অন্তরালের অনুরাগ ❤ পর্বঃ ০৪

0
9123

গল্পঃ #অন্তরালের_অনুরাগ
লেখনীতেঃ #নাহিদা_নীলা
#পর্বঃ ০৪

দরজায় ঠকঠক আওয়াজে নীলা গিয়ে দরজা খোলে দিলো। নিধি শাদমানকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নীলার চোখ-মুখের এমন অবস্থা দেখে সে বিচলিত হয়ে বলে উঠল,

—- ” পিচ্চু তোর চোখ-মুখ এমন হয়ে আছে কেন? রাতে ঘুমাসনি? ”

নীলা মুখে জোরপূর্বক হাসি ফুটিয়ে শাদকে নিজের কোলে তুলে নিলো। তারপর বেশ স্বাভাবিক কন্ঠে নিধির উদ্দেশ্য বলল,

—- ” ঘুমাবো না কেন? অনেক ঘুমিয়েছি, এমনকি বেশি ঘুমানোর কারণেই এমন লাগছে। ”

নিধি যে নীলার কথায় চিন্তা মুক্ত হয়নি সেটা তার মুখে স্পষ্ট। তাই নীলা কথা ঘুরানোর জন্য আবারও বলে উঠল,

—- ” আপুনি আমি কিন্তু আজই মিরপুর চলে যাব। আর এখন পদ্মলয়া থেকে সোজা ভার্সিটি যেতে হবে। ”

—- ” সেটা না হয় যাস। কিন্তু বাসায় যাওয়ার দরকার কি? এখান থেকেই ক্লাস কর। ”

—- ” অসম্ভব! ”

নীলা প্রায় চিল্লিয়ে উঠল। এখানে থাকা মানেই সাদিদের আশেপাশে থাকা। যা নীলা একেবারে মেনে নিতে পারবে না। সাদিদ মানেই তো নীলার চোখের বিষ।
নিধি আচমকা নীলার এমন উত্তেজিত হয়ে যাওয়া বুঝতে পারল না। নীলা দ্রুত শাদমানকে নিয়ে নিধির সামনে থেকে সরে আসলো। পরিস্থিতি সামলাতে পিছন ফিরে বলে উঠল,

—- ” বাসায় ইম্পরট্যান্ট নোটস্ আছে। সেগুলো লাগবে তাই থাকতে পারব না। ”

নিধি এবার যেন স্বাভাবিক হলো।
নীলাকে যেহেতু একটু পরই ভার্সিটি চলে যেতে হবে তাই দ্রুত রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেল।
নিধি চলে যেতেই নীলা শাদকে নিয়ে সোফায় বসল। শাদমানের নরম গালগুলো টেনে দিয়ে বলল,

—- ” নানুবাসায় যাবে বাবা? ”

—- ” নানুবাসা যাব। ”

নীলা শাদের কথাশুনে হাসল। নীলা আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই শাদ বলল,

—- ” পা.পু নানুবাসা? ”

নীলা বিস্ফোরিত চোখে শাদের মুখের দিকে তাকালো। সে আবার বলল,

—- ” পা.পু যাবে? ”

—- ” অবশ্যই না। আমাদের বাসায় তোর পা.পুর বিন্দুমাত্র জায়গা নেই। পারলে ঝাঁটা মেরে বিধায় করব। ”

শাদ মুহূর্তেই মুখটা মলিন করে ফেলল। মনে হচ্ছে এখনই কান্না করে দিবে।
নীলা প্রচন্ড অবাক হলো। ছোট একটা বাচ্চাকে ঐ অসভ্য ছেলেটা, এই অল্প সময়ের মধ্যেই তাবিজ করে ফেলেছে। সাদিদকে ছাড়া কিছুই বুঝে না।
নীলার রাগ উঠলেও শাদমানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,

—- ” চকলেট খাবে বাবা? খালামণি তোমাকে এতগুলো চকলেট দিবে। ”

শাদ উওর না দিয়ে নিজের থ্রি-কোয়ার্টার জিন্সের পকেট থেকে নীলাকে দুইটা চকলেট বের করে দিলো।
চকলেট দেখে নীলা এখন শাদমানের চেয়েও ছোট হয়ে গেছে। নতুবা ছোট বাচ্চার থেকে কেউ ছিনিয়ে নিয়ে চকলেট খাই?
শাদমান নিজেও আরেকটা চকলেট মুখে দিলো। মুখে চকলেট নিয়েই হেসে বলল,

—- ” পা.পু চকলেট। ”

