#অনুভূতিতে_তুমি 💖
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে)
#পর্ব_৩৫
নীলিমার মনটা আজ একটু ক্ষুদ্ধ হয়েছে। তার কারণ মেহেরিন তাকে মা বলে ডাকে নি। নিজের ছেলের বউয়ের মুখ থেকে মা ডাকটা শোনার আশা করাটা কি অপরাধ। সবাই তো মা বলেই ডাকে। এদিকে নির্ঝরের বিয়ের ৬ মাস হয়ে গেল অথচ তার ছেলের বউ আজ অবদি কি না তাকে মা বলে ডাকে নি। একসাথে থাকে না তো কি, এতো টুকু আশা তো করতেই পারতো সে।
মনটা খারাপ করে রুমে এসে বিছানায় ধপাস করে বসল সে। রিদুয়ান চৌধুরী ওয়াশরুম থেকে মাথা মুছতে মুছতে বের হলেন। নীলিমা কে এভাবে বসে থাকতে দেখে তার পাশে এসে বসলেন। জিজ্ঞেস করলেন,
“রেগে আছো কেন?
“আমি রেগে নেই!
“তাহলে, মুখ এতো গম্ভীর করে রেখেছ কেন?
নীলিমা রিদুয়ানের দিকে মুখ ফিরলেন। নীলিমা’র চোখে জল ছলছল করছে। রিদুয়ান নীলিমা’র মাথায় হাত রেখে বলেন,
“কি হয়েছে?
“মেহেরিন এসেছে!
“এতে মন খারাপের কি আছে, এতোদিন তো বলতে আসে না কেন? অর্ণব কে একটু পাঠায় না কেন আর আজ এমন করছো!
নীলিমা মন খারাপ করে মাথা নিচু করে ফেলল। রিদুয়ান মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলেন,
“মেহেরিন কিছু বলেছে!
নীলিমা মাথা নেড়ে না বলল। রিদুয়ান হেসে বলে,
“তাহলে এমন করছো কেন!
“আচ্ছা তোমার মা কে আমি মা বলে ডাকিনি বলো।
“হ্যাঁ তা তো ডেকেছ, কিন্তু এখানে এটার সম্পর্ক কি!
নীলিমা মুখ ফিরিয়ে নিল। কথাটা কিভাবে বলবে সে, নিজের স্বামী কে এই কথাটা একদমই বাচ্চামি লাগছে তার কাছে। কিন্তু তার মন বুঝছে তার মনে কি চলছে। ছেলের বউ মা বলে না ডাকাতে খুব কষ্ট হচ্ছে তার। আর এই কষ্ট অশ্রু জমাচ্ছে চোখে, কোন একসময় ঝড়ে পড়বে। রিদুয়ান যখন জানবে ছেলের বউ’র মুখে মা ডাক শুনতে না পেরে সে কাঁদছে তখন এক পাটি দাঁত বের করে হাসবে। লজ্জা লাগবে। তাই ঠিক করেছে বলবে না। নিজেকে শক্ত করে উঠে দাঁড়াল। রিদুয়ান বলে উঠল,
“মেহেরিন তোমায় মা বলে ডাকে না দেখে তোমার মন খারাপ নীলিমা!
থমকে গেল নীলিমা! রিদুয়ান মুচকি হেসে উঠে আসল। তার সামনে দাঁড়াল। আবারো নীলিমা’র মাথায় হাত রেখে বলে,
“ধুর বোকা, এটাতে মন খারাপের কি আছে। আজ ডাকে নি একদিন তো ডাকবে। সময় কি চলে যাচ্ছে নাকি!
স্বামীর যত্ন পেয়ে ভেঙ্গে পড়ল নীলিমা। জড়িয়ে ধরল রিদুয়ান কে। কেঁদে উঠলো সে। কান্না মাখা গলায় বলল,
“তুমি বুঝতে পারছো না আমার কতোটা কষ্ট হচ্ছে। প্রথমদিন থেকেই নিজের মেয়ে হিসেবে দেখি ওকে। ছেলের বউ না নিজের মেয়ে ভাবি। একবার কি মা ডাক শোনার ভাগ্য হবে না বলো।
“মেয়ে যখন ভাবো তাহলে মেয়ে কে বুঝতে চেষ্টা করো। মেয়েটা তো ছোট থেকেই মায়ের আদর পায় নি। এখন তার কাছে এসব একটু অন্যরকম তো লাগবেই।
নীলিমা মুখ তুলল। রিদুয়ান তার চোঁখের জল মুছে দিল। নীলিমা মুখ খুলে বলল,
“তুমি ঠিক বলছো বোধহয়, আমিই একটু তাড়াহুড়ো করছি।
“এই তো বুঝতে পেরেছ! ( কিঞ্চিত হেসে বলল.. ) আমার দেখা তুমি’ই সেই প্রথম শাশুড়ি যে কি না ছেলের বউয়ের মুখে মা ডাক শুনতে পারে নি বলে স্বামী কে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে!
