অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ পর্ব-১৫

অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ
পর্ব-১৫
#লেখিকা-মেহরুমা নূর

★অতীত,
সেদিন থেকেই সূচনা হয় প্রহর খুশির প্রেমকাব্যের। দুটি মনের মিলনের ছন্দপতনে মুখোরিত হয় পবন মেলা। মেঘের ভেলায় চড়ে দুজন হারিয়ে যায় অচেনা কোন রাজ্যে। সহস্র বুলির ফুলঝুরি খুলে বসে। হাওয়ায় ভাসতে থাকে তাদের প্রেমানন্দের মিষ্টি সুবাস।

সেদিনের পর এক মাস পার হয়ে গেছে।এই একমাসে প্রহরের সব বদলে যায়। বদলে প্রহরের জীবন ধারা। প্রহরের জীবনে খুশি সত্যিকারের খুশির প্রলয় নিয়ে এসেছে। নিজেকে ওর এতো সুখী আগে কখনোই মনে হয়নি। প্রহরের জীবন এখন খুশিময়। প্রেমের আরম্ভ টা খুশির তরফ থেকে ছিল। তবে এখন প্রহর খুশির চাইতেও বেশি পাগল খুশির জন্য। খুশির প্রাণচাঞ্চল্য, ওর পাগলামো সবই যেন প্রহরের এখন সুখের মূলমন্ত্র। খুশির ছোট ছোট বায়না,ওর আবদার গুলো পূরণ করাই এখন প্রহরের একমাত্র গুরুদায়িত্ব। এক মুহূর্তের জন্যেও খুশির ঠোঁটের হাসি বিলিন হতে দেয়না প্রহর। এই হাসিই যে ওর জীবনের সর্বোচ্চ পরম পাওয়া। তাইতো হাজার কষ্ট হলেও খুশির সব আবদার পুরন করে ও। যার দরুন প্রহরকে কখনো খুশির হাতের রান্না করা খাবার নামক বিষও হাসিমুখে সাবার করতে হয়।খুশি প্রায়ই প্রহরের জন্য নতুন রান্নার এক্সপেরিমেন্ট করে নিয়ে আসে। আর খুশির মন রাখতে বেচারা প্রহরকে সেগুলো পেটে চালান করতে হয়। তারওপর আবার প্রশংসাও করতে হয়। আবার কখনো খুশির আবদার পুরন করতে রাতভর ভিডিও কলে কথা বলতে হয়। যদিও বলার কাজটা শুধুই খুশির থাকে। প্রহরতো কেবলই নীরব শ্রোতার ভূমিকা পালন করে।খুশি নিজেই রাতভর কথা বলার আবদার করে ঘন্টাখানিক যেতে না যেতেই ঘুমে তলিয়ে যায়। আর প্রহর মুচকি হেসে তাকিয়ে থাকে। তার দুষ্টুপরি টাকে দেখতে দেখতে রাত পার করে দেয় সে। এভাবেই বহমান হতে থাকে ওদের প্রেমের ভেলা।

প্রহরের জীবনের এই বদলানো রুপ জিদান সাহেবও খেয়াল করেছেন।তিনি লক্ষ্য করেছেন তার ছেলে এখন হাসিখুশি থাকা শুরু করেছে। তার বর্ণনা অনুযায়ী প্রহর এখন নরমাল হতে শুরু করেছে। ব্যাপার টাই তিনি খুশিই হচ্ছেন। তার ছেলের জীবনে যে কিছু একটা ঘটেছে তার আভাস পাচ্ছেন তিনি। তবে প্রহরকে এ ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করেনি। সময় হলে হয়তো প্রহর নিজেই বলবে। ছেলেটা যে জীবনে একটু সুখী হচ্ছে এটাই বড়ো কথা।

আজ প্রহরের প্রেম নিবদনের এক মাস পূর্ণ হয়েছে। আর খুশি বায়না ধরেছে সে আজকের এই দিনটাকে মান্থলি এনিভার্সারি হিসেবে পালন করবে। আজকে সে প্রহরের সাথে ফার্মহাউসে গিয়ে এই দিনটাকে সেলিব্রেট করবে। যদিও প্রহরের এসবকিছু অহেতুক অর্থহীন মনে হয়। তবুও খুশির জিদের কাছ বরাবরই তাকে হার মানতে হয়। নাহলে যে জনাবা অভিমান করে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। যেটা প্রহরের পক্ষে এফোর্ট করা সম্ভব না। তাই খুশির আদেশ অনুযায়ী গাড়ি নিয়ে ওদের বাসার সামনে এসে হাজির হয়েছে। একটু পরেই হাসিমুখে বেড়িয়ে এলো খুশি। প্রহর চোখের সানগ্লাস খুলে সানগ্লাসের একট হ্যান্ডেল দাঁতের মাঝে ধরে রেখে, মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো ওর মন ময়নার পানে। মেয়েটা এতো কিউট কেন? ওর এই হাসি মুখখানা জাস্ট পাগল করে দেয় প্রহরকে। মন চায় শুধু সারাক্ষণ চোখের সামনে বসিয়ে রাখি আর দেখতে থাকি।

