গল্পঃ #অন্তরালের_অনুরাগ
লেখনীতেঃ #নাহিদা_নীলা
#পর্বঃ ৪৯
সবকিছুকে ছাপিয়ে একে অপরের উষ্ণতায় প্রেমিকযুগল দিশেহারা। শীতের থরথর কাঁপুনির ঠান্ডায় না-কি এতদিনের শূন্যতাটুকু উষ্ণতার বেড়াজালে পূরণ করতে চাচ্ছে, আপাতত সেটা বোঝা মুশকিল। সাদিদ প্রিয়তমাকে একেবারে আষ্টেপৃষ্টে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে রেখেছে। নীলাও গুটিশুটি মেরে তার বুকে মাথা চেপে রেখেছে। সময়, পরিবেশ সেটা তারা এই মুহূর্তে একেবারেই মনে রাখতে চাচ্ছে না। দু’জনই কেবলমাত্র একে-অপরের শূন্যতার তৃষ্ণাটুকু উষ্ণতার চাদরে জড়িয়ে নিয়ে পূরণ করার পায়তারা করেছে। অবশেষে নীরবতার আচ্ছাদন ছেদ করে নীলা-ই নিচুস্বরে বলে উঠল,
— ‘ ভালোবাসি প্রিয়। অনেকটা বেশি ভালোবাসি। ‘
সাদিদ নিঃশব্দে হাসল। বুক থেকে নীলার মাথাটা তুলে তার দুইগালে নিজের হাত রাখল। অতঃপর একইস্বরে প্রতিউত্তর জানালো,
— ‘ আমি বাসি না পাখি, একদমই ভালোবাসি না। ‘
নীলা এমন উত্তরে কপাল কুঁচকে তাকালো। সাদিদ সেটা লক্ষ্য করে আঙুল দিয়ে তার কপালের রেখা ঠিক করে দিয়ে বলে উঠল,
— ‘ সত্যিই তো বাসি না। আমি আমার বউপাখিকে ভালোবাসি। তুমি বুঝি আমার বউপাখি? ‘
নীলা এবার সাদিদের দুষ্টুমি বুঝতে পেরে মাথা নিচু করে হাসল। সাদিদের এতক্ষণে নিজের প্রাণপাখিকে দেখার সুযোগ হয়েছে। এতক্ষণতো সে বোধহয় এই দুনিয়াতেই ছিল না। সে তার নীলাঞ্জনা নামক সুখপাখিকে নিয়ে তাদের নিজস্ব ভালোবাসাময় পৃথিবীতে মিষ্টি মুহূর্ত অতিবাহিত করছিলো। সাদিদ বসা অবস্থাতেই নিজের প্রাণপাখিটাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল। এবং মুহূর্তেই তার চোখজোড়া ঝাপসা হয়ে গেল।
একি অবস্থা হয়েছে তার! শরীরের হাড্ডিগুলো জেনে মাংস বেঁধ করে উঁকি দিচ্ছে। ফর্সা চামড়াটাও অযত্ন-অবহেলায় ফিঁকে পরেছে। তার কোমল পাখিটার এই নিস্তেজ রূপ সাদিদের বুকের বামপাশে যেন রক্তক্ষরণের সৃষ্টি করছে। নীলা লাজুক হেসে মাথা উঁচু করতেই সাদিদের দৃষ্টির সম্মুখীন হলো। তার চোখজোড়া দেখে নীলাও তার গালে হাত রাখল। আলতো করে চোখ-মুখে হাত বুলিয়ে বলে উঠল,
— ‘ কি হয়েছে? আপনার মুখটা এমন দেখা যাচ্ছে কেন? ‘
— ‘ তারা আমার কলিজাটাকে খুব কষ্ট দিয়েছে। তাই না? ‘
নীলা আবারও নিচের দিকে দৃষ্টি দিলো। পুরোনো কথাগুলো মনে হতেই তার চোখের কোণে অশ্রু জমতে শুরু করেছে। কতটা কষ্টের মুহূর্ত ছিল সেসব দিনগুলো সেটা হয়তো নীলা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবে না। প্রতিটা মুহূর্ত প্রিয় মানুষগুলোর অনুপস্থিতি, নিজের শারীরিক অসুস্থতায় সে বারবার বিষন্নতায় ডুবে থেকেছে।
সাদিদ বুঝতে পারলো তার প্রাণপাখির কষ্ট হচ্ছে। তাই আর কিছু বলল না। শুধু একহাতে তাকে নিজের বুকে আগলে নিয়ে তার মাথাটা বুকে শক্ত করে চেপে ধরল। কিন্তু হঠাৎ নীলার পেটের উপর নজর পরতেই সাদিদের ভ্রুজোড়া আপনগতিতে কুঁচকে গেল। ডান ভ্রুটা তির্যকভাবে বাঁকা করে সে নীলার হালকা উঁচু পেটটার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। হাড্ডিসার শরীরে উঁচু পেটটা কেমন যেন বেমানান। সাদিদ নিজের মনেই বিড়বিড় করলো,
