অন্ধকার মানব পর্ব-১৫

0
667

#অন্ধকার_মানব(The unpredictable love)
#পর্ব_১৫

লিখা✍️তাজরিয়ান খান তানভি

কোরিয়ানের একটা মোস্ট ডিমান্ডিং ডিস হচ্ছে রামেন।এটা অনেকটা বাংলাদেশি স্যুপি নুডলস এর মতো।নুডলস এর চেয়ে এক-তৃতীয়াংশ পানি বেশি ব্যবহার করা হয় এতে।
প্রথমে পানিতে পছন্দ মতো কয়েক প্রকার সস যেমন-সয়া সস,ফিস সস,টমেটো সস এবং চিলি ফ্ল্যাংস দিয়ে পানিটাকে কিছুক্ষন জ্বাল দিয়ে তাতে আস্ত নুডলস কেক ছেড়ে দিতে হবে।নুডলস নরম হয়ে আসলে তাতে আস্ত ডিম ছেড়ে দিতে।পছন্দমাফিক অনেকে তাতে সিদ্ধ মুরগির মাংসও ব্যবহার করে।কোরিয়ানদের কাছে প্রিয় হলেও এর স্বাদ এবং পরিবেশনে বাংলার মানুষ একে আড়চোখেই দেখে।
কাটা চামচ দিয়ে পনের মিনিট যাবত রিপ্তি রামেন খেয়েই যাচ্ছে।দ্বিধা বলে উঠে–

“কি করে খাস তুই এইসব।দেখতেই তো,,,,,,,..
“দেখ দ্বিধা,,আর যাই বলিস নুডলস এর ব্যপারে নো কথা।ইটস মাই ফার্স্ট লাভ।”

দ্বিধা আর রিপ্তির প্যাচ অফ এর জন্য রিশাল ওর পক্ষ থেকে ট্রিট দিয়েছে ওদের।ওরা একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে।এখানে ইটালিয়ান,চাইনিজ,থাই এবং কোরিয়ান বিভিন্ন আইটেম পাওয়া যায়।রিপ্তি নুডলস প্রিয় তাই ওর জন্য স্পেশালভাবে রামেন অর্ডার করা হয়েছে।ওদের সাথে জাদ ও এসেছে।বাট ও কিছুই না খেয়ে চুপচাপ বসে আছে।ওদের কথায় বিরক্ত হয়ে রিশাল বলে—
“দুইজন এমনভাবে লড়াই করছো যেন দুই সতীন আর তোমাদের সামনে বসা তোমাদের ধর্মজামাই জাদ।”
বলেই হো হো করে হেসে উঠে রিশাল।

দ্বিধা ভ্রুজোড়া সরু করে বলে —
“রিশাল আজকাল তুমি অনেক আজেবাজে কথা বলো।বাদঁড় কোথাকার।”
রিশাল বাকা হাসি দিয়ে বলে—
“আমি বাদড় হলে তুমি আমার বান্দরনি।”
বলেই আবারও অট্টহাসি হাসি দেয়।ওর হাসির আওয়াজে রেস্টুরেন্টের অন্য কাস্টমাররাও ওদের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে।পাশে থাকা রিপ্তিও মিটিমিটি হাসতে থাকে।
সবার চোখের চাহনি দেখে রিশাল দু হাত উচু করে সবার উদ্দেশ্যে বলে—–
“সরি এভরিবডি।আই অ্যাম রিয়েলি সরি।
এখন আপনারা আপনাদের নিজ কাজে মনোনিবেশ করতে পারেন”।
রিশাল অনেক কষ্টে ওর হাসি বন্ধ করে।

দ্বিধা জাদ কে বলে–
“আপনি কিছু খেয়ে নিন।”
জাদ শক্ত কন্ঠে বলে—
“ইচ্ছে নেই।”
দ্বিধা বিরক্তির স্বরে বলে–
“আপনার প্রবলেম কি বলেন তো?পেটে কি সবসময় ফ্রিজ নিয়ে ঘুরেন নাকি??

