অন্ধকার মানব পর্ব-৩২

0
1989

#অন্ধকার_মানব(The unpredictable love)
#পর্বঃ৩২

লিখা✍️তাজরিয়ান খান তানভি

পুরো ভ্যাম্পায়ার কিংডম জুড়ে নিরবতা।যার জন্য এতোবছর অপেক্ষা করা হলো আজ সে হাতের কাছে এসেও হাত ছাড়া হয়ে গেলো।কিং বেজায় ক্ষেপে আছে।সে এখন বই হাসিল করার জন্য অন্য পন্থা অবলম্বন করবে যা তাদের নিয়ম বহির্ভূত।

“তোমার ছেলে যা করছে তার জন্য তাকে সাজা পেতেই হবে।”

আইভান বিস্মিত হয়ে বলে–
“কি বলতে চান আপনি?

“বুঝতে পারছো না তুমি?জাদ ওই মেয়েকে এখান থেকে নিয়ে গেছে।এইবার ওই মেয়ের সাথে তোমার ছেলেকেও মরতে হবে।”

আইভান ক্রুদ্ধ গলায় বলে–
“হোয়াট দ্যা হেল??
কি বললেন আপনি??
যে ছেলের জন্য আপনার সব অপকর্মের সাথে যোগ দিয়েছি আপনি তাকে মারতে চান।”

“তোমার ছেলে আগেও ভুল করেছে।এখন আবারও সে ভুল করছে।”

“তার ভুলের সাজা সে পেয়েছে।মাহনুর কে হারিয়েছে সে।আর আমি পিতা হয়ে সে দৃশ্য নিজের চোখে দেখেছি।ক্ষমতার ঈর্ষায় নিজের ছেলের ভালোবাসা কে বিসর্জন দিয়েছি।”

কিং ভয়ানক ভাবে হেসে উঠে–
“তুমি দুর্বল হয়ে পড়ছো আইভান।”

“আপনার যা ইচ্ছে করুন।কিন্তু জাদ এর যেনো কোনো ক্ষতি না হয়।”

আইভান অস্ফুট ভাবে হেসে আবার বলে–
“ইশায়া ভেবেছে আপনি তার জন্য মাহনুর কে মেরেছেন কিন্তু সে জানে না আপনি শুধু নিজের কথা ভেবেছেন।মাহনুর আর জাদ এর সন্তান এই পৃথিবীতে আসলে সে আপনার মৃত্যুর কারন হয়ে দাড়াবে।”

“আইভান,,,
তুমি ভুলে যাচ্ছো তুমি কার সাথে কথা বলছো?

“ভুলি নি,তাই আপনিও ভুলে যাবেন না জাদ আমার ছেলে।”

আড়াল থেকে সব শুনেছে ইশায়া। তার মানে কিং তার জন্য নয় নিজের স্বার্থের জন্য মাহনুর কে মেরেছে।আর সেই দোষ তার মায়ের উপর চাপিয়ে দিয়েছে।আর এখন জাদ কেও মারতে চায়।যে ক্ষমতার জন্য নিজের স্ত্রী কে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারে সে ওই বই এর জন্য জাদ কেও মেরে ফেলতে পারে।না,আমি তা হতে দিবো না।
.
.
.
.
পড়ন্ত বিকেল।আরাচোয়ার পিচঢালা পথের দু ধারে সারি সারি গাছ।গ্রীসে জুলাই আগষ্ট মাসে তাপমাত্রা মাঝে মাঝে ৪০ ডিগ্রী ও হয় থাকে।বছর শেষের দিকে তা কমতে থাকে।জানুয়ারি তে সবচেয়ে বেশি ঠান্ডা অনুভুত হয় সেখানে।

রাস্তার পাশ ঘেষেই হেটে চলছে দ্বিধা আর জাদ।আশেপাশের কিছু মানুষ অবাক হয়ে দেখছে তাদের।

“জাদ,,এরা আমাদের এভাবে কেনো দেখছে?

জাদ ওর অধর প্রশস্ত করে বলে–
“তাদের ড্রেসআপ দেখেছেন?
আর আপনার??

“তো??তাতে কি?আমাকে কি খারাপ লাগছে নাকি?