— ‘ পাখি কি রাতে খুব বেশি খেয়েছিল না-কি? ‘
পরমুহূর্তেই সে নিজেকেই নিজে ধমকে উঠল। ছিঃ সে নিজের পাখির খাবারের উপর নজর দিচ্ছে! কিন্তু যত যাই ভাবুক আর করুক না কেন তার দৃষ্টি নীলার হালকা উঁচু পেটটার উপর থেকে সরছে না। সাদিদকে অনেকক্ষণ চুপচাপ দেখে নীলা এবার গাড় উঁচিয়ে তার মুখপানে তাকালো। সাদিদের এমন বাচ্চামোভরা মুখশ্রী দেখে নীলার কপালও কুঁচকে এলো। নীলাকে ফিরে তাকাতে দেখেও সাদিদের সেদিকে হুঁশ নেই। সে একধ্যানে নীলার পেটের দিকে তাকিয়ে আছে। পরমুহূর্তেই নীলাও সাদিদের দৃষ্টি অনুসরণ করে নিজের পেটের দিকে তাকালো।
সাদিদের মনোভাব বুঝতে পেরে তার বড্ড হাসি পেল। সে আবারও গাড় উঁচিয়ে সাদিদের দিকে তাকাতেই এবার সাদিদের সাথে চোখচোখি হয়ে গেল। সাদিদের চোখজোড়াতে যেন অদ্ভুত প্রশ্নেরা এসে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। সাদিদের এমন অবস্থা দেখে নীলার বড্ড হাসি পাচ্ছে। নিজেই কদিন পর বাচ্চার বাবা হবে অথচ তার চোখ-মুখই বাচ্চাদের মতোন লাগছে।
নীলা আর বেচারাকে চিন্তার সাগরে রাখতে চাইলো না৷ তাই মাথা নিচু রেখেই সাদিদের ডানহাতটা এনে নিজের তলপেটে রাখল। এতক্ষণ হাসির সাথে সাথে লজ্জা পেলেও এখন যেন সন্তানের উপর তার বাবার স্পর্শ পরতেই নীলার চোখজোড়া ঝাপসা হয়ে গেল। কান্নারা এসে তার গলায় দলা পাকাচ্ছে।
অপরদিকে সাদিদ নিশ্চুপের সাথে অবাকও হয়েছে। সে কিছুই বুঝতে পারছে না। সবকিছু কেমন যেন ঘোলাটে মনে হচ্ছে। নীলা সাদিদের মুখপানে তাকিয়ে অশ্রু সিক্ত ধরা গলায় বলে উঠল,
— ‘ বাবু। আমাদের বাবু এখানে। ‘
নীলার কথাটা সাদিদের কর্ণকোহরে এসে পৌঁছাতেই তার চোখজোড়া স্বাভাবিকের চেয়ে বড় আকার ধারণ করলো। কি শুনলো সে এটা? তাকে এমন অবস্থায় দেখে নীলা আবারও বলল,
— ‘ আমাদের বাবু আসছে। ও.. ও একটু একটু করে এখানে বড় হচ্ছে। ‘
সাদিদের এবার বাচ্চাদের মতোন ঠোঁট ভেঙে এলো। চোখজোড়ায় অশ্রুকণা এসে নীলাকে ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে না। সে কান্না আটকাতে মাথা নিচু করে দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরল। লাল চোখজোড়া নিয়ে নীলার দিকে তাকাতেই দেখতে পেল, প্রিয়তমার অশ্রুসিক্ত চোখের কোণে হাসি। তার প্রাণপাখির চোখও যেন আজ হাসছে।
সাদিদ পেটে রাখা নিজের হাতটা আলতো করে নীলার পেটের উপরিভাগে বুলিয়ে দিলো। শব্দগুলো যেন সাদিদের গলায় এসেও আটকে রয়েছে। সাদিদ ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি নিয়ে নীলার দিকে আবারও প্রশ্নবোধক চাহনি নিয়ে তাকাতেই নীলা হাসল। আর সাদিদের নিঃশব্দের ইশারার কথোপকথন বুঝতে পেরে চোখ মুছে মাথা দ্রুত উপর নিচ করল। সাদিদ নিজের অনুভূতি ঠিকঠাক প্রকাশ করতে পারছে না৷ অতি আনন্দে তার শব্দ ভান্ডারের শব্দ যেন ফুরিয়ে গিয়েছে। সে মাথাটা নিচু করলো৷ নীলার পেটের উপর রাখা তার হাতটা যে অনবরত কেঁপে চলেছে সেটা বুঝতে সাদিদের অসুবিধা হচ্ছে না। সে নীলার জামাটা সরিয়ে পেটটা উন্মুক্ত করলো।