রিশাল আড়চোখে তাকিয়ে মজার সুরে বলে–
“হয়তো মি.জাদ এর মানুষের খাবার পছন্দ নয়।”
দ্বিধা ওর দিকে চোখ বড় করে তাকায়।
“আরে স্পাইসি রেগে যাচ্ছো কেন,,,,,,,আমি তো,,,,,,,

হঠাৎ দ্বিধা রিপ্তি কে চোখ টিপ মেরে জাদ এর সামনে রাখা পিজ্জা থেকে এক টুকরো ওর মুখে ঠেলে দেয়।এতো তাড়াতাড়ি ঘটে ব্যাপারটা জাদ কিছু বুঝার আগেই চেয়ার থেকে লাফিয়ে ওঠে।
রাগে ওর পুরো শরীর কাপতে থাকে।পিজ্জার যে অংশ ওর মুখের যে অংশে লেগেছে তা জ্বলতে শুরু করে।ওর চোখের রং পরিবর্তন হওয়া শুরু করে।অবস্থা বেগতিক দেখে জাদ রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে যায়।
দ্বিধা ঘাবড়ে যায়। রেস্টুরেন্টে থাকা বাকি কাস্টমার ও ভয় পেয়ে যায়।

দ্বিধা রিশাল এর সামনে গিয়ে রাগি গলায় বলে–
“এই তুমি পিজ্জা তে কি দিয়েছো??
“আমি আবার কি দিলাম!!!
“দেখো রিশাল একদম আজেবাজে কথা বলবে না।আজকাল তুমি জাদ কে একদম সহ্যই করতে পারো না।সমস্যা কি তোমার??
রিশাল নির্লিপ্তকন্ঠে বলে–
“এইটা তোমার ভুল ধারনা স্পাইসি।”

দ্বিধা হাতে লেগে থাকা পিজ্জার অবশিষ্ট অংশ নাকে কাছে এনে দেখে তাতে রসুন এর তীব্র গন্ধ।
দ্বিধা রেগে ওয়েটার কে ডেকে জিঙ্গেস করে—
“পিজ্জায় কেউ রসুন ব্যবহার করে??
ওয়েটার রিশাল কে দেখিয়ে ভয়ে কাচুমাচু হয়ে বলে–
“ম্যাম এইটা স্যার এর স্পেশাল অর্ডার ছিল গার্লিক পিজ্জা।”
দ্বিধা কটমট করে রিশালের দিকে তাকায়।
পাশ থেকে রিপ্তি বলে উঠে–
“থাক দ্বিধা আর ঝামেলা করিস না।আমার মনে হয় জাদ এর গার্লিক কে এলার্জি আছে।”

রসুন মানুষের শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উৎপন্ন করে রক্তের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ক্ষমতা বাড়ায়।এটি রক্তের কোলেষ্টরল কমিয়ে উচ্চ রক্তচাপের হার কমায়।মস্তিষ্কের রোগের ঝুঁকি কমায়।বার্ধক্য জনিত রোগ থেকে রক্ষা করে।

কিন্তু ভ্যাম্পায়ারদের জন্য এটি মৃত্যুদূত থেকে কম নয়।রসুনের নির্যাস ওদের পুরোপুরি শেষ করতে না পারলে অনেক ক্ষতির সম্মুখিন করে।
রসুনের তীব্র গন্ধ ওদের রক্তের পিপাসা বাড়িয়ে দেয়।ওদের রক্তের একটি রাসায়নিক উপাদান হিমের তৈরিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।রক্তের ঘনত্ব কমিয়ে তার গতিশীলতা কমিয়ে দেয়।শরীরের যে অংশে রসুন স্পর্শ করা হয় তাতে ঘা দেখা দেয়।

নিজের রুমে প্রবেশ করেই সব কিছু ভেঙেচুরে দেয় জাদ।ধীরে ধীরে ওর ভ্যাম্পায়ার রুপ ফুটে উঠে।রক্তের পিপাসা ওকে পাগল করে দেয়।ব্যাক ইয়ার্ডে লাফিয়ে লাফিয়ে চলা খরগোশের উপর চোখ পড়তেই এক নিমিষেই ওটাকে খপ করে ধরে ওর গলায় নিজের তীক্ষ্ম দাঁত বসিয়ে দেয়।
কিছুক্ষনের ছটফটানি তে খরগোশটি নিস্তেজ হয়ে পরে।নিজের পিপাসা মিটতেই ওটা কে হাত থেকে ছুড়ে ফেলে দেয়।এক আর্তচিৎকারে পুরো আকাশ যেনো আন্দোলিত হয়ে উঠে।

