#অনুভবে_তুমি
#পর্ব_৩৫
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
অতশী ইভানের খাবার প্লেট থেকে খেতেই আবার রুমে প্রবেশ করলো ইভান।কিন্তু সে তো বাহিরে গিয়েছিলো।অতশী ইভান কে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যেতেও দেখেছে।তাহলে আবার কেনো আসলো ইভান!
অতশী ইভান কে দেখামাত্র খাবারের প্লেট নিয়ে চলে যেতে ধরলো। ইভান তা দেখে অতশীর হাত টেনে ধরে বললো, পালাচ্ছো কোথায়?খাচ্ছো যখন তখন ভালোভাবেই খাও।
–না মানে আমি তো!
–আমি কি?তুমি বলতে চাচ্ছো আমার এঁটো তুমি খাচ্ছো না?
অতশী সাথে সাথে মাথা নাড়লো।যে সে ইভানের এঁটো খাচ্ছে না।
ইভান তখন বললো ওকে।যার খাবারই খাও না কেনো বসে থেকেই খাও।এই বলে ইভান অতশীকে আবার বসিয়ে দিলো।আর তাকে খেতে বললো।অতশী ভীষণ লজ্জার মধ্যে পড়ে গেলো।ইভান তাকে এরকম অবস্থায় দেখবে সে ভাবতেও পারে নি।অতশী ভেবেছে ইভান তো চলেই গিয়েছে।কিন্তু ইভান যে তার গুরুত্বপূর্ণ ফাইল টা ছেড়ে গিয়েছে সেটা তো আর অতশী জানে না।ইভান ফাইল টা নেওয়ার জন্যই আবার এসেছে।
এদিকে কনফারেন্স শুরু হয়ে গিয়েছে।দিশান এবং নীলয় যথাসময়ে উপস্থিত হলেও ইভান এখনো উপস্থিত হতে পারে নি।সবাই ইভানের জন্য অপেক্ষা করছে।আজ সবাই ইভানের মুখে শুনতে চায় সেদিনের সেই লোমহর্ষক ঘটনা।ইভান নিজেও আজ সত্যি কথাটা বলতে চায়।কারণ সে এই কয় দিনে অনেক প্রমাণ যোগাড় করেছে।সুস্থ হওয়ার পর এই প্রথম বার মিডিয়ার মুখোমুখি হচ্ছে ইভান।আজ আহসানের মুখোশ খোলার সময় এসে গেছে।তাকে এমনভাবে অপদস্ত করা হবে যেটা আহসান কখনো কল্পনাই করে নি।আহসান ভেবেছে সবকিছু থেমে গেছে।কিন্তু ইভান যে এখনো আহসানের পিছু পড়ে আছে সেটা আহসান বুঝতেই পারছে না
ইভান ফাইল খুঁজছে আর বলছে তাহলে বরের ভালোবাসা দরকার তোমার?সেজন্যই এঁটো খাবার খাচ্ছো?
–কি বলছেন এসব?আমি কারো এঁটো খাচ্ছি না কিন্তু।আর কারো ভালোবাসার প্রয়োজন নেই আমার।
–ওকে ঠিক আছে।তাহলে একটা প্রশ্নের সঠিক উত্তর দাও দেখি।সত্যি কি দরকার নেই বরের ভালোবাসা?
অতশী ইভানের কথা শুনে এবার চুপ করে রইলো।ইভান তখন বললো, চুপ হয়ে গেলে যে?বলো?ভালোবাসা লাগবে কিনা?
–না লাগবে না।
–তাহলে তো ভালোই হলো।আমি আরো ভাবছিলাম কিভাবে বউকে ভালোবাসবো?আর সময়ই বা দেবো কিভাবে? দুশ্চিন্তায় একদম শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম।বাঁচলাম!
অতশী তখন বললো আপনিই মনে হয় দেশের একমাত্র ব্যস্ত অফিসার।আর মনে হয় কেউ নেই?ভালো করে খুঁজে দেখেন আপনার মতো অনেক অফিসার আছে।যাদের বউ বাচ্চা সব আছে।সবাই তাদের ফ্যামিলিকে ভালোভাবেই সময় দেয়।আপনি হলেন একটা আনরোমান্টিক লোক।ভালোবাসা কি জিনিস আপনি সেটা বোঝেনই না।শুধু বোঝেন চিরকুট লেখা।মুখ ফুঁটে কিছু বলার সাহস আপনার নেই।
অতশীর কথা শুনে ইভান ওর কাছে চলে এলো।আর অতশীর একদম কাছে গিয়ে বললো,আমি আনরোমান্টিক?আমি ভালোবাসা বুঝি না?
