অনুভূতিতে তুমি 💖পর্ব-৪০

0
2304

#অনুভূতিতে_তুমি 💖
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে)
#পর্ব_৪০

আজকের দিনটা অন্যরকম ! হ্যাঁ আসলেই আজকের দিনটা অন্য দিন গুলোর চেয়ে আলাদা লাগছে। এর কারণ কি জানা নেই তবু এই বদলটা একটা ভালো লাগা আছে। অর্ণব কে সবে চৌধুরী বাড়িতে রেখে দুজনে রওনা দিয়েছে অফিসের দিকে। জোড়টা অর্ণবের’ই ছিল। দাদিমা কে দেখার জন্য প্রায় পাগল ছিল সে। এই বদলটাও খুব ভালো লাগল।

পাশে বসে নির্ঝর আপন মনে গাড়ি চালাচ্ছে। সড়কে আজ যানজট নেই, কিন্তু কেন? অন্যদিন তাড়াতাড়ি বের হবার পরও কিছু না কিছু একটা হবে কিন্তু আজ দেরি করে বের হবার পরও তেমন কিছুই ঘটছে না। এর কারণ কি আমি ধরে নিব আপনাকে নির্ঝর!

পাশে বসা মানুষটার দিকে তাকিয়ে কিঞ্চিত হেসে কথাগুলো ভাবছে মেহু। সবকিছু কেই দারুন মনে হচ্ছে। যখন কেউ প্রথম প্রথম প্রেমে পড়ে তখন চারপাশের প্রকৃতি তার কাছে যেমন লাগে ঠিক তেমনি লাগছে মেহুর কাছে। আচমকা নির্ঝর ফিরল মেহুর দিকে। থমতম খেয়ে গেল সে। ভ্রু উঠিয়ে ইশারা করল “কি হয়েছে”! মাথা নেড়ে না বলে বাইরের দিকে তাকাল সে। বিশাল এই আকাশ আজ পরিষ্কার। রাস্তার একপাশে স্কুলে যাবার বাচ্চার ঝোঁক দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ মনে পড়ল অর্ণব কেও তো স্কুলে পাঠাতে হবে। কিন্তু সেখানে গিয়ে মিশতে সমস্যা হবে না তো ওর। সমস্যা হলেও তা থেকে পিছু না হটে সমাধান বের করতে হবে। আর পিছুটান না!

মাথায় কারো স্পর্শ পেয়ে মুখ ঘুরল মেহু। নির্ঝর তার মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে টেনে নিজের কাছে আনল। ঘাড়ে তার মাথা রেখে বলল,

“এতো মনোযোগ দিয়ে কি ভাবছো!

মেহু নির্ঝর কে জড়িয়ে ধরে বলল,
“সবটাই কেন আজ অন্যরকম লাগছে!

মুচকি হেসে জবাব দিল,
“কারণ আমি তোমার সাথে!

মাথা তুলে সেই মুখ খানা দেখল মেহু। চোখ বন্ধ করে সযত্নে মুখ ফুটে বলে উঠলো,
“যদি আপনাকে পাবার পর আমার জীবন বদলে যায় আর সেই বদলটা হয় আমার ভালোর জন্য তাহলে আমি আপনাকে চাই নির্ঝর!

লজ্জা পেয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরল নির্ঝর। এক হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরল তাকে। বলার মতো তো কতো কথাই আছে কিন্তু কিছু অনুভূতি থাকে যা কিনা কথার চেয়েও বেশি বুঝিয়ে দেই। সেই অনুভূতি অনুভব করছে মেহু….