উন্মুক্ত পেটে সাদিদের হাতের স্পর্শ পরতেই নীলা চোখজোড়া বন্ধ করে ফেলল। আর গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল কয়েকটা সুখের অশ্রুজল।
সাদিদ নিজের অনাগত সন্তানকে অনুভব করে নীলার পেটের মাঝ বরাবর দীর্ঘ চুমু খেল। শুধু একটিতে সীমাবদ্ধ রইলো না। সে ছোট্ট-বড় অগণিত চুমু খেয়ে নিজের সন্তানকে আদর করতে লাগল।
আর অপরদিকে নীলা হাসছে। তার খুশির সাথে সাথে সুড়সুড়িও লাগছে। সাদিদ এবার বেশ বিরক্ত হলো। এই মেয়েটা সবসময় তার আদরে বাধা সৃষ্টি করতে উস্তাদ। সে পেটে মুখ রেখেই নীলার দিকে বিরক্তিমাখা দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। আর নীলা হেসে কুটিকুটি।
— ‘ কি হয়েছে? এভাবে লাফালাফি করছো কেন? ‘
— ‘ আপনি সরেন। আমার সুড়সুড়ি লাগছে? ‘
— ‘ আজকে পারব না। আমার প্রিন্সেসকে আদর করছি৷ তাই অযথা আমাদের বিরক্ত করবে না। ‘
— ‘ কি! আমি অযথা? দূর হোন। দূর হোন বলছি। সঙ্গে নিজের প্রিন্সেসকে নিয়েও দূর হোন৷ ‘
— ‘ সত্যি? দাও তাহলে। নিজের পেটটা আমাকে দিয়ে দাও। তাহলে আমরা বাপ-বেটি চলে যাব। ‘
নীলা চোখ বাঁকিয়ে তাকাতেই সাদিদ এবার হেসে ফেললো। নীলা নিজেও মৃদু হাসল। সাদিদ তাকে টেনে নিজের বুকে আনলো। একহাতে জড়িয়ে রেখেই কপালের একপাশে ভালোবাসার উষ্ণ পরশ দিলো। নীলা আবেশে চোখজোড়া বন্ধ করে নিলো। সাদিদ আলতো করে নীলার গালে হাত বুলিয়ে একপাশের গালেও চুমু দিয়ে মোহনীয় স্বরে বলে উঠল,
— ‘ এত বড় উপহার! এটাতো স্বপ্নেও আশা করিনি জান? আমি তোমাকে এই উপহারের রিটার্ন গিফট হিসেবে কি দিবো? কি চাই তোমার? ‘
নীলা চোখ খোলে তাকালো। সাদিদের মুখের দিকে তাকিয়ে প্রতিউত্তরে বলল,
— ‘ আপনাকে। শুধু আপনাকেই চাই। ‘
— ‘ সেটাতো তুমি না বললেও পাবে। এমনকি না চাইলেও। এটা ছাড়া অন্য কিছু বলো। ‘
— ‘ ওমম তাহলে অনেক ভালোবাসা। ‘
সাদিদ তার কথায় মৃদু হাসল। তার পাখিটা এতো মিষ্টি কেন? না জানি এতো মিষ্টিতে কবে তার ডায়াবেটিস হয়ে দাঁড়ায়। সে নীলার মাথায় গভীর চুম্বন দিয়ে বলল,
— ‘ সেটাও না চাইলে দিবো। বাবু এবং বাবুর আম্মুকে ভালোবাসা দিতে দিতে একেবারে অতিষ্ট করে ফেলব। ‘
নীলা লাজুক হাসল। সাদিদ একটু থেমে পরমুহূর্তেই আবার বলে উঠল,
— ‘ কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বাবুর আম্মুকে নিয়ে। তাকে তো ধরার আগেই লাফালাফি শুরু করে। আমার বাবাইকে কিভাবে আদর করবো? ‘
— ‘ মোটেই না। আপনিই বেশি বেশি দুষ্টুমি করেন। তাইতো আমার সুড়সুড়ি লাগে। ‘
— ‘ ওহ্, তাই নাকি মিসেস? তাহলে আপনার কোথায় কোথায় সুড়সুড়ি লাগে না সেটা একবার বলেন তো৷ ‘
বলেই সাদিদ ভ্রু নাচালো। নীলা এবার দমে গেল এবং নিচু স্বরে হেসে ফেলল। কেননা তার পায়ের গোড়ালি থেকে মাথা পর্যন্ত সব জায়গাতেই অসম্ভব রকম সুড়সুড়ি রয়েছে। আর সেটা সাদিদ বেশ ভালোভাবেই জানে। তাই ইচ্ছে করে তাকে ক্ষেপাচ্ছে।
নীলাকে হাসতে দেখে সাদিদও ঠোঁট কামড়ে হাসল। তাদের হাসির আওয়াজ পেয়ে দরজার অপরপাশ থেকেই তানবীর রসিকতার স্বরে বলে উঠল,
