#অনুভূতিতে_তুমি 💖
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_২৬
হসপিটালে এসে ফাহানের খোঁজ নিতে এসে তাকে না পেয়ে গাড়ি নিয়ে আবারো বাড়ির দিকেই রওনা দিল নির্ঝর। তবে রিসেপশনে একটা খবর পেয়েছে সে। ফাহান আপাতত কিছুদিন ছুটিতে আছে। আর তার কারণ হলো তার বিয়ে। তার মানে এই’ই সেই ফাহান। মেহু সেদিন তার কেবিনের সামনেই দাঁড়িয়েছিল। যা ছিল তা তো অতীত। মেহু না হয় এখনো ভুলতে পারে নি। তবুও ফাহান কেন এসব করছে। কেন’ই বা এসব পুরোনো স্মৃতি মনে করিয়ে কষ্ট দিচ্ছে তাকে।
হুট করেই গাড়ির ব্রেক কসল সে। ঘন ঘন শ্বাস নিয়ে গাড়ির হেনডেলে মাথা ঠেকাল সে। কেন এতো অস্থিরতা কাজ করছে তার মধ্যে। ফোনের রিংটোন বেজে চলছে। নির্ঝর ক্লান্ত শরীর নিয়ে ফোনটা হাতে নিল। মেহুর নামটা ফোনের স্ক্রিনে ভেসে উঠলো। নির্ঝর ফোনটা রিসিভ করে কানে দিল। ওপাশ থেকে মিষ্টি গলার স্বর নির্ঝরের মন কে শান্ত করল। নির্ঝর হেসে বলল,
“হুম বলো!
“আপনি কি ফ্রি আছেন।
“কেন?
“অর্ণব কে আজ ডঃ রাহেলাকে দেখানোর কথা ছিল। আমি অফিসে কাজে আটকে গেছি। আপনি যদি ফ্রি থাকেন তো..
“আচ্ছা যাচ্ছি আমি..
“নির্ঝর!
“হুম!
“ধন্যবাদ।
“ধন্যবাদ দেবার কি আছে, নিজের ছেলেকে নি..
“এজন্য না।
“তাহলে..
“… গতকালের জন্য!
নির্ঝরের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটল। ওপাশ থেকে লাইন কেটে যাবার শব্দ এলো। নির্ঝর ফোনটা রেখে এখনো হাসতে লাগলো। লজ্জা পেতে লাগল তার। মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে আবারো গাড়ি স্টার্ট দিল সে।
—-
ডঃ রাহেলা অর্ণবের চেকাপ করানো শেষে নির্ঝর আর অর্ণব তার কেবিনে বসে বসল। ডঃ রাহেলা অর্ণবের সবকিছু নরমাল আছে বলেই আশ্বাস দিল। নির্ঝর হেসে অর্ণবের মাথায় হাত বোলাতেই অর্ণব দাঁত বের করে হাসল। নির্ঝর ডঃ রাহেলা কে কিছু বলবে বলে তার দিকে ফিরতেই ডঃ রাহেলার টেবিলের কোনে কার্ড দেখতে পেল। নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে সেই কার্ডের দিকে তাকিয়ে রইল। হ্যাঁ এটা সেই কার্ড যা তার কাছেও আছে। ডঃ ফাহানের রিং সেরেমানির কার্ড। নির্ঝর হেসে ডঃ রাহেলা কে বলে অর্ণব কে নিয়ে বাইরে চলে এলো। অতঃপর অর্ণব কে জনের সাথে বাচ্চাদের প্লে গ্রাউন্ডে রেখে আবারো ডঃ রাহেলার কেবিনে আসল নির্ঝর!
“আরে নির্ঝর , আবার এলে যে।
“ডঃ রাহেলা, আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।
“অর্ণবের সবকিছু তো নরমাল’ই আছে।
“না আমি অর্ণবের ব্যাপারে কথা বলতে আসি নি।
“তাহলে..