নীলার মুহূর্তেই কাশি শুরু হয়ে গেল।
শাদমান এখনও সম্পূর্ণ কথা বুঝিয়ে বলতে পারে না। কিন্তু কাছের মানুষগুলো তার অসম্পূর্ণ কথাগুলো-ই বুঝতে সক্ষম হয়। তাই নীলার আর বুঝতে বাকি রইল না, এগুলো তাকে সাদিদ দিয়েছে।
নীলা দ্রুত শাদমানকে কোলের থেকে নামিয়ে বেসিনে গিয়ে মুখে পানি দিলো। ভিতর থেকে চকলেট বাহির করার উপায় নেই, কেননা ততক্ষণে নীলা চকলেট পেটে চালান করে দিয়েছে।
নীলা ওয়াসরুম থেকে অসহায় মুখ নিয়ে বিছানায় গিয়ে বসল।
পেটের ভিতর চকলেট নয়, মনে হচ্ছে সাদিদ-ই কুটকুট করছে।
নীলার এমন অসহায় অবস্থায় আবারও দরজায় নক পড়ল।
নীলা খোলা দরজার দিকে তাকিয়ে দেখল সাদিদ দাড়িয়ে আছে। নীলা সাথেসাথেই চোখ-মুখ শক্ত করে কিছু বলবে তার আগেই সাদিদ বলে উঠল,

—- ” শাদ বাবা, চাচ্চু তোমাকে নিতে এসেছি। ”

নীলা মুখের অসম্পূর্ণ কথাটা আর বলল না। সাদিদ এখন রুম থেকে চলে গেলেই সে বাঁচে। কিন্তু রাগ যে কমছে না। তাই রাগ ধমন করার জন্য সে অপরদিকে মুখ ফিরাল।
সাদিদ নীলার রাগী মুখখানা দেখে নিঃশব্দে হেসে রুমে প্রবেশ করল। শাদমানকে সোফা থেকে নিজের কোলে তুলে নিলো। শাদ চকলেট খেতে খেতেই বলল,

—- ” খালামণি পা.পু চকলেট। ”

নীলা চমকিত দৃষ্টিতে সাদিদের দিকে তাকালো।
সে ঠোঁট টিপে হাসছে। যা দেখে নীলার চেপে রাখা রাগটা তরতর করে বাড়ছে। নীলা রাগী চোখে শাদের দিকেও তাকালো।
সে দিব্বি মজা নিয়ে চকলেট খাচ্ছে। নীলার ইচ্ছা করছে সমানে গিয়ে তাকে দু-একটা লাগাতে।
কি পন্ডিত, চকলেট দিয়ে আবার সুন্দর করে বলেও দিচ্ছে। নীলা অতিরিক্ত রাগে অপরদিকে ফিরে ফোঁসফোঁস করছে।
নীলার এমন রাগী চেহারা দেখে সাদিদ দুষ্টু হাসল। তারপর এক ভয়ানক কাজ করে বসল।

নীলা বিস্ফোরিত চোখে এবার পিছনে ফিরল। কেননা সাদিদ মোটামোটি তার শরীর ঘেঁষে শাদকে কোলো নিয়ে বিছানায় এসে বসেছে।
নীলা রেগে উঠে যেতে চাইলেই সাদিদ বাধা দিলো, পিছন থেকে তার হাতটা টেনে ধরল।
নীলা রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

—- ” হাত ছাড়ুন। ”

সাদিদ নীলার কথাকে একেবারে পাত্তা দিলো না। বরং হেঁচকা টানে তাকে বিছানায় বসালো।
নীলার চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম। তার সাথে সাদিদের এত সাহস দেখে সে প্রচন্ড অবাকও। নীলা সাদিদের হাত ছাড়ানোর জন্য মোচড়া-মুচড়ি শুরু করছে। কিন্তু শক্ত হাতের সাদিদের সাথে পেরে উঠছে না।
সাদিদ তার এসব দেখেও না দেখার ভান করে বলল,

—- ” চাচ্চু, কারও কিছু খেলে তাকেও রিটার্ন কিছু খাওয়াতে হয়। ”

—- ” হাত ছাড়ুন বলছি। কি অসভ্যতামী এটা? ”

—- ” চাচ্চু কেউ আমার প্রশ্নের উত্তর না দিলে আমিও দিতে বাধ্য নয়। ”

—- ” আমি জানতাম না এটা আপনি দিয়েছেন। নতুবা আমি মরে গেলেও খেতাম না। ”

নীলা রেগে কথাটা বললেও সাদিদ সেটা সহজে নিতে পারল না। মুহূর্তেই তার চোখজোড়া লাল হয়ে উঠল।
সাদিদের এমন রক্তচক্ষু দেখে নীলার এখন অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভয় করছে। সাদিদকে পছন্দ না করলেও নীলা তাকে কোনো অংশে ভূতের চেয়ে কম ভয় পায় না।
অপরদিকে সাদিদ নীলার সাথে রাগ দেখাতে চায় না। তাই চোখ বন্ধ করে বার কয়েক লম্বা শ্বাস টানল। নিজেকে শান্ত করার ক্ষুদ্র প্রয়াস।
তারপর কিছু হয়নি এমন একটা ভাব নিয়ে স্বাভাবিকস্বরে বলে উঠল,

—- ” সেটা আমি জানি না। চকলেট যেহেতু খেয়েছ তাই আমাকেও কিছু খাওয়াতে হবে। নতুবা ঋণ ছাড়ব না। ”