খুশি হেলেদুলে এসে প্রহরের মুখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে দুষ্টু হেসে বললো।
–জানি আমি একটু বেশিই সুন্দর তাই বলে এভাবে তাকিয়ে থাকতে হবে? আমার বুঝি শরম করে না?

প্রহর এক ভ্রু উঁচিয়ে বললো।
–শরম আর তোমার? এটাও সম্ভব?

–আরে অসম্ভবের কি আছে? লজ্জা আমার কাছেও আসে। হ্যাঁ কিন্তু আমি ওরে পাত্তা দেইনা সেটা আলাদা ব্যাপার। আমি আবার ওসব অদরকারী জিনিসে পাত্তা দেইনা।

–হয়েছে। এখন দয়া করে গাড়িতে উঠে বসুন।

খুশি হেঁসে দিয়ে ফটাফট গাড়িতে উঠে বসলো। প্রহর মুচকি হেসে গাড়ি স্টার্ট দিল। গাড়ি চলছে আপন গতিতে। আর খুশিও মেতে উঠেছে তার নিজস্ব উদ্যমে। গাড়ির জানালা খুলে ইচ্ছেমতো বাতাসে চুল উড়াচ্ছে। মিউজিক সিস্টেমে সং প্লে করলো।
♬ দো দিল চাহাতকে মাড়ে
♬ অর দোনো হি কাওয়া রে
♬ সামঝা কারো ইশারে
♬ এনি হাও মাট্টি পাও
♬ ধারকান দিল কি পারমানু
♬ ভেজে মে হে কিটানু
♬ হাল্লা কারতে হে সারে
♬ এনি হাও মাট্টি পাও

♬ ও বাহোমে আ ভাড়লে এএ
♬ ইকবার তো কারলে
♬ সোনিয়ে হিরিয়ে মেরে নাল কুচি কু
♬ লাবু জু, লাবু জু
♬ ও দিল সারসো দা ক্ষেত হে জামিদার তু
♬ লাবু জু লাবু জু
♬ বারে খারচে কারাতি হার শানিবার তু
♬ লাবু জু লাবু জু
♬ লিপ গ্লোস মে লাগতিহে ধুয়াদার তু
♬ লাবু জু লাবু জু
♬ ও মেরে নাল বাসালে ঘার পারিবার তু

গানের তালে তালে বসে থেকেই হাত আর মাথা নাড়িয়ে নাচতে লাগলো খুশি। প্রহরের সানগ্লাস টা নিজে পড়ে নিয়ে হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ব্রেক ডান্স করতে লাগলো। প্রহর শুধু মুচকি হেসে খুশির কার্যকলাপ দেখছে। খুশি নিজে নাচতে নাচতে আবার প্রহরের হাতের ওপর দিয়ে আঙুল নাচাচ্ছে। এভাবেই খুশির প্রাণবন্ত আর উৎসাহের মাঝেই ওরা ফার্মহাউস পৌঁছে গেল। গাড়ি থামাতেই খুশি ফটাফট নেমে দৌড়ালো। প্রহর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মাথা নেড়ে হাসলো। এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারা গেলো না। এখানে আমার সাথে সময় কাটানোর কথা বলে আসে, অথচ এখানে এসেই আমার কথা বেমালুম ভুলে যায়। ছুটে যায় ওই পশুপাখি গুলোর কাছে। যতক্ষণ থাকে পশুপাখি আর বাকি কর্মচারীদের সাথেই আড্ডায় মেতে থাকে। আমি যে এখানে আছি তার কোন হুঁশই থাকে না ম্যাডামের। তাকে অনেক খুঁজে খুঁজে বের করতে হয়।

