অনুভূতিতে তুমি পর্ব-৮

0
3401

#অনুভূতিতে_তুমি 💖
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৮

ঘরটা অন্ধকার তবে বেশি না। আবছা আবছা আলোতে কিছুটা হলেও দেখা যাচ্ছে। এই আলোর মাঝে হেঁটে চলেছে মেহেরিন। তার গন্তব্য কোথায় সে নিজেও জানে না তবে তার পা ঠিক’ই চলছে। ঘরটা বেশ চিনা চিনা লাগছে। মেহেরিন’র শরীর শিউরে উঠছে। ঘেমে একাকার সে কিন্তু এখানে বেশ ঠান্ডা অনুভব করছে সে। অস্থিরতার বাড়ছে তার। ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। মন চাইছে না সামনে যেতে তবুও যাচ্ছে। সামনের একটা ঘর থেকে আলো এসে পড়ছে। এই আলোতেই ঘরের চারদিক আলোকিত। মেহেরিন সেই ঘরের দিকে যত’ই এগিয়ে যাচ্ছে ততোই তার ভয় হচ্ছে। কিছু একটা হতে চলেছে। শুকনো ঢোক গিলে ঘরের দিকে দাঁড়াল সে। মাথা উঁচু করে সামনের দিকে তাকানোর সাহস হয় নি। অনেক সুন্দর ঘ্রাণ আসছে। বেলী ফুলের ঘ্রাণ! ঘ্রাণটা অনেক জোরালো। মনে হচ্ছে আশপাশ বেলি ফুলের গাছ আছে। মেহেরিন চোখ তুলে সামনে তাকাতেই চমকে উঠলো। দুহাত দিয়ে আটকে ধরল মুখ। চেঁচাতে মন চাইছে তবু পারছে না। চোখ গুলো কেমন শক্ত হয়ে আছে। তার সামনে ফ্যানের সাথে ঝুলছে তার প্রিয় মানুষটি। মেহেরিন’র উচিত সেই শোকে কান্না করা কিংবা তাকে গিয়ে জরিয়ে ধরা কিন্তু সে কিছুই করছে না। যেখানে আছে সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। নিঃশ্বাস বন্ধ করে যাচ্ছে পুরো শরীর কাঁপছে তার। মনে হচ্ছে মৃত্যু তার সামনে এসে দাড়িয়ে আছে। তার মৃত্যু আজ অনিবার্য। কিন্তু না, তাকে মরলে তো হবে না। তাকে বাঁচতে হবে। মেহেরিন মুখের হাত ছেড়ে দিয়ে ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে। মনে হচ্ছে এইবার বেঁচে যাবে সে। পিছনে আগাতেই হুট করেই মেঝেতে পড়ে গেল সে। সামনে তাকিয়ে দেখে লাশটা চোখ খুলে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। কি ভয়াবহ দৃশ্য। মেহেরিন কে দেখে সে হাসছে। এই ভয়াবহ দৃশ্য নিমিষেই উধাও হয়ে গেল। তার হাসিটা খুব সুন্দর। খুব সুন্দর মিষ্টি হাসি। মেহেরিন অভিভূত হয়ে দেখছে সেই হাসি। ইশ্ কতোদিন পর আজ দেখলো সেই হাসি। অনুরুপ অর্ণব’র মতো হাসি। কিন্তু সেই হাসিও চলে গেল মুখ থেকে। মেহেরিন’র শরীর আবারো শিউরে উঠলো। কেন জানি মনে হচ্ছে লাশটা তার কাছেই আসছে। না আর না, চট করেই বিছানা ছেড়ে উঠে গেল মেহেরিন। ঘন ঘন শ্বাস নিয়ে সামনে তাকাল। এর্লাম বাজছে। মেহেরিন এর্লাম ঘড়ির দিকে তাকিয়ে এর্লাম বন্ধ করল। ভোর হয়ে গেছে।পর্দার আড়াল থেকে মৃদু আলো এসে পড়ছে বিছানায়। গুটিশুটি মেরে অর্ণব শুয়ে আছে তার পাশে। মেহেরিন ঘেমে একাকার। বিছানা ছেড়ে নিচে নেমে দাঁড়ালো। খুব ভয়ংকর স্বপ্ন দেখলো সে। এমনটা আগেও হয়েছে। যতবার স্বপ্ন টা দেখে ততোবার’ই ভয়ে শিউরে উঠে সে। কিন্তু এতো তার প্রিয়জন। তাকে ভয় পাবার কি আছে! স্বপ্ন থেকে জাগলে মন চায় কেন তাকে একবার ছুঁয়ে দেখলো না‌। কিন্তু ভয়ে তার কাছেই যাওয়া হয় তার। এরকম টা হবার কথা না। বেঁচে থাকাকালীন যাকে ছাড়া এক মুহুর্ত চলতে পারতো না তার লাশ কে দেখে মেহেরিন তার গাঁয়েও ঘেঁসতে চায় না। এ যে অন্যায়। এটাই কি তার ভালোবাসা তার প্রতি!