— ‘ ভাইজান এবং ভাবীজান, আপনাদের রোমান্টিক সিনের কি সমাপ্তি ঘটিয়াছে? দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আমাদের পা যে ব্যাথা করতাছে। ‘
সাদিদ হাসি মুখেই বলে উঠল,
— ‘ সিনের আর বাকি রাখলি কি? অর্ধেক তো দেখেই ফেললি। ‘
— ‘ মানসম্মানের ভয়ে পুরোটা দেখার আগেই নিজের পথ মেপেছি। ‘
বলতে বলতেই তানবীর নিজেসহ অর্ণব ভিতরে প্রবেশ করলো। আচমকা তাদের সঙ্গে পুলিশের লোক দেখে নীলা ভয় পেল। সাদিদ বুঝতে পেরে তার গায়ের ওড়নাটা শরীরে ভালোভাবে দিয়ে বলল,
— ‘ ভয় পাবার কিছু নেই পাখি৷ উনারা আমাদের সাথেই এসেছে। ‘
— ‘ আপনাকে সুস্থতার সাথে দেখে ভালো লাগছে। মিস্টার শাহরিয়ার, এবার আমাদের যাওয়ার পালা৷ আপনার ওয়াইফকে নিয়ে আসুন। ‘
বলেই পুলিশ অফিসারগুলো বেড়িয়ে আসলো৷ সাদিদ নিজে উঠে নীলাকে সাবধানে বিছানা থেকে নামালো। অর্ণব আর তানবীর সামনেই ছিলো। দাঁড়ানোতে নীলার শারীরিক অবস্থাটা তাদের চোখেও ধরা পরেছে৷ সাদিদ তাদের দৃষ্টিভঙ্গি খেয়াল করে ওড়না দিয়ে নীলার পেটটা ভালোভাবে ঢেকে দিলো৷
তার নিজেরও এখন হাসি পাচ্ছে। কিন্তু এই মুহূর্তে সে হাসলে বন্ধুগুলো একেবারে ঝোঁকের মতো মাথায় চেপে বসবে। তাই খানিকটা ঝাঁঝালো স্বরে ধমকে উঠল,
— ‘ এভাবে কি দেখিস? আমার বাচ্চার কিছু হলে তোদের দুইটাকে আস্ত রাখবো না। ‘
— ‘ হোয়াট? ‘
তানবীর অর্ণব দু’জনই শব্দ করে চিল্লিয়ে উঠল। আচমকা সাদিদের এমন কথায় নীলা একেবারে চুপসে গিয়েছে। লজ্জায় জড়সড় হয়ে সে মাথা নিচু করে নিজের ওড়নার দুইপাশ ভালোভাবে চেপে ধরল।
সাদিদ তাদের চাহনিকে পাত্তা না দিয়ে নীলাকে একহাতে জড়িয়ে নিয়ে বাহিরে বের হতে লাগল। নীলা আড়চোখে একবার তানবীর আর অর্ণবকে দেখে নিলো। ছোট খাটো একদল মশার গুষ্টি তাদের মুখগহ্বরের ভিতরে অনায়াসে ডুকে
যেতে পারবে। নিজেদের চমকিতভাব নিয়েই তারাও সাদিদ-নীলার পিছুপিছু বেড়িয়ে আসলো। নীলা বের হতেই তাকে পাহারা দেওয়া এতদিনের অনেকগুলো গার্ডকে আহত অবস্থায় দেখল। পুলিশ ইতিমধ্যে তাদের সবাইকে হাতকড়া পরিয়ে বন্দি করেছে। কিন্তু তাদের সঙ্গে তমার হাতেও হাতকড়া দেখে নীলা ভয় পেল। দৌড়ে তার কাছে যেতে নিলেই সাদিদ বাঁধা দিলো,
— ‘ কি হচ্ছে পাখি! এমন করে যাচ্ছো কেন? ‘
— ‘ আপু, উনারা আপুকে কেন এসব পরিয়েছে? প্লিজ খোলে দিতে বলুন। প্লিজ, প্লিজ আপুর কোনো দোষ নেই। আপুকে যেতে দিন। ‘
নীলার কথা শুনে সাদিদ হাতকড়া পরানো তমা মেয়েটার দিকে তাকালো। এবং পুলিশ অফিসারের উদ্দেশ্য বলল,
— ‘ অফিসার উনাকে ছেড়ে দিন। ‘
— ‘ মিস্টার শাহরিয়ার উনি এই দলের একজন সদস্য। ‘
— ‘ সমস্যা নেই। আপনি উনাকে ছেড়ে দিতে বলুন৷ ‘
সাদিদের কথায় পুলিশ অফিসার আর কিছু বলল না। তমাকে ছেড়ে দিতেই নীলা ধীর পায়ে হেঁটে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরল।
— ‘ তোমার এই উপকার আমি কোনোদিন ভুলবো না আপু। আজীবন আমি কৃতজ্ঞ তোমার কাছে৷ ‘
— ‘ আপনিই কি সে, যার সাথে আমাদের ফোনে কথা হয়েছিল? ‘
— ‘ জ্বি৷ আমিই তমা। ‘
সাদিদ এবার সবটা বুঝতে পারল। আসলেই কিছু মানুষের কাছে কৃতজ্ঞতার পাল্লা কখনও শেষ হয় না। যেমনটা এই অপরিচিত মেয়েটার কাছে সে আজীবন কৃতজ্ঞ। সাদিদ তার সামনে দাঁড়িয়ে কৃতজ্ঞতার স্বরে বলে উঠল,