আজও তার ব্যাতিক্রম হলোনা। খুশি এসেই মেতে উঠেছে সবার সাথে। এইকয়দিনেই এখানকার পশুপাখি আর কর্মচারী গুলোরও খুশির সাথে খুব ভাব হয়ে গেছে। খুশি আসলে তাদেরও অনেক ভালো লাগে। মেয়েটা সবাইকে মাতিয়ে রাখে। খুশি আসতেই স্যামি আর জনি দৌড়ে এলো খুশির কাছে। খুশিও হাসিমুখে তাদের গায়ে হাত বুলিয়ে বললো।
–কিরে জনি স্যামি কেমন আছিস তোরা? আমার কথা মনে পরেছে তোদের? আর স্যামি তোর ক্যাটরিনার সাথে লাভ স্টোরি কেমন চলছে রে? এখন তো ক্যাটরিনা একেবারে যুবতী হয়ে গেছে। দেখিস আবার অন্য ছেলে ছাগল আবার ওকে পটিয়ে না ফেললে হয়। তাই তুই যত দ্রুত সম্ভব ওর বাবা মায়ের কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যা।

স্যামি লেজ নাড়িয়ে খুশির গা ঘেঁষে ঘেউঘেউ করলো। খুশি তখন বলে উঠলো।
–ও আচ্ছা আমি তোর জন্য নিয়ে যাবো তোর প্রস্তাব? আচ্ছা ঠিক আছে চল। আজই তোর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবো। আর আজই তোদের বিয়েও দিয়ে দিবো।
খুশি স্যামির সাথে যেতে যেতে গাইতে লাগলো।
♬ বন্ধু তোর বারাত নিয়া আমি যাবো

খুশি ক্যাটরিনার মায়ের কাছে এসে বললো।
–শুনুন আন্টি আমি আমার ভাই স্যামির জন্য আপনার মেয়ের পা চাইছি। আমার ভাই লাখে একজন।নাম্বার ওয়ান হ্যান্ডসাম বয়। সকল কুকুরনিদের ক্রাশ বয়। আপনার মেয়েকে অনেক সুখে রাখবে। সারাজীবন ঘাস আর ভুষিতে ভরিয়ে রাখবে। কখনো কোন অসুবিধা হতে দিবেনা। আর ছয় মাসের মাথায়ই আপনাকে নানি হওয়ার সুখ দিবে। তাই আর না ভেবে ফটাফট রাজি হয়ে যান।

ক্যাটরিনার ম্যা ম্যা করে উঠলো। আর খুশি হাতে তালি বাজিয়ে বললো।
–বাহ্ বাহ্ অনেক ভালো। তাহলে বিয়ে পাকা হয়ে গেল। আমরা এখনই ওদের বিয়ে দিবো। আপনারা রেডি হয়ে যান। আমি বর বউকে সাজিয়ে নিয়ে আসছি।

প্রহর খুশিকে অনেকক্ষণ ধরে না দেখতে না পেয়ে ওকে খোঁজার জন্য বাইরে এলো। বাইরে এসে যা দেখলো তাতে বেচারার চোখ চড়কগাছ হয়ে গেল। ফার্মের সামনে খোলা জায়গায় সব কর্মচারী রা গোল হয়ে বসে আছে। আর মাঝখানে বসে আছে দ্যা গ্রেট খুশি রাণী। ওর সামনেই স্যামি আর খুশির সেই ক্যাটরিনা। স্যামিকে বরের মতো আর ক্যাটরিনাকে বউয়ের মতো সাজিয়ে রেখেছে। একটু পরে খুশি বলে উঠলো।
–হ্যাঁ তাহলে শুরু করা যাক? তো ফার্মহাউসের নিবাসি টমির সুপুত্র স্যামি, দশ আটি তরতাজা ঘাস দেনমোহর নগদ বুঝিয়া পাইয়া তাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করিলে বলো কবুল। ওহ তুমি তো আর কবুল বলতে পারবে না তাই ম্যা..বলো।

ক্যাটরিনা একটু পরে ম্যা করে উঠলো। খুশি হাতে তালি বাজিয়ে বললো।
–বাহ্ বাহ্ অনেক ভালো। তাহলে বিয়ে সম্পূর্ণ হলো। তাহলে এখন আমরা সবাই ওদের সুখি জীবনের জন্য মোনাজাত করি।
খুশির কথামতো সবাই দুই হাত তুলে মোনাজাত ধরে দোয়া দরুদ পড়া শুরু করলো।

খুশির এই মহানুভাব কারসাজি দেখে প্রহর তব্দা খেয়ে গেল।ছাগল আর কুকুরের বিয়ে? আই মিন লাইক সিরিয়াসলি? এটা শুধু এই পাগলীর দাড়াই সম্ভব। এতো প্রকৃতির নিয়মকেই উল্টে ফেললো।আর এই আবাল গুলোও কম না। খুশির সাথে বোধহয় এরাও পাগল হয়ে গেছে। প্রহর ওদের সামনে এগিয়ে গিয়ে বললো।
–কি হচ্ছে এসব?

