গল্পঃ #অন্তরালের_অনুরাগ
লেখনীতেঃ #নাহিদা_নীলা
#পর্বঃ ২৮
বিয়ের আমেজে জমজমাট পূর্ণ পরিবেশটাতে যেন মুহূর্তেই আঁধার নেমে এলো। ইতিমধ্যে ডক্টরকে আনিয়ে নেওয়া হয়েছে। তিনি এখন রিয়াদকে ড্রেসিং করতে ব্যস্ত। আর অল্পের জন্য সে বেঁচে গিয়েছে। নতুবা নির্ঘাত তাকে হসপিটালাইজড করা লাগত। ইয়াং ছেলে তার উপর সুস্বাস্থ্যের অধিকারী বিধায় এই যাত্রায় বেঁচে গিয়েছে সে। কিন্তু সব ঠিকঠাক থাকলেও পরিস্থিতি ঠিক নেই। কেননা আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তির থেকে বেশি চেঁচামেচি করছে তার মা। রাইমা চৌধুরী পাড়ছে না বিয়ের পরিবেশকে রীতিমতো শোকের পরিবেশ তৈরি করে ফেলতে।
— ‘ এটা কোনো কথা হলো? আমার ছেলেকে এভাবে কেন মারবে সে? ঐ বেয়াদব ছেলেটা কোথায়? ডাক তাকে। ‘
— ‘ মা, প্লিজ তুমি আর চেঁচামেচি করো না। আ’ম ফাইন নাউ। ‘
— ‘ কিসের ফাইন? চেহারা দেখেছিস নিজের? আমার ফর্সা ছেলের মুখটা ঐ অসভ্য ছেলেটা পুরো লাল বানিয়ে দিয়েছে। ‘
রাইমা চৌধুরী বিরামহীনভাবে তানবীরের গালমন্দ করে যাচ্ছে। এতক্ষণে বর-কনের কানেও কথাটা পৌঁছে গিয়েছে। তারা আপাতত ঘটনাস্থলেই উপস্থিত। প্রিয়তী বারবার ভয়ার্ত চোখে অর্ণবের দিকে তাকাচ্ছে। অর্ণবের চোখ-মুখ থমথমে। প্রিয়তী সেটা নিয়েই ভয় পাচ্ছে। যদি অর্ণবও রেগে এখন উল্টো-পাল্টা কিছু করে বসে। তাহলে যে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।
— ‘ এই রিয়াদের বাবা, তুমি এখনও দাঁড়িয়ে আছো কেন? জলদি পুলিশে ইনফর্ম করো। অসভ্য ছেলেটাকে জেলে না দিতে পাড়লে আমার আত্মা শান্তি পাবে না৷ ‘
অর্ণব আর সহ্য করতে পাড়ল না৷ হাতের মুঠি শক্ত করে সামনে এগিয়ে যাওয়া ধরতেই, প্রিয়তী নিজের দুই হাত দিয়ে তার হাত শক্ত করে চেপে ধরল। শব্দহীন মাথা নেড়ে তাকে বাধা দিতে চাইল।
অর্ণব তার মুখের দিকে তাকালো। ভয়াতুর প্রিয়তীর চেহারা তার একেবারেই ভালো লাগছে না৷ এ যেন তার জন্য পুরোপুরি বিষ। বার কয়েক লম্বা শ্বাস টেনে সে নিজের মধ্যকার রাগটা দমন করতে চাইল। অতঃপর প্রিয়তীর একগালে আলতো হাত রেখে দ্রুত সেখান থেকে বেড়িয়ে পড়ল। যাবার আগে রাগমিশ্রিত চেহারা নিয়ে রাইমা চৌধুরীর দিকে তাকাতে ভুলল না৷ শুধু বয়সকে প্রাধান্য দিয়ে অনেকক্ষেত্রে আমাদেরকে মাটি হতে হয়। অর্ণবও যেন এইমুহূর্তে তেমন-ই একটা অবস্থানে দাঁড়িয়ে।
.
সাদিদ তন্নতন্ন করে পুরোটা রিসোর্ট চেক করেছে। কিন্তু তানবীরের দেখা পাওয়া এখনও অব্দি সম্ভব হয়নি। এই অল্প সময়ের মধ্যে ছেলেটা কোথায় হারিয়ে গেল? ভাবতেই সাদিদের ভয়ের পাশাপাশি রাগও হচ্ছে। সামনে পেলে ঠাটিয়ে একটা চড় বসাবে। সে কিছুটা এমন মনোভাব-ই ঠিক করেছে।
সাদিদের এমন অস্থিরতার মধ্যেই অর্ণবও তাকে দেখে একপ্রকার ছুটে আসলো।
— ‘ সাদি, কি শুনছি এসব? তানবীর নাকি রিয়াদকে..