— ‘ শুধু পাখি নয়, আমিও আপনার কাছে ঋণী। যদিও কখনও এই ঋণ শোধ করার মতো নয়। তারপরও আপনার জন্য কিছু করতে পারলে নিজেকে আমি হালকা অনুভব করব। যেকোনো কিছু নিঃসংকোচে বলবেন৷ ‘
— ‘ আচ্ছা সেসব না হয় পরে দেখা যাবে। এখন নীলাকে দেখুন। এই অবস্থাতে এতো কান্নাকাটি, টেনশনের ফলে তাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে। ‘
বলেই তমা নীলার গালে হাত রেখে কপালে চুমু দিয়ে বলল,
— ‘ নিজের খেয়াল রেখো। আর বেবিরও। ‘
— ‘ আপু, তুমিও আমাদের সাথে ঢাকায় চলো। ‘
— ‘ না নীলা। এটা হয় না। আর তাছাড়া আমার মা আর ভাই এই রাঙামাটিতে রয়েছে৷ তাদের ছেড়ে আমি কিভাবে যাব? কিন্তু ইনশাআল্লাহ তোমার যখন বেবি হবে তখন তাকে দেখতে অবশ্যই ঢাকায় যাব। ‘
তমা হাসিমুখে কথাটা বলে আবারও নীলার গালে আদর দিলো। সাদিদ তমার সাথে কথা বলে পরবর্তীতে যোগাযোগের জন্য তার সম্পর্কে টুকটাক ইনফরমেশন জেনে নীলাকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল।
.
নীলার শারীরিক অবস্থার কথা চিন্তা করে রাঙামাটি থেকে ঢাকা ফিরবার জন্য সাদিদ বাই রোড চিন্তা করেছে। প্রথমে ভেবেছিল চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে করে বাকি রাস্তাটুকু শেষ করবে। কিন্তু পরে আবার ডিসিশন চেইঞ্জ করেছে। ট্রেনে জার্নি করলে সাদিদের হাতে কিছু থাকবে না। যদি মাঝপথে নীলার কোনো খারাপ লাগে বা অসুবিধা হয় তাহলে সে কি করবে? সেই চিন্তায় সে ভাড়ায় গাড়ি বুক করেছে।
স্থানীয় পুলিশ স্টেশন থেকে বাকি কাজটুকু শেষ করে তারা সকাল সকালই ঢাকার উদ্দেশ্য রউনা দিয়েছে। সকালের নাস্তায় নীলা খুব একটা খেতে পারিনি বলে সাদিদ এখন সেটা নিয়েই পরে রয়েছে।
— ‘ কি হলো, মুখ খুলো। ‘
— ‘ উহুম। আর খেলে বমি হবে। ‘
— ‘ হবে না৷ হা করো পাখি৷ ‘
— ‘ সত্যি বমি হবে৷ ‘
— ‘ আরে ভাবী খেয়ে নিন। এমন আদর করে আর কেউ খাইয়ে দিবে না। ‘
— ‘ ভাইয়া, তখন থেকে ভাবী ভাবী কি শুরু করেছেন? ভাবী শুনতে ভালো লাগছে না। ‘
— ‘ কি করবো বলেন? এখন যে চাচ্চু ডাকার মানুষও এসে যাচ্ছে। পদবি যেহেতু বেড়ে যাচ্ছে আমাদের দিক দিয়েও তো বাড়াতে হবে৷ ‘
অর্ণবের কথায় নীলা লজ্জা পেল। তারপরও নিচুস্বরে বলল,
— ‘ চাচ্চুর থেকে কিন্তু মামার কদর বেশি৷ ‘
— ‘ তাইতো। এই অর্ণব ভাবী টাবি বাদ। নীলা হইলো আমাগো বইন৷ আর ভাইগ্না আমাগো মামা কইয়াই ডাকবো৷ ‘
— ‘ চুপ কর। আমার প্রিন্সেস আসবে৷ আর আমার মেয়ে এসে তোর লম্বা বাবরিগুলো সাইজ করবে। ‘
— ‘ একদম আমার চুলের দিকে নজর দিবি না। বহুত শখের জিনিস। আর আমারে যে কস নিজেরগুলো দেখ একবার। পুরো সিংহের চুলের মতোন হইছে৷ ‘
তাদের তিনজনের তর্ক বির্তক শুনে নীলা মুখটিপে হাসছে। যাক বাবা এই যাত্রায় সে বেঁচে গিয়েছে। কিন্তু তার খুশি বেশিক্ষণ থাকলো না৷ সাদিদ একধমকে দুইটাকে চুপ করিয়ে নীলার মুখের সামনে আপেল তুলে ধরল।
— ‘ অনেক হাসা হয়েছে এবার চুপচাপ খাও। ‘
নীলা মুখটা ছোট করে আকুতিভরা কন্ঠে বলল,
