অন্তরালের অনুরাগ ❤ পর্বঃ৩১

0
5828

গল্পঃ #অন্তরালের_অনুরাগ
লেখনীতেঃ #নাহিদা_নীলা
#পর্বঃ ৩১

পুরো রাত হইহট্টগোল করে ক্লান্ত সবাই এবার কিছুটা চুপসে এলো। ঘুমুঘুমু চোখ নিয়ে সবাই প্রায় একে অপরের দিকে ঝুকে পড়ছে। প্রিয়তীও সেই বহুক্ষণ আগেই ক্লান্ত হয়ে অর্ণবের কাঁধে মাথা রেখেছে। বিয়ের এতো ধকল, তার উপর ফাজিলগুলোর অত্যাচারে বেচারি একেবারে মিইয়ে পড়েছে। অর্ণব তাকে একহাতে নিজের বুকের সাথে শক্ত করে আগলে রেখেছে। আর পিঠে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ঢাকায়-ই এখন প্রায় শীত শীত আবহাওয়া। আর সেখানে শ্রীমঙ্গল হলে তো অবস্থা খারাপ। বেশ ঠান্ডা পড়েছে এখানে। অর্ণব পাশ থেকে চাদর নিয়ে নিজেকে সহ প্রিয়তীকে একি চাদরে জড়িয়ে নিলো। উষ্ণতা পেয়ে প্রিয়তীও অর্ণবের বুকে একেবারে মুখ লুকিয়ে বসেছে। অর্ণব নিঃশব্দে হেসে নিজের সদ্য বিবাহিত বউয়ের মাথায় ভালোবাসার দীর্ঘ চুমু খেল।
প্রিয়তীর বন্ধ আখিঁদ্বয়েই খুশির রেখা ঝলমল করল। সেটা অদৃশ্যমান হলেও গালের লাল আভাটা অর্ণবের নজর এড়ালো না। সেও নিঃশব্দে হেসে তাকে আরও শক্তহাতে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।
মোটামোটি আর সবাই এতক্ষণে ঘুমে তলিয়ে গেলেও অর্ণবের সঙ্গে আরও দুইজনের চোখে এখনও ঘুমের লেশমাত্র নেই। তানবীর আড়চোখে অর্ণবকে প্রিয়তীর মাথায় চুমু খেতে দেখে নিয়েছে। তাই সে এবার বসা থেকে দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল। এতটুকু বুঝার বয়স তো তার এখন হয়েছে। সুতরাং শুধু শুধু তাদেরকে বিরক্ত করার মানে কি?
তানবীর যাবার কয়েকমুহূর্ত পর শান্তও রুম থেকে কেটে পড়ল। বিবাহিত দম্পতির সাথে এই মুহূর্তে বসে থাকতে তারও ভীষণ লজ্জা লাগছে।
বাহিরে বেশ শীত পড়েছে। কিন্তু তানবীর তারপরও গরম কাপড় ছাড়াই বাহিরে চলে এসেছে। সেই জন্য ঠান্ডার তাপে পুরুষ মানুষ হয়েও হালকা শীত লাগছে। কিন্তু সে আপাতত ঐদিকে পাত্তা দিতে চাইছে না৷ ভোর হবে মাত্রই। তাই সূর্যাদয়টা উপভোগ করতে চায়।
শান্ত তানবীরের থেকে বেশ অনেকটা দূরে এসে দাঁড়াল। পিছন থেকেই তানবীরকে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে পেন্টের পকেটে দুইহাত দিয়ে একদৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে থাকতে দেখল। সে তার দিকে দুইকদম এগিয়ে আবার থেমে গেল।
সন্ধ্যার ঘটনা মনে হতেই তার ভয় লাগছে। তানবীরের উগ্র রূপটা তার হজমশক্তির বাহিরে। কিন্তু তারপরও কিসের এক অদৃশ্য শক্তি এসে তার এই ভয়কে আজ কাবু করে নিয়েছে। যার ধরুন সবকিছুকে ছাপিয়ে সে গুটিগুটি পায়ে তানবীরের পিছনে গিয়ে দাঁড়াল।
তানবীর সামনে তাকিয়ে থাকলেও বুঝতে পাড়ল কারও উপস্থিতি। এবং সেই ব্যক্তিটি কে হতে পারে সেটাও সে শতভাগ নিশ্চিত। কেননা তার শরীরের ঘ্রাণ, নুপুরের রিনিঝিনি, চুলের মন মনমাতানো সুভাস সবটাই তানবীরের নিকট ভীষণ পরিচিত। কিন্তু সে কোনো শব্দ উচ্চারণ করল না। না রাগ কিংবা জেদ দেখাল। কেবল ঠাঁই আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে রইল।
দেখতে দেখতেই সূর্যের লাল আভা পৃথিবীর বুকে ঢলে পড়ল। শান্ত এবার পায়ের গতি আরও খানিকটা বাড়িয়ে একেবারে তানবীরের পাশ ঘেঁষে দাঁড়াল। আল্লাহ জানে তার এতো সাহস আজ কোথায় থেকে উদয় হলো? কয়েকঘন্টা আগেও তো এই ছেলেটাকে দেখলেই সে ভয়ে চুপসে যেত। আর তার করা অপরাধের শাস্তি স্বরূপ নিজের মধ্যে এই ব্যক্তির জন্য রাগ-অভিমানের পাহাড়ও গড়ে তুলেছিল। কিন্তু হঠাৎ করে তার কি হয়ে গেল? কোথায় গেল সবকিছু?
কিসের জন্য তার এতো পরিবর্তন?