খুশি প্রহরের দিকে তাকিয়ে বললো।
–আরে তুমি এসে গেছ? দেখ দেখ আমি কতো মহান কাজ করেছি। ওদের ভালোবাসাকে মিলিয়ে দিয়েছি। আসো তুমিও এসে ওদের আশীর্বাদ দাও। তুমিই তো ওদের আসল অভিভাবক। তাই তুমি ওদের সুখী জীবনের আশীর্বাদ দাও।আসো আসো।

প্রহরের এখন উপলব্ধি হচ্ছে ও এখানে এসেই বোধহয় মস্তোবড় ভুল করে ফেলেছে। এখন কি ওকেও এই পাগলামিতে সামিল হতে হবে? প্রহর কোনমতে গলা খাঁকারি দিয়ে বললো।
–আমার একটা জরুরি কাজ মনে পড়ে গেছে। আমি এখুনি আসছি। তোমরা কন্টিনিউ করো কেমন?
কথাটা বলেই কোনমতে কেটে পড়লো প্রহর। এখানে থাকা মানেই ইজ্জতের ফালুদা করা।

প্রহর ড্রয়িং রুমে বসে ল্যাপটপে কিছু মেইল চেক করছে। খুশিতো সেই যে এসেই হৈ হুল্লোড়ে মেতে আছে। এখন পর্যন্ত একবারও প্রহরের কাছে আসার সময় হয়নি ম্যাডামের। তাই অগত্যা বসে বসে নিজের কাজ করছে। কিছুক্ষণ পরেই খুশি রাণী হেলেদুলে এলো। প্রহরের পাশে সোফায় ধপ করে বসে পড়ে, প্রহরের কাঁধ জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রেখে ক্লান্ত সুরে বললো।
–অ্যাম সো টায়ার্ড। বিয়ে শাদি পাড়ি দেওয়া চারটি খানি কথা না। কত্তো ঝামেলা বাপরে।

প্রহর মুচকি হেসে এক হাত উঠিয়ে খুশির কাঁধ জড়িয়ে নিয়ে বললো।
–কি হলো ম্যাডামের? দুষ্টুপরি টার ব্যাটারি লো হয়ে গেছে বুঝি?

–হুমম অনেক…

–নো টেনশন। আমি এখুনি আমার দুষ্টুপরি টার জন্য এনার্জি যুক্ত জুস বানিয়ে আনছি ওকে? সন্ধ্যা হয়ে আসছে। আমাদের আবার বের হতে হবে।

–ওকে

প্রহর উঠে গিয়ে খুশির জন্য জুস আর কিছু স্নাকস নিয়ে এলো। খুশি ততক্ষণে টিভি চালু করে দিয়ে দেখতে লাগলো। তখনই টিভির স্কিনে ব্রেকিং নিউজ দেখতে পেল। দুই রাজনৈতিক দলের সংঘর্ষের কারণে রাস্তায় অবরোধ আর দাঙ্গা মারামারি হচ্ছে। যার দরুন রাস্তায় গাড়ি বের করা যাবে না। প্রহর নিউজ টা দেখে চিন্তিত সুরে বললো।
–ওহ নো। এটা আমাদের যাওয়ার রাস্তা। এখন আমরা ফিরবো কিভাবে?

খুশি ভ্রু কুঁচকে বললো।
–তারমানে আমরা বাসায় যেতে পারবোনা? আমাদের রাত এখানেই কাটাতেই হবে?

প্রহর ভাবছে খুশি হয়তো বাসায় না যেতে পারা নিয়ে ভয় পাচ্ছে। তবে প্রহরকে হান্ড্রেড পার্সেন্ট ভুল প্রমাণিত করে দিয়ে খুশি অতি উৎসাহিত কন্ঠে বললো।
–সত্যিই??? হায় কি রোমান্টিক ব্যাপার স্যাপার। ♬ হাম তুম এক ফার্মহাউস মে বান্দ হো
♬ অর রাস্তা বান্দ হো যায়ে
♬ সোচো কাভি এইসা হো তো কেয়া হো

প্রহর ভ্রু কুঁচকে বললো।
–আর ইউ সিরিয়াস? এমন একটা সিচুয়েশনে তোমার মজা লাগছে? তোমার ভয় করছে না বাসায় সবাই কি বলবে?

খুশি ভাবলেশহীন ভাবে বলে উঠলো।
–আরে টেনশন নট। আমি বাসায় বলে এসেছি আমি দিয়ার বাসায় যাচ্ছি। আর এখন বাবাকে ম্যাসেজ করে দিবো যে রাস্তায় অবরোধের কারণে আজ রাত ওদের ওখানেই থাকবো। ব্যাস হয়ে গেল।

–আর ইউ শিওর? কোন সমস্যা হবে নাতো?

