অন্তরালের অনুরাগ ❤ পর্বঃ ০২

0
11470

গল্পঃ #অন্তরালের_অনুরাগ
লেখনীতেঃ #নাহিদা_নীলা
#পর্বঃ ০২

হরেক রকমের বাহারি খাবারে ডাইনিং টেবিলটা পরিপূর্ণ। নীলা তখন এত চেষ্টা করেও বমি-টমি করতে পারল না। তাই ভিতরে থাকা সাদিদ নামক ক্রাসটা, তার পেট টু গলায় অনবরত দৌড়াদৌড়ি করছে। এমন একটা অবস্থায় এত খাবারের ঘ্রাণ নাকে আসতেই, নীলার এবার সত্যিই বমি পাচ্ছে। খাবারের গন্ধে বমি আটকে রাখতে পারলেও, সবার সাদিদ ছেলেটার প্রতি এত আহ্লাদ-আধিখ্যেতা দেখে বমি আটকে রাখা নীলার পক্ষে দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।
তাই নীলা দৌড়ে ডাইনিং রুমে থাকা বেসিনের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে, ঝুঁকে ওয়াক ওয়াক শুরু করল।

কিন্তু না এবারও বমি বাবাজি তার সাথে বেইমানি করেছে। তার বিশ্বাসঘাতকতায় নীলার শরীর এখন রাগে প্রচন্ড ভারি হয়ে আছে। বমি-টমি করতে পারলে শরীরটা বোধহয় একটু হালকা হতো।
নীলা অসহায় মুখ নিয়ে আবারও টেবিলে এসে বসল। আড়চোখে তাকাতেই বুঝতে পারল সবাই এতক্ষণ তার দিকেই তাকিয়ে ছিল।
কিন্তু কেউ একটু এগিয়ে না যাওয়াতে নীলার মনে কষ্টের বীজ বপন হচ্ছে।
নীলার এমন মর্মাহত মুহূর্তের মধ্যেই নার্গিস খাতুন ধমকিয়ে উঠলেন,

—- ” জ্ঞান-বুদ্ধি কি বাসায় রেখে এসেছিস? খাবার সামনে নিয়ে কেউ এমনটা করে? এত কষ্ট করে ছেলেটা আসলো, তোর এই কান্ডের জন্য যদি না খেতে পারত? তাহলে কি হতো! বিন্দুমাত্র কমনসেন্স নেই। ”

বলেই নার্গিস খাতুন অপরাধী কন্ঠে সাদিদের উদ্দেশ্য বলে উঠল,

—- ” বাবা তুমি কিছু মনে করো না। এই মেয়েটা এমনই, তুমি বরং খাওয়াতে মনোযোগ দাও। ”

সাদিদ একপলক নীলার দিকে তাকিয়ে আবারও খাওয়াতে মনোযোগ দিলো। অর্থটা এমন যে তার এসব ফালতু জিনিসে বিন্দুমাত্র ইন্টারেস্ট নেই। বরং সে নীলার এমন কান্ডে বড্ড বিরক্ত।
নীলার এমনিতেই মায়ের কথা শুনে শরীরপুড়ে অঙ্গার হচ্ছে। তার মধ্যে সাদিদ আরেকটা গা জ্বলানো কথা বলে উঠল,

—- ” ভাবীমণি একটু তেঁতুল চাটনিটা দাওতো। এসব কর্মকান্ডে আমার-ই বমি পাচ্ছে। ”

সাদিদের বলতে দেরি নেই নিধির দিতে দেরি নেই। সাদিদের প্রতি সবার এত বেশি পরিমাণের আদর-যত্নে, নীলার কলিজা, কিডনি সবকিছু জ্বলে যাচ্ছে।
খাবে আর কি, কাটা চামচ দিয়ে মাংসের টুকরোকে সাদিদ কল্পনা করে কাটাকাটি করছে।
আরিফ মাহমুদ খাওয়ার মাঝেই হঠাৎ সাদিদের উদ্দেশ্য বলে উঠলেন,

—- ” সাদিদ, এখন তাহলে কি প্ল্যান করেছ? বাবা-ভাইকে হেল্প করবে? নাকি ল্যাব? ”

সাদিদ উনার প্রশ্নে বিনয়ের হাসি ঠোঁটে ফুটিয়ে তুলল। তারপর হাসিমুখেই বলল,

—- ” আঙ্কেল অফিসে না বসলে, বাবা হয়তো আমাকে বাংলাদেশ থেকেই বিদায় করে দিবে। তাই দুইটা-ই সামলাতে হবে। ”

—- ” তা নয়তো কি করব? এই বুড়ো বয়সেও আমাকে অফিসে যেতে হবে? আমি কি সারাজীবন কাজ সামলিয়েই যাব? তোর ছেলে হিসেবে দায়িত্ব নেই। শাহেদটাও এবার চাপে পড়ে গেছে। শাদমানটা তাকে ছাড়া কিছুই বুঝে না।
তাই ওকেও তার সময় দিতে হয়। তাহলে তোর কি কর্তব্য নয়, আমাদেরকে কাজে একটু সাহায্য করা? ”

