অন্তরালের অনুরাগ ❤ পর্বঃ২৫

0
6119

গল্পঃ #অন্তরালের_অনুরাগ
লেখনীতেঃ #নাহিদা_নীলা
#পর্বঃ ২৫ ♥🌹♥

শুক্রবার মানেই আলাদা একটা ব্যাপার। সাপ্তাহিক এই দিনটি যেন ব্যস্ততায় ঘিরে থাকা জনমানবের জন্য আলাদা একটি স্বস্তি। আলাদা একটা উৎসবমুখর আমেজ। সাদিদ-নীলা পরিবারের জন্যও এর কোনো ব্যাতিক্রম নেই। বরং আজকের শুক্রবারটি যেন তাদের জন্য দ্বিগুণ আনন্দের ঢেউ তোলবার সমান। কেননা আজকে যে সাদিদ-নীলার এনগেজমেন্টের দিন। দুই পরিবারের কাছে-ই বিয়েটা পরিষ্কার হলেও তাদের আনন্দে পালনে যেন বিন্দুমাত্র কমতি নেই। বরং সবাই জোর আয়োজনে নতুন বউ বরণের প্রস্তুতিতে লেগে রয়েছে।
নীলাকে বসে থাকতে দেখে নিধি এবার তাড়া দিলো।

— ‘ কিরে হয়েছে তোর? সবকিছু নিয়ে নিয়েছিস তো? আমাদের হাতে কিন্তু সময় থাকবে না। ‘
— ‘ হ্যাঁ এইতো শেষ। ‘

নীলা আবারও এনগেজমেন্টের ড্রেসটার উপর হাত বুলিয়ে নিলো। সাদিদ নিজে পছন্দ করে তার জন্য নিধির হাতে এটা পাঠিয়েছে। কতটুকু ভালোবাসা মিশে আছে নীলা সেটা অনুভব করতে পারে। নীলাকে তারপরও ধ্যানে থাকতে দেখে শান্ত দুষ্টু হেসে বলল,

— ‘ হেরে, তুই এতো জামাই পাগল কবে থেকে হলি রে নীল? জিজুকে ছাড়া তো দেখছি কিছু চিন্তা-ই করতে পাড়ছিস না। আমাদেরকেও একটু দেখ। ‘

নীলা মাথা নিচু করে লাজুক হেসে শান্তকে আস্তে করে চড় বসাল। নিধিও পাশ থেকে নিঃশব্দে হাসছে। প্রকাশ না করলেও বোনকে স্বামীর সাথে এতটা খুশি দেখে তার ভিতরাটাও শীতল হচ্ছে।
নীলা-নিধিরা মা-বাবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসল।

গুলশানের নিকেতনে এসে নীলাদের গাড়ি থামল। সাদিদ আগেই নীলাসহ বাড়ির সব মেয়েদের জন্য জাহিদ খান ব্রাইডাল মেকওভারের থেকে এপয়েনমেন্ট নিয়ে নিয়েছে।
কিন্তু নীলার মেকআপ করতে গিয়ে হলো আরেক বিপত্তি। নীলা বুঝে পায় না তার বরটা কি আসলেই পাগল-টাগল হয়ে গেল নাকি! নতুবা এমন একটা জায়গায় এনে কেউ এমন কথা বলে?
কেননা সাদিদ নিজে পারসোনালি নীলার জন্য মেকআপের সীমানা তৈরি করে দিয়েছে।
তার বানানো রুলসগুলো হচ্ছে, বেশি মেকআপের প্রয়োজন নেই। কোনোভাবেই যেন আর্টিফিশিয়াল কিছু ব্যবহার করে নীলার ন্যাচারালিটি নষ্ট না করা হয়। খুব সামান্য এবং সিম্পল একটা মেকওভার লুক যেন তাকে দেওয়া হয়।
আশেপাশের সবার সাদিদকে জড়িয়ে নীলার প্রতি এতটা ভালোবাসার কথা শুনে তার লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। নিধি শান্তও পাশ থেকে অনবরত ঠোঁট টিপে হাসছে।
অবশেষে সাদিদের বলা কথা অনুযায়ী নীলাকে খুব সিম্পল একটা মেকওভার দেওয়া হয়েছে। তার ড্রেসের সাথে মিলিয়ে হালকা আই মেকাপ। ড্রেসটা বেশ গর্জিয়াস। তাই আউটফিটের সাথে যেন ম্যাচ করে তাই ঠোঁটে মেরুন শেডের লিপস্টিক। মুখে আর কোনো সাজ নেই। চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে নিচের অংশে হালকা বাউন্সি করে দেওয়া হয়েছে। ব্যাস নীলার সাজ কমপ্লিট। এনগেজমেন্ট তার হলেও সাদিদের জন্য সবার আগে তার-ই সাজ কমপ্লিট হয়ে গিয়েছে। নীলা অবশ্য এতে বেশ খুশি। কেননা তার কোনো কালেই এসব ভারি সাজসজ্জা পছন্দ নয়। সাদিদ যখন বলল এনগেজমেন্টের জন্য সে নীলাসহ তাদের সবার এপয়েনমেন্ট এখানে ফিক্সড করেছে, তখন নীলা ভেবেছিল তাকেও বেশ ভারি একটা সাজ দিতে হবে। কিন্তু না, এমন কিছুই হলো না।
দুটি মানুষ ভিন্ন হয়েও যেন তারা একি সত্তা। এসব ভাবতেই নীলার ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি ফুটে উঠল। সে আবারও আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকালো। তার এই মুহূর্তে সাদিদের রিয়েকশনের কথা চিন্তা করেই খুব লজ্জা লাগছে। সাদিদ কি করবে? নীলাকে এমনরূপে দেখে তার কতটুকু ভালো লাগবে? নীলা মাথা নিচু করে লাজুক হাসছে।
তার ভাবনায় ছেদ ঘটে প্রিয়তীর ভয়ংকর কথা শুনে,