“আরে তা কেনো,,,তারা ভাবছে এতো হ্যান্ডসাম আর ড্যাশিং একটা ছেলের সাথে কিম্ভূত একটা মেয়ে কি করে এলো।”
জাদ নিজেকে একটু নিচু করে দ্বিধার দিকে মুখ বাড়িয়ে বলে—
“নিজের অবস্থা দেখেছেন,,,কয়দিন ধরে গোসল করেন না বলুন তো?
জাদ হা হা করে হেসে উঠে।

অন্যসময় হলে দ্বিধা এক অদ্ভূত চাহনিতে জাদ এর হাসি দেখতো।কিন্তু এখন তার মোটেই ওর হাসি পছন্দ হচ্ছে না।
জাদ ওর হাত ধরে পা বাড়াতেই দেখে দ্বিধা স্থির হয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে।

“কি হলো সুধানিধী,চলুন।”

দ্বিধা ঠোঁট ফুলিয়ে বলে—
“যাবো না আপনার সাথে।”

“মানে??

“আমি যাবো না আপনার সাথে।যাবো না,যাবো না,যাবো না।”

বলেই সেখানে রাস্তার উপর আসন পেতে বসে পড়ে।

“আরে কি শুরু করলেন?

“করেছি বেশ করেছি।আপনি চলে যান।”

“রাস্তার মধ্যে সিনক্রিয়েট করবেন না।আর আমি তো মজা করে বলেছি।”

“এতোই যখন আমাকে নিয়ে সমস্যা তাহলে যান আপনার ইশায়ার কাছে।সে তো সুন্দরী।তার কাছেই যান।”

“আপনি আজকাল বড্ড বেশি কথা বলেন।”

জাদ দ্বিধা কে কোলে তুলে নেই।

“আরে আরে কি করছেন,,,লোকে কি বলবে??

“আপনি ভুলে যাচ্ছেন আপনি এখন বাংলাদেশে নন।”

“সে যাই হোক আপনি নামান আমাকে।”

“একদম ই না।চুপ করুন।”

দ্বিধা চুপ করে জাদ কে দেখতে থাকে।মানুষটা সত্যিই অদ্ভুত।নিরবতা ভেঙে জাদ বলে উঠে–

“কি খান বলুন তো আপনি,,এতো ভার কেনো?

“ইশশ,মোটেই না।আমি মাত্র ফিফটি ফর কেজি।
আর আপনার গায়ে তো অসুরের শক্তি এখন কেনো ভারি লাগছে আমাকে?

“তা তো ঠিক।তাহলে বুঝুন এর পরও আমার কষ্ট হচ্ছে।তাহলে কতো হেবি আপনি।”

“ডং,,আর নিজে যে সত্তর কেজি তার বেলা।”

“বাহ্,,,,একদিনেই ভালো বুঝতে পেরেছেন তো।”

“একদম বেশি কথা বলবেন না।এতো যখন ভারি তাহলে তুলে রেখেছেন কেনো আমাকে,নামান।”

“ইচ্ছে করছে না যে।”

দ্বিধা ভেংচি কেটে বলে–
“ভ্যা,,

জাদ আবারও হাসে।

দ্বিধা ওর দু হাত দিয়ে জাদ এর গলা জড়িয়ে ধরে।
ওর গালে অালতো করে কামড় বসিয়ে দেয়।
“এইটা কি হলো??

“আরেকবার বাজে কথা বললে আবার দিবো।”

“যত দোষ নন্দ ঘোষ।আমি বললেই দোষ তাই না!!

“হুম। তাই,একদম চুপ করে থাকুন।

সূর্যি মামা ডুবে গেছে।দুরে তালগাছের মতো দাড়ানো লাইট হাউস থেকে আলো নিস্বঃরিত হচ্ছে।সেই আলোয় স্পষ্ট পথ দেখা যায়।দ্বিধা আর জাদ একটা ঢালু পাহাড়ের সামনে এলো।

“এর উপরেই আমাদের বাড়ি।”

“আপনার দাদা আর জায়গা পেলেন না বাড়ি করার।”

“আপনি গিয়ে জিঙ্গেস করে আসুন।”

“আপনি যখন ফিরে এলেন দাদাজি কেও সঙ্গে নিয়ে আসতেন।”

“কেনো,,তাহলে তো আর আমাকে প্রয়োজন হতো না আপনার। নামান আমাকে,আমি নিজেই উঠতে পারবো।”

“পারবেন না।দেখছেন না পাহাড় ঢালু আর গাছপালায়
ভরা।”

জাদ ওকে কোলে রেখেই পাহাড়ের ঢালু রাস্তা বেয়ে উপরে উঠতে থাকে।

“আমরা হানিমুনে কোথায় যাবো??

