#অনুভূতিতে_তুমি 💖
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে)
#পর্ব_৪১
মিটিংয়ের প্রেজেন্টেশন তৈরিতে ব্যস্ত মেহু! রাতের খাবার টা খেতে পর্যন্ত আসে নি সে। নির্ঝর আর অর্ণব দুজন একা একাই রাতের খাবার খেল। অতঃপর বসার ঘরে দুষ্টামি করতে করতে অর্ণব একসময় নির্ঝরের কোলেই ঘুমিয়ে পড়ল। নির্ঝর অর্ণব কে কোলে করে ঘরে এলো। বিছানায় অর্ণব কে শুইয়ে দিয়ে চোখ বুলিয়ে দেখল সোফার কোনে তার নিশি কন্যা গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে। নির্ঝর হেসে সোফার কাছে গেল। কোনে বসে হাত বোলাতে লাগাল মেহুর মাথায়।
“কেন যে এতো টেনশন নেয় মেয়েটা, বুঝি না। এভাবে কেউ ঘুমায় এখানে। পড়ে গেল কি হবে? কাজ ও যাবে শরীর ও যাবে!
আচমকা হাসি ফুটে। কেন জানি মেহু কে বকতেও ভালো লাগে। তবে বকার মাঝেই হুট করেই হেসে ফেলা কোন কাজের কথা না। কপালে দু ঠোঁট ছুঁইয়ে চুমু খেল নির্ঝর! দ্রুত চোখ মেলে তাকাল মেহু। কপাল কুঁচকে বলে উঠল,
“কি করছেন আপনি!
হতচকিয়ে গেল নির্ঝর। ধপাস করে মেঝেতে বসে বলল,
“তুমি জেগে ছিলে!
উঠে বসল মেহু। দুই হাত দিয়ে চুল গুলো কানে গুঁজে বলল,
“ঘুমিয়ে ছিলাম না আবার জেগেও ছিলাম না, শুধু চোখ বন্ধ করে মাথা ঠান্ডা করার চেষ্টা!
নির্ঝর হাঁটু গেড়িয়ে কাছে আসল। মেহুর দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“আমাকে বললেই হতো, মাথা ঠান্ডা করার ব্যবস্থা করে দিতাম!
দু হাত নির্ঝরের গালে রেখে জবাব দিল,
“হ্যাঁ পারতেন, তবে মাথা ঠান্ডা না আমাকে পাগল করতেন।
দাঁত বের করে হেসে দিল নির্ঝর। মুচকি হেসে কপাল ঠেকাল মেহু। জিজ্ঞেস করল,
“অর্ণব ঘুমিয়ে পড়েছে!
“হুম, মাত্র!
“আচ্ছা, আমার কাজ আছে। আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন আমার দেরি হবে!
বলেই যেই না মাথা সরাতে যাবে ওমনি নির্ঝর তার মাথায় হাত রেখে বলল,
“কিছুক্ষণ থাকো না এভাবে!
মেহু মাথা ঠেকিয়ে মুখ টিপে হাসল। কিছুক্ষণ থাকল দুজন এভাবে। মনে হলো চারপাশের সময় থমকে গেছে। দুজনের নিঃশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কিছুই কানে আসছিল না। দু চোখ বন্ধ করে অনুভব করছিল দুজন! দুজনের অনুভূতি অনুভব করছিল তারা। খানিকক্ষণ পর মাথা উঠিয়ে নেয় মেহু। চুমু খায় নির্ঝরের কপালে।
“যান ঘুমিয়ে পড়ুন, আমার কাজ আছে!
বলেই আবারো ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়ে মেহু। পুরোটা মনোযোগ দেবার চেষ্টা করে সেখানে। কিছুতেই কিছু হচ্ছে না তার। এমন একটা প্রেজেন্টেশন দরকার যা দেখলে ক্লাইন্টরা প্রজেক্ট টা তাদের’ই দেবে। এই প্রজেক্ট কোনমতে হাত ছাড়া করতে চায় না মেহু!
কাজে এতোটাই মগ্ন ছিল যে নির্ঝর কে ঘর থেকে বের হতে দেখে নি মেহু। হঠাৎ করে কাউকে পাশে বসতে দেখে মুখ তুলে তাকায় সে। ভাতের থালা নিয়ে পাশে বসে আছে নির্ঝর। মেহু আবারো ল্যাপটপে মনোযোগ দিয়ে বলে,
“নির্ঝর কাজ আছে, আমি পরে খেয়ে নিব!