— ‘ একটু কম মনে হচ্ছে। আরেকটু গাঢ় করুন। আমার ড্রেসের সাথে যাচ্ছে না। ‘

নীলাসহ বাদবাকি সবাই প্রিয়তীর দিকে নজর দিলো। সাজের উপরের যদি কোনোটা থাকে প্রিয়তী তাহলে সেটাই করিয়েছে। তারপরও নাকি এই মেয়ের জন্য এটা কম মনে হচ্ছে!
মেকআপ আর্টিস্টও প্রিয়তীর দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে রয়েছে। তার কাজের এক্সপেরিয়েন্স বলছে এখন-ই বেশি হয়েছে। আর কিছু ব্যবহার করলে পুরো জঘন্য হবে। কিন্তু প্রিয়তীর চোখে সেটা পড়ছে না।

— ‘ প্রিয়তী, আর লাগায় না বোন। তোমাকে এমনিতেই খুব ভালো লাগছে। ‘
— ‘ ভাবী একটু কম…
— ‘ আরে দিদিভাই আর একটুও লাগবে না। নতুবা অর্ণব ভাইয়া কিন্তু আজ হার্ট অ্যাটাক করে ফেলতে পারে। ‘

শান্তর কথায় প্রিয়তী লজ্জা পেল। আর তাতে কাজও হলো। অনিচ্ছা সত্ত্বেও সে আপাতত সাজ নিয়ে সন্তুষ্ট। নিধি-শান্তরও মেকাপ কমপ্লিট। তাই সকলেই এবার পদ্মলয়ার উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পড়ল।
কেননা সাদিদ-নীলার এনগেজমেন্টের সকল আয়োজন পদ্মলয়াতেই করা হয়েছে।

.

সাদিদ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গলার টাইটা ঠিক করছে। তার দুইপাশেই তানবীর-অর্ণব ক্রমাগত ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে যাচ্ছে। সাদিদ ঘড়ি পড়তে পড়তে এবার বলেই ফেলল,

— ‘ হোয়াটস ইউর প্রবলেম গাইস? ‘
— ‘ কোথায় প্রবলেম? আমরা তো দিব্বি আছি। ‘

বলেই দুই বান্দর আবারও হেসে হাই ফাইভ করল। সাদিদ আর কিছু বলল না। এনগেজমেন্ট পার্টির জন্য তৈরি হতে লাগল। তানবীর আর অর্ণব এবার তার পাশে এসে দাঁড়ালো। দুইজনে-ই একহাতে সাদিদের কাঁধ জড়িয়ে ধরল। সাদিদের তো অবস্থা খারাপ। মোটামোটি তাকে শক্ত করেই চেপে ধরা হয়েছে।

— ‘ এই, কি করছিস তোরা? শ্বাস আটকে যাচ্ছে তো। ‘
— ‘ ওহ্ এখন আমরা কাছে ঘেঁষলেই সমস্যা! নীলা যখন ধরে তখনতো তুমি বেশ খুশি-খুশি থাক। ‘
— ‘ ফাস্ট অফ অল নীলাঞ্জনা কখনও তোদের মতো ধরে না৷ আর দ্বিতীয়ত তার ধরা আর তোদের ধরা কি এক? কোথায় তার মোমের মতো নরম হাত, আর কোথায় তোদের কাঠের ন্যায় শক্ত! ‘

অর্ণব সাদিদের কথায় হেসে দিয়ে তার পেটে ঘুষি দিলো। সাদিদও পেট ধরে হাসছে।

— ‘ হারামি, মেরে ফেলবি নাকি? ‘
— ‘ শুধু তোকে না। তোদের দুইটা কেই মেরে ফেলা ধরকার। আমাকে এমন সিঙ্গেল দুনিয়ায় একলা রেখে তোরা দুইটা মিঙ্গেল হয়ে বসে আছিস। একজনতো এখন বিবাহিত ব্যাচেলর। আর অপরজনও দুইদিন পর বিবাহিতদের কাতারে নাম লেখাচ্ছে। ‘
— ‘ তোকে কে মানা করেছে? তুইও নাম লেখিয়ে ফেল। ‘
— ‘ শালা বাদ দে। ঐসব মেয়ে-টেয়ে আমার ভাগ্য নেই। তাছাড়া এসব উটকো মার্কা ঝামেলা আমার চাইও না। আ’ম হেপি উইথ মাই লাইফ। ‘
— ‘ সত্যি-ই? ‘

সাদিদ তানবীরের কাঁধে হাত রেখে কথাটা বলে উঠতেই সে তার দিকে তাকালো। কিন্তু পরমুহূর্তেই তানবীর চোখ সরিয়ে দ্রুত প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বলে উঠল,

— ‘ শালা, সত্য নয়তো আর কি? আমার কি আর তোর মতো ভাগ্য হবে? আমার মতো হতভাগা মানুষ যেখানে একবার-ই বিয়ে করতে পাড়ছি না, সেখানে তুই দুই-দুইবার বিয়ের পিড়িতে বসছিস? হারামি তোর নামে তো রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা উচিত। সিঙ্গেল সমাজের হৃদয় পুড়ানো কি কোনো অংশে রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধের চেয়ে কম? ‘