সাদিদের এমন বাচ্চামিভরা কথা শুনে নীলার এখন হাসি পেলেও, হাসিটা সে রাগের আড়ালে চেপে রাখল। তারপর রাগীস্বরেই বলে উঠল,

—- ” ইংল্যান্ডে কি ঘাস কেটেছেন? যে টাকার অভাব? আমার থেকে খেতে চাচ্ছেন কেন? ”

সাদিদ নীলার কথায় হাসল। তারপর শাদের গালগুলো টেনে দিতে দিতে বলল,

—- ” এতসব জানি না। তুমি যদি ঋণী থাকতে চাও তাহলে খাওয়াতে হবে না। ঋণ নিয়ে নিজের জীবন কাটাবে। কিন্তু ঋণ না পরিশোধ করলে আমি কিন্তু ভুলব না। ”

সাদিদের এমন খাপছাড়া ভাব দেখে নীলার শরীরে যেন আগুন জ্বলছে। তাকে কি সে কম জ্বালিয়েছে, যে এখন আবার নতুনভাবে জ্বালানো শুরু করেছে! একটা চকলেট নিয়ে এত ঋণ-ফিন হয়ে যাবে জানলে, নীলা জীবনেও চকলেট মুখে দিত না।
নীলা সাদিদের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

—- ” আমি আপনার মতো বেয়াদব, অসভ্য নয়। তাই নিজের কার্ড নাম্বার বলে দিয়েন, আপনার খাওয়ার টাকা একাউন্টে পাঠিয়ে দিব। ”

—- ” এহ্ আসছে আমার টাকাওয়ালি! নিজে উপস্থিত থেকে তারপর খাওয়াতে হবে। ”

—- ” খেতে বলেছেন, খাওয়াব। উপস্থিত থাকতে হবে কেন? ”

—- ” কারণ আমি এটা চাই। আর যদি না থাক তাহলে ঋণ ছাড়ব না। ”

নীলার এইমুহূর্তে ইচ্ছে করছে সমানে কয়েকটা ইট দিয়ে সাদিদের মাথাটা ফাটিয়ে দিতে।
সম্ভব নয় বলে সে রাগ নিয়েই হনহনিয়ে ওয়াসরুমের দিকে এগিয়ে গেল।
দরজাটা ঠাস করে লাগিয়ে দিতেই সাদিদ হেসে ফেলল।
সে জানে তার প্রাণপাখি রাগ নিয়ে হলেও তার ইচ্ছা পূরণ করবে। কেননা সাদিদ তাকে এমনভাবেই জালে আটকিয়েছে।
সাদিদকে হাসতে দেখে ছোট্ট শাদমানও খিলখিলিয়ে হাসতে লাগল। সাদিদ শাদমানের গালে চুমু দিয়ে বলল,

— ” তোমার খালামণি, ওহ্ সরি তোমার চাচিমণি চাচ্চুর সাথে রাগ করেছে বাবা। দেখেছ রেগে কেমন এটমবোম হয়ে আছে? ”

—- ” পাপিমণি? ”

—- ” হুম পাপিমণি। ”

বলেই সাদিদ আবারও হাসল। ছোট্ট শাদমান সাদিদের কথার মানে কিছুই বুঝেনি। কিন্তু সাদিদকে হাসতে দেখে সেও হাসতে লাগল।

.

নীলা রেডি হয়ে নাস্তার টেবিলে আসতেই আবারও সাদিদের দর্শন। নীলা বিরক্তিতে চোখ-মুখ কুঁচকে শায়লা রহমানের পাশে গিয়ে বসল।
তিনি নীলাকে দেখেই অভিমান স্বরে বলে উঠলেন,

—- ” কিরে মা, তুই নাকি আজকেই চলে যাবি? ”

—- ” মামনি মন খারাপ করো না, কয়েকদিন পর আবারও আসব। ”

—- ” তুইতো বরাবরই এই কথা বলিস। কই, দেখি নাতো আসতে। ”

নীলা এবার ফিক করে হেসে দিলো। তারপর শায়লা রহমানকে একহাতে জড়িয়ে ধরে বলল,

—- ” এইবার সত্যিই আসব। প্রমিজ করছি। ”

—- ” আসতে যে হবেই প্রাণপাখি। নিজের বাড়ি ছেড়ে কয়দিন আর দূরে থাকবে? ”

—- ” কিরে কিছু বলেছিস? শুনতে পাইনি। ”

শাহেদের কথা শুনে সাদিদ হালকা কেশে গলা পরিষ্কার করল। তারপর একপলক নীলার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

—- ” তেমন কিছু না। বলছিলাম যে পায়েসটা খুব ভালো হয়েছে। অবশ্য আই লাভ সুইটস্। মিষ্টি জাতীয় সবকিছুই আমার পছন্দ। ”