মেহুর বাহু ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,
“খেলেই মাথা ঠান্ডা হবে!
“না, নির্ঝর আমাকে এটা করতে দিন। কিভাবে শুরু করবো বুঝতেই পারছি না। খুব ইম্পর্ট্যান্টে এটা!
বলেই আবারো মনোযোগ ল্যাপটপে দিতে যাবে অমনি নির্ঝর মেহুর গাল চেপে নিজের দিকে মুখ ঘুরায়। ভাতের থালা মেহুর হাতে ধরিয়ে ল্যাপটপে নিজের কোলে নেয়। প্রায় অনেকক্ষণ ধরেই কিছু একটা করছে ল্যাপটপে। মেহু বার বার উঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করে। কি করছে ভাবতে ভাবতে একটা দুটো করে ভাত মুখে দিচ্ছে সে। খানিকক্ষণ বাদে নির্ঝর টি টেবিলে ল্যাপটপ রেখে ভাতের থালা হাতে নেয়। মেহু ল্যাপটপ নিজের কোলে নিয়ে চেক করে। অতঃপর অবাক চোখে মুখ তুলে তাকায় নির্ঝরের দিকে।
“বাহ নির্ঝর! আমি এতোক্ষণ যা পারলাম না আপনি এতো জলদি এটা করে দিলেন!
“কাজ হয়েছে তাহলে তোমার, এবার খেয়ে নাও!
বলেই নির্ঝর একটু এগিয়ে এলো। মেহু বলে উঠল,
“নাহ , আরেকটু বাকি আছে।
“হ্যাঁ জানি, খেয়ে তারপর করে নিও এটা। সময় লাগবে না করতে। নাও হা করো! করো হাআআ..
মেহু চোখের পাতা ফেলে তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে। নির্ঝর আবারো বলল,
“নাও হা করো!
মেহু এখনো তাকিয়ে আছে। নির্ঝর ভাতের লোকমা মুখের কাছে নিয়ে বলল,
“আআআআ করো..
মেহু ফিক করে হেসে বলল,
“নির্ঝর আমি বাচ্চা না!
“আহ আআ করো না!
মেহু মুখ খুলে হা করল। নির্ঝর তাকে খাইয়ে দিল। মুখ টিপে হাসল মেহু। নির্ঝর কখনো কাউকে খাওয়ায় নি এটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। তাকে খাওয়াতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। মাছের কাঁটা সে বেছেই যাচ্ছে। মেহু হেসে নির্ঝরের কাছে এলো। শব্দ করে বলল “আআআআ”
নির্ঝর হেসে তাকে খাইয়ে দিল। হঠাৎ ভ্রু কুঁচকে মেহু বলল,
“আপনি এতো আলসে কেন নির্ঝর! কতো সহজে কাজটা করে ফেললেন অথচ একটু মনোযোগ দেন না।
খাবারের লোকমা মুখে তুলে দিয়ে,
“ধুর! এসব আমার ভালো না, আমি এভাবেই বিন্দাস আছি বুঝলে!
“একদম কুইড়া আপনি!
“এই কুইড়া কি? কখনো শুনি নি।
“কিছু না, নিন আআআ!
নির্ঝর আবারো হেসে ভাতের লোকমা তুলে দিল। খাবার খাওয়া শেষ হতেই মেহু কোলে ল্যাপটপ নিয়ে বসল। নির্ঝর হঠাৎ এসে কোল থেকে ল্যাপটপ সরিয়ে মেহুর একদম কাছে গিয়ে বসল। নিজের কোলে বসাল তাকে। মেহু গলা জড়িয়ে বসল তার। নির্ঝর মেহুর নাকে চুমু খেয়ে জরিয়ে ধরল তাকে।
“কি করছেন শুনি!
সোফার এক কোনে মেহু কে জড়িয়ে ধরেই শুয়ে পড়ল নির্ঝর! বলে উঠল,
“তোমার হার্টবিট চেক করছি, আজকে একবারও চেক করা হয় নি।
“ওহ আচ্ছা, তা কি দেখলেন!
“একদম ঠিক আছে!
বলেই আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। মেহু শব্দ করে হেসে বলল,
“কাজ করতে দিবেন না আমায়!
“রাত জেগে কাজ করতে নেই, তুমি ঘুমাও! আমি হাত বুলিয়ে দিচ্ছি তোমায়!
বলেই পিঠে আলতো করে হাত বোলাতে লাগল। বলে উঠল,
“ঘুমিয়ে পড়ো, আমি সকালে তাড়াতাড়ি উঠিয়ে দেবো, তখন কাজ করো!