সাদিদ মৃদু হাসল। আপাতত তানবীরকে আর ঘাটলো না। রেডি হয়ে তাদেরকে নিয়ে গার্ডেন এড়িয়াতে চলে আসলো। অনুষ্ঠানের জন্য সব আয়োজন এখানেই করা হয়েছে। সাদিদকে আসতে দেখে শায়লা রহমান এগিয়ে আসলেন। ছেলের গালে দুইহাত দিয়ে মাথাটা নিচু করে কপালে স্নেহের চুমু দিলেন।

— ‘ আমার বাবাটাকে রাজপুত্র লাগছে। ‘
— ‘ আজকেই প্রথম লাগছে? অন্য সময় বুঝি লাগে না? ‘

শায়লা রহমান আস্তে করে সাদিদের গালে চাপড় দিয়ে হেসে দিলো। সাদিদও মাকে জড়িয়ে নিয়ে হাসছে।
পাশ থেকে শাদমান এসব শুনে দৌড়ে শাহেদের কাছে এগিয়ে গেল।

— ‘ বাবা, মা কোথায়? ‘

শাহেদ ছেলেকে নিচের থেকে কোলে তোলে নিলো।ছেলের গালে আদর দিয়ে বলল,

— ‘ কেন বাবা? কিছু প্রয়োজন তোমার? মা তো একটু বাহিরে গিয়েছে। কি দরকার বাবাকে বলো। ‘
— ‘ মা চুমু দিবে। ‘

শাহেদ বাচ্চার কথা শুনে খানিকটা অবাক হলো। সে জিজ্ঞাসা দৃষ্টি নিয়েই বলল,

— ‘ হঠাৎ এই কথা কেন? ‘
— ‘ আ’ম অলসো লুকিং লাইক এ প্রিন্স। দ্যাটস্ হুয়াই মাম্মা সোড কিস মি। ‘

পাকনা ছেলের কথা কর্ণকোহরে যেতেই শাহেদ আওয়াজ করে হেসে ফেলল। তারপর বুকে জড়িয়ে ছেলের সারা মুখে স্নেহের আদর দিলো। পাশ থেকে সাদিদ আর শায়লা রহমানও হাসতে হাসতে এগিয়ে এলো। সাদিদ ভাইয়ের কোল থেকেই ভাতিজাকে ঝাপটে ধরে চুমু খেল।

— ‘ বাবা, পাপু গাল খেয়ে ফেলছে। ‘

ছোট্ট শাদমানের অবুঝ বিচারে উপস্থিত সবাই আবারও একদফা হাসল। তাদের হাসাহাসির মধ্যেই শাদমান হঠাৎ জোরে চেঁচিয়ে উঠল,

— ‘ মা এসেছে, মা এসেছে। ‘

তার কথায় সবাই পিছনে ফিরল। নিধি-নীলাসহ গুটিকয়েক রমনী গাড়ি থেকে নিচে নেমে দাঁড়িয়েছে। এ যেন একঝাঁক কালো পরীদের মিলনমেলা। কেননা কালো ড্রেসে সবাইকেই ভীষণ সুন্দর দেখাচ্ছে। শায়লা রহমানসহ শাহেদ তাদের দিকে এগিয়ে গেল। শাদমান মাকে পেয়েই মায়ের কোলে ঝাপ দিলো।

— ‘ মাম্মা, ইউ লুক সো বিউটিফুল। ‘

নিধি ছেলের কথায় হাসল। ছেলের কপালে দীর্ঘ চুমু খেয়ে বলল।

— ‘ আমার আব্বুটাকেও ভীষণ হ্যান্ডসাম দেখাচ্ছে। ‘
— ‘ প্রিন্স, প্রিন্স। ‘

ছোট্ট শাদমান সুটের কলার টেনে বড়দের মতো কথাটা বলেছে। নিধি হেসে দিয়ে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নিলো। প্রাণটা যেন এতক্ষণে শীতল হলো তার। বাচ্চাটাকে ছাড়া নিধির কাছে সবকিছুই পানসে মনে হয়। মা-ছেলের আদরঘন মুহূর্ত দেখে শাহেদ এসে পাশে দাঁড়াল। সবাইকে একপলক দেখে নিয়ে নিধির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,

— ‘ শুধু ছেলেকেই আদর করলে হবে? ছেলের বাবাকে কি কম হ্যান্ডসাম লাগছে? আদরতো আমারও পাওনা। ‘

নিধি চোখ বাঁকিয়ে শাহেদের দিকে তাকাতেই শাহেদও ঠোঁট বাঁকিয়ে চুমু দেখাল। নিধি লজ্জা পেয়ে শাহেদের বুকে আস্তে করে কিল বসাল।

— ‘ অসভ্য। ‘

শাহেদ নিধির নিচুস্বরের লাজুক কন্ঠস্বর শুনে হেসে ফেলল।
রমনীদের দেখে আরও কয়েকজনের দৃষ্টিও স্থির হয়ে রয়েছে। তাদের মধ্যে সাদিদও একজন।
সে কেবল নিষ্পলকভাবে সামনের মেয়েটাকে দেখছে। যে কি-না সাদিদের হৃদয়ের খুব কাছের। সাদিদের অস্তিত্বে মিশে যাওয়া এই মেয়েটার প্রেমে যেন সাদিদ বারবার পড়ে। যেমনটা এখনও হচ্ছে। আবারও যেন এই মেয়েটার প্রেমে সে পড়ে গেল।