“তুমি মজা নিচ্ছ!
“হ্যাঁ নিচ্ছি, অর্ণব এসে যদি দেখে তোমাকে এভাবে কাঁদতে তাহলে কথাটা নির্ঝরের কানে পৌঁছাতে সময় লাগবে না। এখন তোমার ছেলে কি চিজ এটা তুমি নিশ্চিত জানো। আচ্ছা কান্না থামাও, মুখ চোখে জল দাও। আমি একটু ওদের সাথে দেখা করে আসি, ঠিক আছে।
নীলিমা মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল। রিদুয়ান তার গালে হাত রাখল আশ্বাস দিল। শশুড় শাশুড়ি’র কথা শুনে দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল মেহেরিন। হেঁটে চলে গেল সেখান থেকে। সে অবশ্য আড়ি পাতে নি। এসেছিল নীলিমা’র সাথে কথা বলতে। দরজা খোলা থাকায় কথা গুলো কানে এলো তার। খুব অদ্ভুত লাগছে নিজের কাছে। এমন অনেক মেয়ে আছে যারা কি না শাশুড়ি’র ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আকুল হয়ে থাকে সেখানে কি না তার শাশুড়ি তাকে ভালোবাসার জন্য এভাবে কাঁদছে। নিজেকে খুব অপরাধী লাগছে কারণ একদিন তাদের আরো কাঁদিয়ে চলে যাবে সে। তখন তাদের কতোটা কষ্ট হবে এটা সে বুঝতে পারছে। প্রিয় মানুষ হারানোর কষ্ট জানে সে। অভিজ্ঞতা’ই আছে বলা যেতে পারে। তাই নিজে কারো প্রিয় মানুষ হতে চায় না!
—-
নির্ঝর দৌড়ে যাচ্ছে অর্ণবের পিছনে, অর্ণব পুরো ঘর জুড়ে ছোটাছুটি করছে। সোফায় বসা রিদুয়ান তাদের কান্ড দেখে হেসে অস্থির। রান্না ঘরে রাতের খাবার বানাতে ব্যস্ত নীলিমা। ছেলে আর ছেলের বউ এসেছে এতো দিন পর। নিজের হাতেই খাবার বানাবে সে। মেহেরিন এসে দাঁড়াল রান্না ঘরে। হাত বাড়াল নীলিমা’র কাজে। নীলিমা তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। মেহেরিন সবজি কাটতে কাটতে বলে উঠল,
“খুব রাগ হয় না আপনার আন্টি!
নীলিমা অবাক হয়ে বলল,
“কেন?
মেহেরিন নিচের দিকে তাকিয়ে বলল,
“এই যে আপনাকে আন্টি বলে ডাকি তাই!
হাতের খুন্তি টা কড়াইতে রেখে দিল নীলিমা। অবাক চোখে তাকাল মেহেরিন’র দিকে। মেহেরিন তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। অতঃপর খুন্তি হাতে কড়াইয়ের মাছ উল্টে দিল সে। নীলিমা চমকে উঠে সেখান থেকে সরে দাঁড়াল। মেহেরিন চুলোর আঁচ কমিয়ে দিয়ে সামনে তাকিয়ে বলল,
“জন্মের পর থেকে মায়ের ছবি দেখেই কাটিয়েছি। কখনো স্বচোখে দেখার ভাগ্য হয় নি আমার। মা বলতে নিজের দি কেই চিনতাম। কাউকে মা বলে ডাকি নি কখনো!
নীলিমা অস্থির হয়ে উঠছে মেহেরিন’র এসব কথা শুনে। মেহেরিন কি তাহলে সবকিছু শুনে ফেলেছে। মেহেরিন তার দিকে ফিরল। কিঞ্চিত হেসে বলল,
“আমার মা হলে বোধহয় আপনার মতোই হতো। কারণ পৃথিবীর সব মা তো এক’ই!
