অন্তঃকরণে_তোরই-পদচারণ #পর্ব-২০

#অন্তঃকরণে_তোরই-পদচারণ
#পর্ব-২০
#লেখিকা-মেহরুমা নূর

★বর্তমান,
ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে এলো খুশি। সেদিনের কথা আজও ভুলতে পারে না খুশি। শুধু অতটুকু অসুস্থ হওয়াতেই প্রহরের ওই অবস্থা হয়েছিল। যখন সে জানতে পারবে তার দুষ্টুপরি এই পৃথিবীতে আর মাত্র কয়দিনের মেহমান, তখন প্রহরের কি হবে তার কল্পনা করতেই খুশির রুহ কেঁপে উঠছে। না সে পারবে না। পারবে না প্রহরকে সারাজীবনের গ্লানির বোঝা কাঁধে তুলে দিতে। আমার কিছু হয়ে গেলে যে আমার প্রহর জীবন্ত লাশ হয়ে যাবে। আর আমি সেটা কিছুতেই হতে দিবো না। তারচেয়ে বরং প্রহর আমাকে ঘৃণা করুক। চরম ঘৃণা। তবেই সে আমাকে ভুলে জীবনে সামনে এগুতে পারবে। আর প্রহরের মনে ঘৃণা সৃষ্টি করার জন্য যা কিছু আবশ্যক আমি সবই করবো।

সকালের রোদ জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে খুশির চোখেমুখে এসে লাগতেই ঘুম ভেঙে গেল ওর। ক্লান্ত ফোলা আঁখি যুগল দয়াদ্র্রচিত্তে মেলে তাকালো। নিজেকে ফ্লোরে আবিস্কার করলো সে। রাতে হয়তো এখানেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। আজকাল আর এসব সুবিধা অসুবিধার মাঝে তেমন পার্থক্যের আভাস পায় না খুশি। বেঁচে থাকাটায় যেখানে নিতান্তই অর্থহীন বোঝতুল্য হয়ে গেছে। সেখানে এসব ভালো মন্দ আর অনুভব হয় না।খাটে ভর দিয়ে দূর্বল শরীটাকে টেনে তুললো খুশি। মৃদুপায়ে এগিয়ে গিয়ে জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকালো। জানালার বাইরে তাকালে যতদূর চোখের নজর যায় শুধুই সীমাহীন অথই সমুদ্র। নীল সাগরের রঙটাও তার মতোই গভীর। নাজানি এই বিশাল সমুদ্র হাজার বছরের কতো রহস্য লুকিয়ে রেখেছে নিজের গভীরতায়। তবুও কেমন রাজকীয় ভঙ্গিতে নিজের সৌন্দর্যে সবাইকে ভুলিয়ে রেখেছে।

আমি কেন পারিনা ওর মতো? কেন প্রহরকে নিজের থেকে দূরে সরাতে পারি না?ওকে যতো দূরে সরাতে চাচ্ছি,ও ততোই আমার কাছে চলে আসছে? এতো কঠিন কেন সবকিছু? আমাদের সাথে এমনটা নাহলে কি খুব ক্ষতি হতো? এমনটা হয়েছেই যখন তাহলে শুধু আমার সাথেই কেন হলোনা? আমার প্রহর কেন এতো কষ্ট পাচ্ছে? নিজের ভালোবাসার মানুষকে ইচ্ছেকৃত ভাবে কষ্ট দেওয়ার মতো কঠিন কাজ বুঝি দুনিয়াতে আর কিছু নেই। আমার অসুস্থতার চেয়ে বেশি কষ্ট হয় প্রহরের জন্য। ওকি কখনো স্বাভাবিক হতে পারবে? প্রথমেই একবার ওর মায়ের কারণে অনেক আঘাত পেয়েছে প্রহর। আর আমি ওকে আবারও সেই আঘাতে আহত করছি। কিন্তু আমি কি করবো? এছাড়া যে আমার কাছে আর উপায় নেই। এ কারণেই আমি ওর জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম হয়তো সময়ের সাথে নিজেকে সামলে নিবে ও। নিজের জীবনে সামনে অগ্রসর হবে। কিন্তু প্রহর তো এখনো নিজেকে সামলাতে সক্ষম হয়নি।ওতো এখনো সেই আগের জায়গায়ই থমকে আছে। যেখানে আমি ওকে রেখে এসেছিলাম। চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে ভেসে উঠছে সেই দূর্বিষহ দিনটার কথা। যে দিনটা ওর জীবনের সবচেয়ে মর্মান্তিক দিন। যেদিন ওর পৃথিবী থমকে গিয়েছিল। প্রহর খুশির প্রেমকাব্যের সমাপ্তি ঘটেছিল যেদিন। জীবনে এমন একটা দিন আসবে তা স্বপ্নেও ভাবেনি ওরা।