— ‘ ঠিকই শুনেছিস। আমি এতক্ষণ তাকেই খোঁজে চলেছি। কিন্তু কোথায় যে গেল? ‘
— ‘ সমস্যাটা কি হয়েছিল? এমন ক্ষেপে গেল কেন? ‘
সাদিদ এবার হাঁটা থামিয়ে দিলো। অর্ণবের দিকে একপলক তাকিয়ে হতাশার দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। ক্লান্তিভরা কন্ঠে বলে উঠল,
— ‘ হিস্ট্রি রিপিট। ‘
— ‘ ওয়াট? কি যা তা বলছিস তুই? ‘
— ‘ নিজের চোখে দেখেনি। কিন্তু তানবীর এমনটাই বলছিল। আবারও ধোকা সে নিতে পারেনি। তাই রিয়াদকে বেদরম পিটিয়েছে। ‘
— ‘ কার জন্য? এখন বলিস না..
— ‘ অনুমান সঠিক। শান্ত-ই সেই মেয়ে। ‘
অর্ণব এবার মাথা চেপে পাশের বেঞ্চে বসে পড়েছে। তার মাথা রীতিমতো ঘুরঘুর করছে। সে কিছুটা অবিশ্বাস্য স্বরে বলে উঠল,
— ‘ শান্ত এমন করবে? আমিতো মেয়েটাকে ভালো জানতাম। ‘
— ‘ আমার কিন্তু এমনটা মনে হচ্ছে। কোথাও একটা গন্ডগোল তো অবশ্যই পেকেছে। নতুবা শান্তর চোখে-মুখে স্পষ্টত চমকের আভা ছিল। তারউপর অসহায়ের ন্যায় চোখের জল। অপরাধের কোনো চিহ্ন তার মুখশ্রিতে আমি দেখিনি। কিন্তু ঘটনা সমাধানের কোনো সুযোগ-ই পেলাম না। ‘
অর্ণবও এবার হতাশাজনক নিঃশ্বাস ফেলল। কি থেকে কি হয়ে গেল! বেশ তো দিব্যি চলছিল। মাঝ দিয়ে এসব না ঘটলে কি হতো?
অর্ণবকে বিষন্ন হতে দেখে সাদিদ তার পাশে বসল। কাঁধে হাত রেখে অপরাধী কন্ঠে বলল,
— ‘ তোর জীবনের এমন একটা দিন, অথচ দেখ আমাদের জন্য পরিস্থিতিটা কেমন ঘোলাটে হয়ে গেল। ‘
অর্ণবের কর্ণকোহরে কথাটা পৌঁছাতেই সে ঝটকা মেরে সাদিদের হাত কাঁধ থেকে ফেলল। অতঃপর রাগমিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠল,
— ‘ নিজেকেসহ আমাদের বলে ফেললি? অথচ আমাকে হিসাবের বাহিরে! আমি কি পর? তানবীর আমার কিছু হয় না? ‘
— ‘ তুই রাগ করছিস কেন? আমি তেমনটা কখন বললাম? তোর বিয়ে…
— ‘ রাখ শালা। এমন হাজারটা বিয়ে আমি আমার ভাইয়ের জন্য ভেঙে দিতে পারি। ‘
সাদিদ একপলক তাকালো রাগে শরীর রী রী করা অর্ণবের দিকে। তারপর ঝাপটে ধরল অর্ণবকে। অর্ণবও শক্ত করল নিজের হাত। সাদিদের চোখে লুকায়িত অশ্রুর ছাপ। কিন্তু তাতে মিশে আশে আনন্দের-খুশির রেশ। সামনাসামনি দুইজনের দা-কুমড়া সম্পর্ক হলেও সাদিদ তো জানে একে-অপরকে নিয়ে কতটা ভাবে তারা। কিন্তু তারপরও নিজের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটা দিনকে বন্ধু সমতুল্য ভাইয়ের জন্য পিছিয়ে রাখাতে সাদিদ না চাইতেও ইমোশনাল হয়ে পড়েছে। অর্ণব পরিস্থিতি সামলাতে মৃদু হেসে বলল,
— ‘ এবার ছাড়। নতুবা কেউ আমাদের এমনভাবে ঝাপটা-ঝাপটি অবস্থায় দেখলে সত্যিই বিয়ে ভেঙে যাবে। ‘
সাদিদও এবার হাসল। অর্ণবকে ছেড়ে দিয়ে পেটে ঘুষি বসাল।
— ‘ হারামি, মাত্র-ই না বললি বিয়ে ভাঙলে সমস্যা নেই। ‘
— ‘ এমন হাতের ঘুষি খেলে সত্যিই বিয়ে পর্যন্ত যেতে পারব না। তার আগেই হসপিটাল যেতে হবে। ‘
অর্ণব অনবরত পেটে ঘষছে আর মৃদুস্বরে সাদিদের গালমন্দ করছে। সাদিদ সেগুলো শুনেও না শুনার বান করছে। কিন্তু ঠোঁটের কোণে তার এক চিলতে হাসি। প্রকৃত বন্ধুর ন্যায় বন্ধু হলে হাজার খানেকের প্রয়োজন পড়ে না। একটি হলেও যথেষ্ট। আর একাধিক হলে তো লাইফ পুরোপুরি বিন্দাস।