কথাটা সাদিদ নীলার দিকে তাকিয়েই বলল। সাদিদের এমন ঠোঁট বাঁকিয়ে দুষ্টু হাসি দেখে নীলার হঠাৎ বিষম উঠে গেল। নিধি দ্রুত পানি দিতেই একঢুকে সে গ্লাসটা খালি করল। তারপর টেবিলে গ্লাসটা রাখতেই আবারও সাদিদের দিকে নজর পড়ল। কিন্তু এবার সাদিদকে দেখে সে নিজেই অবাক হয়ে গেল।
এই ছেলে কি গিরগিটির মত রং পরিবর্তন করে নাকি? নতুবা একটু আগে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসছিল আর এখন রক্তচক্ষু নিয়ে নীলার দিকে তাকিয়ে আছে!
নীলা আর সেদিকে তাকাতে চাইল না। চুপচাপ সে নাস্তা খাওয়াতে মনোযোগ দিলো।

—- ” নিধি বাবুকে নিয়ে আস। দেখি, সাথে যদি একটু খায়। ”

—- ” আপনার ছেলেকে কম বলেনি। সে এখনও ছবি দেখাতে ব্যস্ত। ”

—- ” বাবু এখনও অ্যালবাম নিয়ে বসে আছে? ”

—- ” কিসের ছবি ভাইয়া? ”

—- ” আর বলিস না। সকাল থেকেই আমাদের বিয়ের অ্যালবাম নিয়ে বসে আছে। একজনকে দেখে আর আমাদের জিজ্ঞাসা করে এইটা কে? আর যদি নিজে চিনতে পারে কথাই নেই। তার হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ। ”

শাহেদের কথাশুনে উপস্থিত সবাই হাসছে। নীলারও বোনপোর পাকনামি শুনে মনটা এবার ভালো হয়ে গেছে। তাদের কথোপকথনের মধ্যেই শাদ অ্যালবাম হাতে ডাইনিং টেবিলে আসলো।
শাহেদের পাশে গিয়ে কোলে উঠতে চাইলে, শাহেদ বামহাত বাড়িয়ে ছেলেকে কোলে তুলে নিলো।
শাদ তাকে অ্যালবামটা দেখিয়ে বলে উঠল,

—- ” পা.পি নাই। ”

সবাই তার কথাশুনে একে অপরের মুখের দিকে তাকালেও নীলা এবং সাদিদ স্থির হয়ে মাথা নিচু করে আছে।

—- ” বাবা পা.পি নাই? ”

—- ” বাবু শুধুমাত্র চাচ্চুই না, তোমার খালামণিও নাই। ”

শাহেদের কথা শুনে নিধিরও এবার মনটা খারাপ হয়ে গেল। কেননা তার বিয়ে নিয়ে এত হাসি-আনন্দ করা বোনটা, গায়ে হলুদের দিনথেকে একেবারে চুপসে গিয়েছিল। এত বলেও নীলাকে বিয়ের অনুষ্ঠানে হাজির করানো যায়নি। অপরদিকে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে সাদিদও বিয়ের সময় নিখোঁজ ছিল।
দুই পরিবারের যে দিনটা কেমন কেটেছে, সেটা কেবল তারাই জানে।
শুধুমাত্র লোাকসমাজের কথা চিন্তা করে সেদিন নীলা-সাদিদকে ছাড়াই বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়েছিল।
কি হয়েছিল তাদের? বা কেন তারা এমন চুপসে গিয়েছিল, সেটার কারণ দুই পরিবারের কেউ আজ পর্যন্ত জানে না। হাজার বলেও আশানুরূপ কোনো উত্তর তাদের থেকে পাওয়া যায়নি।

—- ” আচ্ছা বাদ দে শাহেদ। যা হয়ে গিয়েছে সেটা ভেবে আর কি হবে? ”

—- ” মা, বাদ দিতে চাইলেই কি সব বাদ দেওয়া যায়? ছোট্ট দুইটা ভাই-বোন এমন একটা খুশির মুহূর্তে আমাদের সাথে উপস্থিত ছিল না, এটা ভুলে যাওয়া কি এতটা সোজা? ”

—- ” ওকে ভাইয়া মনটা যেহেতু এত খারাপ, এককাজ করো তুমি আর ভাবীমণি আবার বিয়েটা করে ফেল। এবার কিন্তু প্লাস পয়েন্ট হিসেবে শাদমানও উপস্থিত থাকবে। দুইয়ের ভিতর তিন। কি বলো, আইডিয়াটা জোশ না? ”

বলেই সাদিদ ভ্রুজোড়া নাচালো। শাহেদ এবার হেসে দিয়ে সাদিদের পিঠে জোরে চাপড় বসালো।
তারপর সাদিদের কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলল,

—- ” আমার কিন্তু সমস্যা নেই, একপায়ে রাজি আছি। তোর ভাবীমণিকে রাজি করা, তাহলেই চলবে। বিয়ের সাথে সাথে বাসরটাও আবার হয়ে যাবে। ছেলে আসার পরতো নিজের বউকে কাছেই পাই না। ”