বলেই মাথায় চুমু খেল। মেহু নির্ঝর কে জরিয়ে ধরে বুকে মাথা রাখল। নিচু গলায় বলে উঠল,
“অর্ণব বিছানায় একা!
“হুম, একটু পর তোমাকেও বিছানায় দিয়ে আসবো!
জবাবে মেহু আর কিছু বললো না। নির্ঝর আর কিছু জিজ্ঞেস করল না। একসময় তার সাথেই ঘুমিয়ে পড়ল সে!
শেষ রাতে ঘুম ভাঙল নির্ঝরের! মেহু গভীর ঘুমে মগ্ন। কখন এখানে ঘুমিয়ে পড়ল সে খেয়াল নেই তার। সাবধানে মেহু কে ছেড়ে উঠলো সে। মেহু কে কোলে তুলে বিছানায় দিয়ে আসলো। অর্ণব শরীর থেকে চাদর সরিয়ে ফেলছে। নির্ঝর তার শরীরে চাদর দিয়ে দিল। নিচে ফেলে থাকা বালিশ টা উপরে রাখল। অর্ণবের কপালে চুমু খেয়ে ঠিক মতো শুইয়ে দিল। অতঃপর এসে বসল সোফায়। ল্যাপটপ খুলে বসে বাকি কাজ শেষ করল সে। কাজ শেষ করতে করতে রাতের আঁধার শেষ হয়ে গেল। বাইর আলোয় মেতে উঠল। নির্ঝর ল্যাপটপ বন্ধ করে উঠে দাঁড়াল। ঘাড় ব্যাথা করছে তার! চোখ গেল তাদের দুজনের দিকে। মুচকি হেসে ঘর ছেড়ে বের হলো। রান্না ঘরে এসে কফি বানিয়ে তা নিয়ে চলে এলো বাগানে। ভোরের প্রকৃতি উপভোগ করছে কফি খেতে খেতে।
—-
এলার্ম এর শব্দে ঘুম ভাঙল মেহুর। এলার্ম বন্ধ করে তাকাল অর্ণবের দিকে। এখনো ঘুমাচ্ছে সে। কপালে চুমু খেয়ে দেখল পাশেল জায়গা খালি। উঠে দাঁড়াল! সোফায় এসে বসে ল্যাপটপ খুলল। চেক করে দেখল কাজ শেষ! এটা নির্ঝরের কাজ এটা জানতে বাকি নেই। হঠাৎ চোখ পড়ল ল্যাপটপের পাশে সাদা কাগজে লেখা একটা চিরকুট। হাতের লেখান নির্ঝরের। সযত্নে লিখে রেখেছে,
“তৈরি হয়ে নিচে এসো, আমি অপেক্ষা করছি!
মুচকি হাসল মেহু! চিরকুট হাতে গুঁজে গেল তৈরি হতে। অফিসের জন্য তৈরি হয়ে নিচে এসে দেখল নির্ঝর রান্না ঘরে কাজ করছে। পাশেই সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মিস মারিয়া। তাকে দেখে মুচকি হেসে বলল,
“গুড মর্নিং ম্যাম!
“গুড মর্নিং !
মেহুর আওয়াজ পেয়ে পিছনে তাকাল নির্ঝর। কাছে এসে চুমু খেল মেহুর কপালে। মিস মারিয়া মুখ টিপে হেসে প্রস্থান করলেন।
“গুড মর্নিং মেহু!
“মর্নিং! কি করছেন, ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। গতকাল রাতে ঠিকমতো ঘুমান নি আপনি!
“বাদ দাও, এখানে আসো!
“কোথায়?
নির্ঝর মেহুর হাত ধরে টেনে নিয়ে এলো বাগানের কাছে। নিজের বাগান নিজে দেখেই অবাক মেহু! হঠাৎ করেই মনে হচ্ছে কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। আসলেই পরিবর্তন হয়েছে। একটা টি টেবিলের কাছে দুটো বেতের চেয়ার রাখা হয়েছে। টি টেবিলে সাজানো আছে কিছু খাবার। এর চারদিকে বাঁশ দিয়ে পুরোটাই গাছের পাতা দিয়ে সাজানো। এমনকি উপরটাও এমনি ভাবে সাজানো! মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে মেহেরিন। নির্ঝর তার হাত টেনে বেতের চেয়ারে বসাল তাকে। তার সামনে সকালের নাস্তা। নির্ঝর আবারো বাড়ির ভেতরে ঢুকেছে। মেহু বসে সকালের এই মিষ্টি আবহাওয়া উপভোগ করছে। নির্ঝর তার জীবনে আশার পর থেকে প্রতিটা সকাল’ই তার জন্য অন্যরকম লাগছে!
