অন্তঃকরণে তোরই পদচারণ পর্ব-৩১

0
811

#অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ
#পর্ব-৩১
#লেখিকা-মেহরুমা নূর

★দেখতে দেখতে খুশি আর প্রহরের খুনসুটির মাঝে কেটে গেছে আরও দুই সপ্তাহ। খুশি এখন পুরোপুরি সুস্থ। মাথার চুল একটু লম্বা হয়ে কান পর্যন্ত এসেছে। খুশি সেগুলো গোল করে বব কাটিং করিয়েছে। এরই মাঝে ফাহিম আর তিশার বিয়েটাও হয়ে গেছে। খুশি আর প্রহরও গিয়েছিল ওদের বিয়েতে। খুব ধুমধামের সাথেই তাদের বিবাহ সম্পূর্ণ হয়েছে।

ফাল্গুন মাস প্রায় শেষ হতে চলেছে। পরিবেশে গরমের প্রভাব ফেলেছে। কম্বলের নিচ থেকে গরমে হাসফাস করে মাথা বের করে নিলো খুশি। মুখটা বিরক্তিতে ভরে উঠলো। এই প্রহরটাও না মাঝে মধ্যে অতিরিক্ত করে ফেলে। ছোট বাচ্চাদের মতো কম্বলে মুড়িয়ে থুয়ে গেছে আমাকে। আরে এখন কি আর এতো শীত আছে নাকি? অস্বস্তিতে ঘুমটা আর হলোনা খুশির। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো সে। চোখ কচলিয়ে সামনে তাকিয়ে প্রহরকে দেখতে পেল ও। সামনের সোফায় বসে ল্যাপটপে চোখ গেড়ে আপন মনে কাজ করে যাচ্ছে। হাতের আঙুল গুলো যেন পিয়ানো বাজানোর মতো তালে তালে চলছে। খুশি হাঁটু ভাজ করে হাঁটুর ওপর থুতনি রেখে কতক্ষণ প্রহরকে অবলোকন করলো। হায়য়,,,, ওর হাসব্যান্ড টা এত্তো কিউট কেন? সকাল সকালও এতো কিউটনেস কোথাথেকে আনে? আমার নিজেরই না নজর লেগে যায়।

খুশি মুচকি হেঁসে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল। মৃদু পায়ে হেঁটে এগিয়ে গিয়ে প্রহরের কোলে বসে পড়লো। দুই হাতে প্রহরের গলা জড়িয়ে ধরে বললো।
–গুড মর্নিং হাসব্যান্ড। সকাল সকাল বউকে রেখে কি এতো রাজকার্য হচ্ছে শুনি।

প্রহর মুচকি হেসে খুশির কপালে চুমু দিয়ে বললো।
–গুড মর্নিং বিবি সাহেবা। আর সকাল সকাল কাজ আর করতে দিলেন কই? এইযে আপনার ঘুম জড়ানো কিউট মুখখানা নিয়ে হাজির হলেন। এখনতো সব রাজকার্য গোল্লায় যাবে। জানো তোমার এই ছোট চুলগুলোতে তোমাকে আরও বেশি কিউট লাগে।

–আমার মন রাখার জন্য এসব বলার দরকার নেই। কিউট না ছাই। ছেলেদের মতো দেখতে লাগে। শুধু একটা মোছের কমতি আছে। একটা মোছ লাগিয়ে নিলেই দ্যা গ্রেট মফিজ হয়ে যাবো।

–যার যেমন ভাবনা। এখন তোমার ভাবনাকেতো আর আমি বদলাতে পারি না। তবে আমার কাছে তো তোমাকে এভাবে অনেক কিউট লাগে। আর আমার এই বউটার জন্য একটা কিউট কিউট সারপ্রাইজ আছে।

খুশি উৎসাহী কন্ঠে বললো।
–সারপ্রাইজ?? কি সারপ্রাইজ বলনা?

–হুম তো সারপ্রাইজ হলো আমি আমার দুষ্টুপরি টাকে নিয়ে মরিশাস দ্বীপে যাচ্ছি বেড়াতে।

খুশি এক্সাইটেড হয়ে বললো।
–ওয়াও সত্যিই??

