অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ পর্ব-১৭

অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ
পর্ব-১৭
#লেখিক-মেহরুমা নূর

★ঋতুর পালাবদলে এভাবেই প্রহর খুশির খুনসটিময় সুখকর জীবনের আরও ছয়টা মাস পার হয়ে গেছে। ওদের প্রেমকাব্যের ভেলা চলছে আপন গতিতে। সময় তখন কার্তিক মাস। হেমন্তের আগমণ ঘটেছে। গরমের প্রভাব কমে গিয়ে পরিবেশে শীতল বাতাসের আবির্ভাব হচ্ছে।এর মাঝে প্রহরের স্টাডি কমপ্লিট হয়ে গেছে।তাই সে অফিস জয়েন করেছে। তবে রোজ খুশিকে কলেজে দিয়ে আসা আর নিয়ে আসার দায়িত্ব টা ঠিকই পালন করে। হাজার ব্যাস্ততার মাঝেও সে চলে আসবে খুশিকে ড্রপ করে দিতে। তাছাড়া যে সে শান্তি পায়না। খুশিকে নিয়ে কোন রকম রিস্ক নিতে রাজিনা প্রহর। খুশি যে ওর কাছে অমূল্য রতন।

ক্লাস শেষ করে বেড়িয়ে এলো খুশি। প্রহর হয়তো ওর জন্য অপেক্ষা করছে তাই দ্রুত সেদিকে এগুলো। মাঠের দিকে আসতেই কেমন ভীড় দেখতে পেল খুশি। আর ভীড়ের অধিকাংশ দর্শকই মেয়েরা। খুশিও কৌতুহল বশত সেদিকে এগিয়ে গেল। ভীড় ঢেলে সামনে তাকাতেই কপাল কুঁচকে এলো ওর। সামনে কলেজের ছেলেদের সাথে বাস্কেট বল খেলছে প্রহর। গায়ের শার্ট খুলে কোমড়ে বেঁধে নিয়েছে। বর্তমানে শুধু হাতা কাটা বক্সার গায়ে আছে। যার দরুন প্রহরের সুঠাম বডি দৃশ্যমান হয়ে গেছে। খেলতে খেলতে শরীর দিয়ে ঘাম চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে। যা প্রহরের সুদর্শনীয়তা আরও পরিস্ফুটিত করছে। আর এই দৃশ্য দেখার জন্যই বিনা টিকেটে সব মেয়েরা এখানে ভীড় জমিয়েছে। প্রহরের এই প্রদর্শন দেখে রাগে শরীর কিড়মিড় করছে খুশির ।মন চাচ্ছে এই বাস্কেট বল দিয়েই প্রহরের মাথা ফাটাতে।

খেলতে খেলতে প্রহরের নজর পড়লো খুশির দিকে। খুশিকে দেখে প্রহর খেলা বন্ধ করে বল বাকিদের দিয়ে ওদের কাছ থেকে বিদায় নিল। খুশির দিকে আসতে নিলেই খুশি তার আগেই রাগে হনহন করে হাঁটা ধরলো। প্রহর ভ্রু কুঁচকে খুশির পিছে পিছে আসতে আসতে বললো।
–খুশি ওয়েট। এতো দ্রুত হাটছ কেন?

খুশি কোন প্রতিত্তোর না দিয়ে আরও জোরে জোরে হাঁটতে লাগলো। গেটের বাইরে এসে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে লাগলো। প্রহর এবার দৌড়ে এসে খুশির হাত ধরে বললো।
–আরে আরে কোথায় যাচ্ছো? গাড়ি তো ওইদিকে।

খুশি রাগী কন্ঠে বললো।
–তোমার ওই গরুর গাড়িতে তুমি একাই যাও। আমি যাবোনা তোমার সাথে। ছাড়ো আমাকে।

–আরে বাবা হয়েছে টা কি? এমন বিহেব করছো কেন? আচ্ছা ঠিক আছে আগে গাড়িতে এসে বসো তারপর যা বলার বলো। দেখ লোকজন তাকিয়ে আছে। প্লিজ গাড়িতে উঠে বসো।

খুশি হাত ঝটকা মেরে রাগে গটগট করে হেঁটে গাড়িতে এসে বসলো। প্রহরও কোমড় থেকে শার্ট খুলে গায়ে জড়িয়ে নিয়ে গাড়িতে এসে বসে বলে উঠলো।
–এখন বলো কি হয়েছে? হঠাৎ তোমার অগ্নিগিরি ভোলকে উঠলো কেন?