ট্রেতে করে দুটো চায়ের কাপ নিয়ে হাজির নির্ঝর! মেহুর পাশে বসে চায়ের কাপ এগিয়ে দিল তার কাছে। মেহু কিঞ্চিত হেসে চায়ের কাপ হাতে নিল। চায়ের কাপে চুমুক দিতেই তার শরীর শিউরে উঠল। নির্ঝর চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল,
“মিষ্টি ঠিক হয় নি মনে হচ্ছে!
“না ঠিক আছে!
“না, দেখো! আমার টাই কেমন কম কম লাগছে!
বলেই চায়ের কাপ এগিয়ে দিল। মেহু নির্ঝরের কাপে চুমুক দিয়ে বলল,
“না ঠিক আছে তো!
নির্ঝর এবার নিজের কাপে চুমুক দিয়ে বলল,
“হ্যাঁ এবার ঠিক আছে!
মেহু লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল। তার গাল দুটো লাল হয়ে গেছে। নির্ঝর হেসে চুল গুলো কানে গুঁজে দিয়ে বলল,
“বেস্ট অফ লাক! দেখো প্রজেক্ট টা তুমিই পাবে!
“পেতেই হবে, কারত প্রেজেন্টেশন আপনার বানানো!
নির্ঝর হেসে এক হাত দিয়ে আগলে ধরল। কপালে চুমু খেল তার। গুটি গুটি পায়ে এসে হাজির হলো অর্ণব। চোখ কচলাতে কচলাতে বলল,
“ড্যাডি , মাম্মি!
নির্ঝর হেসে অর্ণব কে তার কোলে বসাল।
“আমার অর্ণব সোনা উঠে পড়েছে ঘুম থেকে!
মাথা নাড়ল অর্ণব! নির্ঝর হেসে তার দিকে জুসের গ্লাস টা এগিয়ে দিল। অর্ণব ছোট ছোট হাতে ধরল তা…
—-
প্রজেক্ট টা মেহুই পেল অবশেষে! খুশিতে আত্মহারা সে। নিরব তার হাসি মাখা মুখ মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে। ক্লাইন্টদের বিদায় দিয়ে দেখল নির্ঝর তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অফিসে আজ লেট করেই এসেছে সে। মেহেরিন দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরল নির্ঝর কে। নিরব দূর থেকেই সরে গেল। নির্ঝর জরিয়ে ধরল মেহেরিন কে। মেহু খুশিতে টগবগ করতে করতে বলল,
“প্রজেক্ট আমরাই পেয়েছি নির্ঝর, আমি কতো খুশি আপনাকে বলে বোঝাতে পারব না!
“বলেছিলাম না, প্রজেক্ট তুমিই পাবে!
মেহু ছাড়ল নির্ঝর কে। দু হাত গালে রেখে বলল,
“শুধু আপনার জন্য, থ্যাংকু নির্ঝর!
নির্ঝর হেসে হাত রাখল মেহুর গালে। মেহু পা উঁচু করে কপালে চুমু নির্ঝরের। মুচকি হাসল সে!
—-
রাগে ঘরের জিনিসপত্র ভাঙছে রাফি মল্লিক! প্রজেক্ট টা তার হাত থেকে হাত ছাড়া হয়ে গেছে। আর তা পেয়েছে মেহেরিন। কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না। ধীরে ধীরে মেহেরিন তার সবকিছুই ধ্বং/স করে দিচ্ছে। হাত কে/টে গেছে কাঁচের টুকরোতে! চুঁইয়ে চুঁইয়ে র/ক্ত বেয়ে পড়ছে। রিতা দৌড়ে এসে রাফির হাত টা ধরল।
“কি করছো এসব বেবী! পাগল হয়ে গেছো তুমি?
“তুমি জানো না মেহেরিন কি শুরু করেছে?
“জানি সব জানি, তাই বলে রাগে এসব করবে। নিজের ক্ষতি করলে কি সব ঠিক হয়ে যাবে!
