অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ #পর্ব-৩৭

#অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ
#পর্ব-৩৭
#লেখিকা-মেহরুমা নূর

★অত্যাধুনিক প্রসাধনীর আবরণে ঢাকা সুন্দরী নায়িকার হাতে হাত রেখে সৈকতের ধারে ঘুরে ঘুরে নেচে নেচে গানের শুটিং করছে জনপ্রিয় অভিনেতা সাহির খান। চেহারায় সর্বত্র তার প্রেমাবেগের তীব্রতা ছড়িয়ে আছে।সুদর্শন এই প্রেমিক পুরুষের ওপর নায়িকারা রিল এবং রিয়েল লাইফ দুই পরিস্থিতিতেই ঘায়েল হয়ে যায়। তাকে পাওয়ার তিব্র আকাঙ্ক্ষায় সকল উপায় অবলম্বন করার চেষ্টা করে তারা। যদিও এই কাজে প্রতিবার তারা ব্যার্থই হয়। পরিচালকের কাট বলতেই তার চেহারার ভাবভঙ্গি মুহুর্তেই বদলে গেল। এখন তার চেহারায় কোথাও সুইট প্রেমিক পুরুষের কোন ছিটেফোঁটাও নেই। সে নায়িকার হাত ছেড়ে দিয়ে সোজা এসে একটা চেয়ারে বসলো। সাথে সাথে দুই তিনজন ব্যতিব্যস্ত হয়ে এসে তাকে ঘিরে দাঁড়াল। একজন তার মাথায় ছাতা ধরে দাঁড়াল, একজন তাকে বাতাস করতে লাগলো,আর একজন তাকে জুস এনে দিলো। সাহির পায়ের ওপর পা তুলে এক হাতে জুস আরেক হাতে স্ক্রিপ্ট টা নিয়ে জুস খেতে খেতে নিজের ডায়লগ গুলো রিভাইস করতে লাগলো।

ওদের থেকে কিছুটা দূুরেই একটা ছনপাতার গোল ছাউনির নিচে দুটি চেয়ারে বসে আছে জেরিন আর প্রহর।মাত্রই খুশির সো কল্ড গ্রেট আইডিয়া অনুযায়ী এখানে সাহির খানকে জ্বলাতে এসেছে ওরা। প্রহরের এসব চরম অস্বস্তিকর লাগছে। কি একটা ভিয়ার্ড সিচুয়েশনে ফাঁসিয়ে দিয়েছে এই খুশিটা। নিজেকে কেমন জোকার জোকার মনে হচ্ছে ওর। কোথাকার কোন মেয়ের সাথে এখানে এভাবে বসে থাকতে হচ্ছে। এখন কি কথা বলবে আর করবেই টা বা কি? তখনই জেরিন বলে উঠলো।
–শুনুন, এভাবে শুধু শুধু বসে থাকলে কি হবে? আমাদেরকে তো কিছু না বলতে হবে। হাসাহাসি করতে হবে। নাহলে ও জ্বলবে কিভাবে?

প্রহর গলা খাঁকারি দিয়ে বললো।
–হ্যাঁ তো আমি কি কাপিল শার্মা নাকি যে,বসে বসে তোমাকে জোক্স শুনাবো? আমি আগেই বলেছিলাম আমার দ্বারা এসব হবেনা। কিন্তু খুশির সাথে পারলে তো। ও জানে আমি ওর আবদার ফেলতে পারিনা। আর এই সুযোগ টাই ও নেয়।

জেরিন মুচকি হেসে বললো।
–অনেক ভালোবাসেন ওকে তাইনা?

প্রহর স্মিথ হেঁসে বললো।
–উহুম, অনেক ভালোবাসি না। কারণ অনেকেরও একটা সীমা থাকে। আর খুশির প্রতি আমার ভালোবাসা সীমাহীন। এক্সুলি ওকে কতটা ভালোবাসি সেটা ভাষায় বলা সম্ভবই না। আমার যদি হাজার বার জনমও হয় তবুও হয়তো ওকে ভালোবেসে শেষ করতে পারবোনা আমি।

প্রহরের কথায় জেরিন সত্যিই মুগ্ধ হয়ে গেল। এমন করে কেউ কাউকে ভালোবাসতে পারে তা হয়তো প্রহরকে না দেখলে জানতেই পারতোনা। জেরিন মুচকি হেঁসে বললো।
–খুশি সত্যিই অনেক লাকি।