খুশি রাগী মুডে বললো।
–আমাকে জিজ্ঞেস করছ কেন? তোমার ভক্তদের গিয়ে বলোনা।

–হোয়াট ভক্ত? কি বলছ এসব?

এবার বিস্ফোরক হয়ে ফেটে পড়লো। দুই হাতে প্রহরের কলার টেনে ধরে ক্ষিপ্ত সুরে বললো।
–ন্যাকা সাজা হচ্ছে আমার সামনে তাইনা? ওখানে কি করছিলে তুমি হ্যাঁ? এমনিতে তো আমার সামনে ভদ্র সদ্র লেজ বিশিষ্ট সেজে বসে থাকো। আর ওখানে সব মেয়েদের সামনে নিজের শরীরের প্রদর্শনী করিয়ে বেড়াচ্ছিলে তাইনা? সানি লিওনির মেল ভার্সন হওয়ার শখ জেগেছে?

প্রহর ভ্রু কুঁচকে বললো।
–হোয়াট রাবিশ? কি আবোল তাবোল বলছ? আরে ছেলেগুলো আমাকে রিকুয়েষ্ট করেছিল খেলার জন্য। তাই একটু খেলছিলাম। শার্ট পড়ে খেললে ঘামে ভিজে যেত তাই খুলে নিয়েছিলাম। এখানে প্রদর্শনীর কি হলো?

–এসব শুধু লেইম বাহানা। আসল কথা হলো তোমার ওইসব মেয়েদের আকর্ষণ করাই উদ্দেশ্য। ওদের হায়হুতাশ দেখতে তোমার খুব ভালো লাগে তাইনা?

–দেখ এখন কিন্তু বেশি বলে ফেলছ। আরে এই স্বাভাবিক বিষয় নিয়ে এমন ওভার রিয়্যাক্ট করার কি আছে?

–এটা স্বাভাবিক বিষয় তাইনা? ওকে ফাইন। আমিও কাল শর্ট স্কাট আর শর্ট হাতা কাটা টিশার্ট পড়ে আসবো? আর সব ছেলেদের দেখিয়ে বেড়াবো কেমন?

এবার প্রহরের রাগ উঠে গেল। প্রহর চোয়াল শক্ত করে বললো।
–খুশি!! এনাফ ইজ এনাফ। ইউ গোয়িং টু ফার নাও।

–কেন? এখন তোমার সমস্যা হচ্ছে কেন? এটাতো স্বাভাবিক বিষয় তাইনা? তাহলে আমার বেলায় রাগছ কেন?

প্রহর একটা লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো।
–ওকে ফাইন অ্যাম সরি। আর এমন হবে না কেমন?

প্রহরের সরিতে স্যাটিসফাই হলোনা খুশি। সে প্রহরের শার্ট সরিয়ে ওর বুকের ওপর সজোরে কামড় বসিয়ে দিল। রাগের বসে সবগুলো দাঁত বসিয়ে দিল প্রহরের বুকে। দাঁতের ধার মাংস ভেদ করে গেল।এমন মারাত্মক কামোড়ে প্রহরের সব লোমকূপ দাঁড়িয়ে গেল। প্রহর হাত শক্ত করে মুঠ করে দাঁতে দাঁত চেপে ধরে সব সহ্য করে নিচ্ছে। প্রিয়তমার শাস্তিও যে মধুর। তাকে কষ্ট দিয়েও যদি তার প্রিয়তমা শান্তি পায় তবে এতেও প্রশান্তি প্রহরের। কামোড় শেষে খুশি প্রহরকে ছেড়ে দিয়ে এসে সোজা হয়ে বসে জানালার দিকে তাকিয়ে রইলো। প্রহর মুচকি হেসে বললো।
–এখন তো শাস্তিও দিয়ে দিলে। তবুও রাগ করে আছ কেন? সরি তো বাবা। এখন মুড ঠিক করোনা প্লিজ।

খুশি জানালার দিকে মুখ রেখেই অভিমানী সুরে বললো।
–আমাকে রাগালে আমি একসময় অনেক দূরে চলে যাবো। তখন বুঝবে কেমন লাগে।

প্রহরের হৃদপিন্ডে কিছু কামোড় দিয়ে ধরলো।প্রহর খুশির হাত ধরে এক ঝটকায় নিজের কাছে এনে অগ্নি চোখে তাকিয়ে বললো।
–হোয়াট ডিড ইউ সে? সে ইট এগেইন।

