনো ক্ষতি করো না।
ইভান তখন বললো, আমি কিছুই করি নি।ও ওর নিজের পাপের শাস্তি পাচ্ছে।

অতশী তখন এগিয়ে এসে বললো,আপনি সেই জন্য বাসায় এসেছিলেন?চালাকি করে ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে গেছেন তাই না?
ইভান তখন বললো, আমি অয়ন কে বাঁচানোর জন্য এসেছিলাম।ওকে বলেছিলাম বাহিরে গেলেই পুলিশ তাকে এট্যাক করবে।কিন্তু সে আমার কথা বিশ্বাস করে নি।
অয়ন কে আমি অন্যভাবেও বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলাম।আমি শুভ্র কে বলেছিলাম অয়ন কে আমাদের গোপন আস্তানায় ধরে নিয়ে আসতে।শুভ্র সেটা করেও ছিলো।
কিন্তু অয়ন কে নিয়ে যাওয়ার জন্য একদল সন্ত্রাস ওদের উপর এটাক করে।আর এই সুযোগে অয়ন পালিয়ে যেতে ধরে।তখন তার একটা এক্সিডেন্ট হয়।

এক্সিডেন্টের কথা শুনে অয়নের মা চিৎকার করে কেঁদে উঠলো।তারা অয়ন কে দেখার জন্য অস্থির হয়ে গেলো।ইভান তখন বললো এই মুহুর্তে কেউ দেখা করতে পারবে না ওর সাথে।

হঠাৎ দিশান ফোন দিলো ইভান কে।আর জানালো অয়ন কে নিয়ে যাওয়ার জন্য আবার একদল সন্ত্রাস এসেছে।আপনি তাড়াতাড়ি আসেন।

ইভান সেই কথা শোনামাত্র আর এক মুহুর্ত ও দেরী করলো না।দৌঁড়ে চলে গেলো হাসপাতালে।

ইভান হাসপাতালে গিয়ে দেখে দিশান,শুভ্র, আর নিলয় তিনজনই আহত হয়েছে।
তাদের ট্রিটমেন্ট করছে ডক্তর।
ইভান তখন শুভ্র কে ইশারা করে বললো অয়ন কই?

শুভ্র জানালো সন্ত্রাসগুলো অয়ন কে নিয়ে গেছে।
ইভান সেটা শুনে আর এক মুহুর্ত ও দেরী করলো না।আবার বেড়িয়ে পড়লো। কারন যে করেই হোক অয়ন কে সন্ত্রাসগুলোর হাত থেকে মুক্ত করতে হবে।কিন্তু তারা কোন দিকে গেছে ইভান কিছুই বুঝতে পারলো না।

অয়নের লিডার বুঝে গেছে এখন অয়ন দেশের নাম্বার ওয়ান সন্ত্রাস বলে পরিচিত হয়েছে।সেজন্য ওকে পুরো পুলিশ ডিপার্টমেন্ট ধরার চেষ্টা করবে।আর অয়ন কে ধরা মানে পুরো গ্যাং কে ধরে ফেলা।অয়ন চাপে পড়ে সব সত্যি কথা বলে দেবে।এজন্য তারা অয়ন কে তাদের আস্তানায় নিয়ে গেছে।তারা হয় অয়ন কে বাঁচাবে না হয় একেবারে মেরেই ফেলবে।কারন এই মুহুর্তে সমস্ত শহড় জুড়ে শুধু অয়নের নাম।সবার মুখে মুখে এক কথা সন্ত্রাসী অয়নের ফাঁসি চাই।