নির্ঝর এগিয়ে এসে টেবিল থেকে কার্ড টা হাতে নিয়ে চেয়ারে বসল। ডঃ রাহেলা’র সামনে কার্ড রেখে বলল,
“ডঃ ফাহান হোসেন’র রিং সেরেমানি। আপনাকেও ইনভাইট করেছে এর মানে আপনারা একে অপর কে চিনেন। আর… ( একটু দম নিয়ে বলল ) মেহু কেও চিনে মানে খুব ভালো করেই চিনে। কে এই ফাহান জানতে চাই আমি। কি করে মেহুর সাথে তার পরিচয়? কি সম্পর্ক তাদের?
বলেই নির্ঝর একটু কঠিন মুখ নিয়েই তাকিয়ে রইল। ডঃ রাহেলা নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলেন। পানির গ্লাস টা নির্ঝরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলেন,
“সিরিয়ায় মুডে আছো দেখছি, নাও পানি খেয়ে মাথা ঠান্ডা করো।
নির্ঝর ভ্রু কুচকালো। ডঃ রাহেলা আবারো একগাল হেসে বলেন,
“চিন্তা করো না, আমি তোমাকে মেহুর অতীত টা বলবো ঠিক ততোটুকু যতটুকু আমি জানি।
নির্ঝর পানির গ্লাস হাতে নিয়ে ঢক ঢক করে পুরো গ্লাসের পানি শেষ করল। অতঃপর দম ছেড়ে আবারো বসল। ডঃ রাহেলা ভ্রু কুঁচকে আর মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
“মেহুর খুব চিন্তা করো কিন্তু তুমি!
“ডঃ রাহেলা প্লিজ!
“উহু টেনশন নিও না। আমি তো তোমাকে বললাম বলবো। তবে সবটা না কারণ সবটা আমার জানা নেই। তাই আমার কাছে আধটা শোনার পর যদি তোমার মন শান্ত না থাকে তাহলে বাকি আধটা কার কাছে শুনবে তুমি। তোমার নিজেকেই খুঁজে বের করতে হবে তাকে যে তোমাকে বাকি আধটা বলবে।
নির্ঝর মাথা নেড়ে এবার শান্ত হয়ে বসল। ডঃ রাহেলা আরাম করে চেয়ারে বসলেন। চিকন ফ্রেমের চশমা টা খুলে টেবিলে রেখে চোখ বন্ধ করে সিটে হেলান। তার এমন ভাব দেখে মনে হলো নির্ঝর কে সে কিছুই বলবে না। নির্ঝর খানিকটা উদাসীন হলো। হুট করেই ডঃ রাহেলা বলে উঠেন,
“বেলী ফুল তোমার পছন্দ নির্ঝর!
হঠাৎ এমন প্রশ্ন শুনে নির্ঝর প্রথমে ধাক্কা খেল। তবুও নিজেকে সামলে বলল,
“হুম!
ডঃ রাহেলা এবার চোখ মেলে নির্ঝরের দিকে তাকালেন। নির্ঝর এবার ভালো মতো ডঃ রাহেলাকে দেখতে পেলো। চশমা খুলে ফেলায় কম বয়সী একজন মেয়ে বলে মনে হচ্ছে তাকে। ডঃ রাহেলা হেসে বলেন,
“আর মেহেরিন’র?
“ওর পছন্দ না।
“ভুল জানো। মেহেরিন’র ভারী পছন্দের ফুল হলো বেলী ফুল। বেলী ফুলের মালা গাঁথতে খুব ভালোবাসতো সে। কিন্তু নিরুর তা পছন্দ ছিল না। গাছ থেকে ফুল ছেড়া মোটেও নিরুর পছন্দ ছিল না। তার কাছে গাছের ফুটন্ত ফুল গাছে থাকলেই ভালো লাগতো। এটাই ফুলের সৌন্দর্য বলে জানতো সে।
“আচ্ছা!
ডঃ রাহেলা এবার চশমা টাকে টিস্যু দিয়ে মুছতে মুছতে বলেন,
“এখন অবশ্য কোন বেলী ফুলের গাছ খান বাড়িতে দেখবে না। তবে চমৎকার একটা বেলী ফুলের গাছ কিন্তু ছিল সেখানে। নিরুর হাতে লাগানো সেই গাছ। সেই গাছের ফুল যেমন সুন্দর ছিল তেমনি ছিল তার ঘ্রাণ। পুরো বাড়িতে মম করতো বেলী ফুলের ঘ্রাণে।
নির্ঝর জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“আপনি কখনো দেখেছিলেন সেই গাছ!