সকালের এই তিক্ততা মেহেরিন কে এতোটা ঘাবড়ে দিতে পারে নি। মেহেরিন নিজেকে অনেকটা শান্ত করে ফেলেছে। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সুবিশাল আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিয়েছে। উপভোগ করেছে ভোরের আগমনেকে। সব ক্লান্তি যেন নিমিষেই কেটে গেল। মেহেরিন এবার হাঁটতে হাঁটতে রুমে এলো। পর্দা সরাতেই আলো এসে পড়ল অর্ণব’র মুখে। অর্ণবের চোখ মিনমিন করছে। তার মানে অর্ণব জেগে গেছে। তবুও চাদর দিয়ে মুখ ঢেকে ওপাশ হয়ে শুয়ে পড়ল সে। মেহেরিন’র ঠোঁটের কোনে এবার হাসি ফুটল। সে খুব জোরে হেঁটে হেঁটে অর্ণবের বিছানার কাছে গেল। অর্ণব মেহেরিন’র আসার আওয়াজ পেল। সে আরো গুটিসুটি হয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইল। খানিকক্ষণ পার হবার পর মেহেরিন কে কিছু করতে না দেখে চাদরের নিচ থেকে উঁকি দিল মুখখানা। আশপাশ তাকিয়ে মেহেরিন কে দেখতে পেলো না। তার ছোট মাথাতে এই রহস্য ঢুকলো না। উঠে বসে পড়ল সে। মাথা ঘুরিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখে তার বিছানার পাশে মেহেরিন বসে আছে। তার দিকে তাকাতেই মেহেরিন তাকে চমকে দেবার জন্য বলে উঠলো ,

“ভাউউ!

বেচারা অর্ণব চমকে উঠলো। ধপাস করে শুয়ে পড়ল বিছানায়। মেহেরিন বিছানায় উঠে অর্ণব কে নিজের কোলে তুলে নিল। অর্ণব দুই বাহু দ্বারা মুখটা ঢেকে নিল। মেহেরিন তার বাহুতে হাত বুলিয়ে শুড়শুড়ি দিতে লাগল। অর্ণব মুখ ঢাকা অবস্থায় হেসে উঠলো। তার হাসির আওয়াজে মুখরিত পুরো ঘর। মেহেরিন তার হাত ধরে মুখখানা সরাতেই অর্ণব বলে উঠে,

“ভাউ!