—-

প্রথমবার অফিসে এক সাথে প্রবেশ করল দুজন। দুজনকে এভাবে একসাথে দেখে নজর পড়ল সবার।‌ কানাঘুষা চলতে শুরু করল। কিছু কিছু কথা কানে এলো নিরবের। নিরব চোখের পাতা ফেলে তাকিয়ে রইল তাদের দিকে। হ্যাঁ দুজনকেই অস্বাভাবিক লাগছে। আর সবচেয়ে বেশি অস্বাভাবিক লাগছে মেহুর মুখের হাসি। এই হাসি সচরাচর মেহুর মুখে দেখা যায় না। নির্ঝর হেঁটে এগিয়ে যাচ্ছে মেহুর কেবিনে। দরজা খুলে মেহু প্রবেশ করল তার কেবিনে। তার পিছু পিছু নির্ঝর! মেহু তাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে হাত ধরে টেনে বাইরে বের করে দিয়ে বলল,

“আপনার কেবিন ওটা, ওদিকে যান!

“তোমার আমার কি, যা তোমার তা আমারও!

“জ্বি না! এটা কাজের জায়গা, অত্যন্ত এখানে আমাকে জ্বালাতন করবেন না। শান্তিতে কাজ করতে দিন। ঠিক আছে!

বলেই কেবিনে প্রবেশ করল মেহু। হঠাৎ করেই দরজা বন্ধ করার শব্দ কানে এলো। পিছনে ঘুরতে না ঘুরতেই হেঁচকি টেনে নিজের কাছে টেনে আনলো নির্ঝর। বিরক্ত ভেসে উঠল মুখে। নির্ঝর মনে হলো বেশ মজা পেল।

“বেশ যন্ত্রণা করছেন কিন্তু নির্ঝর!

নির্ঝর কানে চুল গুলো গুঁজে দিয়ে বলল,
“আমার কাজ’ই এটা, তোমাকে জ্বালাতন করা বুঝলে!

“এটা অফিস, আমার কেবিন।

“হ্যাঁ জানি, তাই তো বেশি কিছু করবো না।

“মানে কি করব..
বলার আগেই হুট করে আলতো করে চুমু খেল মেহুর ঠোঁটে। মেহু নির্বাক হয়ে ঠোঁটে হাত দিয়ে তাকিয়ে রইল। নির্ঝর মেহু কে ছেড়ে জলদি বের হয়ে বলল,

“আর জ্বালাতন করছি না তোমায়, করো এখন তোমার কাজ তুমি!

বলেই চলে গেল সে। দরজা আপনা আপনি আটকে গেল। আচমকা হেসে উঠলো মেহু। “পাগল একটা” মুখ ফুটে বলল সে। লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে গেছে। সামনে কাঁচের কাছে এসে নিজেকে দেখেই নিজেই অবাক হলো। এটা কি লজ্জা পাওয়ার কি আছে এতো! ওমা এটা বলতেই যেন লাল আরো বেশি লাল হয়ে গেল। মেহু ঘুরে গেল। না হয়তো তার চোখ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে নাহলে মন। উল্টোপাল্টা দেখছে নাহলে উল্টোপাল্টা ভাবছে। নির্ঝর থাকতে কোন কিছুই ঠিক হবার নয়।

ফাইল হাতে নিয়ে কাজের জায়গায় নির্ঝরের কথা ভেবে চলেছে মেহু। মিটিমিটি হাসছে সে! কলমের গুঁতা দিয়ে ধ্যান ভাঙাল নিরব। জড়োসড়ো হয়ে বসল সে। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে নিরব তাকিয়ে আছে তার দিকে। প্রশ্ন করতে সময় নিল না।

“হয়েছে কি তোর?

“কিছু না! কি হবে।

“না, কিছু একটা হয়েছে। ব্যাপার কি খোলাসা কর।

“আমি না একটা কথা ভাবছি।

“নির্ঝর কে নিয়ে..

“হুম!

বুক ধক করে উঠলো নিরবের। মনে হচ্ছে সেটাই হতে চলেছে যা হতে দিতে চায় না সে। পরের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে না। গলা কমশ্র শুকিয়ে আসছে। মেহু কে দেখে মনে হচ্ছে কিছু একটা বলবে সে। কি তা শ্রবণ করার সাহস নেই নিরবের। উঠে দাঁড়াল। ফাইল হাতে নিয়ে ব্যস্ততা দেখাল!