অতীত,
ওদের প্রেমকাব্যের ভেলা তখন দুই বসন্ত পার করেছে। খুশির ফাইনাল এক্সামও শেষ হয়ে গেছে। খুশি যেন এখন মুক্ত পাখির মতো উড়ে বেড়াতে চাচ্ছে। ফাইনালি ও পড়াশোনা নামক পিঞ্জর থেকে মুক্তি পেয়েছে। এখন শুধু রেজাল্টের অপেক্ষা। প্রহর বলেছিল রেজাল্ট ভালো হলে তবেই সে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসবে। তাইতো বেচারি খুশি কোমড় কষে পোড়াশোনায় নেমেছিল। প্রহরকে বিয়ে করতে হলে যে ওকে এই অভিযানে সফল হতে হবে। আর এক্সামও ইনশাআল্লাহ ভালোই গেছে।এখন বাচ শুধু শানাই বাজানোর অপেক্ষা। কবে সে প্রহরের সত্যি কারের বঁধু হবে সেই অপেক্ষা।

তবে খুশি কি জানতো তার সেই অপেক্ষার অবসান কখনোই ঘটবে না। কালবৈশাখী ঝড় এসে ওর স্বপ্নের পৃথিবী তছনছ করে দিয়ে যাবে।
প্রহরদের বাসায় সেদিন জ্ঞান হারানোর পর প্রায় মাস চারেক আর কিছু হয়নি। প্রহর অনেক চাপাচাপি করেছিল ডক্টরের কাছে গিয়ে প্রপার চেকআপ করানোর জন্য। কিন্তু খুশি কিছুতেই রাজি না। তার ভাষ্যমতে সেতো একদম বিন্দাস আছে। তাহলে শুধু শুধু কেন ডক্টরের কাছে সুই খেতে যাবে। না সে মোটেও যাবে না। যেহেতু খুশি আর অসুস্থ হয়নি তাই প্রহরও ওর জিদের সামনে হার মেনে যায়। তবে চারমাস পর খুশি নিজের বাসায় আবারও একদিন জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। বাসার সবাই ভাবে হয়তো খাওয়া দাওয়ার অনিয়মের কারণে এমন হয়েছে। তাই তেমন একটা চিন্তা করেনা ওরা। আর খুশিও প্রহরকে কিছু বলে না। নাহলে ও আবার অযথা টেনশন করবে ভেবে।

