অনুভূতিতে তুমি পর্ব-৭

0
3422

#অনুভূতিতে_তুমি 💖
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৭

“ওহ আচ্ছা তাহলে এখন তোমার কাছে কি আমার এসব শিখতে হবে। তবে হ্যাঁ তুমি কিছু খুব ভালো একটা টিচার হবে। কিভাবে অন্যের ছেলেকে নিজের ছেলের বাবা বানানো যায় এটা তোমার চেয়ে ভালো আর কে করতে পারবে বলো।

উপস্থিত সবার সামনে চেঁচিয়ে কথা গুলো বলল তমা। মেহেরিন অবাক হয়ে গেছে তমার কথা শুনে। অর্ণব তমার চেঁচামেচি’র আওয়াজে ভয়ে আকড়ে ধরে আছে মেহেরিন কে। নির্ঝর সবে ভেতরে এসে এসব কথা শুনে থমকে যায়।

খানিকক্ষণ আগে…

মেহেরিন এসে একটা সফট ড্রিংকস ওর্ডার করল। পরপর’ই নির্ঝর আসলো। সেও একটা সফট ড্রিক অর্ডার করল। মেহেরিন তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আবারো সামনে ফিরল। সবাই নাচছে! নির্ঝর মেহেরিন’র পাশে দাঁড়িয়ে গানের তালে মাথা নাড়ছে। হঠাৎ মেহেরিন’র কানের কাছে গিয়ে বলল,

“তোমায় দেখতে খুব সুন্দর লাগছে।

মেহেরিন নির্ঝরের দিকে ফিরে বলে,
“আমি জানি আমি সুন্দরী!

“আমার মতো এতো সুন্দর করে কেউ কখনো বলেছে তোমায়!

“সবার বলা আর আপনার বলার মাঝে পার্থক্য আছে।

“আছে! কেউ কি কখনো তোমায় বলেছে তুমি চাঁদের মতো স্নিগ্ধ, ফুলের পাপড়ির মতো নরম। ( মেহেরিন’র একটু কাছে এসে ) তোমার এই হরিণী চোখ, যা কারো নজর কারতে বাধ্য। যে কেউ তোমার এই চোখের প্রেমে পড়বে!

মেহেরিন হেসে উঠে। নির্ঝর ভাবে মেহেরিন হয়তো পটে গেছে। কিন্তু না! নির্ঝর কে ভুল প্রমাণ করে মেহেরিন বলে উঠে,

“নির্ঝর একটা কথা মনে রাখবেন , আমি আপনার গার্লফ্রেন্ড না যে আপনার এইসব কথায় এক নিমিষেই পটে যাবো।

মেহেরিন’র কথায় নির্ঝর চুপ হয়ে গেল। সে বুঝে গেছে মেহু কে এতো সহজে পটাতে পারবে না। আর সবার মতো সে না। তাকে পটাতে গেলে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। এর মাঝেই ড্রিংক এসে পড়ল। নির্ঝর ড্রিংক’র গ্লাস টা নিয়ে মুখে দিল।

কয়েকজন বন্ধু ইতিমধ্যে এসে পড়ল মেহেরিন’র সাথে কথা বলতে। মেহেরিন আর নির্ঝর কে একসাথে দেখে খুব প্রশংসা করে।তবে তারা মেহেরিন’র ছেলে নিয়ে কোন কথা জিজ্ঞেস করল না। নির্ঝরও হেসে হেসে সামনে তাকাল। কারন তার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে আছে অনামিকা। বেশ লাগছে এভাবে অনামিকা কে জ্বালাতে।
.
কাপল ডান্স শুরু হলো। একে একে সব কাপল’রা এগিয়ে যাচ্ছে। অনামিকা ও বাদ পড়ে নি। নির্ঝর মেহেরিন কে তার সাথে যাবার কথা বলল। কিন্তু মেহেরিন সাথে সাথে না করে দিল। নির্ঝর মুখ বেজার করে সেখানেই বসে রইল। হুট করেই তমা এলো। তার সাথে নাচার জন্য নির্ঝর কে অফার করল তাও মেহেরিন’র সামনেই। মেহেরিন খানিকটা অবাক হলো। তার মনে হচ্ছে এখানকার প্রত্যেক’ই তাকে অপমান করতে উঠে পড়ে লেগেছে।

নির্ঝর তমা কে না করে দিয়ে বলে উঠে,

“তমা.. আমার লাইফ পার্টনার আমার সাথে দাঁড়ানো তাকে রেখে তোমার সাথে ডান্স করব কিভাবে!