— ‘ সত্যিই খেতে পারব না৷ ‘
সাদিদ তার উত্তর শুনে অপরদিকে ফিরে নিজের ঝাপসা চোখটা মুছে নিলো। সে যে নীলাকে এই অবস্থায় দেখতে পারছে না৷ কষ্টে তার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। তার কেমন পাখিটা আজ কি হয়ে গিয়েছে। কতটা কষ্টে তার পাখি দিনগুলো পার করেছে সেটা ভাবতেই সাদিদ নিজের কাছেই ছোট হয়ে যাচ্ছে। সে নীলার গালে হাত দিয়ে আদুরে গলায় ডেকে উঠল,
— ‘ প্রাণপাখি৷ ‘
নীলা এবার চুপসে গেল। এই ছেলেটা বড্ড পাঁজি। কথায় কাজ না হলে মেয়েদের মতো ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল শুরু করে। নীলার অবস্থা দেখে সাদিদ তার নাকটা টিপে ধরল,
— ‘ আউচ, ব্যাথা পাচ্ছি। ‘
— ‘ তুমি আমার জান না? প্লিজ খাও। তোমার শরীরটা বড্ড খারাপ পাখি৷ এখন একটু খাও। বাকিটা আবার পরে খেয়ে নিও। ‘
নীলা চুপচাপ কয়েক পিস আপেলের টুকরো খেয়ে নিলো৷ নতুবা যতক্ষণ না খাবে এই ছেলের থেকে তার নিস্তার নেই।
কিন্তু আজকাল তার শরীরটা বড্ড খারাপ লাগে। কিছু খেলেই কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগে। তাইতো সকালের নাস্তা সাদিদ জোর করা স্বত্বেও সে শেষ করেনি। এখন জোরপূর্বক কয়েকটা আপেলের টুকরো খেতেই নীলার অস্থির লাগতে শুরু করলো৷ সে পেটে হাত রেখে ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে। নীলা হঠাৎ এমন করাতে সাদিদও বড্ড অস্থির হয়ে পড়ল,
— ‘ বেবি, হোয়াট হেপেন? আর ইউ ওকে? ‘
— ‘ পা..নি। ‘
সাদিদ দ্রুত পানির বোতল হাতে তুলে নিয়ে নিজেই নীলাকে খাইয়ে দিলো। তারপরও নীলাকে স্বাভাবিক না দেখে সাদিদ নিজেও চিন্তিত হয়ে পড়ল। নিজের হাজারো শরীর খারাপ তার গায়ে লাগে না। অথচ নীলার একটু কষ্টতেই সাদিদের যেন দম আটকে যাবার অবস্থা হয়।
— ‘ সাদি, নীলা এমন করছে কেন? হসপিটাল যাবি? ‘
— ‘ হ্যাঁ ঠিক বলেছিস। আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। ভাই, আপনি প্লিজ সবচেয়ে কাছের একটা হসপিটালে নিয়ে চলেন। ‘
— ‘ চিন্তা কইরেন না ভাই। দশ মিনিটের মধ্যে হসপিটাল পৌঁছাইয়া যামু। ‘
— ‘ শুনু.. শুনুন..
— ‘ কি জান? বলো, কোথায় কষ্ট হচ্ছে? ‘
— ‘ গা..ড়ি থা..মাতে বলুন। ‘
— ‘ এই ভাই গাড়ি থামান। জলদি থামান। ‘
সাথেসাথেই রাস্তার একটু সাইডে চালক গাড়ি ব্রেক করলো। সাদিদ অস্থিরতায় পূর্ণ থেকেই নীলাকে বুকে আগলে নিলো। পিঠে অনবরত হাত বুলাতে বুলাতে বলে উঠল,
— ‘ পাখি, আর কিছু লাগবে? কি চাই তোমার বলো? ‘
— ‘ এ..কটু বা..হিরে যাবো। ‘
সাদিদ আর কোনো প্রশ্ন করলো না। চুপচাপ নীলাকে আগলে নিয়ে গাড়ি থেকে বের হলো। তার পিছন পিছন তানবীর অর্ণবও বের হয়ে গেল। তারাও নীলার হঠাৎ এমন করাতে চিন্তিত হয়ে পরেছে।
ফাঁকা রাস্তায় নীলা নিঃশব্দে কয়েককদম হাঁটতে লাগল। এই পুরোটা সময় সাদিদও একেবারে নীরব ছিলো। শুধুমাত্র নীলাকে নিজের থেকে আলাদা করেনি। কদমে কদমে তার সাথে চলেছে।
খোলা আকাশের নিচে শ্বাস নিতে পেরে নীলা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে উঠল। সে শান্ত গলাতে পানি চাইতেই সাদিদ হাত বাড়িয়ে তানবীরের থেকে পানির বোতল নিলো। পানি খাইয়ে দিয়ে অস্থিরতার সাথেই বলল,