প্রহরের অগ্নি চোখ দেখে খুশি এবার একটু দমে গেল। বুঝতে পারলো প্রহর ভয়ংকর রেগে গেছে। প্রহর বলে উঠলো।
–আজ প্রথম আর শেষ বার যা বলার বললে। আর কখনো যদি এই কথা মুখ দিয়ে বের করার দুঃসাহসিকতা দেখিয়েছ, তাহলে সেদিন তুমি আমার এক অন্য রুপ দেখবে। অ্যাম শিওর যা তোমার মোটেও পছন্দ হবে না। তাই আমার সেই ভয়ংকর রুপটা কখনো বাইরে এনোনা। ইটস নট গুড ফর ইউ।
কথাটা বলে প্রহর খুশিকে ছেড়ে দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল। চুপ করে শুধু গাড়ি চালাতে লাগলো। খুশি বুঝতে পারলো প্রহর ওর কথায় রাগ করেছে। তাই প্রহরের বাম হাত জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রেখে বললো।
–সরি ভুল হয়ে গেছে। আসলে তখন সব মেয়েগুলো তোমাকে ওভাবে হা করে গিলে খাচ্ছিল। তাই আমার অনেক রাগ উঠে গিয়েছিল। সরি, কামোড় বেশি জোরে দিয়ে ফেলেছি তাইনা? ব্যথা হচ্ছে বুঝি?

প্রহর বাম হাতে খুশিকে জড়িয়ে ধরে বললো।
–উহুম একটুও না। এটাতো আমার দুষ্টুপরির দেওয়া প্রথম চিহ্ন। এটা অনেক স্পেশাল আমার কাছে।

খুশি দুষ্টু হেসে বললো।
–তাহলে আরও কয়েক টা দিয়ে দেই কেমন?

প্রহর হেঁসে দিল। এই পাগলী আর ভালো হবার না।
__

আজ খুশি কলেজ বাংক করে দিয়া আর শাহিনের সাথে নতুন একটা রেস্টুরেন্টে এসেছে আড্ডা দিতে। প্রহর খুশিকে কলেজে ড্রপ করে দিয়ে চলে যাওয়ার পরপরই ওরা বেরিয়েছে। যাতে প্রহর নিতে আসার আগেই আবার কলেজে এসে থাকতে পারে। খুশি রেস্টুরেন্টে ঢুকতে ঢুকতে বলে উঠলো।
–আজ তোদের লটারি লেগেছে মনে কর। যা মন চায় অর্ডার করে বাপের নাম ভুলে খাওয়া শুরু কর। এমন অফার রোজ রোজ পাবিনা।

দিয়া বলে উঠলো।
–আমারতো এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না তোর মতো কিপ্টার নানী শাশুড়ী আমাদের ট্রিট দিতে এনেছিস। তোর আর জিজুর সম্পর্কের প্রায় বছর হয়ে আসলো। অথচ আজপর্যন্ত পাঁচ টাকার বাদামও খাওইলি না। এতো রিচ জিজু হওয়ার কি লাভ পেলাম আমরা?

–হইচে আর কান্দিস না। আজকে আনছিতো কব্জি ডুবাইয়া খা।

ওরা রেস্টুরেন্টের তিনতলায় একটা টেবিলে বসে খাবারের অর্ডার দিয়ে দিল। নানান আড্ডার মাঝেই খাবার শেষ করে ওরা আবারও বেড় হওয়ার জন্য এগুলো। সেকেন্ড ফ্লোরে আসতেই হঠাৎ খুশির নজর গেল কাচের দেয়ালের ওপাশে একটা টেবিলে। যেখানে প্রহরকে কোন মেয়ের সাথে বসে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে।খুশি ভ্রু কুঁচকে ভাবলো, প্রহর এখানে? আর মেয়েটা কে? খুশি দিয়া আর শাহিনকে বাইরের দিকে এগুতে বলে ও ধীরে ধীরে প্রহরের টেবিলের দিকে এগুলো। কিছুটা এগুতেই খুশি দেখতে পেল এটা সেই মেয়ে যে ওকে একবার বলেছিল সেও প্রহরকে ভালোবাসতো। তবে প্রহর ওকে পাত্তা দেয়নি। কিন্তু আজ এখানে কি করছে ওরা? কৌতুহল বশত খুশি নিজেকে আড়ালে রেখে ওদের আরেকটু কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ালো। কাছাকাছি যেতেই প্রহরের কিছু কথা কানে এলো ওর। প্রহর বলছে,
–দেখ তুমি রুপে গুনে অবশ্যই খুশির থেকে হাজার গুন বেশি। তোমার সামনে খুশি কিছুই না। শুধু খুশি কেন, ভার্সিটির সব মেয়েদের চেয়ে তুমি সুন্দরী আর মেধাবী। যেকোনো ছেলে তোমাকে জীবন সঙ্গী হিসেবে পেলে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করবে।

