অন্যরকম তুমি #পর্বঃ১১

#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ১১
#তানিশা সুলতানা

বারো তালার বিল্ডিং এর দশ তালার ১১২ নং রুমের সামনে ঘাপটি মেরে বসে আছে ছোঁয়া। সিফাত কোমরে হাত দিয়ে কপাল কুঁচকে অনবরত কল করে যাচ্ছে সাদিকে। কিন্তু বেচারি কলটা রিসিভও করছে না। তনু পরিকে কোলে করে বসে আছে। চোখে মুখে রাজ্যের বিরক্তি। ইচ্ছে করছে সাদির মাথা ফাটাতে। পরি এখনো ফ্যাচফ্যাচ করে কেঁদেই যাচ্ছে। তাতে সিফাতের বিরক্তি আরও বেরে গেছে। কে সেই মেয়ে যাকে এক পলক দেখেই পরি তার মায়ায় পড়ে গেছে? মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগছে সিফাতের।
কোনো দিন তো সিফাত ছাড়া আর কারো কাছে যাওয়ার জন্য বায়না ধরে নি মেয়েটা। তাহলে আজ কি হলো? কি এমন দেখলো ওই মেয়েটার মধ্যে?
ভেবে পায় না সিফাত।
তনু বিরক্ত হয়ে এখন আর পরির কান্না থামানোর চেষ্টা করছে না। কাঁদুক যতখন খুশি।
ছোঁয়ার ভীষণ খারাপ লাগছে। কি এমন হলো আজকের রাতটা থেকে আসলে? মহা ভারত অসুদ্ধ হয়ে যেতো? না কি শাশুড়ীর মাথায় বাজ পড়তো?

“মাম্মা আমার কাছে এসো তো।

ছোঁয়া হাত বারিয়ে দেয়। পরি চলে আসে ছোঁয়ার কোলে। ছোঁয়া ফোন বের করে। শাশুড়ী আসার সময় দামি একটা ফোন দিয়েছে। গাড়িতে বসে সিফাত ইমু ফেসবুক ইনস্টাগ্রাম সব ইনস্টল করে দিয়েছে ছোঁয়াকে।

ছোঁয়া ভিডিও কল করে সিমিকে।

” এই তো মাম্মা কল করে দিয়েছি। তুমি এবার কথা বলবে। একদম কান্না কাটি করবে না। তাহলে কিন্তু আন্টি কথা বলবে না কেমন?

ছোঁয়া মিষ্টি করে হেসে বলে। পুরি এক গাল হেসে ছোট ছোট হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে নেয়।
রিং হওয়ার সাথে সাথে সিমি কল রিসিভ করে। যেনো এই কলেরই অপেক্ষায় ছিলো।

কল রিসিভ করতেই পরির হাসি মুখটা ভেসে ওঠে। প্রাণ ঠান্ডা হয়ে যায় সিমির। নিজেও আলতো হাসে।

“আপি কি জাদু করেছো তুমি আমাকে মেয়েকে? তোমার জন্য কান্নাকাটি করছে।

ছোঁয়া হেসে বলে। ছোঁয়ার কথা শুনে সিমিও হেসে ফেলে। সিমির হাসির শব্দটা সিফাতের কানে যায়। মোচর দিয়ে ওঠে বুকের ভেতর। শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। এই হাসির শব্দটা যে খুব চেনা লাগছে৷ কিন্তু এটা কি করে সম্ভব?

চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস নেয় সিফাত। মনের ভুল ভেবে পাত্তা দেয় না।

” আমি রিসেশনের গিয়ে জিজ্ঞেস করে আসি।

বলেই সিফাত চলে যায়। সিমি চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে থাকে। সে ওখানে কি করছে? এতটুকু বুঝতে দেরি হয় না সিটির এটাই সিফাত।
কন্ঠ শুনেই চিনে গেছে। মনের ভুল না এটা। এটাই সিফাত।

জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে সিমি।

“কে কথা বললো রে?

সিমি জিজ্ঞেস করে।

” আমার ভাসুর। পরির বাবা।

বলে ছোঁয়া। বুকটা ধক করে ওঠে সিমির। পরি সিফাতের মেয়ে। তার মানে বিয়েও হয়ে গেছে।
তাচ্ছিল্য হাসে সিমি।

“পরি আমি বিয়ে করছি। আজকেই দেখতে আসবে। ঠিক হয়ে গেলে চলে আসবি তুই। আর হ্যাঁ পুরো পরিবার নিয়ে এক সপ্তাহ আগেই চলে আসবি কেমন?

পরি সোনা এখন রাখি পরে কথা বলবো। সাজুগুজু করতে হবে তো আমায়।

মিষ্টি করে হেসে বলে সিমি।
ছোঁয়া চোখ ছোটছোট করে তাকায়। বিয়ে করবে?