–হান্ড্রেড পার্সেন্ট সত্যি মেরি জান । তোমার সমুদ্র অনেক পছন্দ না? তাই এবার সমুদ্রের একদম মাঝখানে যাবো। যেখানে চারপাশে শুধুই সমুদ্র। আর আমি এখন অনলাইনে প্লেনের টিকেটই বুক করেছিলাম।

–ওয়াও আমারতো বিশ্বাসই হচ্ছে না। আমরা মরিশাস যাবো? থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ। আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ সোওওওও মাচ।
অতি উৎসাহিত হয়ে খুশি প্রহরের ঠোঁটে একটা চুমু একে দিলো। প্রহর হেঁসে দিল খুশির কান্ডে। খুশি বলে উঠলো।
–আচ্ছা ফাহিম আর তিশাকেও বলোনা। ওরাও যাক আমাদের সাথে। তাহলে আরও মজা হবে।

–হ্যা ওরাও যাচ্ছে আমাদের সাথে। আমি ওদের আগেই বলে দিয়েছি। এখন গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। ব্রেকফাস্ট করেই বের হতে হবে আমাদের।
–আচ্ছা। আমি এখুনি ফটাফট রেডি হয়ে আসছি।

খুশি অতি প্রফুল্ল হয়ে তড়িঘড়ি করে চলে গেল ফ্রেশ হতে। আর খুশির এই উৎসাহ বরাবরের মতোই প্রহরের মনে অনাবিল প্রশান্তি বয়ে আনলো। খুশির এই হাসিমুখ টার জন্য প্রহর সবকিছু করতে রাজি।
__

যথা সময়ে সবাই রেডি হয়ে এয়ারপোর্টে এসে হাজির হলো। প্রথমে ওদের ঢাকা থেকে দিল্লি যেতে হবে। তারপর ওখান থেকে ওদের মরিশাসের প্লেনে উঠতে হবে। এই প্রথম খুশি প্লেনে উঠছে। এক্সাইটমেন্টে যেন মাটিতে পা পড়ছেনা ওর। এয়ারপোর্টে এসেই লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে।লাগেজ নেওয়ার ট্রলিতে চড়ে বসে আছে সে। আর প্রহর ট্রলি সহ খুশিকেও ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। যেতে যেতে যাকে পাচ্ছে তার সাথেই সেলফি নিচ্ছে। ফাহিম আর তিশা ওর কান্ড দেখে হেঁসে শেষ।

লাগেজ জমা দিয়ে ওয়েটিং এ বসে আছে সবাই। কিন্তু চুলবুলি খুশির বসে থাকতে মোটেও ভালো লাগছে না। বসে থাকা তার জন্য বড়োই দুর্বোধ্য কাজ। সে আশেপাশে তাকিয়ে দেখছে কে কি করছে। তখনই পাশে বসে থাকা এক বয়স্ক দম্পতিকে দেখতে পেল ও। খুশি একটু এগিয়ে গিয়ে বসলো ওদের কাছে। মহিলাটির উদ্দেশ্যে বললো।
–হেলো আন্টি আপনারাও হানিমুনে যাচ্ছেন বুঝি?

বেচারা বয়স্ক দম্পতি দুজন খুশির এমন আজগুবি কথায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। তবে মহিলাটি কোনরকমে এই অদ্ভুতন্বিত কথা হজম করে নিয়ে বললো।
–আরে না না আমরা তো বিয়ের জন্য যাচ্ছি।

ব্যাস খুশি ওর মগজের ঘোড়া ফুল স্পিডে দৌড়িয়ে নিজের মতো করে ব্যাপার টা সাজিয়ে নিলো। আর সেই মোতাবেক অবাক হয়ে বললো।
–ও মাই গড আপনারা এখনো বিয়েই করেন নি? তাহলে কি আপনারা এতদিন লিভ ইন রিলেশনে ছিলেন? ওয়াও জেনারেশন এতো আপডেট হয়ে গেছে জানতামই না। আপনারা তো আমাদেরও পিছে ফেলে দিয়েছেন। ইশশ আমারও কতো শখ ছিল লিভ ইন করার। কিন্তু আমার হাসব্যান্ড টা না একেবারে রসকষহীন কাঠখোট্টা। ওকে যেই এ কথা বললাম। বাপরে বাপ কি একটা ধমকই না দিয়েছিল। মনে হলো আমি ঘোর অন্যায় কোন কথা বলে দিয়েছি। আমার এই কথা কোনভাবে লিক হলে দুনিয়াতে ওয়ার্ল্ড ওয়ার শুরু হয়ে যাবে। আজ মাছুম ইনোসেন্ট বলে আমার এতো মহামূল্যবান কথার চুল পরিমান দামও দিলোনা। লোকে ঠিকই বলে ভালো মাইনষের ভাত নাই দুনিয়ায়। আচ্ছা থাক বাদ দিন আমার দুঃখ বেদনার কথা। তো এখন কি আপনারা পালিয়ে বিয়ে করছেন?