—- ” আসলে বাবা…

—- ” চুপ। আসলে নকলে তোর কাছে রাখ। সেই কবে থেকে বলছি দেশে আস, কিন্তু তুই কোনো কথাই শুনলি না। এতদিন পর তোর আমাদের কথা মনে হলো। ”

—- ” বাবা প্লিজ ভুল বুঝো না। ক্ষমা করে দাও। ”

—- ” এই, একদম আমাকে নরম গলায় কথা বলে গলাতে আসবি না। তোর এই কর্মের জন্য রাগ করেও থাকতে পারি না। খুবই বজ্জাত হয়েছিস। মা-বাবাকে নরম গলায় ইমোশনাল কথা বলে ব্ল্যাকমেইল করিস! ”

সাদিদ আর কিছু বলল না। শুধু নিঃশব্দে হাসল। উপস্থিত সবাইও ঠোঁট টিপে হাসছে। কেননা বাপ-ছেলের যে এইটা মধুর ঝগড়া, মান-অভিমান সেটা বুঝতে কারও অসুবিধা হচ্ছে না।

সবার খাওয়ার পর্ব শেষ হতেই নিধি এনে ডেজার্ট পরিবেশন করল। এখানেও সাদিদের নামের জপ।

—- ” আব্বু রসমালাইটা খা। আমি নিজে ফারুককে দিয়ে কুমিল্লার মাতৃভান্ডার থেকে আনিয়েছি। তুই না কিছুদিন আগে বলেছিলি রসমালাই খাওয়ার ইচ্ছা করছে। ”

—- ” মা তুমি ঐ কথা এখনও মনে রেখেছ? আমিতো এমনিই বলেছিলাম। ”

—- ” সেকিরে তোর খেতে ইচ্ছা করেছে, আর আমি কি-না ভুলে যাব! এই নিজের মাকে চিনিস? ”

—- ” সরি সুইটহার্ট ভুল হয়ে গেছে। এইতো খাচ্ছি। ”

বলেই সাদিদ রসমালাই মুখে দিলো।
সবাই খাওয়ার পর্ব শেষ করে মিষ্টির পর্বে নামলেও, নীলা এখনও প্লেট সামনে নিয়ে বসে আছে।
এসব দেখে তার কি আর খাবার মুখে যায়?
শায়লা রহমানের আচমকা নীলার প্লেটে নজর আসতেই উনি বলে উঠলেন,

—- ” কিরে মা, খাচ্ছিস না কেন? ”

—- ” মামনি ভালো লাগছে না। আমি বরং যাই, শরীরটা ভালো লাগছে না। ”

নীলা আর কারও কথা কানে নিলো না। সোজা উপরের তলার দিকে এগিয়ে গেল।
নার্গিস খাতুন বলে উঠলেন,

—- ” এই মেয়েটাও না, কি যে শুরু করেছে! খাওয়া-দাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছে। প্রতিদিনই নতুন কিছু করার চেষ্টা করি। কিন্তু তার ঐ একচামচের বাহিরে যায় না। ”

—- ” আম্মু চিন্তা করো না। এখন হয়তো খিদা নেই। আমি একটু পরে খাইয়ে দিব। ”

তাদের কথা শেষ হতেই সাদিদ উঠে যেতে লাগল। শায়লা রহমান তাড়াতাড়ি বলে উঠলেন,

—- ” কিরে, কোথায় যাস? ”

—- ” মা আর খেতে পারব না। অনেক খেয়েছি। ”

—- ” মিষ্টিগুলোতো খেলি না। অল্প একটু খা। ”

—- ” আর পারব না মা, পেটে একটুও জায়গা নেই। তুমি রেখে দিও পরে খেয়ে নিব। ”

সাদিদ মাকে বুঝিয়ে খাবার টেবিল থেকে উঠে গেল। তারপর সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে, নিজের রুমে গিয়ে দ্রুত ফোন হাতে নিলো।

—- ” হ্যাঁ কই তুই? ”

—- ” _____________ ”

—- ” আচ্ছা সব কাজ বাদ দিয়ে, এখন আমার কথাটা মনোযোগ দিয়ে শোন। আমার কিছু জিনিস লাগবে। আর সেগুলো নিয়ে অর্ণবসহ দ্রুত আমার বাড়িতে আয়। ”

—- ” লাথি দিবো এসব জান-টানের কথা বললে। তোর সব আজাইরা কাজ রেখে এখনই আস। ওয়েট করছি, আর কি লাগবে না লাগবে সেগুলোর মেসেজ পাঠিয়েছে।
ইনবক্স ভালোকরে চেক করবি। মেসেজের বাহিরে কোনো উল্টো পাল্টা কথা মুখ দিয়ে বাহির করলেই মাইর খাবি। ”

