#অনুভূতিতে_তুমি 💖
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে)
#পর্ব_৩৯
দুই বাহু দিয়ে জড়িয়ে ধরে রাখল নির্ঝর তাকে। পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ কি তবে সে! হবে হয়তো। অন্তত তাকে ভালোবাসার একটি মানুষ তো আছে পৃথিবীতে যে কি না তার সর্বস্ব দিয়ে তাকে ভালোবাসতে রাজী। রাজী তাকে আপন করে রাখতে। তার সমস্ত আবদার মেটাতে! তার জন্য নিজের জীবন দিতেও দ্বিধা বোধ করবে না। তাই বলে হয়তো ভালোবাসা সুখ। ভালোবাসার তীব্রতা বোধহয় এটাই যা পাওয়ার জন্য সব মানুষ আকুল হয়ে থাকে। করে অনেক সাধনা। কিন্তু মেহু কিছু না করেই পেয়ে গেল তা! চোখ বন্ধ করে সেই ভালোবাসার অনুভূতি সে পাচ্ছে। কিন্তু ভয় করছে চোখ খুলতে। না জানি হারিয়ে যায় এইসব। আবারো একা হয়ে যায় সে, অন্ধকার তলিয়ে নিয়ে যায় তাকে।
ভালোবাসার তিক্ততা কে খুব ভয় পায় সে। সুখ ক্ষণস্থায়ী এটা ভুলে নি। সুখ দুঃখ নিয়ে জীবন এই সত্য মানে। তবে তার ভাগ্যে হয়তো সুখ একটু কম’ই আছে। কাউকে নিয়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন একদিকে যেমন রুপকথার গল্পের মতো লাগে তেমনি তাকে হারানোর ভয় গভীর সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়ার ন্যায়!
বন্ধ চোখ থেকে চোখ জল গড়িয়ে পড়ল। নির্ঝর অনুভব করল মেহু কাঁদছে। বুকের মাঝে থেকে বের করল তাকে। তার প্রেয়সীর চোখজোড়া এখনো বন্ধ। গাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। মুছে দিতে দ্বিধাবোধ করল না। ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল চোখ জোড়াতে। চোখ মেলে তাকিয়ে এক স্নিগ্ধ হাসি স্বাগতম জানাল তাকে। ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটল। কান্না আর হাসি দুই যেন একসাথে মিলে যাচ্ছে। হাত দুটো নিজের হাতে মুষ্টিবদ্ধ করল। চুমু খেল তাতে। কথা দিল কখনো চোখে জল আসতে দেবে না। হাসির রেখা দীর্ঘ হলো। তবে মনে একটা কথা গেধে গেল। “যে হাসাতে জানে, কান্নার কারণ কিন্তু সেই হয়”!
—–
রাতে ঘুমানোর জন্য বিছানা গোচ্ছাছে মেহু। পেছন থেকে হুট করেই জড়িয়ে ধরল নির্ঝর। চুলে মুখ ডুবিয়ে তাতে ঘ্রাণ নিতে ব্যস্ত সে। কনুই দিয়ে খোঁচা মারল মেহু। নির্ঝর পেটে হাত রেখে দূরে সরে গেল। খিলখিলিয়ে হেসে উঠল। মেহু ভ্রু কুঁচকে পেছন ফিরল। কোমরে দু হাত রেখে জিজ্ঞেস করল,
“হচ্ছে টা কি?
“একটু প্রেম করছিলাম আর কি!
“এখন ঘুমানোর সময়, এইসব প্রেম টেম রাখুন আর ঘুমাতে যান!
“ঠিক আছে!
বলেই বাঁকা হাসল। মেহু কে জড়িয়ে ধরে বিছানায় শুয়ে পড়ল। মুচরা মুচরি শুরু করল মেহু। কড়া গলায় বলে উঠল,
“কি করছেন?
“আহ ঘুমাচ্ছি তো!
“আমি ঘুমাতে পারছি না।
তাকে ছেড়ে দিয়ে বিছানায় আসন পেতে বসল। তার দেখাদেখি মেহুও উঠে বসল। ধপাস করে টান টান হয়ে শুয়ে পড়ল সে। এক হাত সোজা করে বিছিয়ে দিল। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল নিশিকন্যা। হিচকে টেনে হাতের উপর শুইয়ে দিল। বলে উঠল,
“এটা বালিশের চেয়েও ভালো, তোমার ঘুম ভালো হবে!