নির্ঝরের কথার ধারায় তমা’র রাগ হলো। সে কিছু না বলে সরে গেল সেখান থেকে। নির্ঝর এবার মেহেরিন’র অনুমতি না নিয়েই তাকে নিয়ে চলে গেল নাচার জন্য। নির্ঝর মেহেরিন’র হাত খানা ধরে নিজের কাঁধে রাখতেই মেহেরিন হাত সরিয়ে ফেলতে চাইলো। নির্ঝর শক্ত করে মেহেরিন’র হাত ধরে নিজের কাঁধে রেখে মেহেরিন’র কানের কাছে বলল,

“সিন ক্রিয়েট করো না। আমি আর তুমি এখন না নাচলে অনেক কথা হবে এই নিয়ে!

“অনেক কথা না বলুন আপনার বন্ধুরা আপনাকে কথা শুনাবে।

“জানো যখন তখন আমাকে হেল্প করো যাতে ওদের কথা শুনতে না হয়।

“কিছু আমি..

“প্লিজ মেহু!

মেহেরিন কিছু বলতে গিয়েও বলল না। নির্ঝর মেহেরিন’র কোমরে হাত রাখতেই মেহেরিন কেঁপে উঠলো। শক্ত করে নিল নির্ঝরের কাঁধে রাখা হাত খানা।তারা দুজনেই একসাথে নাচল কিন্তু কিছুক্ষণ! কিন্তু সবাই নাচ থামিয়ে ওদের নাচ’ই দেখতে লাগল। তাদের নাচ শেষ হবার পর সবাই একসাথে হাত তালি হলো। মেহেরিন হেসে সেখান থেকে এক কোনে চলে এলো। নির্ঝর ও এলো তার সাথে সাথে। মেহেরিন নির্ঝর কে বলল,

“একটু কল করে অর্ণবের খবর টা জানুন। খুব চিন্তা হচ্ছে অনেকক্ষণ তো হলো।

“আচ্ছা আমি কল করে আসছি!
বলেই নির্ঝর বাইরে চলে গেল। মেহেরিন একাই দাঁড়িয়ে রইল সেখানে। তখন’ই অনামিকা এলো সেখানে! তাকে দেখে বলে উঠল,

“মনে হচ্ছে বেশ ভালোই আছো। আসলে কি বলোতো আমি তোমাকেই প্রথম দেখলাম যে কি না অন্যের জিনিস নিয়ে এতোটা ভালো আছে।

মেহেরিন প্রথম ভাবল কিছু বলবে না। এড়িয়ে যেতে চাইলো কিন্তু পরক্ষণেই অনামিকা আবারো বলে উঠে,

“নিজেকে খুব সুন্দরী ভাবো।

মেহেরিন হেসে বলে উঠে,
“আমি সুন্দরী, কিন্তু কথা হলো এখানে কে সুন্দর সেটা না।

“ওহ আচ্ছা এখন তাহলে জ্ঞান দিবা।

“তোমাকে জ্ঞান দেবার প্রশ্ন উঠে না। তুমি যথেষ্ট বুদ্ধিমান তাইতো নিজ থেকেই সরে গেলে।

“তুমি জানো, আমাকে তুমি বাধ্য করেছ!

“বাধ্য করি নি, এটা তোমার সিদ্ধান্ত ছিল। ধরতে গেলে আমি এই বিষয় নিয়ে তোমাকে কোন কথাই বলি নি। তুমি নিজের বিলাসিতার কথা ভেবে ভালোবাসার কথা ভুলে গেছ এই তো।

“মেহেরিন!

“অনামিকা উঁচু গলায় কেউ আমার সাথে কথা বলে না তুমিও সে চেষ্টা করো না।

হঠাৎ করেই গান বন্ধ হয়ে গেল। মেহেরিন আর অনামিকা খানিকটা অবাক হলো। কারো চিৎকারের আওয়াজ পাওয়া গেল। তমা চেঁচাচ্ছে কিন্তু কার উপর। মেহেরিন উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করতেই চমকে উঠে। এটা তো অর্ণব। মেহেরিন দ্রুত সেখানে যায়, অর্ণব মেহেরিন কে দেখেই মাম্মি ডেকে তাকে জরিয়ে ধরে।

মেহেরিন তাকিয়ে দেখে তমা’র ড্রেসে আইসক্রিম জাতীয় কিছু লেগে আছে। খেয়াল করল অর্ণবের হাতেও আইসক্রিম। তখনই প্রবেশ ঘটল ফরহাদের। ফরহাদ অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বলে,