_____________________
বেশ অনেকটা সময় আগেই সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে। সাদিদ একাই তানবীরকে খোঁজেছে। রিসোর্টের এড়িয়া বেশ বড়। আর সন্ধ্যার হালকা আঁধারে দেয়ালের সাথে মাথা ঠেকিয়ে উদাসীন দৃষ্টিতে বসে থাকা তানবীরকে সে খেয়াল করতে পারেনি। তাছাড়া তানবীর বেশ জনসমাগম থেকে বাহিরে নিরিবিলি জায়গায় এসে বসেছে। সামনের থেকে আগত দৃষ্টিতে উদাস হয়ে বসে থাকা এই উসকোখুসকো ছেলেটাকে দেখা প্রায় অসম্ভব। তাই সাদিদও তখন তাকে দেখতে পায়নি।
হঠাৎ পায়ের আওয়াজে তানবীর এবার মাথা উঁচু করে তাকালো। অর্ণব এবং সাদিদকে দেখে সে আবারও চোখ বন্ধ করে মাথা নিচু করল।
সাদিদ-অর্ণব একে অপরের দিকে তাকালো। তারপর-ই শুরু করল এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি।
— ‘ শালা নিজের বিয়ে রেখে তোকে এমন চিরুনি তল্লাশি করছি, আর তুই কি-না এমন দেবদাস সেজে আরামছে বসে আছিস? ‘
— ‘ হারামি, আমাদের আর কোনো কাজ নাই? সবকিছু ফেলে পাগলের মতো তোকে খোঁজে চলছি! ‘
— ‘ আরে থাম। হাড়-গোড় ভেঙে ফেলবি না-কি? দোস্ত ছাড়। ‘
— ‘ আজকে তোর হাড়গোড় ভেঙে তবেই ছাড়ব। ‘
সাদিদ-অর্ণব লাগাতার তানবীরকে মেরে যাচ্ছে, আর সে হাসছে। কেননা এখানে যে রাগের তুলনায় ভালোবাসাটা বেশি লুকায়িত।
অবশেষে মেরে-টেরে ক্লান্ত হয়ে তারা ঘাসের উপর-ই শুয়ে পড়ল। তানবীরও মার খেয়ে তাদের উপরই হাত-পা ছড়িয়ে দিলো।
বেশ অনেকটা মুহূর্ত কেটে গেল। কিন্তু তারা এভাবেই পড়ে রইল। কারো মুখে কোনো শব্দ নেই। কেবল দ্রুত গতিতে বয়ে চলা নিঃশ্বাসের শব্দগুলো ক্রমাগত শুনা যাচ্ছে।
এতক্ষণ বন্ধুগুলোর জন্য তানবীরের বিষন্ন মনটা চাপা পড়লেও এখন আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। তানবীর উঠে দাঁড়িয়ে সামনে এগিয়ে যেতে ধরতেই সাদিদ কাঁধে হাত রেখে তাকে আটকে দিলো।
— ‘ পরিস্থিতি থেকে পালিয়ে গেলে সমস্যার কখনও সমাধান হয় না। ‘
তানবীর একপলক সাদিদের দিকে তাকালো। পরমুহূর্তেই চোখ-মুখ শক্ত করে বলল,
— ‘ আমি এই বিষয়ে কিছু বলতে চাইছি না। ‘
— ‘ দেখ, সবসময় আমরা যা দেখি সেটাই সত্যি হয় না। হয়তো মাঝখানে কিছু একটা আছে যা আমরা দেখতে পায় না। ‘
— ‘ তুই যদি আমাকে ঐ নির্লজ্জ মেয়ের হয়ে সাফাই গাইতে এসে থাকিস, তো এই মুহূর্তে দূরে যা আমার চোখের সামনে থেকে। ‘
— ‘ সাদি কি বলতে চায়ছে একবার সেটা শুনে তো দেখবি। ‘
— ‘ আমার কিছু শুনার প্রয়োজন নেই। প্লিজ লিভ মি এলোন। ‘
তানবীর শেষোক্ত কথাটা বেশ চেঁচিয়েই বলল। সাদিদ-অর্ণব সেটা সহ্য করতে পাড়লেও শান্ত পাড়ল না। সে বুকে হাত দিয়ে দেয়ালে হেলান দিলো। তানবীরের এমন হিংস্রতায় শান্ত বেশ ভয় পাচ্ছে। সে যদি জানতো তানবীরও এখানে অবস্থান করছে তবে সে কখনও এখানে আসত না।
সে অনেকক্ষণ যাবত ধরেই এখানে ছিল। নীলা তাকে রুমে নিয়ে অনবরত শান্তনা দিচ্ছিল। কিন্তু এতটা অপমানের পর কারো সামনে থাকার মতো তার অবস্থা ছিল না। থাপ্পড়ের দাগটা এখনও তার গালে স্পষ্ট রয়ে গিয়েছে। সবাই সেটা দেখছে আর ফিসফিসিয়ে কথা বলছে। শান্ত এসব সহ্য করতে না পেরে এখানে এসে চুপটি করে হাঁটু ভাজ করে বসেছিল। আর তার সাথে অপমানের নিঃশব্দের চোখের জলতো ফ্রি।