খুশির এক্সাম শেষে প্রহর একটা বিজনেসের কাজে কিছুদিনের জন্য দেশের বাইরে যায়। সেই দরুন খুশি আরও দুই তিন বার ওভাবে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। খাওয়া দাওয়াও ঠিকমতো করতে পারে না। মাঝে মধ্যে বমি করে ফেলে। এবার খুশির মা বাবা প্রচুর ঘাবড়ে যায়। তারা আর দেরি না করে খুশিকে ভালো ডক্টরের কাছে নিয়ে যান। ডক্টর খুশির কিছু করতে দেন। এবং টেস্টের রিপোর্টে ধরা পড়ে খুশির ব্রেইন টিউমার হয়েছে।আর টিউমার টা ব্রেইনের একেবারে সেনসিটিভ জায়গায় হয়েছে। যার অপারেশনও অনেক রিস্কি। বাঁচার চাঞ্চ মাত্র টেন পার্সেন্ট। খুশির সাজানো পৃথিবী ওখানেই থমকে যায়। ওর পরিবারও একেবারে ভেঙে পড়ে। আদরের মেয়ের এমন মরণঘাতী রোগের কথা শুনে তারা হতবুদ্ধি হয়ে যায়।

তবে খুশির নিজের চাইতে বেশি প্রহরের চিন্তা হয়। প্রহর কিছুতেই এটা সহ্য করতে পারবেনা। আমার কিছু হয়ে গেলে ও জীবন্ত লাশ হয়ে যাবে। না না ওকে আমার কথা জানতে দেওয়া যাবে না। কিছুতেই না। খুশি তখন মনে মনে একটা কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়। খুশি ওর পরিবারকে প্রহরের কথা সব খুলে বলে। এবং সাথে এও বলে যে, সে প্রহরের জীবন থেকে অনেক দূরে যেতে চায়। সে আর এই শহরে থাকবে না। অনেক দূরে কোথাও চলে যাবে। ওর মা বাবা প্রথমে মানতে চান না। তবে খুশি জেদ ধরে নাওয়া খাওয়া বন্ধ করে বসে থাকে। অসুস্থ খুশি আরও অসুস্থ হয়ে যাওয়ার ভয়ে অগত্যা সবাই ওর কথা মেনে নেয়। ওরা সবাই ওদের নানির বাড়ির গ্রামে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
তবে খুশি যাওয়ার আগে একবার শেষ বারের মতো প্রহরের সাথে দেখা করে যেতে চায়।

অতঃপর প্রহর বিজনেসের কাজ শেষ করে দেশে ফিরে আসে। রাত দুটোর দিকে নিজের বাসায় এসে পৌঁছায় প্রহর। সকাল হতেই খুশির এসএমএস আসে। খুশি ওর সাথে ফার্মহাউসে দেখা করার কথা বলেছে। প্রহরও ফটাফট রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়ে। দুষ্টুপরি টাকে যে অনেক মিস করেছে সে। আজ সারাদিন শুধু পরিটাকে দেখবে সে। খুব শীঘ্রই খুশিকে নিজের ঘরে বউ করে আনবে। এখন যে ওকে ছাড়া একটা মুহূর্তও থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। এসব কথা ভাবতে ভাবতেই প্রহর হাসিমুখে গাড়ি চালিয়ে ফার্মহাউসে পৌঁছায়। খুশি আজ ওকে পিক করতে নিষেধ করেছে। ও নাকি আগেই চলে এসেছে। তাই প্রহরও সোজা ফার্মহাউসেই চলে আসে।

গাড়ি থামিয়ে দ্রুত বাসার ভেতর চলে যায়। খুশিকে দেখার জন্য মন উতলা হয়ে উঠেছে। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই সেই প্রিয় মুখটার দর্শন হলো। প্রিয়তমার দর্শন মাত্র প্রশান্তির দমকা হাওয়া বয়ে গেল প্রহরের শরীর মন জুড়ে। যেন কতজনমের পর এই মুখটার দর্শন পাচ্ছে ও।
প্রহরকে দেখে খুশির বুকের ভেতর হু হু করে উঠলো।কেঁপে উঠলো অন্তর। আবেগের ঘনঘটায় মিয়িয়ে গেল সে। বাঁধ ভেঙে উপচে পড়লো চোখের নোনাজল। কাঁপা কাঁপা কদম বাড়ালো প্রহরের দিকে। প্রহর হাসিমুখে দুই হাত প্রসারিত করে প্রিয়তমাকে নিজের বাহু বন্ধনে সাদর আহ্বান জানালো। খুশিও আহবানে সারা দিয়ে দৌড়ে গিয়ে ঝাপিয়ে পড়লো প্রহরের বুকে।দুই হাতে শক্ত করে প্রহরের গলা পেচিয়ে ধরে কাঁধে মুখ লুকিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। প্রহরও দুই হাতে খুশির কোমড় জড়িয়ে ধরে খুশিকে উঁচু করে ধরে গোল গোল ঘুরাতে লাগলো। ঘুরাতে ঘুরাতে বলতে লাগলো।
–আই মিস ইউ,আই মিস ইউ, আই মিস ইউ সোওও মাচ।