প্রহরের এতটুকু বাণি শুনেই খুশি থমকে গেল। চোখের কোনে নোনাজল জমে গেল ওর। আর একমুহূর্তও দাঁড়িয়ে না থেকে দ্রুত পায়ে চলে গেল ওখান থেকে।
__

কলেজ ছুটির যথাসময়ে প্রহর খুশির কলেজের সামনে গাড়ি নিয়ে হাজির হলো। গাড়িতে বসে খুশির জন্য ওয়েট করতে লাগলো। কলেজ ছুটে হয়ে সব স্টুডেন্ট রা বের হচ্ছে। প্রহর গেটের দিকে তাকিয়ে খুশির আসার অপেক্ষায়। কিন্তু অনেক সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও যখন খুশি এলোনা তখন প্রহর গাড়ি থেকে নেমে গেটের দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখতে লাগলো খুশি আসছে কিনা। সব স্টুডেন্ট রা তো প্রায় বেড়িয়ে আসলো তাহলে খুশি এখনো কি করছে? প্রহর কলেজের ভেতর ঢুকে এদিক তাকিয়ে দেখতে লাগলো খুশি কোথাও আছে কিনা। খুশিকে কোথাও দেখতে না পেয়ে প্রহর এবার খুশির নাম্বারে ফোন দিল। কিন্তু খুশির নাম্বার বন্ধ আসছে। প্রহর ভ্রু কুঁচকে ভাবতে লাগলো, খুশির নাম্বার বন্ধ কেন? এতক্ষণ হয়ে যাচ্ছে বাইরে আসছে না কেন? কোন সমস্যা হলো নাতো মেয়েটার। কথাটা ভেবে প্রহর এবার খুশির ক্লাসরুমে গিয়ে চেক করলো। কিন্তু সেখানেও পেলনা খুশিকে। প্রহরের এবার চিন্তা বেড়ে যাচ্ছে। কোথায় গেল মেয়েটা? ফোনও বন্ধ আসছে। এখন কিভাবে খোঁজ নিবো?

প্রহর আরও কিছুক্ষণ কলেজের সবজায়গায় খুঁজলো খুশিকে। খুশিকে না পেয়ে প্রহরের মনে ভয়ের উৎপত্তি হচ্ছে। মেয়েটার কিছু হলো নাতো? নাকি ও বাসায় চলে গেছে? কিন্তু বাসায় গেলে ওতো ফোন করে জানাতো আমাকে। ফোনটাও বন্ধ আসছে। কি করবো এখন আমি? প্রহরের হঠাৎ দিয়ার কথা মনে হলো। দিয়ার নাম্বারে ফোন দিল প্রহর। ফোন রিসিভ হলে খুশির কথা জানতে চাইলো সে। দিয়া বললো।
–ভাইয়া আমিতো আজকে কলেজে যাইনি। শাহিনের সাথে বেড়িয়ে বাসায় চলে এসেছি।

প্রহরের এবার মাথা ঘুরছে। খুশির কোন বিপদ হলো নাকি সেই ভয়ে গলা শুঁকিয়ে আসছে প্রহরের। বারবার খুশির নাম্বারে ফোন দিচ্ছে আর বারবারই বন্ধ পাচ্ছে। অস্থির হয়ে যাচ্ছে ও। নিজেকে একটু সামলে নিয়ে কলেজ থেকে বেড়িয়ে এলো ও।

সময়ের সাথে অস্থিরতা আরও ক্রমশ বেড়েই চলেছে। দিন গড়িয়ে রাতে নেমেছে। এখন পর্যন্ত খুশির নাম্বার বন্ধ আসছে। নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছে প্রহরের। বারবার ফোন বন্ধ পাওয়ায় রাগে এপর্যন্ত তিনটা ফোন ভেঙে ফেলেছে প্রহর।খুশির চিন্তায় মাথা ফেটে যাচ্ছে ওর। খুশির সাথে কথা না হওয়া পর্যন্ত ওর দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

প্রহরের এই অস্থিরতা দেখে জিদান সাহেব চিন্তিত সুরে বললো।
–কি হয়েছে প্রহর? এমন অস্থির দেখাচ্ছে কেন তোকে?