এতো যত্ন দেখে নির্ঝরের দিকে পাশ হয়ে শুল। মুচকি হেসে তাকাল তার দিকে। নির্ঝর তার কপালে ঠোঁটের ছোঁয়া দিল। তাকিয়ে রইল প্রেয়সীর হরিণী চোখের চোঁখের দিকে। এগিয়ে যেতে নিল তার দিকে। মেহু চোখ জোড়া বন্ধ করে নিল। ঘন ঘন শ্বাস ফেলতে লাগল। আচমকা দরজা খুলে কেউ প্রবেশ করল ঘরে। তৎক্ষণাৎ উঠে বসল দুজন। পরিবেশ হঠাৎ করেই শান্ত হয়ে গেল!ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে রইল তাদের দিকে। দুই হাত বাহুতে গুঁজে ছোট ছোট পা করে এগিয়ে এলো। মেহু আর নির্ঝর দুজনে দু’জনের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। নিজেদের অপরাধী অপরাধী মনে হতে লাগল।
সে উঠে বিছানায় আসল। দুজনের মাঝখানে এসে বসল। মেহু আর নির্ঝর দুজনেই একটু সরে বসল। মাথা ঘুরিয়ে একবার এদিক তাকাল। নির্ঝর ঢোক গিলে হেসে দিল। মেহুর দিকে তাকাতেই সেও হাসল। মাঝখানে ধপাস করে শুইয়ে পড়ল সে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো দুজন। জোরে গলায় বলে উঠল,
“মাম্মিইইই!
মেহু উঠে বলল,
“আলো বন্ধ করছি অর্ণব সোনা!
ঘরের আলো নিভিয়ে দিল। অর্ণব চোখ বন্ধ করে নিল। নির্ঝর মুখ টিপে হেসে শুয়ে পড়ল বিছানার কোনে। অর্ণব এসে জড়িয়ে ধরল তাকে। ঘরের ল্যাম্পশেডের আলো জ্বলছে। মেহু হেসে নিজের জায়গায় শুয়ে পড়ল। পাশ ফিরে তাকাল নির্ঝরের দিকে। হুট করেই নির্ঝর চোখ টিপ দিল। কপালে ভাঁজ পড়ল তার। ঠোঁট কামড়ে ধরে ইশারা করতে লাগলো। রেগে ওপাশ ফিরে ঘুমাল সে। অর্ণব চোখ মেলে তাকাল নির্ঝরের দিকে। সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেলল সে। তার বুকের মাঝে মাথা ঢুকিয়ে শুইয়ে পড়ল সে। নির্ঝর তার কপালে চুমু খেয়ে জড়িয়ে ধরল তাকে!
সাত সকালে ঘুম ভাঙল কারো ঠোঁটের ছোঁয়ায়। ঘুমে ক্লান্ত চোখ গুলো মেলতে ইচ্ছে করল না। তবুও তাকাল সে। কিঞ্চিত হেসে মেহুর নাকে চুমু খেয়ে বলল,
“গুড মর্নিং মেহু!
মেহু “হামম” বলে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল। নির্ঝর ডাকতে লাগল তাকে। চাদরে মুখ ঢুকিয়ে বলল,
“আমি আরো ঘুমাবো, আপনি আজ এতো সকাল সকাল কেন উঠেছেন!
“নিজের হাতে চা বানিয়েছি, খাবে না তুমি।
“এখন ঘুমাবো, গুড নাইট!
বলেই ঘুমিয়ে পড়ল। খানিকক্ষণ পর উষ্ণতা পেল সে। তার পেটে কেউ হাত রেখে জড়িয়ে ধরে আছে তাকে। ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে বলল,
“মেহু!
“অর্ণব উঠে যাবে ঘুম থেকে!
“আমার ছেলে উঠেও পড়েছে, নিচে সে!
“ভালো হয়েছে আপনিও যান।
“এতো আলসেমি কেন করছো আজ।
“জানি না, খুব ঘুম পাচ্ছে নির্ঝর!
“আচ্ছা ঘুমাও, আমি জড়িয়ে ধরে আছি তোমায়!
ঘুমের মাঝেই মুচকি হাসল সে। পাশ ফিরিয়ে এদিক ফিরল। নির্ঝরের বুকের মাঝে মুখ লুকাল। শক্ত করে জড়িয়ে ধরল নির্ঝর তাকে। ঘুম ঘুম চোখে মুখ তুলে বলল,
“এতো শক্ত করে ধরেছেন কেন? পালিয়ে যাচ্ছি নাকি!
“আহ তা না, আমি তোমার হৃদস্পন্দন চেক করছি। দেখছি ভালো করে হার্টবিট চলছে কি না।
“তা কি দেখলেন।
“খুব ভালো মতো চলছে হার্টবিট, একদম পারফেক্ট!
মেহু হেসে মুখ লুকাল বুকের মাঝে। গুনগুনিয়ে বলল,
“এতো ভালোবাসেন আমায়।
“অনেক ভালোবাসি তোমায়, কিন্তু তুমি!
মুখ তুলে বলল,
“বাসি না!
“আচ্ছা তাই!
বলেই শুড়শুড়ি দিতে লাগল। ছটফক করতে লাগলো মেহেরিন। ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল নিচে। নির্ঝর নিচ থেকে উপরে আসতেই ওপাশ দিয়ে নেমে গেল সে। ছোটাছুটি শুরু করল দুজন। একসময় ধরা পড়ল নির্ঝরের মাঝে। হাত দুটো পিছনে ঘুরিয়ে টেনে আনল নিজের কাছে। ঘড়ির এলার্ম বেজে উঠল এর মাঝে। মেহেরিন হেসে বলল,
“ছাড়ুন, তৈরি হতে হবে। অফিসে যাবো।
“ঠিক আছে!