— ‘ বেবি, এখন কেমন লাগছে? ‘
নীলা এবার হাসি পাচ্ছে। দুইদিন পর যার নাকি বেবি হবে সে এখনও নীলাকেই বেবি বলে ডাকে। নিজের হাসিটা চাপা রেখে সে বলে উঠল,
— ‘ আপনাকে ভীষণ টেনশনে ফেলে দিয়েছিলাম, তাই না? ‘
— ‘ মাইর দিবো বলে দিলাম। আদরে আদরে বাদর হচ্ছো। ‘
সাদিদের রাগী মুখখানা দেখেও নীলা হাসল। সাদিদ তারপরও শান্ত হতে পারছে না৷ প্রিয়তমার মুখটা আঁজলাভরে ধরে বলল,
— ‘ কষ্ট হচ্ছে এখনও? চলো হসপিটাল যাই। ডক্টরের কাছে গেলে ভালো লাগবে। ‘
— ‘ প্লিজ না, আমি ঠিক আছি এমন। আপনি শুধু শুধু অতিরিক্ত চিন্তা করছেন। তাছাড়া এমনটা ইদানিং হয়। এটা কোনো ব্যাপার না। ‘
সাদিদের মন যতটা না ভালো হয়েছিল নীলার শেষের কথাটা শুনে ততটাই খারাপ হয়ে গেল। তার পাখির এমন আগেও হয়েছে? ইশশ তখন তো সাদিদও পাশে ছিলো না। তার প্রাণপাখিটা একা-একা না জানি কতটা কষ্ট সহ্য করেছে।
সাদিদের মলিন মুখটা দেখে নীলা কিছুটা আন্দাজ করতে পারল। তাই প্রসঙ্গ পালটিয়ে মন ভালো করবার জন্য বলে উঠল,
— ‘ আর হাঁটবো না। পায়ে ব্যাথা করছে। ‘
সাদিদের কথাটা শুনতে দেরী নেই আর নীলাকে পাঁজাকোলে নিতে দেরী নেই। অবশ্য তাড়াহুড়োর মধ্যেও সাদিদ নিজের প্রাণপাখির জন্য সাবধানতা অবলম্বন করতে ভুলেনি। নীলার চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম। এই নির্লজ্জ ছেলেটা সবার সামনে এটা কি করলো!
— ‘ আরে আরে, কোলে নিয়েছেন কেন? নামান আমাকে। আশেপাশে কত মানুষ। নামান বলছি। ‘
নীলার কথাগুলো সাদিদ এককানে ডুকাচ্ছে আর অপরকানে বের করছে। সাদিদ তাকে একেবারে গাড়িতে এনে বসালো। তানবীর অর্ণবতো হাসছেই তাদের সাথে ডাইভারও সাদিদের কান্ডে ঠোঁট টিপে হাসছে। বউকে যে এই ছেলে চোখে হারায় এটা আর কারো বুঝার বাকি নেই।
এতক্ষণ নীলার কথা না শুনাতে নীলার খানিকটা রাগ হয়েছে। তার অভিযোগ হচ্ছে সাদিদ সবসময় এমনটা করে। তার ভালোবাসার নির্লজ্জার সামনে কাউকে দেখে না। সাদিদ আড়চোখে নীলাকে দেখছে। কিন্তু এই নিয়ে কিছু বলল না। নীলাকে শান্ত দেখে চালক আবারও ধীর গতিতে সামনে চালিয়ে যেতে লাগল। অবশ্য সাদিদের কড়া নিষেধাজ্ঞা রয়েছে,
— ‘ প্রয়োজন পড়লে তিনদিনে ঢাকায় গিয়ে পৌঁছাবো। তারপরও যেন গাড়ির স্পিড খুব বেশি দেওয়া না হয়। নীলার শরীরের উপর যেন হালকা একটা ঝাঁকিও না পরে। ‘
তাই চালক সেই প্রথম থেকেই বেশ সাবধানতার সাথে ডাইভ করে যাচ্ছে। অর্ণব তানবীর দুইজন পিছনের সিটে আর সাদিদ নীলাকে নিয়ে সামনের সিটে বসেছে। কেননা গাড়ির পিছন সাইডে সামনের তুলনায় তুলনামূলকভাবে বেশি ঝাঁকি লাগে।
নীলার শরীরে হালকা ঝিমানি আসছে। সাদিদ সেটা খেয়াল করে তাকে বুকে টেনে নিয়ে বলে উঠল,
— ‘ ঘুমাও। ‘
এতক্ষণের রাগটা মুহূর্তেই সাদিদের আদরের কাছে গায়েব হয়ে গেল। সে চোখ বন্ধ করতেই সাদিদ তাকে নিজের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিলো। কিন্তু বেশিক্ষণ পারল না৷ তার প্রাণপাখিটার মধ্যে যে সাদিদের আরেকটা প্রাণ বেড়ে উঠছে। তাই নীলা বেশিক্ষণ একপাশ হয়ে থাকতে পারল না। নীলাকে নড়াচড়া করতে দেখেই সাদিদ শারীরিক অবস্থা আন্দাজ করতে পারল। তাই পিছনে ফিরে তানবীরকে বলে উঠল,