প্রহর অস্থির কন্ঠে বললো।
–বাবা আজ খুশিকে আনতে গেলে খুশিকে কলেজে পাইনি। আর তখন থেকেই ওর নাম্বার বন্ধ আসছে। আমার অনেক চিন্তা হচ্ছে বাবা। ওর কিছু হলো নাতো? ওর সাথে কথা না হওয়া পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছি না।

–আরে চিন্তা করিস না। খুশি মার কিছু হবে না। তুই তো জানিসই ও একটু বাচ্চা স্বভাবের। হয়তো ও বাসায় চলে গেছে কিন্তু তোকে বলার কথা মনে নেই। আর ফোনের হয়তো কোনো সমস্যা হয়েছে।

–আই রিয়েলি হোপ এন্ড প্রে তুমি যা বলছো তাই যেন হয়। কিন্তু ওর সাথে কথা না হওয়া আমি কিছুতেই শান্তি পাবোনা বাবা। দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার।
প্রহর উঠে দাঁড়িয়ে গাড়ির চাবি হাতে নিয়ে বললো।
–বাবা আমি আসছি।
কথাটা বলেই প্রহর বেড়িয়ে গেল। জিদান সাহেব আর কিনা বললেন না। ছেলেটা যে খুশির প্রতি এতো দূর্বল তা আজকে বুঝতে পারলেন উনি। আল্লাহ না করুক কোন কারণে মেয়েটাকে না পেলে ছেলেটা যে কি করবে তার আভাস পাচ্ছেন উনি। আল্লাহর কাছে একটাই চাওয়া ছেলেটা যেন ওমন দিন কখনো না দেখে।
__

রাত ১১টা
খুশির বাসার সামনে গাড়ি থামিয়ে বসে আছে প্রহর। মনে মনে আশা করছে একবার শুধু খুশিকে বেলকনিতে দেখতে পেলে হয়। তাহলেই শান্তি পাবে ও। তবে ঘন্টাখানিক বসে থাকার পরও খুশির কোন দর্শন পেল না। আর থাকতে পারছে না প্রহর। খুশিকে না দেখতে পেলে এবার হয়তো ওর দম সত্যি সত্যিই বন্ধ হয়ে যাবে। রাত অনেক হয়েছে। এতক্ষণে নিশ্চয় বাসার সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। তাই প্রহর এবার গাড়ি থেকে বের হয়ে দেয়াল টপকে খুশিদের বাসার গেটের ভেতর ঢুকলো। খুশির ব্যালকনির নিচ বরাবর এসে পাইপ বেয়ে দোতালায় খুশির ব্যালকনিতে উঠা শুরু করলো। প্রহর মনে মনে বলতে লাগলো, কি দিন এসে গেল তোর।দ্যা প্রহর মেহরাবকে শেষমেশ কিনা টিনএজারদের মতো পাইপ বেয়ে উঠতে হচ্ছে। লোকে ঠিকই বলে প্রেম মানেই কপালে দুর্ভোগ।

অনেক কষ্টে হাত পা ছিলে নিয়ে খুশির ব্যালকনিতে উঠতে সক্ষম হলো প্রহর। ব্যালকনির আস্তে করে খুলে ভেতরে তাকালো সে। বিছানার উপর খুশিকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে আটকে থাকা নিঃশ্বাস টা বেড় হলো প্রহরের। তবে রাগও হচ্ছে প্রচুর। আমাকে অশান্তিতে ফেলে দিয়ে কি সুন্দর আরামে ঘুমাচ্ছে ম্যাডাম। প্রহর এগিয়ে গিয়ে খুশির কাছে বেডের ওপর বসলো। ডিম লাইটের আলোয় ঘুমন্ত খুশির মায়াবী মুখট দেখে প্রহরের রাগ মুহূর্তেই পানি হয়ে গেল। মন জুড়ে ছুঁয়ে গেল প্রশান্তির সুখছায়া। প্রহর খুশির মুখের ওপর ঝুঁকে মায়া ভরা চোখে তাকিয়ে রইলো। কপালের চুলগুলো আলতো করে সরিয়ে দিয়ে গালে হাত বোলাতে লাগলো। এই মুখটায় কি এমন আছে? কেন এমন পাগল করে দেয় আমাকে? আমাকে পাগল করে নিজে কি সুন্দর দিব্বি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে।

খুশি হঠাৎ নড়েচড়ে উঠে চোখ মেলে তাকালো। চোখের সামনে প্রহরকে দেখে ঘুমের ঘোরে মুচকি হেসে বললো।
–তুমি আবার এসেছ স্বপ্নে?