কে বলে পুরুষ মানুষ কখনও এক নারীতে সন্তুষ্ট হতে পারে না? এমনটা চিন্তা করা একদম ঠিক নয়। কেননা যে পুরুষ মন থেকে কোনো নারীর প্রতি আসক্ত হয় তার চোখে বাকিসব অর্থহীন। হাজারও সৌন্দর্যের মধ্যে তার চোখে কেবল একজনের জন্যই মুগ্ধতা বিরাজ করে। আর যারা ভালোলাগাকে ভালোবাসার নাম দিয়ে চলে তাদের জন্য এগুলো নয়। সত্যিকার অর্থে কাউকে ভালোবাসলে কখনও অন্যদিকে চোখ দেওয়া যায় না। ইনফেক্ট আপনি হাজার চাইলেও অন্যদিকে চোখ ফেরাতে পারবেন না। বারবার সেই নারী-ই কেবল আপনার শয়নেস্বপনে চলে আসবে। তার কাছেই ছুটে যেতে চাইবেন। শুধু একবার নয় বারবার, প্রতিবার।
সাদিদও নিঃসন্দেহে সেই সকল ছুটে যাওয়া পুরুষদের মধ্যেই নিজের জায়গা করে নিয়েছে। নতুবা এতএত রমণীদের মধ্যে সাদিদের চোখ কেবলমাত্র একজনের দিকেই কেন স্থির? কেন সে চেয়েও নিজের দৃষ্টি ফিরাতে পাড়ছে না?

সাদিদ শুকনো ঢুল গিলল। এতক্ষণ মুগ্ধতায় ঘিরে থাকলেও এখন সে ক্রমশ নীলার নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। ভয়ংকর এক নেশা। যে নেশার মায়াজাল থেকে নীলা ব্যতিত আর কেউ সাদিদকে উদ্ধার করতে পারবে না।
সাদিদ পরপর কয়েকটা ঢুক গিলে আবারও নীলাকে উপর থেকে নিচ পরখ করতে লাগল।
নীলার পরনে ব্ল্যাক এন্ড সিলভার কালার কম্বিনেশনর গর্জিয়াস লং স্লিভের একটা লেহেঙ্গা। তাদের এনগেজমেন্ট পার্টির জন্য কালার থিম ব্ল্যাক এন্ড সিলভার করা হয়েছে। সেইজন্য সাদিদ নিজে নীলার জন্য ব্ল্যাক এন্ড সিলভারের মিক্সড কম্বিনেশনের ড্রেস পছন্দ করেছে। যখন সে ড্রেসটা নিয়েছিল কল্পনাতেই ভেবেছিল নীলাকে এতে বেশ সুন্দর মানাবে। তার মিষ্টি বউটাকে আরও মিষ্টি লাগবে।
কিন্তু এখনতো তাকে প্রাণঘাতী মনে হচ্ছে সাদিদের কাছে। ভয়ংকর প্রাণনাশী এক রমনী। যে কি-না সাদিদকে পুরোপুরি জ্বালিয়ে দিচ্ছে।
সাদিদ নিজের লাল চক্ষু নিয়েই নীলার দিকে এগিয়ে গেল। সাদিদকে এগিয়ে আসতে দেখে নীলাও মাথা উঁচু করে তাকালো। কিন্তু একপলক দেখেই সে লজ্জা পেয়ে আবারও মাথা নিচু করল।
ইশশ তার বরটা এতো কিউট কেন? নিজের মনে এসব ভেবে নীলা মাথা নিচু করে ঠোঁট কামড়ে হাসল। তার অবাধ্য মনের ভীষণ ইচ্ছে সাদিদকে প্রাণভরে দেখার। সে নিজের মনের কথা-ই শেষমেষ শুনল। মাথা তোলে সাদিদের দিকে তাকালো।

স্টাইলিস ফ্রুল ব্ল্যাক সুটে সাদিদকে বড্ড হ্যান্ডসাম দেখাচ্ছে। নীলার কাছে তো হ্যান্ডসামের চেয়ে কিউট বেশি মনে হচ্ছে। ফর্সা শরীরের সাথে কালো রঙটা যেন ঝলমল করছে। সাথে পায়ে ব্ল্যাক সু, চোপার্ডের ব্ল্যাক ওয়াচ। গলায় আর কোটের ইনসার্টের সিলভার ছাড়া সাদিদ পুরো ব্ল্যাকে নিজেকে তৈরি করেছে। সাথে যোগ করেছে স্টাইলিস হেয়ার। নিজের সিল্কি চুলগুলোকে জেল দিয়ে পুরো সেট করে রেখেছে।
নীলার চোখে-মুখে মুহূর্তেই একঝাঁক মুগ্ধতা এসে ভিড় করল। সে ভাবতেই পুলকিত হচ্ছে যে এই সুদর্শন যুবকটি তার একান্ত ব্যক্তিগত। তার সবচেয়ে কাছের সত্তা। নীলার এতক্ষণের মুগ্ধতায় সাদিদের নিচু কন্ঠস্বরটা যেন আলোড়ন সৃষ্টি করল।

— ‘ সুন্দর। ভয়ংকর সুন্দর। এককথায় প্রাণনাশী। সাদিদের জন্য ভয়ংকর প্রাণঘাতী রমনী৷ ‘

নীলা লজ্জায় থুতনি একেবারে গলার সাথে মিশিয়ে নিলো। সাদিদের তপ্ত নিঃশ্বাসগুলো-ই বলে দিচ্ছে সাদিদের নেশা ধরেছে। ভয়ংকর নেশা।
পাশ থেকে কাশির আওয়াজে সাদিদ সোজা হয়ে দাঁড়াল। এতক্ষণ দিন-ক্ষণ ভুলে প্রেমে মত্ত ছিল দুইজন। এখন সবার ঠোঁট টিপে হাসা দেখে সাদিদও নীলার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসছে। অপরদিকে নীলার সম্ভব হলে এখান থেকে দৌড়ে পালাতো। ইশশ কি লজ্জা!