— ‘ নিজের জন্য কোনো কৈফিয়ত দিতে আসিনি। শুধু এতটুকুই বলার ছিল, সবসময় আমরা চোখে যা দেখি সেটাই সত্যি হয় না। চোখের দেখাতেও ভুল থাকতে পারে। বিষয়টা বিশ্বাসের। যদি বিশ্বাস না থাকে তাহলে লোকমুখে শুনা কথাতেও মিথ্যাকে সত্য মনে করা যায়। ‘

বাক্যটুকু সমাপ্ত করে শান্ত ছোট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তার যেটুকু বলার ছিল সেটা বলা হয়ে গিয়েছে। এখনও যদি তানবীর নিজের মধ্যকার রাগ পুষে রেখে তাকে ঘৃণা করে তবে এক্ষেত্রে তার আর কিছু করার নেই। সে যেই পথে এসেছিল আবারও একি পথে পদযুগল চালিয়ে নিলো। কিন্তু বেশি একটা দূরত্ব তৈরি করতে পারেনি। কেননা শক্তপোক্ত একটা হাত তার নরম হাতের কব্জিতে ধরে নিয়েছে।
শান্ত বিস্ফোরিত চোখে পিছনে ফিরল। তানবীরকে নিজের হাত ধরে রাখতে দেখে তার চমকের মাত্রা আরও বেড়ে গেল। এমনটা সে কোনোকালে ভাবতেও হয়তো পারেনি।
তানবীর এতক্ষণ চোখ নিচু করে ছিল। এবার শান্তর মুখশ্রীতে নজর বুলালো। সদ্য ফোটা ভোরের স্নিগ্ধ রক্তিম আলোতে শান্তর উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের মুখটা যেন আরও মায়াবী হয়ে উঠেছে। রাতের গুছিয়ে রাখা চুলগুলো এখন খানিকটা এলোমেলো। কিছু চুল উড়ে এসে সমানে তার মুখের উপর পড়ছে।
শান্তর এসবে নজর নেই। সে কেবল একদৃষ্টিতে তানবীরের চোখে দৃষ্টিপাত করে রয়েছে। কি হচ্ছে সে আপাতত সেটা বুঝতে চায়ছে।
তানবীর শান্তর ধরে রাখার হাতের দিকে একপলক তাকিয়ে আবারও তার চোখে নিজের চোখ স্থাপন করল। সে ইতিমধ্যে নিজের কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। আর কোনো কিছুর বাধা সে মানবে না। যা হয় হোক কিন্তু সে নিজেকে আর আটকে রাখবে না। খোলা পাখির ন্যায় নিজেকে মুক্ত করবে।
খাঁচার ভেতর থেকে বেড়িয়ে এসে পাখিটি যেমন হাস্যউজ্জ্বল হয়ে পৃথিবীর আলো-বাতাসকে গ্রহণ করে, তেমনিভাবে তানবীরও শান্তকে শক্ত হাতে নিজের বুকে জড়িয়ে নিয়ে তার প্রবাহমান হৃদকম্পন অনুভব করছে। অনুভব করছে নিজের বুকপাজঁরের সাথে ঝাপটে জড়িয়ে রাখা এই মেয়েটির পুরো শরীরের মাতাল করা ঘ্রাণকে। তার শিহরিত শরীরের অনবরত কম্পনকে। নরম দেহটা যেন শিতের হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় থরথর করে কাঁপছে।
কিন্তু তানবীর তবুও নিজেকে শান্তর থেকে দূরে সরাল না৷ আর কত দূরত্ব বজায় রেখে চলবে? এবার যে কাছে আসার সময়। ভালোবাসার সময়। একেঅপরকে ভালোবাসায় বেঁধে নিয়ে সব কষ্টকে ঘুচে নেবার সময়। তাই নিজের বলিষ্ঠ শরীরের বাহুর শক্ত বন্ধন সে আরও জুড়ালো করল। আগলে নিয়ে তাকে ভূমি থেকে উপরে তুলল। এই মেয়েটার সবটুকু ভার নিজের উপর নিয়ে সে তাকে নিজের সাথে পুরোপুরি মিশিয়ে নিলো।

বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্ত হতভম্ব। পুরোপুরি বাকরুদ্ধ! কিংকর্তব্যবিমুঢ়। এমন অপ্রস্তুত ঘটনার সম্মুখীন সে এই জীবনে বোধহয় আর হয়নি। মুখ ফুটে কিছু বলাও যাচ্ছে না। কন্ঠনালী যেন কেউ শক্ত করে চেপে ধরেছে তার৷ শব্দ উচ্চারণ তার জন্য এইমুহূর্তে অসম্ভব ব্যাপার-স্যাপার।
তানবীর-ই তাকে এই অবস্থা থেকে রেহাই দিতে এগিয়ে আসলো। শান্তর কাঁধ থেকে নিজের মুখ তুলে দুইজন মুখোমুখি হলো। তানবীর কিছুমুহূর্ত নিষ্পলক মায়াবতীর মুখপানে তাকিয়ে থেকে ললাটে এলোপাতাড়ি চুমু খেতে লাগল। আজ এই মুহূর্তে কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে সে নিজের জমানো আদর শান্তকে বিলিয়ে দিতে ব্যস্ত।
আর অপরদিকে অপরজনের জন্য আজ বোধহয় চমকিত হয়ে ভ্যাবাচেকা খাওয়ার দিবস। নতুবা শান্ত বারবার এমন সব ভয়ংকর অবস্থায় পড়বে কেন?
নিজের সঙ্গে কি হচ্ছে সেটা অনুভব করতেই শান্তর শিরদাঁড়া বেড়ে শীতল বায়ু বেয়ে গেল। লোমকূপগুলোও থেকে থেকে দাঁড়াতে শুরু করল। কিন্তু এতকিছুর মধ্যেও তাকে যেই বিষয়টা অস্থির করে ফেলছে সেটা হচ্ছে অস্বস্তি।
তার এই মুহূর্তে চরম লেবেলের অস্বস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু শান্তর সেটা বিন্দুমাত্র হচ্ছে না।
বরং শরীর মনজুড়ে তার শিহরণ বয়ছে৷ কিন্তু এমনটা তো হবার কথা নয়। কেননা কোনো ছেলে তাকে এতো কাছ থেকে স্পর্শ করছে। এখানে তার অস্বস্তি হওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু সেটা হচ্ছে না কেন?
শান্ত যখন নিজের বর্তমান পরিস্থিতিতে ভ্যাবাচেকা খেয়ে ভাবনায় বিভোর, তখন তানবীর শান্তর কপালে নিজের শেষোক্ত দীর্ঘায়িত চুমুটা খেল। তারপর আস্তেধীরে এতক্ষণ পর তাকে ভূমিতে পদাচারণ করতে দিলো। কিন্তু নিজের থেকে আলাদা করল না। বরং তার দুইগালে নিজের বলিষ্ঠ হাতদুটো স্থাপন করে কপালে কপাল ঠেকিয়ে, রূদ্ধশ্বাস কন্ঠে এতক্ষণের নীরবতার ছেদ ঘটিয়ে বলে উঠল,

— ‘ বিশ্বাস করতে চাই। কিন্তু জীবনে এত খারাপভাবে ঠকে গিয়েছি যে বিশ্বাস শব্দটাতেও ঘৃণা চলে এসেছে। পারবে না শব্দটাকে আবারও ভালোলাগার সারিতে দাঁড় করাতে? পারবে না এই অগোছালো ছেলেটাকে দায়িত্ব নিয়ে গুছিয়ে দিতে? পারবে না একটু যত্নে আগলে রাখতে? ‘

শান্তর আঁখিপল্লব এতক্ষণে বন্ধ হয়ে এসেছে। তানবীরের তপ্ত নিঃশ্বাসগুলো তার চোখে মুখে আঁচড়ে পড়ছে। তার শরীরজুড়ে অচেনা-অজানা এক ভালোলাগা বয়ে যাচ্ছে। ঠিক-ভুল, রাগ-ক্ষোভ সবকিছুকে ছাপিয়ে সে অবশেষে আটকে যাওয়া কন্ঠে অপ্রত্যশিত এক শব্দ উচ্চারণ করল।