প্রহর বলে উঠলো।
–হ্যাঁ এসেছি। তবে স্বপ্নে না। বাস্তবে।

–ওওও বাস্তবে..
হঠাৎ খুশির চেতনা এলো। খুশি চোখ বড়বড় করে ঠাস করে উঠে বসলো। অবিশ্বাস্য কন্ঠে বললো।
–প প্রহর?? তুমি সত্যি এখানে??

প্রহর দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
–না আমি না। আমার ভুত। ইডিয়ট একটা।

খুশি হাসিমুখে বললো।
–তুমি সত্যি আমার জন্য এখানে এসেছ?

–নাহ তোমার নানীমার জন্য এসেছি। ইডিয়ট একটা। তুমি আগে বলো তোমার ফোন বন্ধ কেন? আর তুমি কলেজ থেকে একা চলে এসেছ তা আমাকে জানাও নি কেন?

প্রহরের কথায় খুশির এবার তখনকার কথা মনে পড়ে গেল। খুশি অন্য দিকে তাকিয়ে অভিমানী সুরে বললো।
–আমার খবর জানার তোমার কি দরকার? তুমি এখানেই বা কেন এসেছ? চলে যাও এখান থেকে।

প্রহর দুই হাতে খুশির দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরে বললো।
–মজা করছ আমার সাথে? তুমি জানোনা আমি কেন এসেছি? একেতো তোমার কোন খবর না পেয়ে টেনশনে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। আর তুমি বলছ তোমার খবর জেনে কি হবে? হয়েছে টা কি তোমার?

–কেন? কেন হচ্ছে এতো টেনশন? আমি কি হই তোমার? তুমি গিয়ে তোমার ওই সুন্দরীর টেনশন করো। আমার টেনশনের দরকার নেই।

প্রহর ভ্রু কুঁচকে বললো।
–সুন্দরী? কে সুন্দরী?

খুশি তাচ্ছিল্যের সুরে বললো।
–হয়েছে আর সাধু সাজতে হবে না। আমি সব দেখেছি আজকে।

–আচ্ছা? আমাকেও বলোতো শুনি কি এমন দেখেছ তুমি?

–আজ তোমাকে ওই মেয়েটার সাথে রেস্টুরেন্টে কথা বলতে দেখেছি আমি। আর তুমি ওকে বলছিলে ওই মেয়ে আমার চাইতে হাজার গুন ভালো। ওকে পেলে তুমি সৌভাগ্যবান হয়ে যাবে।
–বাচ এতটুকুই শুনে চলে এসেছ? আরও কিছুক্ষণ থাকলে আমাদের বাকি প্রেমালাপও শুনে আসতে পারতে।

খুশি ভ্রু কুঁচকে বললো।
–মানে?

–মানে তোমার মাথা ইডিয়ট। পুরো কথা না শুনেই উনি কাহিনি করে বসে আছে। আরে আমিতো ওখানে একটা মিটিং এর জন্য গিয়েছিলাম। মিটিং শেষে আমার ক্লাইন্ট চলে যেতেই কোথাথেকে যেন মেয়েটা এসে হাজির হলো। আমার সাথে কিছু কথা বলার রিকুয়েষ্ট করলো। আমিও ভদ্রতার খাতিরে রাজি হয়ে গেলাম। মেয়েটা আমাকে বলেছিল।
–আচ্ছা আমিতো দেখতে শুনতে বা গুনের দিক দিয়ে সবদিক থেকেই খুশির চেয়ে ভালো। তাহলে তুমি আমাকে পছন্দ করলেনা। অথচ খুশিকে ঠিকই ভালোবাসলে। কেন? ওর মাঝে কি এমন আছে?

