অন্তরালের অনুরাগ ❤ পর্বঃ৭৭

0
6830

গল্পঃ #অন্তরালের_অনুরাগ
লেখনীতেঃ #নাহিদা_নীলা
#পর্বঃ ৭৬ ❤💞❤ (শেষ পর্ব)

সমাপ্তি অংশ____

সাদিদের ফর্সা মুখটা রাগের তুপে হালকা লালচে বর্ণ ধারণ করেছে। সে চোখ ঘুরিয়ে সবকটা দস্যুর মুখ দেখলো। কথায় বলে দুষ্টুদের দুষ্টুমি কখনো শেষ না। সমাপ্তিতে এসেও তারা নিজেদের মাত্রা বাড়িয়ে টিকে থাকতে চায়।

— ‘ কি চাচ্ছিস? এমন বিচ্ছুদের মতো পিছনে লেগেছিস কেন? ‘

তার কথায় উপস্থিত সবকটা দস্যু বাহিনী যেন বেশ মজা পেল। তানবীরতো হাসতে হাসতে অর্ণবের উপর প্রায় ঢলেই পড়ে গেল।

— ‘ দেখেছিস অর্ণব? সাদির আর তর সইছে না। ‘
— ‘ হুম সেটাই তো দেখছি। কিন্তু বন্ধুর আজ তাড়া থাকলেই যে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। বহুত পালাই পালাই করেছো দোস্ত এবার দুইবারের হিসেব মতো সবকিছু সুদে-আসলে উশুল তোলা হবে। ‘
— ‘ তুইও এই মাথামোটার কথার সাথে তাল মিলাচ্ছিস অর্ণব? আর প্রিয়তী তুই? তোর না পিচ্চি একটা মেয়ে আছে সে কোথায়? বাচ্চা মেয়েকে একা রেখে এসে ওদের সাথে ফাইজলামিতে লেগেছিস! ‘
— ‘ এসব বলে পার পাবি না । জলদি হিসেব মিটমাট কর। ‘
— ‘ আজব তো। কিসের হিসাব? এখানে কি কোনো অংক পরীক্ষা হচ্ছে নাকি! ‘

তানবীর এবার কাছে আসলো। সাদিদের কাঁধ জড়িয়ে ধরে কিছুটা নিচু স্বরে বলে উঠল,

— ‘ সেটাতো টাকাটা দেওয়ার পরই বুঝতে পারবি। অংকসহ, রসায়ন এবং জীববিজ্ঞানের পরীক্ষাও হয়ে যেতে পারে। ‘
— ‘ মানে? ‘

সাদিদ কপাল কুঁচকে তানবীরের দিকে তাকালো। অধৈর্য্য তানবীর এবার বেশ হাঁফিয়ে উঠেছে যেন। ধুম করে সাদিদের পিঠে কিল বসিয়ে দিলো।

— ‘ ধুর শালা। সময়ে অসময়ে খালি মানে মানে করিস! তুই কি হাদারাম নাকি? বাসরের জন্য চাঁদা চাচ্ছি তাহলে চাঁদা আদায়ের কাজ করে তবেই তো চাচ্ছি। ‘

অতঃপর আবারও কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বললল,

— ‘ গরীবের রিজিক নষ্ট করা গোনাহ্। এতো কষ্ট, এতো টাকাপয়সা খরচ করছি এগুলো দিবি না? ‘

সাদিদ কয়েক মুহূর্ত স্থির তাকিয়ে রইল। হয়তো বা বিষয়টা মাথায় ঢুকিয়ে নিতে সময় নিচ্ছে। আর সবকিছুর সাথে যে দুষ্টুগুলো বাসর নিয়েও মাতামাতি করবে এটা সে হয়তো আশা করেনি। সে দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে হাসি আটকালো। আজ শুধু বন্ধুগুলো এখানে থাকলে হয়তো ইজ্জতের ফালুদা করে নিতো। কিন্তু এখানে শান্তসহ তার আরও কিছু কাজিনপার্টি রয়েছে। তাই কিছুটা রয়েসয়েই বলল,

— ‘ কিসের টাকাপয়সা! আমার কিন্তু এখন একটা মেয়েও আছে। সো এসব হবে না। রাস্তা ছাড়। ‘
— ‘ ওমা তাই? তাহলে তুমি বুঝি আজ সন্ন্যাসী সেজে থাকবে! বুঝলি তানবীর আজকে আমাদের সাদি সন্ন্যাস ধারণ করবে। কারণ হচ্ছে সে এখন এক বাচ্চার বাবা। ‘
— ‘ হুম আমিও তো এইডাই দেখবার পারতাসি। ‘

তাদের কথা বলার অঙ্গি-ভঙ্গি দেখে হাসি আটকাতে গিয়ে সাদিদের পেট বোধহয় ফেটে যাবার অবস্থা। সে হাসিমুখেই ওয়ালেট হাতে নিলো। কার্ডটাই তাদের হাতে ধরিয়ে দিলো।

— ‘ নে, যত পারিস খরচ কর। ‘

মুহূর্তেই দুষ্টুগুলোর মুখে বিজয়ের উল্লাস দেখা গেল। সাদিদও তাদের কান্ডে মুচকি হাসলো। কে বলবে এগুলো এখন বড়দের কাতারে পরে? কাজকর্ম সব ছোটদের!
সাদিদ রুমের দরজাটা খুলে সত্যিই ভীষণ অবাক হলো। দুষ্টুগুলো আসলেই বহুত খেটেছে। তাদের পুরো রুমটা লাল গোলাপ, রজনীগন্ধা আর জেসমিনের সুভাসের ক্যান্ডেল দিয়ে চমৎকারভাবে সুসজ্জিত। দ্বিতীয় দফায় বাসর নিয়ে সাদিদ সত্যিই এতোটা আশা করেনি। রুমের এমন সাজ দেখেই যেন শরীরে শীতল একটা বাতাস বয়ে গেল। আর তারই মধ্যে মাত্রা বাড়াতে যোগ হলো প্রিয়তমার লাবণ্যময়ী স্নিগ্ধতা।
নীলাও এতক্ষণে ফ্রেশ হয়ে নিয়েছে। বিয়ের ভারী শাড়ি ছেড়ে শরীরে একটা লাল জামদানী জড়িয়েছে। পাতলা শাড়িতে মেদহীন কোমড়টা পুরোটাই দৃশ্যমান। চুলগুলো খোপা করে তাতে ফ্রেশ বেলি ফুলের গাজরা লাগানো। হাতে হালকা দুটো হিরের চুড়ি। গলায়, কানেও হিরের একেবারে হালকা অলংকার পরেছে।
সাদিদের এতো দেখেও যেন আশ মিটছে না। যেই রমণীর শরীরের প্রতিটা ভাঁজ, প্রতিটি সুক্ষ্ম তিল সাদিদের মুখস্থ তারই শরীরের নেশা যেন সাদিদ কখনোই ছাড়তে পারে না। বারবার এই নেশায় মাতাল হয়। কিন্তু যাকে দেখে সাদিদের শরীরে রীতিমতো ঘাম ছুটে যাচ্ছে সে এখন রুমজুড়ে পায়চারি করছে।

