#অনুভূতিতে_তুমি 💖
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৯
সূর্যের আলো মাথার উপর চড়ে গেছে। পরিবেশ চারদিক শান্ত আর নিরব। দিনের এই সময়টা চারদিক থাকে নিস্তব্ধ। বাইরে কাঠফাটা রোদ্দুর! কোন পাখির সন্ধান অবদি পাওয়া যাবে না এই রোদে। এমন মনে হয় প্রকৃতি যেন ঘুমিয়ে আছে। ক্লান্ত, নিমজ্জিত এই শহরটা যেন উদাসীন।
মেহেরিন কে খানিকক্ষণ আগেই চায়ের কাপ টা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানে তার খেয়াল নেই। অফিসে এখন লাঞ্চ টাইম চলছে। মেহেরিন ল্যাপটব থেকে চোখ সরিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসল। অনেক ক্লান্ত লাগছে তার। চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে দেখে চায়ের কাপ থেকে ধোঁয়া উড়ছে। চা টা এখনো গরম আছে তাহলে। মেহেরিন চেয়ার থেকে এবার উঠে দাঁড়াল। হাতে মুখে পানি ছিটিয়ে আবারো এসে বসল। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ফোন বের করল।
অর্ণবের আসার সময় হয়ে গেছে। মেহেরিন অর্ণবের জন্য অপেক্ষা করতে করতে চা টা শেষ করল। কিন্তু অর্ণব এখনো এলো না। ভাবছে এক বার ফোন করবে। আবার মনে করল হয়তো জ্যামে গাড়ি আটকে আছে।জ্যামে গাড়ি আটকে যাওয়া অবাস্তব কিছু না। মেহেরিন দাঁড়িয়ে গেল। হাঁটতে হাঁটতে ফাইল দেখছে।
সময় নিজ গতিতে বেয়ে চলছে। অর্ণব এখনো এলো না। মেহেরিন’র এবার চিন্তা হতে লাগল। ডঃ রাহেলা আগে কখনো এমনটা করে নি। অস্বস্তি বোধ করতে লাগলো সে। ফোন টা নিয়ে ডায়াল করল ডঃ রাহেলার নাম্বার। কয়েক বার রিং বাজার পর ফোন টা কেটে গেল। কেউই রিসিভ করল না কলটা। মেহেরিন’র কাছে মনে হলো তার গলায় যেন কাঁটা আটকে গেছে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তার।
কলের উপর কল দিয়েই যাচ্ছে কিন্তু ডঃ রাহেলা কল তুলেছেন না। মেহেরিন’র চিন্তা বাড়তে লাগালো। না এভাবে বসে থাকলে হবে না। গাড়ির চাবি নিয়ে বের হয়ে গেল সে।
মেহেরিন গাড়ি ড্রাইভ করছে আর একটু পর পর’ই কল করছে ডঃ রাহেলা কে। মেহেরিন মাঝরাস্তায় পৌঁছাতেই ডঃ রাহেলা তার কল ধরল। মেহেরিন গাড়ি ব্রেক করে ফোনটা হাতে নিল।
“হ্যালো! হ্যালো ডঃ রাহেলা!
“মেহেরিন! কি ব্যাপার তোমাকে এতো উত্তেজিত লাগছে কেন? সব ঠিক আছে।
“না ঠিক নেই কিছু ঠিক নেই। কখন থেকে ফোন করছি আপনাকে আপনি তো কল’ই ধরেছিলেন না।
“আসলে ফোনটা এখানে রেখে একটু বাইরে গিয়েছিলাম কিন্তু হয়েছে টা কে সেটা বল। অর্ণব ঠিক আছে তো!
মেহেরিন অবাক কন্ঠে বলে,
“সেটা তো আপনি বলবেন, তাই না। অর্ণব তো আপনার সাথে।
“মেহেরিন তুমি মজা করছো?