এনগেজমেন্টের অনুষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ধাপের জন্য সাদিদ এবার নীলার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। নীলা একপলক তাকিয়ে তার হাতে নিজের হাত রাখল। আর সাথে সাথেই সাদিদ নীলার হাতে শক্ত করে চাপ দিলো। নীলা ঘাড় ঘুরিয়ে অপরদিকে তাকিয়ে লাজুক হাসল।
সাদিদ তাকে নিয়ে সোজা স্টেজে গেল। এতক্ষণে নীলা আশেপাশে খেয়াল করতে পাড়ছে। এককথায় মনোমুগ্ধকর। নীলাকে বলে দিতে হবে না এর পিছনে কার হাত রয়েছে। এতদিনে সে এতটুকু অবশ্যই বুঝে নিতে পেড়েছে। সবকিছুতেই নীলার চোখে সাদিদের পছন্দটা সমানে লাগছে।

অর্কিড আর সাদা গোলাপে সবকিছু ডেকোরেশন করা হয়েছে। কালো আর সিলভার কালার থিমের সাদা আর এই ভিন্ন রঙের অর্কিডগুলো যেন পরিবেশটাকে আরও সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ করছে। আর তার সাথে তো আছেই নানারকম উজ্জ্বল আলোর ব্যবস্থা। সবকিছু মিলিয়ে মুগ্ধতায় নীলার চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে। সে মুগ্ধতায় ভরা দৃষ্টি নিয়ে পাশে থাকা সাদিদের দিকে তাকালো। সাদিদ তার দিকেই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। নীলা কিছু বলতে চেয়েও সাদিদের এই দৃষ্টির সামনে কিছু বলতে পাড়ল না।

একেএকে সবাই স্টেজে চলে আসলো। নিধি সাদিদের দিকে রিং বক্সটা তোলে দিলো। সাদিদ একপলক নীলার দিকে তাকিয়ে তার অনামিকা আঙ্গুলে খুব যত্নে রিংটা পরিয়ে দিলো। সাথে সাথেই চারপাশ থেকে করতালির আওয়াজ কানে আসতে লাগল। নীলা নিজের আঙ্গুলে জায়গা করে নেওয়া আংটিটার দিকে তাকালো। পরমুহূর্তেই লজ্জা ভুলে অশ্রুসিক্ত চোখে সে সাদিদের দিকে তাকালো। সাদিদ মিষ্টি হাসছে।
নীলা এবার ডানহাতটা দিয়ে বামহাতটা বুকে জড়িয়ে ধরল। আর গাল বেয়ে তার গড়িয়ে পড়ছে সুখের অশ্রুজল।
আংটির সৌন্দর্যে নয়, বরং সাদিদের ছোট্ট ছোট্ট বিষয়গুলোতে এতটা খেয়াল দেখেই নীলার চোখে এই অশ্রুজল।
সাদিদ নিজের এবং নীলার নামের প্রথম অক্ষরের ডিজাইনের আধলে নীলার হাতের আংটিটা তৈরি করিয়েছে। নীলা আবারও অশ্রুসিক্ত চোখে নিজের হাতের দিকে তাকালো।
হিরের আংটিটা রাতের খানিকটা অন্ধকার আভায় ঝলঝল করছে। সাথে ঝলঝল করছে এসের মধ্যে এন। মানে সাদিদের এস অক্ষরের মাঝে নীলার এন ডিজাইন করা হয়েছে। আর তাদেরকে এক সুতোয় গেঁথে রেখেছে একটা লাভ শেপের ডিজাইন।

এই ছোট্ট একটা বিষয় নিয়ে নীলাকে ইমোশনাল হতে দেখে সাদিদ হাসল। উপস্থিত সবার সামনেই নীলার গালে সে একহাত রাখল। আর সবকিছু ভুলে প্রিয়তমার কপালে আঁকল ভালোবাসার চুম্বন।
তাদেরকে এই অবস্থায় দেখে বন্ধু-বান্ধবগুলো মুহূর্তেই সিটি বাজাতে শুরু করল। আর বড়রা এবার দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিঃশব্দে হাসছে।
আর এদিকে নীলার অবস্থা সবদিক দিয়েই কাহিল।

— ‘ পিচ্চু এবারতো সাদিদকে রিংটা পরা। বেচারাকে আর কত অপেক্ষা করাবি? ‘
— ‘ হ্যাঁ ভাবীমণি কেবলমাত্র তুমি-ই আমার দুঃখটা বুঝলে। তোমার লজ্জাবতী লাজুকলতা বোনের জন্য আমার হাত ব্যাথা হয়ে গিয়েছে। ‘

নীলা সাদিদের দুষ্টুমিতে নিঃশব্দে হাসল। তারপর তার ডানহাতে আস্তে ধীরে রিংটা পরিয়ে দিলো। নির্লজ্জ সাদিদ নীলার দিকে তাকিয়ে হাতের আংটিতে চুমু খেল। আবারও একবার চারপাশ থেকে যুবসমাজের হাসির রুল পড়ে গেল। আর বরাবরের মতোই লজ্জাবতী নীলা চুপসে গেল।