— ‘ কি হয়েছে পাখি? এমন অস্থির কেন? ‘

ট্যানশনের কারণে সাদিদ যে রুমে এসেছে এটা নীলার খেয়ালেই ছিল না। সে দ্রুত সাদিদের কাছে এগিয়ে গেল। অস্থির কন্ঠেই বলে উঠল,

— ‘ দেখেন না সবাই মিলে কি কান্ডটাই না করছে। মেয়েটাকে কোনোভাবেই নিজের কাছে রাখতে পারলাম না। জোর করে নিয়ে গিয়েছে। সে আমাদের ছেড়ে কখনও একা থেকেছে? আমি কতো করে বললাম মেয়ে কাঁদবে তারপরও তারা নিয়ে গেল। ‘

সাদিদ বুঝতে পারলো সম্পূর্ণ ঘটনাটা। কি কারণে পিচ্চিটাকে ওদের কাছে রাখতে চাচ্ছে এটা বুঝবে না এতোটা বোকা সাদিদ নয়। কিন্তু তারপরও মেয়ে ছাড়া সাদিদ নিজেই যে অস্থির হয়ে যাবে।

— ‘ প্লিজ আপনি একটু দেখেন না। ‘

নীলার গলা লেগে আসছে। সাদিদ মৃদু হেসে ফেলল। তার পিচ্চি প্রাণপাখিটা যে এখন মা। আর মায়ের দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করতে সে সর্বদা প্রস্তুত। সাদিদ হাসিমুখেই নীলাকে কাছে টানলো। দুইহাত কানের পিছনে লাগিয়ে নীলার কপালে কপাল ঠেকালো।

— ‘ জীবনটা বড্ড সুন্দর পাখি। বড্ড বেশি সুন্দর। ‘

সাদিদ হঠাৎ এমন কেন বললো সেটা নীলা বুঝে উঠতে পারলো না। আর না পারলো বাক্যের অর্থোদ্বার করতে। সাদিদ সেই সময়টুকু দিলো না। আলতো করে নীলার কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। একটা দুটো করে পানপাতার ন্যায় মুখটাতে অগণিত চুমু খেল। সাদিদের স্পর্শে নীলা বরাবরই খেই হারিয়ে ফেলে৷ এবারও তাই হলো। শরীরটা মুহূর্তেই যেন ছেড়ে দিলো। সাদিদ নীলার ভার শূন্য শরীরটাকে দুইহাতের বাহুবন্ধনে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে পুরুষালী রুক্ষ ঠোঁটযুগল কোমল মেয়েলী অধরযুগলে মিলিয়ে নিলো।
স্বামীর লাগামহীন উষ্ণ ভালোবাসায় নীলার শরীরে মুহূর্তেই কাঁপন ধরল। ধারালো নখগুলো সাদিদের শুভ্র পাঞ্জাবির উপরই চেপে বসলো। মৃদু ব্যথায় ভালোবাসার গভীরতা যেন আরও বৃদ্ধি পেল। ভালোবাসায় হিংস্র হতে মুহূর্তেই নিয়ন্ত্রণহীন শরীরটা মনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলো। কিন্তু সাদিদ তারপরও কি মনে করে থেমে গেল। এতক্ষণের আদরে প্রিয়তমার ঠোঁটজোড়া টকটকে লালচে বর্ণে পরিণত হয়েছে। যেন একটু টুকা দিলেই গলগলিয়ে রক্ত বেড়িয়ে আসবে। সাদিদ ঠোঁট কামড়ে হাসল। অতঃপর আরেকবার টকটকে ঠোঁটজোড়া নিজের মধ্যে নিয়ে নিলো। আলতো করে কয়েকবার ভীষণ আদুরেভাবে ভালোবাসা দিলো।
অতঃপর ধীরে ধীরে নীলার থেকে সরে আসলো। নীলার গালে হাত বুলিয়ে বলল,

— ‘ মেয়েকে নিয়ে আসছি। ‘

সাদিদ আর নীলার প্রতিউত্তরের অপেক্ষা না করেই দরজা খুলে বেড়িয়ে পড়ল। নীলা এখনও ফাঁকা দরজাটার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। কাঁপা শরীরটা নিয়ে সে ফুলে সজ্জিত বিছানায় এসে বসলো। বিছানায় নজর পরতেই অপরাধী মনটা পুনরায় ছিন্নবিচ্ছিন্ন হলো। মলিন কন্ঠে আপনমনেই বলে উঠল,

— ‘ আমি কি উনাকে অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও কষ্ট দিলাম? ‘

নীলা কাঙ্খিত উত্তর পেল না। কেবল অস্থিরভাবে মনঃক্ষুণ্ন হয়ে ফাঁকা রুমটাতে বসে রইল।

___________

শাদমান বারবার পিচ্চি নীয়ানাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। মেয়েটা যে শাদের বারবার এমন করাতে যথেষ্ট বিরক্ত এটা তার ভাবভঙ্গিতেই বুঝা যাচ্ছে। কিন্তু শাদ সেসব পাত্তা দিতে নারাজ। নিধি অনেকবার বলেছে এমনটা না করতে। বোন কান্না করবে। কিন্তু শাদমান কোনো কথা কানে তুলেনি। আরেকবার নরম হাতগুলো নেড়েচেড়ে দেখতেই পিচ্চিটা অভিযোগের ঝুড়ি নিয়ে নিধির দিকে তাকালো। আর তাতেই নিধি গুণধর পুত্রকে মৃদুস্বরে ধমক দিলো,

— ‘ কি হচ্ছে শাদ? বোনকে বারবার বিরক্ত করছো কেন? ‘

শাদমান বরাবরের মতোই মায়ের দিকে অসন্তোষ নজরে তাকালো। মাকে আর বুঝানো গেল না। সারাদিন শাদমানের বোন বোন বলে তছবি পড়ে। বোন না বলে নীয়ানা বলে ডাকলেই তো পারে।
কিন্তু সেটা ডাকবে কেন? শাদমানের বোন বলে ডাকতে হবে এটাই যেন নিয়ম।

— ‘ মা, তুমি একবার দেখো তো বউ ব্যথা পেয়েছে কি-না? ‘
— ‘ ব্যথা! কিসের ব্যথা? আর তোমাকে না বললাম ওকে বউ বলে ডাকবে না। ‘
— ‘ ওহ্ মা তুমিও না! এসব বাদ দিয়ে জামাটা একটু উঠিয়ে ভালোভাবে দেখো তো ব্যথা পেয়েছে কি-না। ‘
— ‘ কিসের ব্যথা? আমিতো সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না। ‘
— ‘ বউকে যে আজ শান্ত চাচি মণি শাড়ি পরালো না? এটাই জিজ্ঞেস করছি তাতে ব্যথা পেল কি-না? ‘
— ‘ শাড়ি পরালে ব্যথা পাবে কেন? ‘
— ‘ ওহ্ মা তুমি কি কিছুই বুঝো না? আমি দেখেছি তোমরা শাড়ি পরতে ইয়া বড় বড় পিন লাগাও। আমার বউতো পিচ্চি। যদি এসব পিন লেগে ব্যথা পেয়ে থাকে তাহলে তো ঔষধ লাগাতে হবে। চাচি মণি কিন্তু এটা ঠিক করেনি। মানলাম বউটাকে অনেক সুন্দর লাগছিল তাই বলে শাড়ি পরানোর কি দরকার ছিল? এখন যদি পিন লেগে কোথাও কেটেকুটে গিয়ে থাকে তাহলে কষ্ট কার হবে? আর যদি বেশি ব্যথায় জ্বর চলে এসে অসুস্থ হয়ে যায়! তখন? মা আমার তো এসব ভাবতেই ভয় হচ্ছে। একটু জলদি দেখো না ব্যথা-ট্যথা পেয়েছে কি-না? ‘