বলেই সাদিদ ফোন রাখল। তারপর ফোনের গ্যালারী ওপেন করতেই সাদিদের মুখে হাসি ফুটে উঠল। খুব শব্দ করে সে ফোনের স্ক্রিনে চুমু দিলো। ফোনটা বুকে চেপে ধরে নিজের মনে বলে উঠল,

—- ” প্রাণপাখি দেখেছ, বুকটা আমার কতটা ফাঁকা?
কবে আসবে এখানে? কবে মাথাটা রাখবে?
কবে তোমার মাথাটা বুকে শক্ত করে চেপে ধরব? অনেকতো অপেক্ষা হলো, এবার আস।
আর যে সহ্য হয় না পাখি। তোমার বিরহে বুকটা আমার খা খা করে।
আস না পাখি, একটাবার ছুঁয়ে দাও। অপেক্ষা করছি তো। ”

_________________

নীলার পেটে ইঁদুর-বিড়াল-কুকুর সব একসাথে দৌড়াদৌড়ি করছে। এমনিতে খাবার নিয়ে ঝামেলা করলেও, গতকাল থেকে একপ্রকার না খেয়ে আছে।
সাদিদ আসছে, আর তাদেরকেও এখানে আসতে হবে। এইকথা জেনেই নীলার খাবারের সাথে এমন নিরব অনসন চলেছে।
কিন্তু এখন মনে হচ্ছে পেটে অবস্থানরত ক্ষুদার্তরা তাকে শান্ত থাকতে দিবে না।
নীলা পেটে হাত চেপে রুমে পায়চারি করছে।
এমতাবস্থায় দরজা ঠেলে নিধি ভিতরে আসলো। নীলার এমন হাস ফাঁস অবস্থা দেখে চিন্তিত হয়ে বলে উঠল,

—- ” কিরে পিচ্চু, মুখটা এমন লাগছে কেন? আর এমন পায়চারি-ই বা করছিস কেন? ”

বোনের সামনে কোনোভাবেই এখন সত্য প্রকাশ করা যাবে না। নতুবা নার্গিস খাতুনের কানে গেলে খাবার না খেয়ে তেজ দেখাতে, আবারও একগাদা বকাঝকা শুনতে হবে। যা নীলা এইমুহূর্তে একদমই চায়ছে না।
তাই দ্রুত নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বলে উঠল,

—- ” এমনি আপুনি, কিছু না। হাঁটাহাটি করতে ভালো লাগছিল। তাই একটু পায়চারি করছিলাম। ”

—- ” ওহ্ আচ্ছা। এবার তাড়াতাড়ি আমার সাথে নিচে আয়। তুই দেখলে খুশিতে পাগল হয়ে যাবি। ”

—- ” তাহলে লাগবে না। যেই জিনিস দেখলে পাগল হয়ে যাব, সেই জিনিস থেকে আমি একশত হাত দূরত্ব বজায় রাখতে চাই। ”

—- ” আরে একবার গিয়ে দেখতো। তাহলে আর পাগল কি সবকিছু হতেই রাজি হবি। ”

নীলা ভ্রুজোড়া কিঞ্চিৎ কুঁচকে নিধির দিকে তাকালো৷ এমনিতেই তার মনমেজাজ-পেট সব অবস্থা খারাপ, এরমধ্যে নিধির এমন নাটকীয়ভাবে কথা বলাটা নীলার মোটেই পছন্দ হচ্ছে না।
নীলার এমন ভাবভঙ্গির মধ্যেই, নিধি তার হাত টেনে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যেতে লাগল।

.

বাড়ির সামনের গার্ডেনে ফুচকা-চটপটির স্টল বসানো হয়েছে। ইতিমধ্যেই সবার হাতে ফুচকা-চটপটির প্লেট দেখা যাচ্ছে।
নীলার বামহাতটা নিধির ধরে রাখা হাতটা থেকে একপ্রকার ছিনিয়ে নিয়ে, সে গার্ডেনের দিকে দৌড় লাগাল।
ফুচকা স্টলের সামনে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে উঠল,

—- ” মামা, বেশি বেশি টক আর বেশি বেশি কাঁচা মরিচের ঝাল দিয়ে জলদি একটা ফুচকা দেন। ”

ফুচকা তৈরি করে নীলার হাতে দিতে দেরি নেই, নীলার সেটা মুখে দিতে দেরি নেই।
এত ক্ষিদে লেগেছিল যে গপাগপ সাতটা ফুচকা খেয়ে সে পানি চায়লো,

—- ” মামা পানি। ”