–ও লাকি কিনা জানিনা। তবে আমি নিজেকে দুনিয়ার সবচেয়ে লাকি ব্যাক্তি মনে করি। কারণ আমার কাছে খুশি আছে।

ওদের থেকে দুই টা ছাউনির দূরে আরেকটি ছাউনির নিচে বসে আছে খুশি। জনদরদী হয়ে প্রহরকে জেরিনের সাথে পাঠিয়ে তো দিয়েছে। তবে এখন ওদের কে একসাথে দেখে জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে বেচারি। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে রেখেছে। যদিও জানে এসব অভিনয়। তবুও সহ্য হচ্ছে না ওর। ইচ্ছে তো হচ্ছে এখুনি গিয়ে দুটোকে বালির মাঝে গেড়ে দিতে। কিন্তু তার দায়িত্ববোধ তার পায়ে শেকল বেঁধে রেখেছে ।সে নিজেই যেচে পড়ে এই দায়িত্ব মাথায় নিয়েছে। আর এই আইডিয়াও ওর। তাই চাইলেও কিছু করতে পারছেনা। সেকারণে নিজের রাগ খাটাচ্ছে সামনের টেবিলে রাখা খাবারের ওপর। কাটা চামচ দিয়ে প্লেটের খাবারের ওপর ছুরির মতো বারবার গেঁথেই চলেছে।

খুশির এই রক্তিম মুখভঙ্গি জেরিন ঠিকই বুঝতে পারছে। জেরিন প্রহরের উদ্দেশ্যে বললো।
–সাহির জ্বলবে কিনা জানিনা। তবে আপনার স্ত্রী কিন্তু জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে। দেখুন ওকে, মনে হচ্ছে এখুনি আমাদের খুন করে ফেলবে।

জেরিনের কথামতো প্রহরও তাকালো খুশির দিকে। খুশির রাগী মুখটা দেখে হালকা হেঁসে বললো।
–আমার পাগলীটা এমনই। জানো এখানে আসার সময় প্লেনে কি কান্ড করেছিল? এক নারী চোখ খুলে ঘুমাচ্ছিলো। খুশি ভেবেছিল সে বোধহয় আমাকে দেখছে। ব্যাস আর কোথায় যাবে, বেচারির চুল টেনেটুনে তার নাজেহাল অবস্থা করে দিয়েছিল।

খুশির কৃতকর্মের কথা শুনে জেরিন উচ্চস্বরে হেঁসে দিল।
স্ক্রিপ্ট পড়ার মাঝেই হঠাৎ হাসির শব্দ কানে আসতেই পাশের দিকে তাকালো সাহির। জেরিনকে অন্য কোন ছেলের সাথে এভাবে হাসাহাসি করতে দেখে ভ্রু কুঁচকে আসলো তার।ভালো করে খেয়াল করলো সে। জেরিনের সাথে ছেলেটা ওর থেকে কোন অংশে কম না। কে এই ছেলে? আর জেরিন কি করছে ওর সাথে? আর সাহিরকে তাকাতে দেখে জেরিন ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে প্রহরের সাথে হাসাহাসি শুরু করে দিলো। কখনো কখনো প্রহরের কাঁধে হাতও রাখছে সে। প্রহরের এসব চরম বিরক্ত লাগলেও কিছু করার নেই। প্ল্যান মোতাবেক যেতে হচ্ছে ওকে। ওদের কে দেখে সাহিরের এবার চোয়াল শক্ত হয়ে আসছে। কাল পর্যন্ত তো আমার পেছনে ঘুর ঘুর করছিল। আর আজ অন্য ছেলের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে? রাগে শরীর রি রি সাহিরের।