শাদমানের বোধহয় গলা শুকিয়ে এসেছে। সে কথা শেষ করে ঢকঢক করে গ্লাসে পানি ঢেলে পানি খেল।
নিধি আর বলবে কি সে একপ্রকার তব্দা হয়ে বসে রয়েছে। নীয়ানা জন্মের পর থেকেই শাদের এসব পাগলামি নিধিসহ পরিবারের সকলেই দেখে এসেছে। কিন্তু নিধি কখনো এসবে মাথা ঘামায়নি। কেননা তাদের বয়স অনুযায়ী বিষয়টা একেবারেই পাত্তা দেওয়ার মতো নয়। কিন্তু শাদের নীয়ানার প্রতি এহেন আচরণ নিধিকে এবার সত্যিই বিষয়টা ভাবতে বাধ্য করছে। দিনকে দিন যেন পিচ্চি নীয়ানার প্রতি শাদের চিন্তা-ভাবনা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।
আর এদিকে শাদ তার বউকে নিয়ে মায়ের এখনো কোনোরকম দুশ্চিন্তা না দেখে বিরক্ত। সে চোখ-মুখ কুঁচকে নিজেই আবার পিচ্চি নীয়ানার তদারকিতে লাগলো।
শাদ যখন নীয়ানাকে নিয়ে ব্যস্ত তখন অপ্রত্যাশিতভাবে নিধি বলে উঠল,

— ‘ আব্বা, নীয়ানাকে সত্যিই বিয়ে করতে চাস? ‘

শাহেদ সবেমাত্র ওয়াসরুম থেকে বের হয়েছিল। আচমকা নিধির এমন কথায় তার কাশি উঠে গেল। নিধি দৃষ্টি ঘুরিয়ে তার দিকে তাকাতেই শাহেদের অবাক চোখজোড়ার সম্মুখীন হলো। যেন নিধির থেকে এমন একটা কথা সে আশায় করতে পারেনি।
নিধি আপাতত ছেলের বাপের কৌতূহলকে আমলে নিলো না। কাঙ্খিত উত্তরের অপেক্ষায় পুনরায় শাদের দিকে তাকালো।
আর শাদ এখনো ফ্যালফ্যাল করে নিধির মুখের দিকেই তাকিয়ে রয়েছে। আর আপনমনেই হয়তো ভাবছে আজ সূর্য কোনদিক দিয়ে উঠেছে?
ছেলের এমন মুখখানা দেখে নিধির বেশ হাসি পেল। সে কপালের উপর পড়ে থাকা শাদের সিল্কি চুলগুলো আলতো হাতে সরিয়ে দিয়ে বলে উঠল,

— ‘ কি হলো আব্বা, বললি না যে? করবি বিয়ে? ‘

শাদ এবার মায়ের হাসিমুখটা দেখে স্বাভাবিক হয়ে আসলো। নিজেও ছোট দাঁতগুলো বের করে হেসে দিলো।

— ‘ হ্যাঁ করবো তো। তোমরা করতে দিবে এখন? দিলে আমি এখনই বউকে বিয়ে করে ফেলব। ‘

নিধি এবার শব্দ করেই হেসে ফেলল। আর শাদেহ এবং পিচ্চি নীয়ানা মা-পুত্রের এমন ভয়ানক কথাবার্তা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। পিচ্চিটা একবার নিধিকে দেখে তো একবার শাহেদকে। আবার চোখ ঘুরিয়ে এখনই হয়ে যাওয়া তার বরের দিকেও তাকাচ্ছে। অর্থাৎ এখানে আসলে হচ্ছেটাকি এটাই মূলত বুঝার চেষ্টা।

— ‘ নিধি তুমি ঠিক আছো? ‘

নিধি ছেলের কথায় এখনও হেসে যাচ্ছে। সে মুখে হাসি নিয়েই শাহেদের প্রশ্নের উত্তর দিলো,

— ‘ আমি পুরোপুরি ঠিক আছি। কিন্তু ছেলের কথা শুনেছেন? আপনার ছেলেতো বিয়ে করতে চায়। করাবেন না-কি ছেলেকে এখন বিয়ে? ‘

বলেই নিধি আরেকদফা মুখ চেপে হাসলো। এবার যেন পরিস্থিতিটা বেশ স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। শাহেদ ভেজা তোয়ালেটা চেয়ারের উপর রেখে এগিয়ে আসলো। ছেলেকে পিছন থেকে একহাতে নিজের সাথে আগলে নিয়ে বলে উঠল,

— ‘ কি শুনছি বাবা? বিয়ে না-কি করবি? ‘
— ‘ হ্যাঁ করবো তো। দিবে? ‘
— ‘ আচ্ছা দিব। কিন্তু বিয়ে যে করবি বিয়ে মানে বুঝিস? ‘
— ‘ ইশ! আপনি আবার কি বলছেন এসব? এসব কথা ওর সাথে কি বলা উচিত? ‘
— ‘ এটাই তো দরকারি কথা। তো বাবা বল তো বিয়ে মানে কি? ‘
— ‘ বিয়ে? ঐ যে আজকে চাচ্চু আর খালামণির হলো। পাঞ্জাবি পরবো আর বউকে শাড়ি পরতে হবে। তারপর হুজুর কবুল বলতে বললে বলে ফেলব। হয়ে যাবে বিয়ে। ‘

শাদমান উত্তর দিয়ে বেশ খুশি। অপরদিকে শাহেদ-নিধি দম্পতিও ছেলের হাসি মুখখানা দেখে হাসছে। বিয়ের পরিপূর্ণ অর্থ না বুঝেই বিয়ে নিয়ে কতটা উৎসাহী!
তাদের আনন্দঘন মুহূর্তের মধ্যেই দরজায় নক পরতে নিধি গিয়ে দরজা খুলে দিলো। সাদিদকে বোধহয় এই মুহূর্তে এখানে একদমই আশা করেনি। তাই মুখে কিছুটা আশ্চর্যের ভাব নিয়েই বলল,

— ‘ সাদিদ, তুমি এখানে? ‘
— ‘ হুম আসতে হলো। প্রিন্সেস কোথায়? ‘
— ‘ এইতো শুইয়ে আছে। ভিতরে আসো। ‘
— ‘ না এখন আর আসব না। মেয়েকে নিতে এসেছি ভাবীমণি। ‘
— ‘ সেটা কেমন কথা? আজকের রাতটা আমাদের সাথেই থাকুক না। ‘
— ‘ মেয়ের মা অস্থির হয়ে আছে৷ ওকে ছাড়া থাকতে পারবে না। আর আমিও হয়তো পারব না। দিয়ে দাও ভাবীমণি। ‘