খুশিকে নিচে দাঁড় করিয়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো।
–এই পাগলী কাঁদছ কেন? এই দেখ আমি এসে গেছিতো। আর দূরে যাবোনা। আমার দুষ্টুপরিকে ছেড়ে আর কোথাও যাবোনা আমি।

খুশি শুধু অশ্রুসজল চোখে তাকিয়ে রইলো প্রহরের দিকে। এখন ও কিভাবে বলবে যে, এবার যে খুশি নিজেই দূরে চলে যাবে। তাও সারাজীবনের জন্য। এমনটা কেন হলো ওর সাথে? ও কিভাবে থাকবে প্রহরকে ছেড়ে? প্রহর কি পারবে ওকে ভুলে যেতে? খুশিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে প্রহর বলে উঠলো।
–কি হলো কথা বলছনা কেন? আমার ননস্টপ টেপরেকর্ডার দেখছি একদম চুপচাপ হয়ে গেছে।আমার বিরহে এই অবস্থা হয়েছে নাকি? খুব মিস করেছ বুঝি আমাকে?

খুশি জোরপূর্বক হেসে বললো।
–কই নাতো? আমিতো শুধু এই হট বডিটাকে মিস করছিলাম।

প্রহর হেঁসে দিয়ে বললো।
–আচ্ছা তাই? আমার কামনার দেবি।

প্রহর খুশিকে কোলে তুলে নিয়ে সোফায় এসে বসলো। খুশি শুধু প্রহরের গলা জড়িয়ে ধরে অপলক দৃষ্টিতে প্রহরের দিকে তাকিয়েই আছে।যেন কত জনমের দেখা একবারে দেখে নিচ্ছে ও।প্রহরের চেহরাটাকে নিজের ভেতর সামিয়ে নিচ্ছে খুশি। খুশির আজকের চাহুনি কেমন অন্যরকম লাগছে প্রহরের কাছে।ও ভাবলো হয়তো কতদিন পর দেখছে তাই এমন করছে। প্রহর খুশির গালে হাত বুলিয়ে বললো।
–তুমি ঠিক আছ তো খুশি? তোমাকে কেমন অন্যমনস্ক লাগছে। মুখটাও কেমন শুকনো শুকনো লাগছে। শরীর ঠিক আছে তো?

চমকে গেল খুশি। জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বললো।
–আ আমার আবার কি হবে? আমি একদম ঠিক আছি।

–ঠিক বলছ তো? দেখ সত্যি করে বলো। আমার এ্যাপসেন্সে খাবারের অনিয়ম করোনি তো? সকালে নাস্তা করে এসেছ? আই ডোন্ট থিংক সো। তুমি বসো আমি তোমার জন্য কিছু বানিয়ে আনছি।

কথাটা বলে প্রহর উঠতে নিলেই খুশি আটকে দিয়ে বললো।
–না না উঠবে না প্লিজ। এখানেই থাকোনা আমার কাছে। দূরে যেওনা প্লিজ।

প্রহর একটু অবাক সুরে বললো।
–হেই পাগলী কি হয়েছে? এভাবে বলছ কেন? আমিতো শুধু কিচেনে যাচ্ছি। পাঁচ মিনিটের ভেতরেই চলে আসবো

