অনুভূতিতে তুমি 💖পর্ব-৩৪

0
2680

#অনুভূতিতে_তুমি 💖
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে)
#পর্ব_৩৪

নিরব আর নির্ঝর মুখোমুখি। নির্ঝর কে দেখতে বেশ শান্ত’ই লাগছে। এই নিয়ে ৩ কাপ চা শেষ করল সে। নিরব আছে বেশ গম্ভীর ভাবে। তার মুখ চোখ সব গম্ভীর করে বসে আছে নির্ঝরের সামনে। নির্ঝর তা তোয়াক্কা করছে না। নিরব বলে উঠল,

“৬ মাস কিন্তু হয়ে গেল!

নির্ঝর ভ্র কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
“কিসের?

“তোমার আর মেহু’র বিয়ে!

“ওহ হ্যাঁ তাই বলো। সময় কিভাবে পেরিয়ে গেল বুঝলাম না।‌

“তা কি ভাবলে?

নির্ঝর কিছুক্ষণ গম্ভীর হয়ে রইল। অতঃপর শীতল গলায় নিরবের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ভাবছি কি গিফট দেওয়া যায়। আচ্ছা শাড়ি দেবো, কিন্তু মেহু তো শাড়ি পড়তে দেখলাম না।

নিরব তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। মশকরা হচ্ছে তার সাথে। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“শাড়ি কেন দেবে?

“বাহ রে! বিয়ের ৬ মাস হয়ে গেল, বউ কে কিছু গিফট দেবো না তা কি করে হয়।

“কি বউ বউ করছো তুমি?

“আহ আমার’ই তো বউ, আমি বউ বউ করবে না তো কে করবে শুনি। তুমি!

নিরবের ঠোঁট কাঁপছে। চোখ জোড়া লাল হয়ে যাচ্ছে রাগে। নির্ঝর এখানে বেশ শান্ত। চায়ের কাপটা টা নিচে রেখে বলল,

“সেই সুযোগ তোমাকে দিলে তুমি ছেড়ে দিবে বলে মনে হচ্ছে না।

“নির্ঝর!

উচ্চস্বরে ডেকে উঠল নিরব। আশেপাশের মানুষজন লক্ষ্য করল তাদের। নির্ঝরের মাঝে এবারও কোন প্রভাব ফেলল না। সে আবারো চায়ের কাপে চুমুক দিল। এই চায়ের কাপও শেষ তার। নিরব নিজেকে শান্ত করল। নির্ঝরের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠল,

“৬ মাস পর তোমাদের কন্ট্রাক শেষ, আর কথা মতো তুমি মেহু কে ছেড়ে চলে যাবে।

নির্ঝর এবার নড়েচড়ে বসল। কিছু একটা বলবে সে। নিরবও সেই ভাবে প্রস্তুতি নিল। দুই হাত টেবিলে রেখে নিরবের অনেক কাছে এসে বলল,

“আমি তো ছেড়ে দেবো, যদি মেহু না ছাড়তে চায় তখন!

ভ্রু কুঁচকে গেল নিরবের। নির্ঝর তার সাথে অহেতুক কথাবার্তা বলছে বলে মনে হলো। নিরব হেসে উড়িয়ে দিল সেই কথা। বলে উঠল,

“মেহু কেন তোমাকে ছাড়তে চাইবে না।

নির্ঝর চেয়ারে হেলান দিয়ে বসল। কিঞ্চিত হেসে বলে উঠে,
“যদি ভালোবেসে ফেলে আমায় তো!

নিরব এবার থমকে গেল। নির্ঝর হেসে বলল,
“কি হলো কথা বন্ধ হয়ে গেল।

“এমনটা কখনো হবে না।

নির্ঝর হেসে উঠে দাঁড়াল। নিরব মুখ কঠিন করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। নির্ঝর হেসে তার কানের এসে বলল,

“হবে হবে, মেহু আমার প্রেমে পড়বে, আমাকে ভালো ও বাসবে আর সারাজীবন আমার সাথেই থাকবে। তখন তুমি কিছু করতে পারবে না।

“নির…

নির্ঝর কথায় ফোড়ন কেটে বলল,
“তুমি চাইলেই মেহুর জীবন থেকে আমাকে বের করতে পারবে তখন আমার জীবন থেকে মেহু কে বের করার সাধ্য তোমার নেই!