কিন্তু সে চিন্তাও করতে পারেনি তানবীরও এখানে রয়েছে। দুইজন দুইদিকে ছিল বিধায় কারো উপস্থিতির জানান কেউ পায়নি। যখন সাদিদ আর অর্ণবের আগমন ঘটে তখনই পুরো বিষয়টা শান্ত বুঝতে পারে। আর তখনই রাগে-দুঃখে সে এখান থেকে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু পথিমধ্যে তাকে থেমে যেতে হয়। শান্তর কাছে তাদের কথাগুলো স্বাভাবিক মনে হচ্ছিল না। তারউপর তানবীরের এমন বিষন্ন গলা শুনে শান্তর আর পা চলেনি৷
যেই ব্যক্তির উপর তার এখন রাগ করা উচিত তাকে নিয়েই সে চিন্তিত। তার কষ্টে যেন শান্তও ব্যথিত৷ নিজের এমন চিন্তা-ধারায় এবং কষ্টের অনুভূতিতে শান্তর এখন নিজের-ই মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে হচ্ছে।
অপরদিকে তানবীরের রাগও সাদিদকে দমাতে পাড়ল না৷ এতদিন সহ্য করলেও আজ এর একটা হেস্তনেস্ত সে করেই ছাড়বে।
— ‘ একা থাকলেই কি সব ঠিক হবে? কই এতদিনতো ছিলি, ঠিক-কি আধো হয়েছে? ‘
— ‘ সাদি, তুই কিন্তু বড্ড বেশি করছিস৷ আমি রাগের মাথায় উল্টো-পাল্টা কিছু করার আগে প্লিজ চলে যা। ‘
— ‘ যাব না। দেখি তুই কি করতে পাড়িস। আমারও তো জানা ধরকার তুই আমাকে মেরে নিজেকে কতটা কষ্ট দিতে পাড়িস। ‘
তানবীর হাতের মুঠি শক্ত করে সাদিদের দিকে তেড়ে আসলো৷ কিন্তু সাদিদ নিজের জায়গায় অনড়। বিন্দু পরিমাণ নড়ল না।
শেষ পর্যন্ত সাদিদকে আঘাত করার সাধ্য তানবীরের হয়ে উঠল না। হাতটা উপরে তোলেও তাকে থেমে যেতে হলো। আঘাত করার বদলে উল্টো সাদিদকে ঝাপটে ধরল সে। সাদিদ নিঃশব্দে মৃদু হাসল। পাশে দাঁড়ানো অর্ণবের ঠোঁটের কোণেও হাসি।
— ‘ বুকটা বড্ড ব্যাথা করছে রে। সহ্য করতে পাড়ছি না। খুব কষ্ট হচ্ছে। ‘
সাদিদ প্রতিউত্তরে কিছু বলল না। শুধু শক্ত করে তার পিঠে হাত রাখল। ছেলেদের নাকি কাঁদতে নেই৷ তাই সেই নিয়মহেতু বোধহয় তানবীরের গালও শুকনো। কিন্তু অশ্রুকণাদের ভিড়ে চোখগুলো রক্তিম লাল অবশ্যই হয়েছে।
— ‘ নিজেকে সামলা দোস্ত। তুই যার জন্য নিজেকে সবার কাছে এতটা অবহেলার পাত্র করিস, যার জন্য এখনও নিজের মধ্যকার রাগটা পুষে রেখেছিস, সে তো দিব্যি ভালো রয়েছে। দেখ তোকে ছাড়া নিজের জীবনে কতটা সুখি। নিজেকে তোর মতো অতীতের বেড়াজালে আটকে রাখেনি। সে এগিয়ে গিয়েছে দোস্ত৷ সে নিজের জীবনে অনেকটা দূর এগিয়ে গিয়েছে। ‘
তানবীর নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে সাদিদকে এবার ছেড়ে দিলো। সিক্ত আঁখিদ্বয় লুকানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করে বলল,
— ‘ আমার জীবনে তার কোনো গুরুত্ব নেই৷ আর নেই কোনো অস্তিত্ব। আমি প্রিয়তীকে ভুলে গিয়েছি। আমার জীবনের দুঃস্বপ্ন ব্যতিত সে আর কিছুই নয়। ‘
সাদিদ ঘাড় ঘুরিয়ে একপলক অর্ণবের দিকে তাকালো। তার মুখটা বড্ড মলিন দেখাচ্ছে। তানবীর আর একটুও সেখানে দাঁড়াল না। দ্রুত পায়ে সামনে চলে গেল। সাদিদ শুধু তাকিয়ে দেখল তার শেষ অব্দি। অর্ণবও নিঃশব্দে জায়গা ত্যাগ করল। রয়ে গেল কেবল সাদিদ, আর সবার দৃষ্টির অগোচরের শান্ত।
তার কানে এখনও যেন তব্দা লেগে আছে। কি শুনলো সে এটা? প্রিয়তী আর তানবীর!
তার নিজের কানকেই বিশ্বাস হচ্ছে না।
.