—- ” সো চিপ ভাইয়া। ভাবীমণিকে কিন্তু বলে দিবো। ”

শাহেদকে থামাতে বললেও সাদিদ নিজেই এবার হাসছে। হাসিমুখেই সে আবারও নীলার দিকে তাকালো।
নীলা ভ্রু কুঁচকে তাদের দুইভাইয়ের দিকেই তাকিয়ে আছে।
সাদিদ আচমকা নীলার দিকে তাকিয়ে সবার অগোচরে তাকে চুপ টিপল। নীলার চোখ বড় বড় করে ফেলা দেখে, সাদিদ আবার মৃদু হাসল।
নীলাও পরমুহূর্তে মাথা নিচু করে লাজুক হাসল। কিন্তু কেন হাসল, সেটার কারণ তার নিজের কাছেই অজানা রয়ে গেল।

_______________

গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে নীলা রাগে ফোঁসফোঁস করছে। কেননা শাহেদ তাকে জোর করে সাদিদের সাথে পাঠিয়েছে। জিজুকে অনেক সম্মান করে বলে মুখের উপর কথা বলতে পারেনি। কিন্তু এখন যে নিজের রাগটা দমন করতে পারছে না।
সাদিদ ডাইভিং সিটে বসে সবটাই দেখছে, আর ঠোঁটটিপে নিঃশব্দে হাসছেও। এই মেয়েটার রাগ-জেদ, অভিমান সবকিছুই তার কাছে অত্যধিক প্রিয়।
সাদিদ নিজের হাসি থামিয়ে এবার গম্ভীরস্বরে বলে উঠল,

—- ” আমার কি আর কোনো কাজ নেই? সারাদিন কি এখানেই বসে থাকব? ”

—- ” ইচ্ছে হলে ঘুমিয়ে থাকুন। আমাকে বিরক্ত করছেন কেন? ”

—- ” ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন আমি এখানে নাচতে নাচতে আসিনি। তোমার জিজু মানে আমার ভাইয়া খুবই আন্তরিকতার সহিত অনুরোধ করেছে, উনার প্রাণপ্রিয় শালিকাকে যেন ভার্সিটি ড্রপ করে আসি। বুঝেছেন? ”

নীলা কোনো উওর দিলো না। রাগ নিয়েই পিছনের দরজা খোলার জন্য হাত দিতেই সাদিদ ধমকিয়ে উঠল,

—- ” আমাকে কি তোমার ডাইভার পেয়েছ নাকি? চুপচাপ সামনে এসে বসো। ”

সাদিদের ধমকি খেয়ে নীলার রাগও তাকে একা ফেলে চলে গেছে। দুঃসময়ে সবাই স্বার্থপর।
নীলা মনের দুঃখ মনে নিয়ে সামনে এসে বসল। সাদিদকে সহ্য করতে না পারলেও সে তাকে ভীষণ ভয় পায়। যা নীলা ইতিমধ্যেই হাড়েহাড়ে বুঝে গেছে।
নীলা একেবারে কাচুমাচু হয়ে বসে পড়েছে। তার কোনো নড়চড় নেই।
সাদিদ তাকে দেখে নিঃশব্দে হাসল। নীলা সিটবেল্ট না লাগিয়ে বসে রয়েছে। তাই সাদিদ এবার গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,

—- ” নীলাঅঞ্জনা সিটবেল্ট লাগাও। ”

নীলা ভদ্রমেয়ের মতো সিটবেল্ট বেঁধে নিলো। সাদিদকে এখন তার ভীষণ ভয় করছে।
কিন্তু অপরদিকে সাদিদ নিজের প্রাণপাখির এমন বাচ্চামি চেহারা দেখে ভীষণ মজা পাচ্ছে। সে আর কিছু না বলে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
নীলা এতক্ষণে একবারও সাদিদের দিকে তাকালো না।
কিন্তু সাদিদ আড়চোখে মুগ্ধ দৃষ্টিতে কেবল নীলাকেই দেখছে। কি আছে এই মেয়েটার মাঝে? সাদিদের এত দেখেও কেনো তৃপ্তি মিটে না? সহস্র যুগ ধরে দেখলে বোধহয় খানিকটা তৃপ্তি পাওয়া যেত। তার চোখজোড়া হয়তো একটু আরাম পেত।

নীলার ভার্সিটির সামনে গাড়ি ব্রেক করতেই, নীলা এবার চমকিত দৃষ্টিতে সাদিদের দিকে তাকালো। নীলা এতসবের মধ্যে সাদিদকে ভার্সিটির নাম বা ঠিকানা কিছুই বলেনি। তাহলে সে জানল কিভাবে?