“আচ্ছা পড়ে শুনবো, শোন সামনের সপ্তাহের প্রজেক্ট এর..

“আমি তৈরি করবো প্রেজেন্টেশন, তুই চিন্তা করিস না।

“আচ্ছা, আমি ফাইলটা চেক করে আসছি।

“এই না বললি এটা চেক করেছিস, আবার..

“না কিছু একটা বাদ পড়েছে মনে হচ্ছে…

হন হন করে চলে গেল নিরব। পিছন ফিরে তাকাল না একবার। তাকালেই মেহু ডাকতো তাকে। তার শ্বাস নেওয়া কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। আবারো সেই পুরনো ক্ষত, পুরনো ব্যাথা! দ্বিতীয় বারের মতো হারিয়ে ফেলেছ সে তাকে। এই ব্যাথা বোঝানোর সাধ্য কাউকে নেই তার। খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে মুখ খুলে শ্বাস নিতে লাগল। বুকের মাঝে কেউ যেন ছুরি দিয়ে আঘাত করছে বোধহয়। তবুও ছুরির আঘাতের শেষ হলেও এই আঘাত যেন শেষ হবার নাম নিচ্ছে না!

পাশে কারো উপস্থিত পেয়ে নিজেকে সংযত করল নিরব। নির্ঝর তার দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখ মলিন‌। নিরব হেসে বলল,
“তাহলে তুমি পেয়ে গেছো তাকে!

নির্ঝর হেসে মুখ ঘুরাল। মুখ খুলে শ্বাস নিয়ে বলল,
“তোমার হয়তো মনে হচ্ছে তোমার কষ্ট টা কেউ বুঝতে পারছে না। কিন্তু এই ধারণা ভুল,‌ কারণ সেদিন যখন তুমি ভুল হাতে মেহুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল এই একই কষ্ট আমিও পেয়েছিলাম!

নিরব চোখ মুখ শক্ত করে নিল। কঠিন গলায় বলে উঠল,
“সিমপ্যাথি চাই না তোমার!

যাবার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই নির্ঝর বলে উঠল,
“মেহু কিন্তু অনেক খুশি,‌ আর আমি জানি তুমি যতোটা না ভালোবাসো মেহুকে তার চেয়ে বেশি চাও সে খুশি থাকুক!

নিরবের চোখে যেন অশ্রু জমে গেল। হন হন হেঁটে নিজের কেবিনে এলো সে। ওয়াশরুমের এসে শক্ত হয়ে দাঁড়াল। মুখে চোখে পানি ছিটাল। চোখ জোড়া লাল হয়ে আছে তার। দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে রইল আয়নার দিকে!

লাঞ্চ টাইম হতে না হতেই মেহুর কেবিনে ঢুকল নির্ঝর। মেহু কড়া গলায় বলে উঠল,
“কারো কেবিনে আসার আগে পারমিশন নিতে হয় নির্ঝর, জানেন না আপনি!

বাঁকা হেসে সামনে অগ্রসর হলো নির্ঝর। মেহু ল্যাপটবে মুখ গুজে আছে। চেয়ার টেনে এক ঝটকায় নিজের দিকে ঘুরাল সে। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল মেহু। হাঁটু গেড়ে বসল নির্ঝর। মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

“লাঞ্চ টাইম এখন!

“আমার অনেক কাজ আছে নির্ঝর!
বলেই আবারো ল্যাপটবের দিকে তাকাতেই নির্ঝর এক ঝটকায় কোলে তুলে তাকে। মেহু অবাক হয়ে গলা জড়িয়ে ধরে বলল,

“আরে কি করছেন নির্ঝর!

“নিজের পায়ে হেঁটে যেতে চাও নাকি আমার কোলে করে!

“নির্ঝর নামান আমাকে!

“তাহলে বলো যাচ্ছ।

“নামালে তো যাবো!