— ‘ ম্যাম, আপনার হাত দিয়ে রক্ত পড়ছে। ‘

ওয়েটার ছেলেটার বিচলিত কন্ঠস্বর শোনে তানহা বেশ স্বাভাবিকভাবেই নিজের হাতের দিকে তাকালো। এমন একটা ভাব যেন এটা কিছুই না। হাত গড়িয়ে রক্ত পড়ছে অথচ তানহার ব্যাথায় কুঁকড়ে যাবার কোনো নামনিশানা নেই। সে রক্তমাখা হাতেই আরেকটা ডিক্সের গ্লাস তোলে নিলো।
ফ্যামিলি পার্টি, তাই কোনোরকম হার্ড ডিক্সের ব্যবস্থা সাদিদ করতে দেয়নি৷ তাই তানহার হাতে কেবল সর্ফট ডিক্স-ই রয়েছে। সে পুরো গ্লাসটা খালি করে আবারও স্টেজের দিকে তাকালো। যেখানে মুগ্ধতা থাকার কথা সেখানে তানহার চোখগুলো জ্বলছে। মনে হচ্ছে তার চোখে আগুন জ্বলছে। লাল টকটকে চোখজোড়া নিয়ে তানহা একদৃষ্টিতে এই হাসিমাখা কাপলযুগলে পরখ করছে। এ যেন মৃত্যু প্রায় কোনো প্রাণীর দিকে এক শকুনের দৃষ্টি। যে কি-না কেবলমাত্র প্রাণীটির শেষ নিঃশ্বাসের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রাণটা একবার বেড়িয়ে গেলেই যে নিজের তৃপ্তি নিয়ে তার আহার করবে। সম্পূর্ণ রাজভোজের তৃপ্তি।

___________________

সমবয়সীদের চিল্লাচিল্লিতে সাদিদ-নীলাকেও মাস্ক পার্টিতে সামিল হতে হয়েছে। এটা এনগেজমেন্ট পার্টির-ই একটা অংশ হিসেবে সেট করা হয়েছিল। কথা ছিল সাদিদ-নীলা শুধু এনজয় করবে। এখন সবগুলো দুষ্টুর চাপে তাদেরকেও জয়েন করতে হয়েছে। বড়রা আপাতত খাবারের সাইডে বিজি। এমন ইয়াংদের দুষ্টুমির মাঝে নিজেরা থেকে অযথা লজ্জা পাবার মানে হয়?
তাই তারাও নিজেদের অজুহাতে কেটে পড়েছে।
সবার মুখেই ব্ল্যাকের বিভিন্ন ডিজাইনের ফ্যান্সি মাস্ক।
সাদিদ নীলার পিছনে দাঁড়িয়ে তার মুখে মাস্কটা বেঁধে দিলো। তারপর নীলার হালকা এলেমেলো হয়ে যাওয়া চুলগুলো আঙ্গুল দিয়ে ঠিক করতে লাগল। নীলা বরাবরের মতোই মাথা নিচু করে লাজুল হাসছে।

শান্ত মাস্ক লাগিয়ে এক কোণায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। ইতিমধ্যে কাপল ডান্সের এনাউন্সমেন্ট করা হয়েছে। শান্তর নিজেকে এখন বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে। নিজের সিঙ্গেল লাইফকে সে এখন মনে মনে অভিশাপ দিচ্ছে। যা মুখে আসছে তাই অকপটে নিজের মনের জন্য বরাদ্দ করছে।
শান্ত আবারও ডান্স ফ্লোরের দিকে তাকালো। যে যার পার্টনার নিয়ে হাজির। দূর থেকে অর্ণব আর প্রিয়তীর ফিসফিসিয়ে প্রেমআলাপও দেখা যাচ্ছে। শাহেদ-নিধিও রয়েছে। তাদের যে একটা পাকনা ছেলে রয়েছে এই কাপলযুগলকে দেখে সেটা বুঝার উপায় নেই। এখনও সদ্য বিবাহিত দম্পতির ন্যায় প্রেম জমাচ্ছে তারা। শাহেদ বারবার দুষ্টুমি করছে আর নিধি চোখ গরম করে তাকাচ্ছে। আর পরমুহূর্তেই শাহেদের অসভ্য চাহনির সামনে টিকতে না পেরে তার বুকেই মুখ গোঁজছে।
শান্ত এসব দেখে হতাশাজনক একটা নিঃশ্বাস ফেলল। বিরক্তি নিয়ে মুখের মাস্কটা খোলতে গেলেই তার হাতগুলো থেমে গেল।
সবার ড্রেস-ই কালো আর সিলভারের। তাই এমন মাস্ক পরাতে আলাদাভাবে কাউকে চেনা মুশকিল। তারউপর ছেলেদের চেনাতো আরও টাফ। মেয়ে হলে তারপরও ড্রেসের ডিজাইনে আন্দাজ করা যাচ্ছে। যেটা ছেলেদের ক্ষেত্রে বেশ সমস্যা হচ্ছে। শান্তরও একি অবস্থা। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটাকে সে চিনতে পাড়ছে না।
মুখে মাস্ক থাকাতে কেবলমাত্র চোখগুলো-ই দেখা যাচ্ছে। শান্তর মনে হচ্ছে এই চোখের মালিক তার পরিচিত। খুব বেশি-ই পরিচিত।
শান্ত কিছু বলবে তার আগেই সামনের ছেলেটি বিনাবাক্য তার দিকে নিজের হাতটা বাড়িয়ে দিলো। শান্ত চমকিত দৃষ্টিতে একবার সেই ছেলের মুখের দিকে আরেকবার তার এগিয়ে দেওয়া হাতের দিকে তাকাচ্ছে।
শান্তকে ভাবনায় দেখে বাড়িয়ে দেওয়া হাতটি এবার শান্তর ডানহাত চেপে ধরল। এবং খুব অধিকার নিয়ে নিজের সাথে তাকে ডান্স ফ্লোরে হাজির করল।