—- ” এটা যে আমার ভার্সিটি আপনি জানেন কিভাবে? আমিতো বলিনি আপনাকে! ”

সাদিদ নীলার দিকেই তাকিয়ে ছিল। তার এমন কথায় সে মৃদু হাসল। কিন্তু প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেল।
নীলার পাশের দরজাটা খোলে দিতেই, নীলা অবাক চাহনি নিয়েই গাড়ি থেকে নামল।
সাদিদ নীলার এমন অবস্থা দেখে দুষ্টুমিস্বরে বলে উঠল,

—- ” এইসবে এত বুদ্ধি খরচ না করে পড়াশোনাতে করো। তোমার রেজাল্ট যে কি আমি কিন্তু সেটাও জানি। ”

সাদিদের রেজাল্ট নিয়ে খোঁচা দেওয়াতে নীলার এবার লজ্জা লাগছে। তাই আর কথা না বাড়িয়ে সে দৌড় দিলো। এই জায়গা থেকে প্রস্থান করা-ই এখন লজ্জা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়। কেন যে আরেকটু ভালোভাবে পড়াশোনাটা করল না। তাহলে হয়তো সাদিদের সামনে আজ এতটা লজ্জা পেতে হতো না।
সাদিদ নীলার দৌড় দেখে পেছন থেকে উওেজিত কন্ঠে বলে উঠল,

—- ” আরে বোকা মেয়ে আস্তে যাও। পড়ে গিয়ে নাহয় পা ভেঙে ফেলবে। ”

কে শুনে কার কথা। নীলা এক দৌড়ে সাদিদের দৃষ্টির বাহিরে।
সাদিদ এবার হাসতে লাগল। আর নিজের মনেই বলে উঠল,

—- ” পাগলী মেয়ে একটা! ”

.

নীলাকে এভাবে দৌড়ে আসতে দেখে শান্ত দ্রুত তার দিকে এগিয়ে আসলো। নীলা ক্রমাগত হাঁপাচ্ছে।

—- ” কিরে নীল এমন দৌড়াচ্ছিস কেন? কি হয়েছে? ”

—- ” শান্ত, সে এসেছে। ”

—- ” কে এসেছে? ”

—- ” সাদিদ ইবনে শাহরিয়ার। ”

শান্ত নীলার কথাশুনে অবাক হলেও পরমুহূর্তেই দমফাটানো হাসিতে মেতে উঠল।
নীলা শান্তর হাসিতে প্রচন্ড বিরক্ত। সাদিদের কথা বললেই এই মেয়েটা হাসতে হাসতে খুন হয়ে যাওয়ার অবস্থায় পড়ে।
শান্তর হাসি যেন থামতেই চাইছে না। সে এবার হাসিমুখেই বলে উঠল,

—- ” মানে, তোর সেই চুম্বন পুরুষ এসে গেছে? হায় নীল এবার যে তোর ডিগ্রি বাড়বে। ”

—- ” মানে! কি ডিগ্রি? ”

—- ” সেইবার তো শুধু চুমু খেয়েছিল, এবার তার উপরের ডিগ্রিতে যাবে। ”

বলেই শান্ত আবারও হাসতে লাগল। আর নীলা রেগে গিয়ে বেঞ্চে রাখা বই দিয়ে ধুমধাম তাকে দিতে লাগল।

—- ” আরে থাম, মেরে ফেলবি নাকি? ”

—- ” তোকে আমি মেরেই ফেলব। ফাজিল মেয়ে, জানস না ঐ অসভ্যটাকে আমি কতটা অপছন্দ করি? ”

—- ” ভালোও তো বাসিস। ”

নীলার হাত আচমকা থেমে গেল। কি বলল শান্ত এটা?
নীলাকে হঠাৎ মুষড়ে যেতে দেখে শান্ত এবার হাসি থামাল। নীলার কাঁধে হাত রেখে বলে উঠল,

—- ” নীল আমাকে ভুল বুঝিস না। তোকে আমি আরও আগেই এই কথাটা বলটাম। কিন্তু কেন যেন বলতে চেয়েও বলতে পারিনি। ”

—- ” তুই এটা কি বললি শান্ত? ”

—- ” তুই তাকে ভালোবাসিস নীল।
ঘৃণা করতে করতে তাকেই মন দিয়ে দিয়েছিস। তোকে আমি ছোটবেলা থেকেই জানি। তাই তোর মনটাও এখন পড়তে পারি। তুই তাকে সত্যিই ভালোবাসিস। ”

—- ” অসম্ভব! আমি কেন উনাকে ভালোবাসব? আমিতো উনাকে ঘৃণা করি। একদম বাজে বকবি না। ”

—- ” আচ্ছা যা স্বীকার না করতে চাইলে আর বলব না। এখন আয় স্যার এখনই চলে আসবে। ”

শান্ত বিষয়টাকে আর বাড়াতে না চাইলেও নীলা যে সেখানেই আটকে পড়ে আছে। বারবার তার কানে শুধু একটা কথায় প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।

—- ” তুই তাকে ভালোবাসিস। ”