“ডঃ রাহেলা! আপনি কি আমার গলার আওয়াজ শুনে মনে হচ্ছে আমি মজা করছি।
ডঃ রাহেলা থমকে গেলেন। আসলেই মেহেরিন’র গলার আওয়াজ অনেকটা কেঁপে কেঁপে যাচ্ছে। কথা বলার সময় হয়তো কাঁপছে সে। বেশি চিন্তিত হলে মানুষের এরকম হয়। ডঃ রাহেলা শান্ত গলায় মেহেরিন কে বলেন,
“মেহেরিন তুমি স্ট্রেস নিয়ো না আগে শান্ত হও।
“আপনি অর্ণব কে ফোন দিন। ওর সাথে কথা বলবো।
“দিচ্ছি কিন্তু আগে তুমি শান্ত তো হও। আমার মনে হচ্ছে তুমি অনেকটা টেনশন করছো। এভাবে চলতে থাকলে অসুস্থ হয়ে পড়বে।
“ডঃ রাহেলা আমি একদম ঠিক আছি।
“না তুমি ঠিক নেই। ভুলে যেও না দীর্ঘ ৩ মাস তোমার চিকিৎসা চলেছিল তাও একটানা। একাকিত্বে ভুগছিলে তুমি, তোমার সেই ট্রামা থেকে বের করতে অনেকটা সময় লেগেছিল আমার।
“ডঃ রাহেলা!
“মেহেরিন শোন! অর্ণব আমার কাছেই আছে আর এখানেই আছে। ও খেলছে! আমি ওকে ফোনটা দেবো কিন্তু ও তোমার এই গলা শুনলে চিন্তিত হয়ে পড়বে। তুমি আগে নিজে শান্ত হও। তারপর আমি দিচ্ছি
“তবে একটু আগে যে বললেন আপনার কাছে ও নেই।
“বলছি বলছি সব বলছি। তার আগে একটা কাজ করো। কিছুক্ষণ মাথা ঠান্ডা রাখো। একটু দম নাও। শ্বাস নাও আর নিঃশ্বাস ফেলো। মস্তিষ্ক কে কোনরকম চিন্তা থেকে দূরে রাখো। শান্ত হও!
মেহেরিন কানের কাছ থেকে ফোনটা সরিয়ে নিল। চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিল। অতঃপর চোখ খুলে শীতল গলায় বলল,
“অর্ণব কে ফোন দিন।
“দিচ্ছি তার আগে আমার কথা শোন। পুরো কথা না শুনো রিয়েক্ট করবে না বুঝলে।
“হুম!
“আমি তোমার অফিস থেকে যখন অর্ণব কে বের হলাম তখন….. [ নির্ঝর অর্ণবের সাথে চলে যাবার সমস্ত ঘটনা ] অতঃপর আমার মনে হচ্ছে নির্ঝর হয়তো তোমাকে কথাটা জানাতে ভুলে গেছে। বুঝলে মেহেরিন…
মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে সমস্ত কথা শুনল। সিটের সাথে মাথা হেলান দিয়ে বসে রইল। এদিকে ডঃ রাহেলা বলে যাচ্ছেন,
“হ্যালো মেহেরিন! হ্যালো! তুমি আমাকে শুনতে পারছো!
মেহেরিন সোজা হয়ে বসে কানে ফোনটা ধরে বলে,
“ঠিক আছি! আমি অর্ণবের কাছে যাচ্ছি!
বলেই কলটা কেটে দিল মেহেরিন। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে গাড়ি ঘুরাল। অতঃপর গন্তব্য ঠিক করল চৌধুরী বাড়ি!
চৌধুরী বাড়িতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে মেহেরিন’র প্রায় অনেকটা সময় লাগলো। বাড়িতে পৌঁছানো মাত্র গাড়িটা ব্রেক করে গাড়ি থেকে নামল মেহেরিন। ছুটে গেল বাড়ির ভেতর। সদর দরজা খোলাই ছিল। মেহেরিন বাড়িতে প্রবেশ করেই চারদিক ঘুরতে লাগলো। নীলিমা রান্না ঘর থেকে কারো আসার শব্দ পেয়ে পেয়ে হাত মুছতে মুছতে বাইরে এসে দেখে মেহেরিন। খুব চিন্তিত লাগছিলো তাকে। তাকে দেখে ডেকে উঠল নীলিমা। মেহেরিন নীলিমা’কে কিছু জিজ্ঞেস করার উদ্দেশ্য তার দিকে আগাতেই উপর থেকে অর্ণবের গলার স্বর পেলো। মেহেরিন নীলিমা কে কিছু জিজ্ঞেস না করেই উপরের দিকে দৌড়ে গেল। নীলিমা অবাক ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইল!