নির্ঝর মুখ কাছে এনে মেহু কে কিছু বলতে নিল ঠিক এই সময়ে নিরব ঢুকে বলল,
“মেহু…

নির্ঝর নামিয়ে দিল মেহু কে। নিরব ঢোক গিলে “সরি” বলে সাথে সাথে বের হয়ে গেল। মেহু কে কিছু বলার সুযোগ দিল না সে। বিরক্ত চোখে তাকাল নির্ঝরের দিকে। নির্ঝর তোয়াক্কা না করে হাত ধরে টেনে বাইরে নিয়ে এলো তাকে!

অবাক চোখে তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে। মাঝে মাঝেই ভ্রু কুঁচকে যাচ্ছে তার। বুঝতে পারছে না কি চলছে এখানে। খাবার তার সামনে অনেকক্ষণ ধরেই। তবু খেতে পারছে না। নির্ঝর খেতে দিচ্ছে না তাকে। বসিয়ে রেখেছে।‌ বার বার পিছু ফিরে চাচ্ছে।‌ কিসের অপেক্ষা করছে সে।
খাবার হাতে ওয়েটার কে আসতে দেখা গেল। কিছু একটা নিয়ে তাদের দিকেই আসছে সে। খাবার রাখল তাদের সামনে। মেহু অবাক কন্ঠে বলল,

“পায়েস! নির্ঝর এটার জন্য অপেক্ষা করছিলেন আপনি!

“হ্যাঁ !

“কিন্তু কেন? সবাই তো খাবারের শেষে খায় পায়েস, আপনি এটার জন্য আমাকে বসিয়ে রাখছেন কেন?

মুচকি হাসল নির্ঝর। চেয়ার টেনে প্রেয়সীর পাশে বসল। পায়েস হাতে নিয়ে তার মুখে তুলে দিয়ে বলল,
“নাও খাও, আমাদের প্রথম ডেট আজ। কিছু একটা স্পেশাল করার তো দরকার ছিল বলো তো!

“এতো ফরমালিটি কবে থেকে মানা শুরু করলেন বলুন তো।

“জানি না কিন্তু ইচ্ছে করছে। চিন্তা করো না ( কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল ) নেক্সট টাইম এটার চেয়ে বেটার মিষ্টি খাওয়াবো!

প্রখর দৃষ্টি নিক্ষেপ করল মেহু। নির্ঝর হেসে বলে উঠল,
“মানে নিজের হাতে তৈরি করে খাওয়াবো। আমাদের ফার্স্ট ডেট এটা, কিন্তু শেষ না।

“একটু বেশি পাগলামি করছেন না আপনি

“কি করবো বলো, তুমি সাথে থাকলেই পাগলামি করতে ইচ্ছে করে! নাও মুখে নাও!

মেহু হেসে মুখে দিল। অতঃপর দুপুরের খাওয়া শুরু করল। নির্ঝর হাত দিয়ে মুখে লাগা খাবার মুছে দিল। সবার অগোচরে চুমু খেলো গালে। এ যেন প্রথম প্রেমে পড়া যুবক যুবতী! দূর থেকে শান্ত স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিরব। নিজেকে নির্ঝরের সাথে কল্পনা করছে সে। আফসোস! কেন নির্ঝর হলো না সে, মেহু কেন তাকে ভালোবাসলো না! নিজেকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দুর্ভাগা বলে মনে হচ্ছে তার। একবার না দু দুবার নিজের ভালোবাসা কে হারিয়েছে সে। প্রত্যেক বার’ই কেউ এসে তার ভালোবাসার সীমাবদ্ধতা থেকে ছোঁ মেরে নিয়ে যাচ্ছে। আগলে রাখতে পারছে না। এই কষ্ট কি সহজে ভুলে ফেলা যায়…

—–

ছুটে এসে হাত পাতল মেহুর কাছে। রান্না ঘরে রাতের খাবার তৈরিতে ব্যস্ত সে। মিষ্টি গলায় মন ভুলানোর জন্য বলে উঠলো,

“মাম্মি…

তবে তার ডাক শায় দিল না। না তাকিয়ে মেহেরিন বলল,
“আর না অর্ণব, আবার কালকে?