সবগুলো ক্লাসে নীলা কেবল আনমনে বসে ছিল। তার মাথায় কেবলমাত্র সাদিদ-ই বিচরণ করেছে। অবশ্য তার মাথায় সবসময় সাদিদ-ই বিচরণ করে গেছে। যার ধরুন নীলা তাকে আরও বেশি অপছন্দ করে।
যে মানুষটা তার এতগুলো বছর নরক বানিয়ে দিয়েছে, তাকেই সে রাত-দিন চিন্তা করতে থাকে।
আচ্ছা কেউ কি কাউকে এতটা ঘৃণা করতে পারে, যার ধরুন চব্বিশ ঘণ্টা তাকেই মনে করবে?
নীলা উত্তর খোঁজে পায় না।
তারপর আরও রেগে যায়। এভাবেই চলে যাচ্ছে সাদিদকে ঘিরে তার বিতৃষ্ণাভরা দিনগুলো।
হঠাৎ পাশ থেকে শান্তর ধাক্কায় নীলার হুঁশ ফিরে।

—- ” কিরে নীল, কই হারিয়ে গেলি? ক্লাসতো শেষ। ”

—- ” ওহ্ খেয়াল করিনি, চল। ”

—- ” কার খেয়ালে মগ্ন ছিলি? ”

নীলা চোখ গরম করে তাকাতেই শান্ত ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে নিষ্পাপ ভঙ্গি ধরল।
দুইজনে ক্লাস থেকে বের হতেই করিডোরে মেয়েদের ফুসুরফুসুর শুনতে পেল।
শান্ত ভ্রু বাঁকিয়ে নীলার উদ্দেশ্য বলল,

—- ” কি হয়েছে রে? সবাই কি নিয়ে এত ফিসফিস করছে? ”

—- ” আমি কিভাবে জানব? তুই না নিউজ রিপোর্টার, তোর কাছেই তো এসব আজেবাজে নিউজ জমা থাকে। ”

—- ” একদম বাজে বকবি না। তোর মতো কি আমিও দায়িত্বহীন নাগরিক হবো নাকি? দেশে কি ঘটছে না ঘটছে এসব দেখা এবং সবার সাথে এগুলো নিয়ে আলোচনা করা আমাদের কর্তব্য। ”

নীলা বিরক্তিকর দৃষ্টিতে শান্তর দিকে তাকালো। কিন্তু কিছু বলল না। এখানে কিছু বলেও লাভ নেই। কারণ শান্ত শোনার মানুষ না। সে তার কর্তব্য পালন করেই ছাড়বে।
নীলাকে পিছনে ফেলে শান্ত কয়েক কদম এগিয়ে গেল। নিজের ক্লাসেরই একটা মেয়ের সাথে কথা বলে হুড়মুড়িয়ে নীলার দিকে ছুটে আসলো।

—- ” দোস্ত জানিস কি হয়েছে? ”

—- ” আমি তোর মতো এত আজাইরা না। ”

—- ” চুপ, বাজে বকবি না। নীল ভার্সিটিতে নাকি সেই হ্যান্ডসাম একটা ছেলে এসেছে। মেয়েরা তো ক্লাস-ট্রাস খেয়ে বসে আছে। ”

—- ” তাদেরতো এগুলো রেগুলার খাবার। আর কত খাবে? ”

—- ” ধ্যাত! নীল কথার ইম্পরট্যান্স বুঝ। ছেলেটা দেখতে নাকি হেব্বি সুন্দর। চল না একবার গিয়ে দেখে আসি। ”

—- ” অসম্ভব! কে না কে এসেছে, আমি কেন তাকে দেখতে যাব? ”

—- ” প্লিজ চল না দেখে আসি। সবাই এত বলাবলি করছে, না দেখতে পারলে পেটের ভাত-ই হজম হবে না। ”

—- ” বদহজমিতে মরে যা। ”

বলেই নীলা ঘটাঘট সামনে পা ফেলে এগিয়ে গেল। শান্ত অসহায় দৃষ্টিতে নীলার গমনপথের দিকে এগিয়ে গেল।
তার একটা ক্রাশ খাওয়ার মারাত্মক ইচ্ছা। কিন্তু সবাই সেটা খেয়েদেয়ে পেট ফুলিয়ে ফেললেও, শান্ত সেটা কোনোভাবেই খেতে পারছে না। তাই ভেবেছিল ক্রাশ খাওয়ার স্বাদটা কেমন, সেটা একটু দেখবে।
কিন্তু নীলা মাঝপথে এসে বিঘ্ন ঘটালো।

কলেজমাঠে আসতেই নীলার চক্ষু চরকগাছ!
সে এখানে কি করে?