নীলাও এদিক-ওদিক তাকিয়ে শান্তকে খোঁজতে ব্যস্ত। তখন যে মন খারাপ করে চলে এসেছিল তারপর আর দেখেনি। কিন্তু অবশেষে শান্তর দেখা না পেলেও মাথা নিচু করে বসে থাকা দূর থেকে সাদিদকে চোখে পড়ল। সে গুটিগুটি পায়ে সাদিদের সামনে এসে দাঁড়াল। কারো উপস্থিতি টের পেয়ে সাদিদ মাথা উপরে তুলল। নীলাকে সামনে দেখে তার হাত টেনে নিজের পাশে এনে বসাল। তারপর বেঞ্চে পা উঠিয়ে নীলার কোলে মাথা রাখল। সে বেশ লম্বা বিধায় পাগুলো ভাজ করে রাখতে হয়েছে। সাদিদের স্পর্শে নীলার শরীর বরাবরের মতোই শিহরিত হলো। কিন্তু সে নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করে সাদিদের মাথায় হাত রাখল। আলতো হাতে চুলগুলো টেনে দিতে লাগল। সাদিদ এবার সোজা হয়ে নীলার মুখোমুখি তাকালো৷ তাকে এমন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে নীলা ভ্রুজোড়া নাচালো। সাদিদ কোনো বণিতা না করে বলল,
— ‘ তানবীরের এমনভাবে শান্তর উপর হাত তোলাতে তোমার খারাপ লাগেনি? তার বন্ধু হিসেবে আমার উপর রাগ লাগেনি? আমার কাছে এই নিয়ে কৈফিয়ত চাইবে না? ‘
নীলা মৃদু হাসল। তারপর সাদিদের চুলে আঙ্গুল চালাতে চালাতেই বলল,
— ‘ তানবীর-অর্ণব ভাইয়া যেমন আপনার কাছে ভাই সমতুল্য, তেমনিভাবে শান্তও আমার কাছে সেইম। ওকে আমি কখনও বোন থেকে আলাদা করে দেখিনি। সত্যি কথা বললে যখন ওর লাল হয়ে যাওয়া গাল আর অশ্রুসিক্ত চোখ দেখেছিলাম আমার খুব রাগ লেগেছিল। তানবীর ভাইয়ার উপর সত্যিই ভীষণ রাগ লেগেছিল। তারপর…
— ‘ তারপর কি পাখি? ‘
— ‘ আমি শিওর নই। কিন্তু তখনকার ভাইয়ার কথাগুলোতে খুব অধিকার কাজ করছিল। শান্তর প্রতি তিনি যেন নিজের অধিকার থেকে এতটা রাগ করেছিলেন। উনার চোখে একদিকে শান্তর জন্য যেমন রাগ অপরদিকে কষ্ট ছিল। আর তারউপর শান্তও আমাকে কিছু বলার সুযোগ দেয়নি। না নিজে কিছু মুখফোটে বলেছে। এটা আমার কাছে ব্যক্তিগত বিষয় মনে হয়েছে। আর কারো ব্যক্তিগত বিষয়ে দখলদারি করা ঠিক নয়। তাই রাগটা ধীরে ধীরে কমে গিয়েছে। ‘
সাদিদ নীলার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। সে কোনো ভুল মানুষকে ভালোবাসেনি। আপাতদৃষ্টিতে সে সাধারণ হলেও মন থেকে সে অসাধারণ। আর সাদিদের চোখে তো সে দুনিয়ার সবচেয়ে অসাধারণ এক ব্যক্তিত্ব। সাদিদ হাত উঠিয়ে নীলার মাথাটা নিচু করল। তার কোলে শুয়েই কপালে চুম্বন আঁকল। নীলা প্রতিউত্তরে লাজুক হাসি উপহার দিলো। সাদিদ তার গালে হাত রেখে আদুরে কন্ঠে বলল,
— ‘ আমার অবুঝ পাখিটা এত বড় কখন হলো? কেমন বড়দের মতো কথা বলছে! ‘
নীলা তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো। নাক-মুখ কুঁচকে বলল,
— ‘ আমি কি ছোট? ‘
— ‘ কেন? তোমার কি নিজেকে বড় মনে হয়? ‘
নীলা সাদিদের চুলে জোরে একটা টান দিলো। সাদিদ মৃদু ব্যাথাজনক আওয়াজ করতেই সে কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
— ‘ বিয়ে করে বসে আছেন আবার বলছেন ছোট! তাহলে কি বয়স যখন চল্লিশ হবে তখন আপনার চোখে বড় হবো? ‘
সাদিদ নীলাকে ক্ষেপতে দেখে মৃদু হাসল। তারপর বাম কাঁধ হয়ে শুয়ে নীলার পেটে মুখ গোঁজল। নীলা মৃদু কেঁপে উঠে সাদিদের চুল খামচে ধরতেই সাদিদ শব্দ করে হেসে ফেলল। অর্থাৎ নীলার হালকা রাগও এখন ঘায়েব। সে এখন সাদিদের জালে আটক। সাদিদ নীলার পেটে মুখ রেখেই ক্রমশ ঘোর লাগা কন্ঠে বলে উঠল,