“অর্ণব ঠিক আছো ‌

মেহেরিন হাঁটু গেড়ে বসে অর্ণবের কান থেকে ইয়ারফোন সরিয়ে দেয়। মূলত ইয়ারফোন অর্ণবের কানে ছিল বলে এখানকার চিৎকার চেঁচামেচি সে শুনতে পাই নি। এটা ঈশানের প্ল্যান ছিল যাতে এখানে অর্ণব কে নিয়ে আসতে পারে। অর্ণব হাতে আইসক্রিম নিয়ে মেহেরিন’র কাছেই ছুটে আসছিল কিন্তু মাঝখানে তমা চলে আসে। আর তার হাতের আইসক্রিম তমার আইসক্রিম’এ পড়ে। এতেই তমা তুলকালাম কান্ড শুরু করে।

মেহেরিন অর্ণব’র মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

“অর্ণ সোনা ঠিক আছো।

অর্ণব মাথা নাড়ে। তমা কর্কশ গলায় বলে উঠে,
“ওর কি হবে, ও তো ঠিক’ই আছে মাঝখান থেকে আমার ড্রেস’র বারোটা বাজিয়ে দিল।

তমা কথা বলার ভঙ্গিতে অর্ণব ভয় পেয়ে মেহেরিন’কে জরিয়ে ধরে। মেহেরিন তমা’র দিকে তাকালেই তমা চুপ হয়ে যায়। অর্ণব’র মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে,

“অর্ণ আন্টির ড্রেসে তুমি আইসক্রিম ফেলেছ?

তমা বলে উঠে,
“আমি কি মিথ্যে বলছি নাকি। তুমি আর তোমার ছেলে এখন কি আমায় মিথ্যেবাদী প্রমাণ করতে চাও

ফরহাদ বলে উঠে,
“তমা!

তমা আবারো চুপ হয়ে যায়। মেহেরিন অর্ণব কে আবারো জিজ্ঞেস করে,

“বাবা, বলো!

অর্ণব মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। তমা বলে উঠে,
“যাক স্বীকার তো করল।

মেহেরিন হেসে অর্ণব’র মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“অর্ণ সোনা দোষ করলে সরি বলতে হয়। তুমি দোষ করেছ আন্টি কে সরি বলো।

অর্ণব তমার কাছে গিয়ে বলে,
“সরি আন্টি!

তমা বিরক্ত মুখে অর্ণবের দিকে তাকায়। অর্ণব আবারো দৌড়ে চলে আসে মেহেরিন’র কোলে। তমা ভ্রু কুঁচকায়। মেহেরিন দাঁড়িয়ে তমা কে বলে,

“তমা এখন তুমি অর্ণব কে সরি বলো।

“আমি! আমি কেন বলবো।

“ওর সাথে খারাপ ভাবে কথা বলেছ তাই।

“তোমার কোন ধারনা আছে মেহেরিন তোমার ছেলে আমার প্রিয় ড্রেস টার উপর কিভাবে আইসক্রিম ফেলে নষ্ট করে দিয়েছে। দোষ তোমার ছেলে করেছে আর তুমি বলছো আমায় সরি বলতে।

“আমার ছেলে দোষ করে সরিও বলেছে কিন্তু তুমি হয়তো জানো না একটা বাচ্চার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়।

“ওহ আচ্ছা তাহলে এখন তোমার কাছে কি আমার এসব শিখতে হবে। তবে হ্যাঁ তুমি কিছু খুব ভালো একটা টিচার হবে। কিভাবে অন্যের ছেলেকে নিজের ছেলের বাবা বানানো যায় এটা তোমার চেয়ে ভালো আর কে করতে পারবে বলো।

মেহেরিন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তমার দিকে। ফরহাদ তমা কে একবার থামানোর চেষ্টা করলেও লাভ হয় না। এর মাঝেই নির্ঝর প্রবেশ করে। তার পিছু পিছু ঈশান আর আরিফ। নির্ঝর এসে দাঁড়ায় মেহেরিন’র কাছে। অর্ণব নির্ঝর কে দেখেই ড্যাডি বলে তার কাছে চলে যায়। তমা বলে উঠে,

“বাহ ছেলে কে খুব ভাল ট্রেনিং ও দিয়েছ দেখছি। এটাও শিখতে হবে তোমার কাছে।

নির্ঝর এসব শুনে রেগে বলে উঠে,
“তমা কি বলছো এসব!