.
মেহেরিন দৌড়ে নির্ঝরের ঘরের কাছে এলো। যত’ই ঘরের কাছে আসছে ততোই অর্ণবের গলার হাসির শব্দ আসছে তার কানে। নির্ঝরের ঘরের কাছে যেতেই মেহেরিন শান্ত হলো। ধীরে ধীরে দরজার কাছে এলো সে। বিছানার চাদর নিচে পড়ে আছে। পুরো ঘর অগোছালো। কয়েকটা বালিশ মেঝেতে পরে আছে। মেহেরিন একটা বালিশ হাতে নিয়ে সামনে তাকাতেই দেখে নির্ঝর আর অর্ণব দু’জনেই বিছানায়। বিছানার চারদিক তুলোয় ভরপুর। অর্ণব নির্ঝরের দিকে তুলো ছুঁড়ে মারছে। মনে হচ্ছে দু’জনেই বালিশ থেকে তুলো বের করে খেলছে। অর্ণবের মাথা থেকে পা অবদি তুলোয় ভরপুর। চুল গুলোতে আটকে আছে তুলো। তার মুখে স্নিগ্ধ হাসি! নির্ঝর ও হাসছে। দু’জনের হাসির শব্দে চারদিক মো মো করছে।
মেহেরিন শান্ত হয়ে দরজার সাথে মাথা ঠেকাল। শান্ত গলায় বলে উঠে,
“অর্ণ সোনা!
মাম্মি আওয়াজ পেয়ে অর্ণব থেমে যায়। সামনে তাকিয়ে দেখে মেহেরিন দাঁড়িয়ে আছে। সে মাম্মি ডেকে দ্রুত খাট থেকে নেমে এসে জরিয়ে ধরে মেহেরিন কে। মেহেরিন অর্ণবের কপালে চুমু খেয়ে আকড়ে ধরে তাকে। নির্ঝর অবাক চোখে দেখছে মেহেরিন কে। মেহেরিন’র চোখের কোনে থেকে অশ্রু কণা গড়িয়ে পড়ে। নির্ঝরের চোখ সেটা এড়িয়ে যায় না। মেহেরিন’র এমন অবস্থা দেখে মুখটা মলিন হয়ে যায় তার। মেহেরিন কে নাস্তানাবুদ করতে চেয়েছিল কিন্তু এতে যে মেহেরিন এতোটা ভেঙ্গে পড়বে নির্ঝর তা কখনো ভাবি নি!
.
অর্ণব কে নিয়ে সোফায় বসে আছে মেহেরিন। তার ঠিক সামনে বরাবর বিপরীতে বসে আছে নির্ঝর। তার হাতে একটা কফি মগ। একটু পর পরই কপি মগে চুমুক দিচ্ছে সে। মেহেরিন অর্ণবের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। অর্ণবের হাতে একটা কিউব পাজল। সেটা ঠিক করার জন্য মন প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করছে সে। নীলিমা নাস্তা নিয়ে এসে বসলেন মেহেরিন’র সাথে।
“মেহেরিন নাও খাও!