দম্পতি দুজন একজন আরেকজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। আসলে খুশির এই মহান বাণীর কোনকিছুই তাদের বোধগম্য হয়নি। তবে শেষের কথা শুনে ওরা ফ্রীতে এইমাত্র তাজ্জব বনে ঘুরে এলো।ঘোরা শেষে মহিলাটি বলে উঠলো।
–আরে না আমরা তো আমাদের ছেলের বি….

পুরো কথা শেষ করার আগেই খুশি আবারও তার ব্যাতিক্রমী ভাবনার তীর নিক্ষেপ করে বললো।
–ও মাই গড! লিভ ইনে আপনাদের ছেলেও হয়ে গেছে? ওয়াহ্ আপনারা সত্যিই এপিক। আই সেলুট ইউ। ইউ আর গ্রেট। শুধু গ্রেট না। সুপার গ্রেট। আপনাদের তো নোবেল পুরষ্কার দেওয়া উচিত। আমি আজই সরকারের কাছে আবেদন জানাবো আপনাদের নোবেল পুরষ্কারের জন্য।

এবারতো বেচারাদের সজ্ঞানে থাকার মোটেও ইচ্ছে হচ্ছে না। জ্ঞান হারিয়ে কোমায় চলে গেলে ব্যাপার টা মন্দ হবে না। এই পাগলের হাত থেকে তো নিস্তার পাওয়া যাবে। আজকে যে কার মুখ দেখে উঠেছিল এরা যে,এই বালার সাথে সাক্ষাৎ হতে হলো।

প্রহর পাশেই বসে ছিল। বেচারি দম্পতি দুজন জ্ঞান হারানোর আগেই প্রহর খুশিকে টেনে সরিয়ে এনে ফিসফিস করে বললো।
–কি করছ খুশি? একটু চুপ করে বসোনা। নাহলে কিন্তু পাবলিক ধোলাই খেতে হবে।

–আরে ধোলাই কেন খেতে যাবো? আমিতো ওনাদের সাথে অতি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছিলাম। জানো ওনারা না এতদিন লিভ ইনে ছিল। আর তোমাকে একবার বলেছিলাম বলে তুমি আমাকে ধমক দিয়ে বসিয়ে দিয়েছিলে। এখন ওনাদের দেখ। কত্তো মডার্ন।

ওদের কথার মাঝে ফাহিম এবার বিশেষ টিপ্পনী কেটে বললো।
–সত্যিই ভাবিজী?? বাহ্ আঙ্কেল তো খুব এনার্জেটিক দেখছি। জানেন আমারও না লিভ ইনে থাকার খুব শখ ছিল। কিন্তু তিশাকে বলার সাহসই পায়নি।

তিশা পাশ থেকে ফাহিমের কথা শুনে তেতে উঠে বললো।
–এই এই কি বললে তুমি? কি শখ ছিল?

ফাহিম আমতাআমতা করে বললো।
–ক কই কি বললাম? আমিতো বলছিলাম আজকে কি বার?

–তোমাকে একবার একা পাই তারপরে বুঝিয়ে দেবো আজকে কি বার?

বেচারা ফাহিমের অবস্থা দেখে খুশি দুষ্টু হেসে বললো।
–দেবরজী আপ তো গায়ে কামছে। বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে।