— ‘ কে আপনি? ‘

কিন্তু না। এবারও কোনো উত্তর আসলো না। শান্ত এতক্ষণ শকে থাকলেও এবার বিরক্ত। বিরক্তি নিয়ে সে চলে যেতে ধরতেই তার গাউনের উপর দিয়ে কোমড়ে শক্ত হাতের ছোঁয়া পেল। শান্ত কেঁপে উঠে মাস্ক পরা ছেলের চোখের দিকে তাকালো। এই স্পর্শটাও শান্তর নিকট পরিচিত। এমনকি সামনে দাঁড়ানো ছেলেটির শরীরের ঘ্রাণও শান্তর নিকট ভীষণ পরিচিত। শান্ত তার সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তির চোখের দিকে তাকিয়ে কাঁপা কন্ঠে বলল,

— ‘ আপনি? ‘

তানবীর এবার নিঃশব্দে মৃদু হাসল। মাস্কের আড়ালে তানবীরের ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসিটা শান্তর চোখ এড়ালো না। অজান্তেই তার ঠোঁটের কোণাতেও দেখা মিলল মিষ্টি হাসি। সামনের মানুষটির সামনে প্রকাশ না করলেও শান্তর মনের কোণায় কোথাও একটু আশার বাসা বেঁধেছিল৷ তার অবাধ্য মন না চাইতেও তানবীরকে এতক্ষণ খোঁজেছে৷ আর এখন নিজের এতটা কাছে দেখে শান্তর খুশিরা যেন বাঁধ ভেঙেছে।
আচমকা কোমড়ে আরও জোরে চাপ অনুভব হতেই শান্ত কেঁপে উঠে তানবীরের কাঁধ জড়িয়ে ধরল।
তানবীরও চোখ বন্ধ করে বড় করে শ্বাস টানল। নিজেকে তার কেমন মাতাল মাতাল লাগছে। শান্তকে এইরূপে দেখে না চাইতেও তার পুরুষ মনটা শান্তকে কাছে চাইছে। নিজের একান্ত কাছে।
নিজের এমন চিন্তায় তানবীর নিজেই বিরক্ত। সে শুরু থেকে শান্তকে খেয়াল করেছে। হাজার চেয়েও নিজেকে তার থেকে দূরে রাখতে পাড়ল না৷ অবশেষে শান্তর কাছে আসতে বাধ্য হলো৷ নিজের অবাধ্য মনকে হাজার বুঝিয়েও লাভ হলো না৷ অবশেষে ধরা তাকে দিতেই হলো।

You’re the light, you’re the night
You’re the color of my blood
You’re the cure, you’re the pain
You’re the only thing I wanna touch
Never knew that it could mean so much, so much

সাদিদ নীলাকে কাছে টেনে তার কোমড় জড়িয়ে নিজের সাথে মিশাল। নীলা মাথা নিচু করতেই সাদিদ থুতনিতে ধরে তার মুখটা উঁচু করে, তাকে ঘুরিয়ে ডান্সের স্টেপ করে নিলো।
অপরদিকে প্রত্যেক কাপলযুগলও নিজেদের একান্ত রোমান্টিক মোমেন্ট কাটাতে ব্যস্ত। তানহাকে একা বসে থাকতে দেখে একজন সুদর্শন যুবক তার দিকে এগিয়ে গেল। ডান্সের জন্য তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই তানহা ক্ষিপ্ত চোখে তাকালো। ছেলেটি দুইকদম পিছিয়ে গেল। মেয়েটা দূর থেকে দেখতে রূপসি হলেও কাছ থেকে ভয়ংকর। তার এই চোখে যেন সবকিছু পুড়িয়ে দেবার নেশা। সে দ্রুত তানহার সামনে থেকে চলে গেল। তানহা তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল।

— ‘ তোকে আমার প্রয়োজন নেই৷ যাকে প্রয়োাজন সে এখন অন্য কারও উষ্ণতা পেতে মগ্ন। ‘

কথাটা মুখে হাসি নিয়ে বলা শুরু করলেও তানহা সেটা শেষ করল পুরোপুরি বিষিয়ে যাওয়া কন্ঠে।

অপরদিকে সাদিদ আবারও নীলাকে নিজের কাছে টানল। নীলা কাপল ডান্সে পারদর্শী না হলেও সাদিদের জন্য একেবারেই অসুবিধা হচ্ছে না৷ মানে সাদিদ তাকে সেটা অনুভব করতেই দিচ্ছে না৷ সে খুব ভালোভাবেই নিজেরটাসহ নীলাকেও সমানে সামলে নিচ্ছে।

You’re the fear, I don’t care
‘Cause I’ve never been so high
Follow me through the dark
Let me take you past our satellites
You can see the world you brought to life, to life

So love me like you do, lo-lo-love me like you do
Love me like you do, lo-lo-love me like you do
Touch me like you do, to-to-touch me like you do
What are you waiting for?

Fading in, fading out
On the edge of paradise
Every inch of your skin, is a Holy Grail I’ve gotta find
Only you can set my heart on fire, on fire

Yeah, I’ll let you set the pace
‘Cause I’m not thinking straight
My head’s spinning around, I can’t see clear no more
Oh, what are you waiting for?

সাদিদ এবার আচমকাই নীলার কোমড়ের একটু উপরে নিজের দুইহাত দিয়ে তাকে উপরে তোলে নিলো। নীলা আচমকা একটু ভয় পেলেও পরমুহূর্তেই সাদিদের গলায় হাত জড়িয়ে ধরল।
সাদিদ তাকে নিয়ে ঘুরতেই সে প্রজাপতির ডানার ন্যায় নিজের দুইহাত প্রসারিত করে দিলো।

Love me like you do, lo-lo-love me like you do
Love me like you do, lo-lo-love me like you do
Touch me like you do, to-to-touch me like you do, oh
What are you, what are you waiting for?
What are you waiting for?