নীলিমা চোখ নামিয়ে ফেলল। মেহেরিন বলে উঠল,
“তবে সব শাশুড়ি নিশ্চিত আপনার মতো হয় না তাই না!
নীলিমা আবেগ প্রবণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল মেহেরিন’র দিকে। মেহেরিন চোখ সরিয়ে নিল। এতো আবেগ, ভালোবাসা চায় না সে। হেসে বলে উঠল,
“রাগ করবেন না, হয়তো কোনদিন আপনার এই সাধ পূরণ করার চেষ্টা করবো আমি। কারণ এটা আমার জন্য অনেকটা কঠিন! আপনার আর রান্না করা লাগবে না। ওখানে গিয়ে বসুন। বাকি রান্না আমিই শেষ করছি!
বলেই রান্নায় মনোযোগ দিল সে। নীলিমা করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মেহেরিন’র দিকে। খুব ইচ্ছে করছে দু হাত তাকে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু সবসময় মন যা চায় তা হয়ে উঠে না।
অর্ণব হুট করে এসে নীলিমা’র হাত ধরে বলল,
“দাদিমা!
নীলিমা চমকে উঠল, তার সাথে সাথে সবাই! মেহেরিন মুচকি হাসল। অর্ণব কে সেই শিখিয়ে দিয়েছে দাদিমা বলে ডাকার জন্য। তবে এতেও কম খাটতে হয় নি তাকে। অর্ণব কে টানা দু’দিন আইসক্রিম খেতে দেবে বলেছে। তবুও কাজ হয় নি। অতঃপর বলেছে “তোমার দাদিমা অনেক খুশি হবে, তোমাকে নাড়ু বানিয়ে খাওয়াবে।” একথায় জ্বলজল করে উঠল অর্ণবের চোখ। খুশিতে আত্মহারা সে। নীলিমা’র হাতের নাড়ু বেশ পছন্দ তার। কয়েকদিন আগেই তৈরি করে খাইয়েছিলেন। মেহেরিন অনেক কষ্ট করেই অর্ণব কে শিখাল দাদিমা বলা। যাতে নীলিমা’র অভিমানের কষ্ট কিছুটা হলেও কমে। নীলিমা নিচু হয়ে বসে অর্ণবের দুই গালে হাত রেখে বলল,
“কি বললে, দাদিমা! আরেকবার বলো!
অর্ণব মুখ ফুটে বলল,
“দাদিমা!
নীলিমা তাঁর কপালে চুমু খেয়ে বলল,
“বলো কি হয়েছে!
অর্ণব হাত নাড়িয়ে কড়াইয়ের দিকে হাত দিল। নীলিমা বলে উঠল,
“মাছ ভাজা খাবে!
অর্ণব মাথা নাড়ল। নীলিমা খুশিতে আত্মহারা। ভাজা মাছের কাঁটা বেছে নিজের হাতে খাইয়ে দিতে লাগল অর্ণব কে! রিদুয়ান বলে উঠল,
“আমাকে দাদু ডাকো তো অর্ণব!
অর্ণব মাথা নেড়ে না না করল। নির্ঝর ফিক করে হেসে দিল। রিদুয়ান বলে উঠল,
“আচ্ছা আজ ডাকে নি একদিন ডাকবে!
নির্ঝর হেসে বলল,
“হ্যাঁ সেই আশায় থাকো তুমি!
—-
আজকের রাত টা চৌধুরী বাড়িতেই কাটাবে তারা। অর্ণব তার দাদিমার সাথে ঘুমাবে বলে বালিশ নিয়ে তার রুমে চলে গেছে। মেহেরিন ঘরের এক কোনে দাঁড়িয়ে মাছের একুরিয়াম দেখছে। নির্ঝরের ঘরে খুব বড় একটা একুরিয়াম আছে। মেহেরিন তাতে খাবার দিচ্ছে। এটা নির্ঝর’ই করছিল কিন্তু তার একটা কল আসায় ফোন হাতে বাইরে চলে গেছে। মেহেরিন উঠে এসে কাজ টা করতে লাগলো। মাছ’রা সাঁতার কেটে খাবার সন্ধানে ঘুরে যাচ্ছে। নির্ঝর ঘরে এলো। তার আভাস পেল মেহেরিন। তবুও মাছ গুলোর দিকেই তাকিয়ে রইল। নির্ঝর মিটিমিটি পায়ে তার পিছনে এসে দাঁড়াল। পেছন থেকে হাত বাড়িয়ে একটা প্যাকেট ধরল মেহেরিন’র সামনে। মেহেরিন প্যাকেটে একবার চোখ বুলিয়ে আবারো মাছের দিকেই তাকাল। নির্ঝর সামনে এসে বলল,
“এটা তোমার জন্য!