–না না দরকার নেই। কোথাও যাওয়া লাগবে না। আমি এখন কিছুই খাবোনা। আমি শুধু তোমাকে দেখতে চাই আর কিছুনা। তুমি শুধু আমার চোখের সামনে বসে থাকো প্লিজ।

খুশির বিহেভিয়ার এবার প্রহরকে ভাবাতে বাধ্য করছে। অকারণেই বুকটা কেমন যেন দুরুদুরু করছে। প্রহর খুশির গালে হাত বুলিয়ে মায়া ভরা কন্ঠে বললো।
–দুষ্টুপরি, কিছু হয়েছে? তুমি হঠাৎ এভাবে কথা বলছ কেন? দেখ আমার কেন যেন ভয় হচ্ছে। তুমি ঠিক আছ তো?

খুশি জোরপূর্বক হেসে বললো।
–কি আবার হবে? এখন কি তোমাকে মন ভরে একটু দেখতেও পারবোনা? ঠিক আছে যাও। যেখানে খুশি যাও। আমিও চলে যাচ্ছি।
কথাটা বলে খুশি অভিমান করে উঠে যেতে নেয়। প্রহর তখন আটকে দিয়ে বললো।
–আচ্ছা ওকে ওকে, আমি যাচ্ছি না কোথাও। আমি এখানেই আছি তোমার পাশে।

প্রহর খুশির কপালে চুমু দিয়ে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিলো। বুকটা কেমন যেন দুরুদুরু করছে ওর। কেমন যেন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। কোন কিছু কি হতে চলেছে?
খুশি প্রহরের বুক থেকে মুখ তুলে আবারও প্রহরের মুখের দিকে অপলকভাবে তাকিয়ে রইলো। প্রহরের গালে হাত বুলিয়ে বলে উঠলো।
–কিস মি না।

আচমকা খুশির এমন আবদারে প্রহর আবারও একটু অবাক হলো। খুশি আগে কখনো এভাবে বলেনি। আগে যা বলতো শুধু মজার ছলে বলতো। কিন্তু আজ কেমন অন্যরকম শোনাচ্ছে ওর কথা। প্রহর প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো খুশির দিকে। খুশি আবারও অনুরোধের সুরে।
–প্লিজ,, শুধু একবার।এবারই শেষ। আর কখনো চাইবোনা।

প্রহরের হৃদপিণ্ড হঠাৎ কেঁপে উঠল। প্রহর একটু রাগী কন্ঠে বললো।
–খুশিইই,,,হোয়াট ডু ইউ মিন বাই এবারই শেষ? কি বলতে চাইছ তুমি হ্যাঁ? কি হয়েছে তোমার?

খুশি জোরপূর্বক হেসে বললো।
–আরে আমি বলতে চাইছি খুব শীঘ্রই তো আমরা হাসব্যান্ড ওয়াইফ হয়ে যাবো। তাই গার্লফ্রেন্ড হিসেবে তো এবারই শেষ তাইনা? সো প্লিজ কিস মি।
কথাটা বলে খুশি চোখ বন্ধ করে মুখ উঁচু করে প্রহরকে আহ্বান জানালো। প্রহরও প্রিয়তমার আবদার পুরনে অধর যুগল মিলিয়ে নিল।

চুম্বন ক্রিয়া শেষে খুশি আবারও প্রহরের বুকে মাথা রাখলো। কিছুক্ষণ ওভাবেই চুপ করে থাকলো। তারপর হঠাৎ বলে উঠলো।
–আচ্ছা ধরো যদি কখনো আমার কিছু হয়ে যায়। আর আমি যদি অনেক দূরে চলে যাই। তুমি প্লিজ ভেঙে পরোনা। নিজেকে এমনই শক্ত রেখো কেমন।