ডঃ রাহেলা চোখে চশমা পড়ে বলেন,
“এখন দেখতে স্বাভাবিক লাগছে তো আমায়।
নির্ঝর মুচকি হেসে বলল,
“হ্যাঁ।
“হ্যাঁ দেখেছিলাম তা, আর সেই গাছ দেখার পর’ই তা কেটে ফেলতে বলেছিলাম!
“কেন?
“কারণ নিরু মারা যাবার পর মেহেরিন রাত বেরাতে সেই গাছের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো। এই নিয়ে তার বাবা শুভ্র খান আমাকে বলেছিলন। আমি জিজ্ঞেস করতেই মেহেরিন আমাকে সোজাসুজি কি উওর দিল জানো?
নির্ঝর অধীর আগ্রহে বসে আছে সেই কথা শোনার জন্য। এমন একজন শ্রোতা পেয়ে ডঃ রাহেলার বেশ ভালো লাগলো। তিনিও শীতল গলায় বলে উঠেন,
“মেহেরিন বলে উঠল সে নাকি সারারাত জেগে নিরুর সাথে কথা বলে।
নির্ঝরের কপালে ভাঁজ পড়ল। ডঃ রাহেলা হেঁসে বলেন,
“শুনো কিসব কথা! একজন মৃত ব্যক্তির সাথে সে কি না সারারাত জেগে গল্প করে। যদিও এটা তার কল্পনা তবুও আমি তখন সেটা তাকে বোঝাতে চাই নি। শুধু জিজ্ঞেস করছিলাম”কিসব কথাবার্তা বলো তোমরা? মেহেরিন মুখটা কালো করে বলল, অনেক ধরণের কথা বলি। এই আমি সারারাত কি করেছি। গাছের ফুল গুলো কেন ছিড়লাম আমি। গাছ কি কষ্ট পায় না। এই রাতটা আজ এতো অন্ধকার কেন এরকম!
“আর অর্ণব! তার কথা কিছু জিজ্ঞেস করো নি।
মেহেরিন ভ্রু কুঁচকালো। অতঃপর অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“অর্ণব! এই অর্ণব কে?
তখন’ই মেহেরিন’র কথা শুনে বুঝলাম সে এখনো তার ছেলেবেলার অতীতে আটকে আছে। অর্ণব বলে কেউ যে আছে তার পৃথিবীতে এটাই সে ভুলে গেছে।
“তারপর?
“তারপর! তারপর আর কি? শুভ্র খান কে বলে সেই গাছ কেটে ফেললাম। মেহেরিন খুব রেগে গেল। রাগবে নাই বা কেন। নিরুর একমাত্র স্মৃতি ছিল তা। একমাত্র বলছি বলে অবাক হয়ো না। আরো অনেককিছুই ছিল। তা তাদের বাড়ির স্টোর রুমে রেখে দেবার ব্যবস্থা করলাম। বলতে গেলে নিরু কে আড়াল করে দিলাম তার থেকে। তবুও কি স্মৃতি ভোলা যায়। মায়ের আদরে যে এত্তো বড় করলো তাকে ভুলে কি করে? রাতের পর রাত তবুও জেগে থাকতো। অন্ধকার ঘরে ডুবিয়ে রাখতো নিজেকে। চেহারায় কালচে দাগ পড়ে গেল। চোখের কালো দাগ তার মুখের সৌন্দর্য নষ্ট করে দিল। তার মুখের হাসি যেন মিলিয়ে গেল। শুকিয়ে গেল দিন দিন। তার চিন্তায় শুভ্র খান অস্থির। আমি নিজের সর্বস্ব দিয়ে তাকে সুস্থ করার চেষ্টা করলাম। ধীরে ধীরে সফল হতে লাগলাম। অর্ণবের জন্য তার গুরুত্ব বোঝালাম। নিরু মারা যায় নি, বেঁচে আছে এই অর্ণবের মাঝে এই কথা তার মাথায় ঢুকালাম। এতসব কিছু করার পর’ই স্বাভাবিক হতে লাগল সে। তবে হঠাৎ একদিন কি হলো জানো!
নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
“কি..
#চলবে….