–হ্যাঁ আপনি আনরোমান্টিক! আপনি ভালোবাসার কিছুই বোঝেন না।কি দরকার ছিলো বিয়ে করার?কি জন্য বিয়ে করেছেন আমাকে?
ইভান তখন বললো,ভালোবাসার জন্য বিয়ে করেছি।একটা সুখী দাম্পত্য জীবন গড়ার জন্য বিয়ে করেছি।কিন্তু যখন দেখলাম আমার সেই ভালোবাসার মানুষ আমাকে অসুস্থ দেখেও ছেড়ে চলে গেলো তখন নিমিষেই ভালোবাসা বিলীন হয়ে গেলো।আর ইচ্ছা করে না ভালোবাসতে।
অতশী এবার আর একটু বেশিই রাগ হলো।সে চিৎকার করে বললো আপনি সবসময় এই কথা টা কেনো বলেন?আপনি তো জানেনই কি হয়েছিলো সেদিন?আর আমি কেনো ছেড়ে গিয়েছিলাম?আমি কিন্তু এজন্য কম শাস্তি পাই নি?দিনের পর দিন কেঁদে কেঁদে কাটিয়েছি।এই এক মাস কিভাবে পার করেছি সেটা বোঝার ক্ষমতা আপনার নেই।
আমার আর এসব যন্ত্রনা ভালো লাগছে না?হয় আমাকে রাখেন তা না হলে জীবন থেকে দূর করে দেন।এভাবে কেনো আমাকে ঝুলিয়ে রেখেছেন?
ইভান সেই কথা শুনে অতশীর মুখ চেপে ধরলো।আর বললো,থামো এবার।অনেক বলে ফেলছো।আমারও এসব আর ভালো লাগছে না।সব হিসাব আমিও মিটিয়ে নিতে চাই।এই বলে ইভান অতশীর মুখের উপর থেকে তার হাত সরিয়ে নিলো।আর ধীরে ধীরে অতশীর দিকে ঝুঁকতে লাগলো। ইভান একদম অতশীর কাছাকাছি চলে আসছে।হঠাৎ সে শক্ত করে অতশীকে জড়িয়ে ধরলো আর অতশীর গলায় তার মুখ ঘষতে লাগলো।মুহুর্তের মধ্যে অতশীর পুরো শরীর শিহরিত হলো।তার পুরো শরীর কম্পিত হতে লাগলো।সে ইভান কে বাঁধা দিতেও পারছে না।কারণ তার এক হাতে খাবারের প্লেট আর অন্য হাত নোংরা ছিলো।সেজন্য সে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলো।
ইভান হঠাৎ তার মাথাটা উঠিয়ে চোখ বন্ধ করে অতশীর ঠোঁটের কাছে তার ঠোঁট নিয়ে গেলো।কিন্তু ঠোঁটে ঠোঁট মিলাতেই ইভানের হুঁশ ফিরে এলো।সে কি করছে এটা?তার তো এখন ফাইল নিয়ে কনফারেন্স এ যাওয়ার কথা।
ইভান তাড়াতাড়ি করে অতশীকে ছেঁড়ে দিলো আর আবার তার ফাইল টা খুঁজতে লাগলো।
অতশী কিছুই বুঝতে পারলো না।ইভানের হঠাৎ কি হলো?ইভান এরকম কেনো করছে?
এদিকে ইভান পাগলের মতো তার ফাইল টা খুঁজতে লাগলো।অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ফাইল টা খুঁজে পেলো না।সে ঘরের প্রতিটা জিনিস এলোমেলো করলো।তবুও কোথাও দেখতে পেলো না।
ইভান কে এরকম ঘর এলোমেলো করা দেখে অতশী তাড়াতাড়ি করে হাত ধুয়ে নিলো।আর ইভানের কাছে এসে বললো, কি খুঁজছেন আপনি?
–কিছু না।এই বলে ইভান আবার খুঁজতে লাগলো ফাইল টা।
এদিকে দিশান কল দিচ্ছে বার বার।
ইভান কল টা কেটে দিলো।কারণ ফাইল না পাওয়া গেলে কনফারেন্স এ গিয়ে কি করবে সে?
অন্যদিকে অতশী বার বার জিজ্ঞেস করছে ইভান কে?
ইভান তখন একটা ধমক দিয়ে বললো, কি শুরু করেছো বলো তো?বার বার এক কথা কেনো জিজ্ঞেস করছো?তুমি কি পারবে খুঁজে দিতে?আলমারির ভিতর একটা ফাইল ছিলো।দেখেছো সেটা?