মেহেরিন চোখ বড় বড় করে হেসে উঠে। অর্ণব তার হাসির সাথে তাল মিলায়। তার দুঃস্বপ্ন কেটে যায় সকালের এই স্নিগ্ধ মূহূর্তে!
.
গতকাল রাতে সোফায় ঘুমিয়ে পড়েছিল নির্ঝর। হাতে থাকা বিয়ারের বোতলটা হাত থেকে মেঝেতে কখন পরে গেল মনে নেই। ঘুম থেকে উঠে নিচে তাকিয়ে দেখে বিয়ায়ের বোতল থেকে বিয়ার পরে আছে চারদিকে।

নির্ঝর পাশ দিয়ে সোফা থেকে নেমে বিছানার কাছে যেতে নিল। পরক্ষনেই আয়নায় নিজেকে দেখে গতকালের ঘটনা মনে পড়ল। গতকালের সাদা শার্ট আর টাই এখনো তার গলায় ঝুলছে। মাথার চুল উসকোখুসকো হয়ে আছে। মেহেরিন’র গতকালের কথা মনে পড়তেই মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে পড়ল। রাগ হচ্ছে খুব রাগ। মেহু কিভাবে পারল তাকে এই কথা বলতে। এসব কথা তো সে স্বপ্নতেও ভাবিনি। হ্যাঁ এটা ঠিক এমন ঘটনা তার সাথে এই প্রথম ঘটেছে তাই অর্ণব কে মেনে নিতে সময় হচ্ছে তাই বলে কি সে পিছিয়ে পড়ছে। না সে চেষ্টা করছে, কিন্তু তার এই চেষ্টার পরও মেহেরিন কিভাবে তার উপর এই অন্যায় অভিযোগ করে। চোয়াল শক্ত করে বসে রইল নির্ঝর। মন চাচ্ছে এখন গিয়ে মেহুর সাথে ঝগড়া করলে মেজাজ ঠিক হতো তার। দু’চারটে কথা শুনাতে পারলে মাথা ঠান্ডা হতো। বলে দিয়ে আসতো তমা তো ভুল কিছু বলে নি। তবে হ্যাঁ একটু বেশিই বলেছে যা একদম বলা উচিত ছিল না। অন্যের ছেলে প্রথম দেখাতেই তাকে ড্যাডি বলে ডাকে। মেহু এটা শিখিয়ে দেই নি কে বলতে পারে। তারপর বিয়ে করতে চাইছে তাকে তাও একবছরের জন্য সারাজীবনের জন্য না। এর মানে কি তাকে ব্যবহার করতে চাইছে। সে কি পুতুল নাকি যে কেউ তার ইচ্ছে মতো তাকে ব্যবহার করবে। এসব কথা বলা উচিত ছিল। ছিল বলছি কি বলবে! নির্ঝর এসব কথাই মেহেরিন কে বলবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ঝগড়ার সময় এসব পয়েন্ট গুলো মনে থাকবে না। টেবিলে থাকা কলম টা হাতে নিল। পেপার খুঁজতে লাগল এসব কথা পেপারে লিখে রাখবে। দরকার পড়লে কাগজ থেকে পরে পরে মেহুকে শোনাবে তবুও শোনাবে।

একে একে সব পয়েন্ট পেপারে লিখলো। ভালোই লেগেছে পুরো একটা কাগজ। পুরোটা কথা শোনাবে মেহুকে। মেহু কোনমতে পারে না তাকে কন্ট্রোল করতে। নির্ঝর চৌধুরী কে কেউই পারবে না তার কট্রোলে রাখতে মেহু তো কোন ছাড়!

বলেই বাকা হাসি দিল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এলোমেলো চুল গুলো কে আরেকটু এলোমেলো করল। এভাবে নিজেকে দেখে হেসে দিল নির্ঝর। বেশ কিউট লাগছে তাকে। এভাবে যে কেউই দেখলে তার প্রেমে পড়বে। শুধু ওই মেহু বাদে! হুহ!