বলেই নির্ঝর হেঁটে চলে গেল। নিরব সেখানেই বসে রইল। নির্ঝরের কথা তার বুকে এসে গেধে গেছে। মেহু কে আরো একবার হারানোর ভয় তাকে শেষ করে দিচ্ছে। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে নিরব। শান্ত করতে পারছে না নিজেকে।এই বুঝি হারিয়ে ফেলবে মেহু কে। তার এতো সাহস নেই মেহু কে গিয়ে ভালোবাসার কথাটা বলার। প্রচুর ভয় হয় তার। মেহু যদি রেগে যায় তখন। কিন্তু এখন যেই কষ্ট হচ্ছে তা ওখানে তা তুচ্ছ। ভেবে নিচ্ছে মেহু কে এবার ভালোবাসার কথাটা বলেই দেবে সে!

—-

অফিসে নির্ঝর দাঁড়িয়ে রিসেপশনে থাকা মেয়েটার সাথে এক নাগাড়ে কথা বলেই যাচ্ছে। কিসব কথাবার্তা বলছে মেহেরিন’র জানা নেই। তবে দেখা যাচ্ছে নির্ঝরের বেশিরভাগ কথায় মেয়েটা হেসে একাকার। অফিসে এসব কি শুরু করেছে সে। ল্যাপটব থেকে চোখ সরিয়ে কল করল রিসেপশনিস্ট কে। নির্ঝর কে তার কেবিনে পাঠাতে বলল।‌ নির্ঝর প্রবেশ করল তার কেবিনে। চেয়ারের সামনে বসে বলল,

“আমাকে খুব মনে করছিলে নাকি!

“অফিসে এসব কি শুরু করেছেন?

“কি করলাম আবার?

“বাহ জিজ্ঞেস করছেন!

ভ্রু কুঁচকে বলল,
“তুমি আমায় ফলো করছো মেহু!

“কিহ?

নির্ঝর উঠে দাঁড়াল। মেহেরিন’র কাছে আসল। মেহেরিনের কপালে ভাঁজ পড়ল। মেহেরিন’র অনেক কাছে আসতেই একটু সরে গেল মেহেরিন। নির্ঝর হেসে তার ল্যাপটপ এগিয়ে নিল।‌ লজ্জিত হলো সে। নির্ঝর মুচকি হেসে ল্যাপটব স্ক্রিনের দিকে তাকাল। বলে উঠল,

“এতো ভালোবাসো আমায় বলতেই পারতে।

“ফালতু কথা বন্ধ করুন নির্ঝর!

“ফালতু কথা, এই করছ অফিসে বসে?

“কি করছি আমি!

“কি করছো, এই যে আমাকে দেখছো। আমার প্রতিটি পদক্ষেপ ফলো করছো। কার সাথে কথা বলছি কি করছি, কোথায় যাচ্ছি তা দেখছ!

“😒

“আর একটা কথা জানো একটা মানুষ কখন এমনটা করে।

মেহেরিন নির্ঝরের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপনি ভুল বুঝছেন। একটু বেশিই ভেবে ফেলেছেন।

“তুমি বলতে চাও আমি ভুল ভাবছি, তুমি আমাকে দেখো না।

“আপনাকে এতো দেখার কি আছে বলুন তো। সারাদিন তো থাকেন আমার সামনেই!

নির্ঝর একটু ঝুঁকে গেল মেহেরিন’র কাছে। মেহেনির’র কপালে ভাঁজ পড়ল। নির্ঝর মেহেরিন’র চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,

“যদি এই কথাটাই তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করতে তাহলে আমি কি বলতাম জানো?

“কি বলতেন?

“বলতাম, তোমাকে দেখার মাঝে অদ্ভুত এক অনুভূতি আছে। তোমার এই হরিণী চোখ দেখলে আমার অন্যরকম অনুভূতি হয়। এমনটা মনে হয় তোমার এই চঞ্চল চোখ কিছু বলতে চায় আমায়। ইচ্ছে তো করে হাজার বছর এভাবে কাটিয়ে দেই তোমাকে দেখে দেখে। শুধু মনে হয় আমার অনুভূতি জুড়ে শুধু তুমি, আমার অনুভূতিতে তুমি!

বলেই নির্ঝর সেই চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। মেহেরিন চোখ সরিয়ে বলল,
“ওহ আচ্ছা!