— ‘ তোমার বয়স সত্তর হলেও তুমি আমার কাছে সেই সতের বছরের তরুণী-ই রয়ে যাবে। ভালোবাসা তখনও উপচে পড়বে। বিন্দুমাত্র কমতি হবে না ইনশাআল্লাহ। বরং বার্ধক্যে আমরা অবসব থাকব। তখন আরও চুটিয়ে প্রেম করব।
কিগো বউ, তখনও এই আমিটাকে মনে ধরবে তো? নাকি…
নীলা সাদিদকে কথাটুকু শেষ করতে দিলো না। ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে তাকে থামিয়ে দিলো। নিঃশব্দে মাথা নাড়তেই সাদিদ হেসে ফেলল। নীলার হাতটা টেনে তালুতে শব্দ করে চুমু খেল। আর বলল,
— ‘ এতটুকুতেই চোখে পানি! এত পানি কোথায় থেকে আসে পাখি? আমিতো দুষ্টুমি করছিলাম। ‘
নীলা অশ্রুসিক্ত চোখগুলো নিয়ে সাদিদের দিকে ঝুঁকল। লাজলজ্জা ভুলে গিয়ে সাদিদের কপালে চুমু খেল। সাদিদ চোখ বন্ধ করে এই মুহূর্তটা উপভোগ করতে চাইল।
আদরের ক্ষেত্রে নীলা বরাবরই কিপ্টা সম্ভাবের। লজ্জায় সবসময় মিইয়ে থাকে। সাদিদকেই সর্বদা এগিয়ে যেতে হয়। কিন্তু তাই বলে নীলার জন্য সাদিদের মনে কোনো অভিযোগ নেই৷ সে বরং তার লজ্জাবতী লাজুকলতার এই গুণেই মুগ্ধ। কিন্তু তারপরও নীলার এখন এগিয়ে এসে সামান্য একটু ভালোবাসার পরশও যেন সাদিদের পুরো শরীরটা নাড়িয়ে দিচ্ছে।
নীলা ভালোবাসার দীর্ঘ চুম্বন এঁকে সরে যেতে চাইলে সাদিদ তাকে বাধা দিলো। তার মাথার পিছনে হাত রেখে আবারও মাথাটা নিচু করল। তারপর নিজের ডানগালটা এগিয়ে দিলো। নীলার বুঝতে অসুবিধা হলো না সাদিদ কি বলতে চাইছে। সে লজ্জা পাচ্ছে। কিন্তু তারপরও সাদিদের গালেও কোমল ঠোঁটের উষ্ণ স্পর্শ দিলো। এবারও সরে আসতে চাইলে পাড়ল না। সাদিদ তাকে আবারও বাধা দিলো এবং একইভাবে অপরগালটা এগিয়ে দিলো। নীলা এবারও বাধ্য মেয়ের মতো তাকে উষ্ণ আদর দিলো।
পরমুহূর্তেই আবারও বাধা পড়াতে সে এবার ভ্রুজোড়া বাঁকিয়ে সাদিদের দিকে তাকালো। সাদিদ তার চাহনিতে আঙ্গুল দিয়ে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। অতঃপর নিঃসংকোচ আবদার জানাল,
— ‘ এখানেও চাই। ‘
নীলার গালগুলো টুকটুকে লাল বর্ণে রূপান্তরিত হলো। লজ্জায় জড়সড় হয়ে সে মাথা দুইদিকে নাড়িয়ে না-বোধক উত্তর জানালো। কিন্তু
দুষ্টু সাদিদ এত সহজে হাল ছেড়ে দিলে তো! সে বাঁকা হেসে বলল,
— ‘ ভালোই ভালোই দিয়ে দাও। নতুবা কিন্তু আমি ঠেসে আদায় করে নিব৷ ফ্রেঞ্চ-ট্রেঞ্চও কিন্তু করে বসতে পারি। তখন সামলাতে পারবে তো? ‘
ইশশ এই ছেলেটা কি পরিমাণ অসভ্য! নীলা অন্যদিকে তাকিয়ে লাজুকলতা হয়ে বলল,
— ‘ ছিঃ কি অশ্লীল! ‘
— ‘ উয়ি আর হাসবেন্ড-ওয়াইফ। এখানে অশ্লীলতার কি দেখলে? তোমার সর্বাগ্রে এই সাদিদের অধিকার রয়েছে। ‘
এতটুকু বলে সে থামল। তারপর নীলার দিকে তাকিয়ে গলার স্বর আরেকটু নিচু করে নিচের ঠোঁট কামড়ে বলে উঠল,
— ‘ তেমনিভাবে আমার উপরও কিন্তু তোমার পুরোপুরি অধিকার রয়েছে। কিন্তু আফসোস তুমি সেটার ফায়দা তুলতে জানো না। এতো হট একটা ছেলেকে কাছে পেয়েও নিজেরটা আদায় করতে পিছিয়ে আছ। সো সেড। ‘
নীলার মাটি বেঁধ করে ডুকে যেতে ইচ্ছে করছে। নতুবা সম্ভব হলে এই নির্লজ্জ ছেলেটার মুখ সুপারগ্লু দিয়ে বন্ধ করতে। এই ছেলেটা এত ঠোঁটকাটা কেন?