অতশী তখন নিজেও আলমারির ভিতর খুঁজতে লাগলো।কিন্তু সেও পেলো না।
ইভানের মাথা এবার চক্কর দিতে লাগলো। সে তো সবসময় তার ঘরে তালা দিয়েই রাখে।কেউ কিভাবে হাত দিতে পারে ফাইলে!কিন্তু আজ তো অতশীকে রুমে রেখেই বের হয়েছিলো সে?তাহলে কি কেউ এসেছিলো রুমে?
ইভান তখন অতশীকে বললো,আমি চলে যাওয়ার পর কেউ কি রুমে এসেছিলো?
–না।সেই থেকেই তো আমি রুমে ছিলাম।
ইভান পুরো বাড়ি মাথায় তুললো।কে এসেছিলো তার রুমে?আর তার ফাইল টা কে নিলো?
হঠাৎ অতশীর মনে হলো কালকের রাতের কথা। সে কাউকে বাসা থেকে বের হতে দেখেছিলো।অতশী তখন ইভান কে জিজ্ঞেস করলো, আপনি কি আজকে ফাইল টা দেখেছিলেন?
–না,ওটা আমি কালকে রেডি করে আলমারিতে রেখেছিলাম।ভেবেছিলাম একদম কনফারেন্সে যাওয়ার দিন বের করবো।
অতশী তখন বললো, বুঝতে পারছি এখন।তাহলে ফাইল টা কালকে রাতেই চুরি হয়েছে।
অতশীর কথা শুনে ইভানের মাথা একদম ঘুরে গেলো।কি বলে অতশী!এতো কষ্ট করে যোগাড় করা সব প্রমাণ আর তথ্য এইভাবে শেষ হয়ে গেলো?
অতশী তখন বললো, কাল শেষ রাতে আমি বাসা থেকে কাউকে বের হতে দেখেছিলাম।লোকটি বের হওয়ার কিছুক্ষন পর আপনি বাসায় আসেন।
–কি বলছো এসব?ইভান মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো।এখন সে কনফারেন্স এ কি নিয়ে যাবে?ইভান সাথে সাথে দিশান কে ফোন করলো আর তাদের ফাইল চুরি হওয়ার ব্যাপার টা জানালো।
দিশান আর নীলয় ও দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলো।এইভাবে তাদের সব পরিশ্রম বৃথা হয়ে গেলো।এখন কিভাবে তারা আহসান কে ধরিয়ে দেবে।সে যে একজন কুখ্যাত সন্ত্রাসী তা সবাইকে কিভাবে জানাবে?
ইভান বুঝতে পারছে না কিছু।কিভাবে তার রুম থেকে ফাইল চুরি হলো?কারন রুমে তালা লাগানো ছিলো আবার আলমারিতেও তালা লাগানো ছিলো।যার চাবি শুধুমাত্র তারই কাছে থাকে।
নীলয় আর দিশান এক মুহুর্ত ও দেরী করলো না।তারা সাথে সাথে ইভানের বাসায় চলে এলো।আসার সময় কনফারেন্স এর সভাপতি কে বলে এলো অফিসার ইভান হঠাৎ অসুস্থ হয়েছেন।উনি আজ আর আসতে পারবেন না।
নীলয়,দীশান আর ইভান ঘরের দরজা বন্ধ করে আলাপ আলোচনা করতে লাগলো।কারণ তারা বুঝতে পারলো ইভানের বাসারই কেউ একজন আহসানের গুপ্তচর। তা না হলে তালাবদ্ধ রুমের ভিতর থেকে ফাইল কি করে চুরি হয়?কিছুক্ষন আলাপ আলোচনা করার পর নীলয় আর দিশান চলে গেলো।
ইভান একদম কোনঠাসা হয়ে গেলো।সে কখনো কল্পনাও করে নি এটা।দিশান রা চলে যাওয়ার পর ইভান অতশীকে আবার ডেকে আনলো রুমে।সে কালকের রাতে কাকে দেখেছিলো সেটা মনে করতে বললো।অতশী তখন বললো, বেশি একটা দেখে নি সে।সে রুম থেকে বের হতেই ছেলেটি গেট খুলে বের হলো শুধু এটা দেখেছে।।
ইভান সেই কথা শুনে উলটো অতশীকে বকতে লাগলো, সে কেনো বলে নি কাউকে?কেনো চিৎকার করে ডাকে নি।
অতশী তখন বললো, আমি ভেবেছিলাম বাবা নামাযের জন্য বের হলো।সেজন্য চিৎকার করে নি সে।কিন্তু পরক্ষনেই বাবা জায়নামাজ হাতে করে রুম থেকে বের হয়।আর সে দৌঁড়ে গিয়ে বাবাকে বলে এই কথা।কিন্তু বাবা বলে আমি নাকি ভুল দেখেছি।এতো রাতে কে আসবে বাসায়?