“না আন্টি আমি খেয়ে এসেছি।
“কিন্তু তোমার মুখ দেখে তো এমনটা মনে হচ্ছে না। অর্ণব কে না দেখতে পেয়ে অনেক টেনশনে ছিলে মনে হচ্ছে।
মেহেরিন হেসে অর্ণব কে আকড়ে ধরে। নীলিমা নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বলে,
“সব দোষ তোর। অর্ণব কে আনলি তো আনলি বলে আনবি না। দেখলি কতোটা চিন্তা করছিলো সে। প্রায় পাগল হয়ে যাচ্ছিল।
নির্ঝর কিছু না বলে চুপ হয়ে যায়। মেহেরিন বলে উঠে,
“বাদ দিন আন্টি। উনি হয়তো ভুলে গিয়েছিলেন। আর অর্ণব ঠিক ছিল এই অনেক।
নীলিমা হেসে অর্ণবের মাথায় হাত বোলাল। অর্ণব অপরিচিত হাতের ছোঁয়া পেয়ে গুটিয়ে গেল। মেহেরিন হেসে দিল। নীলিমা হেসে বলেন,
“মনে হয় অর্ণবের সাথে মিশতে আমার আরো সময় লাগবে।
মেহেরিন হেসে বলে,
“হুম!
.
বিকালের দিকে প্রকৃতি যেন নতুন করে জেগে উঠল। বাইরে মিষ্টি রোদ। হইহই একটা ব্যাপার। মেহেরিন অর্ণব কে নিয়ে বাসায় চলে আসতে চাইলে নীলিমা জোর করল আজ রাতে তাদের বাড়িতে ডিনার করতে। এতো আগ্রহ নিয়ে বলায় মেহেরিন না করতে পারে নি। নির্ঝরের পাশে রুমে মেহেরিন আর অর্ণব’র থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অর্ণব কে নিয়ে বিকেল বেলা বের হলো মেহেরিন। খুব কাছেই একটা পার্ক আছে। সেখানে অর্ণব’কে নিয়ে কিছুক্ষণ কাটাতে চায় সে। কিন্তু পার্কে এসে অন্য বাচ্চাদের মতো খেলতে চায় না সে। এতো সবাইকে একসাথে দেখে ঘাবড়ে যায়। ছোট দুহাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে মেহেরিন কে। মেহেরিন হেসে অর্ণব’র গাল টেনে বলে,
“আমার অর্ণব কাউকে ভয় পায় নাকি। মাম্মি আছে না সাথে। চলো মাম্মি আর অর্ণব একসাথে খেলবে। খেলবে তো!
অর্ণব মাথা নাড়ায়। অতঃপর মেহেরিন ফুটবল নিয়ে অর্ণবের সাথে খেলতে থাকে। হুট করেই আগমণ ঘটে নির্ঝরের। নির্ঝরের হাতে হাওয়াই মিঠাই দেখে অর্ণব দৌড়ে যায় তার কাছে। নির্ঝর হাতে থাকা হাওয়াই মিঠাই টা অর্ণব’র হাতে দিয়ে তাকে বেঞ্চে বসায়। মেহেরিন ফুটবল টা হাতে নিয়ে আসে বেঞ্চের কাছে।
অর্ণব নির্ঝরের একপাশে বসে হাওয়াই মিঠাই খেতে থাকে। নির্ঝরের এপাশে বসে থাকে মেহেরিন। কারো সাথে কথা বলছে ফোনে। হয়তো অফিস সংলগ্ন কিছু! নির্ঝর অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে কখন মেহেরিন’র কথা বলা শেষ হয়। অতঃপর মেহেরিন’র কথা বলা শেষ হলে নির্ঝর বলে উঠে,
“সরি!
নির্ঝরের সরি বলায় মেহেরিন’র তেমন কোন ভঙ্গিতা দেখা গেল না। আগের মতোই বসে রইল। নির্ঝর আবারো বলে উঠে,
“সরি! আসলে আমি বুঝি নি অর্ণবের জন্য এতোটা দুঃচিন্তা করবে তুমি!
মেহেরিন আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
“কতোই না সুখী আপনি নির্ঝর!
নির্ঝর অবাক হয়ে তাকায় মেহেরিন’র দিকে। বলে উঠে,
“কি বললে?
“বললাম আপনি অনেক সুখী। সবকিছু আছে আপনার কাছে। একটা সুন্দর পরিবার, আত্মীয় স্বজন, আদর, রাগ, ভালোবাসা সবকিছু।
“এগুলো কি সুখী মানুষের উদাহরণ!