নিধি কি ভেবে যেন হেসে ফেলল। তারপর নীয়ানাকে কোলে নিয়ে সাদিদের কাছে গেল।
মেয়ে বাবাকে দেখেই একগাল হেসে ফেলল। সাদিদও হাসলো। মেয়েকে নিয়ে নিজেদের রুমের দিকে পা বাড়াতেই ছোট শাদ এসে মায়ের পাশের দাড়ালো এবং একদৃষ্টিতে নীয়ানার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। নিধি একবার ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে সাদিদকে পিছন থেকে ডেকে উঠল।
সাদিদ মেয়েকে নিয়ে পিছনে ঘুরতেই নিধি শাদকে কাছে টেনে আনলো। ছেলেকে আদুরেভাবে জড়িয়ে ধরে সাদিদের দিকে তাকালো। অতঃপর মুখে হাসি নিয়েই সাদিদের দিকে অপ্রত্যাশিত একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো,

— ‘ ছোটবেলার আবদারগুলো কি প্রাপ্তবয়সে এসে পূর্ণতা পাবে? ‘

সাদিদ কয়েক মুহূর্ত স্থির হয়ে নিধির মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। যেন প্রশ্নটা বুঝতে সময় নিলো। অতঃপর কোলে থাকা আদুরে মেয়েটার দিকে তাকালো। চোখজোড়া না চাইতেও তার ছলছল করে উঠল। সাদিদ মেয়ের কপালে স্নেহময় চুমু দিয়ে সামনে দাড়ানো মা-পুত্রের দিকে তাকালো। মুখে কোনো প্রতিউত্তর দিলো না। কেবল পিচ্চি মেয়েটাকে নিজের বুকের সাথে একেবারে আগলে নিয়ে মৃদু হাসলো। শাদ কি বুঝলো সেটা বুঝা গেল না। কিন্তু সে আচমকাই গলা ফাটিয়ে চিল্লিয়ে উঠল,

— ‘ গুড নাইট বউ। এন্ড মিস ইউ সো মাচ। ‘

শাদমান কথা শেষ করেই নীয়ানার দিকে একটা ফ্লায়িং কিস ছুঁড়ে দিলো। ছোট নীয়ানা চোখ বাঁকিয়ে শাদমানের দিকে তাকালো। সাদিদ মেয়ের কান্ডে হেসে ফেলল। নিধিও ছেলের কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো ঠিক করে দিতে দিতে হাসলো।
সাদিদ মেয়েকে নিয়ে নিজেদের রুমের দিকে এগিয়ে গেল। তাদের রুমে আসতেই নীলা বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। এতক্ষণ যাকে মেয়ের চিন্তায় অস্থিরতায় ছটফট করতে দেখেছে, তাকে হঠাৎ এমন কাঁচুমাচু করে দাড়িয়ে অনবরত নখ খুঁটতে দেখে সাদিদের কপাল কুঁচকে এলো। নীলাকে উপর থেকে নিচ ভালো করে একবার পরখ করে নিয়ে বলল,

— ‘ কি হয়েছে পাখি? তোমাকে এমন দেখা যাচ্ছে কেন? ‘
— ‘ আপনি কি আমার উপর রাগ করেছেন? ‘
— ‘ রাগ! রাগ করবো কেন? রাগ করার মতো কি কোনো কারণ রয়েছে? ‘
— ‘ না মানে আসলে.. ঐ যে..
— ‘ এমন আসলে নকলে না করে কি বলতে চাও সেটা বলো। ‘
— ‘ না মানে আমাদের এই রাতটা.. তারা সাজিয়েছিল.. না মানে আমি বললাম মেয়েকে…

সাদিদ বোধহয় নীলার অসম্পূর্ণ কথাগুলোর তাল মেলাতে পারলো। তাইতো সে একটু শব্দ করেই হাসলো। নীলা অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাতেই সাদিদ তাকে কাছে টানলো৷ গালে হাত রেখে একেবারে নরম আদুরে গলায় বলল,

— ‘ জোছনা বিলাস করবে প্রাণপাখি? ‘

ইশ! কি ভাবছিল আর মানুষটা কি উত্তর দিলো। নীলা মাথা নুইয়ে মৃদু হাসল। নীয়ানাকে কোলে নিতে চেয়ে বলল,

— ‘ মেয়েকে ঘুম পারিয়ে আসি? ‘
— ‘ ওহ্ না। আজকে প্রিন্সেসও তার মা-বাবার সাথে জোছনা বিলাসের সঙ্গী হবে। তাই না বাবাই? ‘

পাকা বুড়িটা দন্তহীন মাড়ি বের করে হেসে কুটিকুটি। অতঃপর মেয়েকে সঙ্গে নিয়েই সাদিদ-নীলা দুইজনে বেলকনিতে এসে বসলো৷ তাদের রুমের সাথে লাগোয়া বেলকনিটা বেশ বড়। এখান থেকে অনায়াসে বসে অপূর্ব রুপালী চাঁদের আলোর সৌন্দর্য লাভ করা যায়।
নীলা আসার সময় সঙ্গে করে পাতলা একটা চাদর নিয়ে এসেছিল। বাহিরে বেশ ভালোই মৃদু ঠান্ডা বাতাস বয়ছে৷ কিন্তু সহ্যেসীমার ভেতরে। সাদিদ মেয়েকে ভালোভাবে চাদরে মুড়িয়ে নিয়ে বুকের সাথে চেপে ধরল। আর একহাতে নীলাকে আগলে নিলো। নীলা প্রিয়তম স্বামীর কাঁধে মাথা রাখলো৷ দু’জনের দৃষ্টিই ঐ দূর আকাশে।

— ‘ ভালোবাসি পাখি। ভীষণ বেশি। ‘

নীলা মাথাটা হালকা উঁচিয়ে সাদিদের মুখের দিকে তাকালো। ঠোঁটের কোণে ঈষৎ হাসির রেখা ঝুলিয়ে বলল,

— ‘ আমিও ভালোবাসি। খুব বেশি৷ ‘

সাদিদ প্রিয়তমা স্ত্রীর চুলের ভাঁজে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিতেই নীলা আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো৷ সাদিদ তাকে নিজের সাথে আরও শক্তভাবে আঁকড়ে ধরল। পারে না শুধু তাকে বুকের ভিতরের পিঞ্জিরাতে আবদ্ধ করে নিতে।

— ‘ রঙের মাদুলিতে রঙিন পিচ্চি সেই নীলাঞ্জনা! প্রথম প্রেমে পড়ার ভিন্ন অনুভূতি, কিছু রাগ কিছু অবিমান। বছর ঘুরে পুনরায় মুখোমুখি। লুকায়িত প্রেম, ভালোবাসার প্রকাশ অতঃপর অপ্রত্যাশিতভাবে বিয়ে। তারপর এতগুলো সুখের মুহূর্ত, এতো ভালোবাসা। সবশেষে আমাদের মেয়েটা। আমার জীবনটাকে ভালোবাসায় এমন পরিপূর্ণ করার জন্য কি চাও জান? বলো তো। দেখি পূরণ করার সামর্থ্য আছে কি-না? ‘