খুশি প্রহরের গা ঘেঁষে বসে বললো।
–আরে শিওর শিওর। আরে ওসব ছাড়োনা। ভাবো আজ আমরা দুজন একা এখানে থাকবো। তোমার রোমান্টিক রোমান্টিক ফিলিং আসছে না? এমন রোমান্টিক মুহূর্তে কি করতে মন চাচ্ছে তোমার?

প্রহর কোন ভাবাবেগ ছাড়াই বলে উঠলো।
–রান্না করতে।

খুশি কপাল কুঁচকে বললো।
–হোয়াট? রান্না কোথাথেকে আসলো এর মাঝে?

–কোথাথেকে আবার আসবে? পেটের দায়ে এসেছে। রাতে এখানে থাকতে হলে খাবার খেতে হবে না? তাই আমি এখন যাচ্ছি রান্না করতে যাচ্ছি। তুমি বসে বসে টিভি দেখ।
কথাটা বলে প্রহর খুশির মুখে একটা বিস্কিট ঢুকিয়ে দিয়ে কিচেনের দিকে চলে গেল।

খুশি বিস্কুটে কামড় দিয়ে মুখ বেকিয়ে বললো।
–আনরোমান্টিকের ড্রাম একটা।

বাইরে অন্ধকার নেমে এসেছে। প্রহর রাতের ডিনারের প্রস্তুতি করতে লাগলো। খুশি একটু পরে এসে বললো।
–আরে আমি থাকতে তুমি কেন কষ্ট করছ? আমি রান্না করছি। তুমিতো জানোই আমি কত টেস্টি খাবার বানাতে পারি। তুমি যাও আমি রান্না করছি।

খুশির খাবারের কথা মনে করতেই প্রহর জোরপূর্বক হেসে বললো।
–হ্যাঁ হ্যাঁ তাতো অবশ্যই। তোমার মতো টেস্টি খাবার তো আর কি আর আমি বানাতে পারি। তবে আজকে একটু আমাকে তোমার জন্য রান্না করতে দাও প্লিজ? তোমার হাতের খাবার আমরা নাহয় অন্যদিন খাবো ওকে?

–আচ্ছা ঠিক আছে। যাও আজকে তোমাকেও সুযোগ দিলাম।

বেচারা প্রহর যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। খুশির খাবার নামক টর্চার থেকে তো রক্ষা পেল। বাইরে কেমন মেঘের গর্জন শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। খুশি প্রহরের কাছে এসে উৎসাহী কন্ঠে বললো।
–ওয়াও দেখ বাইরে মেঘ ডাকছে। এই মুহূর্তে বৃষ্টি হলে পরিবেশটা আরও রোমাঞ্চকর হয়ে উঠবে তাইনা?
কথাটা বলে খুশি প্রহরের হাতে হালকা ধাক্কা মারলো। তবে এতে প্রহরের মাঝে খুব একটা ভাবান্তর হলো না। সে তার মতো পেয়াজ কাটায় মনযোগ দিলো।

প্রহরের কোন রেসপন্স না দেখে খুশি নিজ মত্তে তার আপন কর্ম শুরু করে দিল। সিঙ্কের ওপর কয়েক রকম সবজি নিয়ে একসাথে গেঁথে মাথায় ক্রাউনের মতো পড়ে, প্রহরের দৃষ্টি আকর্ষণের উদ্দেশ্যে শিস বাজালো। প্রহর খুশির দিকে তাকালে খুশি দুই হাত ছড়িয়ে বললো।
–কেমন লাগছে আমাকে?

প্রহর হালকা হেঁসে বললো।
–মাইন্ডব্লোয়িং, একদম আমার সবজি রাণী মনে হচ্ছে।

খুশি হি হি করে হেঁসে দিল। বাচ খুশির এই মাছুম হাসিটাই যেন প্রহরের মনে তৃপ্তির জোয়ার আনার জন্য যথেষ্ট। খুশি এবার গায়ের ওড়নাটা দুই হাতে মাথার উপর দিয়ে উড়িয়ে ধরে, প্রহরের আশেপাশে ঘুরে ঘুরে গান গাইতে লাগলো।
♬ এখন তো সময় কাছে আসার
♬ এ দুটি হৃদয় ভালোবাসার
♬ তুমি যে একা, আমিও যে একা
♬ লাগে যে ভালো, ও প্রিয়
♬ ও প্রিয়

খুশির কার্যকলাপে প্রহর হালকা হেঁসে খুশির কপালের সাথে নিজের কপাল আলতো করে টোকা মেরে বললো।
–এই দুষ্টুপরি এমন জ্বালালে রান্না করবো কিভাবে? ক্ষুধায় যখন পেটে ইদুর দৌড়াবে তখন সব রোমাঞ্চ জানালা দিয়ে পালাবে বুঝেছ?

