#অন্ধকার_মানব(The unpredictable love)
#পর্বঃ২৬
লিখা✍️তাজরিয়ান খান তানভি
আজ হাওয়ার বেগ তেমন নেই।তিরতির করে বইছে হাওয়া।দ্বিধার রুমের বারান্দার পর্দাটা পতপত শব্দ করে দুলছে।পুরো ঘুমে আচ্ছন্ন সে।
আবছা আলোয় একটা অন্ধকার ছায়া এগিয়ে যাচ্ছে তার দিকে।ধীরে ধীরে তার গলা চেপে ধরে।দ্বিধার নিঃশ্বাস প্রায় বন্ধ হওয়ার মতো।হাত,পা নাড়াচাড়া করারও উপায় নেই কারন ছায়াটি তার উপর জেকে বসে পা দিয়ে এক হাত আর অন্য হাতে দ্বিধার অন্য হাত চেপে ধরেছে।আরেকটু হলেই ওর প্রানপাখি উড়াল দিতো।
হাপাতে হাপাতে উঠে বসে দ্বিধা।নিঃশ্বাসের দীর্ঘতা বেড়েছে অনেকটা।পুরো গলা শুকিয়ে কাঠ।অন্ধকারে হাতরে বিছানার পাশে টেবিলে রাখা গ্লাস হতে ঢকঢক করে পানি খায়।লাইট অন করতেই সব ঠিক।দ্বিধা ভাবতে লাগলো তাহলে কি সে দুঃস্বপ্ন দেখলো।
গলায় দেওয়া জাদ এর ব্ল্যাক ক্রিস্টাল পাথরের লকেট জ্বলজ্বল করছে।দ্বিধা আয়নার সামনে দাড়িয়ে তাতে স্পর্শ করতেই আলো নিস্প্রভ হয়। বিছানায় ধপ করে বসে ভাবতে থাকে,কি হলো একটু আগে।
জঙ্গলের মাঝে কেউ দৌড়াচ্ছে,তার পিছনে আরেকজন।কিছুক্ষনের মধ্যেই পিছনের ব্যক্তিটি সামনের ব্যক্তিটিকে একটা গাছের সাথে ঠেসে ধরে।
ফিসফিসিয়ে গলায় বলতে থাকে–
“তোমার সাহস কি করে হলো ওকে ছোয়ার?
“জাদ,লাগছে আমার ছাড়ো।”
“তুই ভাবলি কি করে তোকে আমি ছেড়ে দিবো?তুই ওকে মারতে গিয়েছিলি।”
ইশায়া ওর দুহাত দিয়ে ওর গলায় চেপে রাখা জাদ এর হাত আলগা করার চেষ্টা করছে।
“ওই মেয়েকে তো আমি ছাড়বো না।”
জাদ ওর দাঁত ইশায়ার ঘাড়ে বসাতে গেলেই আইভান এক ধাক্কায় ওকে সড়িয়ে দেয়।
“হোয়াট আর ইউ ডুয়িং?আর ইউ ক্র্যাজি?
জাদ ওর গলায় হিংস্রতা এনে বলে–
“ইয়েস ড্যাড,,আই অ্যাম ক্র্যাজি।ওর সাহস কি করে হলো নবনীযুক্তাকে মারতে যাওয়ার?
আইভান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় ইশায়ার দিকে।
ফ্রিদা তার গলা উচিয়ে বলে–
“তুমি কি পাগল হয়ে গেছো ইশায়া?যাকে পাওয়ার জন্য আমরা এতো কিছু করছি তুমি তাকে মারতে গিয়েছো।তুমি জানো কিং জানলে কি হবে?
ইশায়ার ক্ষীন চাহনি জাদ এর দিকে।ও তাহলে সত্যিই নবনীযুক্তাকে ভালোবাসে।তাহলে আমার কি হবে।জাদ কি কখনই আমার হবে না।
ফ্রিদা আরেকবার ধমকে উঠলে ইশায়ার ভাবনার সুতো কাটে।
“তুমি কি বুঝতে পারছো আমি কি বলছি?
“সরি আনটি।”
জাদ আবারও রেগে বলে—
“সরি মাই ফুট।তুই কাল ই এখান থেকে চলে যাবি।”
আইভান বলে—
“জাদ,,মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ।ইশায়া একটা ভুল করেছে,তার মানে এই নয় তুমি ওর সাথে এভাবে কথা বলবে।”
“ভুল,,কিসের ভুল।ভুল তখন হয় যখন তা অনিচ্ছাকৃত হয়।ইশায়া ওকে মারতে গিয়েছিলো ড্যাড।”
“ওকে,,যা হবার হয়েছে।এখন যাও এখান থেকে তোমরা।”
“ইশায়া কে কাল ই আমেরিকা ফিরে যেতে হবে।নইলে নবনীযুক্তা আপনাদের কখনো হবে না।”
বলে এক নিমিষে জাদ হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।
“ইশায়া পাগলামির ও একটা সীমা আছে।তুমি ওকে কিছু করবে আর জাদ জানবে না তা তুমি ভাবলে কি করে?