সাদিদ উত্তরের অপেক্ষায় নীলার মুখের দিকে তাকালো৷ নীলাও একই দৃষ্টিতে সাদিদের মুখের দিকেই তাকিয়ে আছে। স্মৃতিপটে যেন খেলা করে যাচ্ছে ফেলে আসা সবগুলো সুখ-দুঃখের মুহূর্ত। না চাইতেও নীলার চোখজোড়া ছলছল হয়ে এলো। সাদিদ আলতো করে প্রিয়তমার চোখের কোণটা মুছে দিলো। কপালে সময় নিয়ে প্রগাঢ় চুমু খেল।

— ‘ সুখ হোক কিংবা দুঃখ এই চোখজোড়াতে অশ্রু মানায় না। তোমার না হোক আমার যে কষ্ট হয়। আমার কথা চিন্তা করবে না? ‘

স্বামীর আদরঘন ভালোবাসা পেয়ে নীলা একেবারে তার সাথে মিশে বসে রইল। সাদিদও একহাতে প্রিয়তমা স্ত্রীকে আর আরেকহাতে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে রইল। কতক্ষণ এভাবে কেটে গেল সেটা বুঝা দায়। মেয়েটাও কোনোরকম বিরক্ত না করে মা-বাবার সাথেই চুপ করে মিশে রইল।
অতঃপর নীলা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই বাপ-মে একসঙ্গে তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। নীলা সেসব দিকে পাত্তাই দিলো না। হয়েছে এক নাটকীয়তা!
নীলাকে ভাবলেশহীন দেখে মেয়েটা সাদিদের দিকে ঠোঁট ভেঙে তাকালো।
সাদিদের আর কি? মেয়ের সামনে সবকিছুই যে ফিকে। তাইতো মেয়েকে আদুরেভাবে ইশারায় বুঝিয়ে নীলাকে মৃদুস্বরে ধমকে উঠল,

— ‘ সমস্যা কি পাখি? এমন করছো কেন? ‘
— ‘ কি করছি? ‘

নীলাকে এখনও বেশ স্বাভাবিক বরং অনেকটাই বেশি স্বাভাবিক দেখে সাদিদ পুনরায় মেয়ের মুখের দিকে তাকালো। বিচ্ছুটা এবার কেঁদেই ফেলবে বোধহয়। তার চোখের পাতা বিরামহীনভাবে পিটপিট করছে। সাদিদ যেন মেয়ের এমন অবস্থায় আরও গলে গেল।

— ‘ কি করছো মানে? তুমি আমার মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছ কেন? জানো না আমার প্রিন্সেস এমন করলে ঘুমিয়ে যায়? হাত দূরে সরাও। ‘
— ‘ একেবারে চুপ থাকুন। হয়েছে এক বাপ-বেটি। আধিখ্যেতা দেখে বাঁচি না। ‘
— ‘ আমাদের নিয়ে একদম আজেবাজে বকবে না। আর আমার মেয়ের মাথা থেকে হাত দূরে রাখো। একদম এমন করবে না। ‘

নীলা চোখ বাঁকিয়ে তাদের দিকে তাকালো। মেয়েটা যেন এতক্ষণে ভীষণ খুশি। মেয়ের খুশিতে সাদিদও খুশি। সে এবার মেয়ের ছোট হাতগুলো নেড়েচেড়ে খেলছে।
অপরদিকে বাপ-মেয়ের এমন কান্ডে নীলা হতাশাজনক শ্বাস টানলো।

— ‘ রাত কটা বেজেছে দেখেছেন? ছোট মানুষ এতো রাত পর্যন্ত জেগে থাকলে অসুস্থ হয়ে পরবে। ‘

সাদিদ আড়চোখে নীলার অসহায় মুখের দিকে তাকালো। কথাটা যে পুরোপুরি সত্য এটা অস্বীকার করার মতো নয়। কিন্তু মেয়েটাকে কষ্ট দিতেও যে মন নারাজ। সাদিদ মেয়েকে বুকে নিয়ে মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে বলে উঠল,

— ‘ আম্মা, এখন ঘুমিয়ে গেলে সমস্যা আছে? সকালে উঠে আমরা অনেক খেলা করব। ‘

মেয়েতো বাপের আদরের দুলালী। তাই পুচকিটা মুচকি হেসে ছোট হাতগুলো দিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরতে চাইল আর তৎক্ষনাৎ মিটমিট করে চোখ বুঝলো। সাদিদ মেয়ের কপালে আদুরে চুমু খেয়ে মৃদু হাসলো। অতঃপর নীলার দিকে চোখ পরতেই দেখলো তার ঠোঁটের কোণেও মিষ্টি হাসি।

— ‘ কি? ‘

সাদিদ ভ্রুজোড়া নাচিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো। নীলা এগিয়ে আসলো। সদ্য ঘুমন্ত মেয়েটার মুখে বার কয়েক স্নেহময় চুম্বন আঁকলো। সাদিদের প্রশ্নবিদ্ধ মুখের দিকে তাকিয়ে প্রতিউত্তর জানালো।

— ‘ যখন মেয়েটাকে সাথে নিয়ে আপনার হাসিমুখটা দেখি, তখন নিজেকে একটু হালকা মনে হয়। আপনার অসীম ভালোবাসার সামনে একটুখানি কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে সৃষ্টিকর্তা হয়তো আমাকে মেয়েটাকে জন্ম দেবার সার্মথ্য দিয়েছে। ‘

নীলার চোখজোড়া পুনরায় ভিজে আসতেই সাদিদ তাকে ভীষণ আদুরেভাবে বুকে টানলো। প্রিয়তমার মাথায় চুমু দিয়ে নম্রস্বরে বলে উঠল,

— ‘ এমন করে বলে না সোনা। শুনতে ভালো লাগে না। তোমাকে আমি বলে বুঝাতে পারবো না তুমি আমার কাছে কি? আর আমি সেটা চাইও না। ভালোবাসায় কিছু অব্যক্ত অনুভূতি থাকলে সমস্যা আছে? ‘

নীলা প্রতিউত্তরে মাথা নুইয়ে হাসলো। মেয়েকে আস্তে করে নিজের কোলে নিতে নিতে বলল,

— ‘ শুইয়ে দিই? ‘
— ‘ হুম দাও। ‘

নীলা মেয়েকে নিয়ে বিছানার পাশে তারজন্য বরাদ্দকৃত ছোট দোলনাতে শুইয়ে দিতেই সাদিদ প্রশ্ন করলো,

— ‘ মেয়েকে দোলনাতে কেন? ‘

নীলা সাদিদের মুখোমুখি হতে পারলো না। এমন কথা মুখফুটে কিভাবে বলবে? তাই অপরদিকে ফিরেই মিনমিনে স্বরে বলতে থাকলো,

— ‘ না মানে… বিছানায় অনেক ফুল। ছোট মানুষ ফুলে সমস্যা হতে পারে। তাই আর কি। ‘
— ‘ তাহলে ফুল খুলে নিবো? ‘

নীলা অনবরত হাতের আঙুল কচলাতে লাগলো। সাদিদ কাঙ্খিত উত্তর না পেয়ে তীক্ষ্ণ সুচালো দৃষ্টিতে নীলাকে পরখ করলো।
অতঃপর তার ঠোঁটের কোণে ধীরে ধীরে মৃদু হাসির রেখা ফুটে উঠল। প্রাণপাখিটার লাজুকলতা ভাব এতদিনে এসেও সাদিদের সামনে একটুও কমেনি। সাদিদও তো কম দুষ্টু নয়। তাইতো প্রিয়তমার সঙ্গে মজা নিতে শুরু করলো।