রেগেমেগে উঠে ওদের দিকে যেতে নিলেই শুটিং এর জন্য ডাক পড়লো সাহিরের। নিজেকে কন্ট্রোল করে নিলো সে। এখানে সিনক্রিয়েট করলে মিডিয়া এই নিয়ে আবার মসলাদার খবর বানিয়ে দিবে। তাই রাগ দমিয়ে আবারও শুটিং শুরু করলো। তবে শুটিংয়ে কনসেন্ট্রেট করতে পারছে না। বারবার চোখ যাচ্ছে জেরিন আর প্রহরের দিকে। ওদের যতো দেখছে ততই রাগ বেড়ে যাচ্ছে সাহিরের। আর সাহিরের রাগী চেহারা দেখে জেরিনের মজা লাগছে। সে আরও দেখিয়ে দেখিয়ে প্রহরের সাথে হাসিঠাট্টা করতে লাগলো। সাহির অমনোযোগী হয়ে বারবার শুধু ভুল করছে। একবার তো ভুল করে নায়িকার পায়ের ওপর পাড়াই দিয়ে দিলো। নায়িকা ব্যাথা পেয়ে হালকা আর্তনাদ করে উঠলো। পরিচালক তখন শুটিং থামিয়ে সাহিরকে বললো, কি হয়েছে তোমার? তুমি তো কখনো এমন করোনা। আই থিংক তোমার একটু ব্রেকের দরকার। তুমি একটু রেস্ট নাও। আমরা ঘন্টাখানেক পরে নাহয় আবার শুরু করবো। সাহির মাথা ঝাকিয়ে ওকে বললো।
__

তিশা আর ফাহিম হাতে হাত ধরে বিচে হাঁটছিল। হঠাৎ তিশার নজর গেল খুশির দিকে। তিশা ফাহিমের উদ্দেশ্যে বললো।
–এই শোন, খুশি ভাবি ওখানে একা বসে আছে কেন? আর কেমন মন মরাও দেখা যাচ্ছে। আবার কিছু হলো নাকি?

–কি জানি? চলোতো দেখি?

ফাহিম আর তিশা এগিয়ে গেল খুশির কাছে। খুশির কাছে এসে পাশের চেয়ারে বসলো ওরা। ফাহিম বলে উঠলো।
–ভাবিজী কি হয়েছে? আপনি এখানে একা বসে আছেন কেন? প্রহর কোথায়? আর কোন আক্কেলে আপনাকে এভাবে একা রেখে গেল ও? দুদিন আগেই এতবড় একটা দূর্ঘটনা হয়ে গেল। তারপরও সাবধান হলো না ও?

খুশির মাথায় হঠাৎ দুষ্টু বুদ্ধি এলো। ফাহিম আর তিশা জেরিনের ব্যাপারে কিছু জানে না। তাই একটু মজা নেওয়া যাক। যেই ভাবা সেই কাজ। খুশি দুঃখিয়ারী ভাব ধরে বললো।
–দেবরজী মেতো লুটগায়ি, বরবাদ হো গায়ি… এখন এই অভাগীর কি হবে?

খুশির এই আহাজারি দেখে ফাহিম তিশা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। ফাহিম চিন্তিত সুরে বললো।
–আরে কি হয়েছে ভাবিজী? কাঁদছেন কেন? খুলে বলুন আমাদের।

খুশি নাক টেনে টেনে বললো।
–কি বলবো দেবর জী? বলার জন্য আর আছেই বা কি? আমার তো সব শেষ হয়ে গেল। আমার সোয়ামী তো ধোঁকা ধাড়ী করে দিলো আমার সাথে। আমার এখন কি হবে?

–মানে? কি বলছেন এসব?

–হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিকই বলছি। ওইযে দেখুন ওখানে ওই পেত্নীর সাথে প্রেমালাপে মত্ত হয়ে আছে। আমাকে রিসোর্টে ঘুম পাড়িয়ে রেখে এসে এখানে এসব করছে। আমি এখানে না আসলে তো জানতেই পারতাম না। হায়য় আব মেরা কেয়া হোগা?

ফাহিম আর তিশা খুশির ইশারা অনুযায়ী পেছনে তাকিয়ে দেখলো প্রহর সত্যি সত্যিই অন্য একটা মেয়ের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে। ওদের যেন নিজের চোখকেই বিশ্বাস হচ্ছে না। প্রহর এমন কিছু করতে পারে এটা ভাবনার বাইরে। ফাহিম খুশিকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করে বললো।
–ভাবি আমার মনে হয় কোথাও একটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। আমি প্রহরকে চিনি।ও এমন করতেই পারে না।

খুশি তার মেলোড্রামার লেভেল আরও একটু বাড়িয়ে দিয়ে বললো।
–হ্যাঁ হ্যাঁ আপনি তো বলবেনই। আপনার বন্ধু যাই করুক আপনি তো সেটা ভালোই বলবেন। বন্ধু বলে কথা। লোকে ঠিকই বলে “যার যার তার তার”। আপনি আপনার বন্ধুর সাইডই নিবেন।