“সেখানে গিয়ে কি করবেন??

“কেনো,,আপনি জানেন না কি করে??

“যা হবার তো তা হয়ে গেছে,হানিমুনে গিয়ে আর কি হবে।”

দ্বিধা বাচ্চাদের মতো জাদ এর বুকে এলোপাথাড়ি ঘুষি মারতে থাকে।

“আরে করছেন কি?পড়ে যাবো তো?

“এতো বাজে কথা কেনো বলেন আপনি।”

“আচ্ছা,,নিয়ে যাবো।কোথায় যাবেন আপনি??

“সুইজারল্যান্ড।”

“ওকে,,,যদি একসাথে পথ চলা হয় তাহলে নিয়ে যাবো।”

“কি বললেন আপনি?

“কিছু না।”

“আপনি এমন কেনো বললেন”।

“বললাম তো এমনি।”

দ্বিধা ভ্রুকুটি করে জাদ এর দিকে তাকায়।ওর গলা আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজেকে ওর অধরে আবদ্ধ করে নেয়।
দ্বিধা এহেন কাজে জাদ থমকে যায়।

“হয়েছি কি আপনার?আমাকে এতো ডেস্পারেট কেনো করছেন।এমন করলে কিন্তু আপনাকে নিয়ে আমার হাটা সম্ভব না।আর এসব কাজের জন্য এই জায়গা কিন্তু একদম ই সুইটেবল নয়।”

“আপনি এতো অসভ্য কেনো বলুন তো।যা মুখে আসে তাই বলেন।”

“আপনি ই তো বাধ্য করছেন।”

“হা,,কচু।জাদ,,,

“বলুন।”

“আপনার হার্টবিট কেনো শোনা যায় না?

“কেনো আপনি জানেন না আমাদের হার্ট আছে কিন্তু হার্টবিট নেই।”

“কে বললো নেই।”

দ্বিধা নিজের বুকে হাত দিয়ে আবার বলে–
“শুনতে পারছেন না?

“হুম।”

“তাহলে কেনো বললেন নেই।আমিই তো আপনার হার্টবিট।”
জাদ দ্বিধার কপালে ভালোবাসার পরশ একে দেয়।

চলতে চলতে ওরা পাহাড়ের উপরে এসে দাড়ায়।দুরে একটি বাড়ি দেখা যাচ্ছে।বাড়ি বললে ভুল হবে,ঝুপড়ি।সমস্ত পাহাড়ের উপরিভাগ গাছগাছালিতে পূর্ণ।বাড়ি দেখে মনে হচ্ছে যেনো এখনি ভেঙে পড়বে।ওরা ধীর পায়ে এগিয়ে যায়।জাদ দ্বিধা কে বলে–

“সাবধানে হাটবেন,এখানে অনেক বিষাক্ত উদ্ভিদ থাকে।”

“হুম।”

ওরা বাড়িটার ভিতরে প্রবেশ করে।অন্ধকারে তেমন কিছুই দেখা যাচ্ছে না। পুরো বাড়িটা একতলা।ধুলো জমে অসাড়।ভিতরে ঢুকতেই দ্বিধা কাশতে শুরু করে।

“আপনি ঠিক আছেন?

দ্বিধা অনেক কষ্টে কাশি থামিয়ে বলে—-
“আমি ঠিক আছি।”

“আসলে অনেকদিন ধরে বন্ধ তো তাই ভিতরে গ্যাস জমে গেছে।সাবধানে থাকতে হবে।”

“জ্বি।”

ওরা পুরো বাড়িটা দেখে।আসবাবপত্র গুলোর কোনো অস্তিত্ব নেই সেখানে রয়েছে বিভিন্ন নাম না জানা বুনো লতা,গাছ ইত্যাদি।জাদ বলে–

“এখানে তো কিছুই নেই।বাড়ি তো এখন জঙ্গলে পরিনত।”

“আছে।”

“মানে??