— ‘ তাহলে খোলেই নিচ্ছি৷ শুধু শুধু ফুল রেখে আর কি হবে? কাজের কাজতো কিছু হচ্ছে না। ‘

সাদিদ আড়চোখে নীলার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। তাকে আরেকটু জ্বালাতে পুনরায় বলল,

— ‘ তুমি এখনও এইসব শাড়ি-টাড়ি পরে রয়েছ কেন? আমি ফুলগুলো খুলে নিচ্ছি তুমি গিয়ে চেইঞ্জ করে নাও। নতুবা রাতে ঘুমাতে অসুবিধা হবে। ‘

নীলা আর কি করবে? যেহেতু মুখফুটে জীবনেও বলতে পারবে না তাই সাদিদের কথা শুনাই উত্তম। আর সাদিদের কথাবার্তায় মনে হচ্ছে না সাদিদ কষ্ট পেয়েছে। আর নীলাতো কেবল তাকে নিয়েই চিন্তিত ছিল। যেহেতু সে ঠিকঠাক তাহলে আর সমস্যা কি?
তারপরও নীলার মনের ভিতরের খচখচানিটা যাচ্ছে না। মুখটা হালকা মলিন করেই সে আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ালো। পরিহিত হালকা গহনাগুলো খুলতে লাগলো। গলার সিম্পল গহনাটা খুলতে গেলেই ঘাড়ে সেই খুব পরিচিত স্পর্শটা অনুভব করলো। নীলা হালকা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই সাদিদের সাথে চোখাচোখি হলো।
সাদিদ ঠোঁটের কোণে ঈষৎ হাসির রেখা ঝুলিয়ে নীলার দিকে তাকিয়ে আছে। কয়েক মুহূর্ত নীরবেই চোখে-চোখে কথোপকথন চললো। সাদিদের চোখের দৃষ্টি নীলার সমস্ত শরীরের ভাঁজগুলোতে খেলে যেতেই নীলা লজ্জায় মাথা নুইয়ে নিলো। আর স্পষ্টত হলো বুঝতে পেরেও প্রেমিক পুরুষের এতক্ষণের দুষ্টুমি।
সাদিদ নিজেই নীলার গলার হারটা খুলে দিলো। আলতো করে উন্মুক্ত গলায় তর্জনী আঙুল বুলাতেই নীলা ঘাড় কাত করে শাড়ি খামচে ধরলো। সাদিদ পিছন থেকে নীলার শাড়ি বেধ করে কোমড়ে হাত রাখলো। প্রেমিক পুরুষের দুষ্টু স্পর্শে মুহূর্তেই নীলার শরীরে কাপন শুরু হলো। সাদিদ যেন প্রিয়তমাকে বিরক্ত করে বেশ মজা পেল। তাইতো কোমড়ে চাপ প্রয়োগ করে পিছন থেকে গলায় মুখ গোঁজল। আলতো করে মুখ ঘষতেই খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির আঘাতে নীলা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ল। শরীরের ভার সাদিদের উপর ছেড়ে দিতেই সাদিদ আলতো করে নরম হালকা শরীরটাকে কোলে তুলে নিলো। নীলা সাদিদের গলা জড়িয়ে ধরে ঝাপসা চোখে তার মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। সাদিদের দৃষ্টিও নীলার উপরেই স্থির। ঝাপসা চোখের দৃষ্টি হলেও সাদিদের ঠোঁটের কোণের বাঁকা হাসিটা নীলার নজর এড়ালো না। তাইতো লজ্জায় আরো চুপসে গিয়ে সে সাদিদের বুকের কাছের শুভ্র পাঞ্জাবিটা চেপে ধরল।
সাদিদ তাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ডানহাতে সুইচ টিপে রুমের লাইটগুলো অফ করে দিলো। কেবলমাত্র বারান্দার লাইটগুলো ব্যতিত। আর সেই লাইটের আলো ঘরে এসে নীলার মুখটা আধো আলো-অন্ধকারে স্পষ্টত দৃশ্যমান। সাদিদ আঙুল বুলিয়ে নীলার মুখের উপর থেকে ছোট চুলগুলো সরিয়ে দিলো। অতঃপর এতক্ষণের নীরবতার পর সাদিদ নীলার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে উঠল,

— ‘ এতোদিন পর এসেও সামান্য কথাটা মুখ ফুটে বলতে পারলে না! এতো লজ্জা? ইস’নট ইট স্টেইঞ্জ বউ? ‘

সাদিদ কথাটুকু বলেই মিষ্টি শাস্তি স্বরূপ আলতো করে নীলার কানের লতিতে দাঁত ছুঁয়ে দিলো। নীলাতো প্রথম থেকেই লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছিল এখন অবস্থা যেন আরও কাহিল। সাদিদ নীলার গালে আঙুল দিয়ে স্লাইড করতে লাগলো। দুষ্টু আঙুলগুলো নড়েচড়ে গলা থেকে ক্রমশ নিচের দিকে বক্ষ
বিভাজিকার কাছে গিয়ে পৌঁছাতেই নীলা কাঁপা হাতে সাদিদের হাত চেপে ধরল।

— ‘ এম…ন জ্বালাচ্ছেন কে..ন? ‘

কাঁপা কন্ঠে প্রেয়সির মিষ্টি অভিযোগটা শুনে সাদিদেরও নেশা তীব্র হলো। ঘোর লাগা স্বরে বলল,

— ‘ জ্বালাচ্ছি কোথায়? এখনো তো কিছুই করলাম না। কিছু করার আগেই এই অবস্থা! তাহলে করলে আমার প্রাণপাখিটার কি হবে শুনি? ‘

নীলা বরাবরের মতোই লজ্জা পেয়ে মাথা নুইয়ে নিলো। সাদিদ লজ্জাবতী লাজুকলতার লাল টকটকে গালগুলোতে চুমু খেল। নীলার গালে, নাকে, কপালে ছোট পানপাতার ন্যায় পুরো মুখটাতেই ছোট ছোট চুমু খেয়ে নেশা জড়ানো পুরুষালী ঘন স্বরেই বলল,