হাত সরিয়ে নিয়ে রাগে আবারো ফুলদানিটা ছুঁড়ে মারল। গর্জন করে বলে উঠলো,
“ছাড়বো না, কাউকে ছাড়বো না। শান্তিতে থাকতে দেবো না মেহেরিন কে। ওর শান্তি আমি নষ্ট করে ছাড়বো।
“তাহলে সেটাই করো, জিনিসপত্র ভেঙে সব রাগ ঝেড়ে লাভ নেই। রাগ জমিয়ে রাখো সময়ে কাজে লাগবে। নিজের চাল চালো এবার। সবকিছু হাত থেকে বেরিয়ে হয়ে যাবার আগে কিছু একটা করো বুঝলে!
শব্দ করে শ্বাস ফেলল রাফি। না এভাবে আর না! কিছু একটা করতে হবে। থামাতে হবে মেহেরিন কে নাহলে তাকে শেষ করে দিবে সে!
—–
শপিং মলে এসে হয়রান নির্ঝর আর অর্ণব। বেচারারা আর পারছে না। মেহু আজ তাদের পুরো শপিং মল ঘুরিয়েছে। ক্লান্ত হয়ে দুজন একপাশে এসে দাঁড়িয়েছে। অর্ণব দূরে আইসক্রিম দেখে নির্ঝরের শার্ট ধরে টানল। নির্ঝর হাঁটু গেড়ে বসে জিজ্ঞেস করল,
“কি হয়েছে অর্ণ?
অর্ণব হাত দিয়ে আইসক্রিম’র দিকে ইশারা করতে যাবে অমনি একটা মেয়ের কন্ঠ কানে এলো। নির্ঝর পেছন ফিরে তাকাল। নুপুর নামে মেয়েটা নির্ঝর কে দেখে বেশ খুশি কিন্তু তাকে দেখে মোটেও খুশি না। মেয়েটা শুধু গায়ে পড়ে থাকে। কলেজ লাইফ থেকেই নির্ঝরের পেছনে পড়ে ছিল সে। অনেক কষ্ট করেই তাকে ছাড়িয়েছে সে। এখন আবার কি করবে?
অনিচ্ছাকৃত উঠে দাঁড়াল নির্ঝর। হাসার চেষ্টা করল নুপুর কে দেখে। নুপুর বেশ খুশি নির্ঝর কে দেখে। দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরল তাকে। আহ্লাদী একটা মেয়েও বাবা। অর্ণব গম্ভীর ভাবে তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে। নির্ঝরের চোখ থেকে তা বাদ পড়ল না। নুপুর কে নিজের থেকে সরালো সে। কিন্তু নুপুর খান্ত হলো না। নির্ঝরের দু গাল টেনে জিজ্ঞেস করল,
“কেমন আছো তুমি?
“ভালো!
“আহ! আগে থেকে আরো বেশি হ্যান্ডসাম হয়ে গেছো দেখছি!
নির্ঝরের ইচ্ছে করছে না নুপুরের সাথে কথা বলতে কিন্তু না বলে পারছেও না। অর্ণব কেমন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। অবিকল মেহুর মতো। হুট করেই মনে পড়ল মেহুর কথা। এই মেয়ে যদি এসে পড়ে তখন কি হবে? নুপুর আবারো জিজ্ঞেস করল,
“তা এখানে কেন? শপিং করতে এসেছে বুঝি!
“হুম!
“আমিও শপিং করতে এসেছি। আচ্ছা তুমি কি ফ্রি আছো। দেখে তো মনে হচ্ছে ফ্রি’ই আছো। তো চলঝ আমার সাথে!
বলেই নুপুর টেনে নিয়ে যেতে চাইলো। নির্ঝর কোনমতে আটকালো তাকে। টানতে টানতে প্রায় অনেকখানি পথ নিয়ে গেছিল। সেখান থেকে আবারো ফেরত আসছে নির্ঝর। অর্ণব কে যেখানে দাড় করিয়ে রেখেছিল লক্ষী বাচ্চার মতো সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিল সে। নির্ঝর আসতেই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। নির্ঝর হেসে হাঁটু গেড়ে বসে অর্ণবের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললো,
“বুঝলে তো অর্ণব, এটা তোমার ড্যাডির বড় বোন! তাই তোমার ড্যাডি কে এত্তো আদর করছিল! বড় বোন কি বুঝ তো তুমি!