“জানি না। তবে পৃথিবী বলে যার কাছে এসব আছে সেই সুখী। আর যে এসবের মাঝে সুখ খুঁজে পায় না সে কখনো সুখী হতে পারে না।
“তুমি কোন দলের?
“আমি সেই দলের লোক যাদের শুধু একটি মাত্র আকাঙ্ক্ষা থাকে। থাকে একটাই অবলম্বন! একজন কে নিয়েই বাঁচার স্বপ্ন দেখে সে। আমার সেই একজন হলো অর্ণব। আমার বেঁচে থাকার একটিমাত্র আশা। জানেন মানুষ পানি ছাড়া দু সপ্তাহ আর খাবার ছাড়া ১০ দিন বাঁচতে পারে কিন্তু আশা ছাড়া একমুহূর্ত বাঁচতে পারে না। যতদিন একটা মানুষের আশা থাকে ততোদিন’ই সে বাঁচতে পারে। আমার সেই একটিমাত্র আশা অর্ণব! আমার দুনিয়াতে শুধু অর্ণব আর তার মাম্মির আবাসস্থল এছাড়া আর কেউ না!
বলেই উঠে পরে মেহেরিন। অর্ণবের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“তাহলে এবার বাড়ি ফেরা যাক।
অর্ণব হাতে হাওয়াই মিঠাই নিয়ে মাথা নাড়ায়। মেহেরিন কোলে করে নামায় তাকে। অতঃপর তার ছোট হাত খানা নিজের মুঠোতে করে হাটার জন্য অগ্রসর হয়। কিন্তু এক পা আগাতেই মেহেরিন থেমে যায়। পেছনে ফিরে দেখে অর্ণব নির্ঝরের হাত ধরে আছে। নির্ঝর অর্ণবের হাত ধরে উঠে দাঁড়ায়। অর্ণব তার হাতে থাকা নির্ঝরের অন্য হাতে দিয়ে নির্ঝরের এক হাত আঁকড়ে ধরে। এক হাত মাম্মি আর আরেকহাত ড্যাডি ধরে ধারায় তার খুশি যেন থামতে চায় না। একবার এপাশ ফিরে বলে,
“মাম্মি!
আরেকবার ওপাশ ফিরে বলে,
“ড্যাডি!
দুজনের হাত ধরে এভাবে হাঁটতে চায় সে। মেহেরিন আর নির্ঝর দুজনেই অর্ণবের পায়ের সাথে তাল মিলাতে লাগে। গোধূলির লগ্নে মা বাবার হাত ধরে ছোট একটা বাচ্চা হেঁটে চলছে। এরচেয়ে মুগ্ধকর অন্য কিছু হতে পারে বলে প্রকৃতির জানা নেই। দমকা বাতাস বয়ে যাচ্ছে। গাছের পাতা নিচে ঝড়ে পড়ছে। প্রকৃতি যেন সবটা উজাড় করে দিচ্ছে তাদের!
.
রিদুয়ান চৌধুরী সাহেব আজ যথেষ্ট চেষ্টা করলেন তাড়াতাড়ি পৌছাবার। কিন্তু ইম্পর্ট্যান্টে মিটিং থাকার কারনে তা কোনভাবেই সম্ভব হলো না। খারাপ লাগছে এই কথা ভেবে আজ প্রথমবার মেহেরিন কে তাদের বাসার অতিথি করেছিল সে। কিন্তু সেই মর্যাদা বোধ হয় রাখতে পারল না। একরাশ হতাশা নিয়ে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করল সে। মেহেরিন কে এখনো বাড়িতে দেখে অবাক হলো সে। মেহেরিন সোফায় বসে আছে। তার ছোট কোলের অধিকার নিয়ে ঘুমিয়ে আছে অর্ণব। রাত কম হয় নি। অর্ণব এতোক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে। রিদুয়ান চৌধুরী’র আসতে দেরি হবে শুনে মেহেরিন অর্ণব কে খাইয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে।
খাবার দাবারের পর পরই মেহেরিন চলে যাবে। নির্ঝর ঘরে এসে সেই কাগজটা বের করে দেখছে। দু একটা লাইন আবারো পড়ছে। ঝগড়ার পয়েন্ট গুলো মনে রাখতে হবে তার। মেহেরিন কে আজ কথা না শুনাতে পারলে তার রাতে ঘুম হবে না। আজকের এতো কিছুর পরও ঝগড়ার কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেনি নির্ঝর!