কিন্তু ফুচকাওয়ালা পানি দেওয়ার আগেই, এক উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের যুবক এসে নীলার হাতে পানির বোতল এগিয়ে দিলো।
নীলা ঝালের চোটে তাড়াতাড়ি পানিটা খেয়ে ছেলেটির দিকে তাকালো। ইতস্ততবোধ কন্ঠে বলে উঠল,

—- ” সরি আপনাকে চিনতে পারিনি। ”

—- ” চিনবার কথাও না। কোনোদিন সামনাসামনি দেখার সৌভাগ্য হয়নি। এককথায় বলতে পার, কেউ সৌভাগ্য অর্জনে বিঘ্ন ঘটিয়েছে। ”

নীলা অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাতেই অর্ণব এসে পরিস্থিতি সামলে নিলো।

—- ” দোস্ত মুখটা এবার একটু বন্ধ রাখ। নতুবা এত পকপক করলে দপদপ খেতে হবে। ”

—- ” মানে। সেটা আবার কি খাবার? ”

—- ” নীলা তুমি এসব বুঝবে না। তানবীরের স্পেশাল খাবার এটা। খুবই টেষ্টি, তাই একমাত্র সে খায়। ”

তানবীর অর্ণবের দিকে ক্ষেপা দৃষ্টিতে তাকাতেই, সে ইশারাতে ডানপাশে দেখিয়ে দিলো।
তানবীরের মুখটা এবার ফাঁকা বেলুনের মতো চুপসে গেল। আড়চোখে আবারও সেইদিকে একবার তাকিয়ে দ্রুত জায়গা ত্যাগ করল।

নীলা এতক্ষণে বাদবাকি সবার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। সবাই তার দিকেই তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসছে। এটা দেখে নীলা ফুচকার প্লেটটা রেখে, চলে যাওয়া ধরতেই তানবীর প্রায় চেঁচিয়ে উঠল।

—- ” আরে, আরে কই যাও? তোমার জন্যই তো এইসব। ”

নীলা এবার বিস্ফরিত চোখে তানবীরের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো।
মানে! তার জন্য?
নীলার এমন অবাক দৃষ্টি দেখে, তানবীর আড়চোখে আবারও ডানপাশে তাকালো।
তাকিয়েই একটা শুকনো ঢুক গিলে তাড়াতাড়ি বলে উঠল,

—- ” না মানে, তোমাদের জন্যই তো।
আমার ছোট বোন জেএসসি পরীক্ষাতে গোল্ডেন পেয়েছে। তাই খুশি হয়ে আমি সবাইকে ট্রিট দিচ্ছি। আমার বোনের ফুচকা অনেক প্রিয়। তাই মিষ্টিমুখের পরিবর্তে সবাইকে ফুচকামুখ করাচ্ছি। ”

বলেই তানবীর জোরপূর্বক একটা কেবলা হাসি দিলো। তার এখন জান বাঁচলেই হলো।
নীলা যদি একবার কিছু আঁচ করে ফেলে, তবে তাকেও কেউ কেচ-কেচ করে খেয়ে ফেলবে।
তানবীরের এমন ভয়ার্ত অবস্থার মধ্যেই নীলা শব্দ করে হেসে উঠল।
তারপর হাসতে হাসতেই ফুচকাওয়ালাকে বলল,

—- ” মামা, আমাকে আরও দুইটা ফুচকা দিন। ছোট বোনের গোল্ডেনের খুশিতে, আমার আরও দুইটা স্পেশাল ফুচকা চাই-ই চাই। ”

বলেই নীলা আবারও হাসিমুখে ফুচকা মুখে দিলো। নীলা মনভরে-পেটভরে ফুচকা খেয়ে যাচ্ছে।
আর তারপাশেই একজন যাবতীয় সবকিছু বাদ দিয়ে, কেবল তাকেই দেখে যাচ্ছে।
চোখে তার মুগ্ধতার ছড়াছড়ি! ঠোঁটের কোণে তৃপ্তির হাসি।

__________________

পূর্ব দিগন্তে সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে। মৃদু হলদেটে আলো এবং শীতল বাতাসে চারপাশ মুখরিত। ছাদের পাটাতনে গোল হয়ে বসেছে সাদিদ-নীলাসহ বাড়িতে উপস্থিত যুবসমাজ।
শায়লা রহমান এবং হাসিবুর রহমান ছেলেমেয়েদের আড্ডায় বিগ্ন ঘটাতে চায়নি। তাই নিজেদের সম্মানিত স্থান বজায় রেখে, রুমে গিয়ে বিশ্রাম করছে।
নিধিও ইতিমধ্যে সার্ভেন্টদের দিয়ে গরম কফি আর মুচমুচে স্ন্যাকসের ব্যবস্থা করিয়ে ফেলেছে।
এককথায় জম্পেশ একটা আড্ডাবাজির আয়োজন।