হুট করেই নিজের ফোনের কথা মনে পড়ল। এখন অবদি কেউই ফোন করল না তাকে। এটা হতে পারে না। নির্ঝর ফোন খোজায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল। পুরো ঘর অগোছালো তার। এর মাঝে ফোন কোথায় পড়ে আছে বোঝাবার উপায় নেই। অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর ফোনটা পেল। ফোন স্ত্রিনে ১৫০ টা মিসকল। কিছু কল কথার আর বাকিটা তমা’র‌। ফোনটা এবার বেজে উঠলে নির্ঝর তা ধরল। তমা’র কল! ফোন কানে দিতেই ওপাশ থেকে তমা বলে উঠে ,

“অবশেষে ধরলে!

“সাইলেন্ট ছিল তাই খেয়াল করি নি। কি হয়েছে?

“জিজ্ঞেস করছো কি হয়েছে? গতকালের ঘটনা কি সব ভুলে গেলে।

তমা’র কথায় নির্ঝর ঠোঁট কামড়ে ধরল। গতকালের তমা’র সব কথাই মনে আছে। তমা’র উপরেও তার রাগ আছে। থাকবে নাই বা কেন। একটা বাচ্চার সাথে এভাবে কথা বলে কেউ। অর্ণব এভাবেই মানসিক ভাবে সুস্থ না। এরপর তমার এইসব কথা। অর্ণব নিশ্চিত অনেকটা কষ্ট পেয়েছে। নির্ঝর তবুও কিছুই বলল না। ওপাশ থেকে তমা বলে উঠে,

“কথা বলছো না কেন? তুমি গতকাল ও এভাবে চুপ ছিলে। কিছুই বলো নি। তোমার হবু বউ এতগুলো কথা শোনালো আমায় আর তুমি..

নির্ঝর শান্ত গলায় বলে উঠে,
“আমি কিছু বলে নি এটা তোমার জন্য’ই ভালো হয়েছে। নাহলে পরেরবার নিজের মুখ দেখাতে পারতে না তুমি।

“নির্ঝর!

“কি? কি নির্ঝর! একটা বাচ্চার সাথে কিভাবে কথা বলেছ তুমি সব দেখেছি। এভাবে কেউ বাঁচ্চার সাথে কথা বলে। একটা মেয়ে হবার পরও এতো টুকু দয়া মায়া নেই তোমার মাঝে।

“বাচ্চা টার জন্য খুব দরদ দেখছি।

“আমার ছেলের জন্য আমার দরদ থাকা কি স্বাভাবিক না।

“বাহ তুমি দেখছি নিজের ছেলেও ভেবে নিয়েছ!

“দুঃখের বিষয় এটা তুমি আজ জানলে।

“নির্ঝর!

“হোয়াট!

“তুমি কিন্তু খুব বুদ্ধিমান তবে এই কাজটা কি ঠিক বোকা বোকা লাগছে না।

“ওহ আচ্ছা তাহলে তুমি এখন আমাকে শিখাবে।

“নির্ঝর আমি বলতে চাইছি..

“রাখো তুমি, তুমি কি বলবে আর বলতে চাও তা জেনে আমার লাভ নেই। আমার ভাবতেও অবাক তোমার সাথে আমি এখনো কথা বলছি কেন?

“তুমি আমাকে অপমান করছো?

“এতোক্ষণ লাগলো বুঝতে! তবে একটা কথা মনে রাখবে তোমার সাথে কথা বলতে আমার রাগ লাগছে। একটা বাচ্চার প্রতি যার মাঝে সামান্য মমত্ববোধ নেই তাকে মানুষ হিসেবে গণ্য করাই ভুল।

“নির….