— ‘ পা..রব। ‘

ছোট্ট একটা শব্দ। কিন্তু সবটা যেন শান্তর জন্য বিপরীত প্রতিক্রিয়া। উত্তরটা যেন অন্যরকম হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হলো অন্যরকম। একেবারে ধরাছোঁয়ার বাহিরে।
তানবীরের কর্ণকোহরে শব্দটা পৌঁছাতেই সে চোখ খোলল। শান্তর মুখটা উঁচু করে চোখে চোখ রাখল। অতঃপর আবারও কপালে নিজের ঠোঁটের উষ্ণ পরশ বুলিয়ে দিলো।
শান্ত এবার বেশ লজ্জা পেল। তানবীরের বুকেই মুখ লুকিয়ে নতজানু হলো। তানবীর সেটা পরখ করে নিঃশব্দে হাসল। কিন্তু শান্ত লজ্জা পাবে বিধায় আর কিছু বলল না। শুধু নিজের পেশিবহুল হাতদুটো দিয়ে শান্তকে উষ্ণ আলিঙ্গনে আবদ্ধ করল। শক্ত করে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরল মেয়েটাকে।
শান্ত যেন তানবীরের এমন কান্ডে আরও লজ্জা পেল। গাল দুটো টমেটোর ন্যায় লাল-হলুূদ হতে লাগল।
কোনো কনফেশন নেই। নেই কোনো প্রতিশ্রুতি। কিন্তু তারপরও তারা যেন আজ একে অপরের মন পড়তে পাড়ছে। নিজেদের অব্যক্ত কথাগুলো তারা আজ নিজেরাই বুঝে নিতে পাড়ছে। নীরব থেকেও যেন অনুভূতিগুলো তাদেরকে আজ একে অপরের সবটুকু বুঝিয়ে দিতে সক্ষম।

_________________

জানালার থাই গ্লাস ভেদ করে সদ্য ফোটা সূর্যের কিরণরেখা চোখে পড়তেই নীলার কপাল খানিকটা কুঁচকে এলো। সারারাত প্রায় নির্ঘুম। মিনিটখানিক হবে বোধহয় সে চোখটা বন্ধ করেছে। এরিমধ্য চোখের উপর স্নিগ্ধ আলোটাও নীলার কাছে এইমুহূর্তে বিরক্তিকর মনে হচ্ছে। সে চোখ পিটপিট করে খোলল। ইচ্ছে না থাকা সত্বেও এখন উঠে গিয়ে পর্দাটা টেনে দিতে হবে। কিন্তু যেই না উঠতে যাবে বুকের উপর ভারি কিছুর অবস্থান টের পেল। চোখ নিচে নামাতেই কপালে চুল এলোমেলো হয়ে পড়ে থাকা ছোট্ট বাচ্চাটির ন্যায় ঘুমিয়ে থাকা সাদিদের মুখশ্রী চোখে পড়ল। ইশশ কি কিউট লাগছে!
সাদিদ নীলার বুকের উপর মুখ গোঁজে শুয়ে আছে। তার চোখগুলোও বন্ধ রয়েছে। তাই সজাগ না জেগে আছে এই মুহূর্তে সেটা বুঝা যাচ্ছে না।
হঠাৎ নিজেদের অবস্থান বোধগম্য হতেই লজ্জায় নীলা জড়সড় হতে লাগল। না সাদিদকে ডাকতে পারছে আর না নিজে নড়তে পারছে। কিন্তু এমনভাবে সাদিদের সাথে থাকতেও তার বড্ড লজ্জা লাগছে। নীলা খানিকটা নড়াচড়া করতেই সাদিদ চোখ বন্ধ রেখেই নীলার ডানহাতটা নিজের মুখের কাছে নিয়ে গেল। বন্ধ চোখেই খানিক বাদে বাদে তার আলতা রাঙা আঙ্গুলগুলোতে চুমু খেতে লাগল।
সাদিদের কর্মকান্ডে নীলার বোধগম্য হলো যে সাদিদও জেগে রয়েছে। তার চোখেও নীলার ন্যায় ঘুমেরা ধরা দিতে পারেনি। কিন্তু নীলা এখন কি করবে?
এইভাবে আর কত সময়? সে এবার নিঃশব্দে বুক থেকে সাদিদকে সরাতে গেল। সাদিদ পরমুহূর্তেই চোখ তোলে নীলার দিকে দৃষ্টিপাত করল। অতঃপর ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল,

— ‘ কি হয়েছে? এমন নড়াচড়া করছ কেন? ‘
— ‘ একটু উঠব। ‘

নিচুস্বরে কথাটা বলেই সে আবারও নতজানু হলো। সাদিদ কিছু একটা অনুমান করে তার উপর থেকে সরে আসলো৷ এবং নিজের বালিশে উবুড় হয়ে শুয়ে পড়ল। নীলা আর একমুহূর্তও নষ্ট করতে চাইল না। দ্রুত পাশ থেকে শাড়িটা নিয়ে নিজের শরীরে ভালোভাবে পেঁচিয়ে নিলো। ঘুম যেহেতু ভেঙেই গিয়েছে তাই আর ঘুমানোর চিন্তাটা বাদ দিলো। কিন্তু সাদিদের অসুবিধা যেন না হয় তাই পর্দাটা ঠিকঠাক টেনে দিয়ে সে ওয়াসরুমে চলে গেল।
অনেকটা সময় নিয়ে ফ্রেশ হলো। কিন্তু কাপড় পরতে গিয়ে বাধল বিপত্তি। এটাতো তার জন্য বরাদ্দকৃত রুম নয়। তাই এখানে নিজের কাপড় পাওয়া ইম্পসিবল। তাই পুরোনো শাড়িটাই আপাতত কোনোভাবে পরে রুমে গিয়ে চেইঞ্জ করার চিন্তা করল।
নীলা ওয়াসরুম থেকে বেড়িয়ে সে একপলক খাটে উবু হয়ে শুয়ে থাকা সাদিদের দিকে তাকালো। পরমুহূর্তেই লাজুক হেসে মাথা নিচু করল। এখন কি শান্ত দেখাচ্ছে। আর এতক্ষণ?