খুশির কথায় সবাই হেসে দিলো।
__

প্লেনে এসে উঠলো ওরা। খুশিতো প্লেনে উঠেই আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে যাচ্ছে।উঠেই প্রথমে বিমান বালাদের সাথে ঘটাঘট কয়েক টা সেলফি নিয়ে নিলো। প্রহর কোনরকমে খুশির হাত ধরে ওকে নিয়ে সিটে এসে বসলো। এক্সাইটমেন্টে ভরপুর খুশি কি করবে না করবে ভেবে পাচ্ছে না। কিছুক্ষণ পরেই প্লেন টেক অফ করলো। মেঘের ওপর চলছে প্লেন। জানালার কাছে সাদা মেঘের ভেলা এসে ভেসে বেড়াচ্ছে। খুশির খুব ইচ্ছে হচ্ছে সেগুলো ধরার। কিন্তু প্লেনের জানালা তো আর খোলা যায় না। তাই জানালার কাচেই হাত রেখে মেঘগুলোকে অনুভব করছে। খুশিকে এভাবে আনন্দিত দেখে প্রহরেরও মন জুড়িয়ে যাচ্ছে। সত্যি করেই ওর আগের সেই দুষ্টুপরিকে ফিরে পেয়েছে ও। খুশিকে নিজের মতো এনজয় করতে দেখে প্রহর আর ওকে ডিস্টার্ব করলোনা। ও সিটে হেলান দিয়ে চোখ বুজে নিল। যেকোনো জার্নিতেই ওর ঘুমের ভাব হয়। সেই অভ্যাস অনুযায়ী প্রহর একটু ঘুমাতে চাইলো।

মিনিট বিশেক পর খুশি এবার একটু প্রহরের দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রহর ঘুমিয়ে আছে। খুশি মুচকি হাসলো। তবে খুশির মুখের হাসি হঠাৎ উড়ে গেল সামনে তাকাতেই। ওদের পাশের সিটে একটি সুন্দরী মডার্ন টাইপের মেয়ে বসে আছে। যার বাজখাঁই নজর গেড়ে আছে প্রহরের ওপর। যেন চোখ দিয়েই গিলে খেয়ে ফেলবে প্রহরকে। এটা দেখে রাগে শরীর জ্বলে উঠলো খুশির। তাই সে মেয়েটিকে দেখিয়ে নিজেও প্রহরের কাঁধে মাথা রাখলো। প্রহরের এক হাত জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা এলিয়ে দিল। মেয়েটির দিকে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটি এখনো তাকিয়ে আছে। খুশি এবার ওকে দেখানোর জন্য প্রহরের গালে একটা চুমু দিয়ে দিলো। নাহ্ তবুও মেয়েটির চাহনিতে কোন পরিবর্তন আসছে না। এবার আর সহ্য হলোনা খুশির। রণচণ্ডী রুপ ধারণ করে উঠে দাঁড়িয়ে মেয়েটার সামনে এগিয়ে এলো।

মেয়েটার কাছে এসে সোজা দুই হাতে মেয়েটির চুল খামচে ধরে টানাহেঁচড়া করে বললো।
–এই এই ডাইনি বেটি,পেত্নী বেটি তোর সাহস কি করে হলো আমার প্রহরের দিকে কুনজর দেওয়ার? তুই দেখছিস না আমি ওর বউ? তারপরও তাকিয়ে আছিস? নির্লজ্জ বেহায়া বেটি। আজকে তোর চোখের মনি খুলে নিয়ে গুটি খেলবো আমি।

খুশির আচমকা হামলাই বেচারি মেয়েটার নাজেহাল অবস্থা। মেয়েটির পাশের লোকটা খুশিকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। সবাই ওদের কান্ড দেখে ফ্রী এন্টারটেইনমেন্ট পাচ্ছে। হৈচৈ শুনে প্রহরের ঘুম ভেঙে গেল। হড়বড়িয়ে উঠে সামনে তাকিয়ে খুশির তুলকালাম কান্ড দেখে প্রহর হতভম্ব হয়ে গেল। দ্রুত উঠে গিয়ে খুশিকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললো।
–কি করছ খুশি? পাগল হয়ে গেলে নাকি? ছাড় ওকে।

খুশি কিছুতেই ছাড়ছে না। প্রহর এবার খুশির কোমড় পেঁচিয়ে ধরে ওকে উঠিয়ে সরিয়ে নিয়ে আসলো ওখান থেকে। খুশি তবুও হাত বাড়িয়ে আগ্রাসী হয়ে মেয়েটাকে ধরার চেষ্টা করছে। মেয়েটা ছাড়া পেয়ে যেন প্রাণ ফিরে পেল। প্রহর খুশিকে সরিয়ে এনে ধমকের সুরে বললো।
–এসব কি হচ্ছে খুশি? পাগল হয়ে গেছ তুমি? কি ধরনের ব্যবহার এসব? মানসম্মান সব ধুলোয় মিশিয়ে দিবে তুমি?