প্রহর খুশিকে বুকে জড়িয়ে আবেশে চোখ বুজে ছিল। কিন্তু খুশির এই কথায় ঠাস করে চোখ খুলে তাকালো সে। ফট করে খুশিকে কোল থেকে নামিয়ে সোফায় বসিয়ে দিয়ে রাগী কন্ঠে বললো।
–বুঝতে পেরেছি আমি। তুমি ইচ্ছে করে এসব করছ তাইনা? আমি তোমাকে ছেড়ে এতদিন দূরে ছিলাম তার শাস্তি দিতে চাইছ তাইতো? তাই এসব জঘন্য কথা বলে আমাকে মানসিকভাবে টর্চার করতে চাইছ। ফাইন। করো তুমি যা ইচ্ছে হয়।
কথাটা বলে প্রহর সামনের টি টেবিলে একটা লাথি মেরে দিয়ে হনহন করে বাইরে চলে গেল। খুশি ওভাবেই বসে রইলো। লম্বা লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে নিজের কান্না আটকানোর যথাযথ চেষ্টা করছে। শুধু বলাতেই প্রহর এমন করছে। নাজানি আমার যাওয়ার পরে ওর কি অবস্থা হবে। আল্লাহর কাছে শুধু একটাই চাওয়া, প্রহর যেন নিজেকে সামলে নিতে পারে।

খুশি নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়াল। প্রহরের কাছে যাওয়ার জন্য কদম বাড়াতেই হঠাৎ প্রহর বাইরে থেকে দ্রুত বেগে এসে খুশিকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো। তারপর দুই হাতে খুশির মুখটা ধরে সারামুখে পাগলের মতো চুমু খেয়ে আবারও বুকের মাঝে জড়িয়ে নিয়ে আবেগপ্রবণ কন্ঠে বললো।
–অ্যাম সরি না সোনা। আর কখনো যাবো নাতো তোমাকে ছেড়ে। তবুও প্লিজ এসব কথা আর কখনো বলোনা। আই জাস্ট কান্ট হ্যান্ডেল ইট।

প্রহরের আড়ালে চোখের পানি মুছে নিজেও প্রহরের বুকে নিজেকে সামিয়ে নিলো। আজকের পর হয়তো এই শান্তির জায়গা আর নসিব হবে না।

সারাদিন প্রহরের সাথে সময় কাটিয়ে অবশেষে ফেরার সময় এলো। খুশির ভেতরে সবকিছু যেন চুরমার হয়ে যাচ্ছে। মন চাচ্ছে সময়টাকে থামিয়ে দিতে। তবে তা যে সম্ভব না। তাইতো প্রহরকে ছেড়ে যাওয়ার মুহূর্ত ঘনিয়ে আসছে। গাড়ি চালাচ্ছে প্রহর খুশির বাসার উদ্দেশ্যে। খুশি প্রহরের দিকে ঘুরে গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে বসে একধ্যানে তাকিয়ে আছে শুধু প্রহরের পানে। প্রহর সেটা দেখে মুচকি হেসে বললো।
–এই পাগলী এভাবে কি দেখছ? এভাবে তাকিয়ে থাকলে তো এক্সিডেন্ট করে ফেলবো।

খুশি আনমনেই বিড়বিড় করে বললো।
–ভালোই তো হবে। কিছুদিন পরে যেটা হওয়ার সেটা আগেই হয়ে যাবে।

–হুম? কিছু বললে তুমি?

–নাহ কিছু না।

অতঃপর খুশির বাসার সামনে এসে গাড়ি থামালো প্রহর। খুশি এখনো ওভাবেই তাকিয়ে আছে প্রহরের দিকে। প্রহর বলে উঠলো।
–আর কতো দেখবেন ম্যাডাম? আপনার গন্তব্যে পৌঁছে গেছিতো। নামতে হবে না?