— ‘ অসভ্য। ‘

বিড়বিড় করে কথাটা সম্পূর্ণ করেই সে ড্রেসিংটেবিলের আয়নায় নিজেকে একবার দেখে নিলো। না সবকিছু ঠিকঠাক রয়েছে। এবার শুধু সবার নজর এড়িয়ে কোনোভাবে রুমে পৌঁছাতে পাড়লেই চলে। সে ভেজা চুলে হালকা চিরুনি বুলিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। কিন্তু দরজা খোলতে গিয়েও পাড়ল না। গুটি পায়ে এগিয়ে আসলো বিছানার দিকে। সাদিদ কি জেগে রয়েছে? নাকি সজাগ?
নীলা ঠিক বুঝতে পারছে না। বলে গেলে ভালো হতো। কিন্তু ডেকে বলে যাবে না-কি না সেটা নিয়ে দ্বিধায় পড়েছে। সে সাদিদের দিকে কিছুটা ঝুঁকে আসলো। তীক্ষ্ণ চোখে বুঝার চেষ্টা করল সে ঠিক কোন অবস্থায় রয়েছে। যখন বুঝতে পাড়ল সে গভীর ঘুমে তলিয়ে রয়েছে তখন তাকে সজাগ না করার সিদ্ধান্ত নিলো।
পাশ ফিরে যখনই চলে যেতে নিবে হাতের মুঠিতে কারও শক্ত হাতের অস্তিত্ব টের পেল। নীলা কিছুটা চমকিত দৃষ্টি নিয়ে ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো। সাদিদ ঘুমু ঢুলুঢুলু চোখ নিয়ে ভ্রুজোড়া কুঁচকে নীলার দিকেই তাকিয়ে আছে। অবশেষে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল,

— ‘ কোথায় যাও? ‘
— ‘ না মানে পাশের রুমে। সবাই উঠে যাবে। আর আপনাকে আর আমাকে…

সাদিদ তাকে বাক্যটা সম্পূর্ণ করতে দিলো না। হেঁচকা টানে নিজের বুকে এনে ফেলল।
আচমকা এমন আক্রমণে নীলা তাল সামলাতে পারেনি। তাই বেশ জোরেই সাদিদের উপর এসে পড়ল। সে মৃদু ব্যাথা পেয়েছে। কিন্তু তার থেকে কয়েকগুণ বেশি ব্যাথা বোধহয় সাদিদ এইমুহূর্তে অনুভব করছে। কিন্তু তার চোখে-মুখে সেটার লেশমাত্র বহিঃপ্রকাশ নেই। নীলা হকচকানো স্বরেই বলে উঠল,