—- ” আপুনি বললামতো বিরক্ত করিস না, তারপরও ধরে বেঁধে নিয়ে আসলি! আমার সত্যিই এখানে বসতে ভালো লাগছে না। ”

—- ” আহা পিচ্চু আমরা সবাই এখানে আড্ডা দিব, আর তুই কি-না একা একা রুমে বসে থাকবি? এটা কি মানা যায় বল? ”

—- ” না মানার কি আছে? একজনের ভালো নাই লাগতে পারে। তাতে এত মাথা ব্যাথার কি আছে। ”

—- ” বোন একটু বুঝার চেষ্টা কর। সাদিদ এতদিন পর এসেছে। তাই সবাই মিলে গল্প করব। আর তুই যদি এই মুহূর্তে রুমে বসে থাকিস, সবাই কি ভাববে বল? ”

—- ” এত ভাবা-ভাবি থাকলে জোর করে রাখলে কেন? আমিতো আম্মু-আব্বুর সাথে যেতেই চেয়েছিলাম। যেতে দিলে না কেন? ”

নিধি আর কিছু বলার মত খোঁজে পেল না। কিন্তু সে সবচেয়ে বেশি অবাক হচ্ছে নীলার এমন রেগে যাওয়াতে। ছোট্ট একটা বিষয় নিয়ে এতটা ঝামেলা পাকানোর লোক নীলা নয়। কিন্তু আজ কি হলো?
অপরদিকে নীলা পারছে না রাগে নিজেকেসহ সবাইকে জ্বালিয়ে দিতে।
যাকে নাকি দুই চোখে সহ্য করতে পারে না, তার জন্যই নাকি আড্ডায় জয়েন করবে!
বোনদের এমন কথোপকথনের শেষে শাহেদ এসে সিঁড়িতে দাড়াল। শাদমানকে কোলে নিয়েই বলে উঠল,

—- ” কি হলো, তোমরা এমন স্ট্যাচু হয়ে এখানে দাড়িয়ে আছ কেন? উপরে উঠো, তারা যে বসে আছে। ”

নীলার এমনিতেই মনমেজাজ খারাপ। তাই জিজুর সামনে আর কথা বাড়ালো না। নতুবা কি থেকে কি বলে ফেলে!
শাহেদ-নিধি ছাদের দরজায় আসতেই সাদিদ সেদিকে তাকাল। কিন্তু পরমুহূর্তেই তার মুখটা চুপসে গেল।
নিধিরা এসে সাদিদ, তানবীর, অর্ণবের সাথে জয়েন করল।
সবাই টুকটাক গল্প করলেও সাদিদ একদৃষ্টিতে পড়ন্ত বিকেলের দিকে তাকিয়ে আছে।
না চাইতেও ভিতরটা তার পুড়ছে।
কিন্তু কেন পুড়ছে? ভিতরে আগুন লাগার সম্ভাবনা নেই। তবুও কেন অনলের দহনে জ্বলার মতো তার ব্যাথা অনুভব হচ্ছে?

হঠাৎ করে সবার মাঝে একজনের আগমনে, সাদিদ দ্রুত সেদিকে তাকাল।
আর সাথে সাথেই তার ঠোঁটের কোণে, মৃদু হাসির রেখাটা প্রসারিত হতে লাগল।

নীলা নিজের ফোনটা পাশে রাখল। এটা আনবার জন্যই তখন আবারও রুমে যেতে হয়েছিল। রুমে গিয়ে মাথা ঠান্ডা রাখার জন্য, পানি-টানি দিয়ে এসেছে। অল্প একটু নবরত্নের ঠান্ডা তেলও দিয়েছে।
যদি এই মহামূল্যবান নবরত্নের গুণে তার মাথাটা একটু ঠান্ডা থাকে।
সবাই এইটা-সেইটা নিয়ে কথা বলছে। আর বেশিরভাগ কথার অংশ-ই সাদিদকে ঘিরে।
তার এতদিন কেমন কেটেছে। সামনের প্রজেক্ট নিয়ে কেমন প্রস্তুতি এসব নিয়েই চলছে আলোচনা-পর্যালেচনা। এককথায় সাদিদময় আলোচনা।
আর তাতে নীলার রাগের পরিমাণ যেন, তিলতিল করে বেড়ে চলেছে। বোনের কথা ভেবে না পাড়ছে উঠতে, আর না পাড়ছে বসতে।
মোটকথা সে এখন ফেঁসে গেছে।
তাই শাহেদের উদ্দেশ্য বলে উঠল,

—- ” জিজু, বাবুকে আমার কাছে দাও। ”