— ‘ পিছন থেকে দুইটা কোশন কোশন দে। ‘
তানবীর কোশন দিতেই সাদিদ নীলাকে বুক থেকে সরিয়ে আস্তে করে অপরপাশে চাপিয়ে বসালো। তারপর নিজে একেবারে কর্ণারে বসে পায়ের উপর একটা কোশন দিয়ে নীলার উদ্দেশ্য বলল,
— ‘ আসো। এখানে মাথা রাখো। ‘
নীলা মাথা নিচু করলো। বারবার এই ছেলেটা তাকে এসব লজ্জাকর মুহূর্তের মুখোমুখি করে কেন? নীলার ইতস্ততবোধ দেখে সাদিদ তাড়া দিলো,
— ‘ কি হলো? আসো। পড়ে যাবে তো৷ ‘
— ‘ আমি ঠিক আছি৷ শুবো না এখন। ‘
— ‘ আমিও জানি তুমি ঠিক আছো। তারপরও এখন শুতে হবে। ‘
নীলা আড়চোখে এদিক-সেদিক তাকিয়ে নিচু গলায় মিনমিনিয়ে বলল,
— ‘ প্লিজ না। সবাই আছে। ‘
নীলার কথা শুনেই সাদিদ একপলক সামনে এবং পিছনে তাকালো। চালক একধ্যানে ডাইভ করছে। অর্ণবের হাতে ফোন কিন্তু তানবীর ড্যাবড্যাব করে তাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। সে তানবীরের চাহনি দেখে বিরক্তিমাখা কন্ঠে বলল,
— ‘ তোর এদিকে কি? চোখ বন্ধ করে ঘুমা। ‘
তানবীর দাঁত কেলালো। সাদিদ সেদিকে পাত্তা না দিয়ে নীলার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
— ‘ বলে দিয়েছি। এখন আসো। ‘
নীলা মাথা দিয়ে না বুঝাতেই সাদিদ কোশন রেখে নিজেই এগিয়ে গেল। তাকে সাবধানে টেনে এনে নিজেই কোলে শুইয়ে দিলো। নীলা উঠার জন্য চেষ্টা করতেই সাদিদ মৃদু স্বরে ধমকে উঠল। আর তাতেই আদুরে নীলা মুখ ফুলিয়ে অপরদিকে তাকালো। সাদিদ সেটা দেখে ঠোঁট কামড়ে হেসে ফেলল। অতঃপর নিচু হয়ে নীলার কপালে চুমু দিতেই নীলা চোখ বড় বড় করে তাকালো। সাদিদ সেদিকে পাত্তা দিলো না। আরেকটা কোশন নীলার পেটের পাশে রেখে দিয়ে বাঁধ দিলো। চুলে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
— ‘ এখন চুপচাপ ঘুমাবে। তাই না বেবি? ‘
নীলার উত্তরের আগেই পিছন থেকে তানবীর আবারও হেসে উঠল। এবার তার হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হবার জোগাড়। নীলা তার হাসির কারণ কিছুটা অনুমান করতে পারছে৷ তাই রাগী চোখে-মুখে সাদিদের দিকে তাকালো। সাদিদ তার চাহনি দেখে বিরক্তিমাখা গলায় তানবীরকে ধমকালো,
— ‘ এমন আহাম্মকের মতো হাসছিস কেন? ‘
— ‘ আমাকে যে আহাম্মক বলিস তুই নিজেই তো এক আহাম্মকের সর্দার। নতুবা নিজের হবু বাচ্চার মাকে কেউ বেবি বলে? কয়েকদিন পর তার-ই তো বেবি হবে। ‘
— ‘ চুপ কর। যতসব ফাউল পোলাপাইন। ও আমার কাছে বেবি আছে আর সবসময় থাকবেও। আমাদের আরো দশটা বেবি হলেও সে আমার কাছে বেবি-ই থাকবে। বুঝেছিস তুই? ‘
সাদিদের কথায় তানবীরের হাসি যেন আরও ডাবল হলো। নীলার তো গলা ফাটিয়ে কান্না করতে ইচ্ছে হচ্ছে। এই ছেলেটা এতো নির্লজ্জ কেন? লজ্জাশরম একেবারে নেই৷ সবার এতোসব চিন্তার মধ্যে সাদিদ একেবারে নিশ্চিন্ত। সে আবারও নীলাকে ঘুম পাড়াতে ব্যস্ত। তার কাছে এই মুহূর্তে নিজের প্রাণপাখির বিশ্রাম ব্যতিত আর কিছু বড় নয়। অন্যকিছুতে নজর দেওয়ার তার বিন্দুমাত্র সময় নেই।
#চলবে…