দ্বিধা ঘরের রান্নাঘর খুজতে থাকে।কিন্তু এখন সেখানে এর অস্তিত্ব বিলীন।পুরো বাড়িটাই একটা পুরাতন দূর্গ মনে হয়।অনেক খোজার পর দ্বিধা সঠিক জায়গা খুজে পায়।রান্নাঘরের ফ্লোরে পা দিয়ে আওয়াজ করে কিছু একটা খুজে চলছে সে।

“কি করছেন বলুন তো?

“এই ঘরের মাটির নিচেও একটা রুম আছে।”

“কি??

“হুম। দেখছেন না এখানকার ফ্লোর কত মজবুত।দাদাজি তার সকল রিসার্চ গুপ্ত রুমে গিয়েই করতো।”
“আচ্ছা।”

ওর সেখানে গাছপালা আর বুনো লতা সরিয়ে নিচে যাওয়ার একটা সিড়ি পায়।সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসে।এখানকার অবস্থা উপরের থেকে ভালো কিন্তু কেনো যেনো দম বন্ধ করা।

“আপনার কষ্ট হচ্ছে?তাহলে আপনি উপরে চলে যান,আমি দেখছি।”

“নাহ,আমি ঠিক আছি।দাদাজি বই একটা বক্সে রেখেছে,সেটা এখানে কোথাও আছে।খুজে দেখুন।”
জাদ খুজতে থাকে।দ্বিধা চুপচাপ দাড়িয়ে আছে।

“জাদ একটা কথা বলবো?

“বলুন।”

“আপনি সত্যিই আমাকে ভালোবাসেন?

“আপনার মাথায় কি সমস্যা আছে?এই ভয়ানক মুহূর্তেও আপনার এইসব কথা না বললে নয়।”

“আপনি আমাকে ভালোবাসেন তো?

জাদ এক পলকে ওর কাছে এসে ওর গাল চেপে ধরে বলে–

“আরেকটা কথা বললে এখানেই মেরে পুতে রেখে
যাবো।কেউ কোনোদিন টেরই পাবে না।”

“পারবেন আমাকে মারতে?

“দ্বিতীয়বার ভাববো না।”

দ্বিধা মনে মনে বলে,,কেমন পুরুষ আপনি যে মুখ দিয়ে ভালোবাসার কথা বলে ওই মুখেই আমার মেরে ফেলার কথা বলে।

জাদ এখনো খুজে চলছে।দ্বিধা আবারও বলে–

“কিং কেনো আমার মাইন্ড রিড করতে পারেনি??

“জানি না।”

দ্বিধা কাতর কন্ঠে বলে–
“এইজন্যই সেদিন আপনি আমাকে নিজের কাছে টেনে ছিলেন,তাই না?

জাদ নিশ্চুপ।দ্বিধা আবার বলে–

“তারমানে আপনি শুধু,,,

“আপনি আর একটা কথা বললে সত্যিই আমি এখন কিছু করে বসবো।”

দ্বিধার চোখ ছলছল করে উঠে।ও ভাবে,তার মানে জাদ যা কিছু করেছে শুধু ওকে বাচানোর জন্য।

জাদ একটি বাক্স খুজে পায়।কিন্তু তা খোলা যাচ্ছে না।বাক্সটির উপরে একটি গোল রিং বসানো আর তাতে কতগুলো নাম্বার দেওয়া।
দ্বিধা একটি শক্ত কাঠি খুজে তা দিয়ে নিজের হাত কেটে রিং টির উপরে ধরে।

“এইসব কি করছেন?

“আমার রক্ত না হলে এটি খুলবে না।”

রিং এর নাম্বারগুলো নড়তে থাকে।দ্বিধা সেখানে কিছু নাম্বারে চাপ দিতেই সেটা স্থির হয়ে যায়।বক্সের চারপাশ আনলক হয়।জাদ সেটা খুলে দেখে তাতেই রাখা সেই প্রতিক্ষিত বই”দ্যা ডেড এলাইভ বুক”।

চলবে,,,

(বিঃদ্রঃ এর পরের পর্বেই শেষ।তাই যারা এই গল্পটা এতোদিন কষ্ট কর পুরোটা পরেছেন তারা তাদের অভিমত একটু বিশদভাবে ব্যক্ত করবেন।ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here