— ‘ এমনটা কেউ করে? ব্যাথা পেয়েছেন নিশ্চয়ই? ‘

সাদিদ নীলার চিন্তিত মুখ দেখে মিষ্টি হাসল। ভালোবাসার মানুষের চোখে নিজের জন্য চিন্তাশীলতা দেখলে মনের কোঠাতে এক অন্যরকম প্রশান্তি জাগে। যা সাদিদ এইমুহূর্তে তীব্রভাবে অনুভব করতে পারছে।
সে নীলার গালে নিজের ডানহাতটা আলতো করে বুলিয়ে দিতে লাগল। আবেশে নীলার চোখজোড়া মিটমিট করছে৷ একসময় আঁখিপল্লব সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হলো যখন কপালের মাঝ বরাবর প্রিয়তম স্বামীর উষ্ণ ভালোবাসা পেল।
দিনের শুরুটা যদি কোনো স্ত্রীর এভাবে শুরু হয় তাহলে সংসার জীবন মধুময় হতে আর কি প্রয়োজন?
জীবনে চলার পথে হয়তো অর্থ-বিত্ত, প্রাচুর্য্যের প্রয়োজন পড়ে৷ কিন্তু ব্যক্তিসত্তার প্রশান্তির জন্য সব থেকে বেশি যেটার প্রয়োজন, ভালোবাসা তাদের মধ্যে অন্যতম।
সেটা কেবল স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেকার ভালোবাসা নয়। সেটা হতে পারে ভাইয়ের জন্য বোনের, বোনের ভাইয়ের জন্য, সন্তানের পিতামাতার জন্য অথবা পিতামাতার সন্তানের জন্য। সবকথার এককথা ভালোবাসাটা খুব প্রয়োজন। সম্পর্কভেদে হয়তো ভালোবাসার ভিন্নতা চলে আসে। কিন্তু অনুভূতিটা কিন্তু সব ক্ষেত্রেই একই থাকে। কেননা ভালোবাসা যে শুধুই ভালোবাসা। হাজারও জাতিসত্তার ভিন্নতার আধলে গড়ে উঠা এক চিরন্তন সত্য অনুভূতি।
দীর্ঘ ভালোবাসাময় চুম্বনের শেষে সাদিদ নীলাকে খুব যত্নে বক্ষপিঞ্জরের উপর চেপে ধরল। নীলাও অজান্তেই স্বামীর উন্মুক্ত বুকে কোমল হাত স্থাপন করল। কেটে গেল শব্দহীন কিছুমুহূর্ত। এইটুকু সময়ে কেবল একটি আওয়াজই নীলার কর্ণকোহরে বেজে গিয়েছে। আর সেটা হচ্ছে প্রিয় মানুষটার বুকের ধকধক করা সুমধুর হৃদস্পন্দন। যা কাল্পনিক অর্থে নীলাকে যেন অনবরত বলে চলেছে এটা তারই নামের হৃদযন্ত্রের শব্দের প্রতিফলন। নীলার ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি ফুটল। নীরবতার চাদর সরিয়ে সে সাদিদের উন্মুক্ত বুকপাঁজরে এলোমেলো আঁকিবুঁকি করে বলল,

— ‘ এবার ছাড়ুন। সবাই উঠে পড়বে। তার আগে আমার রুমে যাওয়া দরকার। ‘
— ‘ চুপ। ‘
— ‘ কিসের চুপ? ছাড়ুন না। এবার সত্যিই যেতে হবে। ‘
— ‘ চুপ থাকতে বলেছি না? ‘

বলেই সাদিদ নীলাকে ধরে রাখা হাতের বাঁধনটা আরও মজবুত করল। শুধু পারে না মেয়েটাকে বোধহয় বুকের ভিতর লুকিয়ে রাখতে। ইশশ এমন ব্যবস্থা কেন নেই? থাকলে তো সাদিদ এখন এই মহাখুশিতে আনন্দ উল্লাস করত।
সাদিদ যখন নিজের এই অদ্ভুত ভাবনায় মগ্ন নীলা তখন নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে পুরোপুরি ব্যস্ত। সাদিদের শক্ত হাতের সাথে সে কুলিয়ে উঠতে পারছে না। তারপরও অনবরত চেষ্টা চালিয়ে যেতে যেতে বলল,

— ‘ এইমুহূর্তে আমি চুপ থাকলে পরমুহূর্তেই দুই পরিবারের সবাই ঢাকঢোল বাজানো শুরু করবে। তাই প্লিজ ছাড়ুন। ‘

নীলা কথাটা দুইজনের ভালো ভেবে বললেও সাদিদ সেটা কানেই তুলল না। উল্টো চোখের পলকে নীলাকে নিজের বুকের উপর থেকে বিছানায় শুইয়ে তার উপর আধশোয়া হলো। নীলা খানিকটা হকচকিয়ে গেল।
আর সাথে এসে যোগ হলো একরাশ বিরক্তি। এই ছেলেটা তার কোনো কথা শুনতে চায় না কেন?
নীলা মুখে বিরক্তির স্পষ্ট ছাপ নিয়েই বলল,

— ‘ কি করছেন কি? আমার কথা বুঝতে পারছেন? ‘
— ‘ হুম পারছি। কিন্তু তুমি পারছ না। ‘

দুষ্টু সাদিদ মৃদু হেসে নীলার নিচের ঠোঁটে বৃদ্ধঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করে কথাটুকু বলে উঠল। নীলার মুখের বিরক্তির রেশটা নিমিষেই গায়েব হয়ে তাতে লজ্জার আভা ফুটে উঠল।
সাদিদ ঠোঁট কামড়ে হাসল। নীলা তার সামনে কঠোর হতে চেয়েও পারে না। অবশ্য পারবে কি করে? সাদিদ কি তাকে সেই সুযোগ দেয়? কোমল
ঠোঁটে সাদিদের অনবরত স্লাইডে নীলার শরীর ক্রমশ শিহরিত হয়ে উঠছে। সে আটকে যাওয়া গলায় বলল,

— ‘ প্লিজ বুঝা..র চেষ্টা করুন। আমা..র এখন সত্যিই যাওয়া প্রয়ো..জন। ‘
— ‘ কোনো যাওয়া-যাওয়ি হবে না। এখন চুপ করো তো৷ আমাকে আমার গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে দাও। ‘