খুশির হৃদপিণ্ড কাঁপছে।মনে হচ্ছে আজকে রাস্তা টা অনেক ছোট হয়ে গেছে। এতো তাড়াতাড়ি কেন পৌঁছে গেলাম? এখন যে ওকে সত্যিই যেতে হবে। কিভাবে যাবে ও? নিজের আত্মাকে ছেড়ে কিভাবে যাবে। কিন্তু যেতে তো ওকে হবেই। খুশি কাঁপা কাঁপা হাতে গাড়ির দরজায় হাত রাখলো। প্রহর তখন বলে উঠলো।
–আচ্ছা শোন, কালকে রেডি থেকো। আমি তোমাকে নিতে আসবো। তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে কাল।

খুশির গলায় সব দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। খুশি ঢোক গিলে নিয়ে কোনরকমে মাথা নাড়িয়ে ঠিক আছে বুঝালো। দরজা খুলে এক পা নিচে নামাতেই আবারও ফিরে তাকালো প্রহরের দিকে। ঘুরে এসে আবারও প্রহরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। প্রহর প্রথমে হালকা অবাক হলেও, পরে মুচকি হেসে সেও খুশিকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো।
–এই দুষ্টুপরি এমন করলে আমি কিভাবে যাবো? আমি কালই তো আবার আসছি। এখন লক্ষী মেয়ের মতো বাসাও যাও।

খুশি আস্তে আস্তে প্রহরকে ছেড়ে দিল। দরজা খুলে বেড়িয়ে এলো খুশি। কাঁপা কাঁপা পায়ে কোনরকমে গেটের ভেতর গেল। প্রহর গাড়ি নিয়ে চলে যেতেই খুশি ওখানেই বসে পড়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।

সেদিনই ওরা ওই শহর ছেড়ে চলে যায়। এভাবেই সেদিন ওদের প্রেমকাব্যের সমাপ্তি ঘটে।

বর্তমান,
জারিফের ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে বেড়িয়ে আসে খুশি। জারিফ বলে উঠলো।
–কিরে বেড়াতে এসেও ঘরের মাঝেই আটকে থাকবি?চল ব্রেকফাস্ট করে আসি।

খুশি যেতে না চাইলেও জারিফ জোর করেই ওকে নিয়ে গেল। বাইরে এসে খুশি শুধু এদিক ওদিক তাকিয়ে প্রহরকে খুঁজছে।এখন পর্যন্ত একবারও সামনে পরেনি প্রহর। কাল রাতে আমার কাজে নিশ্চয় প্রহর অনেক অপমানিত বোধ করেছে। তাইতো আজ আর আমার সামনে আসছে না। তাহলে কি প্রহর এবার সত্যিই আমার পিছু ছেড়ে দিবে? এটাই তো আমি চাচ্ছিলাম। তাহলে এখন এতো খারাপ লাগছে কেন? লাগলে লাগুক। তবুও এটাই ঠিক। প্রহর আমার থেকে যত দূরে থাকবে ততই ভালো থাকবে।

এভাবে সারাদিন চলে গেল প্রহর খুশির সামনে আসেনি। খুশি এবার নিশ্চিত হলো যে,প্রহর সত্যিই ওকে আর দেখতে চায়না। নিজের কষ্ট লাগলেও প্রহরের জন্য ভালো লাগছে ওর। হয়তো ও এখন ওর জীবনে সামনে এগুতে পারবে।
রাতের ডিনার শেষে এসব ভাবতে ভাবতেই নিজের রুমের দিকে যাচ্ছিল খুশি। হঠাৎ পেছন থেকে কেউ এসে খুশির মুখে রুমাল চেপে ধরলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই খুশি জ্ঞান হারিয়ে ঢলে পড়লো।

চলবে……

গল্পের লেটেস্ট আপডেট পেতে আর গল্প নিয়ে যেকোনো আলোচনা আড্ডা দিতে আমার গ্রুপে জয়েন হওয়ার আমন্ত্রণ রইল। নিচে গ্রুপ লিংক দেওয়া হলো। জয়েন হতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন। 👇
গ্রুপ
https://facebook.com/groups/170529085281953/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here