অর্ণব কেঁপে উঠে। তমা ন্যাকামি করে নির্ঝর কে বলে,
“ও এখন তো সব দোষ আমার। কিন্তু এই ছেলে টা যে কি করলো সেটা কেউই দেখছে না। আমি কি করছি না করছি সবাই দেখছে।

নির্ঝর তমা’র ড্রেসের দিকে তাকিয়ে বলে,
“তোমার ড্রেস নষ্ট হলে ঠিক করা যাবে কিন্তু একটা বাচ্চা কে কষ্ট দিয়ে কথা বললে সেটা কখনো ঠিক করা যাবে না।

তমা বলে উঠে,
“তুমিও তো দেখছি এই বাচ্চাটা কে নিজের ছেলে বলে মেনেই নিয়েছ। তা ভালোই করেছ এছাড়া আর কিই বা করতে তুমি। যদি একজন এসে তোমার গলায় ঝুলে পড়ে তাহলে তোমার কি করা উচিত।

নির্ঝর তমা কে ধমক দিয়ে বলে,
“তমা! আর একটা কথা বলবে না তুমি!

বেচারা অর্ণব দুজনের এমন কথা বার্তায় ভয়ে কাঁপতে থাকে। মেহেরিন অর্ণব কে নিজের কাছে টেনে তার কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে দেয়। অতঃপর অর্ণবের কপালে চুমু খেয়ে বলে,

“অর্ণ সোনা ভয় পেয়ো না আমি এখানেই আছি। মাম্মি! মাম্মি তোমার সাথেই আছি! বাবা টা আমার!

বলেই অর্ণব কে জরিয়ে ধরে। অর্ণব ও জরিয়ে ধরে তাকে। তমা কিছু বলতে নিলে মেহেরিন তমা’র দিকে তাকিয়ে বলে,

“নিজের মুখ থেকে আর একটা শব্দ বের করলে তোমার জিহ্ব টেনে ছিঁড়ে ফেলবো আমি!

মেহেরিন’র মুখে এমন কথা শুনে আশপাশের সবাই থমকে যায়। নির্ঝর অবাক হয়ে মেহেরিন কে দেখে। তমা আরো বিরক্ত হয়ে কিছু বলতে নিবে তার আগে মেহেরিন অর্ণব’র গালে হাত কপালে আবারো চুমু খায়। অতঃপর ফরহাদের কোলে অর্ণব কে দিয়ে বলে,

“আপনি ওকে নিয়ে একটু গাড়ির কাছে যান আমি আসছি! ফরহাদ অর্ণব কে নিয়ে বাইরে চলে যায়। মেহেরিন এবার দাঁড়িয়ে তমা’র দিকে তাকায়। তার ড্রেসের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠে বলে,

“তোমার ড্রেসের চেয়ে আমার ছেলের পোশাকের দাম ও অনেক বেশি এটা জানো।

“কি বললে তুমি!

“তুমি যেটা শুনলে ঠিক তাই বলেছি। একটু আগে কি বললে না আমার কাছে তোমার অনেক কিছু শিখার আছে হ্যাঁ আসলেই শিখার আছে। আমার কাছ থেকে তোমার এটা শেখা উচিত কিভাবে নিজের আত্নসম্মান বোধ টিকিয়ে রাখা যায়।

“হাউ ডেয়ার ইউ! তুমি বলতে চাইছো আমার আত্নসম্মান নেই।

মেহেরিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তমা’র কাছে গিয়ে বলে উঠে,
“এক ছেলের সাথে ব্রেকফাস্ট আবার দুপুরে অন্য ছেলের সাথে লাঞ্চ সাথে আবারো আরেক জনের সাথে ডিনার! এরকম মেয়েদের আত্নসম্মান বোধ থাকে।

“মেহেরিন!

“চেচাবে না। চেঁচিয়ে কথা বলা আমি পছন্দ করি না। তোমার সম্পর্কে আমি কি জানি আর না জানি সেটা তুমি নিজেও জানো না। তোমার ফুল ব্র্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে আমি জানি। আসলে কি বলোতো তোমার ব্যাকগ্রাউন্ড না আমার হবু বরের সাথে জড়িত তাই একটু আধটু খোঁজ খবর নিতেই হয়েছে। এতোদিন আমার হবু বরের টাকায় বিলাসিতা করেছ আর এখন যখন দেখছ তা নেই তখন’ই তোমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

“তুমি তোমার লিমিট ক্রশ করছ!

“লিমিট ক্রস আমাকে শিখিও না। আমার লিমিট আমি জানি কিন্তু তোমার টা বোধহয় তুমি ভুলে গেছ!