তখন আমি ওকে বুঝানোর জন্য বললাম।
–দেখ হ্যাঁ তুমি রুপে গুনে সবদিক থেকেই খুশির চেয়ে ভালো। তোমাকে পেলে যেকোনো ছেলেই নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করবে। তবে খুশি খুশিই। আর এটাই ওর সবচেয়ে বড়ো গুন। খুশি নিজের মাঝে অতুলনীয়। ওর মাঝে কি গুণ আছে তা হয়তো আমি বলে বোঝাতে পারবোনা। শুধু বলবো খুশির মাঝে এমন নূর আছে যা আমার জীবনের সব অন্ধকার ঘুচিয়ে, সর্বত্র আলোকিত করে দিয়েছে। আমার কাছে খুশি পৃথিবীর সবচেয়ে স্পেশাল মেয়ে। না ওর মতো কেউ আছে। না কখনো হবে বলে মনে করি।

এভাবে বুঝানোর পর মেয়েটা বুঝতে পারে। এরপর ও চলে যায়। বাচ এতটুকুই। আর এই বিষয় টা নিয়ে তুমি মাথার উল্টো পাল্টা ঢুকিয়ে নিয়ে বসে আছ তাইনা? এমনিতে তো কিছু হলে ঝগড়া করে আমার মাথা খেয়ে ফেলো। তো আজকে আমার কাছে সরাসরি কিছু না বলে এভাবে ফোন বন্ধ করে বসে ছিলে কেন?

খুশি মাথা নিচু করে মলিন সুরে বললো।
–তো কি করবো? আমি মনে করি যে আমার সাথে থাকতে ইচ্ছুক না তাকে জোর করে বেঁধে না রাখাই ভালো। আমি কারোর জীবনে বাঁধা হয়ে থাকতে চাইনা।

প্রহর আবারও খুশির দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরে চোয়াল শক্ত করে বললো।
–জাস্ট শাট আপ ইডিয়ট। একেতো সারাদিন ফোন বন্ধ করে আমার পাগল প্রায় অবস্থা করে দিয়েছ। আর এখন বসে ফালতু ফিলোসোফি ঝাড়া হচ্ছে? মন তো চাচ্ছে উঠিয়ে একটা আছাড় মারি। তাহলে সব ফিলোসোফি বের হয়ে যাবে।

খুশি হঠাৎ নেকি কান্না শুরু করে দিলো।ঠোঁট উল্টে কেঁদে নাক টেনে টেনে বললো।
–হ্যাঁ হ্যাঁ মারবেই তো। মারো মারো। জানো আজ সারাদিন বসে বসে কতো কেঁদেছি। খাবারও খাইনি। ওই দেখ মা খাবার দিয়ে গিয়েছিল ওমনিই পড়ে আছে।

খুশির ইশারা অনুযায়ী প্রহর তাকিয়ে দেখলো টেবিলের ওপর খাবার ঢাকা রয়েছে। এবার প্রহরের খারাপ লাগছে। প্রহর দুই হাতে খুশির মুখটা আগলে ধরে আদুরে গলায় বললো।
–ইশশ আমার দুষ্টুপরি টা অনেক কেঁদেছে বুঝি? খাবারও খায়নি?

খুশি মাথা নাড়ালো। মানে না। প্রহর বলে উঠলো।
–আচ্ছা আমি খাইয়ে দিবো? তোমার টেনশনে আমিও ডিনার করিনি। চলো দুজন একসাথেই খাই।

–আচ্ছা।

প্রহর মুচকি হেসে খাবারের প্লেট এনে খুশিকে নিজের হাতে খাইয়ে দিতে লাগলো। আর খুশিও নিজের হাতে প্রহরকে খাইয়ে দিলো। খাইয়ে দিতে দিতে প্রহর বলে উঠলো।
–আচ্ছা বাইদা ওয়ে তুমি ওই সময় রেস্টুরেন্টে কি করছিলে? তখন তো তোমার কলেজের ক্লাসের সময় তাইনা? তাহলে ওই সময় কলেজ ফাকি দিয়ে ওখানে কি করছিলে?

খুশি এদিক ওদিক তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললো
–আ আসলে দিয়া আর শাহিনের সাথে একটু ঘুরতে গিয়েছিলাম।

–সামনে না তোমার এক্সাম? পড়াশোনা বাদ দিয়ে তুমি আড্ডা দিয়ে বেড়াচ্ছ? তোমাকে না বলেছি তুমি এখন বেশি বেশি তোমার বইয়ে মনোযোগ দিবে?