“এরপর আমাকে আর ফোন করবে না!
বলেই নির্ঝর ফোন টা কেটে দিল। যত’ই রাগ থাকুক না কেন মেহুর উপর কিন্তু অর্ণব’র উপর রাগ করে থাকতে পারে না সে।‌ এ কদিনে খানিকটা মায়া’য় জরিয়ে গেছে তার। ইচ্ছে করছে খুব অর্ণব কে দেখতে। ভাবছে দেখতে ইচ্ছে করছে তো গিয়ে দেখে আসলেই তো হয়। এখানে বসে থাকার তো কোন মানে নেই।

নির্ঝর উঠে গেল ফ্রেস হতে। শাওয়ার নিয়ে রুমে এসে তৈরি হলো সে। এর মাঝেই ঘরের দরজায় টোকা পড়ল। নির্ঝর ভেতরে আসতে বলে তাকিয়ে দেখে নীলিমা এসে দাঁড়িয়ে আছে । তার হাতে চায়ের কাপ। নীলিমা অবাক ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে। নির্ঝর হেসে বলে উঠে,

“দেখেছ মম তোমার ছেলে কতো হ্যান্ডসাম!

নীলিমা চায়ের কাপ টা টেবিলে রেখে হেসে বলে,
“ছেলে হ্যান্ডসাম হলে কি হবে তার ঘরের অবস্থা তো একটা পাগলা গারদের চেয়েও খারাপ।

“মম!

নীলিমা বিছানা ঠিক করতে করতে বলেন,
“কোথায় যাওয়া হচ্ছে!

“হুম বাইরে যাচ্ছি।

“কোথায় যাচ্ছিস?

“অর্ণবের কাছে!
বলেই পিছনে ফিরল নির্ঝর। নীলিমা তার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,

“এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?

“অর্ণব’র সাথে তুই সত্যি এতোটা মিশে গেছিস।

নির্ঝর চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে বলে,
“না মিশার কি কারন আছে। তুমি জানো ও কতো কিউট!

“সত্যি!

“হুম কিউটের একটা ডিব্বা!

“এই নির্ঝর ওকে একটু আনবি বাসায় দেখবো।

“তুমি এখনো দেখো নি!

“কি করে দেখবো কে আনবে ওকে শুনি!

“আচ্ছা আনবো একদিন।

“একদিন না আজ’ই আন। রাতে ডিনারের জন্য ইনভাইট কর। মেহেরিন আর অর্ণব দু’জনেই আসুক একসাথে ভালো হবে।

নির্ঝর চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলে,
“একটু বেশি হচ্ছে না।

“তোকে যেটা বললাম সেটা কর!

বলেই নীলিমা বের হয়ে গেল ঘর থেকে।
.
নির্ঝরের গাড়ি এসে পার্ক করে মেহেরিন’র অফিসের সামনে। আজকে তার মুড মারাত্মক। যেভাবেই হোক মেহেরিন’র সাথে ঝগড়া করবেই করবেই। তাকে কথা না শুনালে রাতে তার শান্তিতে ঘুম হবে না। নির্ঝর গাড়ি চাবি হাতে নিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে অফিসের ভেতর ঢুকল। রিসেপশনে যেতেই সেদিনের রমনী কে চোখে পড়ল। মিস নিশা নির্ঝর কে দেখে দাঁড়িয়ে গেল। নির্ঝর তাকে দেখে হেসে বলল,

“হ্যালো মিস নিশা!

নিশা অবাক হয়ে,
“আপনি আমার নাম কিভাবে জানলেন!

“হুমম বলা যাবে না এটা একটা ট্রিক! তো আমার একটা হেল্প করবেন।

“জ্বি স্যার বলুন। ম্যামের সাথে দেখা করবেন।

“ম্যাম আছে অফিসে।

“জ্বি একটু আগেই এসেছে।

“আর অর্ণব!

“সেও এসেছে, তবে খানিকক্ষণ পরেই ডঃ রাহেলা আসবে তাকে নিতে।

“ওহ আচ্ছা!

“তাহলে কি আমি ম্যাম কে আপনার কথা জানাবো।

“না দরকার নেই। শুধু কষ্ট করে ডঃ রাহেলা এলে আমাকে জানাবে। আমি বাইরেই আছি।

“আচ্ছা!