খুশি দুই হাতে প্রহরের গলা জড়িয়ে ধরে বললো।
–আরে কে বলেছে? না খেলে কিছুই হয় না। আমিতো দুপুরেও খাইনি। কই তাতে তো কিছু হয়নি।

প্রহর খুশির হাত নামিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো।
–এক মিনিট! তারমানে তুমি লাঞ্চ করোনি?

এইরে কি বলে ফেললো খুশি? ভুল সময় ভুল কথা বলে ফেলেছে। এখন এই প্রহরতো ওকে ভস্ম করে দিবে। খুশি জোরপূর্বক হেসে বললো।
–কই কি বললাম?কিছুই না। তুমি রান্না করো আমি বরং বাইরে যাই।
কথাটা বলে খুশি এখান থেকে কেটে পড়ার চেষ্টা করলেও তা হলোনা। প্রহর খুশির হাত শক্ত করে ধরে শক্ত গলায় বললো।
–কি হলো এখন পালাচ্ছ কেন? তোমাকে না আমি বলেছি খাবারের অনিয়ম করবে না। তাহলে তুমি সারাদিন না খেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছ কেন? আর একটি বার আমাকে কিছু বললেও না?

–আরে কি খাওয়া খাওয়া লাগিয়ে রেখেছ? আমার এতো খেতে ইচ্ছে করে না।

–শাট আপ। খেতে ইচ্ছে করে না। বাহ্ কতো সুন্দর কথা। এখন চুপচাপ বাইরে গিয়ে বসে থাকো। আমি এখুনি কিছু বানিয়ে আনছি। তারপর নিজের হাতে আজ পুরো খাবার খাওয়াবো।

খুশির এখন নিজের ওপরই রাগ লাগছে। কে বলেছিল না খাওয়ার কথা বলতে? এখন আমাকে এই খাবারের টর্চার পোহাতে হবে। খুশি মুখ লটকিয়ে বাইরে চলে গেল। খুশির গাল ফুলানো দেখে প্রহর হালকা হেঁসে আবারও রান্নায় মনোযোগ দিলো।
___

রাতের ঘনত্ব আরও গভীর হচ্ছে। ঘরির কাটা দশটায় গিয়ে ঠেকেছে। মেঘ তার ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ বাইরে বর্ষণ ঘটাচ্ছে। ডিনার শেষ করে প্রহর একটু ফার্মের দিকে গিয়েছিল। পশুপাখি গুলো ঠিক আছে নাকি দেখতে। ফার্ম থেকে কিছুক্ষণ পরেই ফিরলো প্রহর। ছাতাটা দরজার পাশে রেখে এগিয়ে এসে দেখলো খুশি ড্রয়িং রুমে নেই। প্রহর ভ্রু কুঁচকে ভাবলো মেয়েটা আবার কোথায় গেল? এখানেই তো টিভি দেখছিল? আবার বৃষ্টিতে ভিজতে চলে গেল নাতো? এতোবার করে মানা করে গিয়েছি তারপরও বোধহয় চলে গেছে ভিজতে। একে নিয়ে আর পারলাম না।

প্রহর দ্রুত উঠে রুমে এসে দেখলো খুশি রুমেও নেই। ব্যালকনিতে গিয়ে দেখলো যা ভেবেছিল তাই হচ্ছে। ছাদের দরজা তালা মেরে রাখায় ম্যাডাম ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থেকেই মাথা বাইরে বার করে দিয়ে উপর দিকে মাথা ঘুরিয়ে হা করে বৃষ্টির পানি খাচ্ছে আর আনন্দ করছে। প্রহর দ্রুত গিয়ে খুশির হাত ধরে বললো।
–এই পাগলী কি করছ? তোমাকে না মানা করেছি ভিজতে? সরে আসো তাড়াতাড়ি। ঠাণ্ডা লেগে অসুস্থ হয়ে যাবেতোরে বাবা।

খুশি জেদ ধরে বললো।
–না না আরেকটু থাকি না প্লিজ প্লিজ??

প্রহর বুঝতে পারলো এভাবে কাজ হবে না। সে রুম গিয়ে একটা শুঁকনো টাওয়াল নিয়ে আবার খুশির কাছে এসে খুশিকে সোজা পাঁজা কোলে তুলে নিল। খুশিকে কোলে নিয়েই ব্যালকনির সোফায় এসে বসলো। তারপর হাতের তোয়ালেটা দিয়ে খুশির মাথা মুছে দিতে দিতে বলতে লাগলো।
–তোমাকে নিয়ে আর পারিনা। আমার একটা কথাও কেন শোননা তুমি? এরপর অসুস্থ হয়ে পড়লে কি করবো আমি?