নীলা লজ্জায় লাল হয়ে সাদিদকে কোল থেকে সরাতে চাইছে, কিন্তু সে ব্যর্থ। সাদিদ কিছুতেই জায়গা ছাড়ছে না। ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি ঝুলিয়ে সে তার দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে আছে। সাদিদের জন্য এই মেয়েটা ম্যাজিকের থেকে কম নয়। এতক্ষণের বিষিয়ে যাওয়া মনটাতে যেন বিশুদ্ধ বায়ুর দেখা মিলেছে। নীলার সংস্পর্শ যেন সব বিষাদ হাওয়ায় মিলিয়ে দিয়েছে। সাদিদের মন ভালো করার মহাঔষধ যেন এই মেয়েটার মধ্যে সৃষ্টিকর্তা দিয়ে দিয়েছেন। হাজারও মন খারাপের রাতেও যেন এই মেয়েটা পাশে থাকলে সাদিদ সুখি থাকবে। সাদিদের ভালো থাকার অপর নাম যেন এই নীলাঞ্জনা নামক রমণী। সাদিদের ভাষ্যমতে প্রাণনাশিনী।
__________________
প্রিয়তীর সমবয়সীরা সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে। প্রিয়তীর এখানে থাকলেও মনটা তার অর্ণবের কাছেই পড়ে রয়েছে। সে জানে অর্ণব মাথা গরম করে কাজ করবার মতো ছেলে নয়। তারপরও তার চিন্তা হচ্ছে। কেননা বিষয়টা তানবীর রিলেটেড। আর অর্ণব তার ভাই সমতুল্য দুই বন্ধুকে ঠিক কতটা ভালোবাসে এটা প্রিয়তীকে কেউ বলে দিতে হবে না। তাই এখন শুধু তার ভগবানের কাছে একটাই প্রার্থনা সব যেন ঠিক হয়ে যায়। নতুবা অর্ণব এখানে উপস্থিত থাকলেও তার মনটা এখানে থাকবে না। আর বিয়ের মতো এমন একটা পবিত্র বন্ধন সে অর্ণবের সাথে এভাবে শুরু করতে চায় না। প্রিয়তীকে একধ্যনে কিছু ভাবতে দেখে তার জেঠাতো বোন দুষ্টুমিস্বরে বলে উঠল,
— ‘ কিরে প্রিয়তী, এখন থেকেই দিবাস্বপ্নে বিভোর? আর তো একটা মাত্র রাত। তারপর তো স্বপ্ন নয় বরং বাস্তবেই বরকে সাথে পাবি৷ এখন একটু ধৈর্য্য ধর। ‘
— ‘ হ্যাঁ দিদিভাই একটু সবুর করো। জানোই তো সবুরে মেওয়া ফলে৷ আর জিজু যা, মনে হয় শুধু মেওয়া নয় অনেক কিছুই ফলবে। ‘
— ‘ এই চুপ কর তুই। এখনও নাক টিপলে দুধ বাহির হবে, আর সে বলছে এসব কথা। ‘
— ‘ বড়দিভাই আমার কিন্তু আঠারো হয়ে গিয়েছে। আমি এখন আর ছোট্টটি নেই। এসব এডাল্ট বিষয় সবকিছুই আমার জানা। ‘
দীপার কথায় বড়দি তাকে কানমলা দিলেন। তারপর আবারও সবাই প্রিয়তীর পিছনে লাগল। সবার অর্ণব আর তাকে জড়িয়ে দুষ্টু-মিষ্টি কথায় সে না চাইতেও এখন ঠোঁট টিপে লাজুক হাসছে। সবগুলোর অনবরত ফাইজলামিতে এতক্ষণের বিষন্নতার রেশ যেন অনেকটাই ধামাচাপা পড়েছে।
শান্ত নিজেদের জন্য বরাদ্দকৃত রুমের উদ্দেশ্য যাওয়া ধরেছিল৷ পথিমধ্যে প্রিয়তীর সব কাজিনদের হইহট্টগোলে থেমে গেল৷ সবার দিকে একপলক তাকিয়ে প্রিয়তীর দিকে চোখ পড়তেই তার কপাল কুঁচকে এলো। সঙ্গে সঙ্গেই তানবীরের কষ্টেভরা কথাগুলো আবারও যেন তার কর্ণকোহরে প্রতিধ্বনিত হতে লাগল।
নিজের সব রাগ-অপমান ভুলে শান্তর এখন কেবলমাত্র তানবীরের মুখটাই চোখে ভাসছে। না জানি কতটা কষ্ট পাচ্ছে সে। একটা মেয়ের প্রতারণার জন্য সে আজ পুরো নারীসমাজটাকেই ঘৃণা করে। শান্তর অজান্তেই তার চোখ-মুখে রাগের আভাস ফোটে উঠল। কিন্তু সেটা নিজের জন্য নয়। বরং তানবীরের কষ্টে তার শরীরের রাগের ফুলকি ঝরছে।
কিন্তু কেন? নিজের থেকেও কি অপরজনের অনুভূতি তার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
শান্ত রাগমিশ্রিত চোখে প্রিয়তীর দিকে এগিয়ে গেল। কথায় বলে রাগের অপর নাম ধ্বংস। তাই শান্তও বোনের ন্যায় প্রিয়তীর সঙ্গে সম্পর্কের বিনাস টানল।
— ‘ খুব আনন্দে আছো নিশ্চয়ই? হ্যাঁ সেটাইতো হবার কথা। বিয়ের কনে আনন্দে থাকবে না তো কে থাকবে? ‘
প্রিয়তী অবাক চোখে শান্তর দিকে তাকালো। পরিচয়ের এতদিনে শান্তর এমন ব্যবহার সে কখনও দেখেনি। শুধুমাত্র তানবীর ব্যতিত সবার সাথেই বেশ হাসিখুশি। প্রিয়তীকে তো দিদিভাই বলে ডাকে। তাহলে আজ কি হলো?