— ‘ তাহলে কিছু করেই দেখা যাক। তখন উত্তরটাও ঠিকঠাক পাওয়া যাবে। কি বলো সোনা? ‘

কথার সারমর্ম বুঝতে পেরে নীলা লালচে মুখটা লজ্জায় অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলো। সাদিদ একপলক তার অবস্থা দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসলো। অতঃপর পাঞ্জাবির উপরের বোতামগুলো খুলে মাথা গলিয়ে পাঞ্জাবিটা খুলে নিলো। একটানেই উন্মুক্ত বুকের উপর নীলাকে নিয়ে আসলো। নীলা মিটিমিটি করে দুষ্টু পুরুষটার দিকে তাকালো। সাদিদ নীলার খোপা থেকে গাজরাটা খুলে দিলো। অতঃপর প্রিয়তমার দীঘল কালো রেশমি চুলগুলো সম্পূর্ণই খোলে দিয়ে চুলে নাক ডুবালো। নাক টেনে টেনে চুলের মনমাতানো ঘ্রাণ নিয়ে নীলার কপালের সাথে কপাল লাগিয়ে হালকা করে ঠোঁটে ঠোঁট স্পর্শ করলো। বারকয়েক ছোট ছোট চুমু খেয়ে একসময় প্রিয়তমার কোমল পেলব অধরযুগলে ডুব দিলো।
ভালোবাসায় হিংস্র হতে খুব বেশি সময় লাগলো না। পুরুষালী রুক্ষ হাতগুলো তখন কোমল নারী শরীরটাকে দলিত মথিত করতে উঠেপড়ে লেগেছে। নারী শরীরে পুরুষের হাত মানেই সেই নারী নিয়ন্ত্রণহীন। আর সেখানে যদি কাঙ্খিত পুরুষটির আদুরে স্পর্শ থেকে থাকে তাহলে যে সেই নারীর শরীরে কোনো জোরই থাকে না। নীলার শরীরও প্রিয়তমের আদর-উত্তেজনায় মিশ্রিত সেই স্পর্শে ততক্ষণে পুরোপুরি ছেড়ে দিয়েছে।
অতঃপর প্রেমিক পুরুষের লাগামহীন আদরে প্রেয়সীর বুকের শাড়ির আঁচলটা কবেই নিদিষ্ট জায়গা থেকে সরে গিয়েছে। উন্মুক্ত হয়েছে চোখ ধাঁধানো বুক, মসৃণ পেট, পিঠ, মেদহীন পাতলা কোমর।
প্রেমের গভীরতায় দুটি মনের মিলন অবশ্যই দরকার। আর সেখানে যদি বহুদিনের তৃষার্ত দুটি দেহেরও মিলন ঘটে তাহলে তো কোনো কথায় নেই। প্রেম-মন-দেহ এই তিনের সংমিশ্রণে ভালোবাসার সাগর তখন ক্রমশ উত্তাল।

_____________

ফজরের আযান কানে আসতেই সাদিদ আলতো করে নীলার উন্মুক্ত পিঠে হাত বুলালো। চোখ বন্ধ রেখেই নরম শরীরটাকে নিজের সাথে শক্ত করে একবার চাপ দিলো। প্রিয়তমার সেই ঘোর লাগানো নেশা যেন এখনও কাটেনি। তারপরও ছাড়তে যে হবেই।

— ‘ পাখি, ঘুমিয়েছ? ‘
— ‘ উহু। ‘

নীলার ঘুম জড়ানো লেগে যাওয়া স্বরটা শুনে সাদিদ নিঃশব্দে হাসলো। প্রিয়তমার মাথায় দীর্ঘ আদুরে চুমু খেয়ে বলল,

— ‘ তোমার চোখে ঘুম দেখা যাচ্ছে। নামাজটা তাহলে পরেই আদায় করে নিও। ‘
— ‘ না। উঠছি তো। ‘

নীলা শরীরে আর অলসতা ভর করতে দিলো না। বিছানা ছেড়ে উঠেই বসলো।
অতঃপর দুইজনেই বিছানা ছেড়ে উঠে গেল। শাওয়ার নিয়ে একেবারে ফ্রেশ হয়ে এসে দুইজনে একসাথেই নামাজে দাড়ালো। নামাজ শেষ করে জায়নামাজ রাখতে গিয়েই নীলা মেয়ের নড়নচড়ন বুঝতে পারলো। পিচ্চিটা ততক্ষণে উঠে গিয়েছে। এটা তার রোজকার অভ্যাস। নামাজের সময়ে তাদের সাথে সাথে পিচ্চি মেয়েটাও জেগে যায়। নীলা মেয়ের কাছে যেতেই ছোট হাতগুলো দিয়ে তাকে চোখ কচলাতে দেখল। মৃদু হেসে আদরের টুকরোটাকে সে কোলে নিলো। পরনের ডায়াপারটা চেইঞ্জ করে নতুন একটা পরিয়ে মেয়ের বাবার কোলে দিলো
— ‘ ধরুন আমি বিছানাটা গুছিয়ে নিচ্ছি। ‘

সাদিদ মেয়েকে কোলে নিয়ে সকালের আদর-টাদরের পর্ব শুরু করলো। নীলা ততক্ষণে বিছানা গুছিয়ে তাদের কাছে আসলো। বাপ-মেয়ের কান্ডে মুখ টিপে হেসে বলল,

— ‘ শুধু বাপের আদর খেয়েই পেট ভরবে? আমার দরকার নেই তাহলে? ‘
— ‘ বুঝলে পাখি, শুধুমাত্র এটার জন্যই আটকে গিয়েছি। নতুবা আমাদের আর তোমার প্রয়োজন হতো না। আমরা একাই একশো। তাই না প্রিন্সেস? ‘

মেয়েটাও তো বাপের প্রিয় শিষ্য। দন্তহীন দাঁতে হেসে বাবার কথায় সায় শানালো। নীলা বুঝে পায় না এইটুখানি একটা মেয়ে এতোসব কিভাবে বুঝে ফেলে?

— ‘ হয়েছে আপনাদের আধিখ্যেতা? শেষ হলে বলেন নতুবা আমি চললাম। ‘
— ‘ আরে কই যাও বউ? তুমি ছাড়া আমরা কিভাবে থাকবো? আমাদের সবকিছুই তো তুমি। নাওয়া-খাওয়া সবকিছুই তোমার উপর নির্ভর করে। তুমি ছাড়া আমরা পুরোপুরিই অচল। তাই না প্রিন্সেস? ‘

মেয়েটা এবারও মুখে হাসি নিয়ে বাবার কথায় সমর্থন জানালো। নীলা একপলক তাদের হাসিমুখের দিকে তাকিয়ে নিজেও ঠোঁট টিপে হাসলো।
এরা দুই বাপ-মেয়ে গিরগিটির থেকেও দ্রুত রং বদলায়। কিন্তু নীলা যে এটাতেই আনন্দ পায়। তাদের এই দুষ্টু-মিষ্টি খুনসুটিগুলো দেখলে নীলার থেকে বেশি খুশি আর কে হয়? কিন্তু সেটা বরাবরই তাদের বাপ-মেয়ের নিকট অপ্রকাশিত থাকে।
নীলা মেয়েকে ফিডিং করাচ্ছে দেখে সাদিদ ততক্ষণে নিচে চলে গেল। কিচেনে কেউ ছিলো না বিধায় সাদিদ নিজেই তাদের দুইজনের জন্য কফি করে নিলো। কফি নিয়ে রুমে আসতেই নীলা বলে উঠল,

— ‘ আমাকে বললেই তো হতো। আপনি শুধু শুধু কষ্ট করতে গেলেন কেনো? ‘

সাদিদ কফির মগ এনে সেন্টার টেবিলের উপর রাখলো। মেয়েটা এখনও মায়ের বুকের সাথেই লেগে রয়েছে। সাদিদ একপলক নীলার ক্লান্ত মুখটার দিকে তাকালো। কাছে এসে মা-মেয়ে দুইজনের কপালেই উষ্ণ স্পর্শ দিলো। নীলার গালে আলতো করে ছুঁয়ে দিয়ে বলল,