শাদমান শাহেদের ভক্ত হলেও নীলার জন্য প্রাণ। তাই নীলার কথা শুনেই ছোট্ট হাতদুটো তার দিকে এগিয়ে দিলো।
নীলা তাকে কোলে নিয়েই গালে চুমু দিয়ে আদর করল। শাদও তার নরম ঠোঁটগুলো নীলার গালে ছুঁয়ে দিল।
নীলার যেন এতক্ষণে মাথাটা ঠান্ডা হয়েছে। বোনপোকে আঁকড়ে ধরে সে তার সাথে খুনসুটিতে মেতে উঠল।
নীলার মেজাজ ভালো হলেও আরেকজনের মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে যাচ্ছে। তাই না সহ্য করতে পেড়ে বিতৃষ্ণা সুরে বলে উঠল,

—- ” আরে ভাই, কিসব পানসে কথাবার্তা শুরু হয়েছে! এতদিন পর সাদিকে সাথে পেলাম, কই একটু মজ-মাস্তি করব। সাদিদের কন্ঠে কিছু গানটান শুনব।
তা না করে কি হচ্ছে? এখানে সংসদের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে! ”

—- ” দোস্ত, এটা তুই একটা কাজের কথা বললি। নতুবা তোর মুখে এসব ভালো বাক্যের বড্ড অভাব। ”

—- ” শালা, তুই আমারে ইন্ডাইরেক্টলি খারাপ কস? ”

—- ” প্রথমত আমার কোনো বোন নেই। তাই শালা বা সম্বন্ধি হবার চান্স নেই।
দ্বিতীয়ত তোকে খারাপ বলতে আমার ইন্ডাইরেক্ট অপসনে যেতে হবে না।
তোকে আমি ডিরেক্টরি খারাপ বলছি। আর এটাও বলছি তোর মুখের ভাষা বড্ড জঘন্য। ”

—- ” একটা লাথি দিয়া ছাদ থেকে ফালাই দিমু। আমারে খারাপ কস? তুই খারাপ তোর প্রিয়ুর ন্যাকামিও খারাপ। ”

—- ” তানবীর মাইর খাইস না। আমার প্রিয়ুকে নিয়ে বাজে কথা বললে, তোকে আমি ছিঁড়ে ফেলব। ”

—- ” আমি মনে হয় তোমাকে প্রিয়ুুুর লক্ষ্মীদেবির মতো পূজা করব? তোকে আমি মা-কালির উদ্দেশ্য বলিদান দেব। ”

—- ” এই তোরা থামবি? আমার ছোট্ট বাচ্চাটাও এত ঝগড়া করে না। যতটা না তোরা করছিস! আর একটা কথা বললে, দুইটাকে-ই তুলে ফেলে দিব। ”

শাহেদের ধমকে দুইজন এখন কিছুটা নিভল। কিন্তু মনে মনে দুইজনই একে অপরের পিন্ডি চটকাচ্ছে।
নীলার অবশ্য এসবে খেয়াল নেই। সে কেবল শাদমানের ছোট্ট হাতগুলো নিয়ে খেলা করছে। আর তার পেটে-পিঠে সুড়সুড়ি দিয়ে দুষ্টুমি করছে।
সবাই অর্ণব-তানবীরের কথায় মনোযোগ দিলেও, দলের অন্য একজনের মনও সেদিকে নেই।
সে যে কেবল মুগ্ধ দৃষ্টিতে সৌন্দর্য অবলোকন করছে। এত দেখেও যেন চোখের তৃপ্তি হয় না।
আরও দেখতে ইচ্ছে করে।

হঠাৎ শাহেদের ধাক্কায় সাদিদের ধ্যান ভাঙলো। সে শাহেদের দিকে প্রশ্নবোধক অর্থে তাকাতেই, শাহেদ ঠোঁট বাকিয়ে হাসল।
সাদিদের হঠাৎ করে খানিকটা লজ্জা লেগে গেল। তাই মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে সে মাথা চুলকালো।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়াতে নিধি এবার বলে উঠল,

—- ” হ্যাঁ সাদিদ, তোমার ভাইয়ার থেকে তোমার গানের গলার অনেক প্রশংসা শুনেছি। আজ কিন্তু বাস্তবে শুনতে চাই। ”

—- ” আরে ভাবীমণি ততোটাও ভালো না। ভাইয়ারা সবসময় বাড়িয়ে-টাড়িয়ে বলে। ”

—- ” আমরা বেশি বলি? হোক তাহলে চ্যালেঞ্জ। দেখি কে কতটুকু বাড়িয়ে বলছে। ”

শাহেদের ব্যঙ্গাত্মক স্বরে সাদিদ নিঃশব্দে মৃদু হাসল। তার প্রশংসা শুনতে ভালো লাগে না। তারপরও সবাই তার গুণকীর্তন গেয়েই যায়। সাদিদ হাসিমুখেই পাশে এনে রাখা গিটারটা নিজের হাতে নিতেই নীলা আচমকা বলে উঠল,

—- ” জিজু, আমার না মাথা ধরেছে। আর থাকতে পারছি না। তোমরা আড্ডা দাও আমি বরং নিচে যাই। ”