“ওহ আচ্ছা! এটা কি? এতো রোমান্টিক কথা শোনার পর এই কথা বললে তুমি!

“রোমান্টিক কথা ছিল এগুলো!
বলেই মেহেরিন চেয়ারে ঘুরিয়ে ওপাশ হলো। নির্ঝর রেগে তার দিকে চেয়ার ঘুরিয়ে বলল,

“মিসেস নির্ঝর চৌধুরী! কি ভাবো তুমি নিজেকে!

“মেহেরিন বর্ষা খান,‌কারণ এটাই আমার পরিচয়!

“তুমি না মানলে মেনে না সারা দুনিয়া মানে তুমি আমার!

নির্ঝরের কথার আওয়াজ প্রভাবিত করল মেহু কে। সে শুকনো ঢোক গিলে তাকিয়ে রইল নির্ঝরের দিকে। ফাইল হাতে নিরব সোজা ঢুকে পড়ল তখন। একগাদা বিরক্ত নিয়ে দাঁড়াল নির্ঝর! মেহেরিন নিরব কে বসতে বলল। নির্ঝর হন হন করে বেরিয়ে গেল তখন। কিন্তু এখানকার পরিস্থিতি নিরব কে অনেক কষ্ট দিল। কি হচ্ছিল এখানে!

অফিস থেকে দুজনে একসাথে বের হলো। নির্ঝর গাড়ির দরজা খুলে দিল মেহুর জন্য। নিরব সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিল। নির্ঝর তার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে নিজেও উঠে গেল গাড়িতে। নির্ঝর গাড়ি চালাচ্ছে ধীর গতিতে। মেহেরিন তার পাশে বসে আছে চোখ বন্ধ করে। নির্ঝর একটু বাদে বাদেই তাকাচ্ছে তার দিকে। অর্ণব আজ তার দাদু বাড়িতে। নির্ঝর আর মেহেরিন সেখানেই যাচ্ছে তাকে আনতে। হঠাৎ করেই তাদের গাড়ি জ্যামে আটকা পড়ল। নির্ঝর গাড়ি থামিয়ে পাশে তাকাল মেহেরিন’র দিকে। ক্লান্ত শরীর টাকে নিয়ে সিটে আরাম করে বসে আছে সে। জ্যামে আটকা পড়াতে হয়তো ভালোই হলো। নির্ঝর দু চোখ ভরে দেখতে পারছে মেহু কে। খানিকক্ষণের জন্যও চোখ সরাচ্ছে না মেহুর দিকে।

হুট করেই এগিয়ে যাচ্ছে মেহুর কাছে সে। মেহুর চোখে ঘুমের রেশ কিন্তু এখনো ঘুমিয়ে পড়ে নি সে।‌ কারো কাছে আসার উপস্থিত পাছে সে। কারো গরম নিঃশ্বাস পড়ছে তার মুখে, কেউ খুব কাছে আসছে তার। মেহু দ্রুত চোখ মেলে ফেলল। তাকাতেই নির্ঝরকে তার খুব কাছে দেখল। বিন্দুমাত্র জায়গা নেই তার আর নির্ঝরের মাঝে। মেহু বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইল। সজোরে দুহাত দিয়ে ধাক্কা দিলো নির্ঝর কে। সামলাতে না পেরে ওপাশের‌ দরজার সাথে খুব জোরে বাড়ি খেলো নির্ঝর। হতবাক সে। দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে আছে মেহেরিন। বলে উঠল,

“কি করছেন কি আপনি নির্ঝর! আপনি এমনটা কিভাবে করতে পারেন।

“তুমি ভুল বুঝছো মেহু!

“কি বললেন আমি, আমি ভুল বুঝছি!

নির্ঝর একটু এগিয়ে এলো। বলে উঠল,
“মেহু শান্ত হও!