অতঃপর নির্ঝর আবারো বাইরে এলো। গাড়ির ভেতর বসে ডঃ রাহেলা’র আসার অপেক্ষা করতে লাগল। নির্ঝরের মাথায় কিছু একটা ঘুরছিল। সে কিছু একটা করার কথা ভাবছিল। আর তা হলো মেহেরিন কে নাস্তানাবুদ!

ডঃ রাহেলা গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে প্রবেশ করলেন। কিন্তু তখন নির্ঝরের চোখ সেদিকে গেল না কারন তখন তার মন ফোনের দিকে ছিল। হুট করেই গাড়ির কাঁচ এ টোকা দিল কেউ। নির্ঝর তাকিয়ে দেখে মিস নিশা! নির্ঝর হেসে গাড়ির কাঁচ নামিয়ে বলে,

“মিস নিশা!

“জ্বি স্যার!

নির্ঝর গাড়ি থেকে নেমে বলে,
“ডঃ রাহেলা এসেছেন।

“জ্বি খানিকক্ষণ আগেই। এখনই বের হবেন।

“থ্যাংকু!

“ইট’স ওকে স্যার। এটা আমার দায়িত্ব!

“মিস নিশা!

“জ্বি স্যার!

“ইউ লুকিং সো গর্জিয়াস!

মিস নিশা হেসে দিল। নির্ঝর আবারো বলে উঠে,

“আহ তোমার হাসিটা তো আরো সুন্দর। ঠিক তোমার নামে মতোই!

মিস নিশা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। কিন্তু নির্ঝরের ফ্লার্ট করা যেন থামেই না। হুট করেই কারো ডাকে নির্ঝর চুপ হয়ে যায়। সামনে তাকিয়ে দেখে অর্ণব আসছে। তাকে দেখে দৌড়ে দৌড়ে তার কাছে আসছে।

“ড্যাডি!

নির্ঝর হেসে অর্ণব’কে কোলে তুলে বলে,

“অর্ণব সোনা।

নিশা আর অর্ণব দু’জনেই তাকিয়ে দেখে ডঃ রাহেলা আসছেন। নিশা চলে যায় সেখান থেকে। ডঃ রাহেলা নির্ঝর কে দেখে হেসে বলে,

“কেমন আছেন মিঃ নির্ঝর!

“জ্বি ভালো। আপনি?

“হুম আলহামদুলিল্লাহ! তা মেহেরিন’র সাথে দেখা করতে এসেছেন।

“তা তো এসেছি কিন্তু তার সাথে অর্ণবের সাথেও সময় কাটাতে চেয়েছিলাম।

“ওহ কিন্তু অর্ণব কে তো আমি নিয়ে যাবো।

“হুম বুঝতে পারছি। অর্ণব তুমি যাও ডঃ রাহেলা’র সাথে।

কিন্তু অর্ণব যেতে চায় না। সে নির্ঝরের কোলেই তাকে আকড়ে ধরে বসে থাকে। ডঃ রাহেলা ব্যর্থ হয়ে বলে,

“অর্ণব মনে হয় আজ যেতে চাইছে না।

“তাহলে আজ অর্ণব তার ড্যাডি’র সাথেই থাকুক।

“আচ্ছা তাহলে আমি মেহেরিন কে একবার ফোন করে বলে দিই বরং..

“না না দরকার নেই!

ডঃ রাহেলা অবাক হয়ে তাকান। নির্ঝর বলে উঠে,
“মানে আমি তো যাচ্ছি এখন ওর কাছে তাই বললাম। আপনি এতো টেনশন করবেন না,আমি আছি!

“আচ্ছা! বিদায় অর্ণব!

অর্ণব দু হাত নেড়ে টাটা দেয় ডঃ রাহেলা কে। ডঃ রাহেলা চলে যায়‌। নির্ঝর অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বলে,

“তাহলে চলা যাক অর্ণব!

অর্ণব হেসে মাথা নেড়ে সায় দেয়!

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here