“ইতাফ আমি ভাবতেও পারিনি একজন ভ্যাম্পায়ার এর কাছে তুমি এতটা পর্যদুস্ত হবে।”
“অধিরাজ(রাজা)আপনি ভালো করেই জানেন,জাদ কোনো সাধারন ভ্যাম্পায়ার নয়।
“আমি তোমাকে তা বলিনি।(রেগে গিয়ে)।
তুমি হলে এই রাজ্যের যুবরাজ আর ভবিষ্যৎ অধিরাজ।তোমার কাছ থেকে এটা মোটেই কাম্য নয়।”
“আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি।”
“কি করেছো আমি ভালো করেই জানি।তোমার অগোচরে এতো কিছু হয়ে গেলো আর তুমি,,,,,,
অতীতে শুধুমাত্র তোমার ভুলের কারনে আমরা কতোবড় সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছি,তা না হলে ওই
রহস্য আজ আমাদের কাছে হতো।আর আমরা ভ্যাম্পায়ার সাথে লড়াই এর জন্য দ্বিগুন শক্তির অধিকারী হতাম।

ইতাফ রেগে ওর ভয়ংকর নেকড়ে শরীরে হুংকার দিয়ে বলে—
“আই নো।কিন্তু এইবার সে ভুল হবে না।”
“আই হোপ সো।”

সেদিন জাদ এর সাথে লড়াই এ ইতাফের দেহ ধীরে ধীর দুর্বল হতে থাকে।তাই কিছুদিনের জন্য ও ওর রাজ্যে ফিরে এসেছে।

রাতে হস্পিটাল থেকে ফিরে মি.আর মিসেস ইন্দ্রিয়াজ জাদ এর অবস্থা দেখে কিছুটা বিচলিত হয়ে পরেন।তাকে অনেকবার জিঙ্গেস করার পরও তাদের কোনো প্রশ্নের উত্তর তারা পায়নি।আইভান নিজের ছেলেকে সতর্ক করে বলেন—
“মানুষের সহচার্য সবসময় আমাদের জন্য সুখকর নয়।তা নিশ্চয় তুমি আজ বুঝতে পেরেছো।যাদের বাচানোর জন্য তুমি নিজ জাতির সাথে লড়তে চাও আজ তারা তোমার কি অবস্হা করেছে।”

জাদ ভালো করেই জানে এইসব রিশাল করেছে আর কেনো করেছো সেটাও তার জানা।কিন্তু তবুও সে বলে–
“পুরো ব্যাপারটাই অনিচ্ছাকৃত।আর আমাদের সত্ত্বা সম্পর্কে ও তারা অজানা।”
“আই থিংক তোমাকে এতটা দুর্বল হবার কোনো প্রয়োজন নেই।”
বলেই আইভান রুম ছেড়ে চলে যায়।

ফ্রিদা ছেলের সামনে বসে বলে–
“জাদ,,,,কি লুকোচ্ছো তুমি??
জাদ সেখান থেকে উঠে বারান্দায় এসে দাড়ায়।
“নাথিং মম।”
“দেখো জাদ,,,,,,,হতে পারে আমরা মানুষ নই,আমাদের হৃদয়ে স্পন্দন নেই কিন্তু তারপরও আমি তো মা।
আমি বুঝি।কি এমন যা তোমায় এতো দূর্বল করে দিচ্ছে?
জানো তো বিবেকের কোনো স্থান নেই আমাদের জীবনে।পূর্বে যা হয়েছে তার রেশ তুমি এখনো কাটাতে পারোনি।তাই দ্বিতীয় বার,,,,,,,,,,,
“নো মম।তেমন কিছু নয়।আপনি নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন।”
জাদ এর গালে হাত দিয়ে বলেন–
“আই অ্যাম প্রাউড অফ ইউ মাই সন।”

চলবে,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here