খুশি রাগী কন্ঠে বললো।
— আমি কি করছি তাইনা? আর ও কি করছিল? সেই কখন থেকে শকুনের মতো নজর গেড়ে ছিল তোমার ওপর। কেন তাকিয়ে থাকবে ও? ওর সাহস কি করে হলো?

সেই মেয়েটি বলে উঠলো।
–আমি কখন তাকিয়ে ছিলাম? আরে আমিতো আারামে ঘুমাচ্ছিলাম। আপনিই হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই আক্রমণ করে বসলেন।

–এই এই একদম মিথ্যে বলবেনা। আমি নিজে দেখেছি তোমাকে তাকিয়ে থাকাতে।

মেয়েটির পাশের লোকটা বলে উঠলো।
–আসলে আপনি ভুল বুঝছেন। ওর তাকিয়ে থেকেই ঘুমানোর অভ্যাস। ও এভাবে চোখ খুলেই ঘুমায়।

খুশি এবার একটু থতমত খেয়ে গেল। নিজের কাজের ওপর লজ্জাবোধ হলো ওর। অপরাধী সুরে বললো।
–ওহ্ অ্যাম রিয়েলি সরি আমি আসলে বুঝতে পারিনি।

–ইটস ওকে।

খুশি মাথা নিচু করে চুপচাপ গিয়ে নিজের সিটে বসে পড়লো। প্রহরও নিজের সিটে বসলো। খুশি জানালার দিকে মুখ করে আছে। প্রহরের দিকে একবারের জন্যও তাকাচ্ছে না। প্রহর বুঝতে পারলো খুশি ওর ওপর অভিমান করেছে। তখন একটু বেশিই বলে ফেলেছে হয়তো। প্রহর খুশির কাঁধে হাত রেখে খুশিকে ঘোরানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু খুশি প্রহরের হাত নামিয়ে দিলো। প্রহর এক হাতে কান ধরে অপরাধী সুরে বললো।
–সরি খুশিরাণী। রাগ করে থেকনা প্লিজ। দেখ তোমাকে তখন না ঠেকালে প্লেনে এমন গ্যাঞ্জাম করার অপরাধে তোমাকে পুলিশেও ধরিয়ে দিতে পারতো ওরা। তখন আমি কি করতাম বলো?

খুশি উল্টো দিকে ঘুরে থেকেই অভিমানী সুরে বললো।
–আমার জন্য তোমার মানসম্মান চলে যায়।

কথা বলার সময় খুশির গলা কাঁপছে। প্রহর বুঝতে পারলো খুশি কাঁদছে। এবার প্রহরের বুকের মাঝে হু হু করে উঠলো। প্রহর দ্রুত খুশিকে নিজের দিকে ঘোরালো। খুশির চোখের পানি মুছে দিয়ে আবেগী কন্ঠে বললো।
–হেই সোনাপাখী। কাঁদছিস কেন? সরি না? তখন তোমাকে ঠেকানোর জন্য ওসব বলেছিলাম। বাট আই ডিডি’ন্ট মিন ইট। প্লিজ কাঁন্না বন্ধ কর।

খুশি প্রহরের বুকে মাথা রেখে বললো।
–যেভাবেই বলো, তুমি এসব বললে আমার সহ্য হয়না। তোমার দিকে কেউ চোখ তুলে তাকালেও আমার সহ্য হয়না।

প্রহর মুচকি হেঁসে বললো।
–আচ্ছা?? তো কতজনকে এভাবে মারবে শুনি?

–যে কয়জন এই ভুল করবে সবাইকে। তুমি শুধু আমার। তোমার দিকে কেউ তাকালে আমি তার চোখ তুলে ফেলবো।

প্রহর প্রাপ্তির হাসি দিয়ে খুশিকে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিলো।

চলবে….

গল্পের লেটেস্ট আপডেট পেতে আর গল্প নিয়ে যেকোনো আলোচনা আড্ডা দিতে আমার গ্রুপে জয়েন হওয়ার আমন্ত্রণ রইল। নিচে গ্রুপ লিংক দেওয়া হলো। জয়েন হতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন। 👇
গ্রুপ
https://facebook.com/groups/170529085281953/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here