খট করে কলেজ কেটে দেয় সিমি। ছোঁয়া এখনো ঘোরের মধ্যে আছে। এটা কি বললো আপু?

ছোঁয়ার ভাবনার মাঝেই সাদি চলে আসে।
বড়বড় চোখ করে তাকায় ছোঁয়া সাদির দিকে। সাদা শার্টটা ঘেমে শরীরের সাথে লেপ্টে আছে। চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ। হাতে অফিস ব্যাগ। কলারে লাল কিছু একটা লেগে আছে।

” ভাইয়া তুই কি রে? কখন থেকে বসে আছি। এতোটা কেয়ারলেস কেনো তুই?

তনু বিরক্তি নিয়ে বলে।

“আসবি বলিস নি তো।

সাদি ছোট করে উওর দিয়ে দরজা খুলে। ফিঙ্গার পিন দিয়ে দরজা কল করা ছিলো।
পরি খুশি হয়ে সাদির কোলে উঠার জন্য দুই হাত এগিয়ে দেয়।

” মা গায়ে ময়লা। ফ্রেশ হয়ে আসি।

বলেই চলে যায়। পরির হাসি মুখটা কালো হয়ে যায়। ছোঁয়া সাদির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটে পরিকে কেলো তুলে নেয়।
তনু লাগেজ নিয়ে গটগট করে ভেতরে চলে যায়।
ছোঁয়া ভেতরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই পেছন থেকে সিফাত ডাকে।

“ছোঁয়া শোনো

ছোঁয়া দাঁড়িয়ে যায়।

” কিছু বলবেন ভাইয়া?

“তখন কার সাথে কথা বলছিলে?

সিফাত আমতা আমতা করে বলে।

” আমার আপির সাথে। নাম সামান্তা সিমি। আপনি চিনবেন না। বিয়েতে ছিলো না।

বলেই ছোঁয়া চলে যায়। সিফাত রোবটের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। চোখ দুটো টলমল কারছে। কন্ঠ নালি কাঁপছে। চার বছর পর নামটা শুনলো। দীর্ঘ তিন বছর যাকে পাগলের মতো খুঁজে গেছে তাকেই খুঁজে পেয়েছে। কিন্তু মনের মধ্যে কোথাও একটা খচখচ করছে।
ভয় করছে।

ছোঁয়া গালেজ নিয়ে সাদির রুমে চলে আসে।
আন্দাজ করেছে এটাই সদির রুম হবে। চারটা রুমে এই ফ্লাইটে। একটা কিচেন আর একটা ড্রয়িং রুম আছে।

রুমে ঢুকেই শিওর হয়ে যায় এটাই সাদির রুম। ইচ্ছে করে আসে নি ছোঁয়। একটা রুমে তনু গেছে অন্য রুমে সিফাত। তাহলে ছোঁয়াকে সাদির রুমেই আসতে হবে।
তনু কারো সাথে রুম শেয়ার করে না।

সাদি তোয়ালে দিয়ে চুল মুছছে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে।
ছোঁয়া সাদির দিকে এক পলক তাকিয়ে লাগে খুলে জামাকাপড় বের করতে থাকে।

“কেনো এলো?

সাদি আয়নার মধ্যে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বলে।

” আপনার শার্টে রক্ত কেনো ছিলো?

ছোঁয়া নিজের কাজে মনোযোগ দিয়ে বলে
সাদি চোখ ছোটছোট করে তাকায় ছোঁয়ার দিকে।

“তোমাকে বলার প্রয়োজন মনে করি না।

চোয়াল শক্ত করে বলে সাদি।
ছোঁয় মুচকি হাসে। জামাকাপড় নিয়ে সাদির পেছনে দাঁড়ায়। সাদি পেছন ফিরে ছোঁয়ার দিকে তাকায়।

” দজ্জাল শাশুড়ী জোর করে পাঠিয়েছে। আমার রুচি এতোটাও নরমাল না যে একটা করলার জুসের কাছে ইচ্ছে করে আসবো।

ভেংচি কেটে বলে ছোঁয়া।

“ইডিয়েট
সাদি বিরবির করে বলে।

” সাদা বিলাই

“তোমাকে তো আমি
সাদি দাঁত কটমট করে ছোঁয়ার দিকে আসতে নিলেই ছোঁয়া এক দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।

” বজ্জাত বর, হনুমান, রাহ্মস, করলার জুস, গোমড়ামুখো

ছোঁয়া দরজা বন্ধ করে চিল্লায়ে বলছে।

সাদি দাঁতে দাঁত চেপে এগিয়ে যায় ওয়াশরুমের দরজার কাছে।

“একবার বেরিয়ে এসো। ছাঁদ থেকে যদি ফেলে না দিয়েছি না তাহলে আমার নাম সাদমান

সাদির বলা শেষ হওয়ার আগেই ছোঁয়া বলে

” তাহলে আপনার নাম সাদা বিলাই।

সাদি ফোঁস করে শ্বাস নেয়।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here