খুশিকে পুরোদমে সমর্থন করে তিশা বলে উঠলো।
–হ্যাঁ হ্যাঁ ভাবি ঠিকই বলেছে। প্রহর ভাইয়াকে শাসন করার বদলে তুমি তার সাইড নিচ্ছো? করবে নাই বা কেন? ছেলে মানুষ বলে কথা।”মেন উইল বি মেন” সব ছেলেরাই একরকম। তুমিও কখন এসব করে বসে থাকবে তার ঠিক আছে। এক বন্ধু যখন এসব করছে তখন তুমিও তো আর পিছিয়ে থাকবে না। তা এমন কেউ থেকে থাকলে এখনই বলো। শুধু শুধু লুকিয়ে লুকিয়ে কিছু করার দরকার নেই।

বেচারা ফাহিম পুরো তব্দা খেয়ে গেল। কথা কোথাথেকে শুরু হলো আর কোনদিকে চলে গেল? একেই বলে নারীজাতি। এরা চাইলে প্রেসার কুকার কেও মিসাইল বানিয়ে দিতে পারবে। যাইহোক আপাতত নারীজাতির গবেষণা স্কিপ করে ফাহিম খুশির উদ্দেশ্যে বললো।
–ভাবিজী আপনি একদম চিন্তা করবেন না। আমি এখুনি ওর স্ক্রু টাইট করে দিয়ে আসছি। এতবড় সাহস! এত সুন্দর সুইট বউ রেখে বাইরে ডেটিং করে বেড়াচ্ছে? ওকে তো আমি এখুনি দেখাচ্ছি মজা।

প্রহর আর জেরিন এখনো তাদের ড্রামা চালিয়ে যাচ্ছে। সাহির ওদিকে রেগে অগ্নিকুণ্ড হয়ে গেছে। শুটিং এ ব্রেক দেওয়ায় সাহির ওর পার্সোনাল ভ্যানিটির দিকে এগিয়ে গেল। যেতে যেতে জেরিনের নাম্বারে ছোট্ট করে একটা ম্যাসেজ করে দিলো। জেরিনের ফোনে ম্যাসেজ টোন বেজে ওঠায় জেরিন চেক করে দেখলো সাহিরের ম্যাসেজ।
“দুই মিনিটের মধ্যে আমার ভ্যানিটিতে এসে দেখা করবে।”

ম্যাসেজ টা দেখেই জেরিন উৎফুল্ল হয়ে লাফিয়ে উঠে বললো।
–ইয়েস ইয়েস আইডিয়া কাজ করেছে। সাহির আমাকে ডাকছে।

প্রহর মুচকি হেঁসে বললো।
–গুড, দেন গো। এন্ড অল দা বেস্ট।

–থ্যাংক ইউ সো মাচ। আমি সাহিরের সাথে দেখা করে আসছি।

জেরিন উঠে চলে গেল। আর জেরিন চলে যেতেই ফাহিম এসে ধপ করে বসলো প্রহরের কাছে। তারপর রাগী মুডে বললো।
–এসব কি হচ্ছে প্রহর?

প্রহর ভ্রু কুঁচকে বললো।
–কি হচ্ছে??

–কি হচ্ছে তুই জানিস না তাইনা? ছিঃ ছিঃ প্রহর তোর কাছ থেকে অন্তত এটা আশা করেছিলাম না। তুই কি করে এমন জঘন্য কাজ করতে পারলি? লজ্জা করলো না তোর?

ফাহিমের কথায় হতভম্ব হয়ে গেল প্রহর। ওর কথা কিছুই বুঝতে পারছে না সে। প্রহর বিরক্তির সুরে বললো।
–আরে আজব! করলাম টা কি আমি? দেখ শুধু শুধু ইরিটেট করবি তো খবর আছে তোর। বউয়ের সামনে শেষে মার খাবি কিন্তু।

ফাহিম আরও গর্জে উঠে বললো।
–আরে মার আমি না মারতো তুই খাবি। তুই যে অসভ্য কাজবাজ করছিস তারজন্য তোকে গণধোলাই খেতে হবে বুজেছিস?

ব্যাস প্রহরের মাথা এবার গরম হয়ে গেল। দুই হাত দিয়ে টেবিলে চাপড় ঠাস করে উঠে দাঁড়াল প্রহর। চোয়াল শক্ত করে বললো।
–আমাকে মারবি তুই? ওকে দেন হিট মি। কাম অন হিট মি। দেখি তোর কলিজায় কতো দম?