ইভান কিছুই বুঝতে পারলো না।কে করতে পারে এই কাজ?তার বাবা বাসায় নেই।ইভান সেজন্য কয়েকবার ফোন ও দিয়েছিলো তাড়াতাড়ি বাসায় আসার জন্য।কিন্তু ইভানের বাবার আজ একটা গুরুত্বপূর্ণ কেস আছে।উনি সেটা নিয়ে ব্যস্ত।
অতশী আর ইভান গল্প করতেই হঠাৎ রুমে ইশান আর ইমান প্রবেশ করলো।তারা এসেই অতশী কে বললো
কখন বেড়াতে নিয়ে যাবে ম্যাম?
অতশী সেই কথা শুনে ওদের দুইজনের কাছে চলে গেলো আর বললো,তোমরা তোমাদের রুমে যাও।আমি পরে কথা বলছি।অতশীর কথা শুনে ওরা চলে গেলো।
ইভান তখন বললো, কি হয়েছে?কি জন্য এসেছিলো ওরা?
অতশী বলতে চাইছিলো না।কারণ ইভান যদি শোনে অতশী ওদের কে নিয়ে আজ বাহিরে যেতে চেয়েছে তাহলে তো ইভান ভীষণ রেগে যাবে।
–চুপ হয়ে গেলে কেনো?ওরা কোথাও যাওয়ার কথা বলছিলো?
— আসলে ওরা একটু বাহিরে যেতে চাচ্ছিলো।আপনাকে বলেছিলো কিন্তু আপনি না করায় ভীষণ মন খারাপ করেছে।এজন্য আমাকে বলেছিলো।আমি ভুল করে কথা দিয়ে ফেলছি ওদের।
ইভান অতশীর কথাগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো।সে চোখ বড় বড় কর তাকিয়ে আছে আর ভাবছে এই পরিস্থিতিতে অতশী বাহিরে যাওয়ার কথা ভাবলো কি করে?
অতশী ইভান কে এমন রাগান্বিত দেখে বললো আসলে আমি তো আর জানতাম না আজকেই আপনার ফাইল চুরি হয়ে যাবে।সেজন্য আপনি টেনশনে থাকবেন।আমি ওদের কে তো আগেই কথা দিয়ে ফেলছি।এখন কি করবো?
–কি করবে মানে?বাসা থেকে ভুল করেও বের হওয়া যাবে না এখন।বাহিরের পরিস্থিতি ভালো না।যেকোন একটা বিপদ হতে পারে।
–আমার আবার কিসের বিপদ হবে?আমি কি সি আই ডি অফিসার নাকি?
ইভান তখন বললো, সি আই ডি অফিসার না হলে সি আই ডি অফিসারের বউ তো এখন।সেজন্য ভেবেচিন্তে বাহিরে যাবে।আমার পারমিশন ব্যতীত খবরদার বাড়ির বাহিরে যাবে না।
অতশী যদিও মাথা নাড়িয়ে বললো হুম,তবুও মনে মনে ভাবতে লাগলো কি করে বাহিরে যাওয়া যায়?
কারন আজ বাহিরে না গেলে ওরা দুই ভাই ভীষণ মন খারাপ করবে।কারণ তাদের কে কেউ একটু সময় দেয় না।
ইভান অতশীকে এমন চুপচাপ থাকা দেখে বললো,কি ভাবছো এতো?
–না কিছু না।
ইভান তখন বললো, তুমি কি আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছো?
–কই না তো?
ইভান তখন অতশীর হাত ধরে টেনে তার কোলের উপর বসালো।আর বললো, আমার হুকুম ছাড়া এক পাও এগোবে না।বুঝেছো?
অতশী কোনো উত্তর না দিয়ে জড়োসড়ো হয়ে থাকলো।কারন সে ইভানের একদম অনেক কাছে আছে।সেজন্য ভীষণ অস্বস্তি ফিল করতে লাগলো।সে কোনো উত্তর দিতে পারলো না।
#চলবে,
এখন গল্প কোন সময়ে দিলে ভালো হবে সবাই জানাবে প্লিজ।