রাগে ফুসফুস করছে মেহেরিন। নির্ঝর কাছে আসতেই ঝাপিয়ে পড়ল তার দিকে। দু হাত দিয়ে মারতে লাগল তাকে। তাদের গাড়ির চেঁচামেচি শুনে আশপাশের লোকজন দেখতে লাগল। এদিকে মেহেরিন থামছেই না। নির্ঝরের কোন কথা শুনতে প্রস্তুত না সে। নির্ঝর এক পর্যায় তার হাত দুটো শক্ত করে ধরে ফেলল। তাদের পাশের গাড়ির লোক জিজ্ঞেস করে উঠল,

“ম্যাম আপনি ঠিক আছেন তো! কিছু কি হয়েছে।

মেহেরিন রাগ সংবরণ করল। শান্ত গলায় বলে উঠল,
“না কিছু হয় নি।

“কিছু হলে বলতে পারেন। আমরা হেল্প করছি।

নির্ঝরের মেজাজ গেল ভড়কে। বলে উঠল,
“আরে ভাই বলছে তো কিছু হয় নি। আর হলেও আপনার কি? আমাদের স্বামী স্ত্রীর ব্যাপার আমরা সামলে নিচ্ছি!

নির্ঝরের কথা শুনে লোকটা নিশ্চুপ হয়ে গেল। মেহেরিন রেগে তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে। হাত ছুটানোর জন্য ছটফট করছে। নির্ঝর শব্দ করে শ্বাস ফেলে বলল,

“শান্ত হও! আমি কিছুই করে নি।

“নির্ঝর আপনি এখ…

“কথা শুনো আগে।

“হাত ছাড়ুন।

“আগে বলো চুপচাপ থাকবে তখন ছাড়বো এর আগে না।

“…

“কি হলো বলো!

“হাত ছাড়ুন!

নির্ঝর হাত ছাড়ল। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে মেহেরিন সিটে বসল। হুট করেই নির্ঝর আবারো তার কাছে চলে এলো এলো। হঠাৎ এমনটা হওয়ায় ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিল মেহেরিন। নির্ঝর বলে উঠল,

“মেহু!

মেহেরিন তাকাল। নির্ঝর মেহেরিন’র গাড়ির সিটবেল্ট বেঁধে বলল,

*তখন এটার জন্যই এসেছিলাম, তুমি সিটবেল্ট লাগাও নি তাই!

মেহেরিন মুখ ঘুরিয়ে নিল। নির্ঝর নিজের সিটে বসল। আর কিছুক্ষণ পড়েই জ্যাম ছেড়ে দিবে। মেহেরিন বলে উঠল,

“এটার জন্য আমাকে ডাকা যেত পারতো।

“আমার সম্পর্কে তোমার এমন চিন্তা ভাবনা আমি কি আগে জানতাম!

মেহেরিন তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। নির্ঝর হেসে এলোমেলো চুল গুলো কানে গুঁজে দিল। বলে উঠল,

“বলতে হবে তোমার হাতে অনেক শক্তি আছে!

চৌধুরী বাড়িতে গাড়ির আওয়াজ শুনে অর্ণব দৌড়ে বের হয়ে এলো। মেহেরিন কে দেখতে পেয়ে জড়িয়ে ধরল তাকে।

“মাম্মি!

মেহেরিন হেসে কপালে চুমু খেয়ে বলল,
“অর্ণব! কেমন আছো!

“গুড!

মেহেরিন হেসে মাথার চুল গুলো এলোমেলো করে দিল। নির্ঝরের ডাক শুনে ড্যাডি ড্যাডি করতে করতে নির্ঝরের কোলে চড়ে উঠল। নির্ঝর হেসে তার ঘাড়ে হাত দিল। অর্ণব লাফিয়ে উঠল কারণ ঘাড়ে তার শুড়শুড়ি আছে। দু’জনেই হাসতে লাগলো। নীলিমা এসে দাঁড়াল দরজার সামনে। মেহেরিন এগিয়ে এলো। নীলিমা জড়িয়ে ধরল তাকে। মেহেরিন জিজ্ঞেস করল,

“কেমন আছেন আন্টি?

“আলহামদুলিল্লাহ তুমি!

“ভালো, অর্ণব বুঝি অনেক জ্বালিয়েছে!

অর্ণবের দিকে তাকাল। অর্ণব মাথা নাড়িয়ে না না করল।‌নীলিমা হেসে বলল,

“অর্ণব তো লক্ষী ছেলে, সে জ্বালাতে পারে নাকি।

অর্ণব দাঁত বের করে হেসে দিল। নির্ঝর একটু ভাব গলায় বলল,

“আমার ছেলে তো তাই!

“আচ্ছা হয়েছে, ছেলে আর ছেলের বাপ দুজনেই ভিতরে আসেন। মেহেরিন মা তুমিও আসো!

তিনজন’ই একসাথে প্রবেশ করল ঘরে। অতঃপর..

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here