বলেই সে নিজের গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত হলো। নীলার এইমুহূর্তে মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে। প্রথমত সাদিদের গুরুত্বপূর্ণ কাজের ধরণ দেখে প্রচুর হাসি পাচ্ছে। দ্বিতীয়ত পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে। এখনও এই স্পর্শগুলো নীলার সমস্ত শরীরকে অবশ করে তুলে। লোমকূপগুলো মুহূর্তেই নিজেদেরকে আলোড়িত করে দাঁড়িয়ে যায়। নীলা কাঁপা হাতটা নিয়ে সাদিদের পিছনের চুলগুলো আকড়ে ধরল। নিজেকে সামলে নিতে বেশ জোরেই ধরেছে।
অপরদিকে নীলার অবস্থায় সাদিদ তাকে নিজের সাথে আরও শক্ত করে আগলে নিলো। গলায় একহাত আর অপরহাতটি শাড়ি সরিয়ে নীলার উন্মুক্ত পেটে চেপে ধরে, সে প্রাণপাখির অধরযুগলে নিজের ঠোঁটযুগলের উষ্ণ পরশ বুলিয়ে দিতে লাগল।
ভালোবাসাময় কিছু সুখ মুহূর্ত পার করে সাদিদ নিজেকে নীলার অধর থেকে সরিয়ে আনলো। কিন্তু পুরোপুরি নয়। এখনও তার হাতের অবস্থান একই জায়গায় রয়ে গিয়েছে। সে নিষ্পলক নীলার বন্ধ আখিঁদ্বয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। রাতের দেওয়া লিপস্টিক এখন পুরোপুরি মুছে গিয়েছে। খালি ঠোঁটও সাদিদের ভালোবাসার অত্যাচারে এই মুহূর্তে লালবর্ণ ধারণ করেছে।
মেয়েটাকে শান্তিতে একটুও আদর করা যায় না। এখানে সেখানে সমস্যা লেগেই থাকে। নতুবা ঠোঁটযুগল রক্তিমবর্ণ ধারণ করবে নতুবা এখানে-সেখানে স্পট পড়ে যাবে।
সাদিদ ঠোঁট কামড়ে হাসল। লোভ সামলাতে না পেরে আবারও মাথা নিচু করে নীলার কাঁপা ঠোঁটজোড়া নিজের মধ্যে নিলো। সাথেসাথেই নীলা ধারালো নখের আঁচড়ে সাদিদের উন্মুক্ত পিঠে ভালোবাসাময় যন্ত্রণার মধুর চিত্র অংকন করল। সাদিদ বারকয়েক উষ্ণ আদর বুলিয়ে নীলাকে তবেই ছাড়ল। অতঃপর কপালে এবং গালেও ভালোবাসার চুম্বন একে দিয়ে বিছানায় শুয়ে, নিজের বুকের সাথে তাকে মিশিয়ে নিলো। কিছুটা ভালোবাসাময় আধলে গড়া গম্ভীরস্বরে বলল,

— ‘ পাখি, আর একটাও কথা নয়। চোখ বন্ধ করে চুপচাপ ঘুমাও। একেবারে আমার সাথে উঠবে। তার আগে যেন নড়াচড়া না দেখি৷ ‘

শীতল কন্ঠের তীক্ষ্ণ ধমকে নীলার আর সাহস কুলিয়ে উঠল না প্রতিউত্তরে না-বোধক কিছু বলার। সে চুপচাপ সাদিদের বুকেই চোখ বন্ধ করল। সাদিদ তার মাথায় খুব যত্নে বিলি কাটছে। রাতে ঠিকমতো ঘুম হয়নি বিধায় এতো আরামে অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই নীলা গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল৷ সাদিদ এতক্ষণ শুধু নীলার ঘুমের অপেক্ষাতেই ছিল৷ তাকে ঘন শ্বাস ফেলতে দেখে সে নিঃশব্দে হাসল। তারপর প্রিয়তমার মাথায় গভীর চুমু দিয়ে হাতের বাঁধনটা শক্ত করে নিজেও চোখ বন্ধ করল।