এতক্ষণ বাহাদুরি দেখালেও এবার সবার সব ফুসস হয়ে গেল ফাহিমের। প্রহরকে ক্ষ্যাপানো মানে ঘুমন্ত বাঘকে জাগানো। শেষে না বউয়ের সামনে মান ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যায়। ফাহিম আমতাআমতা করে বললো।
–দে দেখ তুই যা করছিস তা কিন্তু ঠিক না।

বিরক্তির শেখরে পৌঁছে গেল প্রহর। রেগে গিয়ে ফাহিমের কলার চেপে ধরে রাগী কন্ঠে বললো।
–হোয়াট দ্যা হেল! কি বারবার একই কথা বলে আমার মাথা খাচ্ছিস। আরে আমি করেছিটা কি?

হঠাৎ হো হো করে অট্টহাসির শব্দে পাশে তাকিয়ে দেখলো খুশি আর তিশা হেঁসে হেঁসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে। ওদের হাসতে দেখে ওরা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। প্রহর ফাহিমের কলার ছেড়ে দিয়ে খুশির উদ্দেশ্যে বললো।
–হাসছ কেন তোমরা?

খুশি কোনরকমে হাসি বন্ধ করে সবটা খুলে বললো। সব শুনে বেচারা ফাহিম বোকা বনে গেল। বেচারাকে এভাবে বকরা বানানোর কি দরকার ছিল।

একটু পরে তিশা ওখানে এলো। অতি আনন্দিত হয়ে বললো।
–থ্যাংক ইউ সো মাচ খুশি। তোমার আইডিয়া কাজ করেছে।সাহির ওর ভুল বুঝতে পেরেছে। আমরা আবার এক হয়ে গেছি। অ্যাম সো হ্যাপি। তোমাদের দুজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ।

খুশি মুচকি হেঁসে বললো।
–মেনশন নট। তোমাদের মধ্যে সব ঠিক হয়ে গেছে এটাই অনেক।

–আচ্ছা সাহির তোমাদের সাথে দেখা করতে চায়। তোমরা আমার সাথে চলো।

জেরিন ওদের সবাইকে নিয়ে সাহিরের সাথে দেখা করতে এলো। জেরিন প্রথমে প্রহরের সাথে সাহিরের পরিচয় করিয়ে দিলো। সাহির ডান হাত বাড়িয়ে প্রহরের সাথে হ্যান্ডশেক করে বললো।
–নাইস টু মিট ইউ মিঃ প্রহর। জেরিনের কাছে আপনাদের কথা সব শুনলাম। থ্যাংক ইউ সো মাচ আমার চোখ খুলে দেওয়ার জন্য। নাহলে আমি মিথ্যে রাগে শুধু শুধু আমাদের সম্পর্ক টা নষ্ট করে দিতাম।

প্রহরও মুচকি হেঁসে বললো।
–ইটস ওকে। সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে এতেই খুশি। আর হ্যাঁ আরেক টা কথা। জেরিনের সব কথাই সত্যি। বিয়েতে আমাদের দুজনের কারোরই মত ছিলনা। তাই ওসব কিছু ভুলে যান। আর দুজন ভালো থাকুন।

জেরিন এবার খুশির সাথে সাহিরের পরিচয় করিয়ে দিলো। খুশি উৎসাহিত হয়ে বললো।
–হায়য় সাহির খান, আই অ্যাম ইউর ভেরি বীগ ডাই হার্ট ফ্যান।

সাহির হাসিমুখে বললো।
–থ্যাংক ইউ সো মাচ। বায়দা ওয়ে আপনি কিউট। একদম বারবি ডলের মতো।

সাহির খানের প্রসংশা শুনে খুশি আনন্দে গদগদ হয়ে গেল। অথচ পাশের ব্যাক্তির যে ভেতরে রাগের অগ্নি টগবগ করছে তা বুঝতেই পারলো না খুশি। সে তার মতো বলতে লাগলো।
–আপনার সাথে একটা সেলফি নিতে পারবো প্লিজ??

–হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই আসুন না।

খুশি ফটাফট ফোন করে সাহিরের পাশে এসে দাঁড়াতে নিল। তবে মাঝখানে ঝোপের বেড়া হয়ে দাঁড়াল প্রহর। দুজনের মধ্যে এসে দাঁতে দাঁত চেপে ফেক স্মাইল দিয়ে বললো।
–শুধু একা একা তুললে হবে আমাকে নিবে না? আর ফাহিম তিশা তোরাও আয় না। সবাই একসাথে ছবি তুলবো। জেরিন তুমিও আাসো।

সবাই এসে দাঁড়াল ক্যামেরার মাঝে।মুখ লটকিয়ে সেলফি নিলো খুশি। সেলফি হয়ে গেল গ্রুপ ফটো। যার এক মাথায় সাহির আর এক মাথায় খুশি।
___

রাত আট টার দিকে রিসোর্টে ফিরে আসলো ওরা। রুমে এসে খুশি নানান কথাই বলছে। কিন্তু প্রহর কোন কথার কোন জবাব দিচ্ছে না। থমথমে মুখ করে নিয়ে নিজের কাজ করে যাচ্ছে। প্রথম প্রথম খেয়াল না করলেও এবার বিষয় টা খেয়াল করলো খুশি। প্রহর লাগেজ থেকে নিজের কাপড়চোপড় বের করছে। খুশি ওর পেছনে দাঁড়িয়ে বললো।
–কি হয়েছে তোমার? কথা বলছ না কেন? কখন থেকে মুখে দই জমিয়ে বসে আছ। সমস্যা টা কি?

প্রহর খুশির কথার বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ না করে ওকে পাশ কাটিয়ে তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে লাগলো। খুশি এবার ওর সামনে এসে বাঁধা হয়ে দাঁড়াল। হাত থেকে তোয়ালে টা ছিনিয়ে নিয়ে বললো।
–অনেক হয়েছে। সমস্যা টা কি? কথা কেন বলছনা? জবাব না দেওয়া পর্যন্ত যেতে পারবেনা।

প্রহর সরু চোখে তাকালো খুশির দিকে। খুশির মুখের ওপর ঝুঁকে বললো।
–কজ অ্যাম নট “আনলাকি”।

কথাটা বলেই খুশির হাত থেকে তোয়ালে টা টান দিয়ে ওয়াশরুমের দিকে চলে গেল। খুশির মগজের বাত্তি ফট করে জ্বলে উঠলো। ব্রেনের হার্ড ডিস্কে সার্চ মেরে সে তার করা ভুলটা খুঁজে পেল। নিজের ওপর রাগ লাগছে এখন।তুইও না খুশি এক নাম্বারের আবুল। উৎসাহী হয়ে যা মন চায় তাই বলে দিস। কি দরকার ছিল জেরিনকে বলার ” ইউ আর সো লাকি”? ইডিয়ট একটা। দিলিতো প্রহরকে রাগিয়ে। এখন এর রাগ ভাঙাবো কি করে? যে বোম হয়ে আছে।কিন্তু যেকরেই হোক রাগতো ভাঙাবোই। নাহলে আমার নামও খুশি না হুহ।

কিছুক্ষণ পর প্রহর ওয়াশরুম থেকে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বেড়িয়ে এলো। হঠাৎ সামনে তাকাতেই থমকে গেল সে। ওর প্রিয়তমা স্ত্রী আবারও তার জালওয়া বিছানোর মায়াজাল ছড়িয়ে দিয়েছে। খুশি আজ গাঢ় লাল রঙের একটা নেটের শাড়ী পড়েছে। স্লিভলেস, ব্যাকলেস ব্লাউজ। তারওপর শাড়ির আঁচল টা একপল্ল করে দিয়ে রেখেছে। যার ভেতর দিয়ে খুশির পেট নাভি সব উন্মুক্ত। খুশির ড্রেসাপে সবকিছু যেন শুধু লেস লেস। এই রুপ যে প্রহরকে ঘায়েল করার ষড়যন্ত্র তা ভালোই বুঝতে পারছে প্রহর। তবে এবার সে এই মায়াজালে ধরা দিবে না। প্রহর নিজেকে অনেক কষ্টে সংযত করে নিয়ে খুশিকে পাশ কেটে চলে যেতে নিলো। খুশি পেছন থেকে প্রহরের হাত টেনে ধরলো। ধীরে ধীরে এগিয়ে আসলো প্রহরের পেছনে। আবেদনময়ী হাসি দিয়ে প্রহরের কাধে ওপর দিয়ে হাতের দুই আঙুল হাটার মতো করে ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠাতে লাগলো। প্রহরের মাঝে শিহরণ জাগলেও সে অতি কষ্টে সেটাকে দমিয়ে নিলো।খুশি মুখ বাড়িয়ে প্রহরের কাঁধে অধর ছোঁয়াতে নিলে প্রহর খুব সহজে সেটা অবজ্ঞা করে সরে গেল ওখান থেকে। খুশিও হার মানার পাত্রী না। সে আবারও প্রহরের সামনে এসে পথ আগলে ধরলো। প্রহরের গলা জড়িয়ে ধরে নানা আবেদনময়ী ভঙ্গিতে প্রহরকে মোহাবিষ্ট করার চেষ্টা করছে। আরও রোমাঞ্চকর করতে মিউজিক প্লেয়ারে গান প্লে করলো খুশি।
🎵আঙ্গ লাগা দে রে মোহে আঙ্গ লাগা দে রে
🎵মে তো তেরি জোগানিয়া তু যোগ লাগা দেরে