“কি আছে এতে?
“নিজে দেখো!
মেহেরিন প্যাকেট হাতে নিল। দেখল খুব সুন্দর একটা শাড়ি আছে তাতে। শাড়িতে একবার হাত বুলিয়ে বলল,
“সুন্দর!
অতঃপর প্যাকেটে ভরে রেখে নির্ঝরের হাতে দিয়ে দিল। নির্ঝর অবাক হলো! মেহেরিন তার পাশ কাটিয়ে এসে দাঁড়াল বেলকনির দিকে। নির্ঝর তার পাশে এসে দাঁড়াল। বলে উঠল,
“শাড়ি টা কি তুমি নিবে না
“না।
“কেন?
“কারণ আপনি ভুল করছেন নির্ঝর।
“মানে?
“বিয়ের ৬ মাসের পূর্তিতে নিজের স্ত্রী কে এসে শাড়ি উপহার দিচ্ছেন। কিন্তু আপনি জানেন ৬ মাসের সমাপ্তি মানেই আপনার আর আমার সম্পর্কের ইতি টানার সময় চলে এসেছে।
“মেহু আমি তোমাকে..
“ভালোবাসেন! ( নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে কিঞ্চিত হেসে বলল.. ) আপনি ভালোবেসে ফেলেছেন আমায়, এটাই তো বলবেন। আমি আপনার ভালোবাসায় প্রশ্ন তুলছি না। ভালো বাসতেই পারেন। ভালোবাসা হুট করেই হয়। সন্দেহ নেই আপনার ভালোবাসায়!
নির্ঝর এক পা এগিয়ে কাছে এলো মেহুর। চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তাহলে কিসের সংশয় তোমার?
“নিজেকে নিয়ে সংশয়, আপনার কাছে খুব সহজ নতুন করে সবটা শুরু করা। কিন্তু আমার কাছে না। আমার অতীত আপনি জানেন ন…
“জানতে চাই না, আমি জানতে চাই না তোমার অতীত। আমি তোমাকে জানতে চাই। তোমাকে ভালোবাসি আমি!
বলেই মেহু’র দিকে হাত বাড়াল সে। মেহেরিন নির্ঝরের হাত থামিয়ে দিল। হেসে বলে উঠল,
“আপনি আমার সাথে ১ বছর থাকবেন বলেই অর্ণব এভাবে আগলে নিতে পেরেছেন কারণ আপনি জানেন একবছর পর আর তাকে সহ্য করতে হবে না। তার কাছে সম্পর্ক রাখার জন্য জোরও করতে হবে না। তাই ওর সাথে আপনি এখন এতোটা কমফোর্টেবল। কিন্তু নির্ঝর যদি কথাটা সারাজীবন একসাথে থাকার আসতো তাহলে হয়তো আপনি মানতে নারাজ। কেউ পারে না অন্যের সন্তান কে নিজ সন্তান বলতে।
নির্ঝর গম্ভীর মুখে তাকিয়ে রইল। কথা শেষ হতেই বলে উঠল,
“আমি রাজি!