অর্ণব মাথা নেড়ে না বলল। এর অর্থ সে বুঝে না। সমস্যা এখানে অর্ণব যদি এই কথা মেহু কে বলে দেয়। অবশ্য হ্যাঁ তাকে মানা করলে সে কিছু বলবে না তবু নির্ঝর চায় না নিজের ছেলের সামনে অন্যরকম হতে। মাম্মির কাছে লুকিয়েছি এসব কথা তার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। যত’ই হোক এখন ছোট সে। যে করেই হোক এসব কথা ভুলাতে হবে তাকে। নির্ঝর দেখল দূরে কয়েকটা কলেজের মেয়ে দল হয়ে ঘুরছে। নির্ঝর অর্ণব কে তাদের দিকে ইশারা করে বলল,
“এই যে অর্ণব, এরা সবাই তোমার বড়। তাই হিসেবে এরা হয় তোমার বড় বোন। যাকে তুমি আপু বলে ডাকবে। বুঝতে পেরেছ!
অর্ণব মাথা নাড়ল। নির্ঝর হেসে তার মাথায় হাত বোলাল। অর্ণব ঘুরে তাকাল মেয়ে গুলোর দিকে। ছুটে গেল তাদের কাছে। নির্ঝর অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। কি করতে চলেছে অর্ণব! তাদের একজনের সামনে দাঁড়িয়ে হুট করে বলল,
“আপু!
ব্যাপারটা তার কাছে রোমাঞ্চকর! ছোট একটা বাচ্চার মুখে আপু ডাক শুনে তাঁদের মধ্যে হইচই পড়ে গেল। একজন এসে তার গাল টেনে আদর করছে, অন্য জন এসে মাথায় হাত বোলাচ্ছে। অর্ণব রীতিমতো থমকে গেল। তার সাথে লজ্জা পেতে লাগল সে। হুট করে একটা মেয়ে তো তার গালে চুমুই খেয়ে বসল। তার ঠোঁটের লিপস্টিক’র দাগ পড়ে গেল অর্ণবের গালে। অর্ণবের কান লাল হয়ে যাচ্ছে। সবাই তার হাত ভর্তি চকলেট দিয়ে দিল। অর্ণব গুটি গুটি পায়ে এসব নিয়ে ফিরল নির্ঝরের কাছে। নির্ঝর হেসে একাকার! রুমাল দিয়ে গালে থাকা লিপস্টিক’র দাগ মুছে দিল সে। মুখ টিপে হাসি থামানোর চেষ্টা করছে তবু হাসি থামছে না। শুধু একটি বাক্য বলে উঠে,
“তুমি আসলেই আমার ছেলে, সেই প্রমাণ আমি এখন’ই পেয়ে গেছি!
এতো গভীর কথার অর্থ বুঝল না অর্ণব!
মেহেরিন এতো এতো ব্যাগ নিয়ে ফিরেছে। সবকটা এসে পড়েছে নির্ঝরের কাছে। নির্ঝর তো বলেই উঠল,
“পুরো বছরের শপিং করলে নাকি।
“হ্যাঁ করলাম তো!
“না কি হবে, আমি তো শুধু জিজ্ঞেস করছিলাম। রেগে যাচ্ছো কেন?
“আপনাকে কে বলল আমি রেগে যাচ্ছি, আমি শুধু ক্লান্ত!
“হ্যাঁ, তা অবশ্য ঠিক বলেছ। এতো শপিং করলে যে কেউই ক্লান্ত হয়ে পড়বে!
মেহুর মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে গেল। নির্ঝরের তেড়া বেকা কথা ভালো লাগছে না তার। জবাব দিতে গিয়েও থেমে গেল। বোধ হলো অর্ণব পাশে নেই। হঠাৎ কোথায় উধাও হয়ে গেল। দুজন বিচলিত হয়ে গেল। খুঁজতে শুরু করল তাকে। হঠাৎ ভিড়ের মাঝে দূরে দেখা গেল অর্ণব কে। প্রাণ যেন ফিরে পেল মেহেরিন। কাছে যেতেই পা দুটো থমকে গেল। এ কার সাথে আছে অর্ণব! রাফি… দু চোখ নিমিষেই স্থির হয়ে গেল। কোন ভয় এসে আঁকড়ে ধরল বুকের মাঝে। এই বুঝি হারিয়ে ফেলল তার অর্ণব কে। তার থেকে কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে তারা। সব কিছু দেখতে পেয়েও মেহেরিন আটকাতে পারছে না। এর চেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে। গলার স্বর যেন আঁটকে গেছে।অর্ণব কে ডাকতে যেয়েও ডাকতে পারছে না। অনেক কষ্টে কাঁপা কাঁপা গলায় শুধু ডেকে উঠল,
“অঅঅর্ণব!
অতঃপর…
#চলবে….