তমা কিছু বলতে নিবে তখন’ই মেহেরিন হাত দিয়ে তাকে থামিয়ে দিল। হ্যান্ড ব্যাগ থেকে চেক বই বের করে তাতে নিজের সিগনেচার দিয়ে তমার হাতে গুজে দিয়ে বলল,

“টাকার হিসেব টা না হয় তুমিই বসিয়ে নিও যাতে এরকম ড্রেস আরো দশটা কিনতে পারো।

তমা রেগে হাতের চেক টা গুটিয়ে নেয়। মেহেরিন হেসে বলে,
“এই তো গুড গার্ল। তবে তমা তুমি একটা কাজ ভালো পারো সেটা হলো কিভাবে অন্যের টাকার জন্য নাচতে হয় আমি মেহেরিন বর্ষা খান এটা ভালো জানে কিভাবে টাকার জোরে অন্যদের নাচাতে হয়। আকাশ পাতাল তফাৎ তোমার আর আমার মাঝে তাই লাগতে এসো না। নাহলে… ( তমার গাল টেনে বলে ) অনেক সুন্দর কিন্তু দেখতে তুমি!
বলেই একটা বাঁকা হাসি দেয়!

অতঃপর মেহেরিন বের হয়ে যায় ক্লাব থেকে। সবাই এতোক্ষণ নিশ্চুপ দর্শকের মতো সবকিছু দেখছিল। নির্ঝর ও তাই! মেহেরিন যেতেই তমা’র দিকে বিরক্ত চোখে তাকিয়ে স্যুট খুলে ঈশানের হাতে রেখে দৌড়ে বের হয়ে যায়। এদিকে তমা রাগে ফুসফুস করতে থাকে।

মেহেরিন ক্লাব থেকে বের হয়ে এসে গাড়ির দিকে চলে যায়। সেখানে এসে দেখে ফরহাদ অর্ণব কি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেহেরিন কে দেখে অর্ণব মাম্মি বলে ডাকে। ফরহাদ তাকে কোল থেকে নিচে নামিয়ে দেয়। অর্ণব দৌড়ে আসে মেহেরিন’র কাছে। মেহেরিন মুচকি হেসে ফরহাদ কে ধন্যবাদ দেয়। অতঃপর গাড়ির দরজা খুলে পিছনের সিটে অর্ণব কে বসিয়ে সিটবেল্ট বেঁধে দেয়। ফরহাদ বলে উঠে,
“চলে যাচ্ছ!

“হুম অনেক রাত হয়ে গেছে এখন চলে যাবো!
বলেই মুচকি হাসে। অতঃপর মেহেরিন সামনে সিটের দরজা খুলতেই নির্ঝর এসে ডাক দেয়..

“মেহু!

মেহেরিন দরজা বন্ধ করে নির্ঝরের দিকে তাকায়। সাদা শার্টের গলায় খোলা টাই টা ঝুলছে। দৌড়ে আশায় চুলগুলো সব এলোমেলো হয়ে আছে। নির্ঝর কে দেখে ফরহাদ চলে যায় সেখানে থেকে। নির্ঝরের গলা পেয়ে অর্ণব বলে উঠে,

“ড্যাডি!

“অর্ণ!

“অর্ণ সোনা ড্যাডি কে টাটা দাও আমরা চলে যাচ্ছি।

গাড়ির ভেতর থেকেই অর্ণব দু হাত নেড়ে নির্ঝর কে বিদায় দেয়। মেহেরিন গাড়িতে ঢুকতে যাবে নির্ঝর আবারো ডাকে মেহেরিন কে। মেহেরিন গাড়ির দরজা বন্ধ করে নির্ঝরের কাছে হেঁটে আসে। নির্ঝর বলে উঠে,

“মেহু সরি, আই’ম সো সরি। সত্যি জানতাম না তমার এতো ক্ষোভ ছিল তোমার।

“ক্ষোভ থাকা টা অস্বাভাবিক কিছু না। কিন্তু নির্ঝর.. ( একটু থেমে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে ) এইভাবে আমাকে আর আমার ছেলে কে অপমান না করলেও পারতেন!

নির্ঝর মেহেরিন’র এই কথার জন্য একদম প্রস্তুত ছিল না। সে কিছু বলতে যাবে কিন্তু তা শোনার অপেক্ষা মেহেরিন করল না। সে তৎক্ষণাৎ সেখান থেকে হেঁটে গাড়িতে গিয়ে বসল। গাড়ি স্টার্ট দিল , নির্ঝর দূর থেকেই মেহু বলে ডাকল কিন্তু তা মেহেরিন’র কানে পৌঁছাল না। মেহেরিন চলে গেল। অর্ণব হাত নাড়িয়ে আবারো বিদায় জানাচ্ছে নির্ঝরকে। নির্ঝর ঠোঁটের কোনে হাসি রেখে হাত নাড়িয়ে বিদায় দিচ্ছে অর্ণব কে।

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here