মেহেরিন নির্ঝরের দিকে ফিরল। নির্ঝর বলে উঠল,
“আমি রাজি তোমার সাথে সারাজীবন কাটাতে, অর্ণবের সাথে সারাজীবন কাটাতে।কোন শর্ত কোন সংশয় থাকবে না এখানে।
মেহেরিন মুচকি হেসে বলল,
“নির্ঝর বলাটা খুব সহজ। মানুষ যখন ভালোবাসে তখন তার কাছে সবকিছুই সহজ বলে মনে হয়। কিন্তু বাস্তব তার চেয়েও ভয়ানক।
“মেহু তুমি আমাকে এতোটা অবিশ্বাস করো।
“এটা অবিশ্বাস না নির্ঝর এটাই বাস্তব। কাল আপনার আর আমার সন্তান এলে তখন মাঝখানে আমার অর্ণব’ই অনাদর পাবে। আমি তখন না হতে পারব একজন ভালো মা আর না একজন স্ত্রী। এখন লোকদেখানো বলে আমরা এটা খুব ভালো করছি কিন্তু যখন’ই তা সত্যি হবে তখন এটা তার চেয়েও খারাপ হবে। আপনি এখন বলছেন হবে না কিন্তু আমি জানি তখন এটাই হবে।
অতঃপর মেহেরিন যেতে নিল। নির্ঝর তার সামনে এসে দাঁড়াল। শীতল গলায় বলে উঠল,
“কারণ শুধু এই একটা না আরো আছে।
মেহেরিন শব্দ করে শ্বাস ফেলে বলল,
“ঠিক ধরেছেন আরো আছে, আর তা হলো আমার ভয়াবহ অতীত। যার কারণে আমি ভালোবাসতে ভয় পাই। কাউকে নতুন করে ভালোবাসা এখন আমার পক্ষে আর সম্ভব না।
বলেই পাশ পেরিয়ে যেতে নিল মেহু। নির্ঝর তার হাত ধরে নিল। বলে উঠল,
“একবার সুযোগ দিয়ে দেখ, আমি কথা দিচ্ছি মেহু।
মেহেরিন শব্দ করে হাসল। নির্ঝরের হাত খানা ছাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“সুযোগ! আর না নির্ঝর!
বলেই চলে এলো সেখান থেকে। নির্ঝর দাঁতে দাঁত চেপে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। বেলকনির গ্রিল টাকে মুঠো করে নিল হাতে! বুকের পাশে ব্যাথা করতে লাগলো। ঠোঁট কামড়ে দাড়িয়ে রইল নির্ঝর। না এতো সহজে হেরে যাবে না সে। তার ভালোবাসা মেহেরিন কে বোঝাবে সে। বোঝাতেই হবে!
—–
কনফারেন্স রুমে নিরবের প্রেজেন্টেশন দেখছে মেহেরিন। সে একাই দেখছে, নিরব তাকে সবটা দেখিয়ে তারপর মিটিং এ প্রেজেন্ট করবে। মেহেরিন খুব মনোযোগ দিয়েই দেখছে সবটা। টেবিলে থাকা ফোনটা কেঁপে উঠল। নিরব থেমে গেল। মেহেরিন তাকিয়ে দেখল আননোন নাম্বার! নিরবের দিকে তাকিয়ে হাতে নিল ফোনটা। রিসিভ করে কানে দিল কিন্তু ওপাশ থেকে কোন আওয়াজ’ই পেলো না। মেহেরিন বলে উঠল,
“হ্যালো!
ওপাশ থেকে এখনো কোন কথার আওয়াজ এলো না। মেহেরিন দাঁড়িয়ে গেল। বলে উঠল,
“কে বলছেন?
“মেহেরিন বর্ষা খান!
গলার আওয়াজ শুনে চেয়ার আকড়ে ধরল মেহেরিন। নিরব ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল মেহেরিন’র দিকে। ওপাশ থেকে বলে উঠলো,
“না এখন তো আবার চৌধুরী নামটাও লাগিয়েছো
মেহেরিন বলে উঠল,
“আপনি!
“যাক চিনতে পেরেছ তাহলে!
মেহেরিন সোজা হয়ে দাঁড়াল। শক্ত গলায় বলে উঠল,
“আমাকে হঠাৎ মনে পড়ল যে।
“কি করব বলো, তুমি কাজটাই এমন করলে।
মেহেরিন ভ্রু কুঁচকালো। ওপাশ থেকে বলে উঠলো,
“কি ভাবলে আমার হাত থেকে একটা প্রজেক্ট নিয়ে নিলেই আমাকে শেষ করে দিতে পারবে।
মেহেরিন বাঁকা হাসল। বলে উঠল,
“এটা তো শুরু মিঃ রাফি মল্লিক! এরপর আরো অনেক কিছুই ঘটবে যা আপনার ধারণার বাইরে!
রাফি মল্লিক নামটা শুনে নিরব চমকে হলো। আকস্মিক ভাবে তাকিয়ে রইল মেহেরিন’র দিকে।
লাউডস্পিকারে ফোন টেবিলে রেখে একটা সিগারেট ধরাতে ধরাতে রাফি বলল,
“কি দরকার বলো ঝামেলা করে, সংসার আছে সেটা নিয়েই দেখো!
“মনে হচ্ছে রাফি মল্লিক বেশ ভয় পেয়েছে!