ছোট মনটা মানল না। মেহুর জামা ধরে টানতে লাগলো সে। মেহুর উপর তার কোন প্রভাবই পড়ল না। এতো কষ্ট শুধু একটি মোয়া খাবার আবদার। দাদিমা এক বোয়াম মোয়া বানিয়ে দিয়েছে তাকে। অর্ণব তা থেকে দু টো খেয়েছে। মেহেরিন কোন মতেই এই রাত্রি বেলা তা খেতে দিতে রাজি না। উপায়ন্তর না দেখে ড্যাডির কাছে ছুটল সে। তার কোলে বসে দু গাল হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল নির্ঝর কে!

“কি চাই অর্ণব সোনার?

“মো….য়া!

“দাদিমা বানিয়ে দিয়েছে!

“মাথা নাড়ল সে!

রান্না ঘর থেকে মেহু উচ্চস্বরে বলল,
“নির্ঘাত জ্বালাতন করেছে। আগামীকাল থেকে আর সেখানে পাঠাবো না। শুধু শুধু খাটাচ্ছে আন্টি কে। কি দরকার ছিল এগুলোর!

“আহ রাগ করছো কেন? নাতির জন্য’ই তো বানিয়েছে নাহলে আর কার জন্য বানাবে।

“নাতি এমন হলে কি করবে শুনি!

মুখ ভার হয়ে অর্ণবের। নির্ঝর কপালে চুমু খেয়ে বলল,
“কয়টা খাবে তুমি মোয়া!

মুখ উজ্জল হয়ে উঠল। দাঁত বের করে হেসে আঙুল গুনে দেখাল দুটো। রান্না ঘর থেকে আবারো মেহেরিন’র স্বর,
“মোটেও না, একটাও পাবে না তুমি। রাতে খাবার সময় না এগুলো!

“তাহলে কখন খাবার সময় শুনি, খাবার তো খাবার’ই না!

রান্না ঘর ছেড়ে বের হলো মেহু। ভ্রু কুঁচকে বলে উঠল,
“না তা না। কিছু ফরমালিটি আছে এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন।

অর্ণব ভ্রু কুঁচকে তাকাল নির্ঝরের দিকে। নির্ঝর আমতা আমতা করে বলল,
“আহ কিসের মাঝে কিহ?

মেহু হেসে চলে গেল। অর্ণব জামা ধরে টানাটানি শুরু করল।
“আচ্ছা, চলো দিচ্ছি তোমায়!

পা টিপে টিপে রান্না ঘরের ভিতর আগালো দুজন। পুরো রান্না ঘর খুঁজতে লাগল তারা। কোথায় রেখেছে সেই বোয়াম। নির্ঝরের জামা ধরে টেনে অর্ণব উপরের ধাকে ইশারা করল। নির্ঝর ধীরে ধীরে কোন শব্দ না করে উপরের দিকে হাত বাড়াল। অবশেষে পেল তা। বোয়াম খুলে দুটো মোয়া দিল অর্ণবের হাতে। বোয়াম বন্ধ করে ভিতরে রাখতে যাবে ঠিক তখনই পেছন থেকে কেউ বলে উঠল,

“কি চুরি করা হচ্ছে শুনি!

মেহুর আওয়াজ পেতেই অর্ণব এক ছুট! নির্ঝর যেতে নিলেই মেহু এসে পথ আটকালো। শীতল গলায় বলল,
“কি করছিলেন?

“কককই কিছু না তো!

বোয়ামটা পেছনে লুকাল। মেহু আবারো শীতল গলায় বলল,
“তাই! তাহলে অর্ণব দৌড় দিল কেন?

“জানি না তো, আমি দেখে আসছি!

বলেই পালানোর ধান্দা! রুটি বেলুনি নিয়ে চট করে বাড়ি মারল নির্ঝরের মাথায়।

“আউচ!

“আমি বারণ করা সত্তেও কেন দিলেন এটা!