কথা বলতে বলতে প্রহরের দৃষ্টি আটকে গেল খুশিতে। ভেজা চুলে স্নিগ্ধ খুশিকে দেখে প্রহরের ঘোর লেগে আসছে। নিজের ইন্দ্রিয় গুলোর ওপর ক্রমশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে সে। চোখের দৃষ্টিতে তিব্র নেশা ভর করছে।বাইরে ঝুম বৃষ্টি আর শীতল বাতাস। এমন রোমাঞ্চকর পরিবেশে প্রিয়তমার এমন মোহনীয় রুপ দেখে গলা শুঁকিয়ে আসছে প্রহরের। শুকনো ঢোক গিলে প্রহর খুশির ভেজা চুল গুলো কানের পিছে গুঁজে দিয়ে,নেশালো কন্ঠে বললো।
–এমন পাগল কেন করছ দুষ্টুপরি? এভাবে পাগল করলে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ কিভাবে রাখবো?

খুশি মায়াবী হেঁসে দুই হাতে প্রহরের গলা জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো।
–তো কে বলেছে এতো নিয়ন্ত্রণ করতে? এতো নিয়ন্ত্রণ করে কি বাবা রামদেব হওয়ার শখ জেগেছে নাকি?

প্রহর খুশির গালে হাত বুলিয়ে বললো।
–এছাড়া যে কোন উপায় পাগলী। আমরা যে এখনও স্বামী স্ত্রীর পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হইনি।

–ওও এই কথা? এটা কোন ব্যাপার হলো? আচ্ছা চলো আমরা এক্ষুণি বিয়ে করে নিচ্ছি। আমি যখন ক্যাটরিনা আর স্যামির বিয়ে করাতে পারি তাহলে আমার টা কেন পারবো না? হ্যাঁ তাহলে শুরু করি। তো আমি, পিতা
মোঃ রাকিব হাসানের একমাত্র কন্যা খুশি হাসান, গুলশান নিবাসী জিদান মেহরাবের একমাত্র ছেলে প্রহর মেহরাবকে একশত এগারো টাকা দেনমোহর ধার্য করিয়া, এই রাত আর এই বৃষ্টিকে সাক্ষী রেখে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করিলাম। কবুল, কবুল, কবুল। এখন তুমি বলো।

প্রহর মুচকি হেসে বলে উঠলো।
— আমিও আমার দুষ্টুপরিকে জনম জনমের জন্য নিজের জীবন সঙ্গী হিসেবে মেনে নিলাম। কবুল, কবুল, কবুল।

–বাহ্ এইতো হয়ে গেল বিয়ে। এখন থেকে তুমি আমার স্বামী,আর আমি তোমার স্ত্রী।এন্ড নাও ইউ ক্যান কিস ইউর ব্রাইড।

প্রহরের নেশা বেড়ে যাচ্ছে। খুশির আহ্বানে নিজেকে আর আটকাতে পারলোনা প্রহর। এক হাতে খুশির কোমড় জড়িয়ে ধরে আরেক হাত খুশির চুলের মাঝে দিয়ে খুশির গোলাপি অধর যুগলে ডুব দিলো। শুষে নিতে লাগলো খুশির মধুর ভান্ডারের মধু। খুশি প্রহরের চুল খামচে ধরে নিজেও ভেসে গেল এই নতুন মোহের ভেলায়। দুজনের এই ক্রিয়া চললো মিনিট পাঁচেক। এরপর প্রহর ইতি টেনে খুশির কপালে কপাল ঠেকিয়ে ভারি নিঃশ্বাস ছেড়ে নেশা ভরা কন্ঠে বললো।
–এখনকার জন্য এর থেকে বেশি যাওয়া যাবে না সোনা। বাকিটা পরে। যখন আমাদের সত্যি সত্যিই বিয়ে হবে। আমার দুষ্টুপরি টা আরেকটু বড়ো হবে। লাল টুকটুকে বউ সাজবে। সবার সামনে ধুমধাম করে আমাদের বিয়ে হবে। তখন আমার দুষ্টুপরি টাকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিবো।

খুশি প্রহরের চোখে চোখ রেখে বললো।
–সত্যিই এমন হবে তো?