________________________

প্রিয়তীরা সবাই ঢাকা ফিরে যাবার জন্য গোছগাছ করে নিচ্ছে৷ সবাইও মোটামোটি নিজেদের ব্যাগ-পত্র গুছিয়ে নিয়ে যাবার জন্য এখন পুরোপুরি প্রস্তুত। কেননা বিয়ের পরবর্তী সকল অনুষ্ঠান তারা ঢাকায় করার ব্যবস্থা করেছে। তাই সবাই আজকেই ঢাকায় ব্রেক করবে৷ ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই তারা রিসোর্ট থেকে চেক আউট করবে। নাস্তার পর্ব চুকিয়ে ফেলতে দুই পরিবারের সবাই এখন খাবার টেবিলে উপস্থিত। বড়রা নিজেদের মতো করে একপাশে সরে গিয়েছে। আর ছোটরাও নিজেদের দলবল নিয়ে একপাশে বসেছে। তাই বলাবাহুল্য এখানে হইহট্টগোল অবশ্যই রয়েছে। তাদের খাওয়া শুরু করার কিছু মুহূর্তের মধ্যেই সাদিদ নীলাকে নিয়ে সেখানে হাজির হলো।
নীলা গুটিগুটি পায়ে সাদিদের পিছন পিছন আসছে৷ তার দৃষ্টি এদিক-ওদিক। কেউ তাদেরকে তীক্ষ্ণ চোখে দেখছে কি-না এটা নিয়েই তার যত ভয়। কিন্তু তার কারণবশত ভয়ের দিকে বিন্দুমাত্র কারও খেয়াল নেই। সবাই যার যার মতো করে নিজেদের কাজে ব্যস্ত। সাদিদ এগিয়ে এসে নীলার জন্য আগে চেয়ার টানল। সে বসতেই নিজেও তার পাশের চেয়ারে বসল। তাকে দেখেই অর্ণবের চাপা অভিযোগ,

— ‘ কিরে? কোথায় ছিলি তুই? তোকে আমরা চিরুনি খোঁজা খোঁজেছি। তারপরও তোর হদিস পাওয়া গেল না। কোথায় ভেবেছিলাম নিজের বাসরটা তোর গান দিয়ে শুরু করব। কিন্তু ধ্যাত, কিছুই হলো না৷ ‘

সাদিদ কোনো প্রতিউত্তর জানালো না। নিজের মতো করে প্লেটে খাবার নিতে ব্যস্ত। কিন্তু তানবীর চুপ থাকল না। সে বেশ রসিয়ে কষিয়ে বলে উঠল,

— ‘ তার কি আর তোর বাসর জাগা নিয়ে মাথাব্যাথা আছে? গিয়ে দেখ সে হয়তো নিজের বাসর নিয়েই ব্যস্ত ছিল। ‘

সাদিদ চমকিত দৃষ্টিতে সামনের চেয়ারে বসা তানবীরের দিকে তাকালো।
তানবীর ঠোঁট কামড়ে দুষ্টু হাসছে।
সবাই যখন সাদিদের খোঁজ করছিল তখন তানবীরও ফোনে তাকে না পেয়ে তার খোঁজে রুম পর্যন্ত গিয়েছিল। তারা একই রুমে উঠেছে। যখনই সে রুমে চেক করতে যায় সেটা যে ভিতর থেকে লক করা সেটা বুঝতে পারে। নীলাও সাদিদের সঙ্গে একইসাথে গায়েব রয়েছে। তাদের বিষয়টা আর কেউ না জানলেও তার নিকট তো অজানা নয়। তাই বিষয়টা সে তখনই বুঝে যায়। কিন্তু সবার সামনে সেটা প্রকাশ করেনি৷ মোট কথা ছোট্ট একটা সত্য লুকিয়ে গিয়েছে।
এখন তানবীরের এভাবে হাসার কারণ আর অপবাদটা অপর কেউ বুঝতে না পারুক কিন্তু সাদিদের নিকট পুরোপুরি ক্লিয়ার। সেও হেসে দিয়ে সামনের ঝুড়ি থেকে একটা আপেল নিয়ে তার দিকে ছুঁড়ে মারল।
তানবীর সেটা ক্যাচ করে হাসি মুখেই তাতে কামড় বসাল। চিবুতে চিবুতে দুষ্টু কন্ঠে বলল,

— ‘ মামমা, সো সুইট। ‘

বলেই সাদিদকে চোখ টিপ দিলো। সাদিদ হাসতে হাসতেই তাকে হাত উঠিয়ে থাপ্পড় দেখাল। দুই বন্ধুর নিজেদের বলা ইশারার কথোপকথন এবার নীলার নিকটও স্পষ্ট হলো। আর লজ্জায় সে মুহূর্তেই নতজানু হলো। সব দোষ এই সাদিদ নামক ছেলেটার। তার জন্যই নীলাকে এসব পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। নীলা মনে মনে সাদিদসহ তার চৌদ্দ গুষ্টির গালমন্দ করল।
কিন্তু পরিশেষে যখন বুঝতে সক্ষম হলো এখন সেও এই গুষ্টির একজন সদস্য তখন সবকিছু আবার ফিরিয়ে নিতে ব্যস্ত হলো।
আপন ভালো পাগলেও বুঝে। আর সেক্ষেত্রে নীলাতো সুস্থ-সবল স্বাভাবিক একজন মানুষ। তাহলে তার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কেন হবে?

#চলবে…

[ পাঠকগণ আপনাদের পাঠপ্রতিক্রিয়াগুলো আমাকে জানাবেন। আমি আপনাদের ভালোলাগা-মন্দলাগাগুলো জানতে আগ্রহী। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here