ইশায়া দ্বিগুন ভাবে ফুলছে।কিছুনা বলে সেও চলে যায়।
“দেখলে আইভান মেয়েটা কি শুরু করেছে?
“হ্যাঁ।ওর এখান থেকে ফিরে যাওয়াই আমাদের জন্য মঙ্গল।আমি কালই সব দেখছি।”
“যত দ্রুত সম্ভব।”
.
.
.
.
পড়ন্ত বিকেলে গাছপালা ঘেরা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে দ্বিধা আর জাদ।
“এখানে কেনো ডেকেছেন?
দ্বিধা শান্ত কন্ঠে বলে—
“আপনাকে মুক্তি দিতে।”
জাদ তার বাদিকের ভ্রু উঠিয়ে বলে—
“মানে??
“আপনাকে অনেক বিরক্ত করিছি।তাই আজ আপনাকে মুক্তি দিতে এলাম।আজকের পর দ্বিধা আর কোনোদিন আপনার সামনে তার ভালোবাসার কথা বলতে আসবে না।”
জাদ ক্ষেপে এক পা এগিয়ে এসে বলে–
“কি বলছেন আপনি এইসব?
“আপনি ইশায়া কে বিয়ে করে নিন।সে আপনাকে অনেক ভালোবাসে।আর আপনাদের মাঝে তো কোনো বাধাও নেই।ভাগ্যবিধাতা আপনাদের এক সুতোয় বেধেছে।”
“এইসব বলার জন্য আমাকে ডেকেছেন?
“হুম।আজকের পর আর আপনাকে আমার কোনো খেয়াল রাখতে হবে না।আমি নিজেকে সামলে নিবো।আর কোনোদিন বলবো না আমি আপনাকে ভালোবাসি।”
কথা শেষ করেই দ্বিধার চোখের পানি ঝুপঝুপ করে ঝড়তে লাগল।
জাদ এবার পুরো রেগে দ্বিধার দু বাহু চেপে ধরে বলে–
“কি বলছেন এইসব?কিসের মুক্তি?
“ছাড়ুন আমাকে,,আর কখনো আসবেন না আপনি আমার সামনে।”
দ্বিধা জাদ এর শার্ট খামচে আবার বলে—
“কেনো এলেন আপনি আমার জীবনে?ভালো যখন বাসতেই পারবেন না তাহলে কেনো আমাকে বাধ্য করলেন আপনাক ভালোবাসতে।
সত্যিই পাগল আমি।মরিচিকার পিছনে ছুটে বেড়িয়েছি।আপনি তো কখনো আমাকে ভালোবাসেন নি।দয়া করেছেন আমার উপর,কারন আমার চেহারা মাহনুর এর মতো দেখতে।তাই আপনাকে আজ সব কিছু থেকে মুক্তি দিতে এলাম।”
জাদ আবারও ওকে ধরতে এলে দ্বিধা দু কদম পিছিয়ে যায়।
“ছোবেন না আমায়।ফর গড সেক,প্লিজ আমাকে এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিন।আমি আর পারছি না।”
দ্বিধার কান্নার আওয়াজ তীব্র থেকে তীব্র।জাদ এর একদম সহ্য হচ্ছে না।
“প্লিজ আপনি আমার কথা শুনুন।”
“নাহ।”
দ্বিধা হাতের উল্টোপাশ দিয়ে দুচোখের অশ্রুজল মুছে নেয়।আর বলে–
“আজকের পর আর কখনো আমি আপনার সামনে আসবো না।”
দ্বিধা কিছুদূর গেলে জাদ পিছন থেকে বলে—
“থাকতে পারবেন আমাকে ছাড়া??