ইভান কোনো উপাই না দেখে অয়নের ডায়রি টা বের করলো।আর পড়া শুরু করলো।

আমি অয়ন সরকার।একসময় একজন মেধাবী স্টুডেন্ট ছিলাম।অনেক বড় স্বপ্ন ছিলো আমার।বড় হয়ে একজন প্রফেসর হবো।কিন্তু সেই স্বপ্ন মুহুর্তের মধ্যে বিলীন হয়ে গেলো।কারন হাতে কলমের পরিবর্তে ধরলাম পিস্তল।বাবা হঠাৎ মারা গেলো।সংসার চালানোর জন্য একটা ভুলভাল কোম্পানি তে ঢুকলাম।বুঝতে পারি নি এটা তরুন যুবক দের চাকরি দিয়ে পরে তাদের ব্লাকমেল করে তাদের দ্বারা মানুষ খুন করা হয়।
আমাকেও তেমন ভাবে ব্লাকমেল করা হয়েছিলো।আমি কোনো উপাই না দেখে তাদের কথাই মেনে নিলাম।তারা সবার প্রথম আমাদের মুসলমানদের সবচেয়ে বড় পবিত্র গ্রন্থ কুরান শরিফ হাতে নিয়ে শপথ করিয়ে নিলো।যে জীবন চলে গেলেও বলা যাবে না এই কোম্পানি তে আসলে কি করা হয়?আর আমার কাজ কি?
আমি শপথ করতে চাইছিলাম না।তখন ওরা বললো তাহলে আমাকে জেলে দিবে।আমার বোনের ক্ষতি করবে।আমার মা দাদীকে মেরে ফেলবে।
আমি ভয় পেয়েই রাজি হয়েছিলাম সেদিন।
তারপর তারা আমার চোখ বেঁধে কোথায় যেনো নিয়ে গেলো।আমি আজও জানি না এটা কোন জায়গা।

তারপর আমার সামনে একজন লোক এসে আমার হাতে দুই টা পিস্তল দিয়ে বললো আজ থেকে এগুলো ইউজ করা শিখবে।কখন কোথায় কাকে মারতে হবে সেই কথা পরে তোমাকে জানানো হবে।এইভাবে আমি মানুষ খুন করার চাকরি টা পেয়ে গেলাম।
আমার কাজে খুশি হয়ে আমাকে গ্যাং লিডার বানানো হলো।আমার দলে ছিলো তানিম,তমাল,জয়,সানি আর রুদ্র।এদের সবাইকেই আমার মতো ব্লাকমেল করেই গ্যাং কে ঢুকানো হয়েছে।

কাজের অর্ডার দেওয়ার জন্য একেক দিন একেক লোক আসে।তাদের সবার গায়ে এক রকম পোশাক ছিলো।কালো কালারের ড্রেসে সাদা কালারের দুই টা ইংলিশ শব্দ AN.তাদের কোনো ফোন নাম্বার নাই আমার কাছে।তারা আমাকে ফলো করতো সবসময়।সেজন্য আমি কখন বাসায় আসি সাথে সাথে বুঝতে পারে।তবে আমাদের বসের কথাবার্তা ভীষণ চেনা চেনা লাগে।মনে হয় আগেও শুনেছি।
বস কে দেখার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি তবুও দেখতে পারি নি তাকে।

একদিন মনে মনে প্লান করলাম আর কোনো খুন করবো না।দেখি কি হয়?কিছুক্ষন পরেই একজন দরজা নক করে বললো,৪ঃ৩০ বেজে গেছে।বাসা থেকে বের হয়ে যান।আমি তো তাজ্জব লেগে গেলাম।সেই দিন থেকে আর কখনোই কাজে অবহেলা করি না।
কারণ বাড়ির মধ্যে নিজের একটা বোন আছে।সবসময় তাকে নিয়ে ভয় হয়।।যদি তার সাথে খারাপ কিছু হয়ে যায়?

আমি যে কোম্পানি তে ঢুকেছিলাম সেটা হলো এস,আর এস কোম্পানি লিমিটেড। আর ম্যানেজার হলেন আশরাফ।যিনি আমাকে গ্যাং এ ঢুকে দেওয়ার কিছুদিন পরেই খুন হয়ে যান।কে বা কারা খুন করেছে কেউই জানে না।

ইভান ডায়রি টা বন্ধ করে রাখলো।তারপর ভাবতে লাগলো কি করা যায়?
কিন্তু এখন একা একা কি করবে সে কিছুতেই সেটা মাথাতে ঢুকলো না।কারন তার বিশ্বস্ত সহকারী অফিসার তিনজনই আহত।তারা তো কিছুতেই তাকে এখন সাহায্য করতে পারবে না।এদিকে অতশীদের কিছুতেই বাসা থেকে বের করতে পারছে না।

ইভান আবার চলে গেলো অতশীদের বাসায়।গিয়ে দেখে এখনও পুলিশ পাহারা দিচ্ছে।
ইভান বুঝতে পারলো না কি করবে এখন?এই পুলিশ গুলোকে সরানোর কোনো উপাই ই পাচ্ছে না সে!
হঠাৎ ইভানের মাথায় একটা বুদ্ধি এলো।সে নাক মুখ বেঁধে পাশের একটা মোবাইল শপ থেকে পুলিশ অফিসার কে ফোন দিলো।আর বললো,স্যার তাড়াতাড়ি চলে আসেন বাজারে।সন্ত্রাস অয়ন এখানে এসে গোলাগুলি করছে।এই বলে ইভান তার পিস্তল বের করে কয়েকটা ফাঁকা গুলি ছুঁড়তে লাগলো।