নীলার কথাটা সাদিদের কানে যেতেই, তার মুখের এতক্ষণের হাসিটা মুছে গেল। চোখগুলো যেন জলহীন মরুভূমি হলো।
সাদিদ গিটারটা আবারও জায়গায় রেখে দিল। মুহূর্তে ঘটে যাওয়া এই পরিস্থিতিটা আর কেউ বুঝতে পারুক বা না পারুক, কিন্তু শাহেদের নজর এড়ায়নি।
তাই শাহেদ বেশ দুষ্টুমিস্বরে বলে উঠল,

—- ” আরে শালিকাসাহেবা দুইমিনিট বসো। আমার ভাইয়ের গান শুনলে, এমনিতেই তোমার মাথা ব্যাথা সেরে যাবে। না সারলে তোমার জিজুর এই বোচা নাকটা কেটে আরও বোচা করে দিও। ”

বলেই শাহেদ নিজের কথাতেই হাসতে লাগল। ছোট্ট শাদমানও বাবার হাসি দেখে খিলখিল করে হাসল। নিধিও প্রিয় মানুষগুলোর মুখে হাসির রেখা দেখে নিজেও হাসল।
সুন্দর একটা ভালোবাসাময় পরিবার যেন একই ছন্দে হেসে যাচ্ছে।
নীলা এই হাসিমুখগুলো দেখে আর না করতে পারল না। তাই আবারও নিজের জায়গায় বসে গেল।

—- ” কিরে তুই আবার স্ট্যাচু হয়ে বসে আছিস কেন? গান শুরু কর। ”

—- ” ভাইয়া তোমরাও তো ভালো গান করো। আজকে বরং তোমরা গান করো আমি শ্রুতা হয়ে শুনি। ”

—- ” অসম্ভব! তোর শ্রুতা হবার চক্করে আমি নিজের নাক খোয়াতে পারব না। নিজের শালিকাকে বড় গলায় বলেছি। এখন আপন ভাই হয়ে, ভাইয়ের মানসম্মানে সিল লাগাস না। জলদি গান শুরু কর। ”

শাহেদসহ উপস্থিত সবার পিড়াপিড়িতে সাদিদকে আবারও গিটার হাতে নিতে হলো।
কিন্তু তার যে আজ কন্ঠ বসে গেছে। এই গলায় সুর আসবে কি করে?
এতদিন দূরত্ব ছিল বিধায় অবহেলাগুলো কেবল উপলব্ধি করেছে। কিন্তু আজ সামনে থেকে, স্বচোখে সেগুলো দেখে কষ্টগুলো তার সহ্য শক্তির বাহিরে চলে যাচ্ছে।
কিছু গুমোট অনুভূতি ভিতরটাকে দুমড়েমুচড়ে শেষ করে দিচ্ছে।
সাদিদের চোখগুলো ইতিমধ্যেই হালকা লাল বর্ণ ধারণ করেছে। কন্ঠনালীটা কেঁপে উঠছে।
সে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখা নীলার মুখের দিকে তাকিয়ে, গিটারের তালে সুর তুলল।

কে তুমি?
কেন এখানে?
কেন এতদিন পরে?
কে তুমি?
কেন এখানে?
কেন এতদিন পরে?
(তুমি কি দেবী আমার)

নীলা চমকিত দৃষ্টিতে সাদিদের দিকে তাকালো। সাদিদ লাল হয়ে যাওয়া চোখগুলো নিয়ে নীলার দিকেই তাকিয়ে আছে।
সাদিদের এমন চোখ দেখে নীলার যেন বুকটা কেঁপে উঠল।
সাদিদের করুণ কন্ঠস্বরটা তাকে যেন আরও পীড়া দিচ্ছে। বুকের বা-পাশটাতে অসহ্য চিনচিন একটা ব্যাথা হচ্ছে। নীলার যেন এই পীড়া সহ্যের বাহিরে। কোনোভাবেই সে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না। তাই সবার অগোচরে নিজের হাত নিজে খামচে ধরে ” বিষ দিয়ে বিষক্ষয় ” করতে চায়ছে।

পেছনে ফিরে দেখো তুমি
অপ্রত্যাশিত কোনো অতিথি
চোখ ফেরালে বলো কেন?
ভয় পেয়েছ, নাকি আরতি
জানি প্রতিটা স্বপ্নে তুমি দেখেছো আমায়
নিরন্তর ছিলে আমার-ই ছায়ায়
তবে, চোখ মেলাতে কি বিরোধ?

ভুল করে একটা বার প্রাচীরটা ভেঙ্গে দেখো
জমে আছে কত কথা ভুল করে বলে দিয়ো
জন্মান্তর যদি মিথ্যে হয়, এই হবে শেষ দেখা
ভালবাসি কেনো যে তোমায় হবে না কখনো বোঝা

জানি প্রতিটা স্বপ্নে তুমি দেখেছো আমায়
নিরন্তর ছিলে আমার-ই ছায়ায়
তবে, চোখ মেলাতে কি বিরোধ?