— ‘ কষ্ট নয় ভালোবাসা। প্রাণপাখিটার ক্লান্ত মুখটা সহ্য হচ্ছিল না। তাই একটুখানি ভালোবাসা দিয়ে নিজের অন্যায়ের ভাগ কমানোর চেষ্টা করেছি মাত্র। ‘

সাদিদের রসিকতায় নীলা লাজুক হাসলো। অতঃপর হাত বাড়িয়ে সাদিদের কপালে পড়ে থাকা স্লিকি চুলগুলো সরিয়ে দিলো।
মেয়ের ততক্ষণে খাওয়া শেষ। নীলা মুখ মুছিয়ে দিতেই পিচ্চিটা মায়ের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসলো। চোখ ঘুরিয়ে অপরপাশে বাবাকে চোখে পরতেই সে ছোট শরীরটা নাড়িয়ে সাদিদের দিকে যেতে চাইল।
নীলা তীক্ষ্ণ চোখে পিচ্চিটার কান্ড দেখলো। সাদিদও মেয়ের দিকেই তাকিয়ে রয়েছে। অবশেষে পিচ্চিটা বাবার দিকে পুরোপুরি না যেতে পেরে ঠোঁট ভেঙে সাদিদের দিকে তাকালো। সাদিদ মুখে হাসি নিয়ে মেয়েকে একেবারে বুকের উপর তুলে নিলো। পিচ্চিটা এখন হাসছে। নীলা বাপ মেয়ের কান্ড দেখে চোখ পাকালো। ইশ কতো আহ্লাদ! তাকে শুধু দরকারের সময়ই এই বাপ-মেয়ের মনে পরে! নীলা আস্তে করে বিচ্ছুটার পিঠে একটা চাপড় দিলো।

— ‘ পাঁজি মেয়ে একটা। ‘
— ‘ দেখতে হবে না কার মেয়ে? ‘
— ‘ হুম অবশ্যই। সেটা আর বলতে। চেহারা-সুরত সবকিছুই তো বাবারটা পেয়েছে। এখন বাদবাকি স্বভাবটাও পেয়ে নিচ্ছে। ‘

নীলার কথায় বাপ-মেয়ের মধ্যে তেমন কোনো পরিবর্তন পরিলক্ষিত হলো না। দুইজনে দিব্যি নিজেদের নিজস্ব ভাষায় কথোপকথন চালিয়ে যাচ্ছে। সাদিদ আড়চোখে নীলার দিকে তাকালো। প্রিয়তমার মেকি রাগের আড়ালে মুচকি হাসিটা তার নজর এড়ালো না। নরমস্বরে তাকেও কাছে ডাকলো।

— ‘ পাখি, বুকে আসো। ‘

নীলাও কোনোরকম না-বোধক শব্দ উচ্চারণ করলো না। চুপচাপ সাদিদের বুকের বামপাশে মাথা রাখলো। একপাশে কলিজার টুকরো আদরের মেয়ে অপর পাশে প্রাণপ্রিয় স্ত্রী। সাদিদের কাছে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি ব্যক্তি মনে হচ্ছে।
সাদিদ ঝুঁকে এসে দুইজনের মাথায়ই আদর দিলো।

— ‘ ভালোবাসি পাখি। ভীষণ ভালোবাসি। হয়তো সেটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। ‘
— ‘ আমি জানিতো। অনুরাগ প্রকাশ করার জিনিস নয়। আর যদি সেটা অন্তরালের হয়ে থাকে তাহলে যে অসম্ভব। ঠিক বলেছি না? ‘

সাদিদ নীলার কথায় হাসলো। ঝুঁকে এসে আলতো করে নীলার গালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো।

— ‘ হুম ভালোবাসিতো। অন্তরাল থেকেই এই অনুরাগের উপলব্ধি হয়। অন্তরাল থেকেই অনুভব হয়। কেন? তোমার বুঝি হয় না? ‘

সাদিদের এমন কথায় নীলা মুচকি হাসলো। সাদিদের বুকে আরও ভালোভাবে মুখ গোঁজে আলতো করে বলিষ্ঠ বুকে কোমল ঠোঁটযুগল ছুঁয়ে দিলো। যেন নিঃশব্দেই গভীর প্রেমময়ী কর্মে প্রিয়তমের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিলো।
সাদিদের ঠোঁটের কোণটা আরও প্রসারিত হলো। আনন্দে, তৃপ্তিতে সে হাতের বাঁধন আরও জোড়ালো করলো। পারে না শুধু বুকের উপর মাথা রাখা প্রাণপ্রিয় দুইটা মুখকে বক্ষপিঞ্জিরায় ঢুকিয়ে নিতে। এতো এতো ভালোবেসে আগলে রেখেও যেন সাদিদের কাছে সেটা বরাবরই কম মনে হয়। সুখ কিংবা দুঃখে, কাছে কিংবা বহু দূরে এই ভালোবাসা যেন কখনো শেষ হওয়ার নয়। এ ভালোবাসা যেন কোনো নিয়ম, বাধা নিষেধ মানতে নারাজ। এই ভালোবাসা কেবল নিজ মর্জিতে চলতে ইচ্ছুক। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত ভালোবাসাটাকে আদর-সোহাসে আগলে রাখলেও যেন মন তৃপ্তি পাবে না।
এ যেন এক অদ্ভুত ভালোবাসা! সত্যিই তো। অন্তরালের অনুরাগটা কি আসলেই অদ্ভুত নয়?

__________সমাপ্ত__________

[ শেষটা বেদনাদায়ক হলেও নিয়ম হেতু বরাবরের মতোই আমাকে সমাপ্তিটা টানতে হয়েছে। প্রিয় পাঠকমহলের নিকট অনুরোধ, প্লিজ কেউ মন খারাপ করবেন না। ]

[ এই গল্পটা লিখতে গিয়ে নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। অসুস্থতা, ব্যস্ততায় পাঠকমহলকে বড্ড কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। অপেক্ষার দীর্ঘ প্রহর গুনতে হয়েছে। ক্ষমা ব্যতিত আমার আর কিছু চাওয়ার নেই প্রিয়পাঠক। ]

[ প্রিয়দের প্রতি অবিরাম ভালোবাসা এবং বিনম্র শ্রদ্ধা। আপনারা যারা প্রতিটা মুহূর্তে আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়ে গিয়েছেন, তাদের কাছে আমি বরাবরই কৃতজ্ঞ।
এতদিন যারা নিয়মিত গল্পের মন্তব্য জানিয়েছেন, তাদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। হয়তো নাম বলে শেষ করতে পারব না। কিন্তু আপনাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।]

[ এতদিন যারা নীরব পাঠক ছিলেন তাদের কাছেও অনুরোধ রইল,
আজকে আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যগুলো আমাকে জানাবেন।
আপনাদের পাঠপ্রতিক্রিয়াগুলো আমি জানতে চাই। আপনাদের ভালোলাগা-মন্দলাগা সবটুকুই আমি জানতে আগ্রহী। ]

[ সবশেষে এতোগুলো দিন পাশে থাকার জন্য, ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করার জন্য এবং আমাকে সাপোর্ট করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনাদের সবার মঙ্গল কামনা করছি। ভালো থাকবেন সবাই। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here