দ্বিধা ওর দিকে না তাকিয়েই বলে–
“জানি সম্ভব নয়।কিন্তু চেষ্টা করবো।”
জাদ সেখানে দাড়িয়েই বলে,,
“আপনি আমাকে ছাড়লেও আমি আপনাকে ছাড়তে পারবো না।যতদিন না ভ্যাম্পায়ার আর নেকড়েদের এই লড়াই থেকে আমি আপনাকে সুরক্ষিত করতে পারছি আপনি চাইলেও আমি আপনাকে ছাড়বোনা।”
বাসায় এসে নিজের রুমের সব ওলট পালট করে ফেলেছে দ্বিধা।ড্রেসিং টেবিলে থাকা ওর সবচেয়ে পছন্দের পাথরের রাজকন্যার মুর্তিটি হাতে নিয়ে এক ঝটকায় মেঝেতে ফেলে দেয়।ভেঙে পুরো গুড়োগুড়ো হয়ে যায় সেটি।নিজের গলা থেকে জাদ এর দেওয়া লকেট টি টেনে ছিড়ে ফেলে দেয়।
ধপাস করে ফ্লোরে বসে হাউমাউ করে কাদতে থাকে দ্বিধা।কিছু ভাঙার আওয়াজ পেয়ে ওর রুমে দৌড়ে আসে ওর মাম্মা।
“ডল,কি হয়েছে?কি অবস্থা করেছো ঘরের?
দ্বিধা ওর মাম্মার গলা জড়িয়ে আরো আওয়াজ করে কাদতে থাকে।হেচকি এসে যায় দ্বিধার।
“ডল,,এভাবে কাদলে কি করে বুঝবো কি হয়েছে”।
“মাম্মা,,জাআদ আআমাকে ভালোয়বাসেএএনা।”
পারিজা ওর পুরো মুখ নিজের আচল দিয়ে মুছে দেয়।
“ডল,আগে কান্না থামাও।এভাবে বললে কিছুই বুঝতে পারবো না আমি।”
দ্বিধা নিজেকে শান্ত করে বলতে থাকে–
“আমি শুধু শুধু এতোদিন ওর পিছনে পাগলের মতো ঘুরেছি।ও আমাকে কখনো ভালোবাসবে না।”
“জাদ কি তোমায় বলেছে ও তোমাকে ভালোবাসে না?
“নাহ।
কিন্তু কখনো তো বলেনি ও আমাকে ভালোবাসে।”
“ভালোবাসলেই যে তা মুখে বলতে হবে তার তো কোনো আবশ্যকতা নেই ডল।ও যদি তোমাকে ভালোই না বাসতো তাহলে এতোদিন তোমাকে প্রটেক্ট করতো নাকি।
তুমি ওকে ভুল বুঝোনা।ওকে সময় দাও।দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।”
“কিন্তু,,,,
“আরে মা,মেয়ে মিলে যে এতো আলোচনা হচ্ছে সেদিকে যে ডোর অপেন তার কি খেয়াল আছে?যদি চোর ঢুকে পড়ে।”
রিশাল এর কথায় পারিজা হেসে উঠে।
“কোথায় গিয়েছিলে তুমি?
“একটা কাজে।কিন্তু ঘরের ভিতর কি মহাভারত হয়ে ছিলো নাকি?এই অবস্হা কেনো?
আর স্পাইসি তোমার এই অবস্হা কেনো??
“তুমি আমার ঘরে এলে কেনো?
“ওরে আল্লাহ,আমি আবার কি করলাম?।আমার উপর ক্ষেপে যাচ্ছো কেনো?
আমি তো বলতে এলাম জাদ এসেছে নিচে।”
“জাদ এসেছে?
কোথায়?
বলেই দ্বিধা নিচে ছুটে আসে।
“আপনি এখানে?
“জ্বি,আমি।”
“আপনি এখানে কেনো এলেন?চলে যান এখান থেকে।”
জাদ কে এখানে দেখে রিশাল এর চোখে অগ্নিবিচ্ছুরন হচ্ছে।মনে হচ্ছে এখনি ওকে জ্বালিয়ে দিতে।ও নিরবে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
দ্বিধার কথায় জাদ ওর গাঢ় রেড লিপ প্রশস্ত করে বলে–
“যেতে আসিনি তো।”
দ্বিধা রেগে টি টেবিলে থাকা পুরো এক জগ পানি জাদ এর মাথায় ঢেলে দেয়।
“এইটা আপনি কি করলেন?
“বেশ করেছি।”
পারিজা মেয়ের এমন কাজে না হেসে পারলেন না।
“তাহলে এক কাজ করুন আর কিছু ঢালতে ইচ্ছে করলে সেটাও নিয়ে আসুন আমি কোথাও যাচ্ছি না।
এইবার যদি আপনার মাথা একটু শান্ত হয়।”
“থাক আর ঢালাঢালি করতে হবে না।জাদ তুমি যাওতো রিশাল এর ঘরে গিয়ে চেঞ্জ করে নাও।”
পারিজা আশেপাশে চোখ বুলিয়ে ওকে না দেখে বললেন–
“ও মনে হয় আবার বাইরে গিয়েছেে।তুমি দ্বিধার বাবার একটা শার্ট বরং পরে নাও।”
জাদ জামা চেঞ্জ করে চুল হাতড়াচ্ছে।দ্বিধা উকিযুকি দিতেই জাদ বলল–
“”চোরের মতো এমন করছেন কেনো?