প্রহর তবুও ফাঁসছে না খুশির জালে। নিজেকে কঠোর মজবুত করার প্রচেষ্টায় নিয়োজিত সে। প্রহর আবারও খুশিকে ছাড়িয়ে চলে যেতে নিলো। খুশির এবার একটু রাগ হলো। সে প্রহরকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো বিছানায়। তারপর প্রহরের পেটের ওপর চড়ে বসলো। প্রহরের দুই হাত চেপে ধরে শক্ত গলায় বললো।
–ব্যাস অনেক হয়েছে। কি তখন থেকে ঘাড় তেড়া হয়ে আছ? আরে আমি কি ওটা মিন করে বলেছিলাম নাকি? ওটাতো জাস্ট জেরিনের মন ভালো করার জন্য এমনি বলেছিলাম। আর তুমি কিনা বাচ্চাদের মতো ওই একটা কথা নিয়েই পড়ে আছ? আমার এতো প্রচেষ্টার কোন প্রভাবই হচ্ছে না তোমার ওপর। ঠিক আছে, আমি বরং এক কাজ করি। আমার এই সাজগোছ গিয়ে সাহির খানকে দেখাই। তার কাছে নিশ্চয় ভালোই লাগবে।

কথাটা বলে খুশি উঠে যেতে নিলেই প্রহর ঝট করে খুশিকে ঘুরিয়ে নিচে ফেলে দিলো। খুশির দুই হাত বিছানার সাথে চেপে ধরে চোয়াল শক্ত করে বললো।
–তোমার সাহস অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে বোধহয়। খবরদার খুশি আমার ভেতরের ভয়ংকর মানব কে জাগিও না। তুমি নিতে পারবেনা। এইসব জেলাস গেম আমার সাথে খেলতে আসবেনা।পরিণম ভয়াবহ হবে। আমাকে জ্বলাতে চাইলে নিজেই ধ্বংস হয়ে যাবে।

এমন সিরিয়াস মুহূর্তে খুশি হঠাৎ বলে উঠলো।
–ওয়াও.. মাই ব্যাড বয় ইজ ব্যাক। আই জাস্ট লাভ দিস বয়। পুরাই কাতিলানা। মন চায় কামড়ে খেয়ে ফেলি।
খুশি হাওয়ায় কামড় দিয়ে মুখ দিয়ে হিংস্র একটা আওয়াজ বের করলো।

আর কিভাবে রাগ করে থাকবে প্রহর। খুশির এই উদ্ভট কথায় ফিক করে হেঁসে দিল প্রহর। খুশির কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে হাসলো প্রহর। তারপর বললো।
–তুমি সত্যিই পাগলী।

–জানিতো

–পুরাই পাগলী।

–তাও জানি

ললাটে অধর ছোয়ালো। অধরের ছোঁয়া বাড়তে লাগলো। হারালো দুজন প্রেম তরঙ্গে।

চলবে……

গল্পের লেটেস্ট আপডেট পেতে আর গল্প নিয়ে যেকোনো আলোচনা আড্ডা দিতে আমার গ্রুপে জয়েন হওয়ার আমন্ত্রণ রইল। নিচে গ্রুপ লিংক দেওয়া হলো। জয়েন হতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন। 👇
গ্রুপ
https://facebook.com/groups/170529085281953/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here