পুলিশ অফিসার ফোন পাওয়ার সাথে সাথে পুরো পুলিশ বাহিনী নিয়ে চলে গেলো বাজারে।আর ইভান এদিকে আবার অতশীদের বাসায় আসলো।
ইভান সবাইকে বললো,তাড়াতাড়ি বের হও বাসা থেকে।এই বাসায় থাকা কিছুতেই নিরাপদ মনে হচ্ছে না।যেকোন মুহুর্তে খারাপ কিছু হতে পারে।

ইভানের কথা শুনে অয়নের মা কাঁদতে লাগলো,অয়ন না আসা পর্যন্ত আমি কিছুতেই যাবো না।আমার অয়ন আগে ফিরুক।ওদিকে মৌরিও কাঁদতেই আছে কাঁদতেই আছে।সেও কিছুতেই যেতে চাচ্ছে না।তখন ইভান বললো,এখন কাউকে বুঝানোর সময় নেই আমার।তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বের হও।তারপর সব কিছু বলছি তোমাদের।এই বলে ইভান সবাইকে নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো।আর গাড়ি স্টার্ট দিলো।

হঠাৎ দাদী বললো, অতশী কই?ও তো আসে নি।সে বাসাতেই আছে।ইভান খেয়ালই করে নি অতশীকে।

ইভানের হাতে একদম সময় নেই। সে তাড়াহুড়ো করছে।আর অতশী ঘাড়ত্যাড়ামি করে ঘরেই বসে আছে।ইভান সেজন্য নিজেই গেলো অতশীকে ডাকার জন্য।
ইভান রুমে গিয়ে দেখে অতশী তার রুমে চুপটি করে বসে আছে।
ইভান কোনো কথা না বলে অতশীর হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে ধরলো। অতশী তখন বললো,কি করছেন এটা?আমি যাবো না কোথাও।
–এরকম জিদ করো না অতশী।আমার একদম সময় নেই।
অতশী তখন বললো আমি আপনাকে বিশ্বাস করি না।এই কিছুদিন আগেই আপনি ভাইয়ার শত্রু ছিলেন।আপনি নিজের মুখে বলেছেন আপনি ভাইয়াকে জেলে পুরে দেবেন।তাহলে আজ হঠাৎ কি হলো?আপনি ভাইয়াকে হেল্প করার জন্য এসেছিলেন আমি এটা মানতে পারছি না।

অতশীর কথা শুনে ইভানের মেজাজ খারাপ হতে লাগলো।ইচ্ছে করছিলো দুই গালে দুই টা চড় বসিয়ে দিতে।
কিন্তু ইভান সেটা করলো না।
ইভান অতশীর হাত ধরে টেনে তার কাছে আনলো আর বললো,আই লাভ ইউ অতশী।

অতশী অনেক বেশি অবাক হয়ে গেলো।সে এটা কি শুনলো!ইভান নিজের মুখে আই লাভ ইউ বললো তাকে।অতশী তখন ইভানের হাত সরিয়ে দিয়ে বললো, আমি যেতে চাচ্ছি না দেখে মিথ্যে মিথ্যে নাটক করছেন।ভালোবাসা কি আপনার কাছে খেলা মনে হয়?

–আমি সত্যি বলছি।

–কিন্তু আপনি না সেদিন বললেন,আপনি কিছুতেই একজন সন্ত্রাসের বোন কে ভালোবাসতে পারবেন না।
আমি সন্ত্রাসের বোন দেখে আমাকে নাকি ভালোবাসা যায় না।

ইভান সেই কথা শুনে অতশীর হাত ধরে টানতে টানতে রুম থেকে বের করলো আর বললো,হ্যাঁ বলেছিলাম সেদিন।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, এই সন্ত্রাসীর বোনটাকেই লাগবে আমার।

–আপনার মন কি সেকেন্ডে সেকেন্ডে পালটে যায়?

ইভান কোনো উত্তর না দিয়ে অতশীকে গাড়িতে নিয়ে গেলো।আর সবাইকে নিয়ে তাদের বাসায় চলে গেলো।

#চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here