নিচ থেকে ডাক পড়ল তার। কাগজটা পকেটে ঢুকিয়ে বের হলো সে। সবাই খাবার টেবিলে তার জন্য’ই অপেক্ষা করছে। নির্ঝর এসে বসলো মেহেরিন’র পাশে। ঘুমন্ত অর্ণব কে ঘরে শুইয়ে দিয়ে এসেছে মেহেরিন।
খাবার পর্ব সবে শুরু। নীলিমা নিজ হাতে মেহেরিন কে খাবার বেড়ে দিচ্ছে। হবু বউ কে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াবে এই শখ অনেক দিনের। সবাই খাওয়া শুরু করেছে। মেহেরিন মাত্র খাবার মুখে দিল। নীলিমা জিজ্ঞেস করে,
“খাবার কেমন হয়েছে মেহেরিন?
“খুব ভালো, অনেক ভালো রান্না করেন আপনি। অর্ণবের খুব ভালো লেগেছে!
নীলিমা হেসে বলে,
“অর্ণব কে অনেক ভালোবাসো তাই না।
মেহেরিন নীলিমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। নির্ঝর পাশে বসে চুপচাপ খেতে থাকে আর কিভাবে ঝগড়া শুরু করবে তা ঠিক করতে থাকে। নীলিমা গ্লাসে পানি ঢেলে বলে,
“মেহেরিন বোধহয় তোমার বোন কে অনেক ভালোবাসতে, তাই অর্ণব’কে ও এতো ভালোবাসো তাই না!
নীলিমা’র কথা শুনে মেহেরিন থমকে গেল। নির্ঝর খাবার খাওয়া বন্ধ করে অবাক চোখে তাকিয়ে রইল। চারদিকের সবাই চুপ। রিদুয়ান চৌধুরী পরিস্থিতি সামলাতে বলে উঠে,
“নীলিমা, খাবারের সময় এতো কথা বলতে হয় না।
“আমি তো শুধু জিজ্ঞেস করেছি। আচ্ছা মেহেরিন তোমার বোন নাকি আ/ত্ম/হ/ত্যা করেছে! মনে হয় অনেক অ/ত্যা/চা/র করত তোমার বোনের স্বামী। নাহলে এতো সুন্দর একটা বাচ্চা কে রেখে কেউ আ/ত্ম/হ/ত্যা করে।
নির্ঝর নীলিমার এসব কথা শুনে অবাক চোখে মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে থাকে। মেহেরিন নিস্তব্ধ হয়ে আছে। নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। মেহেরিন’র কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়ছে। শুকনো ঢোক গিলছে সে। নির্ঝরের কাছে এটা অবাক করার মতো। রিদুয়ান চৌধুরী চোখের ইশারায় নীলিমা কে থামতে বলে। নীলিমা থেমে যায়। রিদুয়ান শান্ত গলায় মেহেরিন কে ডাকে। কিন্তু মেহেরিন যেন একটা ঘোরের মাঝে থাকে।
কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে নির্ঝর মেহেরিন’র হাতে হাত রেখে ডাক দেয়,
“মেহু!
মেহেরিন চমকে উঠে তার হাত থেকে চামচ টা পড়ে যায়। মেহেরিন দেখে সবাই তার দিকেই তাকিয়ে আছে। মেহেরিন দাঁড়িয়ে যায়। সরি বলে দ্রুত সেখান থেকে চলে যায়। মেহেরিন’র এমন অস্বাভাবিক আচরণ দেখে নির্ঝর ও উঠে পড়ে। মেহেরিন’র পিছু পিছু যেতে থাকে সে। অতঃপর…
#চলবে….