—- ” কিরে নীল হা করে কি দেখিস? ”

নীলার দৃষ্টি অনুসরণ করে শান্ত সেদিকে তাকালো। আর তারপরই শোনা গেল চিৎকার।

—- ” দোস্ত মাই ক্রাশ!
আমি ক্রাশ খেয়েছি দোস্ত, টেস্টটাও হেব্বি মজা লাগছে। দোস্ত ঐ দেখ তোর দুলাভাই। আমার কিউট জামাই দাঁড়িয়ে আছে নীল। ”

নীলা যতটা না সাদিদকে দেখে অবাক হয়েছিল, শান্তর এমন কথা শুনে সেটা দ্বিগুণ হয়ে গেল। কি বলে এই মেয়ে?
নীলা এবার ভালোভাবে আশেপাশে তাকাতেই দেখতে পেল মেয়েরা কিভাবে সাদিদকে গিলে খাচ্ছে।
মেয়েরা যে এতটা নির্লজ্জ হতে পারে, নীলা সেটা আগে জানলেও আজ যেন মাথায় রক্ত উঠে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে এক চড়ে সবগুলোর দাঁত ফেলে দিতে।
নীলা রাগী চোখে এবার সাদিদের দিকেও তাকালো। সাদিদকে দেখে তার রাগটা যেন আরও কয়েকদাপ বেড়ে গিয়েছে।
ভিতরে কালো একটা বি গলার ট্রি-শার্ট। উপরে সাদা রঙের একটা শার্ট পরে সবগুলো বোতাম খোলে রেখেছে। জিন্সের সাথে ক্যাজুয়াল লোফার পরেছে। জেল না দেওয়াতে স্লিকি চুলগুলো বারবার তার কপালে এসে পড়ছে। আর বাম হাতে পরিহিত সিনথেটিক স্ট্রেপের ব্র্যান্ডের ঘড়িটা সূর্যের আলোতে চিকচিক করছে। হাতদিয়ে একটু পরপর চুলগুলো কপাল থেকে সরিয়ে দিয়ে, সাদিদ গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে মোবাইলে ব্যস্ত।

রাগটা যেন নীলার মাথা বেধ করে এবার আকাশে উঠে যাচ্ছে। এত বাবু সেজে ভার্সিটি আসার কি হয়েছে?
নীলা কেন যে আসার সময় ভালোভাবে সাদিদকে খেয়াল করেনি, এটা ভেবে তার এখন নিজের উপর-ই রাগ হচ্ছে। নতুবা এই সাজে তাকে সে কখনোই নিজের সাথে নিয়ে আসত না।
নীলার এমন অযাচিত ভাবনার কারণ তার এখন খেয়ালে নেই। কেননা সে এখন রাগে ফুঁসছে।

—- ” সব মেয়ে পটানোর ধান্দা। ”

দাঁত চেপে কথাটা বলেই নীলা শান্তর দিকে তাকালো।
অপরদিকে শান্ত মুগ্ধে আবিভূত হয়ে মুখ দিয়ে নানারকম বাক্য উচ্চারণ করছে।
নীলা আর এসব সহ্য করতে পারল না। ধুমধাম পায়ে সাদিদের দিকে এগিয়ে গেল।

—- ” আপনি এখানে কি করেন? ”

নীলার এমন রাগী গলা শুনে সাদিদ মাথা তুলে তাকালো। হঠাৎ করে নীলার এমন রাগে লাল হয়ে যাওয়া মুখের কারণ, সে বুঝতে পারছে না।
শান্তও ইতিমধ্যে নীলার পিছনে গিয়ে দাঁড়াল। নীলার কানে ফিসফিসিয়ে বলে উঠল,

—- ” আমার ক্রাশবয়কে তুই চিনিস? ”

—- ” উনার নাম সাদিদ ইবনে শাহরিয়ার। ”

—- ” হে আল্লাহ এতবড় অবিচার! আল্লাহ আমি এটা কিভাবে সহ্য করব?
বন্ধু যখন জামাই লইয়া আমার বাড়ির সামনে দিয়া রঙ্গ কইরা হাইট্টা যায় ফাইট্টা যায় বুক্টা ফাইট্টা যায়। দোস্ত আমি এই গান কেমনে গাইব? হে আল্লাহ তুমি এটা কিভাবে করতে পারলা? ”

শান্তর গালে হাত দিয়ে এমন পলাপ শুনে সাদিদ-নীলা দুইজনই শক। নীলা শান্তর স্বভাব জানলেও সাদিদ পুরো ভ্যাবাচেকা খেয়ে গিয়েছে।

—- ” শান্ত তোর দাঁতগুলো সব ফেলে দিব। চুপ কর ফাজিল মাইয়া। ”

—- ” দোস্ত আমি কেমনে চুপ করব? আমার যে বুকটা ফাইট্টা যাইতাসে। ”

—- ” আর একটা বাজে কথা বললে, উষ্ঠা দিয়ে তোকে উগান্ডা পাঠাব। ”

শান্ত বোধহয় এবার কিছুটা নিভল। কিন্তু পরমুহূর্তেই সাদিদের দিকে তাকিয়ে আবারও অশ্রুহীনচোখে কান্না শুরু করল। শব্দহীন, অশ্রুহীন এক কান্না।

#চলবে…

[ পাঠকগণ আপনাদের পাঠপ্রতিক্রিয়াগুলো আমাকে জানাবেন। আমি আপনাদের ভালোলাগা-মন্দলাগাগুলো জানতে আগ্রহী। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here