দ্বিধা ঠোঁট কামড়ে ওর কাছে গিয়ে বলল–
“আপনি আমাকে চোর বললেন কেনো??
জাদ ওর কোমড় জড়িয়ে ওকে কাছে এনে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে– —
“অনেক রক্তের পিপাসা পেয়েছে,একটু খেয়ে দেখবো আপনাকে?
“বাজে কথা রাখুন।
লুচু কোথাকার।”
সোফায় বসে নিজের মোবাইলে কিছু একটা দেখে চলছে জাদ।
হোয়াইট শার্ট আর গাঢ় নীল জিন্স আর হাতাকে ফোল্ড করে রেখেছে।মাঝে মাঝে ওর চোখ গুলো নীল রঙ ধারন করছে।একটু দুরেই বসে দ্বিধা হা করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।কি আছে ওর মধ্যে যা ওকে চুম্বকের মতো টানে।
মোবাইল টা ওর হাত থেকে কেড়ে নিয়ে পিছনে লুকিয়ে নেয় দ্বিধা।
“কি করছেন সুধানিধী,মোবাইল টা দিন বলছি।”
“দিবো না।
কি দেখছিলেন এতো মনোযোগ দিয়ে,ইশায়া কে?
জাদ ওর হাত দিয়ে পিছনেই দ্বিধার হাত থেকে মোবাইল নেওয়ার চেষ্টা করছে।জাদ পুরো মিশে যাচ্ছে দ্বিধার সাথে,কিন্তু ওর নজর ওর মোবাইলে।আর দ্বিধা নিজের হাত পিছনে এখনো ধরে রেখেছে আর চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে জাদ কে।
ওদের এই অবস্হা দেখে চিৎকার দিয়ে উঠে ইরাজ ইরাম।
“তুমি,,,,,
তোমার এতো সাহস হলো কি করে এখানে আসার?
ইরাজ কে দেখে দ্বিধা চুপসে যায়।
“আসলে পাপা,,,
ইরাজ ওকে চড় মারার জন্য অগ্রসর হলেও মাঝে এসে দাড়ায় জাদ।
“এতে নবনীযুক্তার কোনো দোষ নেই।আমি নিজেই এখানে এসেছি মি.ইরাম।”
“তুমি আমাকে বাড়ন করছো?
“দেখুন মি.ইরাম আমি জানি নবনীযুক্তা আপনার মেয়ে।তার উপর আপনার সব অধিকার আছে।কিন্তু আমার সামনে তার গায়ে কেউ হাত দিতে পারবে না।আপনিও নন।”
“একদম চুপ করো তুমি।এখনি বের হয়ে যাও এখান থেকে।”
পারিজার দিকে তাকিয়ে বললেন—
“তাহলে আমার পিঠ পিছনে এইসব হচ্ছে।আমি এমনটা তোমার কাছ থেকে আশা করিনি পারিজা।তুমি জানো না জাদ,,,
“আমি সব জানি।রিশাল আমাকে সব বলেছে।”
“সব জেনেও তুমি ওকে কেনো এখানে আসতে দিলে?
“কারন দ্বিধা ওকে ভালোবাসে।
ইতাফ আমার মেয়েটাকে পাথর বানিয়ে রেখেছিলো।না হাসতে পারতো না কাদতে।কিন্তু জাদ ওর জীবনে আসার পর ও আবার হাসতে শিখেছে,কষ্ট পেয়ে কাদতে শিখেছে।
তাই ওকে মেনে নিতে আমার কোনো আপত্তি নেই।
আর আপনি হয়তো জানেন আমাদের দ্বিধা কোনো সাধারন মেয়ে নয়।
.
.
বাইরে কড়া রোদে দাঁড়িয়ে আছে জাদ আর ইরাজ।
“আমি জানি আপনি অনেক চিন্তিত।আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি নবনীযুক্তার সাথে আমি কখনো আমার জীবন জড়াবো না।”
“আমি তোমাকে বিশ্বাস করিনা।”
“জাদ ইন্দ্রিয়াজ তার দেওয়া কথার কখনো হেরফের করেনা।”
চলবে,,,