“( শব্দ করে হেসে উঠলো )
মেহেরিন মুচকি হাসল। বলে উঠল,
“এতো বড় ব্যাপার না হলে রাফি মল্লিক নিজে অবশ্য আমায় ফোন করতো না। যাই হোক এটা আপনার সমাপ্তির শুরু রাফি মল্লিক। এটা মাথায় রাখবেন!
“ভুল করছো মেহেরিন!
“ভুল তো আমি সেদিন করেছিলাম যেদিন দি কে দ্বিতীয় বারের মতো আপনার কাছে পাঠিয়েছিলাম। সেই ভুলের মাসুল এখনো দিতে হচ্ছে আমায়।
“কিন্তু তুরুপের তাস তো আমার কাছে!
“মানে!
“অর্ণব! তোমার সবকিছু, মনে রেখো সে কিন্তু আমার’ই সন্তান। তোমার কাছ থেকে তাকে কেড়ে নিতে সময় লাগবে না আমার।
মেহেরিন দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“আমার অর্ণব কে একটা কথাও বলবেন না।
ওপাশ থেকে হাসির আওয়াজ পাওয়া গেল। রাফি শীতল গলায় বলে উঠল,
“আর যাই হোক আদালত কখনো মায়ের খু/নির কাছে তার সন্তান কে রাখতে চাইবে না বলো।
“অর্ণবকে মাঝখানে আনলে আপনার যে কি অবস্থা আমি করবো আপনি ধারণা করতে পারছেন না।
“আচ্ছা যাও ধারণা করবো না। সারপ্রাইজ ভেবে নেবো এমনেতেও আই লাভ সারপ্রাইজ! খেয়াল রেখো নিজের আর অর্ণবেরও!
টুং টুং শব্দে কেটে গেল ফোনটা। ফোনটা ছুঁড়ে ফেলল মেহেরিন। চিৎকার করে উঠলো। নিরব কাছে এসে থামাতে চাইলো তাকে। মেহেরিন মারাত্মক রেগে আছে। রাগে তার পুরো শরীর কাঁপছে। রাফির প্রত্যেকটা কথা তার গায়ে কাঁটার মতো বাঁধছে। পাশে থাকা চেয়ার টাকে দূরে ছুঁড়ে ফেলল মেহেরিন। নিরব থমকে দাড়িয়ে গেল। টেবিলের সবকিছু উলো/টপালোট করে দিচ্ছে মেহেরিন ।জোরে চিৎকার করে বলছে,
“ছাড়বো না, ছাড়বো না আমি। আমার অর্ণবের কিছু করলে শেষ করে দেবো আমি। সবকিছু শেষ করে দেবো আমি, সবকিছু!
নিরব দৌড়ে আসল। মেহেরিন আরেকটা চেয়ার ধরতেই তার হাত ধরে ফেলল। তাকে শান্ত করার চেষ্টা করল। মেহেরিন তার দিকে তাকাল। নিরব তাকিয়ে দেখল মেহেরিন’র দু চোখ রাগে লাল হয়ে আছে। পুরো শরীর কাঁপছে তার। শরীরটাও একটু গরম গরম লাগছে। মেহেরিন বলে উঠল,
“অঅ..অর্ণব আমার। শুধু আমার। বল অর্ণব শুধু আমার ছেলে।
“হ্যাঁ হ্যাঁ মেহু অর্ণব শুধু তোর ছেলে, শুধু তোর।
“তুই জানিস, ও ওও আমাকে কি বলছিল। ও নাকি কেড়ে নেবে, কেড়ে নেবে আমার অর্ণব কে। আমি ছেড়ে দেবো না ওকে। আমার অর্ণবের কিছু করলে আমি ছেড়ে দেবো না ওকে। কিভাবে বলল ও এটা, কিভাবে!
মেহেরিন’র উৎপাত বেড়ে গেল। নিরব তাকে থামানোর জন্য তার দু গালে হাত রাখল। চোখে আশ্বাস দিয়ে বলল,
“কিছু করতে পারবে না, কিছু না। আমি বললাম তো তোকে, রাফি কিছু করতে পারবে না। তুই শান্ত হ!
মেহেরিন শান্ত হলো। নিরব তাকে আগলে নিল। মেহেরিন’র চিৎকারে বাইরে সব স্টাফ এসে জমলো। নির্ঝর দৌড়ে এসে কেবিনে ঢুকল। এসে দেখল নিরব মেহু কে জড়িয়ে ধরে আছে। নির্ঝর থমকে তাকিয়ে রইল শুধু!
#চলবে….