“আমি ড্যাডি তাই দিয়েছি!

মেহু আবারো বাড়ি মারল।

“কি করছো?

“আমি মাম্মি তাই ড্যাডি কে ছেলের পাপের ফল দিচ্ছি। আপনারা কেউ কথা শুনেন না আমার। দুজনেই এক!

এগিয়ে এলো নির্ঝর। বাঁকা হেসে বলল,
“আমার কথা কবে শুনো তুমি!

পিছিয়ে গেল মেহু। নির্ঝর কিছু একটা করতে চলেছে তা বুঝতে বাকি নেই। এগিয়ে আসছে সে। হঠাৎ করেই তার খুব কাছে চলে এলো। পুরো শরির কম্পিত হচ্ছে তার। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠল,
“নির্ঝর!

কানে হয়তো পৌঁছাল না কথাটা। সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। এগিয়ে আসছে তার’ই। মেহু ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিল।‌উপরের ধাকে বোয়াম রেখে হেসে দিল নির্ঝর। মেহু চোখ খুলে তাকালো।

“ভয় পেলো কেন?

“কিছু না, দূরে সরুন!

“আহ আগে বলো ভয় কেন পেলে, যাই হোক খুব ভয় পেয়েছ তুমি!

“না কিছু না!

“কিছু না বললেই হবে, আমি জানি!
বলেই ঝুঁকে পড়ল। মেহু আমতা আমতা করে বলল,

“আমি ভাবলাম,

“কি ভাবলে !

“ভাবলাম আপনি পাগলামি করবেন, একটা পাগল আপনি বুঝলেন। এখন দেখি সরুন!

বলেই নির্ঝর কে সরিয়ে দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিল মেহু। হুট করেই হাত ধরে ফেলল তার। কাছে টেনে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরল। মেহু মোচরা মুচরি করছে। নির্ঝর হেসে বলল,
“পাগলামি না দেখেই চলে যাচ্ছ!

মেহু নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কারো উষ্ণ ছোঁয়া পেতেই মূহুর্তেই চোখ বন্ধ বুঝে ফেলল। নির্ঝর হাত ছেড়ে দিয়ে সরে এলো তার কাছ থেকে। লজ্জায় তাকাতে পারছে না মেহু। তবুও সাহস করে মুখ তুলে তাকাল সে।‌ এটাই যেন তার কাল হলো। নির্ঝর আবারো এসে আঁকড়ে ধরল তাকে। আলতো করে জরিয়ে ধরল কোমড়। মেহু খামচে নির্ঝরের শার্ট ধরে রইল। মেহু কে ছাড়তে রাজি না সে। তার ঠোঁটের ছোঁয়া যেন নেশায় পরিণত হয়েছে।
অনেকক্ষণ পর ছাড়ল নির্ঝর মেহু কে। ঘন ঘন শ্বাস ফেলছে মেহু। নির্ঝরের বুকে মাথা ঠেকিয়ে আছে। হঠাৎ করেই পোড়া পোড়া গন্ধ আসতে লাগলো দু’জনের নাকে। অবাক হয়ে একজনের মুখ চেয়ে রইল আরেকজন! মূহুর্তে মনে পড়ল চুলোয় বসিয়ে রাখা তরকারি’র কথা। মেহু ছুটে এসে দেখল তরকারি খানিকটা পুড়ে গেছে। চুলো বন্ধ করে কপালে হাত ঠেকাল। পেছনে ফিরতেই নির্ঝর জিহ্বা কামড়ে হেসে উঠল। মেহু কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না‌। নাকে হাত দিয়ে উপস্থিত হলো অর্ণব। পুরো মুখে মোয়ার অংশবিশেষ লেগে আছে তার। নাকি নাকি সুরে বলে উঠল,

“মাম্মি!

এই পরিস্থিতিতে হাসি ছাড়া আর কিছু জানা ছিল না। বিরক্তি আর হাসি দুটোয় চেহারায় ফুটে উঠল!

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here