–কেন? বইয়ের কি বাচ্চা হবে নাকি যে এতো মনোযোগ দিতে হবে? আর এতো পড়ে কি হবে? জামাই তো পেয়েই গেছি।

খাওয়া দাওয়া শেষে খুশি বললো।
–এখন কি তুমি চলে যাবে?

–নাহ সারাদিন অনেক টেনশন গেছে। আর পাইপ বেয়ে এখানে উঠতে অনেক ধকল গেছে। অ্যাম টায়ার্ড নাও। আমি আজ এখানেই থাকবো।

খুশি উৎসাহী কন্ঠে বললো।
–সত্যিই?? তারমানে তুমি আমার সাথে এখানে থাকবে? হাও রোমান্টিক।

প্রহর বলে উঠলো।
–বেশি এক্সাইটেড হওয়ার দরকার নেই। আমি শুধুই ঘুমাবো এখানে।

খুশি হতাশার সুরে বললো।
–ধ্যাৎ, তাহলে আর কি হলো।

প্রহর বিস্ময় ভরা চোখে তাকিয়ে বললো।
–তুমি সত্যিই মহান। আই মিন যে ডায়লগ গুলো আমার বলা উচিত সেগুলো তুমি বলছ? লজ্জা শরম সব হোল সেলে বেঁচে দিয়েছ তাইনা?

খুশি দুই হাতে প্রহরের গলা জড়িয়ে ধরে দুষ্টু হেসে বললো।
–লজ্জা, শরম এগুলো সব মনের ভ্রম । এগুলো সব মোহ ময়া বালক । বাস্তবে এর কোন অস্তিত্ব নেই। এগুলো সব কুসংস্কার। এসবে বিশ্বাস করতে নেই। আর তাছাড়া শরম করলে গরম ভাত পাওয়া যায় না।

প্রহর হেঁসে দিয়ে বললো।
–তুমি সত্যিই একটা পাগলী।

প্রহর খুশিকে নিয়ে বালিশে শুয়ে পড়লো। খুশির কপালে চুমু দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিল। খুশি বিড়বিড় করে বললো।
–খালি কপালে চুমু খায়। কেনরে ভাই আমার ঠোঁটে কি করোনা ভাইরাস হয়েছে?

বিড়বিড় করে বললেও প্রহরের কানে ঠিকই পৌঁছালো। প্রহর চোখ বন্ধ রেখেই বললো।
–বিড়বিড় না করে ঘুমিয়ে পড়ো।

এতক্ষণে খুশির মনোদেবি এসে হাজির হলো। উপর থেকে বলতে লাগলো।
–এই এতো সুবর্ণ সুযোগ তুই হাত ছাড়া করবি? এতো হট চিজ সামনে রেখে ঘুম কিভাবে আসবে তোর?

প্রহর আবারও চোখ বন্ধ অবস্থায়ই বলে উঠলো।
–তোমার মনোদেবি কেউ বলো ঘুমিয়ে পড়তে।

খুশি একটু চমকে গেল। প্রহরও কি আমার মনোদেবির কথা শুনতে পায়? খুশি মুখটা একটু উঁচু করে দেখলো প্রহর ঘুমিয়ে আছে। খুশি মনে মনে বললো, বললেই হলো নাকি? এতো হট চকলেট সামনে থাকতে একটু ফায়দা নিবো না তাকি হয় নাকি? খুশি আস্তে করে ধীরে ধীরে প্রহরের শার্টের বোতাম খুলতে লাগলো। উপরের তিনটা বোতাম খুলে শার্ট দুই দিকে সরিয়ে দিল।হ্যাঁ এখন ঠিক আছে। ঠোঁট চোখা করে প্রহরের বুকে আলতো করে একটা চুমু খেয়ে, প্রহরের খোলা বুকের উঞ্চতায় নিজের মুখ লুকালো। বুকে মুখ ঘষে প্রহরকে জড়িয়ে ধরে আবেশে চোখ বন্ধ করে নিল খুশি। প্রহরও চোখ বন্ধ অবস্থায় মুচকি হেসে খুশিকে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিল। দুজনে প্রশন্তিতে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিলো।

চলবে……

গল্পের লেটেস্ট আপডেট পেতে আর গল্প নিয়ে যেকোনো আলোচনা আড্ডা দিতে আমার গ্রুপে জয়েন হওয়ার আমন্ত্রণ রইল। নিচে গ্রুপ লিংক দেওয়া হলো। জয়েন হতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন। 👇
গ্রুপ
https://facebook.com/groups/170529085281953/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here