বলেই ছেড়ে দিল নির্ঝর। খানিকটা অবাক লাগল, এককথায় ছেড়ে দিল। তৎক্ষণাৎ কোলে তুলে নিল তাকে। মেহু গলা জড়িয়ে ধরল তার। কি করতে চলেছে নির্ঝর। তাকে কোলে করে নিয়ে গেল ওয়াশরুমে। নামাল সেখানে। মাথায় হাত রেখে চুল গুলো এলোমেলো করে দিল। বলে উঠল,
“চুল গুলো উসকোখুসকো হয়ে গেছে তোমার, শ্যাম্পু করে দিই আমি!
মেহুর লজ্জা লাগল! বলে উঠল,
“না আমিই করে নেবো!
কিন্তু কথা শুনল না নির্ঝর! ঝর্ণার পানি ছাড়ল সে। মেহু দাঁড়িয়ে ভিজছে তাতে। ঝর্ণার পানি বন্ধ করে, হাতে শ্যাম্পু নিয়ে মাথায় দিল তার। পিছনে ঘুরিয়ে নিল তাকে। মেহু আয়নায় তাকিয়ে দেখছে নির্ঝরকে। নির্ঝর সযত্নে শ্যামু করিয়ে দিচ্ছে তার মাথায়। মুখ তুলে মেহু তাকাল নির্ঝরের দিকে। নির্ঝর হেসে মাথা সোজা করল তার। মাথার ফ্যানা লাগিয়ে দিল মেহুর ঘাড়ে। লাফিয়ে উঠল সে। ঠিক জানত নির্ঝর এখানেও এসেও পাগলামি শুরু করবে। মেহু হাতে ফ্যানা নিয়ে তাকে মাখাতে গেলেই দূরে সরে গেল সে। পা উঁচু করে দাঁড়াল। মেহু হাত দিয়ে তার ঘাড় অবদি হাত পৌছাতে পারল না। নির্ঝর হেসে তার গালে মাখিয়ে দিল। রেগে গেল মেহু। জামার কলার টেনে মাথা নামাল তার। নিজের গালের ফ্যানা লাগিয়ে দিতে গিয়েও লাগাল না। জিহ্বা বের করে দেখাল তাকে। নির্ঝরের গায়ের গেঞ্জিতে মুখ মুছল নিজের। নাক ছিটকালো নির্ঝর। কোমর জরিয়ে কোলে তুলে নিল তাকে। বলে উঠল,
“তুমি এখনো কতো ছোট দেখলে, আমার ঘাড় অবদি পৌঁছাতে তোমার হাল বেহাল!
মেহু দাঁত বের করে হেসে বলল,
“আমি ছোট তো কি আপনি লম্বা তো। আমার জানা আছে কিভাবে লম্বা মানুষ কে নিচু করতে হয়। বুঝলেন!
নির্ঝর ঠোঁট কামড়ে তাকিয়ে রইল। মেহু তার থেকে ছোটার জন্য ছটফট করতে লাগলো। ঘরের ভেতর থেকে অর্ণবের শব্দ শোনা গেল। ওয়াশরুমের দরজায় নক করে বলে উঠলো,
“মাম্মি!
মেহু হেসে নির্ঝরের দিকে তাকাল। বলল,
“বলো!
“মাম্মি, ড্যাডি!
নির্ঝর মাথা নাড়িয়ে না না করছে। মেহু দাঁত বের করে হেসে বলল,
“ড্যাডি এখানে!
নির্ঝর ছেড়ে দিল মেহু কে ছেড়ে দিয়ে বলল,
“অর্ণব! ধপাস করে পড়ে গেল মেহু। এতোটা ব্যাথা পায়নি তবুও রেগে তাকিয়ে রইল নির্ঝরের দিকে। নির্ঝর নিজেও থতবত খেয়ে গেল। পড়ে যাবার শব্দ শুনে অর্ণব দরজায় টোকা দিল। মেহু বলল,
“অর্ণব আসো!
অর্ণব ভিতরে এলো। মেহু কে বসে থাকতে দেখে তার কাছে গেল। মেহু অর্ণব কে কোলে বসিয়ে বলল,
“তোমার চুল গুলো কেমন লাগছে,মাম্মি শ্যাম্পু করিয়ে দিই।
অর্ণব মাথা নাড়ল। মেহু হেসে নির্ঝর কে খোঁচা মেরে বলল,
“শ্যাম্পু দিন!
নির্ঝর হুকুম পালন করল। মেহু বসে অর্ণবের মাথায় শ্যাম্পু করতে লাগলো। নির্ঝর একটা টুল পেতে বসল। মেহুর মাথাম শ্যাম্পু করিয়ে দিতে লাগল সে!
#চলবে….