খুশির এমন প্রশ্নে বুকের মাঝে কেমন ধুক করে উঠলো প্রহরের। প্রহর ঝট করে খুশিকে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিয়ে বললো।
–হবে তো মানে কি? অবশ্যই হবে। আল্লাহ আমাদের কে বাঁচিয়ে রাখলে অবশ্যই হবে। আমার দুষ্টুপরি টা শুধুই আমার। আর আমারই বউ হবে।

খুশি বুঝতে পারছে প্রহর বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছে। তাই ওর মাইন্ড চেঞ্জ করার জন্য বলে উঠলো।
–কিন্তু আমার তো পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার ইচ্ছে।

প্রহর খুশির মুখ সামনে এনে অবাক সুরে বললো।
–হোয়াট? পালিয়ে বিয়ে? লাইক সিরিয়াসলি? এটা আবার কেমন ইচ্ছে?

–হ্যাঁ। আমার না অনেক ইচ্ছে মুভির নায়ক নায়িকাদের মতো পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করবো। মজা হবে না?

প্রহর হেঁসে দিয়ে বললো।
–তুমি সত্যিই পাগলী। এমন অদ্ভুত ইচ্ছে শুধুমাত্র তোমারই হতে পারে।

এভাবেই প্রহরের বুকে মাথা রেখে নানান কথার ফুলঝুরি সাজাচ্ছে খুশি। ধীরে ধীরে এখন চোখে ঘুম নেমে আসছে ওর। প্রহরের বুকেই নিজেকে এলিয়ে দিল ঘুমের রাজ্যে পারি দেওয়ার জন্য। তবে কেমন যেন অসুবিধা হচ্ছে। খুশি অসুবিধার কারণ টা বুঝতে পারলো। এবং সেটা সরানোর কাজে লেগে পড়লো। তখনই প্রহর উপলব্ধি করলো খুশি ওর শার্টের বোতাম খুলছে। প্রহর মুচকি হেসে বললো।
–এই দুষ্টু, কি হচ্ছে এসব হ্যাঁ?

খুশি ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো।
–কিছুনা। আমাদের মাঝখান থেকে এই ঝোপের বেড়াটা সরাচ্ছি। এটা আমাকে তোমার বুকে যেতে বাঁধা দিচ্ছে।
কথা বলতে বলতে খুশি প্রহরের শার্টের উপরের তিনটা বোতাম খুলে দিল। তারপর পরম আবেশে প্রহরের খোলা বুকের উষ্ণতায় নিজেকে লুকিয়ে ফেললো। মিনি বিড়ালের মতো প্রহরের বুকের সাথে মিশে ঘুমিয়ে পড়লো।

খুশি ঘুমিয়ে পড়েছে দেখে প্রহর আর উঠলো না। ব্যালকনিতে ঝুলিয়ে রাখা চাদরটা নিয়ে খুশির গায়ের ওপর দিয়ে ঢেকে দিল। খুশির ঘুমন্ত মায়াবী মুখটার দিকে তাকিয়ে রইলো প্রহর। আলতো করে খুশির গালে হাত বোলাতে লাগলো।এতো মায়া কেন এই মুখটাতে? এই মেয়েটা যে কবে ওর এতটা জুড়ে নিয়েছে তা বুঝতেই পারলো না প্রহর। রক্তের সাথে মিশে গেছে মেয়েটা। এখন তো খুশিকে ছাড়া ও পুরোপুরি নিঃস্ব। নিঃশ্বাস টার ওপরও এখন শুধু ওর রাজত্ব।
“দিনের সমাপ্তির বার্তা জানায় অস্তগামী রবী
তোমার সান্নিধ্যে এই কঠিন মনটাও হতে চায় কবি
তুমি মায়ার রাজ্যের রাণী
তুমি যে হৃদয়হরণী
তুমিহীনা বিরহের অনলে দগ্ধ হই প্রতিটা মুহূর্ত
তোমাতে সকল মুগ্ধতা বিরাজে, তোমাতেই সৌহার্দ
যদি পারতাম তো রাখতাম তোমায় বক্ষগহ্বরে
কিছুটা নিভৃতে, কিছুটা যত্ন করে
তোমায় ছাড়া নিশ্বাস গ্রহণও আমার বারণ
কারণ এই সত্ত্বার রন্ধ্রে-রন্ধ্রে যে তোমারই বিচরণ
আমার অন্তঃকরণে তোরই পদচারণ”

প্রিয়তমাকে বুকে জড়িয়ে একসময় প্রহরও ঘুমের রাজ্যে পারি দিল।

চলবে……

গল্পের লেটেস্ট আপডেট পেতে আর গল্প নিয়ে যেকোনো আলোচনা আড্ডা দিতে আমার গ্রুপে জয়েন হওয়ার আমন্ত্রণ রইল। নিচে গ্রুপ লিংক দেওয়া হলো। জয়েন হতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন। 👇
গ্রুপ
https://facebook.com/groups/170529085281953/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here