কয়েক মুহূর্ত অতিবাহিত হবার পর সাদিদ তাকে নিজের সাথে মিশিয়ে ধীরে ধীরে নিচে নামাল।
নীলা সাদিদের চোখে চোখ রাখতেই কেঁপে উঠল। অসম্ভব।
সে দ্রুত সরে যেতে চাইলেই সাদিদ তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে নিলো।
ডান্সের সময় উজ্জ্বল আলোগুলো সব নিবিয়ে দেওয়া হয়েছিল। শুধু জ্বলছিল মৃদু আলোর কিছু মাতালকরা আলো। সেই আলোতে খুব একটা খেয়াল না করলে অপরপাশের লোকের কর্মকান্ড স্পষ্ট দেখা যাবে না। সাদিদ সেটা জানে। এবং সে এটার-ই সুযোগটা নিলো। সে নীলাকে হেঁচকা টানে বুকের সাথে মিশালো। লেহেঙ্গার ওড়না বেঁধ করে সাদিদের বলিষ্ঠ হাতের চাপ উন্মুক্ত পেটে অনুভব করতেই নীলা থরথরিয়ে কেঁপে উঠল। ভয়ে তার কলিজা পর্যন্ত কাঁপছে।
সাদিদের চোখে যে নেশা দেখেছে নীলা। আর এই নেশার অর্থও নীলার অজানা নয়। ভয়টা এখানেই। এই নেশাক্ত প্রেমিক না আবার সবার সামনেই উল্টো-পাল্টা কিছু করে বসে!

Oh, I’ll let you set the pace
Oh, ’cause I’m not thinking straight
Though my head’s spinning around, I can’t see clear no more
What are you waiting for?

Love me like you do, lo-lo-love me like you do (Like you do, oh)
Oh, love me like you do
Touch me like you do, to-to-touch me like you do, oh
Oh, what are you waiting for?

Love me like you do, lo-lo-love me like you do (Like you do)
Lo-lo-love me like you do
Touch me like you do, to-to-touch me like you do, oh
What are you, what are you waiting for?

নীলার ভয়টাই অবশেষে সত্যি হলো। সাদিদ এভাবেই নীলাকে ছাড়ল না। নীলা গলার পাশে হাত দিয়ে রাগী চোখে সাদিদের দিকে তাকালো। কিন্তু বেশিক্ষণ রাগ ধরে রাখতে পাড়ল না সাদিদের ঐ নেশাক্ত চোখের সামনে। নীলা মাথা নিচু করেই গলায় হাত বুলাচ্ছে। কয়েক মুহূর্ত আগেই সাদিদ এখানে নিজের প্রেমের বিষ ঢেলেছে। নীলার অবস্থা দেখে সাদিদ এগিয়ে গেল। নীলা লোকচক্ষুর ভয়ে আবারও কিছুটা পিছিয়ে যেতে নিলেই সাদিদ হেঁচকা টানে তাকে বুকে আনলো। একপলক মায়াবিনীর দিকে তাকিয়ে তার গালে হাত রাখল। নীলা ভয়ে অনবরত কাঁপছে। সাদিদ প্রাণপাখির ভয়াতুর মুখশ্রী দেখে নিঃশব্দে ঠোঁট কামড়ে হাসল। কিন্তু নীলাকে ছাড়ল না। এগিয়ে গেল ব্যাথাযুক্ত জায়গায় ভালোবাসার মলম লাগিয়ে দিতে।
নীলার গলাতে নিজের কামড়ের জায়গাটাতে সাদিদ সময় নিয়ে গুটিকয়েক চুমু খেল। তার ভিজে যাওয়া ওষ্ঠের ক্রমাগত শীতলতায় নীলা আবেশে চোখ বন্ধ করল। খামচে ধরল সাদিদের পিঠ।
হঠাৎ অগণিত উজ্জ্বল আলোর সমাগমে দ্রুত সবাই নিজেদের জায়গায় এলো। শুধু সাদিদ-নীলা দম্পতি নয়, অগণিত প্রেমিকযুগলও এই মুহূর্তটার ফায়দা নিজেদের মতো করে তোলে নিয়েছে।
সবার মুখেই মিষ্টি হাসি। শান্তও ঘাড় ফিরিয়ে লাজুক হাসছে। তার কাছে এই মুহূর্তটা স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। তানবীরের এতটা কাছে থাকাতে তার অস্বস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু এমনটা হচ্ছে না। বরং অজানা এক ভালোলাগায় শরীর-মন জুড়িয়ে যাচ্ছে। শান্ত আড়চোখে তানবীরের দিকে তাকালো। তানবীর এতক্ষণ তার দিকেই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। কিন্তু শান্তর সাথে দৃষ্টি মিলিত হতেই দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলো। তানবীরের বাচ্চাদের মতো এমন লুকোচুরি দেখে শান্ত আবারও নিঃশব্দে হাসল।

#চলবে…

[ প্রিয়পাঠক সার্বজনীন দূর্গাপূজার ছুটিতে বাসায় মেহমান রয়েছে। তাই ব্যস্ততায় গল্প দিতে লেইট হয়ে গেল। ]

[ আজকের পর্বের জন্য ব্যবহৃত গান,
Song Name: Love Me Like You Do song by Ellie Goulding
Movie Name: Fifty Shades of Grey ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here