জানে না যে কেউ আমি অবতার
সমাজের চোখে শুধু তিরস্কার
ধ্বংস করে দিয়ে সে সংস্কার
পূরণ করেছো দেরিদার সৎকার

জানি প্রতিটা স্বপ্নে তুমি দেখেছো আমায়
নিরন্তর ছিলে আমার-ই ছায়ায়
তবে, চোখ মেলাতে কি বিরোধ?

ভুল করে একটা বার প্রাচীরটা ভেঙ্গে দেখো
জমে আছে কত কথা ভুল করে বলে দিয়ো
জন্মান্তর যদি মিথ্যে হয়, এই হবে শেষ দেখা
ভালবাসি কেনো যে তোমায় হবে না কখনো বোঝা

জানি প্রতিটা মুখপাঠ্য অন্তস্থ
জানি বায়বীয় জগতে যে আমারই থাকো
তবে, চোখ মেলাতে কি বিরোধ?

ভুল করে একটা বার প্রাচীরটা ভেঙ্গে দেখো
জমে আছে কত কথা ভুল করে বলে দিয়ো
জন্মান্তর যদি মিথ্যে হয়, এই হবে শেষ দেখা
ভালবাসি কেনো যে তোমায় হবে না কখনো বোঝা।

সাদিদ গান শেষ করেই, নিজের চোখজোড়া বন্ধ করে ফেলল। নতুবা সবার সামনে লুকিয়ে রাখা অনুভূতিগুলো সামনে চলে আসার সম্ভবনা আছে।
সবাই খুশি হয়ে হাততালি দিয়ে আনন্দ-ভালোলাগা প্রকাশ করছে। শাহেদ নীলার সামনে ভাব নিয়ে নিজের ভাইয়ের গুণকীর্তন করে যাচ্ছে।

কিন্তু নীলা একমুহূর্তের জন্যও অন্যদিকে তাকাতে পারেনি। সে কেবল একদৃষ্টিতে সাদিদকেই দেখছে।
নীলা স্পষ্ট সাদিদের চোখে আটকে রাখা অশ্রুজল দেখেছে। কিন্তু কেন?
নীলা সেটাই বুঝতে পারছে না। তাই সে একদৃষ্টিতে সাদিদের দিকেই তাকিয়ে আছে।
অবাক-বিস্ময়ভরা একজোড়া চোখে সে সাদিদকেই দেখে যাচ্ছে।
কিন্তু সে যে চোখ খোলছে না। কখন খুলবে? নীলা যে তাকে হাতেনাতে ধরতে চায়।
কেন তার চোখে এই অশ্রুজল? নীলা সেটা জানতে চায়।
কোনো অধিকার না থাকা সত্বেও, নীলা অধিকার খাটিয়ে এই সত্যতা যাচাই করতে চায়।
নীলাকে সম্পূর্ণ নিরাশ করে দিয়ে সাদিদ চোখজোড়া লুকিয়ে উঠে দাড়াল।
শুধু পিছনে ফিরে কন্ঠস্বর চেপে রেখে বলে গেল,

—- ” ভাইয়া ইম্পরট্যান্ট একটা কল এট্যান্ড করতে হবে। তাই রুমে যাচ্ছি, তোমরা থাক। ”

সাদিদ আর একমুহূর্ত অপেক্ষা করল না। সবার দৃষ্টির বাহিরে চলে গেল।
সবাই বিষয়টা স্বাভাবিকভাবে নিয়েই আবারও নিজেদের আলোচনায় বসে গেল।
কিন্তু নীলা পারছে না। সে এখনও সাদিদের গমনপথের দিকেই তাকিয়ে আছে।
আর বুকে অনুভব করছে চিনচিনে এক সুক্ষ্ম ব্যাথা।
নীলার মন কেন বারবার এটাই বলছে, যে সাদিদ নিজের অব্যক্ত কথাগুলো ছন্দের তালে তার জন্য তুলে দিয়েছে।

কিসের প্রাচীর?
সাদিদ তাকে কোন প্রাচীরকে ভেঙে দেখার কথা বলছে? নীলার কাছে সবকিছু যেন ধোয়াশা মনে হচ্ছে।
সাদিদকে তার কাছে আস্ত এক রহস্যময় মায়াজাল মনে হচ্ছে!

#চলবে…

[ আজকের পর্বের জন্য ব্যবহৃত গান,
গানের নামঃ কে তুমি
কন্ঠশিল্পীঃ তাহসান রহমান খান। ]

[ পাঠকগণ আপনাদের পাঠপ্রতিক্রিয়াগুলো আমাকে জানাবেন। আমি আপনাদের ভালোলাগা-মন্দলাগাগুলো জানতে আগ্রহী। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here