— ‘ কি হলো চুপ করে আছ যে? কথা শেষ? ‘
— ‘ কি হয়েছে শান্ত? কোনো সমস্যা, তোমার কথাগুলো আমার স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। ‘
— ‘ সত্যি কথাগুলো বরাবরই অস্বাভাবিক মনে হয়। ‘
— ‘ এই মেয়ে, কি বলতে চাইছ তুমি? ওর সাথে এমন করে কথা বলার কি অর্থ? ‘
— ‘ আহ্ বৌদিভাই, তুমি চুপ করো। শান্তর মন ভালো নেই। তাই এমন করছে। তোমরা এর মধ্যে কথা বলতে এসো না। আর সম্ভব হলে প্লিজ একটু বাহিরে যাও। আমি শান্তর সাথে একা কথা বলতে চাই৷ ‘
প্রিয়তীর পরিবারবর্গ খানিকটা অসন্তোষ দৃষ্টি নিয়ে সেখান থেকে চলে গেল। তারা যেতেই প্রিয়তী এসে শান্তর পাশে দাঁড়াল। কাঁধে হাত রেখে আদুরে গলায় বলল,
— ‘ তানবীরের উপর রাগ করেছ? ছেলেটা বড্ড ফাজিল। কিন্তু মনটা ভালো। আজ হঠাৎ কি হয়ে গেল…
তুমি মন খারাপ করো না প্লিজ। সামনে আসলে আমরা সবাই মিলে তাকে কানমলে দিব। ‘
প্রিয়তী শান্তর মন ভালো করার জন্য কথাটা বললেও হিতে বিপরীত হলো। তানবীরের কথাটা উঠতেই গরম তেলে যেন পানির ছিটা পড়ল। শান্ত ঝটকা মেরে তার হাত সরিয়ে রাগী কন্ঠে বলে উঠল,
— ‘ কিভাবে দিদিভাই! কিভাবে পারো এতটা নিখুঁত অভিনয় করতে? ‘
— ‘ কি বলছ তুমি? কখন থেকে এসব উদ্ভট কথা বলে যাচ্ছ। ‘
প্রিয়তী এবার কিছুটা উঁচুগলাতেই কথাটা বলল। তাতে যেন শান্তর রাগ আরও তড়তড় করে বাড়ল। সে কপট ঘৃণামিশ্রিত কন্ঠে বলল,
— ‘ আমি মনে করতাম তুমি আর যায় হোক কখনও ছলনাময়ী হতে পারবে না। কিন্তু আজ মানতে বাধ্য হচ্ছি অভিনয়ের দিক দিয়েও তুমি ফাস্ট ক্লাস। একটা ছেলের জীবন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড় করিয়ে দিয়ে নিজের জীবনে কি সুন্দর খুশি-আনন্দে রয়েছে! সত্যিই অবাক না হয়ে পাড়ছি না। এই তোমার মতো মেয়ের জন্যই ছেলেরা হাজারও ভালো মেয়ের চরিত্র নিয়ে কথা বলে। হাজারও অপবাদের তীর তাদের দিকে ছুঁড়ে মারে। এই তোমার মতো-ই কিছু মেয়ের জন্য। ‘
— ‘ শান্ত! ‘
গালে আবারও ব্যাথাজনক অনুভূতির আবির্ভাবের উৎপত্তি হতে শান্তর রাগী কন্ঠস্বর থেমে গেল। আবারও আরেকটা! সে এবার সত্যিই কনফিউজড। ব্যাথার জন্য কাঁদবে না-কি একইদিনে সেকেন্ড অনুভূতি নিয়ে হাসবে?
#চলবে…
[ পাঠকগণ আপনাদের পাঠপ্রতিক্রিয়াগুলো আমাকে জানাবেন। আমি আপনাদের ভালোলাগা-মন্দলাগাগুলো জানতে আগ্রহী। ]